রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬

প্রেম ছিল

প্রেম ছিল বিশ্বাসের মাখন
প্রেম ছিল ধবধবে সাদা হৃদয়ের আঁচল
প্রেম ছিল তেলেভাজা সরপুঁটি মাছ
প্রেম ছিল ভোর রাতের সত্য স্বপ্ন
প্রেম ছিল মুয়াজ্জেনের আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম
প্রেম ছিল বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি
প্রেম ছিল নারায়ণং সমস্কৃত্যং নবৈষ্ণব নরোত্তমম
প্রেম ছিল শিশুর তুলতুলে মুখ
প্রেম ছিল সৈনিকের নিষ্পাপ সাহস
প্রেম ছিল গোধূলির লাল রঙের সুর
প্রেম ছিল কৃষকের নুরানি হাওয়া ভোর
প্রেম ছিল কিশোরীর নতুন চরমুখ
প্রেম ছিল বাসরঘরে পায়রা পায়রা সুখ
প্রেম ছিল স্কুলের প্রথম পাস
প্রেম ছিল সন্ধ্যার চুঁইচুঁই হাঁস


প্রেম এখন ছুরি-কাঁচি সন্ধ্যাডাকাত
রোজ নামে যুদ্ধ, ট্রু ম্যান ফ্যালাসি বিধ্বস্ত প্রভাত 

শনিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৬

পৃথিবী কারো পৈত্রিক সম্পতি না, শাষকগোষ্ঠী বাথরুমের বদনাকেও নিজের ধন মনে করে 

প্রেমের বিরহ

প্রভু গো
আমার জীবনে দুঃখ আছে কিন্তু প্রেমের বিরহ নেই। নজরুল যাকে বেদনা মানিক বলে তাও আমার নেই। প্রেমদহন কেমন তা আজও জানি না, জানি না কেমন করে কলিজা দাউ দাউ করে জ্বলে, কেমন করে কলিজার বাষ্প টুপটাপ করে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে।

কাউকে যদি কখনো ভুল করে প্রেমিকা বলেছি তাও অভ্যাসের দায়ে। সময়ের মহিমায় জেনে গেছি অভ্যাস আমার যোগ্য প্রেমিকা।

প্রেমিকা চলে গেলে কেউ যায় ভ্রমণে, প্রেমিক চলে গেলে কেউ কেউ তিন দিন কান্দে অনাহারে, আর আমি বসি মেডিটেশনে মনের কাছাকাছি চুপ করে একান্ত গোপন অভিসারে। চোখ মেলে দেখি গঙ্গা-হোয়াংহো, জাপানি পণ্ডিত ওকাকুরা কাকুজির এশিয়া ইজ সিঙ্গেল ধারণার গভীর মর্মবাণী, মানুষের মুখে মানুষের জয়গান, বাবার চোখে মায়ের ছবি, মায়ের গর্ভে সমগ্র জাহানের কল্যাণ।

প্রভু

প্রেমদহন, প্রেমবিরহ দাও না হৃদয়ে আমার,

আমি হতে চাই না কেবলই মথুরাকৃষ্ণ, বৃন্দাবন ভুলে যাওয়া যার কাম। 

শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৬

হল পলাতক

নীলঘর থেকে বের হয়ে আসা একটি রোড -- ফুলার রোড। তার দুইপাশে নগর। নগর ছিঁড়ে পিঁপড়াপায়ে হেঁটে চলে তার কলাপাতামুখ। প্রেমিকার মুখে যত অভিনয়ের কথা ফুলার রোডে ততই জীবনানন্দ ব্যথা। প্রেমিক আলোভরা কণ্ঠে প্রেমিকার চোখে রোপণ করে মাগরিব সন্ধ্যা-- সব কিছুই ডেমোগ্রাফিক --টুকরো টুকরো বায়না, নাগরিক চোখে প্রেমিকার আয়না কিংবা মধ্যরাতের হল পলাতক কোনো উন্মাদনা। 

জীবন

অনেক ভালো থাকো তুমি আকাশের তারা। আমি শুয়ে শুয়ে রোজ দেখি জীবননদীর ধারা। একবার তাকাই আকাশে, আরেকবার ভেতরে, নিজের কয়েকশো কিলোমিটার ভেতরে। যত গভীরে যাই ততই নির্ধারিত নিরর্থকতা। কত কথা জমা থাকে ভাসমান লিয়ারে, ভাসমান কথার উপরিভাগে জীবননদীর ধারা, শুয়ে শুয়ে রোজ দেখি দূর আকাশের তারা। 

জুতা

বর্ষার কুমন্ত্রণায় আমার বেল্টযুক্ত জুতাটি আমাকে রক্তাক্ত করতো। জুতাটিকে আমি ছুড়ে ফেলে দিতে পারতাম। ফেলে দেইনি। সংরক্ষণ করেছি।

বর্ষা শেষ। এখন শীতকাল। শীতকাল বসন্তের প্রতিবেশী। তাই শীতকালের মন ফ্রেশ। কাউকে সে কুমন্ত্রণা দেয় না।

এখন জুতাটি আবার ব্যবহার করছি। বেশ আরাম, বেশ আরাম! 

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৬

দৃশ্য

মেয়েটি দৃশ্যটি দেখে কিছুক্ষণের জন্য নিস্তব্ধ  হয়ে যায় অনেকটা স্ট্যাচু টাইপের, একসময় চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে....
আর ছেলেটিকে দৃশ্যটি তৈরি করতে হয়েছে, আজ দৃশ্যটি ছেলেটির প্রতিনিধিত্ব করে ....
মেয়েটি হয়তো কোনোদিন জানবে না দৃশ্যটি তৈরি করতে ছেলেটিকে জলের সাগর অতিক্রম করতে হয়েছে....

বুধবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৬

:..:

প্রত্যেক মানুষ প্রত্যেক সৌন্দর্যের সমান বয়সী

Every man is equal to every clan of beauty 

সুজন

মানুষ যেখানে সেখানেই ঘটনার জন্মস্থান। ঘটনা থেকে তথ্য, উপাত্ত, লেনদেন। তথ্য, উপাত্ত, লেনদেন থেকে জ্ঞান। জ্ঞানই শক্তি।

কেমন শক্তি, কোন শক্তি?
উত্তর : প্রতিযোগিতার শক্তি।

প্রতিযোগিতার শক্তি নিয়ে মানুষ মাস্তানি করতে পারে না। মানুষের ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস। সংগ্রামের তেঁতুল পাতায় মানুষ মানুষের সুজন, বন্ধু, সহযোগী, আপনজন। 

মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৬

রহিত ভেমুলা, শেখ মুজিবুর রহমান এবং আমাদের রবি বাবু



পোস্টমাস্টার জীবনের গভীরতর আয়াত অনুবাদ করে আমাদের শোনাতে পারে। কারন তিনি জেনে গেছেন পৃথিবীতে কেউ কারো না। পরিষেবা পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তার মনে, পরিষেবা দেয়ার জন্য রতনই তখন তার একমাত্র নৈকট্য মানুষ। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে পোস্টমাস্টারের নৌকা আর থামতে চায় না, শাঁ শাঁ করে পালে বাতাস লাগতে থাকে, পোস্টমাস্টারের মন তখন উতলা হওয়ার অভিনয় করে।

জনাব রবীন্দ্রনাথ,  পাঠক কিন্তু এতো বোকা না -- আপনি করুণ রসের আবহ তৈরি করবেন আর পাঠকেরা চোখের জল, নাকের জল একসাথে করে ফেলবে। একদম না। পাঠক চিনে নপুংসক অপুকে ; একরাত্রির বেনামী মাস্টার আর সুরবালা কে(?) তা পাঠক ভালো করেই জানে। তার জন্য পাঠককে রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের  সুইসাইড নোট পড়তে হয় না।

রহিত ভেমুলার সুইসাইড নোট পড়ে ভারতবর্ষের মিডিয়া তোলপাড়। জনাব অশোক বাজপেয়ি হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ডি-লিট উপাধি ফেরত দিতে প্রস্তুত। কারন বিশ্ববিদ্যালয় ভেমুলার সাথে অমানবিক আচরণ করেছে। জনাব অশোক বাজপেয়ি আপনার দরদ আজকে উপচে পড়ছে কিন্তু রাধিকা ভেমুলা যখন সেলাই মিশনের সুই সুতার উপর ভর দিয়ে রহিতের খাতা কেনার ব্যবস্থা করেন তখন আপনার কালো কালো মাজা মাজা শরীরখানা কোথায় থাকে?  তখন তো আপনার কোনো ভূমিকা থাকবে না। কারন তখন সিমপ্যাথির বাণিজ্য করার যেতো না, বাণিজ্য করার এই তো সময়।

জল পড়ছে। পোস্টমাস্টার ঘরের ভেতর একা। তার সাথে একটি মাত্র প্রাণি। তাও আবার মানুষ প্রাণি। মানুষটির নাম রতন। পোস্টমাস্টার জানেন জীবনের গনিত, রতন শিখে নিচ্ছে গনিতের জীবন। সচেতন আর অবচেতন মনের খেলা। রতন নিজেকে সমর্পণ করেছে, আর পোস্টমাস্টার জীবনের মন্দিরে প্রার্থনা না করে, সামাজিক মন্দিরের সভাপতি হলেন। প্রার্থনা নয়, পরের অর্চনা করাই পোস্টমাস্টারের দলিত উদ্দেশ্য।

সামাজিক মন্দিরের পুরোহিত আজকে রহিত ভেমুলার আত্মার শান্তির জন্য ভোগ উৎসর্গ করছেন, প্রতারক মেয়েটি প্রোফাইল পিকচারে ঝুলিয়ে দিয়েছে রহিত ভেমুলার ছবি, ভণ্ড গায়কও কবির কথায় বসাচ্ছেন সুর। কারন পুজোয় মন্ত্র পাঠ না করলে পুরোহিত হওয়া যায় না, মানবতার স্লোগান না তুললে পাপের বোঝা হালকা হয় না।

রতন বন্ধু আমার,

একা একটি বায়বীয় শব্দ। আমরা কেউ একা নয়। প্রত্যেক ব্যক্তি অসংখ্য ব্যক্তিকে ধারণ করে আছে। প্রত্যেক ব্যক্তির ভেতর আস্ত একটি মহাকাল, মহাকাশ আছে। যারা এই মহাকাশ, মহাকালের পথে হাঁটে তারাই একজন সত্যিকারের মানুষ, একজন রতন। একজন পোস্টমাস্টার রতনকে উপলব্ধি করতে পারেনি, তাতে কী? রতন বেঁচে থাকবে যুগ যুগ ধরে কালের মহিমায়।

রহিত ভেমুলা,

তুমি লেখক হতে চেয়েছিলে। লেখক শব্দটির সাথে সংগ্রাম শব্দটি খুব করে লেপ্টে আছে। তোমাকে জ্ঞান দিচ্ছি না। আর কয়েকটি দিন পৃথিবী থাকতে তো পারতে, তাহলে হয়তো জ্ঞান দেয়া-নেয়ার উপরে ওঠে আমরা নির্বাণগ্রামের দিকে এগিয়ে যেতে পারতাম।

আমাদের  মুজিব ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি তোমার মতো লেখক হতে চাননি কিন্তু তোমার মতো মানুষের মুক্তি কামনা করতেন। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী দাবি আদায়ের আন্দোলন করছে। মুজিব ভাই তাদের পক্ষে আন্দোলন করলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মুজিব ভাইকে বহিষ্কার করে দিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় এমন সম্মাজনক কাজ প্রায় করে থাকেন। মুজিব ভাই কিন্তু সুইসাইড করেননি, তিনি এক কাপ চা খেলেন, একটি তরতাজা সিগারেটের প্রাণ নিলেন। তিনি বলতে পারতেন my birth is fatal accident কিন্তু না, তিনি তা বলেন নি। তিনি বললেন সাধারণ মানুষের কথা, তিনি বললেন বাংলার মানুষের মুক্তির কথা। তিনি হয়ে গেলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধু মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখালেন পালিয়ে কখনো সমস্যার সমাধান করা যায় না।

ভেমুলা, আমার বন্ধু,

মানুষ তোমাকে কেন মনে রাখবে বলো!  তুমি তো মানুষের মাঝে থাকতে চাওনি, তুমি চেয়েছো দুদণ্ড শান্তি। তাই মানুষ তোমাকে নিয়ে কিছুদিন বাণিজ্য করবে, তাতে তাদের বাণিজ্যিক রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ হবে, তারা তাদের শান্তি নিশ্চিত করার প্রয়াস পাবে। তারপর .....তারপর তারা তোমাকে ভুলে যাবে! 

সোমবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৬

যুদ্ধ

দিন রাতের কাছে যায়, নাকি রাত দিনের কাছে আসে আমরা কেউ জানি না। দিনের ভেতর রাত নাকি রাতের ভেতর দিন তোমরা কেউ জানবে না। তোমরা বলবে রাত-দিন হ্যান্ড শেইক করলে জন্ম নেয় মাগরিবফুল যার গন্ধে প্রার্থনা করতে বসে পৃথিবীর তাবৎ অন্ধকার। অন্ধকারে বসে বসে রাজা হওয়া যায়, যুদ্ধের ঘোষণা দেয়া যায়,
ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ করা যায়, প্রেম করা যায় না ....

রবিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৬

,

কিছু কথা পালকের নিচে থাকে, পাখি উড়াল দিলে কথাগুলো বাতাসের হয়ে যায় 

শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৬

অবাক করলে

আমি যে হলটিতে থাকি তার নাম মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল। জিয়া হল নামে সবাই চিনতে পছন্দ করে, আমিও বলতে আয়েসবোধ করি।পাঁচতলার একটি রুমে আমার বাসা।জানালার পাশে টেবিল। জানালা দিয়ে আজিজ মার্কেট দেখা যায়। আজিজ মার্কেটের পাশে রাস্তা। রাস্তায় বাস চলে, রিক্সা চলে, বাইক চলে, বিলাসবহুল গাড়ি চলে, রাত দশটার পর চলে ট্রাক।
নীরব মন নিয়ে টেবিলে পড়তে বসি। বইয়ের কালো কালো শব্দ, বাক্য চোখ দিয়ে দেখি আর কান দিয়ে মুখস্থ করি রাস্তা থেকে আসা যানবাহনের ওয়াজ।

মহসীন হলের দুইশত সাতাশ নাম্বার রুমে মাঝে মাঝে যাই। ঘুমাই, মেডিটেশন করি। দুই বন্ধু মিলে সিনেমা দেখি। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সেহেতু একটি বাড়তি কাজ করতে হয়। বাড়তি কাজটি হলো জানালা বন্ধ করে দেওয়া।

কেন, কেন!

কারন জানালা দিয়ে যানবাহনের শব্দ আসে। তিড়িং বিড়িং  শব্দ।

হেঁটে হেঁটে টিএসসিতে যাই, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা হবে সোনালি কার্পেট, জলজ মসৃণ হবে তার গতি। স্বপ্নের, চিন্তার এক একটি জীবন্ত অধ্যায় লেপ্টে থাকবে রাস্তার আনাচে-কানাচ। অথচ সৈনিক মেজাজে পার হতে হয় রাস্তা। এইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সৈনিক করে তোলে।

কাজী মোতাহার হোসেন ভবন। ভবনটি  শহীদ মিনারের পাশে। শহীদ মিনারের পাশে ঢাকা মেডিকেল কলেজ। শহীদ মিনার আর কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের মাইদদে একটি প্রেমের নদী। যে নদীতে ঢেউ, গর্জন থাকে প্রায় চৌদ্দ ঘণ্টা। নদীর ঢেউ-গর্জনের মোহনীয় পরিবেশকে সামনে রেখে গবেষণা করতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র।

কার্জন হলে বসলে প্রাচীন স্বর্ণযুগের কোনো অধ্যায় ইতিহাসের ভেতর থেকে চোখের সামনে আসতে থাকে। কিছুক্ষণের জন্য ভুলে যেতে ইচ্ছে করে ব্যস্ততার গ্লানি। কিন্তু না! চার রাস্তার মিলন মেলা তার কাছে ডেকে নেবেই। কারন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন বাহনের কেওয়াজ উপস্থিত উপস্থিত বলে নিজেদের চেতনাশক্তির পরীক্ষা দিয়ে থাকে। বাহনের চেতনাশক্তি দিন দিন বাড়ছে বই কমছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক আগেই হাউজিং লিমিটেড বানানো হয়েছে। দালাল আর দালাল, দালান এবং দালান। অথচ যে ছাত্রদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সেই ছাত্রদের থাকার সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। ছাত্রের একটি ডাবলিং সিট পেতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়, মনে হয় যেন মারামারি করে চর দখল করছে।

নিউ মার্কেটের মশা-মাছি রাতে রেস্ট নিতে যায় শাহ নেওয়াজ, কুয়েত মৈত্রী, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে। মশার সঙ্গীত শুনতে শুনতে তারা ঘুমিয়ে যায়। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মাছিরে স্বপ্ন দেখে। ঘুম থেকে ওঠে দেখে শরীরে রক্তের দাগ। এইভাবে রক্ত দান করার অভ্যাস গড়ে তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।

রোকেয়া হল শব্দদ্বীপ। চারদিকে শব্দ মাঝখানে রোকেয়া হল। রোকেয়া হলের মেয়েরা যে এতো সাহসী তার জন্য তারা কিন্তু দায়ী নয়। দায়ী একমাত্র যানবাহন এবং যানবাহনের সন্তানেরা। শব্দ এবং যানবাহন কীভাবে মেয়েদের সাহসী করে তুলে আপনি রোকেয়া হলের বাসিন্দা না হলে বুঝতেই পারবেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরি। সাধারণ জ্ঞান-গবেষকদের প্রিয়তম আশ্রয়। প্রিয়-প্রিয়া এসে মুখোমুখি বসে, চোখাচোখি করে, বই পড়ে। প্রিয়তম মুহূর্ত  যাপন করতে চায় তারা। অথচ তাদের মাঝে সতীন হয়ে অবস্থান করে যানবাহনের সুন্দরী কেওয়াজ।
সেন্ট্রাল লাইব্রেরির তিন তলা থেকে কাজী নজরুল ইসলামের কবর দেখা যায়। নজরুল বলেছিলেন মসজিদের পাশে তাঁকে কবর দিতে যেন মুয়াজ্জেনদের আযান শুনতে পায়। হ্যাঁ, নজরুলের মনের ছহি নিয়ত আল্লা কবুল করেছেন। যেহেতু তিনি ছহি নিয়ত করেছিলেন সেহেতু পরম করুণাময় তাঁকে যানবাহন ও জনগণের মিশেল আওয়াজকবিতাপাঠ শোনার বোনাস সুযোগ করে দিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম যখন আমার পা পড়ে তখন অবাক হয়েছিলাম-- এমন নাগরিক শহরের ভেতর এতো সুন্দর গোছানো গ্রাম কী করে হতে পারে! এখনো অবাক হই। তবে অবাক হওয়ার কারন বদলে যাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক অবয়ব।

বাংলদেশে অবাক হওয়ার এমন অনেক কারন আছে তাতে কিন্তু আমি মোটেও অবাক নই।

ওমা কেন!

নরসিংদীতে নবী ভাইয়ের একটি রুম আছে অনেকটা কবরের মতো। রুমে আমি আর ফাইজুল ভাই ঘুমাচ্ছিলাম। সময় সকাল নয়টা থেকে দশটা  হবে। জানালার দুই হাত দূরে একটি স্কুল, বাচ্চাদের স্কুল। শব্দ হচ্ছে ভীষণ। ফাইজুল ভাই জানালা খুলে কিছু শব্দ উচ্চারণ করলেন,

মিস, শুনতে পাচ্ছেন....

জ্বি বলুন...

ঘুমাচ্ছি তো, সাউন্ড পোলিয়েশন একটু বেশি হচ্ছে...

কী আর করবো বলুন, আজ বাচ্চারা পরীক্ষা দিচ্ছে তো তাই ....

আমি অবাক হবো!  ছোটকাল থেকে আমার বিশ্বাস আমাকে শিখাচ্ছে পরীক্ষা মানে পিনপতন নীরবতার নিচে শব্দের ঘর -সংসার।

আর মিস এ কি অমৃত বাণী শুনালেন?

বাংলাদেশ এমন অনেক কিছুই আমাদের শুনায়, অনেক কিছুই আমাদের দেখায়। অবাক কিংবা হতাশ হওয়ার কোনো কারন নেই, কোনো কারন থাকতে পারে না.... 

!!

অর্ধেক পৃথিবীর নিচে তোমাকে দেখাবে আরও অর্ধেক

বিপাশা নদীর মতো
আলেকজান্ড্রিয়ার টলেমির নীরবতার মতো
রূপক, উপমায়, চিত্রকল্পে তুমি এক হৃদয় কাব্য 

মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৬

এমন হবে

একটি ব্যক্তিগত নদীর মালিক হওয়া যেখানে স্রোত আসবে প্রেমের মতো, নদীর চারদিকে থাকবে গন্ধম ফুলের কলকাকলি, আর আমার প্রজাপতির আলস্য দুষ্টুমি ... একটি সুখ একমাত্র সুর হয়ে গান করবে পোষা বাতাসের ডালে...তারপর নদী ও জলের ভরাট কণ্ঠে মিয়া তান সেনের মল্লার রাগে বৃষ্টির ঝিরিঝিরি হাওয়া কইবে কথা আপন মনে আমাদের খুচরো চাওয়ার গোপন দেশে ....

মেট্রোপলিটন রোগ তুমি ভালো থাকো অনাদরে ....

সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৬

জেলে

পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে গণেশ, কুবের একটু পরে পরে হাঁক তুলে, একটু পরে পরে জানতে চায় মাছ জালে ধরা দিয়েছে কিনা।

The Old Man And The Sea উপন্যাসে সান্তিয়াগো বার বার জালের দিকে দৃষ্টি রাখে। তাঁর মন জানতে চায় কবে ধরা দিবে সেই কাঙ্খিত মাছ।

তিতাস একটি নদীর নাম উপন্যাসে গাবরদের ব্যস্ততা জাল আর মাছ নিয়ে।

আধুনিক যুগে কুবের, গণেশ, সান্তিয়াগো, মালু জেলের হাঁকডাক নেই, হাঁকডাক আছে ফেইসবুকজেলেদের।

ফেইসবুকজেলে একটু পরে পরে নোটিফিকেশনজালে চোখ রাখে, জানতে চায় কোনো কমেন্ট কিংবা লাইকমাছ ধরা পরেছে কিনা তার নোটিফিকেশনজালে। 

ছক

শৈশবের চোখ : খেলার মাঠ
কৈশোরের মন : লজ্জা লজ্জা ভাব
যৌবনের বুক : প্রেমের ঘাট
বৃদ্ধের মাথা : টিক টিক স্মৃতিঘড়ির কাঁটা 

শনিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৬

বিয়ে

তারপর মেয়েটির বিয়ে হলো....
তারপর ছেলেটি মারা গেলো....
যেদিন তারা বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করে সেই দিনই ছেলেটির বন্ধুরা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে আর চোখের জল খেয়ে খেয়ে কবরে পাশে যে ফুলগুলো তরতাজা হয় তা থেকে কিছু ফুল মেয়েটির দরজার ডান পাশে রেখে আসে...

তারাই তো

ছেলেটি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো রাতের অন্ধকারে তারা কোথাও চলে যাবে, দূরে বহুদূরে। আর মেয়েটি ভাবলো এই তো অন্ধকার নেমে আসলো, পৃথিবীর এবং জীবনের অন্ধকার .... 

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৬

তিনি লেখক

তিনি উপোস থাকবেন, মাঝে মাঝে ইফতার করবেন, তাও আবার ধার করা টাকা দিয়ে। কারন তিনি লেখক। উপোস না থাকলে তো লেখক হওয়া যায় না, মানুষের কষ্ট অনুধাবন করা যায় না।

তাঁর বউ এক শাড়ি দিয়ে বছর শেষ করে দিবে। কারন তার স্বামী লেখক।

তাঁর সন্তান টাকার অভাবে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারবে না। কারন একটাই তার বাবা লেখক।

তাঁর বাবা ভালো একটি পাঞ্জাবি কিনতে পারবে না, ভালো পোশাকের অভাবে নামাযের শেষ কাতারে তাঁর জায়গা। কারন তিনি লেখকের বাবা।

আর তিনি মাঠ দিবেন, মাঠে মঞ্চ তৈরি করে দিবেন, মঞ্চে কিছু লোক বক্তৃতা দিয়ে খ্যাতি অর্জন করবে, কিছু লোক মঞ্চে ওঠতে না পারার ব্যর্থতায় লেখার খাতাটিকে বক্তব্যের মঞ্চ বানাবে।

তাহলে তিনি কে?

তিনি আমাদের সবার হুজুর, হুজুরে আযম বিত্তবান, অর্থবান ভদ্রলোক।

তিনি পালঙ্কে আরাম করে বসবেন, জর্দা দিয়ে পান চিবাতে চিবাতে ফতোয়া দিতে থাকবেন কে লেখক আর কে লেখক না। আর তার মুরিদানরা একটু পর পর হাততালি দেয়ার পরিবর্তে সোবহানাললা  সোবহানাললা বলে বলে শয়তান তাড়াতে থাকবে। 

আমরা

কতভাবে আসো গো তুমি
কখনও আগুন কখনও বাতি
কখনও ফানুস কখনও জাতি

কতভাবে আসো গো তুমি
কখনও রাত কখনও দিন
কখনও জল কখনও জীব

অনেকভাবে আসো গো তুমি
কষ্টের ভেতর সুখের পাগলামী

আমি কেবল নাম ধরে আছি
তোমাকে ভুলে খেলি কানামাছি
আজ থেকে বহুদিন পর
ভুলে যাই ভুল পথ
কেবলই তুমি
কেবলই তুমি আর আমি
এইতো আমার অচেনা জগত
সেই তো আমাদের পুরাতন পথ

কতভাবে আসো গো তুমি
নিরবতার ভেতর কথার মাতলামি 

বাট কিন্তু

মানুষের অরজিনাল অবয়ব জানতে আমি আগ্রহী নই। কারন মানুষ আমার হাতের মোবাইল কিংবা বেডরুমের টিভি সেট না। মোবাইল কিংবা টিভি সেটের অরজিনাল অবয়ব জানতে হয়। কারন তাদের প্রত্যেকের অবয়ব মাত্র একটি। মানুষ বহুমুখী। নিজাম ডাকাত আবার নিজাম উদ্দিন আউলিয়া, ডাকাত বাল্মীকি আবার রামায়ণের বাল্মীকি, সন্ত্রাসী রবিন হুড গরীবের বন্ধু।

I am not yearning for the judgment on original figure of man just because man is not handset or TV of mine. I have to concern on the originality of handset, TV as they have one original figure yet.
Man has versatile motion. The once robber Nijam Uddin is now saint  Nijam Uddin, once terror Balmiki is now poet Balmiki, Terror Robin is man kind Robin Hood .

বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৬

,"",

Very single life of the dust is political, man is so called politician 

::

বাঘে বাঘে লড়াই, হরিণের ঘুম নাই


দায়

সন্তান জন্ম নেয়ার সাথে সাথে অভিভাবকদের মুখে জন্ম নেয় নতুন এক বাক্য-- I love you mama,
I love you dad।

নবজাতক, শিশুর কান আব্বু আব্বু, আম্মু আম্মু মুখস্থ করার পাশাপাশি love you শব্দটি মুখস্থ করে ফেলে। ফলে love you শব্দটি সন্তানের কাছে আব্বু-আম্মুর মতো নতুন, আব্বু-আম্মুর মতো পুরাতন।

শিশুটি বড় হতে থাকে, বাড়ির বাইরে যায়, কিছু মানুষের সাথে পরিচয় ঘটে। পরিচয় থেকে একটি অভ্যাসগত সম্পর্ক তৈরি হয়। সেখানেও তারা শুনে love you। কিন্তু ততদিনে love you শব্দটি অনেক পুরাতন। তারা নতুন কিছু চায়। ফলে সম্পর্কের নতুন দাবি নিয়ে আসে miss you। miss you শব্দটি  erotic। miss you শব্দটি দেহের সাথে জড়িত, খুব বেশি বৈষয়িক। নয়নের সামনে না থাকলে হৃদয়ের মাঝে ঠাঁই নেয়ার বিষয়টি miss you শব্দটি ধারণ করে না।

সম্পর্ক দেহের ভেতর দিয়ে হৃষ্টপুষ্ট হতে থাকলে অনুভূতির খেলা দর্শকশুন্য হয়ে পড়ে। হাততালি না পেলে মাঠ থাকলেও খেলোয়াড় থাকে না। তাইতো miss you শব্দটি এক সময় সম্পর্কে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে না। সম্পর্কের ভাঙন অনিবার্য হয়ে পড়ে।

সম্পর্ক ভাঙনের দায় প্রথমে নিতে হয় ব্যক্তিকে, পরবর্তীতে দায়টি চাপিয়ে দেয়া হয় প্রাকৃতিক ভারসাম্যের উপর।

প্রকৃতিকে উপলব্ধি করা এতো সহজ!

অভিজ্ঞতা তথ্যের সাথে জড়িত, হৃদয়ের সাথে জড়িত প্রকৃতি। প্রাকৃতিক খেলা উপলব্ধি করতে গেলে অনুভূতিকে সজাগ রাখতে হয়, করতে হয় অনুভূতির সাথে ঘর-সংসার।

আধুনিকতার নামে মানুষকে অনুভূতিহীন করে দেয়ার রাজনীতি চলছে। মানুষও সেই রাজনীতির ফাঁদে পা দিচ্ছে। তাতে  উদ্দেশ্য ব্যবসা সফল হচ্ছে। কিন্তু সম্পর্ক ভাঙনের ফলে সমাজে যে বিষ ছড়িয়ে যাচ্ছে এই দায় কি রাজনীতি নিতে পারবে, পারবে না। দায়ের সমস্ত ক্ষতিকর প্রভাব এসে পড়বে ভোক্তাশ্রেণির উপর। কারণ তারা ভোক্তা-- কাল ও যুগের গিনিপিগ....

বুধবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৬

:

জাম যতই কালো হতে থাকে ততই বেড়ে যায় পথিকের জিহ্বার লালসা 

সোমবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৬

এখনো রোজ নিয়ম করে বৃষ্টি নামে আমার পাড়ায়, তোমার ছাতার নিচে অভিমানের বসন্ত 

রবিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৬

বুদ্ধিজীবী

বুদ্ধিজীবীদের আমার অনেক ভালো লাগে। তারা মেয়েদের চুলের মতো গোছানো। তারা মেপে মেপে খান, মেপে কথা বলেন।

বুদ্ধিজীবীদের আমাদের অনেক ভালো লাগে। তারা সাপের লেজের মতো পিচ্ছিল এবং খুব ভালো করেই গর্ত চিনেন, আর বিড়ালের মতো উষ্ণতা প্রিয়। তাদের ঘিরে থাকে নাতিশীতোষ্ণ তোষামদকারীর দল।

বুদ্ধিজীবীদের তাদের খুব ভালো লাগে। কারণ তারা আমার মতোই বোকারামের দল-- আবোল তাবোল কথা বলে, তালে বেতালে চলে।

আপনি ইমানদার হলে অন্তত কথা বলাতে সাবধান থাকবেন। কারন কোন কথায় আপনার ইমান চলে যাবে আপনি নিজেও জানবেন না। বুদ্ধিজীবীরা কিন্তু কথার ব্যাপারে সাবধান থাকে, কারন যে কোনো কথার কারনে তাদের বুদ্ধির তকমা ডাস্টবিনে চলে যেতে পারে।
যত আছান আমার মতো এই নবীন বোকাদের -- হারানোর কিচ্ছু নাই, সবই পাওয়া, সবই দয়ালের দান। 

ভালো থাকা

ভালো থাকার পথ কেউ কাউকে দেখাতে পারে না। কারণ প্রত্যেক মানুষ স্বতন্ত্র। তবে এন্টিবায়োটিক চিকিৎসার প্রয়োজন  মাঝে মাঝে হয়ে থাকে। চিকিৎসা তো চিকিৎসা। জীবন যাপনের একটি উপায় মাত্র।

দেখানো পথে চলা মানে অন্যের চোখে পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখা। কিন্তু ভগবান তো আমাদের চোখ দিয়েছেন নিজ থেকে দেখার জন্য।

কোনো ভুল যখন নিজ থেকে ধরা দেয় তখন তা আর ভুল থাকে না, ভুলটি শুদ্ধতার পথে এগিয়ে যায়। আর কোনো ভুল যখন অন্যের সাহায্যে ধরা পড়ে তখন তাতে থাকে সংশয়।

নদী যেমন স্রোতের মধ্য দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় প্রতিটি জীবিত মন বাস্তবতার স্রোতে ভেসে ভেসে চলে। যাকে অনেকে কল্পনা বলে, আবেগ বলে আমি তাকে বলি বাস্তব; অনেকে যাকে  বাস্তবতা বলে তাতে আমার সন্দেহ হয়।


পৃথিবীর সব চেয়ে শক্তিশালী শক্তি মধ্যাকর্ষণ। মানুষ সেই শক্তি ভেদ করে বড় হয়। মানুষ প্রকৃতির উপর রাজত্ব করে, অথবা প্রকৃতি মানুষের রাজত্ব মেনে নেয়। মানুষকে তাই প্রথমে জানতে হবে সে মানুষ। তাহলে মানবীয় শুদ্ধতা তার মাঝে প্রাকৃতিকভাবে চলে আসবে।হেছা পানি দিয়ে পা ধৌত করাই কষ্টের, কৃষি জমি আবাদ করা তো অনেক দূরের কথা। 

শনিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৬

কিছুদিন

বিয়ের কিছু দিন পর প্রেমিকাদের স্বামীকে আঙ্কেল আঙ্কেল দেখায়। আমি জানতাম কাঁচা কাঁঠালই কেবল গরম দুধ পেয়ে পেকে যায়, পেকে যেতে বাধ্য থাকে। না। বাস্তবতা ভিন্ন। মানুষের জীবনও অনেক সময় পাখিদের মতো, কাঁঠালের মতো। 

!!

মাতৃভাষায় কথা বলি, কলকাতার ভাষায় না। মাতৃভাষার জন্য ভাষা আন্দোলন, বিদেশী উচ্চারণের জন্য না 

শুক্রবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৬

রহস্য

ভারতবর্ষের মানুষ পরিপূর্ণ ভালোবাসাও নিতে জানে না, আবার ঘৃণাও সহ্য করতে পারে না। তারা পছন্দ করে রহস্য। যে সম্পর্কের মাঝে যতবেশী  রহস্য সেই সম্পর্ক ততবেশী তরতাজা। 

স্মার্ট

পাকস্থলী অনেক স্মার্ট। আর স্মার্ট বলেই খাবারকে দুইভাগে বিভক্ত করে। একভাগ পাঠিয়ে দেয় রক্তে, অন্য ভাগ পাঠিয়ে দেয় পায়ুপথে পৃথিবীতে। পাকস্থলী আবর্জনা ধরে রাখে না। অথচ মস্তিষ্ক আবর্জনা ধরে রাখতে পছন্দ করে।
হে দয়াল, মস্তিষ্কের কেন একটি পায়ুপথ দিলা না, তাহলে মানুষেরা চৈতন্য নিয়ে ভালো থাকতে পারতো। 

বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৬

শীতে

শীত এলেই এক কান্নার কথা মনে পড়ে। গভীর এক কান্না। মেউ মেউ কান্না। সারারাত বিড়ালটি ঘরের এক পাশ থেকে আরেক পাশ, আরেক পাশ থেকে অন্য পাশ পায়চারি করে, মিউ মিউ করে হয়রান। রাত গভীর হতে থাকে আর মিউ মিউ শব্দটি গভীর হয়ে অন্য এক শব্দ ধারণ করে যা করুণ বেদনার মতো নীল।
সকাল হয়ে যায়। অন্ধকার বিদায় নেয়। বিদায় নেয় বেটা বিড়াল। কিন্তু বিড়ালটির কান্না সূর্যরশ্মির  মতো বাড়ির আনাচে কানাচে জড়িয়ে থাকে সারাটা দিন।

ঘরের মিস বিড়াল সারারাত আরামে ঘুমিয়ে থাকে আমার পাশে এ্যারাবিক কম্বলের নিচে। দিনেও সে ঘুমায় সময়ে অসময়ে। বেটা বিড়াল আবার আসে রাতে, কান্না করে আগের মতো, চলে যায় একা একা কোনো এক ভোরে।

একদিন সে দিনে আসে। মিস বিড়াল গভীর ঘুমে। তারপর থেকে তারপর, এবং থেকে এবং গভীর এক ঝগড়াটে প্রেম।

কম্বলের নিচে মিস বিড়াল আর আসে না। জনাব বিড়াল আর রাতে ডাকে না। তখন তাদের দাম্পত্য জীবন।

শীত চলে গেল। চলে গেলেন জনাব বিড়াল। মিসেস বিড়াল কয়েক সন্তানের মা।


ফোন আসলে

একটি ফোন আসলে মানুষটি বারান্দায় চলে যায়
একটি ফোন আসলে একটি বারান্দা বৃন্দাবন হয়ে যায়
ফোনে ফোনে রাধা,ফোনে ফোনে কৃষ্ণ
ফোনে তিনি আলেকজান্ডার, ফোনেই তিনি বিষ্ণু  

বুধবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৬

,

তাকে চোখে দেখা যায়, তার চোখ দেখা যায় না 

!

তুমিও রাধা, আমিও বাঁধা 

আনন্দ

প্রাপ্তি ও মুক্তি মানুষকে আনন্দ দেয়। আনন্দ হলো বিজ্ঞাপনের ঘড়ি যার মিনিটের কাঠি দশটা দশ মিনিটে স্থির। 

মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৬

মাধ্যমিক স্কুল

জানুয়ারি মাসে চমৎকার সূর্য নেমে আসে গ্রামে। জানুয়ারি মাসে চমৎকার কুয়াশা নেমে আসে গ্রামে। ধানের গন্ধে মন উচাটন। একটু একটু ধান কাটা শুরু হয়।

বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করে খেলাধূলা নিয়ে ভয়ানক ব্যস্ত গ্রামের যুবক। দুটি পাড়ার দল। ক্রিকেট খেলা। এই খেলাটি শীতকালে দশ-বারো বছর  যাবৎ গ্রামের যুবকের প্রিয় অভ্যাসগত খেলা।

জানুয়ারির শেষ দিকে নতুন বইয়ের গন্ধ।  নতুন চাল। নতুন ক্লাস। নতুন স্কুল। নতুন টিচার। নতুন কিছু প্রিয় মুখ।

আমিও নতুন ক্লাসে। নতুন স্কুলে। অচেনা মুখের ভীড়ে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হলাম। আড়াইসিধা কে বি উচ্চ বিদ্যালয় আমার মাধ্যমিক স্কুল।

আজকে ক্লাস হওয়ার কথা। প্রথম ক্লাস।  কিন্তু ক্লাস হয়নি। ফাস্ট বেঞ্চে বসে আছি আমি আর আমার মামাতো ভাই মোনায়েম। মোনায়েম খাঁ। হঠাৎ এক হৃষ্টপুষ্ট ছেলে আমাদের সামনে নাযিল হলো।

মোনায়েম খাঁ কে?

এমরানুর রেজা কে?

মোনায়েম ভাই অবাক হয়েছে কিনা জানি না, আমি বেশ অবাক হয়েছি। অবাক হওয়ার কারন এই পোলা কে না কে, তাছাড়া আমাদের নাম জানে কীভাবে। আমি প্রচণ্ড রকমের ইনট্রুভাট। মেপে মেপে কথা বলি। তাই উত্তরটা মোনায়েম ভাইকেই দিতে হলো।

আমি মোনায়েম, আর সে রেজা।

তারপর বশির  যা বলে,

মোনায়েম ও রেজা; তোমরা এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ , ছয় রোলনম্বরের আশা করবা না( বসির সিন্ডিকেট এই রোলনম্বরগুলো দখল করবে)।

আমি আকাশের তারা গুনে আসলাম কিছুক্ষণের জন্য।  বক্তব্য দিয়েই সে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলো। দ্রুত বের হয়ে গেলো। আমার আক্রমণ করার ক্ষমতা অনেক । আমি তাকে আক্রমণ করতে পারতাম । কিন্তু যারা আক্রমণ করে নিজেকে ক্ষমতাবান মনে করে আমি কেন যেন তাদের আক্রমণ সহ্য করে তাদের চেয়ে ক্ষমতাবান হিসাবে নিজেকে বিবেচনা করি।

ক্লাস চলে। আমি একদিন ক্লাসে যাই তো দুইদিন যাই না। প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা হয়ে গেলো। রেজাল্ট দিলো। আমি ইংরেজি সেকেন্ড পেপারে পেয়েছি পঁচিশ। মানে ফেইল। তেত্রিশ পেলে পাস। আমার প্রচণ্ড মন খারাপ। দিদি বললেন জীবনে এক-দুই বার ফেইল না করলে পাসের মর্ম বোঝা যায় না। দিদির কথা শুনে আমি ভয়ঙ্কর রকমের আশাবাদী হয়ে উঠলাম।   তারপর থেকে নিয়মিত ক্লাসে যাই, নিয়মিত পড়াশোনা করি।

