বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৫

উট

সবুজ মাঠ। সবুজ মাঠের সামনে পাগলা নদী। বেশ নরম সুরে বৃষ্টি হচ্ছে। ঝিরঝির বৃষ্টি, ঝিরঝির হাওয়া। সবুজ মাঠে বসা উট আর তার একমাত্র শিশু। শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিবার, মা শিশুর প্রাথমিক শিক্ষক। অনেক,  অনেক জিজ্ঞাসা জন্ম হয় শিশুছাত্রের সাদা প্লেটে। উত্তর দিতে মা প্রস্তুত থাকে প্রফুল্লচিত্তে।

 উটশিশু :  মা, তোমার চোখে এতো পাপড়ি কেন?

উট :  বাবু রে, মরুভূমিতে প্রচুর বালিঝড় হয়ে থাকে, পাপড়ি আমাদের চোখকে রক্ষা করে।

উটশিশু : হুম।  পীঠে কুঁজ এই কারণেই?

উট : আমরা তো বাবু মরুভূমির জাহাজ। প্রচুর মালামাল বহন করতে হয়, কুঁজটি বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। কুঁজসিট মানুষের আয়েশী এলাকাও বটে।

উটশিশু : তোমার চেরা খুর আছে বুঝলাম কিন্তু তার নিচে আবার নরম প্যাড কেন?

উট : (উটের দীর্ঘশ্বাস)। জাহান্নাম দেখি নাই। জাহান্নামের আগুনের কথা শুনছি। আমরার তো জান্নাত- জাহান্নাম নাই তবে  মরুভূমির বালুই আমাদের  জাহান্নাম। আর পায়ের নিচের নরম প্যাডটি আমাদের লাইফবুট।
হুন বাবা তরে আরেকটি কথা কই, মরুভূমিতে পানির বড় ক্রাইসিস। আর আমাদের একটি বিশেষ থলে আছে যেখানে আমরা অনেকদিন পানি সংরক্ষণে রাখতে পারি। মানুষ আমাদের এই গুণের কথা জানে। আমাদের এই বিশেষ গুণের জন্য আমাদের বিশেষ কদর মরুভূমির মানুষের কাছে, আমাদের এই বিশেষ গুণটি আবার আমাদের বিশেষ মৃত্যুর কারণ।

উটশিশু : তোমার সব কথা বুঝলাম। বুঝলাম আমাদের জন্ম মরুভূমির মানুষের জন্য, আমাদের দৈহিক গঠন মরুভূমির আদলে।
তবে আমরা বাংলাদেশে কেন?
কেন জলাভূমি এলাকায়?

উট এই প্রশ্নের উত্তর জানে না, উত্তর জানে আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ। মানুষও জানে না, জানে মানুষের সুবিধাভোগী মন।

বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৫

প্রপার্টি

সুখের ভেতর সুখ পাওয়া যায় না, আগুনের ভেতর যেমন আগুন থাকে না;
দুঃখের ভেতর দুঃখ পাওয়া যায় না, জলের ভেতর যেমন জল থাকে না;
সূর্যের দেশে সূর্যকে খুঁজে হয়রান, চাঁদের আয়নায় সূর্য বীর্যবান। 

মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৫

রিদম

সকালে ঘুম থেকে ওঠা, রাতে ঘুমাতে যাওয়া, নিয়ম করে তিন বেলা খাওয়া -- এক অভ্যাসের নাম। জীববিজ্ঞানের ভাষায় এই অভ্যাসপরিক্রমাকে বলে বাইয়োলজিকেল রিদম। এই রিদমে একটু ব্যত্যয় ঘটলে একটু অস্বস্তিবোধ জাগে। বেশি ব্যত্যয় ঘটলে একটু বেশি অস্বস্তিবোধ অনুভূত হয়।
বাংলাদেশে যখন দুপুর বারোটা আমেরিকায় তখন রাত বারোটা। তাই বাংলাদেশের কোনো মানুষ যখন আমেরিকায় যাবে প্রথম কয়েক রাত তার ঘুম আসবে বেশ ভাড়াটে মনে। অভ্যাস যখন স্বাভাবিক হয়ে আসবে ঘুমও চোখে নেমে আসবে স্বাভাবিক উপায়ে।
আমরা যাকে প্রেম, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব বলে থাকি তাও এক অভ্যাসপরিক্রমা। মানসিক অভ্যাস। তাই প্রেমিক, প্রেমিকা কিংবা বন্ধুর কাছ থেকে দূরে চলে আসা মানে চর্চিত এক অভ্যাসের কাছ থেকে দূরে চলে আসা। মানুষ তার অভ্যাসের রুটিন খুব বেশি পরিবর্তন করতে পারে না। তাই কিছু কিছু অভ্যাস মনে ক্ষতের সৃষ্টি করে, ক্ষতের পরিণতি ক্যান্সার, মানসিক ক্যান্সার (Mental disorder)। ফলত চোখের কোণে জমা হয় অভ্যাসের মেঘ --

ফির গর্ম নালাহায় শরর বার হ্যায় নফস
মুদ্দাৎ হুয়ী হ্যায় সয়রে চারাগাঁ কীয়ে হুয়ে 

সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৫

বাথরুম

বাথরুম বর্বর। বাথরুম আদিম। বাথরুম মানে না তথাকথিত সভ্যতার খোলস। বাথরুম দিয়ে থাকে শুদ্ধতা, মিনিপ্যাক প্রশান্তি। বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, বোদ্ধা, দম্পতি, শিশু কিংবা আচার্য সবার জন্য বাথরুম খুলে রাখে তার মন, সংরক্ষণ করে সরাসরি সবার আপন গোপন। বাথরুমসভ্যতা  প্রাচীন, পৃথিবীর মতো আপন, মানুষের চিরায়ু স্বজন। 

রবিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৫

নারী

কালের পর কাল পুরুষ এক বহুগামী গাড়ি
জন্ম থেকে মৃত্যু নারী তার জীবাশ্ম জ্বালানী 

দীর্ঘশ্বাসের পৃথিবী হয় নীল নয় লাল
The world of high exhale either blue or red 

শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৫

প্রজাপতি

প্রজাপতি,
তরমুজের বাইরে সবুজ ভেতরে লাল। লাল আর সবুজ মিলে একটি দেশ -- বাংলাদেশ। তোমার মুখে যেদিন বাংলাদেশ দেখেছিলাম সেই দিন প্রথমবারের মতো  হারিয়ে যাওয়া আমিকে খুঁজে পাই। প্রত্যেক আমির ভেতর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তোমরা থাকে। আর প্রত্যেক তোমাদের ভেতর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমরা থাকে। আমিও তাই মনে করতাম কিন্তু এখন দেখি আমার সমস্ত মনের ক্যানভাসে একটাই জলরঙের আঁকা ছবি-- তুমি এবং তুমি তা যেন তুমি নও, হুবহু আমি এবং আমি।

গতকাল সারা রাত ঘুম হয় নি। আকাশে মেঘ ছিল প্রচুর। বৃষ্টি আসবে বলে আসেনি। তাই বালিশের সাথে মাথা থাকলেও ঘুমের সাথে চোখের সম্পর্ক হয়নি। তুমি তো জানো আমার একটি প্রিয় বদঅভ্যাস ছিল -- বালিশে মাথা দেয়ার সাথে সাথে ঘুম চলে আসতো।  আজকাল বদঅভ্যাসটি খুব করে আমাকে হামলা করেনা। আমিও এখন ঘুমহীন রাত কাটাতে শিখে গেছি। কত কিছু শেখালে তুমি -- নুন, লবন, আধা, মরিচ, তেল, সাবান, শুটকী।

আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছা আমার আছে। একদিন আকাশের মাটিতে আমার একটি বাড়িও হবে। কিন্তু পাহাড়কে অবলম্বন করে আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছা কোনো কালেই আমার ছিল না। বরং পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি পড়লেই আমার মন এক ঝাঁক করুণ রসের গান গাইতে চায়। পাহাড় কত্ত অসহায়, কেবল একটি আকাশ দেখেই তার দিন যায়, তার দিন যায়।  আর আমাদের চোখে প্রতিদিন জন্ম নেয় নতুন নতুন আকাশ, নতুন নতুন চোখের সীমানা।

প্রিয়,
এখন কী করছো?
ঘুমের অভিনয় করে নিশ্চয় শুয়ে আছো অগোছালো বিছানায়। রুমমেট হয়তো বাড়ি চলে গেছে, তাই হয়তো তুমি একা রুমটাকে পৃথিবী থেকে দূরে সরিয়ে অন্ধকার গুহা বানিয়ে সুখবোধ চর্চা করছো মনে মনে। জানতো অন্ধকার গুহা পুরনো হলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেশ আয়েশ করে গড়ে তোলে তার আবাসিক এলাকা। আমি যে প্রাণী, তোমার মতো অভিযোজন ক্ষমতা আমার নেই, অক্সিজেন খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়, রুমের জানালাটা খুলে দাও না; আলো হয়ে, বাতাস হয়ে তোমার রুমে একটু বিশ্রাম নিতে পারি যদি। হাজার বছরের পথ হাঁটতে হাঁটতে আমি যে ক্লান্ত। বলবে না প্লিজ, পথিক তুমি পথ হারিয়েছো।

জানো,
হীরক খণ্ড আমার অনেক প্রিয়। হীরক খণ্ডকে টুকরো টুকরো করতে হলে অনেক শক্তিশালী সমযোজী বন্ধন ছিন্ন করতে হয়। সম্পর্ক তো এমনই হওয়া চাই, হীরক খণ্ডের চেয়ে আরো শক্তিশালী, আরো প্রগাঢ়। তাছাড়া আমরা মানুষ, যারা চায়লেই ভুলের চোখে কালো কাপড় বেধে দিতে পারি অনায়াসে। যুগে যুগে এরিনাই-রা ছিল, পাপ যতদিন আছে ততদিন থাকবেও। তাহলে আমরা কেন জিউস কিংবা আফ্রোদিতি হবো না?
হতেই হবে।

আচ্ছা,
কিছু দিন আগে তোমার মনে জন্মনেয়া মহাসাগর কেমন আছে? মহাসাগর নাম শুনলে ভীতু হয়ে উঠি। কেন হবো না, আমি যে মহাসড়কের লোক। সাগরের উত্তাল তরঙ্গ দেখলেই অবিরাম অন্ধকারে কথা মনে পড়ে। অবিরাম অন্ধকার! অবিরাম অন্ধকারেই আদিপুরুষ আদম গন্ধম ফলের ছলনায় পড়েছিল, পৃথিবীতে হয়েছিল তাঁর আবাস। বেঁচারা আদম কত কেঁদেছিল, তার চোখের জলের নহর আজো শুকায়নি, আজো তার চোখের পানি পবিত্র ঝমঝম কূপের পানি। সেই আদমের রক্ত আমার দেহে, তাই আমি কাঁদতে চাই না,  বাঁচতে চাই, বাঁচাতে চাই।

প্রজাপতি,

কেমন আছো?

আর আমি?

আমার ভালো কিংবা মন্দ থাকা কেবলই তোমার কাছে এসে নত হয়ে যায়, স্থির হয়ে যায় জিরো ডিগ্রি এ্যাংগেলে। 

বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৫

নায়িকা

ক্লাস ফাইভে পড়ি। মুকসুদ স্যার বাংলা পড়ান। তিনি অসম্ভব ভালো মানুষ। আমার জীবনে একজন  মানুষকে দেখার সুযোগ হয়েছে।
 তিনি আমার চোখে মানুষ, একজন মানুষ।
সকাল আটটায় বাড়ি থেকে স্কুলের উদ্দেশ্য তিনি  রওয়ানা দেন, জাস্ট আটটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে স্কুলের দরজা খুলেন। স্কুলে অবস্থান করেন সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ তাঁর দায়িত্বে নূন্যতম প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে নি।
ক্লাসের সবাই তাঁকে স্যার' সম্বোধন করলেও  আমি পারি না। কারণ সম্পর্কে তিনি আমার ফুফা। স্যারও বলতে পারি না, ফুফাও বলতে পারিনা। জটিল এক সমস্যা। সম্বোধন প্রশ্ন আসলেই স্বর আকস্মিকভাবে নিচু হয়ে আসে। এই সম্ভোধন সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোনো পরিকল্পনাই বাস্তবতার মুখ দেখেনি। তাই গ্রাম্য বধূর মতো লাজুক মনে মেনে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো  উপায় নেই। প্রতিদিনের মতো আজো তিনি সঠিক সময়ে ক্লাসে আসেন, কোনোদিন আমাকে প্রশ্ন করেন না, আজ কেন যেন প্রশ্ন করলেন --

দাঁড়াও,

বল, শিক্ষা কী?

আমি দাঁড়ালাম।

কিন্তু উত্তর কেন দাঁড়িয়ে দিতে হবে? প্রশ্নটা আমার মনে মনে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে  মনে রচিত প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ভাবছি।
 স্যার,
সরি,
ফুফা হয়তো ভাবছেন আমি তাঁর প্রশ্নের উত্তর খুঁজে হয়রান।

কী হল? বল

জ্বি বলছি শিক্ষা মানে জ্ঞান।

তিনি বলেন, আমিও তা জানতাম। এখন আর আমি তা জানিনা, জানলেও মানিনা। এখন আমি জানি শিক্ষা মানে আচরণের পরিবর্তন।
তারপর তিনি মাওলানা রুমী আর শামস্-ই তাবরিজের ঘটনা বলতে শুরু করেন --

মাওলানা জালালুদ্দিন রুমীর জন্ম ১২০৫ সালের (মতান্তরে ১২০৭) ২৯ সেপ্টেম্বর, ৬০৪ হিজরীর ৬ রবিউল আউয়াল, আফগানিস্তানের বালখে। তাঁর প্রকৃতনাম মুহাম্মদ। জালালুদ্দিন ছিল তাঁর উপাধি। সুলতান মুহাম্মদ বাহাউদ্দীন ওয়ালাদ ছিলেন মওলানা রুমীর পিতা। ইসলামের প্রথম খলিফা  আবু বক্কর  ছিলেন মাওলানা রুমীর পিতৃকুল থেকে নবম বংশধর এবং মাতৃকূল থেকে ছিলেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলীর  বংশধর। তাঁর দাদা হোসাইন ইবনে আহম্মদ বালখীও ছিলেন একজন উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন সৌভাগ্যবান ও আধ্যাত্মিক সাধক।
১২১১ সালে মাত্র ছয় বৎসর বয়সে মাওলানা রুমী তাঁর সঙ্গে পিতার আধ্যাত্মিক ওস্তাদ খাজা ফরিদুদ্দিন আক্তারের সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। তিনি রুমীকে দেখে অত্যন্ত খুশি হন। তিনি শিশু রুমীর বুদ্ধিদীপ্ত সুরত দেখে মন্তব্য করেন-- অদূর ভবিষ্যতে এই শিশু সন্তান সমাজের একজন বিদ্বান হবে ও বিজ্ঞ লোকদের সচেতন আত্মাকে আলোকিত করবে। ওস্তাদ খাজা সাহেব শিশু রুমীকে তাঁর রচিত ‘গহের নামা’ কিতাবটি উপহার দেন।
মাওলানা রুমী ছিলেন একজন আলেম পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর পিতৃ মাতৃকুল ছাড়াও তাঁর বিবাহ হয় সমরখন্দের এক বিশিষ্ট আলেমকন্যার সাথে। তাঁর দাম্পত্য জীবনে প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ হয়। সে শ্বশুর কুলও ছিলেন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন। যৌবনের প্রারম্ভেই মওলানা রুমী জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যে তৎকালীন বিভিন্ন মুসলিম দেশ সফরে বেরিয়ে পড়েন। সফরের এক পর্যায়ে তিনি  মক্কা নগরীতে উপস্থিত হন এবং হজ্বব্রত পালন করেন। মক্কা থেকে ফিরে তিনি তুরস্কের আনাতোলিয়া কৌনিয়ায় পৌঁছে  স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন।

 রুমির জীবনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে ১২৪৪ সালে, অর্থাৎ তার বয়স যখন ৪০ বছর। এ বছর তিনি কনিয়ায় একজন অতি আশ্চর্যজনক ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে আসেন। তার নাম শামস আল-দীন তাবরিজ বা শামস-ই তাবরিজ। তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব হয়। শামস রুমিকে আধ্যাত্মিকতার বিষয়ে এমন উন্নত ধারণা দেন যা তিনি ইত:পূর্বে কল্পনাও করতে পারেননি।
হঠাৎ করে এক দিন শামস নিরুদ্দেশ হয়ে যান। শামস নিহত হয়েছেন বলে গুজব শোনা গেলেও রুমী নিজে তা বিশ্বাস করতেন না। শামসের নিরুদ্দেশ  হয়ে যাওয়ার পরই রুমির কলম দিয়ে ঝরনা ধারার মতো কবিতা বেরোতে থাকে।

তারপর মুকসুদ স্যার অথবা ফুফা বললেন চল্লিশ বছরের আগেও মাওলানা রুমির অগাধ জ্ঞান ছিল কিন্তু ঐ জ্ঞান তাঁর আচরণের কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। তাই আমরা মাওলানা রুমির চল্লিশ বছরের আগের অর্জিত শিক্ষাকে শিক্ষা বলব না এবং আগে যারা তাকে পাঠদান করেছে  তারাও তাঁর শিক্ষক ছিল না। মাওলা রুমি শিক্ষা লাভ করেন শামস- ই তাবরিজের কাছ থেকে, তাই তাবরিজই তাঁর শিক্ষক।

এখন বুঝলে শিক্ষা মানে কী?

