বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১

বদল হচ্ছে পৃথিবীর হাওয়া— আমরা সিলেটে

 ভ্রমন বা টুর বলতে অনেকে যা অনুধাবন করে বা মিন করে আমাদের এই টুরটা ঠিক তেমন না। আমরা যাচ্ছি সিলেটে। উদ্দেশ্য। প্রধান উদ্দেশ্য একটাই— ছাতক হাফ ম্যারাথনে অংশগ্রহন করা। হাফ ম্যারাথন বলে আসলে কিছু নেই। হাফ ম্যারাথন শব্দটা বানানো। ম্যারাথন ইজ ম্যারাথন— ৪২ কিলোমিটার। আমি দৌড়াবো ২১ কিলোমিটার, রাই দৌড়াবে দশ কিলোমিটার। রাইয়ের সাথে যাচ্ছে তার পরিবার সমগ্র। রাইয়ের পরিবার সমগ্রের সাথে বলতে গেলে আমি গেস্ট। ঠিক গেস্ট না— গেস্ট টাইপের। 


ভৈরব থেকে ট্রেনে উঠি। পুরো কেবিন আমাদের দখলে। ভালো একটা ঘুম দিই। ট্রেনের কেবিনে ঘুমানো আর মেঘে ঘুমানোর মধ্যে অমিল অনেক থাকলেও মিল তো আছেই। ঘুম থেকে উঠে ট্রেনের খাবারের কেবিনে গিয়ে ছয়টি কাকলেট খাই। ট্রেনের সবজি কাকলেট আমার খুবই প্রিয়— ঝাল ঝাল কোল কোল। 


সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে যখন আমরা পা রাখি তখন দুপুর শুরু হয়ে গেছে। এই স্টেশনটি চোখে থেকে যাওয়ার মতো না— খুবই সাদাসিধা একটা স্টেশন অথচ এটি নাকি দেশের পঞ্চম বৃহৎ রেলওয়ে স্টেশন।


আসামের চা শ্রমিকদের আন্দোলন-দাবির কার্যকারনে ১৮৯১ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে বাংলার পূর্ব দিকে রেলপথ নির্মানের কাজ শুরু করে— তারই ধারাবাহিকতায় এই অঞ্চলে রেল যোগাযোগ ছড়িয়ে পড়ে। বৃটিশ সরকার আসামের সিলেট জেলায় ১৯১২–১৯১৫ সালে কুলাউড়া হতে সিলেট পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন করে এবং সিলেট রেলওয়ে স্টেশন চালু হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক বাজার পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারন করা হয়। কেনো বৃটিশরা রেলপথ স্থাপন করলো এই বাংলায় এ নিয়ে গালাগালি চলতে থাকুক— বাঙালি এক অদ্ভুত ঘাড়বেহা জাতি— নিজে করতে তো পারবেই না অন্যের করাতে সহ্যও হবে না। 


এখন আমাদের কাফেলা যাবে গোবিন্দগঞ্জ। গোবিন্দগঞ্জ থেকে শুক্রবার ৫:৪০ মিনিটে আমাদের রান শুরু হবে। ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে প্রচুর পান খাওয়ার লোক থাকলেও কোনো হোটেল নাই। কোথায় থাকবো এই নিয়ে বিশাল টেনশনে আছি। আয়োজক কমিটি সিলেটের হোটেলে থাকার পরামর্শ দিয়েছে— সকালে বাসে করে তারা নিয়ে আসবে। খুবই ভালো পরামর্শ। অনেক ভালো পরামর্শ আবার আমার কানে যেতে চায় না। আমি গোবিন্দগঞ্জই থাকবো— প্রয়োজনে রাতের ভেতরে হোটেল বসানো হবে কিন্তু গোবিন্দগঞ্জই থাকবো। 


অবশেষে গোবিন্দগঞ্জই থাকলাম। বিশাল বড় প্রাসাদের দুটি রুম দেয়া হলো আমাদের। একটি রুমে আমি আর রাই ঘুমালাম। সকাল সকাল ঘুমিয়ে যাই আমরা। পাচটায় ঘুম থেকে উঠে যাই আমরা। আমরা বলতে আমি আর রাই। রাইয়ের পরিবার সমগ্র তখনো ঘুমাচ্ছে। আরও আগে ঘুম থেকে উঠার দরকার ছিল। হন্তদন্ত হয়ে রাননাম্বার ও গেঞ্জি কালেক্ট করি। আমাদের গেঞ্জি রাখার জায়গা নাই— রাইয়ের পরিবার সমগ্র তখনো ঘুমাচ্ছে। পঙ্কজ দাদার কাছে আমাদের পরিহিত গেঞ্জিগুলা দিলাম।  রাইকে বললাম,— ''নো টেনশন, তারা ঘুমাচ্ছে ঘুমাক, যুদ্ধটা আমাদের, সো বি রেডি এন্ড ফাইট।'' রাই আমার কথা শুনে কচি মুখে আশাহীন মনে যেনো প্রান ফিরে পেলো।


