বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪

শীতলক্ষ্যা

নদীর সাথে নদীর, নদীর সাথে সাগরের, সাগরের সাথে মহাসাগরের সম্পর্ক সরাসরি। আল্লার সাথে বান্দার সম্পর্ক সরাসরি বলেই আল্লা- বান্দার সম্পর্কে কখনো ফাটল সৃষ্টি হয়না। জলের এই শুদ্ধতম সম্পর্ক দেখে উপলব্ধির জায়গা শাণিত করার জন্য সুযোগ পেলেই ছুটে চলি নদীর আলিঙ্গনে। দিনটা ঢেকে আছে কুয়াশার আবরনে। জানুয়ারি শীতলতম মাস। শীতলতাও বেশ প্রাসঙ্গিক। শীতকালে শীতলক্ষ্যা স্নানে প্রশান্তিময় হবে আমার গোপন আস্তানা। তাইতো শীতলক্ষ্যার দিকে ছুটে চলা।
শীতালক্ষ্যা নদী (যা লক্ষ্ম্যা নদী নামেও পরিচিত) হল ব্রহ্মপুত্র নদের একটি উপনদী। এর গতিপথের প্রাথমিক পর্যায়ে এটি দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পরে নারায়ণগঞ্জের পূর্ব দিয়ে কালাগাছিয়ার কাছে ধলেশ্বরী নদীর সাথে মিশেছে। এর উপরিভাগের একটি অংশ বানর নদী নামে পরিচিত। নদীটি প্রায় 39 কিলোমিটার লম্বা এবং নারায়ণগঞ্জের নিকটে এর সর্বোচ্চ প্রস্থ প্রায় ৩০০ মিটার। এর সর্বোচ্চ প্রবাহ ডেমরার কাছে ২,৬০০ কিউসেক। সারা বছর ধরে এর নাব্যতা বজায় থাকে।
এই শীতলক্ষ্যার জোয়ার নিয়মতান্ত্রিক। অর্থাৎ পলিসি মেইনটেইন করে চলে। নদী অবশ্যই মাত্রা, ছন্দ মেনে চলে। তবে দৃশ্যমান চোখে তা সবসময় মাপা যায়না। কিন্তু যে শীতলক্ষ্যাকে দেখলাম সেই শীতলক্ষ্যার গতিবিধি চোখের ক্যালকুলাসে ধৃত। চুপচাপ বয়ে চলার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

আমরা তিন জন। কাজী বর্ণাঢ্য, মাইন উদ্দিন সরকার আর আমি। ইচ্ছে ছিল রিক্সা করে চরসিন্দুর গ্রামে যাওয়া। কিন্তু কলের কাজ যে বলে চলেনা। তাই সিএনজি করে শীতলক্ষ্যা অভিমুখে। সিএনজি গ্রাম্যনিয়মে ছুটে চলছে। আমি ড্রাইভারের বাম পাশে বসা। সম্পাদক ও কবি বসে আছে পেছনের সিটে। গল্প করা ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ নেই। কারন সিএনজি কাজের চেয়ে কেওয়াজ করে বেশি। চারপাশের দৃশ্যগুলো চোখকে টেনে তার দিকে নিয়ে যায়। গ্রামগুলো যেন সবুজের পাহাড়। আর আমরা সবুজপাহাড়ের গুহার ভেতর দিয়ে স্বর্গয়ীয় ঝরণার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তালতলী গ্রামে যখন আমরা তখন একটি নতুন কবরের দিকে তাকানোর জন্য মন চোখকে হুকুম দেয়। চেয়ে দেখি এটি কবর নয়, মাজার।নাম নাজানা বাবার মাজার। তাও আবার রাস্তার পাশে। রাস্তার পাশে মাজার থাকলে ব্যবসা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশ। তাছাড়া গ্রামের মানু মাজারকে বৈষয়িক সফলতার হাসপাতাল মনে করে। ফলে মাজারে বিশ্রাম নেয়া বাবার ফান্ডে দুই-এক টাকা করে জমা হতে থাকে। যেহেতু বাবা রাস্তার পাশে তার সোস্যাল কেপিটেল ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে আবশ্যিকহারে।

যাক, বাবার কাছে দোয়াপ্রার্থনা করে উদ্দেশ্যের দিকে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর চোখে আসে সবুজের মাঠে ইটমিল। সারি সারি কাঁচা ইট রাখা। এইভাবে রাখা হয় পনেরো দিন। তারপর আগুনের চুল্লিতে রাখা হয় প্রায় পনেরো দিন। ইট বলতে যা বোঝানো হয় তাকে আমরা পাই প্রায় দেড় মাস পর। আর দেড় ঘণ্টা পর সূর্যের  স্বাভাবিক আভাটুকু থাকবেনা।সূর্যের আভাহীন শীতলক্ষ্যা দেখার অভিপ্রায় নেই প্রায়। তাই একটু তাড়া।