হুম ( মাথা নাড়লাম, কোনো শব্দ বের হয়নি)।

 তিনি আর কোনো ক্লাস নেননি । আমাদের ছুটি হয়ে যায়, বাড়ি চলে আসি। বাড়ি এসে দেখি ইমাম সাহেব বসে আছেন। ইমাম সাহেব আমাকে আরবি পড়ান। চমৎকার কণ্ঠ। তিনি যখন আয়াত তিলওয়াতের সময় গুন্না করেন তখন বাতাসে  গুম গুম আওয়াজ শুরু হয়। অযু করে নামাযি কায়দায় ইমাম সাহেবের সামনে আল্লাহর আয়াত নিয়ে বসি। আমার পাঠ আরবি হরফ শিক্ষা। হুজুর প্রথমে বলে দেন, তারপর আমি তাঁর অনুসরণ করি --

আলিফ খালি

বা এর নিচে এক নুক্তা

তা এর উপর দুই নুক্তা

পাঠ আমার মুখস্থ হচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করছি। কিন্তু হচ্ছে না। মনোযোগ স্থাপন করতে পারছি না। মনোযোগ পড়ে আছে রাস্তার পাশে দোকানটির টিভিস্কিনে, স্কুল থেকে বাড়ি আসার পথে যেখানে বিরতি নিয়েছিল আমার চোখ। মনোযোগ টিভিস্কিনের নায়িকার প্রতি
যায় পেট খালি
পীঠ খালি
কপালে একটা টিপ

বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৫

ক্ষুধার্ত

ক্ষুধার্ত পৃথিবী!
জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই কেমন আছি। পারো যদি একবেলা খাবার পাঠিয়ে দিও আমার বস্তির ঠিকানায়।
পোড়া  হৃদয়!
জানার প্রয়োজন নেই কেমন কাটছে সময়। সুযোগ পেলে চলে এসো, রেখো হৃদয়ে হৃদয়। 

দেখার জন্য

দেখার জন্য চোখ নেই, শোনার জন্য কান নেই। দেখা ও শোনার জন্য যে মন প্রয়োজন তাও নেই। এতো `নেই' এর মাঝেও আমরা বেশ ভালো আছি। আমরা আরো ভালো থাকব, কারণ অন্ধের চোখে হাতি অন্ধকারে মতো।

No eye for watch, no ear for listen. A mind that is essential for realization has gone been to the pavilion. But yet we are pretending well. We will be box alive much as the elephant is enough dark on the eye of blind.

মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৫

মন বাতাসের বংশধর

Mind is the descendant of the air 

স্মৃতি

প্রতিটি অতীতের রয়েছে ব্যক্তিগত স্মৃতি। স্মৃতি বেদনার মতো আরামদায়ক, জলের মতো দৃশ্য জাগানিয়া। স্মৃতি থেকে মুক্তা তুলে আনে পানকৌড়িমন। স্মৃতিতে ডুবে থাকে মশা- পাখিজন। 

সোমবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৫

অসহায় শুন্যতা

বিশ্বাসের ঘরে শুন্যতা
শুন্যতা গোয়ালে, শুন্যতা নদীর ভেতরে- বাহিরে
শুন্যতা ইমাম সাহেবের আসমানী ওয়াজে
দেবদারু বৃক্ষের নিচের আসনটি শুন্য
শুন্য প্রান্তিক রেলওয়ে স্টেশন
বড় শুন্য শুন্য লাগে, বড় একা একা লাগে
প্রদীপ মৃত হলে বিগলিত অন্ধকার
অন্ধকারে জ্বলে জ্বলে অঙ্গার
বড় একা একা লাগে,
বুকের বাম পাশে কুয়াশার ধোঁয়া
আগুনে পুড়ে ঠাণ্ডা হচ্ছে নাগরিক জীবন
নগরের ঘুম ঝুলে থাকে বাসের ফুটপাতে
শুন্যতা বিনয় ভবন থেকে অরশ্রী মার্কেট,
অরশ্রী মার্কেট থেকে ফেয়ারলি স্ট্রেট
শুন্যতা নাগরিক আশীর্বাদের ক্যানভাসে
অসহায় শুন্যতা, বড় শুন্য শুন্য লাগে
অসহায় শুন্যতা, অসহায় জীবন

why

Nothing is singular
Why do you pretend to be all alone
Why 

রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫

আজকাল তোমার আমার গণিত গণিত খেলা
চাতক পাখি ভুলে গেছে প্রাণের মেঘের মেলা 

শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৫

বাজে কাজ

বাজে কাজ করতে অভ্যস্ত আমি। যেকোনো  বাজে কাজই ঘোষণা দিয়ে করতে আমার আপত্তিতে বাঁধে না। এমন নয়  বাজে কাজ কেবল আমিই করি। আমার এককালীন গুরু  কাজী নজরুলের সুরকথার মতো আমার ভেতরও রচিত হয় আত্মকথন--


প্রভু, তুমি অন্তর স্থলের খবর জান/ভেবে আমি লাজে মরি/লোকচক্ষে ফাঁকি দিয়ে কি না ভাবি, কি না করি।


বাজে কাজ এত শক্তিশালী যে পৃথিবী এখনো টিকে আছে বাজে কাজের জাগতিক মহিমায়।  পৃথিবী শিশুময় হতে পারতো কিন্তু  বাজে কাজের জন্য প্রাকৃতিক গান ফিল্টারিং হয়ে কানে আসে। ফলে আওয়াজ আর কেওয়াজ ভিন্ন পরিবারের লোক। অসংখ্য বাজে কাজের মধ্যে আমি যে বাজে কাজটি বিশেষভাবে করি তা হল
`পড়াশোনা'।

জনাব পড়াশোনার সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য লাইব্রেরিতে যাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে । লাইব্রেরিতে জনাব পড়াশোনা বেশ জনপ্রিয়। লাইব্রেরিতে সব সময় গম গম, দম দম অবস্থা। মশা- মাছি তাড়িয়ে লাইব্রেরিতে ঢুকি। তিন তলার কোণায় একটি সিট আমার দিকে চেয়ে আছে। কোণার সিটটিতেই বসলাম। সিটটা সিট হিসেবে বেশ আরামদায়ক। টেবিলে ব্যাগ রেখে, ব্যাগের সাথে সিটের বন্ধন তৈরি করলাম যাতে বেদখল না হয়ে যায়। সিট, টেবিল, ব্যাগ যেন এক আত্মা।
বাইরে থেকে নাস্তা করে এসে দেখি এক আত্মার সম্পর্ককে ভেঙে দেয়া হয়েছে। আমার  জন্য রাখা হয়েছে একটি অসুস্থ সিট। আমার সিটটি পাশের জনের পুটকির নিচে। মেজাজ কুড়ালের কুপের মতো মাত্রা মেনে রেগে উঠল -- ভেতরে ভেতরে।

