বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫

মায়ের কাছে

একটি ভালো পাস করেছি। পৃথিবীর কাছে পাসটা খুব বড় ছিল কিনা জানি না কিন্তু গ্রামের মানুষের কাছে পাসটা বড়ই ছিল। নিজেকে সম্মান দিতে লাগলাম। মনে মনে সম্মানিতবোধ করছি। সিদ্ধান্ত নিলাম এলাকার কোনো কলেজে ভর্তি হবো না, মনটা তালগাছ হয়ে গেলে যেমন হয়।   সিদ্ধান্ত নিলাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হবো। যেই সিন্ধান্ত সেই কাজের পেছনে দৌড়।

কুমিল্লায় তখন চেনাজানা লোক তেমন কেউ ছিল না। একজন মানুষকেই চিনতাম ,একজন মানুষের রুমেই একরাত যাপন করেছিলাম । চমৎকার মানুষ। চমৎকার তার আতিথেয়তা।

লিটন দা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ম্যাথমেটিক্সের ছাত্র। ম্যাথ সে ভালোই বুঝে। সকাল-সন্ধ্যা টিউশনি করে। তার জনপ্রিয়তা গন্ধময় হয়ে ওঠে। মাস শেষে পকেটে যথেষ্ট টাকা জমা হতে থাকে। বেশ চলে, বেশ পড়ায়, বেশ তার বেশভূষা।

নুরাইন তার কাছে পড়ে। ম্যাথ পড়ে। সাধারণত সে একজন করে পড়ায় না। তারপরও অবিভাবক মহল খুব করে লিটন দা'কে ধরেছেন, তাই সে না শব্দটি উচ্চারণ করতে পারে নি। প্রতি সন্ধ্যায় লিটন দা নুরাইনদের বাসায় যায়। ম্যাথ পড়াতে পড়াতে এক সময় জীবনের ম্যাথ নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। (a+b)√ এর পরিবর্তে জীবন স্কয়ার নিয়ে আলোচনা চলে। অভিভাবক মহল বিষয়টি টের পান -- লিটন তো ভালো ছেলেই, দেখতে শুনতেও খারাপ না।

একদিন অভিভাবক তাদেরকে কোনো এক ঘনিষ্ঠ মুহুর্তে আবিষ্কার করেন। সুতরাং ঘনিষ্ট মুহুর্তের একটি সামাজিক স্বীকৃতি প্রয়োজন। তাদের বিয়ে করিয়ে দেয়া হয়। লিটন দা বিবাহিত।

লিটন দা'র জন্মের কয়েক বছর পর তার বাবা মারা যান। লিটন দা'র মা তার চেহারা দেখে দেখে দিনযাপন করতে থাকেন। লিটন দা বড় হয়, কলেজ পাশ করে, সম্মান পড়বে। মায়ের আঁচল ছেড়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হয় সে।একটি কৈ মাছ জলের আশায় লাফ দিয়ে সাগরে পড়ে।

রাস্তার পাশে লিটন দা'দের বাড়ি। সোঁ সোঁ করে সিএনজি চলে যায়। মা দৌঁড় দিয়ে রাস্তায় যান, এই বুঝি আমার সোনা এলো, এই বুঝি আমার লিটন এলো। না, লিটন  আসেনি। লিটন নুরাইনকে নিয়ে সন্ধ্যাযাপন করছে, বাদাম খাচ্ছে, আর তার খোসা ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। অসহায় খোসা মৃত্যুকে মেনে নিয়ে ডাস্টবিনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাড়ির আম গাছের চিকন ডালে বসে কাক কা কা করে। মার মন আনন্দ ভরে ওঠে। কা কা শব্দের পেছনে মা লিটনের আগমনবার্তা দেখতে পান। একদিন যায়, দুই দিন যায় তিন দিন যায়, কাকের কা কা ফুরিয়ে যায় ,লিটন তো আর আসে না। লিটন নুরাইন আর তার ছোট ভাইকে নিয়ে কুমিল্লা বার্ডে ঘুরেফিরে । তারা ফুচকা  খায়, হালিম খায়, জীবনের গল্প করে, নানা খুঁনসুটি আর রসিকতায় মগ্ন থাকে। মা  চকবাজারে যান। মোবাইলঘরে লিটনের ফোনের খোঁজ করেন। লিটন ফোন দিয়েছিল কিনা জানতে চান। কিন্তু মা জানেন না গ্রামের বুড়া মানুষটির কাছে ফোন করার সময় লিটনের নেই। সে এখন মহা ব্যস্ত মানুষ। সে এখন গোমতী নদী চিনে, সে এখন গোমতীর পাড়ে গোধূলী লগ্নে হাঁটতে জানে।

গভীর রাতে মা দুঃস্বপ দেখে লিটন লিটন বলে চিৎকার করে ওঠেন, মা আস্তে আস্তে টিউবওয়েলের কাছে যান, এক গেলাস পানি খেয়ে তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা করেন।  লিটন তখন দেহের রন্ধনকলা শেষ করে আধুনিক লাইট জ্বেলে ওয়াশ রুমে নিজের শরীরে পরিষ্কার করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে থাকে।

ইতিমধ্যে লিটন ভালো একটি এনজিওতে চাকরি পেয়েছে। ভালো বেতন। দাম্পত্য জীবন আরও রসালো হয়ে ওঠে।  মাঠে খাঁ খাঁ রোদ ফলে, রোদ ঘন হয়ে আসে মায়ের হৃদয়ের ক্যাম্পাসে, মা ছটফট করে।রোদের তীব্রতা বাড়ছে-কমছে, মা হৃদয়ের হাহাকার বাড়ছে বই কমছে না।

লিটন এখন নয়টা-পাঁচটা ডিউটি করা মানুষ। মায়ের কথা এখন তার মনে পড়ে। ফোন করার সাহস পায় না । মা কবিরাজের বাড়ি যান, তাবিজ নিয়ে আসে। চারটি তাবিজ। বাড়ির চারকোণার চারটি গাছে ঝুলিয়ে দেন। তাবিজ দুলে আর মা বিশ্বাস করতে থাকেন লিটনের মন এই বুঝি বাড়ির দিকে ঝুঁকছে, দুলছে।