চরসিন্দুর গ্রামে এসে পৌঁছালাম বিকালের শেষ লগ্নে। সোমেন চন্দ পাঠাগারের সামনে আমরা। অনেক দিন আগ থেকেই এই পাঠাগারের গল্প শুনতাম। গল্প শুনতাম শহিদুল হক সুমন ভাইয়ের। তিনি সুমন স্যার নামে এলাকায় পরিচিত। মুক্তমনা মানুষ। গল্প লিখেন। তার সাংগঠনিক ব্যবহার প্রসংশা করার মতো। সমাজ, মানুষকে নিয়ে তাঁর ভাবনা স্তাবকতার যোগ্যতা রাখে। পাঠাগার থেকে একটি সিগারেট খাওয়ার দূরত্বে আমাদের আরাধ্য শীতলক্ষ্যা। শীতলক্ষ্যার গন্ধ পাচ্ছি। মৃন্ময় গন্ধ। প্রিয়ার ডাকে প্রিয় লেইট অস্তির বিরক্তিকর। তাই আমার শরীর, মন নিয়ে শীতলক্ষ্যার কাছে নিজেকে সমর্পণ করলাম। নদী মানেই মা, নদী মানেই প্রিয়া। তাইতো সব নদীর পাড়ে মানুষের বসতি। এই শীতলক্ষ্যায় জেলের প্রাচুর্য নেই, স্বল্পতার গ্লানিও নেই। জেলেরা শীতলক্ষ্যার মতোই ধারাবাহিক। কুমিল্লার গোমতী নদী যেন এই নদীর ছোট বোন। দুই বোন নিজ কাজে আড়ম্বরহীন আন্তরিক। নদীর এপারে নরসিংদী, ওপারে গাজীপুর। নদীকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ প্রাদেশিক বিভক্তি হয়ে থাকে। কিন্তু নদী তো বিভক্তি চায়না। নদী কখনো চায়না পৃথিবীর বুকে আরেকটি পৃথিবী হোক। অথচ সে-ই বিভক্তির অনুঘটক। নদীর দুঃখ হয়তো এখানেই।
রাত নেমে আসে। শীতের রাত। শীতলক্ষ্যার সাথে দেখা করার জন্য অন্ধকারে সাথে দলে দলে নেমে আসে কুয়াশার তাবলিক। শীতলক্ষ্যার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। সেও আমাদের বিদায় দিল, বড়ই নির্লিপ্ত শীতলক্ষ্যার বিদায়ভাষা। অটোরিক্সা করে নীড়ে ফেরার পরিক্রমা ।সবুজের পাহাড় থেকে নেমে আসা বাতাসের সাথে ধাক্কা অনুভূত ,শীতল ধাক্কা। একেকটি ধাক্কা যেন একেকটি জীবনের স্পন্দন, মধুময় প্রশান্তি।কত অব্যক্ত দৃশ্যপ্রিয়া লেপ্টে আছে সেই প্রশান্তির কানায়-কোনায়।। 

সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

অজয় নদী

অজয় নদী

ভোরের হাসির সাথে দেখা হয় যদি,
বলিও আমি এক স্বচ্ছ কুয়াশা তোমার স্লোগানে  আমার বাড়ি।
বর্ষায় তোমার যে বীর্য, সেই বীর্য ভেঙে আজকের আমি, আমরা। শীতকালে আমাদের মাঝে তোমার তারূণ্যের আবির রাঙ্গিয়ে উঠে। তুমি তো এমনই সারাবেলা থাকতে চাওনা, সাধকের মতো গোপন হয়ে যাও, বাবার মতো নিজেকে রূপান্তর কর।

আজ বন্যশীত

শরীর কেঁপে উঠার আগে হাড়ে সাইক্লোন উঠে। এই শীতে তোমার চামড়ায় ছোট্ট ছোট্ট মৃত্তিকাদ্বীপ যেন সদ্য যৌবনা কোনো তন্বীর লাল টিপ। পাশে সবুজেরা অলংকারের মতো প্রহরীর চেতনায় জেগে আছে।
বিদায় কখনো আনন্দের হয়না, বিদায় বেদনাকে নন্দন করতে পারে শুধু। আজকের সূর্য, এই শীতের সূর্য যখন বিদায় নেয় তখন সজল বেদনা ছড়িয়ে থাকে তোমার থোরা থোরা প্লাবনে। একটি সোনালি নীল যেন চোখের জলের সমার্থক, বিদায় রাগের সতীর্থ। সবুজ সমেত গ্রাম হয়ে পড়ে ভাষামন্থর স্থিরচিত্র।
রাতের সাথে তোমার মিতালি অন্যরকম তবে ভিন্নরকম নয়। রাতের নদী খুব বেশি যৌথ। রাতের নদী খুব বেশি সামাজিক। সাগরের দিকে ছুটে চলে ধীমান লয়ে।
রায়পুরের রাণী তোমার গভীরে মিশে যায় কোন সময়টাতে
আমি জানি! রাণীর সাথে তোমার একনিষ্ঠ পরকীয়ার কথাও
আমি জানি।
আমি তো এমনই সবকিছু জেনে যাই, আজ না হয় কাল, কাল না হয় পরের দিন।আমাকে যে জানতেই হয়।

কেন জানবো না?

আমার ভেতরে যে সুরের উৎসব তাও তোমার উৎসের কথা বলে। তুমিহীন আমি না হতে পারি দৈহিক, না হতে পারি আত্মিক।

অজয় নদী

আমি তোমার রক্তের উত্তর পুরুষ, চুপচাপ বসে খেলা দেখছি কেবল। আশীর্বাদে ধন্য করো যেন চোখযুগল সুস্থ থাকে -- পৃথিবীর শেষ খেলাটি দেখার জন্য।।

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

জীবনের মাঠে

জীবনের মাঠে চিন্তারাম ফুটবল খেলে
যুক্তিরা ভুল ধরে রেফারি সেজে
ভুল, শয়তানের মতো শক্তিশালী
ইশ্বরের গোপন ভাণ্ডারে করে মারামারি
ইশ্বর অসহায়!
patience is divine 

বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

ছোঁয়া

কতটুকু ছোট হলে আকাশ ছোঁয়া যায়
কী পরিমাণ সুখী হলে দুংখ কেনা যায় 

বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৪

ঝড়ের পাখি

ঝড়ের পাখি শিকার করতে নেই,
 আজকাল ঝড়ের খুব কদর,
প্রলোভনে বসে থাকে শিকারিমন। 

মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

খুব বেশী সাজতে নেই

খুব বেশী সাজতে নেই
আওয়াজ তোলে বেতাল মনে কাঁদতে নেই
নিজের চোখে অন্য ছবি আঁকতে নেই
কানকথায় স্বর্গ পানে হাঁটতে নেই
পারো যদি,
যদি ভুলে স্বপ্ন দেখ
আকাশটা ছাদ বানিয়ে পায়ে হাঁটো
পিছলে পড়া অতীত ভুলে হাসতে শিখো
নিজের মনে মহান ক্ষমার শিল্প খোলো 

সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৪

তিতাস

আশুগঞ্জ গোল চত্ত্বর।  বাস দাঁড়ানো। বাসে উঠলাম। সমস্ত বাস ফাকাঁ। ড্রাইবারসহ আমরা তিনজন। বাস চলতে আরম্ভ করল। উজান ভাটি হোটেল অতিক্রম করার আগেই বাস পরিপূর্ণ। বিষয়টি জাদুর মতো মনে হল। আশুগঞ্জের মানুষ আবার জ্বিনে যতটুকু বিশ্বাসী পরকালেও ততটুকু বিশ্বাসী নয়। আমিও আশুগঞ্জের যোগ্য অধিবাসী। তাই আমাকে না জানিয়ে মন সংশয় প্রকাশ করতে শুরু করল যে এরা আবার জ্বিন না তো!
আয়তুল কুরসী " জানা আছে, জ্বিন হলেও আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তাছাড়া সকালে যেহেতু সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করে বাড়ি থেকে বের হয়েছি সেহেতু আল্লার বিশেষ ফেরেশতা তো আমার হেফাজতে নিয়োজিত আছেই।

বাস চলছে। মহিলাদের সিট বাসের সামনে থাকে। মহিলাদের জন্য আলাদা সিট রাখার পক্ষে আমি না। তাই মহিলাদের সিটে বসলাম। শাঁ শাঁ করে বাস চলছে। দৃশ্যগুলো ছোট থেকে বড়, বড় থেকে ছোট হয়ে যাচ্ছে। বিপরীতমুখী বাস যখন আমাদের বাসটি অতিক্রম করে মনে হয় দূর্ঘটনা ঘটে গেল বুঝি।
মাঝে মাঝে মোবাইলে  স্নেক গেইম খেলি। খুব ঝুকিপূর্ন। একটু কন্সেন্ট্রেশন ব্রেক হলে নিশ্চিত পরাজয়। বাসে উঠে দেখতে পেলাম প্রত্যেক ড্রাইবার সরাসরি স্নেক গেইম খেলছে। আমরা তো জাতি হিসাবে কৃপণ নয়,
তবে রাস্তার জায়গা নির্ধারণে এতো কৃপণতা কেন?
যাক, কোনো রকম দূর্ঘটনা ঘটেনি। বাস যথারীতি থামল। আমিও যথাস্থানে এসে পৌঁছালাম। ব্রাক্ষণবাড়ীয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে রিক্সা করে গাঁও গেরাম রেস্তোরাঁয় এসে পৌঁছলাম। রেস্তোরাঁটি অত্যন্ত ছোট পরিসরে কিন্তু গোছানো। তিতাসের পাড় ঘেষে তার অবস্থান। আমি এখানে অবস্থান করেনি। কারণ ততক্ষণে তিতাস আমাকে ডাকতে শুরু করেছে।
তিতাসের এক কোণে স্নান করছে পৃথিবীর মানুষ। তিতাস মানুষদের ময়লামুক্ত করে। শুধু দেহের ময়লা নয়, মনের ময়লাও বটে। আমার মনের জমাটবদ্ধ ময়লাগুলো গলতে আরম্ভ করে। আমিও তিতাসের ভেতর থেকে ভেতরে ঢুকতে থাকি। লজ্জার আবরণে ঢাকা তিতাস। দামের পোশাক পরিধান করে আছে তিতাস। কচি লতার মতো তার শারীরিক বাঁক। তার গর্ভে সুস্বাদু মাছের শিল্পশালা। তিতাসজেলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তারপরও সীমিত জেলের ঘর-বাড়ি তিতাসের উদাম দেহে।

ইজুলিয়া বিলে ঘর বানিয়েছে জেলে। ফারুক মিয়া সরকারের কাছ থেকে এই দোগাঙ্গি বিলকে ইজারা নিয়েছে এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে। শীতকাল যখন পূর্ণ যুবতী তিতাস তখন শতবছরের বৃদ্ধ। ফলে ধান চাষের  মওসুম শুরু হয় এবং এই ইজুলিয়া বিল হয়ে পড়ে গোচড়ানোর চারণভূমি। শীতকাল বলে তিতাসের মাটির গন্ধও পেলুম খুব করে, আপন করে। তিতাসের মাটির গন্ধে স্বাধীন এক মমতা আছে, মমতাময়ী স্নেহভরা আকুতি রয়েছে। সেই মমতা, সেই স্নেহ আমি এড়াতে পারিনি। তাইতো গ্রাম্য মেয়ের সম্মতিসূচক চোখের পাপড়ির মতো ধ্যানস্থ হয়ে রইলাম। ধ্যানে ধ্যানে চলে গেলাম গোকর্ণ ঘাটে।

গুফন ঘাটে অনন্তের মার সাথে দেখা। হাতে তার এন্ড্রয়েড মোবাইল সেট। তিতাসের জল থেকে কলসী কাঁখে সে আর জল আনেনা। এখন তার বাড়িতে টিউবওয়েল। কিশোরকে সে ফেইসবুকে খুঁজে, ভুল নাম্বারে প্রেমের মেসেজ পাঠায়, মেসেজের উত্তর আসেনা। তবুও তিতাসের জলের দিকে তাকিয়ে আছে অনন্তের মা, আমার ধ্যানস্থ আকাঙক্ষা

ও তিতাসের পানি
জানো তুমি, জান কী তুমি?
কোনো নিয়মে জীবন এতো দামি?

রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৪

জীবনের ঘ্রাণ

ভৈরব থেকে আশুগঞ্জ। অটোরিক্সা করে আসা যায়। তার জন্য ভাড়া গুনতে হয় পঁচিশ টাকা। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু অতিক্রম করে আশুগঞ্জ তিন রাস্তার মোড়ে এসে নামলাম। মিষ্টি খিদা অনুভব করছি। তাই সরাসরি বাড়ি যাওয়া বেটার। তিন রাস্তার মোড় থেকে দুইভাবে বাড়ি যাওয়া যায়,

এক : আলম নগরের রাস্তা দিয়ে
দুই : আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার-এর পথ দিয়ে

ভাই, যাবেন?
কই?
বাজার চারতলা।

 ওডেন।

রিক্সাওয়ালার নাম ইকবাল মিয়া। বাড়ি দৌলত কান্দি। তার দুই ছেলে,  এক মেয়ে। বড় ছেলেটা ক্লাস সেবেনে পড়ে, ছোট মেয়ে প্লে ওয়ানে, মেজ ছেলে ক্লাস ফোরে।

বাপ যদি সন্তান জন্ম দিয়া পরালেহা না করাইতে পারে তইলে হে বাপের নামে কলংক

ইকবাল মিয়ার কথা শুনে বেশ ভালো লাগল। চুপ করে কথা শুনতে থাকি। মাঝে মাঝে ছোট ছোট প্রশ্ন করি। এই ছোট্ট প্রশ্ন তার কথাকে দীর্ঘমেয়াদি করে। আমার সাথে কথা বলে সেও হয়তো আরামবোধ করছে। কারন দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়া তার প্যাডেলে দেখতে পাচ্ছি না।
সে নয় বছর মালয়েশিয়া ছিল। ছোট দুইটা ভাইকে বিদেশ নিয়ে সে দেশে চলে আসে। আবার চলে যাবে। সন্তান নেয়ার ব্যাপারে সে খুব হিসাবী। তিন বছর পর পর সে সন্তান নিয়েছে।

ভাই দেশ কেমন চলছে?

হুব বালা। পুলিশের বেতন বারছে, অহন হেরা বালা কইরা ডিউটি পালন করে, আগে এমন দেহি নাই।

ইকবাল মিয়ার আপন চাচাতো ভাই মেজর। এখন মিশনে আছে আফ্রিকায়।  আগে তার ভাইটি বিএনপি করত। এখন নাকি আওয়ামীলীগ-এ যোগ দিয়েছে। তবে চার লাইনের রেলপথ তৈরির সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার সরল প্রসংশা করেছে ইকবাল মিয়া।
ইকবাল মিয়া বসে থাকতে রাজি না। সে মনে করে বিদেশে বাঙালীরা যে ডিউটি পালন করে বাংলাদেশে যদি তা করে তবে টাকার অভাব হবে না।

আপনার দৈনিক উপার্জন কত?
আদা বেলায় পাচ শ টেহা।

নিজের রিক্সা। তাই রিক্সাভাড়া গুনতে হয়না। আমি কে বা কী করি সে একবারও জানতে চায়নি। নিজের কথা, দেশের কথা বলতে বলতে লালপুরের কোণায় চলে আসে ।
তাকে চল্লিশ টাকা ভাড়া দিয়ে বিদায় নিলাম। এখান থেকে বাবার বাড়ি পাঁচ মিনিটের পথ। বর্ষাকালে এখান থেকেই খেয়ানৌকায়
উঠতে হয়। শীতকাল বলে শুধু বাঁশের সাঁকো পার  হলেই বাজার চারতলা। শীতকালের এই মরা নদীটির পূর্বপাড় ঘিরে আড়াইসিধা গ্রাম, পশ্চিম পাড় ধরে চরচারতলা ইউনিয়ন তথা আশুগঞ্জ বন্দরের অবস্থান। এক সময় চরচারতলাও আড়াইসিধা ইউনিয়নের অন্তুর্ভুক্ত ছিল। গ্রাম্য স্বার্থকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের একটি ঝগড়া হয়, তাতে চরচারতলার একজন মানুষ মারা যায়, আড়াইসিধারও একজন মানুষ মারা যায়। তখন থেকে তারা আলাদা ইউনিয়ন।

বাঁশের সাঁকোর ভাড়া দুই টাকা। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন ভাড়া ছিল পঞ্চাশ পয়সা। কখনো পয়সা দিতাম না। কোনোক্রমে সাঁকো থেকে নেমে এক দৌড়, আমাকে আর পায় কোথায়। সপ্তম শ্রেণীতে যখন পড়ি তখন থেকে সাঁকো ভাড়া দেয়ার বিষয়ে সচেতন হয়। কিন্তু আমি যখন দিতে শিখলাম তারা আর নিতে চায়না।