ছোট কালে হারকিউলিস দেখতাম। হারকিউলিসকে যারা আক্রমণ করতে আসতো তাদের তরবারি রেগে উঠার আগে তারাই তেলে বেগুনে রেগে উঠতো। হারকিউলিস শুধু ঠাণ্ডা মাথায় তাদের রাগান্বিত অবস্থাটা কাজে লাগাতো। অনেকটা শচীন টেন্ডুলকারের স্ট্রেটকাট ড্রাইভের মতো। বলঅস্র যতই দ্রুত আসুক তরবারিবেট শুধু আস্তে করে পোস করবে।
আমিও রেগে গেলে হারকিউলিসনীতি মেইনটেইন করি। নিশ্চুপ এক দৃষ্টি প্রতিবেশী পড়ুয়ার প্রতি দিলাম। দেখলাম সে বিসিএসের ট্রেইনার। তার প্রশিক্ষণের এলাকা বাংলা সাহিত্যের  মধ্যযুগ। আস্তে আস্তে তার কানের কাছে মুখটি নিলাম। কইলাম,

ভাই, একটি এম সি কিউর (Collection Of  Multiple Choice Questions) উত্তর মাথায় আসছে না, একটু সহযোগিতা করতে পারবেন?

সে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠল।

তারপর প্রশ্নের পালা,

আচ্ছা ভাই, আপনি তো বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ পড়ছেন। আশা করি যুগ বিভাজন সম্পর্ক আপনার ধারণা বেশ স্বচ্ছ। যদি বলতেন  একজনের সিট আরেক জন নিয়ে যাওয়া কোনো যুগের ঘটনা তাহলে কৃতার্থ হই।

প্রশ্নটি শুনার সাথে সাথে ভাইয়ের চোখ বড় হয়ে আসে,  কান খাড়া হয়ে যায়, অধর আর ওষ্ঠের মাঝে মাছি ঢুকার মতো ফাঁক তৈরি হয়, ডান হাতটি একটি শাদা কাগজের বিস্তৃত এলাকায়। শাদা কাগজের এক কোণায় কয়েকটি কালো শব্দ চোখ মেলে তাকিয়ে আছে --

জো সো বুধী সোই নিবুধী।
জো সো চৌর সোই সাধী।।

কালো শব্দগুলো দেখার সাথে সাথে আমি কোথায় আছি ভুলে গেছি। একটি অদৃশ্য আমের আত্মচিৎকার কানে আসছে কেবল, যে আমটি গাছের মগডালে ছিল, যে আমটি সূর্যের আর বাতাসের বিশেষ সহায়তায় পর্যাপ্ত সালোকসংশ্লেষণে হয়েছিল স্বাস্থবতী। ইচ্ছা ছিল যার আকাশ ছোঁয়ার, আকাশ ছোঁয়া আর হলো না তার , পেল না মাটিমানুষের প্রিয় হাতের স্পর্শ। তার শরীরে এখন কেবল কাকের ঠুকর, তার কণ্ঠে এখন কেবল কান্নার স্লোগান যেখানে আওয়াজ আর কেওয়াজ একই পরিবারের সদস্য।

শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৫

সন্তুষ্টি

সন্তুষ্টি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এখানে পুঁজি বিনিয়োগ করার প্রয়োজন হয় না। মিনিমাম ইনপুট, মিক্সিমাম আউটপুটের বাজারে এমন পুঁজিহীন রুজি অবশ্যই চর্চার বিষয়। অসন্তুষ্টির প্রধান এবং প্রথম ফসল দীর্ঘশ্বাস। দীর্ঘশ্বাসে বেঁচে থাকে ভগ্ন হৃদয়। 

বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৫

নারী

নারীদেহ বিবর্তনের প্রগতিশীল মিউজিয়াম
নারীমন কালে কালে পটাশিয়াম- সোডিয়াম


The land of the girl is the progressive museum of evolution
Mind land of the girl is the potassium- sodium onto eternal obligation

মনের বাঘ

বনের মাঘ প্রকৃতির অংশ। মনের বাঘ ভয়ের অংশ। ভয় কিন্তু রোগ নয়, রোগের জননী। ভয়ের সাথে থাকলে বউ থাকে না। বউয়ের সাথে থাকলে ভয় থাকে না। বাঘ হলে বউ বাঁচে না।

Forest tiger is the part and parcel of the nature. The tiger in mind is the forefront part of the afraid. Afraid is not a disease but the mother of the disease. Wife dislikes the coward. Every man is Napoleon when he is with her women. When one is tiger, one's  wife expresses revulsion onto one's. 

বুধবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৫

মঞ্চের লোক নই

কখনো মঞ্চের লোক হতে পারিনি। অসামাজিক আমার নাম।গ্রাম্যডোবার নোংরা কোণায় যে পেনাফুল ফুটে তারই সাথে খেলা করা আমার কাম।
অভিনেতা নয়, দর্শক
লেখক নয়, পাঠক
বক্তা নয়, শ্রোতা হয়ে টক্কর টক্কর চলে আমার  রেলগাড়ি।
রেলগাড়ি যেখানে গিয়ে থামে তার নাম নীরবপুর। তারপর আরো নীরব হয়ে যেতে হয়। মায়ের জঠর কিংবা মৃত্যুমুখের মতো নীরব। নীরবতা আমাকে মঞ্চে তুলে নি। নির্দেশিত আলোকসজ্জা থেকে দূরে, বহুদূরে কোনো এক উপগ্রহে আমার আটপৌরে জীবন।
আজ আমি মঞ্চের লোক নই, মানুষের লোক।

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৫

মন

প্রেমিকার মন প্রেমিকের যুদ্ধক্ষেত্র

Mind, girl friend's mind is the battle field of boy friend 

রাস্তা

রাস্তা একা হলে দেখা দেয় চমৎকার আকাশ
মন পাখি হয়ে উড়ে বেড়ায় বাতাস টু বাতাস 

ইঁদুর

ইঁদুরের সাথে দেখা হয়েছিল আমার। আগ্রহটা আমারই ছিল, আন্তরিক আগ্রহ। সংবেদ্য মনের এটি একটি ভায়াগ্রা। চেয়েছিলাম মানুষ শব্দটি ভুলে গিয়ে প্রাণিপৃথিবীতে জন্ম নিব।
আমি তাকে বোঝাতে চেষ্টা করি প্রতিটি সম্পর্ক একটি ঘরের মতো। ঘরের দরজা- জানালা যত পরিকল্পনা মোতাবেক নির্ধারণ করা হবে ততই ঘরটি বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে। শুন্য ঘরে তো আর বাস করা যায় না; তাই বিভিন্ন আসবাবপত্র, টিভি- ফ্রিজ প্রভৃতি পরিকল্পনা মোতাবেক রাখা যেতে পারে, রাখলেই বরং ঘরটি আবাসিক। ইঁদুরটি আমার কথা মেনেও নিয়েছিল ফুরফুরে আমেজে। এমন নয় আমি চাপিয়ে দিয়েছিলাম।
কিন্তু সমস্যা একটাই! ঘরনামক সম্পর্কে আমি রাতে ঘুমাই আর ইঁদুরটি সম্পর্ক কাটে।
ইঁদুর কাটাকাটি করবে এটাই স্বাভাবিক, নতুবা যে ইঁদুর আর ইঁদুর থাকবে না।
তবে ইঁদুরের সাথে চলতে গিয়ে আবারো জেনেছি আমি প্রাণি নয়, মানুষ।

সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৫

ক্ষতি

কু ওয়া তেনে কিনেদারি বদ মুকুন
অর না খুরদে খুদ সিতামবে হদ মুকুন।।


                                                ~ শেখ সাদী



পারো যদি কল্যাণ কর, অনিষ্ট কর না
অন্যের ক্ষতি নিজের ক্ষতির আয়না।।


If can, drive the wholesome job
If do demolition, demolition of your nod

                                           ~ এমরানুর রেজা 

শুক্রবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৫

কয়েদি

জেগেই দেখি সকালটা নরম নরম। নরম নরম সকালে গরম পায়ে ক্লাসের দিকে গেলাম।
আটটায় ক্লাস। ঘুম থেকে উঠলাম আটটায়। দুই- তিন মিনিটের মধ্যেই  প্রাথমিক ফ্রেশ হওয়ার কাজটি শেষ । গিয়ে দেখি ক্লাস চলছে। তবে সামনের দরজা খোলা। অনুমতি না নিয়ে ঢুকে পরলাম।
অনুমতি নেয়নি। অনুমতি নেওয়াও একপ্রকার বিরক্তিকর কাজ। তবে টিচার ক্লাসে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে পারে, অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করলেই বিষয়টি নান্দনিক।
টিচার ক্লাস নেয়ার আগে আমাদের হাজিরা নেন। প্রতি হাজিরার জন্য টিচার  0.17 মার্কস বরাদ্দ রাখেন । আমরা তো মুনির জাত, তাই হাজিরা পেলেই সন্তুষ্ট। হাজিরা কি পরিমাণ দেওয়া হচ্ছে, কেন দেওয়া হচ্ছে, কী উপায়ে দেওয়া হচ্ছে -- এই বিষয়গুলো ভাবনার সময় আমাদের নেই।

ভাগ্যের সুযোগে  একবার কয়েদি হয়েছিলাম। কয়েদ মানে একটি জায়গা যেখানে থাকতে বাধ্য করা হয়; সকাল- সন্ধ্যা হাজিরা ডাকা হয়। তবে সেখানে হাজিরার জন্য কোনো মাইনে দেওয়া হয় না। কয়েদে থাকাকালীন সময়ে একটি উপলব্ধি আমার অনুভূতিতে আসে, আর তা হল প্রচলিত  প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এক একটি কয়েদখানা।

টিচার ক্লাস নিচ্ছেন। আলোচ্য বিষয় শাম্ব উপন্যাস। শাম্ব পৌরাণিক একটি চরিত্র। তার  আচরণ ডালিমের দানার মতো আলাদা আলাদা তবে স্পষ্ট। আচরণের সাথে তাল রেখে তার চেহারাও যথেষ্ট কৃষ্ণময়। পৌরাণিক শাম্ব আর সমরেশ বসুর শাম্বের মধ্যকার পার্থক্য দৃশ্যমান। পৌরানিক শাম্ব খুব বেশি কাহিনিআক্রান্ত কিন্তু আলোচ্য শাম্ব দৃশ্যমান জগতের মানুষ। যে মানুষ সংগ্রাম আর বিশ্বাসকে পুঁজি করে মহামানব হয়ে উঠে। সংগ্রামী মানসিকতার বিবেচনায় সান্তিয়াগোর আর শাম্বুর অবস্থান এক সারিতে রাখলেও কাউকে  মহামানব"  অভিধায়  অভিযুক্ত করতে প্রস্তুত নই। শাম্বুর ব্যাপারে মহামানব " অভিধাটি টিচারের নাযিলকৃত শব্দ।
আমার অবশ্যই `মহামানব'  শব্দটির সাথে বিশেষ এলার্জি। তবে এলার্জি যে ডাইজেস্ট প্রক্রিয়ায় জন্য উপকারী তা অনেকে মানতে না চাইলেও আমি বিশ্বাস করি।

মানুষ, মানুষ হয়ে উঠবে!
 মহামানব কেন?