রান শুরু হয়ে গ্যাছে। পৃথিবীতে চমৎকার হাওয়া। চারপাশে কেষ্টবিষ্টু কালার। সবার চোখে নিজেকে জয় করার সুন্দর ষড়যন্ত্র। আট বছরের রাই দৌড়াচ্ছে। আমিও  দৌড়াচ্ছি। যে রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছি এই রাস্তা দিয়ে সুনামগঞ্জ সদরে যাওয়া যায়। এখনো বড় বড় যান চলাচল শুরু হয়নি। সোয়ান ফোমের মালিক খবির দা। দাদার বয়স ৬৯। এখনো তিনি বেশ ভালো রানে আছেন। দৌড়াচ্ছি এবং দৌড়াচ্ছি— এমন সময় কানে আসে ' রেজা রেজা' শব্দ। পেছনে ফেরে তাকাই— দেখি আরেফিন ভাই। 


আরেফিন ভাই আমার হলের ও বাংলা বিভাগের বড় ভাই। তিনি ছিলেন 'বাংলা মৈত্রী'র সভাপতি আমি ছিলাম সেক্রেটারি। 'বাংলা মৈত্রী' আমাদের হলের বাংলা বিভাগের ছাত্রদের একটি সক্রিয় সংগঠন। আরেফিন ভাই কিন্তু আমার সাথে রানের পার্টিসিপ্যান্ট না— তিনি যারা রানার তাদের আইনি নিরাপত্তা দিচ্ছেন— মানে আরেফিন ভাই ছাতক থানার সাব ইন্সপেক্টর। আরেফিন ভাইকে দেখে অনেক অতীত মনে পড়ে গেলো— বাংলা মৈত্রীর ইতিহাসে আমি আর আরেফিন ভাই ছিলাম সবচেয়ে অভিজাত অলস সভাপতি সেক্রেটারি। আহা! আহারে!! সেই সোনালি দিনগুলোতে কী চমৎকার কেষ্টবিষ্টু হৃদয়মাখানো সফেদ মেঘ ☁ ছিলাম আমরা! সব মেঘই বৃষ্টি হয়ে যায়!  আমরাও বৃষ্টি হয়ে যার যার জায়গায় পতিত হলাম রোপিত হলাম দায়িত্বের বাহানায়। ভাইয়ের সাথে অল্পস্বল্প কথা বলে আবার শুরু করলাম 'দৌড়'। ২১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। 


আবার শুরু হলো দৌড়ে সামনে যাওয়া। মহাসড়ক ছেড়ে গ্রামের রাস্তায় নেমে পড়ি। গ্রামিন দৃশ্য দারুন উপভোগ্য। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছেলে যুবক বৃদ্ধ যুবতী হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছে। শরীরে ক্লান্তি ঘামের ক্লান্তি নিমেষেই চলে যাচ্ছে শুন্য থেকে শুন্যের ভেতর তাদের হাততালি আর আনন্দমাখা ডিগবাজিতে। 


খুরমা দক্ষিণ ইউনিয়ন বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন— সেই গ্রামে পা রাখতে দেখা পাই নানু মিয়া নামে এক রসিক লোকের। নানু মিয়া আমার সাথে লুঙ্গি পরে দৌড়াচ্ছে আর নানা গল্প করছে। আমি তাকে প্রথম দর্শনেই বলেছি যেনো সে মেম্বার হয় এলাকার। কথা বলতে বলতে জানতে পারি সে এলাকাতে প্রতিবছর তার সাধ্যমতো দান করে এবং সে এলাকার মধ্যে ভালো মানের জনপ্রিয় লোক। ডাক্তার তাকে প্রতিদিন সকালে দৌড়াতে বলেছে কিন্তু তার সাহস ও সুযোগ হয় না— আজকে হয়েছে। 


নানু মিয়ার কাছে জানতে চেয়েছিলাম তার এলাকার উৎপাদন-ফসলের ব্যাপারে। তার ভাষ্যমতে ধানই প্রধান ফসল। সবজি চাষ বাড়ির আঙিনা মাঠে কিছু হয়ে থাকে। মাছ ধরা এখানে একটি পেশা। তাদের নদীর নাম সুরমা। এলাকাটিতে মারামারি প্রচুর— জানতে পারি আরেফিন ভাইয়ের কাছ থেকে। পারিবারিক শিক্ষা বলতে হাল্কাপনা ধর্মীয় শিক্ষা এখানে। রাস্তাঘাট তেমন উন্নত নয়,উন্নত নয় মানুষের জীবনযাত্রার মান। তবে শতভাগ মানুষ টয়লেটে হাগু করা শিখেছে। টয়লেট থেকে বের হয়ে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করা রুচিশিক্ষা এখনো অর্জন করেনি। 


বাংলাদেশের প্রত্যেক গ্রামেই অশিক্ষা ভরপুর। হিংসা দ্বন্দ্ব সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্ব। বচ্ছরের পর বচ্ছর এই হিংসা বয়ে নিয়ে বেড়াই গ্রামের সহজ সরল কাদামাটি। ইদানিং আবার প্রচুর রেমিট্যান্স ঢুকছে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে। ফলে হাতে অর্থ আসতেছে প্রচুর— প্রচুর মানে প্রচুর। কিন্তু সেই অর্থ কাজে লাগানোর মাথা নাই— ব্যথা বাড়ছে। 


২১ কিলোমিটার দৌড় সম্পূর্ণ করলাম। প্রথম শমশেরনগর ট্রেইল ম্যারাথন (৪২ কিলোমিটার) সম্পুর্ন করেছিলাম, তারপর উত্তরা ১০ কিলোমিটার। আর এখন ২১ কিলোমিটার। মনে আনন্দে লাগছে। তবে এই দৌড়কে আমি কখনো প্রতিযোগিতা হিসাবে মনে করি না— মনে করি জীবনের অংশ, শরীরের পরীক্ষা।


জীবনকে প্রতিযোগিতা থেকে দূরে রাখি— প্রতিটি কাজ করি প্রতিদিন নিজেকে চ্যালেঞ্জ করে,নিজের সময়ের সাথে কথা বলে— প্রতিনিয়ত স্বভাবে চলার শতভাগ চেষ্টা করি— প্রভাবমুক্ত থাকার প্রতিজ্ঞা নিয়ে চোখ মেলে সানন্দে সামনে তাকাই। 


আরেফিন ভাইয়ের চোখ ঘুমে টলমল করতেছে। তার ডিউটি শেষ পাচটায়। এই ইভেন্টের কারনে বাড়তি ডিউটি। কেউ বিশ্বাস করেন আর না করেন বাংলাদেশের পুলিশ আর প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের উপর দায়িত্বের নামে টরচার চলে। আরেফিন ভাইকে বললাম— ভাই, আপনি বাসায় গিয়ে ঘুম দেন, পরে সময় হাতে থাকলে সন্ধ্যায় আমরা আড্ডা দিবো। 


চা খাওয়া দরকার। দোকান খুজতে হবে। আশেপাশে ভালো কোনো দোকান নেই। হাটছি দোকানের খুজে— আমি, নবী ভাই আর বৌদি। রাইকে মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয়েছে— প্রতিযোগীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার জন্যে। রাস্তার পাশেই একটা বাড়ি— ঢুকে গেলাম বাড়িতে। দামান, নয়া দামান আসবে। রান্নাবান্নার কাজ চলছে। আমাদের বসতে দেয়া হলো। তারপর শুরু হলো আড্ডা। ধীরে ধীরে মানুষের ভীড় বাড়ছে। মানুষকে সম্মোহিত করার এক পরাবাস্তব ক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহন করেছেন এমরানুর রেজা ভাই। এটা ভাইয়ের সাথে টুর না করলে কেউ বুঝতে পারবে না। তবে রেজা ভাই সব সময় সম্মোহিত করার মুডে তাহেন না— মাঝে মাঝে ঘুড়ির খেলা দেখেন বাতাসে সুতা হাতে রেখে। 


চা-নাস্তা খেতে খেতে চাচার সাথে কথা হলো। আরবি ভাষায় কথা বলতে পারেন তিনি। বহুবছর সৌদি আরব ছিলেন। চাচার বড় ছেলেটা সৌদি আরবে হত্যা হয়েছে। চাচার নাতনি মিম— দারুন মিষ্টি মেয়ে যেনো বৃষ্টি রাশি রাশি— ক্লাস এইটে পড়ে— এখনো বিয়ে হয়নি। 