আজকে ভাড়া নেয়ার দায়িত্বে আছে সুজন। প্রতিবন্ধী। ছোট কালে পোলিও হয়েছিল। ফলে বাম পাটি শক্তিহীন হয়ে পড়ে। এখনো পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। সে এখন  নবম শ্রেণীর ছাত্র।  আমাকে দেখা মাত্র ভরাট কণ্ঠে `কাকা ডাক'। তারপর একগাদা অভিযোগ -- আমি নাকি সুজনের ছবিতে কোনো লাইক দেয়না অথচ সে আমার ছবি দেখামাত্র লাইক দেয়, তার কবিতা কেন আমার পত্রিকায় ছাপায়নি ....এমন অনেক অভিযোগ।
সুজনকে ভাড়া দিতে চাইলাম। সে আমার কাছ থেকে ভাড়া নিবে না তো নিবে না।
সাঁকোর পাশেই কনি জাল দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা চলছে। মাছ আসে না।

কীভাবে আসবে?
নদীতে তো মাছ নেই।

তারপরও চেষ্টা থেমে থাকে না।
সুজনকে চা খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটছি। রাস্তার কুমারী বাঁক, বাঁকে বাঁকে জীবনের ঘ্রাণ, আমার লেপ্টে থাকা শৈশব।

আড্ডা

কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম রুব্বান আর রাবেয়া চাচীর সাথে। তারা একই এলাকার(মানিকদিয়া) মেয়ে। দুজনের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্ব। ফুল বিক্রি করে। ফুল বিক্রি উপলক্ষ, লক্ষ্য অর্থ উপার্জন করা।

অহনকার মাইয়্যা-ছিরিরা ফুল কিনত চা না

তারপরও ছেলে-মেয়েদের যুগল বসে থাকা  দেখলেই তারা ফুল বিক্রি করার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। তাদের  ব্যাকুলতা দেখে কেউ কেউ আধুনিকভাবে অর্থ দিয়ে দেয় কিন্তু ফুল কিনে না। একটা সময়ে ফুল ছিল প্রেমিক যুগলের দ্বিতীয় প্রেম। হয়তো এই কারনেই আপেল মাহমুদ লিখেছিলেন "মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি "। এখন আর প্রেম শব্দটি খুবভাবে শুনতে পাইনা, শুনতে পাই relationship, girl friend, boy friend যাদের স্লোগান If any relationship does not serve you let him/her go alone।

চাচীরাও ফুলের ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া ভিক্ষুকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে অর্থাৎ ভিক্ষুকরাও বেকার সমস্যার করাল আগ্রাসনে পড়ার জোরালো সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

রুব্বান চাচী স্মার্টলি সিগারেট টানে। তার নাসিকা ছিদ্র দিয়ে প্রধোঁয়া নেমে আসে পৃথিবীতে। তার স্বামী `হাফিজ' তাকে সিগারেট খাওয়া শেখায়। তিনি ছিলেন হাফিজের তৃতীয় বউ। তাকে বিয়ে করার পরও হাফিজ আরো দুটি বিয়ে করে। পাকিস্তানি যুদ্ধের সময় চাচী চলে আসেন তার ভাইয়ের কাছে। ভাইয়ের সাথে এখনো আছেন। ভাইটাই তার সুখের- দুংখের ভাগিদার। ভাইটা খুব অসুস্থ।

রাবেয়া চাচীর স্বামী থেকেও নেই। রাবেয়া চাচীর স্বামী যখন দ্বিতীয় বিয়ে করে তখন সে স্বামীত্যাগ করেন। একমাত্র কন্যাকে সাথে নিয়ে নিজগ্রামের অভিমুখে চোখমুখ ফেরায়। কন্যাকে বড় করে, এক হোটেল মালিকের সাথে কন্যাকে বিয়ে দেন, কন্যার সন্তান হয়, তাদেরও বিয়ে হয়ে গেছে প্রায়।

তাদের অর্থ উপার্জনের এলাকা ঢাকা ইউনিভার্সিটি। তাদের শিকার ছাত্রছাত্রীরা। করুনার পণ্যে তারা অর্থ উপার্জন করেন। অনেক ধর্মপ্রাণা টাকা দেয় আর দোয়া প্রার্থনা করে যেন একটি সুন্দর পোলা  পাই, আবার অনেক ধর্মপ্রাণ টাকা দেয় আর দোয়ার আর্জি করে যেন একটি সুন্দর মাইয়্যা পায়। এই বিষয়টি চাচীদেরকে কুড়ি বছর আগে নিয়ে যায়, চাচীরা তাদের স্বামীর কথা মনে করে,তাদের স্বামীরা ছিল বিয়েবিলাসী যাদের কারনে আজ তারা ভিক্ষুক।

শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

মানুষ হিসাবে

মানুষ হিসাবে আমার ভুল হতে পারে,
ভুল চর্চা করতে পারিনা যেহেতু আমি মানুষ।

Mistake is the incident,
I can't practise mistakes as a man. 

বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

মিউ মিউ

গভীর রাতে বিড়ালের মিউ মিউ গভীর এক অস্থিরতা। গভীর সান্ত্বনা তখন শারীরিক ব্যাপার। অনুঙ্গ ভুজঙ্গ বিষ সর্বাঙ্গে ছড়ায়। শারীরিক আদালতে মানসিক খাব। জীবনের বাগানে যৌবনের রাত।
জীবনের নৌকা যৌবনে বায়,
যৌবনের ক্ষুধা জীবনের তাই।

বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

পুতুলের বিয়ে

প্রথমবার একটি পুতুল শাড়ি পড়েছিল।
প্রথমবার একটি পুতুলের বিয়ে হয়েছিল।
বিয়ে হওয়ার অনেক দিন পরে পুতুলটি নারী হলো।
নারীদের আকাশে এত পাখি উড়ে কেন?
পাখিদের ডানায় উড়ে কামের বাতাস। মদন দেবতা কামুক আকারে সাকার।লোভাতুর কামনায় ভোগের আবাস।
ভোগে সুখ, ত্যাগেও সুখ, রমরমা সুখের বাজার।  

সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

দেখা হয় যদি

এক বছর চলে গেল
এমনিতেই চলে যাবে এক যুগ
পৃথিবীর সূর্য হবে আজকের কুয়াশা
কুয়াশা এমনই তরল, বহুজাগতিক স্মার্ট
মিশে যেতে পারে মৃত্তিকার সংসারে
হতে পারে আধার কসমোলজির আঁধারে
চোখটাই কেবল ব্যর্থ  আগুনকে গুণ ভেবে
সাপের গর্তে নিজেকে রেখে
আজ থেকে বহুদিন পর
আগুন আর সাপের সাথে দেখা হয় যদি
তখন হয়তো ভাববো
হয়তো ভাবনা
সাপের আর আগুনেরও ছিল আন্তরিক নদী

শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৪

সাপ

শীতকালে সাপ গর্তে চলে যায়, সচারচর সামাজিক হয়না
শীতকালে মানুষের সাপ জেগে উঠে, পারত অসামাজিক হয়না
Snake used to live in hole in winter and for then it is unsocial
The snake of man is alive in intention in winter and try to keep it social

বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪

রাগ

রাগের আয়ু বেশী দিন হলে জীবনের আয়ু কমে যায়, অভিমানের আয়ু কৌমার্য হলে সম্পর্কের বন্ধন বৃদ্ধি পায়।

বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৪

কাব্যগুলো

ঠোঁটের ভাঁজে,চুলের  নীচে
আমার সজল বাসা
চোখের নীচে জলপাই রঙ
স্বপহীন এক আশা
লবন সমেত হাসি তোমার
গাইনদা চালের ভ্রু
বুকের দেশে সৌম্য নদী
গানিতিক ঢেউ স্লো
ভাষার গতি নিত্য নতুন
ফাগুন মাতাল দোল
তুমি আমার বন্য পাখি
গুনের কাব্যগুন

রাজনগরের বেটি ল

কোপাই নদী।
খোয়াই নদী। তোমার জলে চমৎকার নুড়ি!
বাঁশপাতার সজীবতা তোমার জলে,
তোমার জল কত শান্ত, সিগ্ধ, সমাহিত, প্রাগৈতিহাসিক, প্রাজ্ঞ!তোমার জল অভিমানী সুন্দর , ঝড়প্রবণ মনোহর।
তোমার জলে স্নান করবো বলে জন্মের পর গতরে জল লেপন করিনি। তোমার জলে তৃষ্ণা মেটাবো বলে মানুষের পৃথিবী বদল করেছি, হয়েছি চাতকপৃথিবীর বাসিন্দা।

বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়,

বিশ্বাস রাখি ভালো আছো,

তোমার নির্মিত দেয়ালচিত্রে কপালকুন্ডলার দেখা পেলুম। লালমাটির কপালকুন্ডলা। কোনো কথা বলে না, কথা না-বলায় যেন অনেক কথা, কথা না-বলায় যেন গীতব্যথা।

আমি কী তবে পথিক ,পথহারা পিথাগোরাস?

 জন্মবছর থেকে এখনো হাঁটছি তোমার কপালকুন্ডলাকে চোখে রেখে, মনে ধারণ করে। আমি তো হতে পারতাম সফরসঙ্গীর পদাঙ্ক অনুসরণে সচারচর পুরুষ। সবকিছু ছেড়ে বনলতার কাছে করেছি নিজেকে সমর্পণ, উদ্যানলতার আশা করেনিতো কোনোকালে।

বলো তো বিনোদবিহারী,

কপালকুন্ডলা কেন এতো লাস্যময়ী, হাসির আড়ালে কেন তার মেঘের মতো দূরত্বমৈথুন?
আমি তো সেই সকাল থেকে বসে আছি সাঁওতালী মনে, মনের বিছানা পেতে।

শনিবারের হাঁট,

তোমার বাড়িতে যাবার নেমন্তন্ন আসে ইনবক্সের খামে। তোমার গাছের ঢালে ঢালে দুত্রুয়েল বাজনা, তোমাতে  মানুষের সরল আনাগোনা, সরল টানে কিনে কেউ কানামাছি-বৌছি।  তোমার সরব আঙ্গিনায় আসব, আসবে সে।
কিন্তু সে তো চলে গেছে পৌষমেলার গভীরে, চলে গেছে দেশীয় পিঠাঘরে, বন্যনিয়ম যেখানে শরম নিয়ে চলে। নন্দলাল বসুর কলাভবন দেখেছি তো বহুবার, তাইতো প্রশ্ন জাগেনি নারীর যোনিএলাকা ঘোড়ার দখলে কেন।
বন্য হতে যদি এতো ভয় কেন তবে দয়িতার গীতাপাঠ? নটিমূর্তি দাঁড়িয়ে আছে, বসে থাকা তার স্বভাবের জেলখানা, আমরা তো রেগে যায়, রাগারাগির ব্যাকরণ জানিনা, মানিনা।
তবু রাখাল হব,বিশ্বাস রাখি তুইও রাখালী,

রাজনগরের  বেটি ল
বলনা স্বাদ না মিটি ল

উৎসব উৎসের কথা বলে। রবীন্দ্রনাথ উপলব্ধি করেছিলেন আমাদের চিরচেনা উৎসবগুলো খুব বেশী সাম্প্রদায়িক চেতনায় আবৃত। তাই তিনি মোড়কচেতন থেকে বেরিয়ে এসে বিভিন্ন ঋতুউৎসব চালু করেন। বসন্ত উৎসব তারই মধ্যে একটি। উনিশ শত কুড়ি সালে বসন্ত উৎসবের একটি প্রাথমিক সূচনা আমরা দেখতে পাই। আজ কিন্তু বসন্ত উৎসব বেশ বড় পরিসরে আমাদের সামনে ধরা দেয়। বসন্ত যখন আসতে শুরু করে ( আজি জাগ্রত বসন্ত দ্বারে) তখন আম্রকুঞ্জ, শালবীথি, বকুলবীথি আনন্দ ধ্বনির স্ফুলিঙ্গ উড়াতে থাকে, আশ্রমবাসীর জীবনে, মনন চর্চায় আসে নব সাজের প্লাবন।
আজ শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব। আজ তোমার চোখে- মুখে বাসন্তী সাজ। সজ্জিত তোমাকে চঞ্চল হরিণীর মতো দেখায়, তাইতো বুভুক্ষ বাঘের দৃষ্টি তোমার শিল্পরীতির প্রকৃষ্ট এলাকায়। আমি সাদা পাঞ্জাবি পড়ে তোমার সঙ্গী হওয়ার কথা, হওয়ার কথা অসংখ্য লোকের স্রোতে ফেনায়িত ঢেউ। কিন্তু হলো কোথায়, কত ``হওয়া"  হয়ে উঠে না,
স্বাদ আর সাধ্যের মাঝখানে ঝুলে থাকে মধ্যবিত্ত জীবন!
সারাদিন তুমি আনন্দের জলে স্নান করলে। রাতে ফোন করে আনন্দের আংশিক পর্ব সম্প্রচার করলে ইথারের কাছে। অথচ ইথার তোমার অদৃশ্য নাটকও আমার কাছে রোজ টিলিকাস্ট করে পূর্ণ অবয়বে। আমি তো এমনই, খবরের পেছনের খবরও রাখি।
অনেক কিছু জেনেও শিশু হতে খুব আয়েশবোধ করি।
কেন বল তো?
শিশুরা উত্তর দিতে জানে, উত্তর তৈরি করতে জানেনা।
সূর্যের আলোতে ছাতিম ছায়া যখন অঙ্গার হয়ে জ্বলে তখন আমি শিশু, আবার রাতের আঁধারে ছাতিম শরীরে যখন টুইংকেল টুইংকেল জোনাক জ্বলে তখনো ভেতরের শিশুটিকে জাগ্রত রাখি। শিশুর পোশাকে আমি জীবনের গান গাই,আমার জীবনকে ফুটিয়ে তুলি তোমার পথচলায়।
 পথচলায় তো আমাদের ঠিকানা, আমাদের শান্তির নীড়, প্রশান্তির আস্তানা।

মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৪

মেঘের সাথে

পাথরেরও মন আছে শুনেছিলাম
মানুষের মন নেই দেখেছি
আমি তো হেঁটেছি
হেঁটে হেঁটে থেমেছি
থেমে থেমে শিখেছি
মানুষ এক উদ্ভুত অবিশ্বাস
জাগতিক গন্ধে আকুল ব্যকুল
হয়তো মানবিক, হয়ে যেতে পারে আধ্যাত্মিক সন্ত্রাস
আমাকে আর মানুষ বলনা
জলনুড়ি হক আমার নাম
মেঘের সাথে শিশুসুলভ মৌনতাই আমার কাম

সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

আপনি

বাতাসে ইথারে ঝগড়ার ধুম
বাতাসে সত্য সোলেমানের ঘুম
বাতাস ভাসে লাল গোলাপের ঘর
আজকে সুখে কালকে ঝড়
তবুও আপন হয়না পর

রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

বিস্তর

বিসর্জনের পর
বাত্তি জ্বলে আর নিভে
স্মৃতি লেগে থাকে বিসর্জনের পাতায়
স্মৃতির একটি মুহুর্ত অযুত নিযুক্ত হাজার বছর
ধ্যানে, জ্ঞানে, মনে, প্রাণে
স্মৃতিঝড় হৃদয়কে কামড়ে ধরে
তুলকালাম কাণ্ড পৌরাণিক তুফানে 

শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৪

পাখিদের সাথে

কতদিন ফুলদের সাথে কথা হইনা
বহুদিন পাখিদের সাথে গান গাইনা
সরিষা ফুলের হলুদ শরীর
লেবুপাতার কাঁচা গন্ধ
কুয়াশার আকুম-বাকুম ডাক
মনের পাতায় হাঁটেনা
মনের কাছে বাড়ে পৃথিবীর দেনা
যাপিত জীবন প্রস্তুতির দামে কেনা

শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৪

সমাজ আর ব্যক্তি

ব্যক্তি প্রথমত ব্যক্তি। তারপর ব্যক্তি হয়ে উঠে সমাজ। অসংখ্য ব্যক্তির একক জায়গা সমাজ। একক ব্যক্তি কখনো সমাজ হয়ে উঠতে পারেনা তবে সামাজিক হয়ে উঠার সম্ভাবনা সমাজ তৈরি করে রাখে।
আর এই কারনে ব্যক্তির স্বকীয়তা যতবেশী বিকাশমান, ব্যক্তির একা অর্থাৎ অসামাজিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ততবেশী।

তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, সমাজ কী ব্যক্তির আপোষী মনোভাবের কাট পেস্ট?

অবশ্যই।

সমাজ কখনো একটি আস্ত ব্যক্তিকে গ্রহণ করতে পারেনা। ব্যক্তিগুণের কমন সংখ্যার ফলাফল আমাদের চিরচেনা, সদা প্রচলিত সমাজ।
সমাজের গ্রহণ ক্ষমতা সসীম। আর ব্যক্তির ধারণ এবং প্রদান ক্ষমতা অসীম। তাইতো কার্যত কারনে সমাজকে সুযোগ ব্যয়ের ধারণা মেনে চলতে হয়। আর ব্যক্তিকে মেনে চলতে হয় কাঁটা-বাছা নীতি।

চোখে দেখার মতো ঘটনা হলো, সমাজ আর ব্যক্তির দ্বন্দ্ব ব্যক্তিরই তৈরি। তাই ব্যক্তি বিকশিত হয় আগে, সমাজ ব্যক্তির বিকাশমান রূপকে শিশুর মতো অনুকরণ করে।

তাহলে সমাজ কেন?

সমাজ যৌথ। যৌথ হওয়ার কারণে শক্তিশালী। শক্তিশালী লিটলবয় দুর্বল হিরোসিমাকে ধবংস করবে স্বাভাবিক। ধবংসের গর্ভে থাকে সৃষ্টির প্রমত্তা উচ্ছ্বাস। ডাল আর চালের সমন্বয় সাধনের আয়োজনের কথাও ভুলার নয়। তাছাড়া ব্যক্তির কাছে তার পৃথিবীই শেষ কথা নয়, প্রাণিপৃথিবী বলে বিশাল এক জগৎ(আংশিক জানায়, অধিকাংশ অজানায়) থেকে যায়, তখনই ব্যক্তির ভাবী সঙ্কটাপন্ন মুহুর্তের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে বিধায়, বীর্যবান ব্যক্তি সমাজে এসে অসহায় হয়ে পড়ে, অসহায় হয়েও শেষ পর্যন্ত সমাজের কথা বলে।

বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৪

কুয়াশায় রাত হয় ভোর

সুখ বিক্রি হয়ে গেছে অতীত আর ভবিষ্যতের কাছে
প্রশান্তিকে নিয়ে সংসার পেতেছে বর্তমান
একখানা ইদিপাস আর আধখানা কপিলার সংসার
এরই নাম জীবন
নাকি জীবনের স্লোগান
প্রতিদিন নেপালরোডে রেখে আসি ত্রিশ মিনিটের জীবন
একটু জীবন এখানে, আর একটু জীবন সেখানে
এইভাবে কত জায়গায় জীবন রাখি আমি
শুধু রাখা হলনা আমাকে,
খুঁজে পেলামনা আমাকে রাখার মতো জীবন
কুয়াশায় রাত হয় ভোর, কাটে না জীবনের ঘোর

বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪

হেদা --হেমাদে

ওতুটুক = এতটুকু

তাম্বু লাল= সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে চূড়ান্ত লালিমা [তাম্বুল মানে পান, তাম্বু লাল মানে পান খাওয়ার পর মুখে যে লাল আভা ছড়ায় তার সাথে সূর্যের অস্ত যাওয়ার চূড়ান্ত মুহুর্তের তুলনা~ হাইনজা বদা তাম্বু লাল]।

বদা = নিতম্বে থাপ্পড় দেয়া, পরাজয় সূচক ধ্বনি [দেশীয় খেলায় পরাজিত খেলোয়াড়দের নিতম্বে জয়ী খেলোয়াড়রা নিদিষ্ট সংখ্যাক থাপ্পড় দিত]

হেমাদে =থেমে যাওয়ার নির্দেশ

গেছেগা = চলে গেছে [ পুরাঘটিত বর্তমান + সাধারণ অতীত]

লইছে = নিয়েছে, নেয়া, থাকা [বালেল লাইগগা লইছে গা~ ক্ষুদ্র কিছুর জন্য অযথা আকুতি]

বুগুল দিয়ে যাওয়া = পাশ দিয়ে যাওয়া

লেদা = পশু-পাখির বিষ্ঠা

ওলাহাইননা = অভিবাসী, শেকড় ছাড়া

ওলা বিলাই = হিংস্র পুরুষ বিড়াল

টুলা = বন বেড়াল

হিয়াল = শেয়াল

বাইসাব = বড় ভাই

পাজুন /বেনদা= লাঠি, পশু-পাখি চড়ানোর লাঠি

হেদা = ওম দেওয়া, তাড়ানো

চুহুইল = ধান থেকে প্রাপ্ত তুষ

আইললা= দেশীয় কাঁচামালে ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা, মশা তাড়ানো দেশীয় পদ্ধতি।

ফিতদর = ডাইনিং রুম, খাবার রাখা ও খাওয়ার কক্ষ, মহিলাদের পায়চারী কক্ষ।

হুমুক = সামনে

হুমুক গর = সামনের কক্ষ, গেস্ট রুম, বসার কক্ষ, পুরুষের কক্ষ।

মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৪

পর্ব

পরীক্ষা যদি আমার প্রেমিকা হত, আমি হতাম পৃথিবীর একমাত্র ভালো ছাত্র

If exam were my girl friend, I would be a sole so best student of the world 

সোমবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৪

পথিক

ফুল। ললিত ফুল। ফুলের সাথে ভ্রমরের শারীরিক সম্পর্ক। তাদের মাঝে মানসিক সম্পর্ক নেই, তবে মানসিক যোগাযোগ আছে।
ফুল। কাঁচা সুন্দর ফুল, পাকা সুন্দর ফুল। ফুলের সাথে পথিকের মানসিক সম্পর্ক। তাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক নেই, তবে শারীরিক স্পন্দন আছে।