শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আকাশ কেবল আকাশ রচনা করে চলে

মেঘনার জলে নৌকা থাকে। আমাদের দেহের জলেও নৌকা থাকে। লোকে তাকে মন বলে। জলে মাছ থাকে। মনেও মাছ থাকে। বিজ্ঞান তাকে অনুভূতি বলে। ইয়াং ডাকাইত দল বলে ফিলিংস।

মেঘনার পাশেই গ্রাম। গ্রামের পেছনে আকাশ। ছোট কালে মনে হতো গ্রামের পেছনে যে আকাশ তাকে বুঝি গ্রামের পেছনে গেলেই ধরা যাবে। কতবার গ্রামের পেছনে গেলাম। আকাশ আর ধরা যায় না। আকাশ কেবল আকাশ রচনা করে চলে। 

বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আমাদের জন্মদিনেরা

এক সাধু। সাধুর কাছে প্রায় বিভিন্ন ধরনের মানুষ আসে। বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন সাধুকে করে। সাধু অত্যন্ত শান্ত মার্জিত উপায়ে প্রশ্নের সন্তুষ্টজনক উত্তর দেন। কিন্তু একটি প্রশ্নের উত্তর সাধু দেন না।

কোন সে প্রশ্ন? সাধুর বয়স জিজ্ঞেস করা হলে সেই সম্পর্কে সাধু কিছু বলেন না।

একদিন তার খুব কাছের এক মানুষ তার কাছে জানতে চায় কেন সে তার বয়স সংক্রান্ত কোনো উত্তর দেন না।

সাধু হাসলেন এবং প্রশ্নকারীর চোখের দিকে তাকালেন এবং বললেন,

"শরীরের আয়ু এক ইতর প্রানীরও রয়েছে কিন্তু মনের মানের আয়ু কেবল মানুষের রয়েছে, আমার মন আদৌ তার মান অর্জন করতে পেরেছে কিনা আমি জানি না, জানলেও তা পৃথিবীর উৎসব দিয়ে উদযাপন করার বিষয় নয়। লোহা দিয়ে কী স্বর্নের কীর্তন করা যায়?

বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মশা কেন বেঁচে থাকবে

যে মশা আমাকে কামড় দিয়ে রক্ত খেয়েছিল সে আজ বেঁচে নেই, যে মশা আমার রক্ত খাচ্ছে সেও বেঁচে থাকবে না

তবু কথা থাকে

তবু কথা থাকে ব্র্যাকেটে
আকাশে আকাশে
কিংবা ছাদের বারান্দায়
কথাও ত ঘুড়ি
সুতো আছে তার
প্রতিপক্ষ চাপে মাঝে মাঝে সে নাটাই হারায়
কিছু ভুল ভুল করে সুখ পায়
তারা যেমন দিনের ভেতর নিজেকে লুকায়

মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আমার রাধা গো

আমার রাধা গো
কার ঘরে ঘুমাও তুমি অনেক রাতে এখন
কার চোখে পেল তোমার নতুন জীবন
কোন বাম আঙ্গুল রচনা করে তোমার মরন
ভুলে গেলে বৃন্দাবন
ভুলে গেলে আমারে
ভুলে গেলে যমুনার জল, জলেপ্রেমে মধুর মিলন
Miracle silence on your eyes
I am going to die I am about to die
আমার রাধা গো
সে ত জানে না আমার মতো ফুলতোলা অভিশাপ
বাচাল দুঃখে কেমন করে তার সাথে রাত কাটাও
পাথরের মতো তোমার হাসি
তোমার হাসি দেখবো বলে
মৃত্যুর মতো সুখ নিয়ে চলে গেলাম সেই ফেলে আসা বাড়ি
ভালো থাকো তুমি
ভালো থেকো তুমি
আমার রাধা গো
এখনো আমি হামতোম ডিয়ার জিন্দেগী
এখনো বৃন্দাবন রাখাল আমি তোমার অভিসারে সুখী
চলে এসো সময়ে
তমালের তলা এখনো বাঁশি বাঁধে রাধার স্মরনে

Slot

In the end we will become sleep slot

সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

শব্দটি

আমরা তাই শুনি যা শুনতে চাই, আমরা তাই দেখি যা দেখতে চাই। আমাদের দেখার অভ্যাস ধীরে ধীরে পুকুর হয়ে আসে, আমাদের শোনার অভ্যাস আস্তে আস্তে ডোবা হয়ে আসে। আমাদের মাঝে সর্বনাম হয়ে অবস্থান করে ট্রেনের ভেঁপু।

ন শুনি তোমায় ন দেখি আমায়

পৃথিবীতে শুধু আওয়াজ আর কেওয়াজ

শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

শীতলক্ষ্যা নদী আমার মারা যায় রোজ

গ্যাসবিলের পাশেই নজরুলের দোকান। নজরুল চা পান সিগারেট বিক্রি করে। গ্যাসবিল বিক্রি করে মানুষ মানুষের রুচি, মানুষের প্রতিদিনের সময়।

নজরুল এক সময় দারুন মাছধরা লোক ছিল। আজ সে কাস্টমার ধরে। রাতে বিলের পাশে নামে উঠতি যুবকের ঢল। তারা কথা বলে ফেইসবুকের ভাষায়। ফেইসবুক তাদের শেখাতে পারেনি গ্যাসবিলের রাবনমুখী ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার ফলকথা। যুবকের দল কথা বলে রাত জাগে রিংটোনের মতো বেজে ওঠে বারবার।

অথচ ভুলে গেছে তারা শীতলক্ষ্যার কথা। শীতলক্ষ্যা এক সময় কপিলার মতো মাথায় তেল দিত। খাঁটি সরিষার তেল। তার ঠোঁটে ছিল তেঁতুল পাতার মতো মহিন মিহি কলরব। তার শরীরে ছিল গ্রামীন নারীর আবাদি সুভেন্দু গন্ধ। আজ তার শরীরে মিলফ্যাক্টরির আজলা বীর্য।

শীতলক্ষ্যা মারা যায়। নদী মারা যায়। মারা যায় আমার বাংলাদেশ। নাকে আসে কার্বনের পোড়া গন্ধ। বুকের ভেতর চোখের ভেতর সাপ খেলা করে কামড়ে কামড়ে বিষাক্ত হয় আমার স্বপ্নের দৃশ্যরা।

সকালে সূর্য উঠবে। নজরুল তার দোকান খুলে বসবে গ্যাসবিলের দাহ্য বাতাসে। মরা বাতাসে একটু একটু করে মারা যাবে নজরুল। মারা যাবে মঙলদ্বীপ গ্রাম।

অনেক গ্রাম মারা যাওয়ার পর আপনি একবার আন্দোলন করতে আসবেন। তারপর আপনার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে নোবেল প্রাইজ। আপনাকে বলা হবে শান্তির মশাল।

হাততালি হবে একটানা হাততালি হবে।মিডিয়ার পর মিডিয়া দেখাবে আপনার ইলেকট্রনিক মুখ। নজরুল তখন মাটিতে জলেতে মিশে গিয়ে বলবে
"নো টক ডিয়ার নো টক
মাই কান্ট্রি ইজ নাইস
ইউ দি পলিসি ইজ ফাইন
কেরি অন ডিয়ার কেরি অন"

শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ভালোবেসে সুখ চাই

বাওড়ের জলে গেলে পাগলামী কাঁধে বসে জোয়ালের মতো
আজ তাই ভুলে যাই যত ছিল মাখানো হৃদয়ের ক্ষত
গান গাই রোজ তাই
ভুলটুল মেনে নিয়ে ওয়াইফাই জল পাই
ঘর চাই মন চাই ভালোবেসে সুখ চাই
চাই চাই ফিরে চাই হারানো হাইফাই

বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ব্যথামুক্তিতে কথাতথ্যে আমাদের ঘর

ব্যথাপ্রিয় ফুল
ঝরায় মুকুল
কত ব্যথা গো তোমার রাতের মতো ভেঙে পড়ে বিকেল বেয়ে
আমি তো রাখাল ঘর বেঁধেছি নদীর কূলে আযান মনে
সুখদের ঘর
মনভরা ঝড়
অনেক কথার গল্প জমা জোয়ার যেমন জলের ঘরে যখন তখন
অলস খোঁপার ভাঁজে আছে আমার হাতের গোপন কিছু শিল্প বুনন
মহামন জন
লীলাপ্রিয় পন
মিছিলের ঘাটে আশার প্রভাতে বালির খেলা অনিয়ম নিয়ম দেখাতে পারেন
ইউটার্নসুখ কেবলই তিনি দূরাগত দূরকারী পুরাতন সুখসুর বাজাতে জানেন
চেয়ে আছি তাঁর দিকে
চেয়ে আছি তোর চোখে
বাজে যেন আমাদের গল্প দিনেরাতে
তোর মুখে তাঁর চোখে

বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

প্রাকৃতিক প্রতিশোধ

প্রকৃতি ঠিক প্রতিশোধ শব্দটা জানে না। সে তার নিয়মতান্ত্রিক কাজটি করে যায়।  নিয়মতান্ত্রিক কাজটিই অনেক সময় অনিয়মকারীর কাছে এসে প্রতিশোধ হয়ে যায়। মানুষ যেমন করে প্রতিশোধ শব্দটি নাড়াচাড়া করে প্রকৃতি যদি তেমন করে নাড়াচাড়া করত তাহলে পৃথিবীতে প্রানের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতো অনেক অনেক আগে।

প্রকৃতি পুরষ্কার শব্দটিও মানে না। সে পুরষ্কার তিরস্কারের অনেক উর্ধ্বে বাস করে। সংসারের মাথা দিয়া প্রকৃতিকে অনুধাবন করা যাবে না। তাকে অনুধাবন করতে হলে সংসারকে পকেটে অথবা আঁচলে ভরতে হবে। 

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

Let me study you you are letting to have

Dark night. Midnight too. Window is widow open. Sky is clear. The star is dazzling with his star. The cloud is playing trace conoid with his cloud. The starry air is weaving with his partner. I am so alone with my loneliness. Sometimes agony or gala makes a day for sable sublime.
I love dark.
I love midnight.
I love moonlight just for soul of dark scoring within the moonlight truss.
Hello my dear, how are you?
I am fine as so as my best.
Listen me I am listening you yearning for living together within the tummy dark of the time leaving  world class society.
Come please come my pussy
Let me study you you are letting to have

সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

এক দুপুরে যে আমাকে একটি পালক দিয়েছে আমি হয়তো তাকে ভুলে যাবো

আকাশ কুলে নিয়ে বসে আছো কল্পনাপাখির ডানায়, হাতে সাদা একখান ডায়রি, চোখে ভরা দুপুর নির্জন মাঠ, পায়ে ছায়াময় নীরবতা। সব মিলিয়ে তুমি ছিলে আশ্বিন মাসের ওড়াউড়ি সফেদ মেঘ। তোমাকে দেখে আমার কেন ভালো লাগবে না? সব আকাশই চোখের কাছে এসে ঘুম হয়ে যায়। তুমিও হলে।

প্রিয় পালক, তুমি কার কথা ডায়রিতে লেখতে চেয়েছো? আমার কথা? না কার কথা লিখবে ভাবতে ভাবতে কলম আর মন এক করছো এমন সময় আমি এসে হাজির হলাম ধপাস করে?

আমাদের সমাজে মেয়ে ছেলের কথা ভাববে,  ছি ছি, এ এক মহা পাপের কাজ! ছেলে মেয়ের কথা ভাববে, তাও পাপ-- তবে আংশিক। কারন সমাজের প্রনেতা যেহেতু পুরুষ তাদের পাপ কম। পুরুষদের বেলায় পাপ একেবারে না থাকলে পাপের কদর কমে যাবে, তাই রাখা। পাপের নাম দিয়ে আমরা কত গুরুত্বপূর্ন কাজকে যে ঢেকে রাখি তার হিসাব কে রাখে!

গুরুত্বপূর্ন কাজ গুরুত্বহীন হয়ে গেলে সমাজ পিছিয়ে যায়। তাইতো আমরা দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি, হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, আদালতে বাড়ছে উকিলমক্কেল খেলা। নদীতে কমে যাচ্ছে মাছ, জলে বাড়ছে দূষন, ভূমি হারাচ্ছে উর্বরতা, সাংবাদিক চুপচাপ বসে নেগেটিভ নিউজ খোঁজে, বুদ্ধিজীবী আর্টম্যান ভোগে টিআরপি ম্যানিয়ায়।

এই ত আমার সাম্যবাদী বন্ধুটি ভ্যানগার্ড হাতে ঘুরেফিরে কয়েকজন সাপলুডু মানুষের কাছে। তাকে বললাম চলো সিনেমা দেখি। সে সিরিয়াস মুডে বলল "চুপ করো"। সমাজকে ভয় পায় সে, কোন সমাজকে ভয় পায় সে, যে সমাজ তার চাকরির নিশ্চয়তা দিতে পারে না সেই সমাজকে, যে সমাজ তার পায়ে স্বাধীন গতি দেয়ার পরিবর্তে শিকল পরায় সেই সমাজ .... বন্ধুটিকে পেছনে ফেলে তোমার স্মৃতিপ্রিয় সুখ মনে নিয়ে আমি হাঁটতে লাগলাম রাষ্ট্ররেখা অতিক্রম করে। রাষ্ট্র,পরিবার তোমার মতো প্রয়োজন হতে পারেনি তবুও তারা তেলাপোকার মতো কেবলই টিকে যায় তোমার আর আমার মাঝখানে কাঁটাতার হয়ে। আমাদের মাঝে কোনো সমাজছবি রোদ ফেলে আয়নাবাজি করবে তা হতে দেব না। তুমি আজকে দুপুরের মতো স্বাধীন, আমিও।

আমাদের দুপুর বিকালে যাবে, বিকাল যাবে গোধূলি বেলায়, তারপর একটি ভীষন রাত। রাত মানে সমাজকে লাথি দিয়ে অন্ধকারে ফেলে দেয়ার কাল। রাত মানে ডাকাত হবো,পুলিশি রাষ্ট্রকে কেটে কুচিকুচি করবো বারবার।

প্রিয় পালক, তোমার কাছে একটি ফুল চেয়েছি দিয়ে দিলে, অনেক দিন পর আবার তোমার সাথে দেখা, তাই চেয়ে বসলাম তোমার প্রিয় ডায়রি, তাও দিয়ে দিলে। তারপর অনেকদিন পর যখন তোমার সাথে দেখা হবে তখন আমি তোমাকে চেয়ে বসব। তখন তুমি থমকে যাবে জানি। কারন তোমার কাছে আমি তোমার চেয়ে দামি ....

রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আমাদের ব্যক্তিগত কসাই আমার হয়ে যায়

সুন্দর হয়ে গেলে
সুন্দর রয়ে গেলে
এক কবির বেদনায় থাকবে বলে কত সুন্দর কসাই হলে অবশেষে
মানুষের লোভ অনেক বোকার বাজার
মানুষের রুচির পাহাড় অতএব

শ্রাবন মাস চোখের আকাশে ঘন ঘন দেখা যায়, পিঁপড়া পিলপিল করে গাবের মতো আটকে থাকে হৃদয়ে, ভুল ব্যথা অভিনয়ে নাচে হৃদয়ের সমগ্র গতর ধরে।

আগরতলা টিভি স্টেশন আমাদের বাড়ি থেকে বহুদূরে তবুও বারবার ইন্টিনার নড়াচড়া করি যদি দেখতে পাই তোমার ছবি-- দেখা নাই দেখা নাই।

মানুষ জানে আমার ঘরে টিভি আছে, মানুষের সাথে সাথে আমিও জানি সেই বাংলা আসবে আমার ঘরে, টিভি জানে নেটওয়ার্কহীন জীবন তার অনেক দৃশ্যহীন জিরজির নিয়ে বেঁচে থাকা, কেবলই শব্দের বাহার।

সুইচ ব্যাংকের মতো নীরব এক কথা নিয়ে বাজারে গেলে মাছ থাকে না জলের ঘরে, নীরব হয়ে গেলে সুন্দর করে, নীরব করে দিলে আমায়।

অনেক বেদনা নিয়ে আমি এখন কার কাছে যাই
জলের গভীরে বেদনা স্রোত কাকে আমি দেখাই
সব মানুষ ত তোমার মতো প্রশিক্ষিত কসাই
আনন্দের সন্ধ্যায় তোমার বিলাইও ইন্দুরের লগে আলাবালা খেল দেখায়
দেখে যাই
দেখে যাই
অসহায় হলে চোখের নিচে মুখ লুকাই মুখ লুকাই

বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

পুটিয়া বাজার

পুটিয়া বাজার। এখানে গরু পাওয়া যায়, ঘোড়াও পাওয়া যায়। পান পাওয়া যায় আবার ধানও পাওয়া যায়। কল পাওয়া যায় আবার বলও পাওয়া যায়।

পুটি মাছ থেকে পুটিয়া। শনিবার বড় হাট, বুধবার তার চেয়ে ছোট হাট বসে।

বাজারের পাশ দিয়ে লেকলেকে হাড়িধোয়া নদী বয়ে চলেছে। আশেপাশের বিশ ত্রিশ গ্রামের প্রধান ভরসার জায়গা এই বাজার।

গ্রামের মানুষের প্রায় সব প্রয়োজন নিয়ে বসে আছে এই বাজার। এই বাজারেই এক সময় ডাকাতি হতো।  জয়নাল ডাকাতের নাম এখনো মুরুব্বিদের মুখে শুনতে পাওয়া যায়। এখন আর এখানে ডাকাত আসে না। তবে কয়েকটি ব্যাংক বাজারের আশেপাশে খুব শক্তিশালী উপায়ে অবস্থান নিয়েছে।

পুটিয়া বাজারকে কুফি বাজারও বলা হয়। কারন আছে। মাগরিবের পর প্রায় সব দোকানে মোটা সলতের কুফি জ্বলে ওঠতো। এখনো জ্বলে ওঠে। তবে আগের তুলনায় খুবই কম। আধুনিক বাল্ব এসে কুফিকে বিদায় দিয়েছে। শ্রীচরন বাবু কিন্তু এখনো চানাচুর বিক্রি করে চলেছে। আধুনিক ফাস্ট ফুড তার চানাচুরের মচমচে জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে পারেনি।


পৃথিবীর সব গ্রামের আচরন প্রায় এক কিন্তু পৃথিবীর সব বাজারের আচরন কিন্তু এক নয়। বাজারের মধ্যে দিয়ে ভূত গ্রামের ভেতর ঢুকে। গ্রামের মানুষ ধীরে ধীরে ভূতগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তখন গ্রাম আর গ্রাম থাকে না। গ্রাম হয়ে পড়ে ভূতরাজ্য।

পুটিয়া বাজারেও কীটনাশক ভূতের দেখা পাওয়া যায় যা আমাদের জমিকে বিষক্রিয়া নার্সারি করে তুলছে খুব স্লো মোশনে। তবে এই কথা মানতে হবে পুটিয়া বাজারে এখনো প্রাচীন বাজার পদ্ধতির একটা ফ্লেভার রয়েছে।

মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মুগ্ধতা

আমার এক বন্ধু আছে। তার নাম ম্যান অব সাইন্স। ম্যান অব সাইন্স কারো প্রতি মুগ্ধতা ধরে রাখতে চায় না। তার মতে মুগ্ধতা এক ধরনের জেলখানা। ফলে মুগ্ধতাকে ধরে তার প্রিয়তম গ্লাসে রেখে তাপে রেখে দেয়। মুগ্ধতা তখন বাষ্প হয়ে উড়ে যায়।

কলকাতা

কলকাতায় সম্মানবোধের চেয়ে আইনবোধ বড়

শোক

ইন্ডিয়ানদের শোকের আয়ু তাদের সিগারেটের মতো-- দুই টানে শেষ 

রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বাওড় দেখা হলো এবার

দত্ত। মাইকেল। মাইকেল আর দত্ত এক নয়। তবুও তাঁর নাম মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত কেনো বলেন বঙ্গে বিবিধ রতন রয়েছে তা যশোরে না আসলে বুঝতে পারতাম না। পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশের গ্রাম অবশ্যই আলোচনার মতো সৌন্দর্যের দাবিদার। বাংলার গ্রাম শ্যামলিমা-- শ্যামল বর্নের গন্ধ জোয়ার।

ঝিকরগাছা থেকে যাবো রাজগঞ্জ। কপোতাক্ষ নদের ব্রিজের গোড়া থেকে বাইকে ওঠলাম। বাইক যিনি চালাচ্ছেন তার নাম আমিন। তার ছেলের নাম আসলাম ( বাংলাদেশের মানুষের নামের অর্থ জানলে আরবি অভিধানের অর্ধেক মুখস্থ হয়ে যাবে)। আসলাম মাদ্রাসায় পড়ে। ঝিকরগাছা ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা। সাইনবোর্ডে লেখা। বাস্তবতা কেমন তা অনুমান করতে পারি না। কারন বাংলাদেশের অনেক কিছু অনুমান করা সম্ভব নয়। কারন বাংলাদেশ আর আগের বাংলাদেশ নেই। বাংলাদেশে এখন দৃশ্যমান মুখের চেয়ে অদৃশ্য মুখ অনেক বেশি শক্তিশালী।

ঝিকরগাছা থেকে রাজগঞ্জ প্রায় আঠার কিলোমিটার এলাকা। বাইকভাড়া দুইশত টাকা।

বাইক চালাতে আরম্ভ করেছে আমিন। আমিন সাহেব প্রথমেই আমাকে ভয় দেখালেন। ডাকাত আক্রমন করতে পারে এমন ভয়। আমিও ভয় পেতে আরম্ভ করলাম। বাইক চালক আমিন আমাকে দেখালেনও বটে কোন জায়গাটিতে ডাকাত একটি লাশ কেটে কুচিকুচি করে ফেলে রেখেছিল। আমার ভয় আরও বেড়ে গেল।

বাইক থামান।

কেন?

পেশাব করবো।

ভয় পেলে মানুষের পেশাব পায়। অনেকের ভয় পেলে বমি আসে। হয়তো ভয়ের সাথে জলের একটা সম্পর্ক আছে। ভয় পেলে জল খেলে ভয় অনেকটা কমে যায়। আমি জলমাইনাস করে আবার বাইকে বসলাম।

বাইক চলছে। আমি একদম ভুলে গেছি ডাকাতের কথা।

কেন কেন?

রাস্তার দুপাশে খেঁজুর গাছের রমনীয় কেশ। কেশের ফাঁকে ফাঁকে দেখা যায় দৃশ্যমধুর মাঠবন। জোছনাপূর্ন আকাশ বিন্দু বিন্দু তারা। নিরন্তর নিরবতায় বারবার ঢুকে যাচ্ছে আমাদের শরীর। বাংলাদেশ ভারতের সীমান্ত নদীর মতো হিংস্র নীরব সৌন্দর্যের পাশে মৃদু বাতাসের হাততালি। হঠাৎ হঠাৎ, অনেকক্ষন পরপর গ্রামীন জীবনের আড্ডাসুখ যেন উৎসব দিনে নীল শাড়ি আর জলপাই কালারের ব্লাউজ পরে বসে রয়েছে। অপার সৌন্দর্যের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে বুঝতে পারলাম জীবনের আনন্দ কোথায় কেমন করে লুকোচুরি খেলে। জীবনের আরেকটি উপলব্ধি খুঁজে পেলাম যা কোন মানুষ দিতে পারে না, রাজগঞ্জ যাওয়ার স্লিম ফিগারের রাস্তাটি দিতে পেরেছে।

রাজগঞ্জ যাওয়ার পর জানতে পারি আমাকে যেতে হবে বেলতলা মানে হাজরাকাঠি। আরও ষাট টাকা বিনিয়োগ করে গেলাম বেলতলা। বেলতলা গিয়ে ভালো লাগা আরও বেড়ে যায়। গ্রামের বাজার এতো চমৎকার পরিচ্ছন্ন হতে পারে প্রথম দেখলাম। যে বেল গাছটির কারনে জায়গাটির নাম বেলতলা সেই গাছটি বহু বছর আগে মারা গেছে। তবুও নামের মধ্যে গাছটি বেঁচে আছে। ময়নার দোকান থেকে মিষ্টি খেলাম। মিষ্টির মধ্যেও পরিচ্ছন্ন স্বাদ মিশে রয়েছে।

সাইকেল নিয়ে আসে বন্ধু কামরুল। আমার বন্ধুসঙ্গ খুবই আনন্দের। কারন তাদের কাছে আমার রুচিবোধের পরীক্ষা দিতে হয় না। সে সাইকেল চালাচ্ছে আর গান করছে। গ্রামের রাস্তা। আকাশে চাঁদ। দশ মিনিটের মধ্যে আমরা বাড়িতে পৌঁছে যাই। মাটির বাড়ি এবং তার লাইটিংয়ের বাহার মুগ্ধকর।

কামরুলদের বাড়ি দুটি থানা জুড়ে রয়েছে। বাড়ির কিছু অংশ রয়েছে মনিরামপুর থানায় কিছু অংশ রয়েছে কেশবপুর থানায়। ইন্টারেস্টিং। খুবই ইন্টারেস্টিং।

সাইকেলে বসেই আমরা কিছু পরিকল্পনা করি। পরিকল্পনা এক: পুকুরে গোসল করা। পরিকল্পনা দুই: আখ চুরি করা।

গোসল শেষ করে এবার আখ চুরি করার পালা। দুজনে লুঙ্গি পরে নিলাম। লুঙ্গি নেংটি দিলাম। নিতম্ব ঝুলছে। আমার এবং তার।

আগের দিনের দাদা চাচারা নিতম্ব বের করে কেন কাজ করতো তার রহস্য একটু উদ্ধার করার চেষ্টা করলাম। নিতম্ব বের করে লুংগি নেংটি দিলে একটা বন্যভাব আসে। আর বন্যরা কাজে সুন্দর।

একটা বটি দা নিলাম। দা টি দেখতে বকের গলা এবং মাথার মতো।
কোনো আওয়াজ করা যাবে না কামরুলের নির্দেশ। ডিরেক্টরের নির্দেশ অবশ্যই মানতে হবে। জীবনে আখ ক্ষেত দেখেছি মাত্র একবার। নরসিংদীতে। দ্বিতীয় বার আখ ক্ষেত দেখবো। তাও রাতে। তাও আবার এসিসটেন্ট চোর হিসাবে....

চারদিকে সুনসান রাতবাঁধানো নীরবতা। আমরা যাচ্ছি চুরি করার ঋতি ও ঋদ্ধির পথে। সামনেই বাঁশঝাড়। বাঁশঝাড়ের পাশেই দাদিমার কবর। কবরের পাশেই বটগাছ যেখানে পরী নেমে আসতো। সারা রাত পরী নাচতো। তারপর সুন্দর ছেলেদের তুলে নিয়ে যেতো পরীরাজ্যে। জোছনা রাতেই বিশেষ করে তারা নেমে আসতো। আজকে ত আকাশমাতানো জোছনা। আমাকে দেখামাত্র পরীদের ভালো লেগে যাবে। কারন আছে। কারন মানুষদের বলা যাবে না, পরীরা জানে। ভয় সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠতে লাগলো। প্রধান চোরের নির্দেশ কোনো প্রকার আওয়াজ করা যাবে না এবং দৌড়ঝাঁপ করা যাবে না। কিন্তু আমার প্রচন্ড চিৎকার দিয়ে পালাতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু কোনো উপায় নাই। আলী বাবা গুহায় ঢুকে গ্যাছে। কামরুল একটা আখ কাটলো দুইটা কাটল, এমন করে আটটা আখ কাটলো।

আর লাগবে না আর লাগবে না, এবার বের হয়ে আসো।

সে বের হয়ে এলো।

কবর, বাঁশঝাড়, বটগাছ পার হয়ে যেতে হবে। আমার রক্ত শীতল হয়ে আসতেছে। পরী যদি আমাকে তুলে নিয়ে যায় তাহলে কালকে কে বাওড় দেখতে যাবে? বাওড় দেখতে হাওড়ের মতো তবে আয়তনে ছোট। বাওড়ে মাছ চাষ ভালো হয়। সাদা মাছ। প্রায় সারা বছর পানি থাকে সেখানে।

কে মনিরামপুর থেকে কেশবপুর ভ্যানে করে যাবে?

ভ্যান যশোরের রাস্তায় পাবলিক বাস। প্রাইভেট বাস বাইক কিংবা সাইকেলকে বলা চলে। শ্যামল সৌন্দর্য পাঠ করতে করতে এখানকার প্রত্যেকটি মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গমন ভ্রমন রমন করে থাকে। এখানকার রাস্তার পাশে বসে আড্ডা দিতে দিতে এক রাত শেষ করা যায়। গ্রামের কাছে ভরা সৌন্দর্য প্রার্থনা প্রত্যেক মানুষের। গ্রাম সেই প্রার্থনা রক্ষাও করে থাকে। মনিরামপুর কেশবপুর গ্রামে না আসলে হয়তো গ্রামসৌন্দর্যসত্য কথাটি আমি বুঝতে পারতাম না। থ্যাঙ্কস মাই ডিয়ার বিউটি সিন ভিলেজ ....

বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

অ ......

কিছু অপ্রাপ্তিকে ভালো করে স্নান করিয়ে কবর দিতে হয় এবং মাঝে মাঝে সেই কবরের পাশে গিয়ে বলতে হয় আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কবুর

বিদায় হে বন্ধু

কথা বললে না বলে কষ্ট পেলাম না, কথা বলতে শিখোনি বলে কষ্ট পেলাম, চিরতম শত্রুর সাথেও কথা বলা শিখতে হয়, আমার মনে হচ্ছে পৃথিবীর অভিনয়টা তুমি শিখে ফেলবে তখন আজকের অনেক বিষয় তোমাকে কষ্ট দিবে, কথা শুনে শুনে যারা শিখে তাদের চোখ থাকে কিন্তু হৃদয় থাকে না, কাউকে অনুধাবন করতে হলে হৃদয়ের প্রয়োজন হয়। হৃদয়বাদী তোমার পক্ষে কোনোদিন হয়তো হওয়া সম্ভব হবে না, তাই তোমার কষ্ট বরাবরই চোখের জল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে-- মনের গহীন বন স্পর্শ করবে না। মনের গহীনে কষ্ট আলো ফেলে যার তারা মানুষের কাজে লাগে, সময়ের কাজে লাগে।

বিদায় বন্ধু, আর কোনোদিন কথা হবে না, যেন দেখা না হয় 

আমি মানে তুমি

তোমার আমার মাঝে যে বেহেস্ত রেখেছো তাকে আমি ঘৃনা করি, আমার মাঝে ডুব দিয়ে দেখি আমি এক উন্নত তুমি 

জীবন অনেক দুর্ঘটনার পর....

সুপ্রিয় কাঁপছে। তার বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল বেশি কাঁপছে। পা থেকে কোমড় পর্যন্ত কাঁপছে। শরীরও কাঁপছে তবে হালকা।

আমি ত অবাক। ক্লেস অব ক্লেন খেলায় যে সারাদিন মত্ত থাকে, যুদ্ধ নিয়ে যার কারবার মোবাইলে দিনরাত তার কপালে কেন চিকন ঘাম থাকবে....

স্পট থেকে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে সে, আমাকে বলছে আমিও যেন তার কাছে চলে যাই, আমি ছেলেটার জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি, ছেলেটির হাত দিয়ে গড়গড় করে রক্ত পড়ছে ....

বারাকপুরের চিড়িয়া মোড় থেকে আমরা অটোতে উঠি। যাবো ধুবি ঘাট। ধুবি ঘাট থেকে হুগলি নদী পার হয়ে শ্রীরামপুর। ধোপা থেকে ধুবি শব্দের জন্ম।

অটো ড্রাইভারকে দেখামাত্র আমার গ্রামের ছেলে মিজানের কথা মনে হয়ে গেল। মিজান সিএনজি চালক। মিজান সিএনজি চালালে মনে হতো বাতাস যেন ঝগড়া শুরু করল। একদিন মিজানকে বলেছিলাম "ভাইরে, মাথা ঠান্ডা করে গাড়ি চালাবে, গাড়ি চালানো সবটাই মনোযোগ আর আর মাথা ঠান্ডা রাখার ব্যাপার, প্রতিযোগী মনোভাব বাদ দিবে"।

মিজান আমার কথা কানে নিয়েছিল কিনা জানি কিন্তু আমার কানে আসে তার মৃত্যুর সংবাদ! মিজান সিএনজি দুর্ঘটনায় মারা যায়!

তাই মিজানের মতো দেখতে অটো চালককে বললাম "আস্তে চালাবে, কোনো প্রকার তাড়াহুড়ো নেই, আমি কিন্তু তোমার পাশে বসা"।

প্রথম প্রথম আস্তেই চালালো। তারপর আমার মনোযোগ চলে গেল দৃশ্যের দিকে। অটো ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ঢুকে গেল। হঠাৎ একটি ছেলের উপর তুলে দিল! যেন কিছু দেখলাম যেন কিছু দেখলাম না! ছেলেটি ছিটকে গিয়ে দূরে পড়ে গেল!

আমার পাশে বসা সুপ্রিয়। আমাদের পেছনে একজন মহিলা এবং তার মেয়ে এবং একজন পুরুষ। মহিলা ও তার মেয়ে কপালে ঠেস খেল, পুরুষটা হাতে হালকা আঘাত পেল। আসলে কী জানেন ত হঠাৎ আঘাতে ব্যথার পরিমান টের পাওয়া যায় না ....

সুপ্রিয় ( ক্লেস অব ক্লেনের তার গ্রুপের গুরুত্বপূর্ন একজন) শুধু কাঁপতেছে এবং অনেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে।

ছেলেটির বন্ধুরা আসলো। অবাক হলাম আবার। কারন অটো চালকের উপর তারা হাত তুলেনি। দোষ ত অটো চালকের আছেই। কারন গাড়ি ড্রাইভ মানে গতিতে মনোযোগ। আমি নিশ্চিত তার মনোযোগ গতিতে ছিল না। কোনো প্রকার জরিমানাও করা হয়নি। একজন আর্মি আসলেন। তিনিও চুপচাপ দাঁড়ানো। সুপ্রিয় ত আর যাইহোক কাঁপছে  আর্মি ত কাঁপছেও না।

অটো চালক চলে গেল। তার ভাড়া দেয়া হলো না। ঘাটে এসে আমরা ডিউ খেলাম। ধীরে ধীরে সুপ্রিয় স্বাভাবিক হয়ে এলো কিন্তু তাকে আর বারাকপুরে রাখা গেল না, সে বাড়ি চলে যাবেই যাবে, ক্লেস অব ক্লেনে বাংলাদেশী টাইগারদের বিপরীতে এ্যাটাক দিতে হবে।

আকাশ ডাকছে। জল পড়বে হয়তো। মেঘলা দিনে আমার একলা থাকতে খুব ভালো লাগে। যদিও স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন " They alone live who live for others ...."

বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

কোথায় আছে আমার পাগল জানি না

শান্তিনিকেতন আসলে একটা পাগলকে খুঁজে বেড়াই রোজ যে গর্ত খুঁড়ে নিজের জন্য, অনেক স্বপ্নের ভীড়ে যার হলুদিয়া মন।

শান্তিনিকেতনে আসলে একটা পাগলকে খুঁজতে থাকি রোজ যে গল্প করতে করতে খাবারের কথা ভুলে যায়, যে গান গাইতে গাইতে ভুলে যায় বানানো সমাজের আদব কায়দা, যে রাতের পর রাত অন্ধকারের ভেতর হেঁটে বেড়ায়।

একটা পাগলকে খুঁজি যার গলায় মানুষের মালা, যার মুখে প্রেমের কালাম, যার চোখ থেকে রোদ কান্না একসঙ্গে নেমে আসে, যে হাসতে জানে, হাসাতে জানে, যার কাছে জীবন মানে মানুষ।

বীজগনিত, পাটিগনিত, ত্রিকোনমিতির হিসাব জানবে না সে, বোকা ট্রেনের মতো সে কেবল জীবন নিয়ে চলবে চলবে, ভেদিয়া গ্রামের মতো চুপচাপ সবুজ বিলাবে, অজয়ের ব্রিজে বিকাল বেলা বাতাস খেতে আসবে। সূর্য নিভে গেলে আদিম ঘরে রাখবে সে কিছু স্বপ্নের নিশান, নিশান বাতাসে উড়বে ঘুরবে বলবে কল্যানের জয়গান।

একটা পাগলকে খুঁজে বেড়াই যে শিশুর চোখে দেখে নিরাপদ ইতিহাস, শিশুর চোখে বুনে দেয় আগামীর জল্পনা কল্পনা।

শান্তিনিকেতন আসলে একটা পাগলকে খুঁজে মরি যে বলবে "দেবার ব্যথা বাজে আমার বুকের তলে, নেবার মানুষ জানি নে তো কোথায় চলে-- "।

পাগলের দেখা পাই নাকো পাই নাকো, তবুও পাগলের লাগি আসি বারবার, একবার তার দেখা পেয়ে যাবো, পেয়ে যাব ঠিকই একবার তার দেখা যার মনভর্তি অফিস নেই এমফিল পিএইচডি নেই, নেই ত বিজ্ঞাপনে উঠবার ফেলুদা তাড়া।

মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

চাঁদ দেখবো বলে

ভাষা কোনো এঁদো পাতকুয়ো নয়, বরং প্রবহমান স্রোত যা চলতে চলতে খেয়ালমত দিক পরিবর্তন করে, তাকে সময় দিয়ে বেঁধে রাখা মুশকিল। বিদ্যাসাগর যে বাংলা লিখে গেছিলেন তাঁর গদ্যে, যা প্রধানত সংস্কৃত-নির্ভর, আজকালকার ছেলে-ছোকরারা, যারা বাংলা সাহিত্য সম্বন্ধে তত উৎসাহী নয় অথচ বাংলাভাষীই, তারা তার কতখানি বুঝবে? শ্রীকৃষ্ণকীর্তন যখন লেখা হয়েছিল, তখনও তো এ দেশে পর্তুগীজরাই আসেনি, আলু-টমেটো-আনারসের স্বাদ বাঙালি তখনো পায়নি, চা তো দূরস্থান। আসেনি ফরাসী, ওলন্দাজ, দিনেমার, ইংরেজরাও তাদের নিজেদের ভাষার শব্দের ঝুলি নিয়ে। বাংলা শব্দভান্ডার তখন নিজস্ব শব্দ ছাড়া সংস্কৃত ও প্রাকৃত শব্দ দিয়েই ভর্তি। মুসলমান অনুপ্রবেশের সাথে সাথে আরবি-ফারসি মিশেছে বাংলা শব্দভান্ডারে। তার পরে যত ইওরোপিয় ‘বিদেশি’ শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, ততই বাংলা পুষ্ট হয়েছে। বাঙালি যতই পরিচিত হয়েছে সমগ্র বিশ্বের সাথে, ততই তাদের কথা বলার, আচার-ব্যবহারের, পোশাক-পরিচ্ছদের পরিবর্তন হয়েছে, বদলে গেছে ভাষাও।

ভাষার ভৌগোলিক সীমারেখা টানাও অসম্ভব। মেদিনীপুর জেলার দাঁতন যদি হয় পশ্চিমবঙ্গ-উড়িষ্যা সীমার পশ্চিমবঙ্গের দিকে শেষ রেলস্টেশন আর জলেশ্বর উড়িষ্যার দিকে প্রথম, তার মানে কি দাঁতনের লোকের ভাষা বাংলা আর জলেশ্বরের ওড়িয়া, আর তারা আপেল আর কমলার মত পুরোপুরি আলাদা? নো ওয়ে! দাঁতনের মানুষ বরং চট্টগ্রামের বা শ্রীহট্টের বাংলাকে হিব্রু বলে ভুল করলে তাদের বিশেষ দোষ দেওয়া যাবে না।

যদি চট্টগ্রামের ভাষা আর পুরুলিয়ার ভাষা দুটোকেই আমরা বাংলা বলে মানি ও স্বীকার করি, তবে চর্যাপদের বা তারও আগে বঙ্গভূমির লোকেরা যে ভাষায় কথা বলত, তাকে বাংলা বলে মানতে কী অসুবিধা?

লিপিও তাই। মনে রাখতে হবে, লিপি শিল্পীর সৃষ্টি। যতক্ষণ না মুদ্রণযন্ত্রে তা ছাপা হচ্ছে, কোনো দুজন ব্যক্তি তা হুবহু একই রকমভাবে লিখতে – অর্থাৎ আঁকতে – পারেন না। তারা দেখতে একই রকম হয় হয়ত, কিন্তু একই হয় না। আমরা এখন যে লিপি লিখতে বা পড়তে অভ্যস্ত, তাও তো হুবহু একই নয়, যদি তা ছাপা হয় বিভিন্ন ফন্টে। সিয়াম রূপালি আর বৃন্দা বা একুশে সিরিজের ফন্টগুলোর মধ্যে পার্থক্য নেই? তাও তো এগুলোর একটা বর্ণ হুবহু একই ছাপা হয়, আমরা যখন লিখি, আমাদের প্রতিটি বর্ণই একটু আধটু আলাদা হয়। সময়ের সঙ্গে এর পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। বাংলা ছাপার ইতিহাস তো মাত্রই দুশো বছরের। মুদ্রাকর চার্লন্স উইলকিন্স বঙ্গসন্তান পঞ্চানন কর্মকারকে দিয়ে কাঠের ও ধাতুর ‘টাইপ’ তৈরি করলেন, প্রতিটি বর্ণের জন্যে চার আনা মজুরি দিয়ে। উইলিয়ম কেরি শ্রীরামপুরে প্রেস বসালেন ঊনবিংশ শতাব্দীর একেবারে গোড়ায়, প্রধানত যাবতীয় ভারতীয় ভাষায় বাইবেল ছাপানোর জন্যে। সেখানে বাইবেলের সঙ্গে সঙ্গে ছাপানো হ’ল রামরাম বসুর লিপিমালা, প্রতাপাদিত্য চরিত, দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্রের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের জীবনী ক্ষিতীশবংশাবলিচরিতম্‌। সেই সব করার সময় যে লিপি ব্যবহার করা হ’ল, ধরে নেওয়া অন্যায্য নয় যে সেগুলো পঞ্চানন কর্মকারের নিজের হাতের লেখার মতই বা তিনি যেমন বাংলা লিপি দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন, সেই লিপিই। তখন যুক্তাক্ষর লেখার সমস্যা ছিল, র-ফলা, রেফ, ঋ-কার ইত্যাদিরও। যে রকম লেখা হয়েছিল, এখন তার থেকে অনেক আলাদাভাবে লেখা হয়। সে যুগের আগে যারা ভূর্জপত্র-টত্রে লিখতেন, তারা কীভাবে লিখতেন, তারাই জানেন। এখনও অনেকে রঞ্জন-এর ঞ্জ আর বিজ্ঞান-এর জ্ঞ-এর পার্থক্য করতে পারে না নিজে লেখার সময়, স-এর নিচে ত বসালে (অর্থাৎ স্ত লেখার সময়) যে স-এর চেহারা পুরো পালটে যায়, তা কজন নজর করে খেয়াল করে?

উত্তর ভারতের সমস্ত ভাষাই লেখা হয় নাগরী হরফে, যা নাকি ব্রাহ্মী থেকে খরোষ্ঠী হয়ে উদ্ভূত। দেবনাগরী, বাংলা, হিন্দী, পঞ্জাবী, মরাঠী, অসমিয়া – সবই তার বিভিন্ন রূপ। সুদূর তিব্বতের কিছু লিপির সঙ্গে আমাদের বাংলার লিপির মিল আছে।

 সারা পৃথিবীতে এখন বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা পঁচিশ কোটির বেশি। অথচ এই সেদিন বঙ্কিম লিখে গেছিলেন – সপ্তকোটিকণ্ঠকলকলনিনাদকরালে; রবিও লিখেছিলেন – সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী। মানে তখন বঙ্গভূমে সাত কোটির কাছাকাছি মানুষ। ছিয়াত্তরের মন্বন্তর হয়েছিল ১৭৭০ সালে, তাতে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা গেছিল, তিন কোটি থেকে লোক হয়ে গেছিল দুই কোটি। এই সংখ্যাগুলো যদি পেছন দিকে নিয়ে যাওয়া যায়, দেখা যাবে শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের সময় এই নদীজপমালাধৃতপ্রান্তর-অধ্যুষিত বিস্তৃত বঙ্গভূমে মানুষ ছিল মাত্রই কয়েক লক্ষ। তাদের মধ্যে খুব যোগাযোগ থাকা খুব স্বাভাবিক নয়, কাজেই ভাষার ও লিপির সাম্য না থাকাই স্বাভাবিক।

বাংলা ভাষা ও তার লিপির ইতিহাস নিয়ে বক্তৃতা করতে গেলে এই সামান্য কথাগুলো মাথায় রাখতেই হবে।
*
*
*
(লেখক-- অমিতাভ প্রামানিক!)

তোমারে চিনি

যে নদী থেকে আজকের আমি
সেই নদীতট আমার ফসলের ভূমি
সেখানে ডুব দিয়ে আমি আনন্দ খুঁজি
সেই নদীর জল খেয়ে বেঁচে থাকি
একই নদী আবার আমার যৌবনের তুমি
আমি আল্লা খোদা চিনি না
ওগো নারী তোমায় চিনি

সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সন্ধ্যা মাঝি সাঁওতাল বালিকা

মানুষের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার মানুষ। পৃথিবীর সব সৌন্দর্য প্রায় এক। কিন্তু মানুষের সৌন্দর্য বৈচিত্র্যমিত্র।

মানুষের হিংসা ভালো লাগে, মানুষের রাগ ভালো লাগে, মানুষের অভিমান ভালো লাগে, মানুষের নির্লিপ্ততা ভালো লাগে। আকাশ যেকারনে আকাশ সেই কারনে আকাশকে ভালো লাগে। মানুষ যে কারনে মানুষ সেই কারন ছাড়াও মানুষকে ভালো লাগে।

সৌর জগৎ কসমিক সময়ের কাছে একটি বালির চেয়েও ছোট। আর পৃথিবীর জায়গা তো সেখানে নেই বললেই চলে। মানুষ ত আরও নেই। তবুও মানুষ একটা পারমানবিক বোমার নাম, মানুষ একটা ঐতিহাসিক প্রেমের নাম।

কোপাই নদীর সাথে কুমিল্লার গোমতী নদীর বেশ মিল। গোমতী নদী কিন্তু আমাদের ছোট নদী না যে বাঁকে বাঁকে চলে।

সন্ধ্যা মাঝি সাঁওতাল বালিকা। দশম শ্রেনির ছাত্রী। তাকে দেখে আমার মাথিনের কথা মনে পড়ে। ধীরাজ বেটা কৃষ্ণের যোগ্য বংশধর হয়তো। এখানে মাথিনকূপ নেই, আছে কংকালীতলা। সন্ধ্যা মাঝি কংকালীতলা মাঠের রাখাল। মা তার আজ অসুস্থ, তাই সে স্কুলে যায়নি। চমৎকার সরল মন আর লাজুক হাসি দিয়ে সন্ধ্যা মাঝিকে ভগবান সজ্জিত করেছেন-- কোপাই নদীর মতো বাঁকে বাঁকে চলে।

কংকালীতলা থেকে লাভপুর। ফুল্লুধারার মতো সবুজ ধানক্ষেত। ধানক্ষেতে বাতাস নাচতে থাকে নাবোঢ়া কন্যার হাসির লাহান। রোদ এসে বাতাসের লগে কামলার ভূমিকায় কিছু কথা বলে যায়। ইনিয়ে বিনিয়ে বলা কথা মানুষের কানে যায় না। মানুষ মিষ্টির মতো কড়া মিষ্টি চায়, মেশানো মিষ্টি আর ভালো লাগে না তাদের। বাবু বাগদী তবুও বাউল গান করে, মানুষের কাছে মানুষ হয়ে পৌঁছে যেতে চায়। কিন্তু মানুষ ত মানুষের ভেতর শুধু মানুষ চায় না, পশুও চায়।

রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মানুষগাছ

বোকামন আমার ভুলে গেলে চলবে না মানুষগাছ অক্সিজেন দেয় না, কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) ছাড়ে

শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

জীবিত স্তন

দুটি মৃত সিগারেট
            একটি সামনে অন্যটি একটু পেছনে
দুটি মৃত দিয়াশলাই পাশাপাশি

একটি ডাবগাছ জীবিত স্তন নিয়ে ফনা তুলে আছে অন্ধকারে

যখন বিপ্লব নামে

যখন বৃষ্টির মতো বিপ্লব নামে তখন আমি চুপ থাকি। বিপ্লবের সাথে আমার দেখা হয়ে যায় রাস্তার মোড়ে চায়ের কাপে রেস্তোরাঁয়। বিপ্লব এক সামরিক ট্রেনিং চুপ করে বসে থাকার নাম, কেমন করে মানুষ হাঁটতে হাঁটতে চোখ ফিরিয়ে তাকায় এবং অন্ধকারে মিলিয়ে যায় তা নোটবুকে লিখে রাখার নাম বিপ্লব।

মানুষ মানুষকে ভুলে গেলে শান্তি আসবে, মানুষ মানুষকে পরাজিত করলে শান্তি আসবে, মানুষ মানুষকে হত্যা করলে শান্তি আসবে। অনেক ক্লান্তি এসে জমা হয় শার্টের বোতামে, বোতামফুল তখন সাইকেল চালাতে পারে না, হাঁটতে থাকে। হাঁটা একমাত্র অসুখ যার কোনো বৃষ্টিরোগ নেই।

অনেক নদী বুকে নিয়েও আমি রোদমানুষ হতে পারি প্রিয়তমা, ছোট হতে হতে তোমার পায়ের আঙুলের অনেক নিচ দিয়ে চলে যাবো তবুও বলব না ভালোবাসি। ভালোবাসা কোনো দেশ নয় যার স্বাধীনতার দরকার হয়, ভালোবাসা এক আকাশের নাম, আকাশের উপরে আকাশ ....

শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সূর্যের তেজ

একমাত্র তোমার কথা উঠলে আমি এখনো শিশুর মতো কাচুমাচু করি। বিশ্বাস করো, অনেক শিশুকে আমি যুবক বানাই, তারপর তাকে পৃথিবীর পথে ছেড়ে দিয়ে বলি ডানহাতে যেন থাকে মানুষের মুক্তি আর বাম হাতে সূর্যের তেজ।

দেখারা মারা যে গেল আর এলো না

তুমি ত তোমার মতো রয়ে গেলে
আমিও আমার মতো
অচেনা গলির সহজ কথাটি
জানল না কেউ জানল না কেউ
আমি ত আমার মতো রয়ে গেলাম
তুমিও তোমার মতো
চেনা পথের যুগল হাতটি
ধরল না কেউ ধরল না কেউ