মহামানব'  শব্দটি তারাই তৈরি করে যারা ত্যাগের নয়, ভোগের নীতিতে বিশ্বাসী।

এক সময় ক্লাস শেষ হয়। ক্লাসরুমের বাইরে এসে প্রাণভরে অক্সিজেন নিলাম। অক্সিজেনে জলের গন্ধটা আলগা আলগা লাগছে। বৃষ্টির অভিসারলক্ষণ। রাধার মতোই হয়তো তার প্রশিক্ষণ চলছে। অনেক দিন হয়ে গেছে বৃষ্টি তার প্রেমিকপৃথিবীর কাছে আসে না। প্রেমিকা বিহনে পৃথিবী শুষ্ক, মৃতপ্রায়। ঘুম নেই তার দুটি চোখের পাতায়, মন আজ তার কেবল তারায় তারায়। আনমনে বেশীক্ষণ থাকতে পারেনি মেঘ। বৃষ্টি হয়ে তাকে পৃথিবীতে আসতেই হল। দৃষ্টিকুটুম মেঘ সৃষ্টি করল সৃষ্টিসুন্দর সুরলহরী।
আমি অবশ্যই বৃষ্টিকে রিসিভ করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না।  তাই বৃষ্টির আগমনে অনেকটা অপ্রস্তুত হতে হলো। অপ্রস্তুত আমাকে দেখে বৃষ্টি কত কী যে ভেবেছে, কে জানে। তবে আকাশের সাথে যেহেতু তার বন্ধুত্ব নারীর মনের মতো সংক্ষিপ্ত ভাবনা তার মনে আসবে না, আসবে না এটাই স্বাভাবিক। টুপ টাপ বৃষ্টির সাথে খেলা করে উষ্ণ মনটাকে শীতল করার বিশেষ ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এখনি আবার বিশেষ ক্লাস।

জানালার পাশে বসলাম। জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখার মজাই আলাদা। ক্লাসের জানালা দিয়ে বৃষ্টি ততটা ভালোভাবে দেখা যায় না। দৃষ্টি সীমিত হয়ে আসে। আমার মন তখন ছুটে গেছে গ্রামের দিকে যেখানে জানালা দিয়ে তাকালে দৃষ্টি চলে যায় দূরে, বহুদূরে। গ্রামে খোলা মাঠে বৃষ্টির খেলা হৃদয়ের কথা বলে, যে কথা কান পেতে শুনতে হয় সেই কথা। নদীতে যখন বৃষ্টি পড়ে, আর তা যখন জানালা দিয়ে দেখা হয়, অসমাপ্ত ভালোলাগা তখন হৃদয়ের মর্মে মর্মে,  তখন ত্রিমাত্রিক এক শব্দ তৈরি হয় স্বাধীন, বাঁধনহারা মনের প্রাদেশিক এলাকায়।

আমার মন যে বৃষ্টি বৃষ্টি হয়ে গেছে টিচার বিষয়টি লক্ষ্য করে।

এই ছেলে দাঁড়াও,
জ্বি,
এটি ক্লাস রুম, খেলার মাঠ না, বের হও....
চুপ করে বের হতে লাগলাম। দরজার কাছে যেতেই আবার টিচার বলল,
দাঁড়াও....
দাঁড়ালাম।
প্রতিমার পাশে বস....
প্রতিমার পাশে বসলাম। টিচার ভেবেছেন বালিকার পাশে বসলে হয়তো ....

ক্লাসে মনোযোগী হওয়ার অভিনয় করলাম। কানে আসছে চিত্রা আর মৌলিনাথ প্রসঙ্গ। চিত্রাই পারে  পাখির মতো ঠুকরে- ঠুকরে মৌলিনাথকে উত্যক্ত করে সান্ত্বনা দিতে। হঠাৎ করে মন চিত্রার দিকে চলে আসে। সত্যিকারের মনোযোগী হয়ে গেলাম। টিচার হয়তো ভেবেছেন -- অপারেশন successful। কিন্তু আমি জানি চিত্রার আচরণকথা কেন কানের ভেতর দিয়ে মর্মে প্রবেশ করল।
টিচারের ক্লাসসময় শেষ। বের হবে এখনি।
 আমাকে আবার দাঁড় করালো।

জানো, কেন তোমাকে ক্লাস থেকে বের করেনি?

জ্বি না,

এই বৃষ্টির দিনে আমার মনও ক্লাসে ছিল না ....

টিচারের কথাটি ঝড়ে জলতরঙ্গে আমার সারা অঙ্গ নাচিয়ে তুলল। পথহারানোর ভাবনায় আমিও একটি সত্য উপলব্ধি করলাম, টিচারও আমার মতো কয়েদি! 

বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৫

বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৫

প্রভু

প্রভু,

তোমার মাঝে ছিলাম ভালোই ছিলাম। পাঠালে দুনিয়ায়।আবার আমার সাথে নিয়োজিত করেছো স্পেশাল ফোর্স-- কেরাবান, কাতিবিন। এতো অবিশ্বাস তোমার? অবিশ্বাস আমার কাজ, অবিশ্বাস আদমের সিনায় সিনায়।

প্রভু,

তোমার সাথে পারসোনাল কিছু কথা আছে, কিছুদিন স্বাধীন থাকতে চাই, কিছু কাজ হবে তোমার সাথে, তোমার কিছু কথা হবে আমার সাথে, বাদ যাবে পাপ- পুন্যের লেখনী কিতাব।

প্রভু,

মৃত্যু ছাড়া ভালো লাগে তোমার? আমি তো প্রতি রাতে পান করি গেলাস গেলাস মৃত্যু। তাহলে কী আমি তো আমি, আর তুমি কী তুমি? আমি তো জানি তুমি নিয়ে আমি, আমি নিয়ে তুমি।

প্রভু,

আমি তো তোমার সন্তান, ইচ্ছার সন্তান। পৃথিবীতে  যাকে মা বলে জানি তাঁর চোখে ভালো বা খারাপ সন্তান ভালোবাসায় সমান সমান, তবে কেন প্রভু আমার জন্য জান্নাত- জাহান্নাম!