লিটনের পায়ের ব্যথাটা আবার দেখা দিয়েছে। নুরাইন বলে টেনশন করো না, শীতকালে বাতের ব্যথা একটু বেড়েই থাকে। ব্যথা বাড়ছে। দিন যাচ্ছে। আরও ব্যথা বাড়ছে। অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সে। ডাক্তার ব্যথানাশক ঔষধ দিয়েছে। ঔষধ খেলে আগে পায়ের ব্যথা থেমে যেতো। এখন থামছে না। ঢাকা শহরের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে সিরিয়াল নেয় নুরাইন। ডাক্তার হাজারটা
চেকআপ দেয়। প্রতি চেকআপে হাজার হাজার টাকা। লিটনের জমানো টাকা প্রায় শেষ হয়ে আসে। লিটনের মনে জন্ম নেয়া বিন্দু বিন্দু ভয় ভয়ানক বৃত্ত তৈরি করে।

ডাক্তারের ফাইনাল রিপোর্ট। মাসল ওয়াস্টিং। ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের ফল। পা কেটে ফেলে দিতে হবে। মায়ের হাতের কাঁচের গ্লাসটি মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়।

দুধ মিয়া ফোন নিয়ে আসে।

চাচি, লিটন ফোন করেছে....

মা বিশ্বাস করতে পারেন না। কাঁদো কাঁদো  গলায় লিটনের আম্মা ডাক মোবাইলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র বেয়ে ভেসে আসে। মা কথা বলা ভুলে যান। লিটন মাকে তার অসুখের কথা জানায়।

লিটনকে মা বাড়ি নিয়ে আসেন।নুরাইন গ্রামের কাদামাটির ঘরে আসেনি। শহরের  দালান, ফাস্টফুডে অভ্যস্ত সে, এক শহুরে লিটনের প্রতি তার অভ্যাসগত টান ছিল। কিন্তু মা,
পৃথিবীতে মা-ই একমাত্র আত্মা যে সন্তানের কঙ্কাল নিয়ে ঘুমাতে পারেন। লিটল ব্যথায় অস্থির। মায়ের অস্তিরতা আরও বেড়ে যায়। পৃথিবীতে মা-ই একমাত্র নারী যিনি সন্তানের সহমর্মি হতে পারেন।

বাংলাদেশের ডাক্তার লিটনের পা কেটে ফেলার প্রস্তাব দেয়। মা তাতে রাজি হননি। বাড়ির পাশের জমিটুকু মা বিক্রি করে ফেলেন । লিটনকে ইন্ডিয়া নেয়া হয়। মাও সাথে যান। ইন্ডিয়ান ডাক্তাররা লিটন দা'র নিজয়েন্ট মেটাল দিয়ে পরিবর্তন করে দেয়। লিটন দা আর কোনোদিন বাম পা ভাঁজ করতে পারবে না, কোনোদিন না।



লিটন  দা এখন বাড়িতে। এখন আবার টিউশনি করানো শুরু করেছে। ভালোই টাকা আসে। এখনো সিএনজি সোঁ সোঁ করে চলে, কাক কা কা করে ডাকে। কিন্তু মা আর বিচলিত হন না।

লিটন দা আবার বিয়ে করেছে। মায়ের পছন্দে, লিটল দা এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। মেয়েটি লিটন দা'র অসুস্থতার ভার একটু হলেও হালকা করার চেষ্টা করে।

বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫

শিক্ষা

প্রতিযোগিতার পরিণতি হিংসা। হিংসার পরিণতি দ্বন্দ্ব, ঝগড়া, ধবংস। আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থা প্রতিযোগিতামূলক। তাই আমাদের জীবন-ব্যবস্থা হিংসাত্মক, ধ্বংসাত্মক। 

মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

লোকটি

লোকটি আমাকে সামাজিক হতে বলে। লোকটি আমাকে তার মতো হতে বলে। কিন্তু আমি তো আমি। আমার মতো আমি তো কাউকে দেখিনি। আমি কেন তার মতো হবো... আমি কেন সমাজের সেই কলাপাতার নিচ থেকে সবুজ বিলাবো ...তার মতো হলে মিটে যাবে বিশৃঙ্খলা? না না, কখনো না। বরং তার মতো হতে গেলে দেখা দিবে বায়ুশূন্যতা, বায়ুশূন্যতা থেকে ঘূর্ণিঝড়, টানটান টর্নেডো, সাইক্লোন।

লোকটি আমাকে তার মতো হতে বলে। লোকটি আমাকে ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডো হতে বলে। 

আসবে

আসবে গো দিন আসবে
ঠোঁটের নিচে পুব আকাশের সূর্যটা ঠিক উঠবে
আসবে গো দিন আসবে
এক কাতারে মানুষ সকল জোছনালোকে হাঁটবে
নাকের দেশে ফুলের বাতাস সরল মনে হাসবে
আসবে গো দিন আসবে
পুলিশ মানুষ গিটার ধরে মানুষের গান গাইবে
নদীর সেই নাব্যতা সুখ স্রোতের পথে ভাসবে
বাউল সুরে মাঝির নৌকা আবার হেসে চলবে
অন্ধকারটা আলো হয়ে রোজ সকালে ফুটবে
আসবে গো দিন আসবে
জোনাকপোকা আলো জ্বেলে অন্ধকারে সাজবে 

নকল

তোমার চেহারা এ রকম নয়, অন্য রকম
অনেকটা আপেলের মতো, অনেকটা কাঁঠালের মতো
তুমি হাজার বছরের চেহারা চিনো না, তোমাকে চিনতে দেয়া হয়নি
আয়নায় তুমি যে চেহারা দেখো সেটা নকল
জলপাই, নারকেল, আপেলের বীজ থেকে নকল করা
তুমি নকল, সত্যিই তুমি নকলের সন্তান

পৃথিবীতে একটা নকল দেখাও যেখানে নকল নেই
নকলের জঙ্গলে আমি তুমি আমরা-- হুঙ্কার তুলি, গর্জন করি মৌলিক বলে কিচ্ছু নেই,
মৌলিক বলে ব্যবসা করি
নকলের ঘর থেকে নকল তুলে আনি 

সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

নায়ক

সময় নায়ক তৈরি করে। সময় পারফিউম মুভির নায়ককে তৈরি করেছে। পারফিউম মুভির নায়ক মানুষ হত্যা করেনি, হত্যা করেছে পুঁজিবাজার। মানুষের মাঝে প্রেমের সেতু তৈরি করে সভ্যতার কঙ্কাল ভেঙে ফেলে সময়ের নায়ক। পারফিউম মুভির নায়ক জন্মেছিল বেঁচে থাকতে নয়, বাঁচাতে। 

রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

শীতের

শীতের ভেতর গভীর এক রাতে গভীর কথা বলার প্রেরণায় কুয়াশারা পৃথিবীতে নেমে আসে। জলের শব্দের সাথে কুয়াশার কথা হয়, কুয়াশার আলপথে নতুন এক উচ্ছ্বাস। উচ্ছ্বাস তুমি আমার ঘরের হৃদয়ের ক্যাম্পাস। 

চলে যাবো বলে

চলে যাবো বলে একা একা হাঁটি
চলে যাবো বলে পান্থশালার ঘরে আমার এক ফালি বাঁশি
চলে যাবো বলে হৃদয়ের ঘরে সোডিয়াম আলো
হৃদয়ের পাড়ে অভিমানী গান, সৃষ্টির সুরে অঞ্জলিযান
চলে যাবো বলে চোখের আশায় বেঁচে থাকার অভ্যাস
মন থেকে বন, বন থেকে আলোকপাত, উদ্ভুত এক আলোকপাত
তবুও অপূর্ণ, অপূর্ব অপূর্ণ থাকবে চিরকাল, মহাকাল 

শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

আধ্যাত্মিক

টিকেট না কেটেই কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশনের প্লাটফর্মে ঢুকলাম। গেটে সাদা পোশাক পড়া মানুষের অবস্থান। অনেককে অনেক কিছুই বলছে, টিকেট চেক চলছে কিন্তু আমাদেরকে কিচ্ছু বলেনি। হয়তো তার পেছনে কোনো আধ্যাত্মিক ঘটনা আছে।

আধ্যাত্মিক ঘটনা এক :  জীবন দার পিঠে গিটার ঝুলছে। আমার চেহারায় ভদ্রলোকের লেবাস। সুতরাং আমরা টিকেট না সংগ্রহ করে প্লাটফর্মে অবস্থান করতে পারি তা অবিশ্বাস্য।

আধ্যাত্মিক ঘটনা দুই : এটি বাংলাদেশ রেলওয়ে। পুরো বাংলাদেশেই আধ্যাত্মিক ঘটনার মহড়া চলে।

জীবন চোধুরী অবাক হলেন। কারণ ইন্ডিয়ান প্লাটফর্মে কোনোদিন তিনি টিকেট ব্যতীত অবস্থান করেননি। জীবন চোধুরী কেন, কোনো ইন্ডিয়ানও প্লাটফর্ম-টিকেট ব্যতীত প্লাটফর্মে অবস্থান করার মতো মানসিকতা রাখে না।

আমরা যে ট্রেন দিয়ে যাত্রা শুরু করবো তার নাম মহানগর গোধূলী। শোভন সিটে দুজন মুখোমুখি বসলাম। ট্রেনে বসলেই আমার তার কথা মনে পড়ে যে কথা দিয়ে কথা রাখে নি, কথা দিয়ে কথা রাখে না ; তার কথা মনে পড়ে যে বিরহ নয়নে আজও পথ চেয়ে বসে আছে ট্রেনের জানালা ধরে।

জীবন দা কথা বলছেন। আমি মনোযোগী শ্রোতা। কেউ কথা বলতে থাকলে আমার চোখের দৃষ্টি থাকে তার চোখে। কান দিয়ে কথা শুনি আর চোখ দিয়ে অন্তর পাঠ করি। ট্রাভেল টিকেট চেকার আসলেন।

জীবন দা আস্তে করে বললেন এখন কী হবে?

প্রত্যেক ঘটনার শেষটা অনুমান করে নিই। আর ঘটনার শেষ জানা থাকলে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে যারা টিকেট না-সংগ্রহ করে ট্রেনে অবস্থান করে তাদেরকে একটি নিদিষ্ট পরিমাণ অথবা টিকেটের মূল্যের সমপরিমাণ মূল্য  সরবরাহ করলেই ঝামেলা শেষ। চারপাশের যারা টিকেট কাটেনি তারা তাই করছে। এখন আমাদের পালা।

টিকেট?

টিকেট তো কাটিনি ( মুখে মৃদু হাসি)!

জনাব টি টি আর একটিও প্রশ্ন করেন নি, কোনো প্রকার মূল্যও কামনা করেন নি।

জীবনদা আবার অবাক হলেন।

কেন জনাব টিকেট চেকার টিকেট না-সংগ্রহ করার পরও আমাদের কাছে কোনো প্রকার মূল্য কামনা করেনি তা পৃথিবীর মানুষের জানবার কথা নয়। কিন্তু আজকে জানাতে ইচ্ছে হচ্ছে।

অনেক পুরাতন এক দিনে আমি ট্রেনে। ট্রেনে এমন ভিড় হাত-পা নাড়াচাড়া করার মতো কোনো অবস্থা নেই। টিকিট চেকার নিজেও টিকেট চেক করবেন তো দূরের কথা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ভিড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে ব্যতিব্যস্ত। এমন ভিড়ে আমার পাগল মনের ইচ্ছে হলো বই পড়বে। বই অবশ্যই আমার হাতেই ছিল। আহমেদ দফার ওঙ্কার। প্রতিটি লাইন যেন একটি অপটিক্যাল মহাসাগর। আর আমি মহাসাগরে কিনারায় বসা কোনো এক নবীন পর্যটক। যে পর্যটক ঢেউ গুণতে গুণতে সময় ভুলে যায়, ভুলে যায় নিজের শরীর বলে কোনো এক দৃশ্যমান অস্তিত্ব আছে, সেই পর্যটক।

হঠাৎ আমার চেতনালোকে শব্দের আবির্ভাব। নারীশব্দ-- দূরে দাঁড়ান, দূরে। যেখানে চুল রাখার মতো জায়গা নেই সেখানে আরও দূর কোথায় পাবো আমি! জনাব টিকেট চেকার রেগে গেলেন-- লোকটি আর দূরে কোথায় যাবে, পারলে আপনি যান, যান তো দেখি। নারী তার সাথে ঝগড়া করতে শুরু করে। ও মা ,এ কী অবস্থা! শব্দের ভীড়, শরীরের ভীড়, আবার চোখাচোখির ভীড়!

এক ঠেলা দিয়ে মানুষকে ফাঁক করে এই নারীর কাছ থেকে দুই তিন-হাত দূরে গেলাম। জনাব টিকেট চেকারকে বললাম ভাই আমার সাথে আসেন। তিনি আমার পাশে আসলেন।

টঙ্গী স্টেশন অতিক্রম করার সাথে সাথে নারীর পাশে দাঁড়ানো আরেকটি নারী শ্রাববমি করতে লাগলেন। নারীর সারা শরীরের বমিতে ভিজে গেল। চারপাশের লোক দূরে সরে গেল। যে বমি করছিলেন  তাকে আমার জায়গায় এনে তার জায়গায় আমি গেলাম। আবারো নারীটির পাশে আমি। তার সারা শরীর বমি আর বমি, দুর্গন্ধ আর দুর্গন্ধ। এখন আর নারীটি বলে না দূরে দাঁড়ান, আর একটু দূরে। বরং ট্রেনের সবাই নারীটির দূরত্ব কামনা করছে। এমন সময় জনাব টিকেট চেকারের সাথে আমার চোখাচোখি। আমি মৃদু হাসলাম। সেও মৃদু হাসলো। আমাদের এই মৃদু হাসিটা আজীবনের জন্য আমাদের হয়ে গেলো, আমরা কেউ কাউকে চিনি না কিন্তু প্রত্যেকে প্রত্যেকের মৃদু হাসিটা চিনি, হাসিটার অর্থ জানি....

শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

হাইপেশিয়া

সমাজে চাকচিক্য দেখি সাধক দেখি না। অনেকে আমার মতো নিজের প্রদর্শনীর কাজে ব্যস্ত। অনেকে ভদ্রলোকের মোড়কে দুর্দান্ত ডাকাত, অনেকে তেইল্লাচুরা কেবল নষ্ট করে, কেবলই নষ্ট।

সমাজে সাধক দেখি কিন্তু তাঁদের  মূল্যায়ন দেখি না। তাঁরা  ফুলার রোড থেকে দুই হাজার আট নাম্বার রুমে যাওয়া-আসা করেন। তাঁরা দায়িত্ব ও কর্তব্যের আন্তরিকতা নিয়ে মগ্ন থাকেন। তাঁরা টাইমলাইন চান না, তাঁরা দুধ থেকে মাখন প্রক্রিয়া পর্যন্ত ভ্রমণে বিশ্বাসী।
তাঁদেরকে পাগল বলে অসামাজিক করার চেষ্টা চলে। সমাজ তাঁদের চিনে না, চিনতে চায় না, কারণ তাঁদের  দিয়ে টেবিলের নিচের কাজটি হবে না, কারণ কেবল ব্যক্তিউদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তাঁরা একটি কাশি দিতেও প্রস্তুত নন। কারণ তাঁরা  সাধক। 

বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

শীতকালে মধু উষ্ণতা বাড়ায়। মধু এইভাবে উষ্ণতার সেন্টার হয়ে যায় 

বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

তর্ক

সাধারণত কারো সাথে তর্ক করি না। তর্ক করা জ্ঞানীদের কাজ মনে করি। আমি জ্ঞানী লোক নই।
অথবা তর্ক করা একটি খেলা। ছোটোকাল থেকেই তর্কখেলায় আমার কোনো আকর্ষণ ছিল না। আকর্ষণ না থাকার অবশ্যই কারণ আছে। কারণ বন্ধু ছিল হয় আমার চেয়ে বয়সে ছোট নয় বয়সে আমার চেয়ে বড়। ছোটদের সাথে অনর্গল কথা বলে যেতাম আর তারা শুনতো, আর বড়রা অনর্গল বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতো আর আমি শুনতাম। মনোযোগী শ্রোতা ও আন্তরিক বক্তা হয়ে আমার বেড়ে ওঠা।

জানালার পাশে বসতে চাইলাম। কিন্তু মহিলা আমাকে বসতে দিলেন না। আইনগতভাবে আমিই বসার অধিকারী। কিন্তু আইনি লড়াইয়ে জয়ী হতে কথা বলা লাগবে, তাই কথা বললাম। কিন্তু কথা বলাতেও হলো না। তর্ক করা লাগবে। কিন্তু আমি তো তর্ক করবো না। তাই মহিলা জানালার পাশেই বসলেন।

সূর্য টকটকে লাল রং ধারণ করেছে। অন্ধকার আসবে আসবে করছে। কুয়াশা আস্তে আস্তে অন্ধকারের উপর আধিপত্য স্থাপনের অভিযানে ব্যস্ত। সবুজ কালারের গাছগুলো অন্ধকারের গুনে গুণান্বিত হচ্ছে।

ট্রেন আড়িখোলা স্টেশনে। ট্রেনের ভেতর ভীড় এবং ভীড়। কিছু যুবক জানালা বেয়ে ট্রেনের ছাঁদে জায়গা করে নিলো। ট্রেন চলছে এবং চলছে। মহিলা ঘুমিয়ে আছেন। গভীর ঘুম। মুখের দরজা খোলা রেখেই তিনি ঘুমিয়ে আছেন। হয়তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সান্ধ্যকালীন নাস্তা শেষ করছেন। নাস্তা শেষ করার পর হয়তো তার জলের তৃষ্ণা পেয়েছে। তাই তিনি হয়তো জল কামনা করছেন। আল্লা বান্দাদের ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেন না। ছাঁদ থেকে লবণাক্ত পানির একটি ধারা মহিলার মুখের ওপেন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে লাগলো।

মহিলা কডা কডা বলে চিৎকার করে চোখের দরজা ওপেন করলেন এবং মুখের দরজা ক্লোজ করলেন 

মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫

শব্দের

বেঢপ > বেডক = অসুন্দর
ডক = সুন্দর
হাবলা = আঁচড়ে ধরা
হেওযু = সেই দিকে
বাউজ = ভায়ের বউ
হাবলাদা = তাড়াতাড়ি
এওযু = এই দিকে
হুক্করদা = হঠাৎ
আইব= লজ্জাজনক
ইতা = এইগুলি
বাইত= বাড়ি
আছলাম = ছিলাম
কামরি = আমাশয়
বাইসারে বাইসা = আশ্চর্যবোধক উচ্চারণ
ইডা = এটা
হাঅন = খাবার
হামুক = শামুক

সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫

পুলিশ ভোর

ভোর দেখলেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে এই বুঝি ভোর
মানুষ দেখলেই বুক পেতে রাখি
বায়োমেট্রিক চোখে প্রেম রাখি, মন রাখি
পুলিশ দেখলেই চিৎকার করে বলতে চাই ভাই আমরাও মানুষ