ফাইনাল পরীক্ষা দিলাম। রেজাল্ট দিলো। মোনায়েম ভাইয়ের রোল হলো এক,
রাজনের দুই
আর আমার তিন।

আমার বন্ধু বশিরের জন্য দুঃখ হলো। কারন সে এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়ের ভেতরে থাকতে পারেনি। তার রোলনম্বর হয়েছিল ষোল। 

সোমবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৬

মানুষ

মানুষ যখন মারা যায়
সরিষা ফুলের গোপন শিশুটিও কান্দে নিরালায় 

রবিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৬

ঘুম থেকে

ঘুম থেকে ওঠে দেখলাম সোহাগ প্রতি প্লেট পেঁপের মূল্য নির্ধারণ করেছে দশ টাকা।
দুই দিন আগে প্রতি প্লেট পেঁপের মূল্য এক ধাপে পাঁচ টাকা বেড়ে যায়। মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি  আমার জন্য  পীড়াদায়ক। কারণ পাঁচ  টাকা উপার্জন করতে কী পরিমাণ ঘাম ঝরে তা একজন কৃষকের ছেলের না জানার কথা নয়।
আলুর দাম যদি তিন টাকা বেড়ে যায় তাহলে একজন কৃষক মরিচ কিনতে পারেন না। ধানের দাম যদি মণ প্রতি পাঁচ  টাকা কমে যায় তাহলে একজন কৃষকের নতুন একটি লুঙ্গি কেনা হয় না। তাই দুই টাকা, তিন টাকা, পাঁচ টাকার মূল্যজ্ঞান অর্থনীতিবিদদের না থাকলেও আমার মতো কৃষকের ছেলের রাখতে হয়।

সোহাগের প্রতি অনেক আনন্দ হলো। হঠাৎ পেঁপের মূল্য কমিয়ে দেয়ার কারন জানতে পারেনি। শুধু মনে পড়ে একদিন সকালে দুই প্লেট পেঁপে ত্রিশ টাকা দিয়ে খেয়ে আস্তে করে বলেছিলাম প্লেট প্রতি পেঁপেমূল্য দশ টাকাই তো ভালো ছিল।

আস্তে করে কথা বলার মূল্য আমি অনেক পেয়েছি। আজও পেলাম। তাই আস্তে করে কথা বলার প্রতি আস্থা বেড়ে গেলো।

মানুষ এতো জোরে জোরে কথা বলে কেন? তিনি যে শক্তিশালী তা কি স্পষ্ট করতে চান? জোরে কথা বলার মধ্যে  ব্যবসায়িক সফলতা হয়তো আছে তবে  কূটনৈতিক বিফলতার কথাও কিন্তু  অস্বীকার করা যায় না।

পেঁপে  খেয়ে এক রিক্সাচালক মামাকে ডাক দিলাম। বিনম্র ভাষায় জানতে চাইলাম কাঁটাবন যাবেন কিনা। মামা কবুল বললেন। আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম আপনার  বাড়ি কোথায় ...

চাদঁপুর

আমার বাড়ি কোথায় জানতে চান তিনি...

ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া ...

ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া তো অনেক অভিজাত এলাকা। আমাগো এলাকার মানুষ আফনাগো এলাকায় কাম করতে অ্যাইয়ে ...
আল মাহমুদের কথা মনে পড়ে। আল মাহমুদ তাঁর ``যেভাবে বেড়ে উঠি" গ্রন্থে ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়ার মানুষকে অনেক অভিজাত, উন্নত মানসিকতার, সংস্কৃতিবান মানুষ হিসেবে তথ্য দিয়েছেন।

রিক্সাচালক মামার সাথে বেশি কথা হয়নি। শুধু কুশল জিজ্ঞাসা এই যা। মুহিব ভাইয়ের দোকানের সামনে তিনি রিক্সা থামালেন। আমি টাকা দেয়ার জন্য মানিব্যাগ হাতে নিলাম।মামা টাকা নিতে চান না। অনেক পীড়াপীড়ি করলাম। মামা টাকা নিবে না তো নিবেই না।
ও মা, এ কী! কার্যকারণ কিচ্ছু মেলাতে পারছি না।

কতজনকে দেখি ভাড়া কম দেয়ার জন্য জোরে জোরে চিল্লাচিল্লি করতে, রিক্সাচালকও আরও জোরে চিল্লাচিল্লি শুরু করে। তাহলে ইনি কে? যিনি টাকা নিতে চান না।

আমি তো আস্তে আস্তে মামার সাথে কিছুক্ষণ কুশল-কথা বলেছি মাত্র।

যাক, তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিলাম। শুধু বললাম টাকা নিলে ভালো লাগতো। তিনি বললেন, না নিয়ে আমার ভালো লেগেছে ....

মুহিব ভাইয়ের দোকানে ঢুকলাম।

ভাই, একটি লেখা প্রিন্ট দিতে হবে।

প্রিন্টার তো কাজ করে না। সকাল থেকে অনেক চেষ্টা করেছি।

আস্তে করে বললাম, দেন না দেখি।

মুহিব ভাই প্রিন্ট দিলেন।

ঝকঝকে প্রিন্ট, ফকফকা লেখা।

মুহিব ভাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন। আমার অবাক হওয়ার মতো কিছু ছিল না। কারণ আমি জানি আস্তে কথা বলার শক্তি কত! 

শনিবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৬

অতীতের তুমি

অতীত তুমি কত মূর্খ ছিলে
খাল কেটে কুমির এনে নিজেকে খাওয়ালে
অযথা মানুষকে অথবা শেখালে
যত রাগ তত ভাগ জেনেও বার বার রেগে গেলে
চোখের ইশারায় গভীর জলে নিজেকে ভাসালে
অতীত তুমি কত মূর্খ ছিলে 

স্রোত

নদীর স্রোত উপরে উপরে
সাগরের স্রোত ভেতরে ভেতরে 

শুক্রবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৬

হরিণ

এক দেশে এক হরিণ ছিল। এখন সেই একদেশের নাম পরকাল। মানুষের দেশে বারো মাস ইহকাল।