সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩

প্রেমের মহল

 মনে আমি লিখে রাখি প্রেম বয়ানের শাস্ত্র

মনের মধ্যে মন ফুটানোর প্রেমই আসল অস্ত্র

বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৩

ভাষার দেশ ভাষাই আলো

 এলা মানে এলাচের সংক্ষিপ্ত রূপ। আবার এলা মানে আলগা, খোলা, ছড়িয়ে দেওয়া,অবশ হওয়া,আকুল করা, শিথিল করা।


নরসিংদী জেলার মানুষ এলা শব্দটা ব্যবহার করে এবলা অর্থে। এবলা মানে এই বেলা অথবা এখন।


আকাশে মেঘ ☁ করেছে, এলা তুমি কই যাবা?


এবলা শব্দটা ব্যবহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ আরেকটি শব্দ ব্যবহার করে— এ্যারা। এ্যারা মানে বিধবা। এ্যারা মানে আবার অলস অর্থেও ব্যবহার হয়ে থাকে। কারণ লোকাল জনগণ মনে করে স্বামীর ভাত তারাই খেতে পারে যারা পরিশ্রমী ও ধৈর্যশীল।


অমন এ্যারা বিলা জামাইর ভাত হাইবো কেমনে?


লালন ফকির ল্যাংটি এ্যারা

আট বসেনা কোনোমতে।। 


অন্যের উপর যারা সম্পূর্ণ নির্ভরশীল তাদেরকেও এ্যারা বলা হয়— যারা অন্যের উপর দিয়ে চলে কিন্তু স্বীকার করে না তারাও এ্যারা বা মানসিক বিকলাঙ্গ। তবে যারা অন্যের নুন খায় কিন্তু স্বীকার করে না তাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের মানুষ 'নিমু হারাম' বলে।  নিমক মানে লবন। নিমক খাওয়া মানে অপরের নিকট থেকে উপকৃত হওয়া।  নিমক-হারাম মানে যে উপকারীর উপকার স্বীকার করে না। নিমক-হালালি— উপকারীর উপকার স্বীকার করেন যিনি। 


Hunger waits for no delicacy— নুন আনতে পান্তা ফুরায়— নুন বা লবন বা নিমক মানুষের জীবনে আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া একসময় গ্রামের মানুষ বাজার থেকে কিনে আনতো নুন বা লবন, কেরোসিন, গুড়— এমন কয়েকটা জিনিস ব্যতীত সবকিছু তারা নিজেরাই উৎপাদন করতো অর্থাৎ গ্রাম মানে পরিপূর্ণ জীবন ও জীবন চাহিদার আধার। কিন্তু এখন গ্রাম একেবারে গেরাম হয়ে গেছে! ওজন বাপার একক গেরাম— ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের মানুষ ওজন মাপার একককে গ্রাম বলে না। গ্রামকে আবার দাদি নানিদের মুখে গাওগেরামও বলতে শুনি। একসময় গ্রামে কলেরা নামক বেরাম লেগে থাকতো— প্রচুর লোক মারা যেতো— গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেতো।


এই যে নিমক নিয়ে এতো বড় আলাপ দিলাম 'নিমক' কিন্তু উর্দু শব্দ। প্রচুর উর্দু শব্দ বাংলা ভাষায় জায়গা করে নিয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া নরসিংদী কিশোরগঞ্জ ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষ একটি শব্দ শিশুকাল থেকে শুনতে শুনতে বড় হয়— শব্দটি হলো ডর। ভয় পাওয়া অর্থে ডর শব্দটা ব্যবহার হয়ে থাকে। এই ডর শব্দটা উর্দু ভাষা থেকে বাংলায় জায়গা করে নিয়েছে। নাওয়া মানে গোসল করা। নাওয়া শব্দটা এসেছে উর্দু নাহানা থেকে। বাহানা শব্দটি আশুগঞ্জ-সরাইলবাসী ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে— অথচ শব্দটি উর্দু। আমরা অজুহাত শব্দটা ব্যবহার করি কম, আমরা ব্যবহার করি বাহানা।  বাহানা বানানো মানে অজুহাত বানানো। অনেক সময় শব্দ এবং আওয়াজকে এক করে ফেলি। বাঙালি যাকে শব্দ বলে জানে, উর্দুভাষীরা তাকে আওয়াজ বলে জানে। আওয়াজ থেকে এসেছে ওয়াজ মানে উচ্চতর স্বরে কোনো কিছু জানানো কোনো বিশেষ মহল বা সম্প্রদায়কে।

রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩

বয়ে যাওয়া সময়

 বাতাস ঘোরে ঘুরছে ঘুড়ি

বিলাস নেশায় বাড়ছে বাড়ি

শ্রাবণ মাসে মেঘের সারি

বৃষ্টি হয়ে ঝরে

পথ হারানো পথিক মন

চোখের নেশায় নড়ে

নড়তে নড়তে ঘুরতে ঘুরতে

জীবন চলে যায়

দীর্ঘ হচ্ছে পথের রেখা 

বাড়ছে কেবল দায়

কথার কোনো দেশ নেই

 জানো এই পাতা বিষ ছড়ায় 

তারপরও কেনো ছিড়তে গেলে

মরতে যদি এতোই স্বাদ 

পাতা কেনো মাটিচাপা দিলে

তারপরও তোমার কথার তাবিজ

ঝুলতে থাকে সুযোগ পেলে

ভাবছো তুমি উঠবে না সকাল

তুমি না জাগলে তবে

ভাবছো তুমি ডুববে না চাঁদ

তুমি না ঘুমাতে গেলে

উঠবে সকাল

ডুববে চাঁদ— এই নিয়ে তুমি ভেবো না আর

শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৩

কুয়াশার জালে চোখের খেলা

 বড়শির ফাদ পাতা চারপাশে

ক্ষুধা টেনে নিবে তার কাছে

ক্ষুধার্ত জেলে বসা বড়শির পাছে

দুজনের চাওয়া পাওয়া দুজনের কাছে 

একজন মরে গেলে আরেকজন বাচে

শুক্রবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৩

এক দরবেশ এবং হরিণের নিয়তি

 এক দরবেশ জঙ্গলে বসে মোরাকাবা করছেন— এমন সময় এক হরিণ দৌড়ে আসে— দরবেশের সামনে দাঁড়িয়ে হাপাচ্ছিল। দরবেশ চোখ মেলে দেখেন হরিনের শরীরে দুটি তীর বসে আছে। তাড়াতাড়ি হরিণটিকে দরবেশ তার আস্তানায় নিয়ে যান।


প্রথমে হরিণের শরীর থেকে তীর খুলেন। তারপর রক্ত বন্ধ করার জন্যে প্রয়োজনীয় ভেষজ ঔষধ প্রয়োগ  করেন। রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায় একসময়। রক্ত পড়া বন্ধ হলেও ঘা অনেক গভীরে চলে যায়— শুকাতে বেশ সময় লাগবে। 


হরিণ তার স্বজাতি দেখলেই দৌড়ে তাদের কাছে যেতে চায়— দরবেশ তাকে যেতে দেন না— কারণ তার ঘা শুকায়নি পরিপূর্ণভাবে— এইভাবে এক মাস দুই মাস তিন মাস চলে গেলো দরবেশের আস্তানায়— হরিণের চোখ দিয়ে জল টপটপ করে পড়ে! দরবেশ তা দেখেন কিন্তু দেখেন না— কারণ তার শরীরের ক্ষতঘা শুকায়নি। 


একদিন দরবেশ হরিণটিকে তার স্বজাতির কাছে ছেড়ে দিলেন— স্বজাতিকে পেয়ে হরিণটি দারুণ খুশি ☺। 


— এতোদিন কোথায় ছিলে?

— এক দরবেশ আমাকে বন্দি করে রাখে।

— দরবেশকে তো আমরা চিনি, তিনি তো কাউকে বন্দি করে রাখেন না।

— আরে না, এখনকার দরবেশ আর আগের দরবেশ এক না।


হরিনটির কথায় হরিণ সম্প্রদায় বিস্মিত হলো— এখন দরবেশ দেখলে দৌড়ে পালায়। 


দরবেশ আসমানের দিকে তাকিয়ে বলেন— প্রভু, এই পৃথিবীতে  হরিনের  যা-ও এক বন্ধু ছিলো তাকেও শত্রু বানিয়ে দিলে!