ভোরের ভেতর গভীর অন্ধকার, মানুষের বুকে হিংস্রতার ভিসুভিয়াস, পুলিশের চোখে টেবিলের নিচে এক বান্ডিল হাত 

প্রেম

যদি প্রেম দাও তাহলেই আমি নদী হবো, নৌকা চালাবে আপনে যতনে আমার যৌবন জলে। প্রেমহীন জলঘের আমার জন্য না, সব ঘের ভেঙ্গে পাড়ি দিবো সাগরে, বাড়ির নাম স্রোতের মোহনা। 

রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫

আহত

ভালোবাসাহীন এই ভূমি। ভূমির সন্তান মানুষ। মানুষ সইতে পারে না ভালোবাসার অসীম ভার। হালি ছটফট, ছটফট করে। আকুম-বাকুম শব্দ তোলে। ভালোবাসা গো যমুনা নদী আমার পুকুরের পোনা তোমার সংসারে আনিও না। পুকুরের পোনা স্রোত চিনে না, শৈবালে শৈবালে জীবন তাহার। শৈবাল চিনে পুকুর, পুকুর চিনে পোনা, শৈবালে পুকুরে পোনার জীবন-- দশ হাত ফুসফাঁস এক হাত চলন। 

শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

ভুল

মানুষ ভুল করে না, মানুষ ভুলের ফসল। মানুষের মৃত্যু হলেও মানুষের ভুলের মৃত্যু নেই। ভুল মিশে থাকে বাতাসে, ঠোঁটের বারান্দায়, আকাশের বেডরুমে।

ভুল চরিত্রবান, শুদ্ধতার আন্তরিক বন্ধু।

একটি বিখ্যাত ভুল করতে একটি বিখ্যাত জীবন প্রয়োজন। একটি বিখ্যাত জীবনের পাশে থাকা মানে বিখ্যাত সাহসের সাথে থাকা।
সাহস, জীবন, ভুল, শুদ্ধতা, বিখ্যাত আরো আছে যত সবকিছুই এক শিশি নারকেল তেলের কাছে তুচ্ছ। এমন করে সকাল গুরুত্বপূর্ণ, সকালের চেয়ে সন্ধ্যা এবং রাত। রাত এলেই ভুলের দরজায় বাজে কড়া নাড়ার গান, সুনসান নীরবতা এবং নীরবতা। 

সঙ্গীত

গানের মধ্যে থাকে কথা, গানের মধ্যে থাকে সুর, মৌখিক সুরের সাথে সাপোর্ট হিসেবে যুক্ত হয় যন্ত্র। ফলে সুর, কথা, যন্ত্রসুর মিলে গান।

প্যান্টের চেয়ে আন্ডারপ্যান্ট বড় হওয়ার রীতি চালু না হলেও কথা ও সুরের চেয়ে যন্ত্রসুরকে তীব্র আকারে উপস্থাপন করে সঙ্গীতসন্ধ্যা-যাপনের রীতি চালু হয়ে গেছে।

নতুনকে গ্রহণ করতে আপত্তি থাকার কথা না, তবে কী বর্জন করা হচ্ছে তা অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে। কারণ আকাশে উড়ে বেড়ানো যায় কিন্তু আকাশে ঘর বানানোর বিধিবদ্ধ হিসাব-নিকাশ এখনো সমাজ গ্রহণ করতে পারেনি। তাই জমিন এখনো আমাদের বাসস্থানের নাম, আমাদের শেকড়ের নাম।

শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

বিয়ে

সরকার আমাদের বিশ বছর পড়ায় তারপর ত্রিশ বছরের জন্য একটি চাকরি দেয়। মাওলানা পঁচিশ বছর পড়াশোনা করে তারপর ফতোয়া দেয়ার ক্ষমতা লাভ করে। সাধু বহুদিন সাঁইজির সঙ নেয়ার পর অবশেষে একদিন সুমতি লাভ করে।

সব কিছুতেই একটি নির্দিষ্ট সময় বিনিয়োগের ব্যাপার থাকে। কিন্তু একজন মেয়ে একজন ছেলেকে সারা জীবনের জন্য বন্ধু হিসেবে বেছে নিবে সেখানে কোনো সময় নির্ধারিত থাকে না। সেখানে বাইলাক নীতিকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

একজন মানুষকে বুঝতে হলে কিছু সময় বিনিয়োগ করা আবশ্যক। বিয়ের পর বোঝাপড়ার সময় থাকে না। কারণ বিয়ের পর সমাজ একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।
প্রথমে সমাজ দুজনকে বোঝাপড়া করতে বাঁধা দেয়, তারপর পুতুলবিয়ের মতো যখনই দুজনের বিয়ে হয় তাদের দূরে সরে যাওয়াকে কলঙ্ক মনে করে।

এইভাবে আমাদের সমাজ নারী-পুরুষের সম্পর্কের মাঝে শাঁখের করাত হয়ে অবস্থান করে। 

টিয়া পাখি

টিয়া পাখি আমার শৈশব। শৈশবের প্রিয়তা। সাদা বক ঝাঁকে ঝাঁকে মেঘনার উপর দিয়ে উড়ে যেতো অস্তগামী লাল সূর্যের দিকে। এক সময় সাদা বক রক্তিম সূর্য হয়ে পালিয়ে যেতো আমার দৃষ্টির সীমানা থেকে।
টিয়া পাখিও ঝাঁকে ঝাঁকে সাঁ সাঁ শব্দে উড়ে যেতো রক্তিম সূর্যের দিকে। কিন্তু টিয়া পাখি কোথায় যেনো হারিয়ে যেতো। যাচ্ছে যাচ্ছে, উড়ছে উড়ছে। আমার চোখ আর তাদের খোঁজে পাচ্ছে না। পাচ্ছে না তো পাচ্ছে না। আমার চোখ আজও টিয়া পাখি খোঁজে, ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া পাখি। টিয়া পাখি যদি বকের মতো সূর্য হয়ে যেতো তাহলে সূর্যের কাছে চিটি লিখতে বসতাম,

জনাব সূর্য,

বিশ্বাস রাখি ভালো আছেন। আমি ভালো নেই। ভালো থাকার অভিনয় করে সময়ে ভাসছি। খুব পাক্কা অভিনেতা তো তাই কেউ আমার হৃদয়ের রান্না ঘরে সিদ্ধ হতে থাকা অনুভূতির গন্ধ পায় না। আজকাল গোপন রাখার সুবিধা উপভোগ করতে শিখে গেছি। কারো করুণা পেতে হয় না। করুণাকে বিষের চেয়ে কাঁটাযুক্ত মনে হয়। তুমি ভাবতেই পারো তোমার কাছে বকবক করছি কেন। কারণ তো অবশ্যই আছে। আমার টিয়া তোমাকে ভালোবেসে সূর্য হয়ে গেছে। প্লিজ তুমি আমার টিয়াকে ফিরিয়ে দাও। টিয়া আমার শৈশব, আমার যৌবন, আমার গানের গোপন সুর, অসীম প্রেরণা। টিয়া ছাড়াও তুমি সূর্য সূর্যই থাকবে কিন্তু আমি রেজা, রেজা থাকবো না, ভেজা ঘ্রাণের মতো অন্তিম হয়ে যাবো।

কিন্তু টিয়া পাখি তো সূর্য হয়নি, হয়েছে ভুল পথের ফকির। আমিও হতে পারি ফকির তবে আমার পথের। এইভাবে দুই পথ কোনোদিন এক হবে না, এই চোখে আর পাবো না তেঁতুল পাতার চিকন চিকন মাংসের ফাঁকে টিয়া পাখির হলুদ হলুদ কলকাকলি!
টিয়া পাখি টিয়া পাখি আমি এখনো বসে আছি, বসে আছি আমার শৈশব নিয়ে, বসে আছি দুটি চোখ এক করে স্বপ্নের পথে। আমি জানি আমার সময় তোমার সাথে ভালো আচরণ করে নি, সেজন্য আই এম সরি, প্লিজ ক্ষমা করে দাও। তোমার ক্ষমার নদী স্রোতস্বিনী হলেই প্রাণ পাবে মরুময় ভূমি, উর্বর হবে আগামীকালের সকাল-দুপুর-রাত,  রসালো হবে কালকের বীজ ও ফসল।  

বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

নদী আমার

নদী আমার বহে না
নৌকা আমার চলে না
আমার মনের আন্ধারটুকু কাটে না, কাটে না।।

স্বপ্ন দেখার মেশিন কল থামে না, থামে না
সমাজের এই করাত কল বুঝে না, বুঝে না
আমার মনের কুয়াশা কাটে না, কাটে না।।

আলো আসে তবু আলো আসে না, আসে না
ভোর হবে তবু ভোর হলো না, হলো না
আমার মায়ের চোখের জল থামে না, থামে না।। 

বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

সিনেমা

নায়ক কখনো অসামাজিক কাজ করতে পারে না। কারণ নায়ক তো নায়ক, ফেরেশতার মানবিক ভার্সন।ভিলেন কখনো সামাজিক কাজ করতে পারে না। কারণ ভিলেন তো শয়তানের একমাত্র উত্তরসুরী।
বাস্তবিকপক্ষে কোনো মানুষের পক্ষেই একশত ভাগ খারাপ হওয়া সম্ভব নয়, একশো পার্সেন্ট ভালো হওয়া সম্ভব নয়। একশো ভাগ ভালো এবং একশো ভাগ খল চরিত্রের মানুষ আমরা সিনেমাতে দেখতে পাই। তাই আমাদের সিনেমা এক পরকালের নাম যার উপরে ইমান না আনাই চরিত্রবানের লক্ষণ। 

শব্দ

দোহান < দোকান

বিরিজ < ব্রীজ

আইয়্যা = এসে

আনহে = আপনি

কইত্তে = কোথা থেকে

জিগাইতে অইবো = জিজ্ঞেস করতে হবে
এনদা = এই দিকে

আজগা = আজকে

এ ন অই = এখানেই

টাইট বাফ ডাহাই লাইছে = বাধ্য করেছে বাপ ডাকতে

ইয়াত = আমতা আমতা জাতীয় শব্দ

লেংরা = পঙ্গু

ডর = ভয়

গানদা = পঁচা খাবার

অহনে = এখন

বন = বসেন

আনতাজি = অনুমান করে, এমনি এমনি

হরেন = হর্ণ

বাইলে পরলে = সুযোগ আসলে, সুযোগ হলে

মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

তোমাকে খুব ছোট করে দেখলে আকাশ মনে হয়, বড় করে দেখলে বৃষ্টির রাত 

সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

কথা

কথা বিক্রি হয়ে যায় জানালার বাইরে গাছের নিচে যেখানে অনেক বছর আগে একবার সূর্য এসেছিল বলে মনে করা হয়। কথা বিক্রি হয়ে যায় আদালতের কম্পনের সুরম্য দরজায়। কথা বিক্রি হয়ে যায় কঙ্কালের কাছে। কথা বিক্রি হয়ে যায় দর্জির গজগজ কাঁচির কাছে। কথা আজ আর কথা নেই, কথা আজ কথার কথা, কথাগুলো দাঁতের প্লেটে পেস্টের ফেনা। 

রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

এখনো আছি

বাসে খুব একটা ভ্রমণ আমার করা হয়ে ওঠেনি। ভ্রমণযান হিসাবে নৌকা আর ট্রেন সবচেয়ে প্রিয়। নৌকার সাথে পরিচয় মায়ের পেট থেকে। যদিও নানাবাড়ি ঠাকুরদাদার বাড়ি থেকে অল্প দূরত্বের পথ তবুও মা আমার নৌকাযানে  আসা-যাওয়া করতো। অবশ্যই বর্ষার সময়।

মাসির বাড়ি দুইভাবে যাওয়া যায়। পায়ে  হেঁটে এবং নৌকাযানে। কখনো আমাদের বাড়ির ঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ করে সরাসরি মাসির বাড়ির ঘাটে, আবার কখনো লোকাল নৌকাযানে। লোকাল নৌকাযানটি বাইশ মৌজা বাজারে নোঙর করে। তারপর বাকি পথ পায়ে হেঁটে। বাকি পথ বলতে প্রায় ছয় সাত মাইল পথ।

আমি আর আম্মা হাঁটা ধরতাম। আম্মা অনেক দ্রুত  হাঁটতে পারে। অনেক দ্রুত। প্রতিযোগিতা করে হাঁটতো। চোরা প্রতিযোগিতা। সামনের মানুষটাকে টার্গেট করে তার সামনে এগিয়ে যাওয়ার তীব্র চেষ্টা। তাতে আম্মা সফলও হতো। একটি লোককে অতিক্রম করার সাথে সাথে আম্মা আর আমি মিলে হাসতাম। মা ছেলের বিজয়ী হাসি। অবশ্যই এই হাসির কারন পৃথিবীর মানুষের জানবার কথা নয়।
নৌকা থেকে জলের দৃশ্য অসাধারণ। হযরত আলীর নৌকা। আমাদের ঘাট থেকে দুটি নৌকা বাইশ মৌজার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। মলাই মিয়ার নৌকা আর হযরত আলীর নৌকা। হযরত আলীর নৌকা বামন টাইপের শক্তিশালী। তাই হযরত আলীর নৌকাটি আমাদের খুব প্রিয়। আমি ছাঁদে, টিনের ছাঁদে বসে জলের খেলা দেখি। মেঘনা নদীতে যদিও তেমন স্রোত নেই আজ মনে হয় কিন্তু তখন মেঘনা নদীর স্রোত মনে বিশেষ এক থ্রিলিং তৈরি করতো। তিমি মাছ লাফ দিয়ে দিয়ে নৌকার এক পাশ থেকে আরেক পাশ গিয়ে পড়তো। জলরং ঘেষা কালো তিমির।
মাছরাঙা,  তাদের মাছশিকার। আকাশ থেকে হঠাৎ করে চিলের আক্রমণ। মাঝিনৌকা, তাদের  মাছধরা। লালপুর গ্রাম থেকে ভেসে আসা শুঁটকি শুঁটকি গন্ধ। পালতোলা নৌকার জলে-বাতাসে ভেসে চলা। আন্ডার প্যান্ট পড়ে বের বাওয়া জেলেদের হাসির বিন্দু বিন্দু দৃশ্য।  অনেক অনেক, আরো আরো মনমাতানো নয়নাভিরাম দৃশ্যকর্ম দেখে কখন যে বাইশ মৌজা বাজারে পৌঁছে যেতাম তা বলতেই পারতাম না। তারপর মাসির বাড়ি উদ্দেশে যাত্রা  অর্থাৎ কৃষ্ণনগর গ্রাম। অসম্ভব সুন্দর গ্রাম। বাঁশঝাড় প্রচুর। বাঁশপাতার সাথে বাতাসের সম্পর্ক হলে একধরনের সুর উৎপন্ন হয়ে থাকে যেখানে কৃষ্ণের বাঁশি জীবন্ত। এক কথায় বললে গ্রামটি সবুজের সন্তান, মানুষ সবুজসন্তানের উপাদান। এই গ্রামেই আমি কৃষ্ণনামের সাথে পরিচিত হয়, পরিচিত হয় রাধার কান্নার সাথে।

বাসে খুব একটা ভ্রমণ আমার করা হয়ে ওঠেনি। ভ্রমণযান হিসাবে নৌকা আর ট্রেন।

ট্রেনে আমি বসা। আমার পাশে এক মুরুব্বি লোক। আমি তাকে বসতে দিলাম। আমি যেখানে দাঁড়ানো তার পাশে একটি সিট। শোভন চেয়ার। দুইজন একসাথে বসা যায়। দুইজনই বসা। একজন মেয়ে, একজন পুরুষ।
হঠাৎ দেখি মেয়েটি কী যেন খুঁজছে। নাকফুল খুঁজছে।
পুবাইল স্টেশন চলে গেল, ঘোড়াশাল চলে গেল, টঙ্গী স্টেশন চলে গেল। নাকফুল পাচ্ছে না  তো পাচ্ছে না। আশেপাশের সবাই চেষ্টা করলো। সবার চেষ্টা বৃথা। আমি তখনও চেষ্টায় নামেনি। আমি চেষ্টা করার আগে মনে মনে মন্ত্রপাঠ করে নিলাম-- ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মুকসুদুল মোমিন কিতাব থেকে মন্ত্রটি শেখা। এই কিতাবটি বাংলাদেশের নারী মুসলমানদের খুবই প্রিয়। আমার বড় দিদি বিশ টাকা দিয়ে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে কিনেছিলেন। ফেরিওয়ালা হয়তো কোরআন শরীফ চিনে না কিন্তু মুকসুদুল মোমিনকে চিনে। কারন তাতে অর্থনৈতিক বেনিফিট আছে। মুকসুদুল মোমিনে শিখেছিলাম কোনো জিনিস হারিয়ে গেলে পাওয়ার জন্য কোন মন্ত্র পড়তে হয়, সম্মান বৃদ্ধির জন্য কোন মন্ত্র পড়তে হয়, কোনো নারীর সাথে প্রেম করতে হলে কোন মন্ত্র পড়তে হয়।

আমি মন্ত্রটি নিরানববই বার পড়ে নিলাম। তারপর মেয়েটিকে বললাম পা সরাতে। ও মা! পায়ের নিচে ছোট্ট নাকফুলটি।

মানুষ সকল অবাক!

মেয়েটি বিমানবন্দরে নেমে গেল। আমাকে একবার ধন্যবাদও দিলো না। শুধু নেমে যাওয়ার সময় একবার ফিরে তাকালো। দেখলাম তার চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু জল আমার দিকে চলে আসতেছে। আমি সেই জল নেবার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। খোদার কসম,  তার চোখের জল গ্রহণের ক্ষমতা আমার ছিল না!

অনেক দিন পর মেয়েটির সাথে আমার দেখা । আমাকে সে চিনতে পারেনি। আমার একটি সমস্যা আমি যা মনে রাখি তা ভুলতে পারি না। দাঁড়ি কমা বিন্দু বিসর্গ পর্যন্ত মনে থাকে। ঘটনা মনে করে দেয়ার পর সে চিনতে পারে। তারপর ছোট্ট একটি সূর্য তার মুখে উদিত হয়। সূর্যের তাপ অধিক ছিল না বলে আমি তৃষ্ণার্ত হইনি।  কিন্তু তার মুখে সূর্য দেখবো বলে আমি ততদিন পর্যন্ত বেঁচে  ছিলাম। এখনো বেঁচে আছি....

বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫

স্বচ্ছ

স্বচ্ছ ছিল ভোরের কুয়াশা
শীতের কবোষ্ণ উষ্ণ রোদ
তুসকের তলে শুয়ে থাকা ভোর
আম্মার হাতে জন্ম নেয়া পিঠাসকাল
আজকের সময় খ্যাত, বিখ্যাত, দগ্ধ, বিদগ্ধ
আজকের সময় চায়ের রঙে রঙিন
তবু যেন জীবনবোধ কনসার্টের সুরে কৃত্রিম, এক আকাশ সমান পরাধীন এবং পরাধীন এবং পরাধীন 

বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

যত গভীর ততই জলাভূমি
জলাভূমির গভীরে হৃদয়ের রান্নাঘর 

শ্মশানে

শ্মশানবৈরাগ্য আমার গোধূলির রাস্তায়
সেই সকাল, সেই দুপুর, সেই সন্ধ্যা
চিরচেনা একই ঘোর বারংবার

ফানুস আউস তুলে, আউসে বেঁচে থাকে মন

তবু বেঁচে থাকা কেন?

কেন কলকাকলি আর নীরবতার দ্বীপে মধ্যবিত্ত জীবন?

অসীম আকাশের পেছনে আকাশ, অসীম ব্যবধানের ভেতর অসীম ব্যবধান,
ব্যবধানে সমাধানে যেখানে হৃদয়প্রতিম বন্ধু সেখানে জন্মে হৃদয়বিস্ময়-- মরিবার স্বাদ-- জন্মিবার চক্রাকার অভিলাষ।
তবু কেন আশা জাগে কলাপাতার সবুজ ভাঁজে-- জানিবার চাই,

প্রশ্নটা আসল।

প্রশ্ন তুমি শ্মশানবৈরাগ্য আমার হৃদয়ের গহীনে জানাযায় 

শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

এক শব্দটি ভুল

আল্লা প্রথমে রোবট বানালেন। রোবটের কোরানিক নাম ফেরেশতা। একসময় ফেরেশতার বিবর্তন ঘটে। বিবর্তিত রোবটের নাম শয়তান।
শয়তান আর ফেরেশতাকে সামনে রেখে আল্লার ইচ্ছা হলো তৃতীয় কোনো এক শক্তির অবয়ব দিবেন। আল্লা বানালেন ইনসান।
মানুষ ফেরেশতা কিংবা শয়তানের মতো রোবট নয়, মানুষ এক স্বাধীন প্রাণি অনেকটা পাখির মতো, যে পাখি  খাঁচা থেকে বের হয় স্বাধীনতার আশায় কিন্তু  আকাশ নামক খাঁচায় আবারো প্রবেশ করে। এইভাবে খাঁচা থেকে খাঁচায়, বাসা থেকে বাসায় পাখিদের জীবন, মানুষের জীবন। 

বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

একা একা


একা চলা একটি যোগ্যতা।
একা চলা এক অসুস্থতার নাম।
অসুস্থতা কেমন করে যোগ্যতা হয়ে ওঠে তা যে একা চলে সেই কেবল জানে।
মানুষ তো ব্যবসায়ী, হৃদয়ের বিনিময়ে সমাজ অদল বদল করে। তর্কব্যবসা তোমাদের ভালো মানায়, আমি বসে থাকি কোনো এক রুমে আমার প্রভুর সাথে গোপন অভিসারে যেখানে রফরফ যায় না, যেতে পারে না। তর্ক এক পাশবিক নেশা বিষন্ন নেশার মতো। এক কাপ পরাজয় ঠোঁটে নিয়ে শুয়ে থাকি নিস্তব্ধতার বিছানায়। 

বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫

আগুন ফিরে এলো

লোকটি মানুষের কথা ভাবে, সমাজের কথা ভাবে। লোকটি সমাজের পরিবর্তন চায়। লোকটি সমাজ এবং মানুষকে চিনে। লোকটি সমাজ এবং মানুষের মঙ্গল কামনা করে। কোনো মানুষের অসঙ্গতি দেখলেই লোকটি আস্তে করে মানুষটিকে সতর্ক করে দেয়। মানুষও সতর্ক হতে বাধ্য। এইভাবে লোকটি মঙ্গলের মানদণ্ড হয়ে ওঠে।

একদিন আগুনের সাথে লোকটির দেখা।

ভাই আগুন, তুমি অনেক ক্ষমতাবান, তবে আমার একটা কথা আছে।

কী কথা?

দগ্ধ করা বাদ দাও, প্লিজ দেশে ফিরে যাও।

লোকটির কথা শুনে আগুন দেশে ফিরে গেল। আগুন দেশে ফিরে যেতে চায়নি, তাকে ফিরে যেতে বাধ্য করা হলো।

তারপর থেকে লোকটির বাড়িতে রান্না- বান্না সব বন্ধ, অফিস আদালতের কর্মচারীরাও সব চুপচাপ, তাদের চোখের নিচে পুষ্টিহীন জলের দাগ

লোকটি যেহেতু মানুষের মঙ্গলের চিন্তা করে সেহেতু সে আবার আগুনকে ফিরিয়ে আনতে গেলে। আগুন আবার ফিরে আসলো। তবে পৃথিবীতে না, লোকটির মনে। 

মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫

এক হাত

ঘর থেকে বের হলেই বারান্দা
বারান্দা থেকে মাটিতে পা রাখলেই পৃথিবী
পৃথিবী থেকে এক হাত দূরে আমার বাড়ি
এই এক হাত পথ পাড়ি দিতে জীবনের সমস্ত আয়ু খেয়ে ফেলে সাধু, সন্যাস, দরবেশ আর কালা মিয়ার বাড়ির বন্দী ডাহুক 

মিছামিছি

সাবের চোখে মাঝির জীবন মিছে
মাঝির চোখে সাবের জীবন মিছে
মিছামিছির খেলায় সব কিছু মিছে
সত্য তাই বাষ্পের শরীর শিশির কণার জীবন
অস্ত যায় না মৃত্যু খেলা, মেলা থেকে বেলা, বেলা থেকে মেলা 

স্বাগত রোদের ভেতর

বোধের ভেতর ভাবনা গো আমার কালে কালে তুমিই মহান
তোমার ভেতরে থাকে পালে পালে অসুর লাল নীল গোলাপী রঙের একঝাঁক বুদবুদ
বেদম বেদনাধরা একাধিক লোভ
কাল থেকে কালে মান থেকে মানে তুমি এক সরব প্রাণ
ছেলাকুছি ফল যৌবন লাল হলে পাখিদের খাবার
ভাবের দরজায় স্বভাবের তালা
স্বাগত রোদের ভেতর সাপের খেলা
ছেলাকুছি ফল গো আমার পলিফনিক উচ্চারণ তোমার ন মানায়
যৌবন ফলে বন সবুজ হলে বাঁশি বাজায় পুরুষ কানাই