শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৬

গ্রাম.

নাগরিক মানুষ প্রতি রাতে হয়তো মিউজিক প্লেয়ার চালু করে ঘুমিয়ে যাওয়ার অভিনয় করে কিন্তু চোখে ঘুম আসে না, তারপর কেমিক্যাল কেয়ারে চোখের পাতা বন্ধ করে এবং নিজেকে হাজার রকমের অটোসাজেশন দিতে দিতে স্বপ্নের দেশে যাওয়ার মিশন চালায়। কিন্তু এখানে ব্যাঙ কাহারবা তালে মিউজিক প্লেয়ার অন করে। প্রাকৃতিক মিউজিক প্লেয়ার। এখানে বিছানায় গতর রাখা মানে চোখে চমৎকার ঘুম নেমে আসা, মনে নেমে আসে সুমনা স্বপ্ন।

ঘুম থেকে জেগে ওঠলেই অনুধাবন করা যায় ঘুমিয়ে ছিলাম। হলুদ আলো চোখে এসে নাচতে শুরু করে, হাঁসের চুই চুই ডাক কানে এসে তারাময় সঙ্গীত রচনা করে। হাঁসের ডাক শেষ না হতেই লাতার কামুক ডাকক্রিয়া মনে জানান দেয় প্রকৃতির অমিয়ভূষন নিয়তির কথা। লাতার ডাকের সাথে হামিং করে ছাগলের বাআ বাআ ধ্বনি হৃদয়ে নিয়ে আসবে চরসাটুরিয়া আবেদন। গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কাউকে আটকে রাখে না, সে জানে কাউকে আটকে রাখা মানে আটকে থাকা।
আরেকটি কথা, গ্রামের কোনো উপাদান আখেরি মোনাজাত পড়ে না, তারা কেবল মোনাজাত শুরু করে এবং আমিন আমিন রবে রবাহত গ্রামীন হৃদয়ের আকাশ বাতাস।

আমি পৃথিবী ভ্রমনে আমরন নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চাই। পৃথিবী ভ্রমন না করলে নিজের ভেতরের পৃথিবীর সন্ধান পাওয়া যায় না,  ঘরময় জীবন আমার ভাল্লাগে না।

আমি তাদের সাথে থাকতে চাই যারা গোছানো শব্দটি বলতে দিয়ে গুছানু বলে ফেলে কিন্তু উচ্চারিত গুছানু শব্দটিও প্রানের মিনার থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে থাকে, যারা ইস্কুলে যাবার আগে সৌন্দর্য ধ্যানে পাউডার দিয়ে মুখভর্তি করে ফেলে, যারা হুমায়ূন ফরিদী, মান্না, চিরকালীন মা  আনোয়ারার অভিনয় দেখতে দেখতে আকিজ বিড়ির কিংবা পাতা বিড়ির ধোঁয়ায় নিজেকে ব্যস্ত রাখে।

এই প্রকৃতির টানে হৃদয়বোধ্য জন তালকে করেছে বেতাল, বেতালকে করেছে মাতাল তবুও তারা রচনা করে চলছে  জীবনের উপরে জীবন। এখানে কচুরিপানার ফাঁকে মাথা ভেসে ওঠে, মানুষের মাথা, ছিপনৌকায় মাছের আশায় সময় পালে সময়কেনা বালক। আল্পনা রানী পাল হাসির আড়ালে মুখ লুকায়, মাটিরও আছে জীবন অবশেষে জেনে যায় নগর পলাতক বালক, নারগানা গ্রামে যেন রোজ ফুটে মাটিফুল, তেঁতুলপাতা ঠোঁটে খেলা করে হাসির ইন্দুর।

বাসের ছাঁদে বসে শরীফ কন্ট্রাক্টরের সাথে চলে আড্ডা। তার কথায় উঠে আসে মাটি ও মানুষের কথা-- পানির অপর নাম জীবন। অথচ মানুষ পানি বানায় না, বানায় গ্যাস, যে গ্যাস খেলে পেটের সমস্যা হয় সেই গ্যাস।

তার কথা শুনে আমারও ভাবনার দরজা খুলে যায়। ভাবতে থাকি সেই সব মানুষের কথা যারা রোদের শাসন মেনে নিয়ে গড়ে তুলে আমলনামার সেতু, যে সেতুর উপর ভর দিয়ে আমরা অতিক্রম করি কঠিন হিসাবের অমসৃন পথ। অথচ আমরা বউপাগলা ভাইয়ের মতো রঙিন করি শ্বশুরবাড়ির মুখ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন