বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪

দরবেশের প্রিয় খরগোশ

 শত বছর আগে। তখন আমি খরগোশ। লতাপাতা খেয়ে দিনযাপন করি। শুভ্র সরল আকাশ রেখার মতো মন আমার।


দরবেশ গাছের নিচে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে— এক দরবেশ। প্রায় তার মাথার কাছাকাছি মেঘ চলে আসে— নিবিড়ভাবে তাকে শীতল ছায়া দেয়— আমিও সেই ছায়ায় দারুণ শীতল আরাম অনুভব করি।


দরবেশের বসে থাকা দেখলে বেশ ভালো লাগে আমার। চোখ বন্ধ করে বসে থাকা দরবেশের সামনে চোখ খুলে বসে থাকি আমি। কখনো একদিন কখনো দুইদিন কখনো অনেকদিন পর দরবেশ চোখ মেলে— চোখ মেলে সে আমাকেই দেখে— আমাকে কুলে নিয়ে আদর করে— মাথায় হাত বুলায় শিশিরের ফোটার মতো। 


— আমার কাছে কী চাও তুমি হে খরগোশ? 

— হে দরবেশ, আমি মানুষ হতে চাই! 

— তাহলে জঙ্গল পাড়ি দিয়ে লোকালয়ে যেতে হবে তোমাকে। লোকালয়ে যেতে না যেতে তুমি মানুষ হয়ে যাবে! মানুষ হয়ে আমার কাছে আর ফিরতে পারবে না— ফিরলেও আমাকে দেখতে পাবে না— মানুষ আমাকে দেখতে পায়না! 


লোকালয়ের দিকে হাটতে থাকি।  বাঘের আস্তানা। হাতির আস্তানা। সিংহের আস্তানা। সব আস্তানা পাড়ি দিয়ে ফেলছি। এখন কেবল একটি আস্তানা পাড়ি দেয়ার বাকি। সব আস্তানার সবাই আমার সাথে যথেষ্ট মার্জিত সুন্দর সমাহিত আচরন করেছে, সাধ্যমতো আপ্যায়ন করেছে, কেউ কেউ মন খোলা প্রেমিকার মতো সাধ্যতীত আপ্যায়নও করেছে। 


সাপের আস্তানার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। গেইটে আমাকে থামতে বলা হলো। থামলাম।

— আমাদের ল্যান্ড অফিসারের অনুমতি দিতে হবে সামনে যেতে চায়লে। 

— অবশ্যই, কেন নয়! 

— আপনাদের ল্যান্ড অফিসারের নাম কী? 

— শিহন দাওলানা।


শিহন দাওলানা দেখতে দারুণ ইনোসেন্ট— ব্যবহার ভয়ঙ্কর রকমের বাজে— পারিবারিক শিক্ষার অভাব রয়েছে মে বি! 


চুপচাপ সব রকমের বাজে ব্যবহার সহ্য করে— কোনো প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস না পেয়ে লোকালয়ের দিকে হাটতে থাকি— হাটছি আর বিষধর সাপের ছোবল খাচ্ছি! উড়ন্ত বিষধর সাপ। ছোবলে ছোবলে নিজে আমি বিষাক্ত হয়ে গেছি। অবশেষে লোকালয়ে আমার পা পড়ে— এখন আমি মানুষ! 


অনেকদিন পর। অনেকদিন বলতে প্রায় একশো বিশ বছর পর! দেখি, ন্যাংটা ছেলেপেলে বড় এক সাপ ধরে নিয়ে যাচ্ছে— রান্না করে খাবে। সাপটি আমাকে দেখে বাচাও বাচাও বলে চিৎকার করতে থাকে— তার চিৎকারকন্ঠ আমার কানের কাছে পরিচিত  মনে হয়— কাছে গিয়ে দেখি শিহন দাওলানা! 


তাকে ছেলেপেলের হাত থেকে রক্ষা করি— বাড়িতে আনি এবং এক কুবে তাকে দুইভাগ করি!  ভালো করে ধৌত করে প্রয়োজনীয় প্রিয় মশলাপাতি দিয়ে রান্না করি— দারুণ সুগন্ধি ছড়াচ্ছে। রান্না শেষে বান্না শেষে তাকে আস্তে আস্তে খেতে থাকি— খুব আরাম করে জিব্বার সমস্ত স্বাদ দিয়ে শিহন দাওলানাকে খেলাম।


খাওয়া শেষে কোনো প্রকার কাজপাতি না করে সোজা বিছানায়— আরামের ঘুম নেমে আসে চোখে নেমে আসে শরীরে নেমে আসে মনে। 


প্রতিদিনের মতো ঘুম থেকে উঠি। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি আর প্রতিদিনের জায়গায় নাই— আমি এখন দরবেশের সামনে এবং আমি আর মানুষ নাই— আমি এখন দরবেশের প্রিয় খরগোশ!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন