বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

মালদ্বীপের সিনেমা

 আমার পাশে যে মেয়েটি বসে আছে তার নাম আযহা। তাকে জিজ্ঞেস করলাম আজহা মানে কী? বললো, সাইনিং সামথিং। আজহা সরকারি চাকরি করে— মালদ্বীপের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো এক গোপনীয় বিভাগে। অবাক হয়ে গেলাম মানুষের ভীড় দেখে— অলিম্পাস মালে শহরের প্রাচীনতম সিনেমা হল। ইদানিং সংস্কার করা হয়েছে— আগে পরিবেশ ততটা নান্দনিক ছিলো না। 


লাসভিয়াস ধিবেহী শব্দ যার অর্থ যদিও দেরি হয়ে গেছে— Though It's late. এই সিনেমা দেখতে গিয়ে জীবনে প্রথম ধিবেহী ভাষা টানা তিনঘণ্টা শুনলাম। প্রথমবারের মতো পরিচিত হলাম মোহাম্মদ নিয়াজ টেডির সাথে— সে সিনেমাটির পরিচালক ও লেখক। 


আহমেদ ইশা এবং ওয়াশিয়া মোহাম্মদ অসাধারণ অভিনয় করেছে। আহমেদ ইশা অভিনয় করেছে মোহাম্মদ ইকবাল নামে আর ওয়াশিয়া মোহাম্মদ অভিনয় করেছে ইউশরা নামে। মিউজিক করেছেন মোহাম্মদ ইকরাম।


এই সিনেমার বলতে গেলে তেমন কোনো গল্প নাই। গল্প থাকলেও গল্প ধরার ক্ষমতা আমার তেমন নাই— ধিবেহী ভাষা আমি বুঝি না কিচ্ছু। 


ইকবাল একটি কোম্পানিতে চাকরি করে ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টে। ইউশরা গানের লোক। একটি গানের অনুষ্ঠানে দুজনের দেখা হয়— তারপর পাথর গড়াতে গড়াতে প্রাসাদ নির্মিত হয়— তাদের বিয়েটা দেখানো হয়েছে পরিপূর্ণ ফ্ল্যাশব্যাক পদ্ধতি ব্যবহার করে। ইকবাল-ইউশরার একটি সন্তান— হামরা ইকবাল। হামরা ইকবাল হাসপাতালে ভর্তি— সিনেমার শুরু ঠিক সেখান থেকে।  


হামরা ইকবাল জন্মগ্রহণ করার পর ইউশরা বা ওয়াশিয়া মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে— কোনোভাবেই সে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ মেনে নিতে পারছিলো না— তারমধ্যে একধরনের আত্মহত্যাচারন মানসিকতা দেখা দেয়। এখানে একটি বিষয় পরিচালক খুব সুন্দর করে দেখালো— পুরুষ আসলেই মাতৃত্বের কষ্ট বুঝতে পারেনা। 


হামরা জন্মের পর নানাবিধ সোমাটিক বিশৃঙ্খলার কারনে ইউসরার শারীরিক সম্পর্কের প্রতি অনীহা জন্মে। কিন্তু ইকবালের শারীরিক চাহিদা আরও বেড়ে যায়— ফলে ফ্রয়েড জয় লাভ করে— ফলে রাতের গভীরে সে চলে যায় প্রতিনিয়ত সিডিউশ করা প্রতিবেশীনির কাছে এবং সে তাকে বিয়ে করে— ইউশরা ইকবালকে তালাক দেয় এবং আরেকজনকে বিয়ে করে।


ইউসার ফিরে পায় নতুন জামাই,ইকবাল খুজে পায় নবীন স্ত্রী— আর হামরা!? হামরা হারায় তার বাবা এবং মাকে। 


হলভর্তি দর্শক— মাত্র কয়েকজন পুরুষ— আজহারের কাছে এর কারন জানতে চাই— প্রথম কারন হিসাবে সে আমাকে জানায় নিয়াজ ভালো পরিচালক, তাছাড়া সিনেমাটি আমাদের জীবনাচারকে ভিন্নভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছে এবং ঘরের ভেতরের দ্বন্দ্বকে সামনে এনেছে আধুনিক রসরঙ্গ অঙ্গে। 


লাসভিয়াস সিনেমাতে ইকরাম সুন্দর মিউজিকের কাজ করেছে— ভাষা কিচ্ছু না বুঝেও বলা যায়— এটাই মিউজের আন্তরিক বিশ্বজনীন চেহারা। 


অভিনয়ের অভিব্যক্তি একটি ভাষা। পর্দার কালার একটি ভাষা। দর্শকের ক্রিয়াশীল আচরণ একটি ভাষা। ক্যামেরার মুভমেন্ট একটি ভাষা। এতো এতো ভাষার মাঝে শব্দ না বুঝলেও সিনেমা অনুধাবন করা যায় সুন্দর উপায়ে। সিনেমাটিতে কিন্তু মিউজিক এবং সিনপ্যাটার্ন দারুণভাবে দেখানো হয়েছে। 

শেষে হামরা মারা যায়। এবং একেবারে শেষে হামরা তার বাবাকে কিছু ইমোশনাল কথা বলে,  একটি গান করে— নট লাইভ বাট রেকর্ড। গানটি যখন বাজে তখন আমার পাশে বসা মালদ্বীপের সরকারি চাকরিজীবী আযহা কাদছে— আস্তে আস্তে চশমার ফাক দিয়ে চোখের জল মুছে নিচ্ছে। 


লাসভিয়াস সিনেমা দেখতে দেখতে আযহা কেবল চোখের জল ফেলছে এমন না— এমন দৃশ্যও আছে যা হিজাবি আযহাকে তার বোরখা ও পর্দার আড়ালে একটু হলেও ঘামতে সহযোগিতা করেছে— অবশ্যই হালাল দৃশ্য— কারন ডিরেক্টর মোহাম্মদ নিয়াজ টেড্রিকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে দেশটি মালদ্বীপ এবং মালদ্বীপে নিয়ম করে পাচবার আযান হয়। নিয়াজ নিজেও লাসভিয়াসে কয়েকবার আযান ও সালাতের দৃশ্য চরিত্রায়ন ও ক্যামেরায়নের মাধ্যমে দর্শকের সামনে স্পষ্ট করে তুলেছে। 


আযহার চোখের জলের কথা ভাবতে ভাবতে যখন সিনেমার হল থেকে বের হচ্ছি সিনেমা পরিচালক পর্ষদের একজন জানতে চায়লো কেমন লাগলো আমার লাসভিয়াস। আমি বললাম— 

First time I have made my realization on separation resistant and language attachment.

মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪

প্রিয়তা

 চোখের ভাষায় দেয়া যায় উত্তর 

কেমনে দেয়া যায় উত্তর 

শেখালে তুমি 

হাসিতেও শত্রুর মৃত্যু লেখা থাকে 

হেসেও মেরে ফেলা যায় কেমনে 

শেখালে তুমি 

মনের আসনে তোমারে রেখে 

চোখের মনে দেখি তুমি 

ফুল নদী না হয়ে 

হলে প্রভুর প্রিয় জ্যোতি

হে প্রিয় জ্যোতি দুনিয়ার 

সবকিছু চায় তারা তোমার কাছে 

কেবল তোমাকে ছাড়া 

মানুষ তাই মনের অসুখে 

রমরমা সুখে আজ তারা দিশেহারা

বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪

দরবেশের প্রিয় খরগোশ

 শত বছর আগে। তখন আমি খরগোশ। লতাপাতা খেয়ে দিনযাপন করি। শুভ্র সরল আকাশ রেখার মতো মন আমার।


দরবেশ গাছের নিচে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে— এক দরবেশ। প্রায় তার মাথার কাছাকাছি মেঘ চলে আসে— নিবিড়ভাবে তাকে শীতল ছায়া দেয়— আমিও সেই ছায়ায় দারুণ শীতল আরাম অনুভব করি।


দরবেশের বসে থাকা দেখলে বেশ ভালো লাগে আমার। চোখ বন্ধ করে বসে থাকা দরবেশের সামনে চোখ খুলে বসে থাকি আমি। কখনো একদিন কখনো দুইদিন কখনো অনেকদিন পর দরবেশ চোখ মেলে— চোখ মেলে সে আমাকেই দেখে— আমাকে কুলে নিয়ে আদর করে— মাথায় হাত বুলায় শিশিরের ফোটার মতো। 


— আমার কাছে কী চাও তুমি হে খরগোশ? 

— হে দরবেশ, আমি মানুষ হতে চাই! 

— তাহলে জঙ্গল পাড়ি দিয়ে লোকালয়ে যেতে হবে তোমাকে। লোকালয়ে যেতে না যেতে তুমি মানুষ হয়ে যাবে! মানুষ হয়ে আমার কাছে আর ফিরতে পারবে না— ফিরলেও আমাকে দেখতে পাবে না— মানুষ আমাকে দেখতে পায়না! 


লোকালয়ের দিকে হাটতে থাকি।  বাঘের আস্তানা। হাতির আস্তানা। সিংহের আস্তানা। সব আস্তানা পাড়ি দিয়ে ফেলছি। এখন কেবল একটি আস্তানা পাড়ি দেয়ার বাকি। সব আস্তানার সবাই আমার সাথে যথেষ্ট মার্জিত সুন্দর সমাহিত আচরন করেছে, সাধ্যমতো আপ্যায়ন করেছে, কেউ কেউ মন খোলা প্রেমিকার মতো সাধ্যতীত আপ্যায়নও করেছে। 


সাপের আস্তানার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। গেইটে আমাকে থামতে বলা হলো। থামলাম।

— আমাদের ল্যান্ড অফিসারের অনুমতি দিতে হবে সামনে যেতে চায়লে। 

— অবশ্যই, কেন নয়! 

— আপনাদের ল্যান্ড অফিসারের নাম কী? 

— শিহন দাওলানা।


শিহন দাওলানা দেখতে দারুণ ইনোসেন্ট— ব্যবহার ভয়ঙ্কর রকমের বাজে— পারিবারিক শিক্ষার অভাব রয়েছে মে বি! 


চুপচাপ সব রকমের বাজে ব্যবহার সহ্য করে— কোনো প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস না পেয়ে লোকালয়ের দিকে হাটতে থাকি— হাটছি আর বিষধর সাপের ছোবল খাচ্ছি! উড়ন্ত বিষধর সাপ। ছোবলে ছোবলে নিজে আমি বিষাক্ত হয়ে গেছি। অবশেষে লোকালয়ে আমার পা পড়ে— এখন আমি মানুষ! 


অনেকদিন পর। অনেকদিন বলতে প্রায় একশো বিশ বছর পর! দেখি, ন্যাংটা ছেলেপেলে বড় এক সাপ ধরে নিয়ে যাচ্ছে— রান্না করে খাবে। সাপটি আমাকে দেখে বাচাও বাচাও বলে চিৎকার করতে থাকে— তার চিৎকারকন্ঠ আমার কানের কাছে পরিচিত  মনে হয়— কাছে গিয়ে দেখি শিহন দাওলানা! 


তাকে ছেলেপেলের হাত থেকে রক্ষা করি— বাড়িতে আনি এবং এক কুবে তাকে দুইভাগ করি!  ভালো করে ধৌত করে প্রয়োজনীয় প্রিয় মশলাপাতি দিয়ে রান্না করি— দারুণ সুগন্ধি ছড়াচ্ছে। রান্না শেষে বান্না শেষে তাকে আস্তে আস্তে খেতে থাকি— খুব আরাম করে জিব্বার সমস্ত স্বাদ দিয়ে শিহন দাওলানাকে খেলাম।


খাওয়া শেষে কোনো প্রকার কাজপাতি না করে সোজা বিছানায়— আরামের ঘুম নেমে আসে চোখে নেমে আসে শরীরে নেমে আসে মনে। 


প্রতিদিনের মতো ঘুম থেকে উঠি। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি আর প্রতিদিনের জায়গায় নাই— আমি এখন দরবেশের সামনে এবং আমি আর মানুষ নাই— আমি এখন দরবেশের প্রিয় খরগোশ!

শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪

পাগল কবি

 পাগলকে চিনতে গেলে 

পাগল সাজতে হয় 

শুকনো প্রেমের অভিনেত্রী 

ডাঙাতে তার ক্ষয় 

পাগল থাকে জলে স্থলে 

চেনা বড় দায়

পাগলের পরীক্ষায় পড়ে 

অভিনেত্রীর প্রেম মারা যায় 

শুকনো গাঙে ফেললে জাল 

বুঝবে না প্রিয় মাছের তাল 

মাছের তালে জলের কুলে— পাগল কবি চলে

প্রেম হারালেও প্রেমিক পাবে— সাবধান 

প্রেমে কেবল পাগল কবি একমাত্র মিলে

অন্ধকারের প্রেমে পড়ে 

সূর্য হারায় আলো

আলোর প্রেমে পড়ে 

রাত হারায় কালো 

সব হারানোর মন নিয়ে থেকে পাগল পাশে

শরীরে জীবন লাগাও নাথেকে দুনিয়া লাশে

বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪

মনের শাসন

 পড়ো বন্ধু আমার 

পড়ো

আগে নিজেকে পড়ো

তারপর মন্দির মসজিদ ধরো


পড়েছো তো তুমি হাজার কিতাব 

হয়েছো মাশাল্লা জ্ঞানী

নফসের গোলাম তবু তো তুমি 

প্রতিদিন হচ্ছো খুনি


যাও 

যাও যাও 

যেখানে খুশি সেখানে যাও 

খুশির খেয়ালে বাশি বাজাও 

বাশির ভেতরে শাস্ত্র কিতাব যতো পারো পড়ো

ভেঙে গেলে চোখের দেয়াল 

দেখবে তুমি

বুঝবে তখন 

মুগ্ধতা নয় 

মগ্ন হৃদয় শান্তির বাতাস সবার উপরে বড়ো


পড়ো বন্ধু 

পড়ো

চোখের শাসন পারলে কমাও 

মনরে শাষন করো


মনের প্রেম নদী নামে সাগরে গিয়ে মিশে 

মন মিশে মনের সাথে দুই হবে আবার কিসে

অঙ্ক শেখার আগে বোকা বাস করে ভাগবিষে


পড়ো

নিজেকে পড়ে 

নফস যাবে তোমার মরে 

প্রেমের পথ তখন ধরে

সিজদায় গিয়ে অজ্ঞান হও

জীবিত নও

সুতরাং তুমি 

প্রশ্ন নয়

প্রেমের শর্ত 

মরার আগে প্রেমিক মৃত 

মরতে মরতে জীবন সৃজিলে

গুপ্ত হয়ে ব্যক্ত হলে

নিজের ভেতর নিজেরে নিখিলে

কষ্টে ধৈর্যের খেলা শিখিলে

কান পারে না নিতে চিলে

চিলের আগে চিল হয়ে

উড়ো মনের বিলে

নিজের সাথে নিজের হিসাব 

মিলাও তিলে তিলে 


আশেক চলে নিরব মিছিলে

মাশুক প্রকট মনের দেয়ালে 

আশেক সদা নিজের খেয়ালে 

নিজের খেয়ালে নিজেকে পড়ে 

জেনে নাও তুমি 

কেমন করে চান্দে হাসে 

চান্দের দেশের জোছনা নড়ে

কেমন করে জোছনা সুন্দর 

পৃথিবীতে এসে আবার মরে 

মরার আগে প্রিয় আমার বাচো নিরব ঘরে

মহান শান্তি অসীম বায়ু অরহৎ ত্যাগের চরে

রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪

আমি রেজার দেশে

 পাতাজীবন ধীরে চলে গাছে গাছে 

চলছে আকাশ এমন করে যেমন করে সময় 

মৃত্যু এক প্রভুর নাম অলিকা প্রেমের তথাকথা 

আগুনে হাওয়া তিলুয়া নগর 

বালুর বাড়ি

পাহাড় খেয়ে ঝর্ণা নদী জলে জলে

কাঠের ঘর

ঝর্নাশরীর নিয়ম ভেঙে খনিজ আলো 

কালা রে কালা 

কার শরীরে বসাও তুমি আদিম পেরেক?

রেলের পথে বিধান হয়ে লোকোমাস্টার 

সাদা অন্ধকারে ডুবে গেছে চক ডাস্টার 

চক ডাস্টার চক ডাস্টার কোথায় যাচ্ছো তুমি? 

শরীর থেকে শরীর হচ্ছে লোভের হাঙর তিমি 

বীজের ঘরে পোকার দেশ 

কোথায় যাবে দেশা?

সবাই যাবে সবার পথে— সমস্যা নেই 

সুগন্ধি ফুল বানানো আমি রেজার পেশা

শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪

পূজার্ঘ

 ফিরে আসো দ্রুত 

ভুলে সব ক্ষত 

ফিরে আসো তুমি

মিলেমিশে গল্প হবে 

চাষ হবে আদিবাংলা ভূমি