প্রভু,

হারুত, মারুত তোমার দুই ফেরেশতা, পৃথিবীতে করেছিল জঘন্য আচার। পৃথিবী তো এমনই পাপ- পুন্যের বাজার। তাই প্রভু, পাপ- পুন্য বুঝি না, আমি তোমার কাঙাল, তোমার কাঙাল। 

সোমবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৫

প্রেবিকা

মোমবাতি আর আগুন প্রেমিক- প্রেমিকা
মোমবাতি আর আগুন সেবক- সেবিকা

প্রাপ্তি

জীবনটা যেন কেবলই প্রাপ্তির। প্রাপ্তিতে ঘাটতি আসলেই জীবন বুঝি শেষ। চলে নিজের কাছ থেকে, প্রিয়জনের কাছ দূরে চলে যাওয়ার বিশেষ অভিযান। অথচ অসংখ্য ইতরপ্রাণি যাদেরকে আমরা গালি হিসাবে ব্যবহার করি তারা জীবনকে উপভোগ করে জয়ে- পরাজয়ে। আনন্দের কিংবা চরম কষ্টের শেষ বিন্দুটিও ইতরপ্রাণিদের কাছে জীবন। আর আমরা, যারা মানুষ, আমাদের জীবন কেবল প্রাপ্তির জীবন।

রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৫

এক

প্রিয়ংবদা প্রিয়কে জানে ততটুকু প্রিয়কথা বিনিয়োগ করে যতটুকু

বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৫

প্যাপিলন

কত আপনজন, কত প্রিয়জন দেখি। কত কথা  শুনি--

``তোমাকে ছাড়া বাঁচব না, তুমি আমাকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছ।"

আরো কত মাখো মাখো মনমোহন শব্দ। মনমাতানো শব্দ শুনে মানুষ তখন বাকবাকুম বাকবাকুম করতে থাকে। ফুলের সাথে গড়ে ঋতুকালীন ঘর- সংসার। ভুলে যায় মাটির কথা,  যে মাটি প্রত্যেক স্বাতন্ত্রের অস্তিত্বের গান করে। এক সময় ভুল ভাঙে কিন্তু ঘোর কাটে না। কারণ ঘোর যে এক অভ্যাসের নাম। অভ্যাসপরিক্রমা চাপা পড়তে পারে কিন্তু কখনো ফরম্যাট হয় না। ফলে আমরণ অপ্রিয় স্মৃতি বহন করে চলে অবচেতন মন। তবে শিক্ষিত মন ততদিনে জেনে যায় ,যে কোনো সময় প্রিয় অপ্রিয় স্বভাবে চালাতে পারে অস্ত্র। নিজের ভেতরের কুকুরটা টেনে বের করে আনতে পারে, শুধু আনা নয়, কুকুরস্বভাবে চলে ফাইনাল রাউন্ড, ফাইনাল রাউন্ড খেলা।

একমাত্র ``মা" যিনি আমাদের মূল,  প্রিয়কথা নয়, কাজের প্রমাণিত জায়গা। কখনো মনে হয় না ``মা" আমাদের  ছেড়ে চলে যাবে সুখের কোনো গুপ্ত সন্ধানে। মায়ের প্রকাশ্য কিংবা গোপন সুখসাগর কেবল আমরা। মা" শব্দটি আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সৃজনশীল, সৃষ্টিশীল শব্দ। সন্তানের উপর মায়ের সৌহার্দ, প্রীতি, ভালোবাসা শুরু হয় কিন্তু শেষ হয় না। অথচ অন্যতম প্রাণ দেয়া- নেয়ার মূল্যদণ্ড যোগ্যতা। প্রিয় কিংবা প্রিয়া দুজনই যোগ্যতার কাণ্ডারী। যোগ্যতাকে সামনে রেখে চলতে থাকে নিদারুন দারুণ পাউয়ার প্রেকটিস। পাউয়ার প্রেকটিস থেকে জন্ম নেয় বিধ্বস্তকারী মারীচ, ডমিনেট প্রক্রিয়া। মা সন্তানের জন্য  প্রীতিবোধ লালন করেন, চর্চা করেন না। ফলে মায়ের কোনো প্রকার পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না।

প্রশ্ন আসতে পারে মায়ের সাথে কারোই তুলনা হয় না, তারপরও তুলনা আসছে কেন ....

গ্রামের প্রত্যেক ঘরে একটি করে পবিত্র গ্রন্থ থাকে। তারা গ্রন্থটিকে খুব সম্মান করে। প্রথমে স্বচ্ছ কাপড় দিয়ে গ্রন্থটিকে মোড়কে আচ্ছাদন করে যাতে তার গতরে ময়লা না লাগে। তারপর মাথার উপরে জাতীয় একটি জায়গা সনাক্ত করে গ্রন্থটি রাখার জন্য যাতে গ্রন্থটির সাথে কোনো প্রকার বেয়াদবী না করতে হয়।

তারপর গ্রন্থটি এক বছরে একবারও খুলে দেখা হয় না।

ভাষিক সম্মান প্রদর্শন করে কার্যত দূরে ঠেলে দেয়া আধুনিক সময়ের একটি আরামদায়ক প্যাপিলন। যে মা আমাদেরকে পথে থাকার, পথ চলার কৌশল শেখানেল সেই মায়ের সাথে এমন প্যাপিলনপ্রধান আচরণ হচ্ছে কিনা?
হচ্ছে! অধিকাংশ সময়েই হচ্ছে!
সন্তান বড় হয়ে গেলে সন্তানের জ্ঞানের বহর অনেক বেড়ে যায়। মা- বাবা তখন ছোট্ট মানুষ, বেকডেটেট, মৃতপ্রায়। সুতরাং মা- বাবাকে যত এবোয়েড করা যায় ততই আমরা আধুনিক হয়ে উঠি। আধুনিক হতে হতে এতো শিখরে উঠে যাই যে ভুলে যেতে হয় শেকড়ের কথা। এবং ভুলে যায় শেকড়হীন হলে প্রিয় রসহীন হয়ে যেতে হয় গাছকে। রসহীন হলে কে ঠেকায় গাছের মরণ, কে ঠেকায় গাছের মরণ!

সত্য

বহুবার বহুরূপী সত্যকে দেখেছি। মরুভূমি-এলাকায় সত্য যে বালুময়, নীলাভ বালুচর। জলাভূমির সত্য যেন জলের আকর। মূলত সত্য তাই তোমার আমার চাওয়া যেখানে এক হয়ে যায়।

Many a time I have watched verbal truth in the Berber. Truth is sandy, Colorado sand in the desert. In water land truth is water, a series of water growth. Actually truth is there where you and me are mutual.

বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০১৫

respect

I only live for love, love for peace .I can't hate anything as I am from a drop of hatred polluted water.  But I am able to respect every thought of lives, thought of every man. I know its my limitation. I also know that my limitations help me to respect others thought.