রাতে যে প্রাসাদে ছিলাম সেখানে চলে আসি। সিলেট শহরে যেতে হবে। সিলেট শহর থেকে আমাদের নেয়ার জন্যে চলে আসতেছেন নাছির ভাই। নাছির ভাইয়ের সাথে আমাদের অতীত কোনো পরিচয় নেই। একদিনের পরিচয়। তার সিএনজি দিয়েই আমরা গোবিন্দগঞ্জ আসি। এবং আজকে রাতে তার বাসাতেই থাকবো আমরা। 


প্রাসাদে বিশাল খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। পৃথিবীর সবাই জানে আমি খুবই সীমিত খাবারের লোক। এই সীমিত খাবারের রেজা ভাই মহাভারতের ভীমের মতো  খাওয়া দাওয়া করেছে এই প্রাসাদে। যে আপা খাবার রান্না করেছেন তিনি অসাধারণ অমায়িক মানুষ। বলে রাখা ভালো এই প্রাসাদ বাড়ির কারো সাথে আমাদের পূর্ব কোনো পরিচয় নেই। 


সিএনজি চলছে। নাছির ভাইয়ের পাশে বসা আমি। রাই ও নবী ভাই সুরমা নদীর জলে স্নান করে নিলো। সিএনজি চলছে। 


জ্ঞানী ভাই, আপনি মনে হয় বিয়ে করেননি। 

আপনি কেমনে বুঝলেন? 

বিবাহিতরা এতো সুখী থাকতে পারে না। 


নাছির ভাই গতকাল থেকে আমাকে 'জ্ঞানী ভাই' বলে। তার মতে আমি জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলি। নাছির ভাইয়ের বউও নাকি অনেক জ্ঞানী। তাই বউয়ের সাথে তার প্রায়ই মধুর দ্বন্দ্ব হয়। তাছাড়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মেয়েদের জ্ঞান সহ্য করতে পারে না। 


সিএনজি চলছে। নাছির ভাইয়ের ডান পাশে নবী ভাই। নাছির ভাইয়ের কথা শুনে নবী ভাই কথা বলে উঠলেন ''আমাকে আপনার অসুখী মনে হয়?" নাছির ভাই চুপ। আমি বুঝলাম, বিবাহিতরা বিবাহিতদের অনেক উত্তর নীরব ভাষায় দিয়ে থাকে। সিএনজি চলছে। সিএনজি চলছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে আমার পা পড়েনি। 


আমাদের সিএনজি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান দরজার সামনে। বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু বন্ধ সেহেতু আমাদের ঢুকতে দেয়া হবে না। এখন উপায়? যেখানে আছে রেজা ভাই সেখানে অবশ্যই আছে উপায়। চুপ করে একটু দাড়ালাম। এমন সময় চমৎকার এক যুবক-যুবতীর টিম বের হচ্ছে। ছেলেটির নাম সালমান। সালমানের সাথে ত্রিশ সেকেন্ড কথা বললাম।  শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় পড়ে সে। সে মিনিটেই সব ব্যবস্থা করে ফেললো। সালমানের বাবা নায়ক সালমান শাহ'র ভক্ত ছিলেন। তাই ছেলের নাম রাখলেন সালমান। সালমানের জীবনে কোনো শাবনুর আসছে কিনা জানি না।


শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি আমার কাছে দারুন ভালো লেগেছে। আমার ধারনা ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়টি কোনো প্রান্তিক এলাকায় হবে অথচ এটি শহরের অধিত্যকায়। খুব ভালো লেগেছে শহীদ মিনারের অবস্থান ও রাস্তাটা— সপ্তপর্না গাছটির কথা ভুলবো না কখনো। 


লিডিং ইউভার্সিটির শহীদ মিনারটিও ভালো লেগেছে— লিডিং ইউনিভার্সিটি ২০০১ সালে বেসরকারি  বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২[১] এর অধীনে বাংলাদেশের সিলেটে প্রতিষ্ঠিত হয়— সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এটি— সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস রাগিব নগর,দক্ষিণ সুরমা,সিলেট এলাকায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে এবং সেখানেই বিশ্ববিদ্যালয়টির সমস্ত কার্যক্রম চলছে। একটি গ্রাম এলাকায় একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলা সত্যিই নিকানো সাহস ও প্রত্যয় সুন্দর ইচ্ছার ব্যাপার।


এলাকাটির নাম রাগীব নগর হওয়ার পেছনে ইতিহাস রয়েছে। ম্যান মেইড ইতিহাস— ২০০৩ সালের ১১ ডিসেম্বর দক্ষিণ সুরমা-বিশ্বানাথের কামাল বাজার এলাকার তালিবপুরের বাসিন্দা রাগীব আলীর চাচাত ভাই লাল মিয়া স্থানীয় কলেজ মাঠে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তালিবপুর গ্রামকে রাগীব নগর ঘোষণা করেন। ২০০৪ সালের মার্চে সিলেটের বিশ্বনাথ আদালতে গ্রামবাসীর পক্ষে আবু সাঈদ বাদী হয়ে লাল মিয়া ও রাগীব আলীসহ কয়েক জনকে বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রায় ছয় বছর উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে সিদ্ধান্তের মুখ দেখে— 'রাগীব নগর’ নাম ব্যবহার অবৈধ। রাগীব শব্দের অর্থ High ambitious!  High ambitious খারাপ কিছু না যখন আমরা distance Ladder মেনে চলতে পারবো। 


সিএনজি চলছে। এইবার সিএনজি থামবে মাজারে। আত্মার বিজ্ঞানী হযরত শাহজালাল (র) মাজারে। মাজারে গিয়ে চুপ করে বসে রইলাম। মনে মনে তিনার সাথে অনেক অনেক কথা বলে আস্তে আস্তে সিএনজির কাছে চলে আসি। শাহাজালাল (র) মাজার একমাত্র মাজার যেখানে আমার বারবার যেতে ইচ্ছে করে। সিএনজি চলছে। নাছির ভাইয়ের বাসায় যাচ্ছি আমরা। 


নাছির ভাইয়ের বাসায় ব্যাগপত্র রেখে আমি আর রাইয়ান বের হয়ে গেলাম রাতের সিলেট দেখতে। রিকশা করে। রাতের সিলেট জোনাকির মতো সুন্দর— মিট মিট ঢিপ ঢিপ। পানসি রেস্টুরেন্ট ও পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট। সিলেটের জিন্দাবাজারে অবস্থিত দুটি রেস্টুরেন্ট। আমরা দুটি রেস্টুরেন্টেই যাই। খাওয়া দাওয়া করি। খাবারের মান ভালোই।  রাস্তার পাশেই দেখি হাজার প্রকারের আচারের ভাসমান দোকান। আট প্রকারের মিশ্র আচার কিনে খেতে বেশ আরাম লাগছিল। ঠেলা ব্রিজের পাশেই সেলফি ব্রিজ। সেলফি ব্রিজটি নতুন হয়েছে।  সরকার দেশের শরীরের উন্নয়নের জন্যে কাজ করছে বলা যায় কিন্তু দেশের মনের মান কে উন্নয়ন করবে!? 


শনিবার সকাল। আজ রাতের ট্রেনে বাড়ি ফিরবো। নাস্তা করে যাত্রা শুরু করি রাতারগুল ও জাফলং সুন্দরীর কথা মাথায় নিয়ে। পথে হযরত শাহ পরান (র) মাজার। সেখানেও কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে আধ্যাত্মিক পাওয়ার নিয়ে নিলাম। 


আমরা যাকে বলি মুক্তা গাছ, সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় তাকে বলে রাতা বা পাটি গাছ। আরামদায়ক শীতল পাটি  তৈরি করা যায় রাতা বা মুক্তা গাছ দিয়ে।  রাতারগুল গিয়ে দেখি মুক্তা গাছ আর মুক্তা গাছ। ছোট্টকালে মুক্তা দিয়া জিন্দাবাদ সিন্দাবাদ মুক্তিযুদ্ধ খেলতাম আমরা, আর এখানে সেই মুক্তা গাছ দেখবার লাইগগা টেহা খরচ কইরা আইছি আমরা— ডলার খরচ কইরা অনেক বিদেশিও আইছে— বিদেশিদের লগে রাইয়ের পরিবার সমগ্র কথা বলাও শুরু করে দিছে। সাদা চামড়া দেখলে আমাদের অনেকেরই মাথা ঠিক থাকে না। আর মাথা ঠিক না থাকলেই পেট খারাপ করে।


এখানে সবচেয়ে বেশি জন্মায় করচ গাছ ( Millettia pinnata)। এই বনের গাছপালা বছরে ৪ থেকে ৭ মাস পানির নিচে থাকে। বর্ষাকালে এই বন ২০–৩০ ফুট পানির নিচে নিমজ্জিত থাকে। বাকি সারা বছর, পানির উচ্চতা ১০ ফুটের মতো থাকে। বর্ষাকালে এই বনে অথৈ জল থাকে চার মাস। তারপর ছোট ছোট খালগুলো হয়ে যায় পায়ে-চলা পথ। আর তখন পানির আশ্রয় হয় বন বিভাগের খোঁড়া বিলগুলোতে। সেখানেই আশ্রয় নেয় জলজ প্রানিকুল। মিঠাপানির জলাবনটিতে উদ্ভিদের দু'টো স্তর পরিলক্ষিত হয়। উপরের স্তরটি মূলত বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ নিয়ে গঠিত যেখানে নিচের স্তরটিতে ঘন পাটিপাতার (মুর্তা) আধিক্য বিদ্যমান।


এই সোয়াম্প ফরেস্টটি প্রাকৃতিক হলেও বাংলাদেশ বন বিভাগ বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের জলসহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে। জলমগ্ন এই বনে রয়েছে হিজল, করচ আর বরুণ গাছ— আছে পিঠালি, অর্জুন, ছাতিম, গুটিজাম। আছে বট গাছও।


সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন রাতারগুল। পৃথিবীর মিঠাপানির  ২২টি জলাবনের মধ্যে  “রাতারগুল জলাবন” একটি। এই জলাবনের আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর। এই জলাবন গোয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত— চেঙ্গির খালের সাথেও তার শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে। বাঘ হরিন কুমির টাইপের প্রানি এখানে নেই। এখানে রয়েছে বিষধর সাপ আর কয়েকপ্রকার অসহায় বনজ প্রানি— জলমগ্ন বলে এই বনে সাপের আবাস বেশি, আছে জোঁকও; শুকনো মৌসুমে বেজিও দেখা যায়—এছাড়া রয়েছে বানর, গুঁইসাপ; সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল এবং বাজপাখি। শীতকালে রাতারগুলে আসে বালিহাঁসসহ প্রচুর পরিযায়ী পাখি, আসে বিশালাকায় শকুনও। টেংরা, খলিসা, রিটা, পাবদা, মায়া, আইড়, কালবাউশ, রুই সহ বিভিন্ন জাতের মাছ চোখে আসে। 


এই বনের সবচেয়ে ভালো লাগার দিক তার নিস্তব্ধতা। এক অলৌকিক আধিপত্য আধ্যাত্মিক নিস্তব্ধতা এখানে বিরাজ করে। রাতে নৌকা করে এই বনে বর্ষাকালে থাকা মানে নিশ্চিত জীবন জিজ্ঞাসার নতুন এক অধ্যাপক অধ্যায়ের খোঁজ পাওয়া যাবে। কোনো এক নিপ চান্নি রাইতে তোমার চোখে আমার জন্ম হলে এই বনে পৃথিবীর আর কোনো বিষাদ যন্ত্রণা থাকবে না। করচের ফুল ❀ তোমার খোপায় শেষ রাতের প্রার্থনার মতো রেখে দিয়ে কুয়াশা মায়ায় পাখি হয়ে দেখবো আমরাই জীবনানন্দের জল হংসগমন রতিপ্রিয় সুখ কামনাপ্রিয় প্রশান্তি। 


হাওর এলাকার প্লাবনভূমি— সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার বিভিন্ন এলাকায় করচ প্রজাতির আধিক্য চোখে পড়ার মতো। 


করচ ঘন ডালপালাবিশিষ্ট বহুবর্ষজীবী বৃক্ষ। করচের তেল বায়োডিজেল হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে বলে গবেষণা চলছে। সুনামগঞ্জ জেলার ১৩৩টি ছোটবড় হাওরে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া হিজল-করচের অনেক গাছ রয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় হিজল-করচের বাগ।


এই প্রযুক্তি বিপ্লবের সময়ে বিশ্ববাসী পরিচিত হচ্ছে বায়োডিজেলের সাথে। এই বায়োডিজেলটি সংগ্রহ করা হয় গাছ থেকে এবং এ জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত গাছ হচ্ছে যাত্রাফা, গম, ভুট্টা, পাম, সাদা মান্দার। এগুলোর ফল ও ফুল থেকে সংগৃহীত তেলকেই বলা হচ্ছে বায়োডিজেল।

এ দেশের আদিবাসী ও গ্রামের মানুষ সাদা মান্দারের [Jatropa Carcus (যাত্রোপা কারকাস] বীজ থেকে তেল সংগ্রহ করে কুপি বাতি জ্বালাত। কেরোসিন আর বিদ্যুতের আগমন সে বৃক্ষ-জ্বালানির ইতিহাস ব্যবহারের আড়ালে চলে যায়। 


হিজল-করচ-আড়াং বন, হাওরের মূলধন— জ্বালানির ইতিহাস যেহেতু পৃথিবীর অগ্রগতির ইতিহাসের রাধাকৃষ্ণ সেহেতু এই সোয়াম্প ফরেস্টের বৃক্ষ গাছ পালা হয়ে উঠতে পারে বায়োডিজেলর খনিস্পট। পৃথিবী এখন বায়োডিজেলের দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে জ্বালানির সহজলভ্য আধার হিসাবে। ফলে হাওড়ের প্রান জলজ উদ্ভিদ বৃক্ষের দিকে আমাদের নজরকে শক্তিশালী করতে হবে— রাতারগুল জলাভূমির দক্ষিণ দিকে রয়েছে দুটি হাওর: শিমুল বিল হাওর ও নেওয়া বিল হাওর। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার।


সিএনজি চলছে। এখন গন্তব্য ফলাফল জাফলং। সিএনজি চলছে। পাহাড়ি রাস্তা। সন্ধ্যা নামার কিছুক্ষণ আগে জাফলং গিয়ে পা রাখি। ও মাই গড! আগের জাফলং আর নাই!  ন্যাচারাল বিউটি উধাও! আসামের জলমাতা থেকে জলদুগ্ধ ঝরনা হয়ে আসতেছে পিয়াইন নদীর বুক ধরে— জাফলং ছিল খাসিয়া জৈন্তা-রাজার অধীনে থাকা এক নির্জন বনভূমি। ১৯৫৪ সালে জমিদারি  প্রথার বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে খাসিয়া-জৈন্তা রাজ্যের অবসান ঘটলেও বেশ কয়েক বছর জাফলংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা পতিতও পড়েছিল। পরবর্তিতে ব্যবসায়ীরা পাথরের সন্ধানে বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌপথে জাফলং আসতে শুরু করেন— পাথর ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকলে একসময় গড়ে ওঠে নতুন জনবসতি। পাহাড় আর ঝরনা-নদীর অভেদ্য সম্পর্কই জাফলং সুন্দরীর নাভিকমল আকর্ষন— অথচ সেই প্রকৃত সৌন্দর্যের জায়গা আজ আবিলতার মুখোমুখি। 


বিজিবি ক্যাম্পের পাশ থেকে রাতের আসাম উপভোগ করি। ভালো লাগে দারুণ। কিন্তু সেখানে যেতে মানা। দুটি দেশ দুটি নিয়ম অথচ একই আদমের সন্তান। মানচিত্র হন্তারকের চেহারার কোন জায়গায় কাটাতার বসানো যায় ভাবতে ভাবতে নাছির ভাইয়ের সিএনজির কাছে চলে আসি। 


সিএনজি চলছে। জাফলং সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে। সিএনজি চলছে। রাতের ট্রেনের টিকেট কাটা। স্টেশনে পৌছে গেলাম যথাসময়ে। একটি দুর্ঘটনা ঘটে গ্যাছে ইতিমধ্যে— আমাদের টিকেটের যাত্রা সময় শনিবার সকাল— আমি যাকে অনলাইনে টিকেট কাটতে বলছি সে শনিবার সকালের টিকেট কেটেছে— এখন উপায়!? 


জীবন যেখানে যেমন— উপায় বের করে রোববার সকালে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে নোঙর করি— আমাদের ভ্রমন-আন্টি বৌদির আম্মু অসুস্থ হয়ে গেছেন— তিনাকে ভৈরবের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে প্রেসার চেকাপের জন্যে। ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রেসার কত না জেনেই আমি চললাম বাড়ি দিকে— বাড়ি যেতে যেতে মাথায় ঘুরছে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ফেরা উপন্যাসের কয়েকটি লাইন— 


“বন্ধুগণ হাওয়া ঘুরছে।

বাতাস এখন ওলট-পালট। সামলে। ভয় নেই, সঙ্কট মানেই পরিত্রাণ। বাতাস ঘুরছে। ঘোরার মুখটাতেই যা একটু গোলমাল। ঘরের চাল উড়ে যায়, মাথার ওপর আকাশ বেরিয়ে পড়ে। মড় মড় করে ভেঙে পড়ে গাছের ডাল। মেঘ চমকায়, কড়াৎ করে বাজ পড়ে। তবু মনে রাখবেন, হাওয়া ঘুরছে। হাওয়া ঘুরে যাচ্ছে।  হাত বদল হচ্ছে পৃথিবীর অধিকার। দেরি নেই।”

বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০২১

বিম্বু

        দেখতে চাই না খোদার চোখ 

তোমার চোখের বয়ান 

          বৃষ্টি হলে মেঘের মৃত্যু 

প্রেম খোদার প্রান

শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২১

মাটি চায় জল

 ওরা সন্তানের মতো ভাবে 

কাশফুলে বৃষ্টি পড়ে

জেএল দেওয়া চুলের মতো উড়ে যায় পাখি

আবার বদনাম নামে সূর্যের পথ ধরে

লাল থেকে আরো লাল হয়ে উঠে প্রতিবাদ 

পাওয়ার ইচ্ছে কাদামাটির নিচে বাইম মাছ

ফ্যামিলির কাছে কম কথা দেওয়া হয় সারাদিন

পানি আর পানি 

জল আর জল

চলো এখনি উঠি পড়ি শান্তিনৌকার খোঁজে 


জীবন তো একটাই

জীবনের নিচে সাদা কাশফুল 

কারো জন্য বিষয় ও বাসনা বিসর্জন দিতে হয় না 

দূরে 

অনাথ চোখের ঠিক সীমানার কাছে

কানি বক 

একই চাঁদ 

একই আকাশ 

ছিন্ন দুটি আশাগল্প 


যাতনা জোৎস্না খেলা করে মনে

নোনা বর্ষায় দুটি চোখ খুঁজে খুঁজে হয়রান

এখনও খোঁজ তুমি আমায়

শীতল হাওয়ায় কলমি ফুলের ধ্যানতৃপ্ত পাখায় 

একটি পাখি একা একা উড়ে আসে ছায়াপথ ধরে 

নদীর কিনারে

ছাদ লাগবে না প্রিয়

নৌকায় ছায়ায় চড়ুইভাতি 

আচ্ছা আমরা যাই

আমরা যাচ্ছি

অজানা পথে

লোকালয়ে 

একটি পাখি একা একা উড়ে গান গায় নদীর কিনারে 


মেঘ আসে তোমার দেখাপথে 

অন্ধকার নামে 

তুমি ডুবে যাও 

আমি ডুবে যাই 

মিথ্যা পৃথিবীর মিথ্যা ছলনায়

ছনচালে বাগানমাখানো বাড়ি 

মাঠের মাঝখানে একা এক দোকানে 

চাওয়ার আলোয় পাওয়ার কড়চাঘর 

নিভে গেলে কথা মুখোমুখি বসা

রাগ ঘৃণা হিংসা রেখে আসি জলের আগুনে 

গাঙচিল গতির নিচে রোদ পোহাতে পোহাতে ফেরারি 

নীরবতা শুদ্ধ ফুল চাষ করে


এমন দিনে রবে না তোমার ঘরমুখো আলো 

রবে না আমাদের

চুলখোলা শ্যামাঙ্গিনী ঢেউয়ের মতো বাজে বারবার 

ঠিক একদিন পেয়ে যাবো

দ্বীপ-আশা ফুল ফল


পাখি ডাকে সকালবেলা 

ব্রিজের উপরে হাওয়াইমিঠাই উচ্ছ্বাস 

এক তুমি'র প্রেমের জিহাদ কালো চশমা 

মাঝির বৈঠাতে আমাদের ভবিষ্যৎ 

লেখা না হোক আর কথা ছন্দমালা

এক দোকানির একা বসে থাকা

দ্রৌপদীচোখ জানে গোবিন্দ মহান

জায়েদা জানে না কে এই ইমাম 

কে এই ইমাম হাসান

তরবারিকে প্রেমের সাঁকো করে 

চলো হেটে যাই প্রানবিক পথে


কানি বক ফিরে আসো তুমি 

ফিরে তাকাও 

বেলা বয়ে যায়

যেতে হবে বহুদূর শান্তিযতির সীমায়