বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫

মায়ের কাছে

একটি ভালো পাস করেছি। পৃথিবীর কাছে পাসটা খুব বড় ছিল কিনা জানি না কিন্তু গ্রামের মানুষের কাছে পাসটা বড়ই ছিল। নিজেকে সম্মান দিতে লাগলাম। মনে মনে সম্মানিতবোধ করছি। সিদ্ধান্ত নিলাম এলাকার কোনো কলেজে ভর্তি হবো না, মনটা তালগাছ হয়ে গেলে যেমন হয়।   সিদ্ধান্ত নিলাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হবো। যেই সিন্ধান্ত সেই কাজের পেছনে দৌড়।

কুমিল্লায় তখন চেনাজানা লোক তেমন কেউ ছিল না। একজন মানুষকেই চিনতাম ,একজন মানুষের রুমেই একরাত যাপন করেছিলাম । চমৎকার মানুষ। চমৎকার তার আতিথেয়তা।

লিটন দা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ম্যাথমেটিক্সের ছাত্র। ম্যাথ সে ভালোই বুঝে। সকাল-সন্ধ্যা টিউশনি করে। তার জনপ্রিয়তা গন্ধময় হয়ে ওঠে। মাস শেষে পকেটে যথেষ্ট টাকা জমা হতে থাকে। বেশ চলে, বেশ পড়ায়, বেশ তার বেশভূষা।

নুরাইন তার কাছে পড়ে। ম্যাথ পড়ে। সাধারণত সে একজন করে পড়ায় না। তারপরও অবিভাবক মহল খুব করে লিটন দা'কে ধরেছেন, তাই সে না শব্দটি উচ্চারণ করতে পারে নি। প্রতি সন্ধ্যায় লিটন দা নুরাইনদের বাসায় যায়। ম্যাথ পড়াতে পড়াতে এক সময় জীবনের ম্যাথ নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। (a+b)√ এর পরিবর্তে জীবন স্কয়ার নিয়ে আলোচনা চলে। অভিভাবক মহল বিষয়টি টের পান -- লিটন তো ভালো ছেলেই, দেখতে শুনতেও খারাপ না।

একদিন অভিভাবক তাদেরকে কোনো এক ঘনিষ্ঠ মুহুর্তে আবিষ্কার করেন। সুতরাং ঘনিষ্ট মুহুর্তের একটি সামাজিক স্বীকৃতি প্রয়োজন। তাদের বিয়ে করিয়ে দেয়া হয়। লিটন দা বিবাহিত।

লিটন দা'র জন্মের কয়েক বছর পর তার বাবা মারা যান। লিটন দা'র মা তার চেহারা দেখে দেখে দিনযাপন করতে থাকেন। লিটন দা বড় হয়, কলেজ পাশ করে, সম্মান পড়বে। মায়ের আঁচল ছেড়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হয় সে।একটি কৈ মাছ জলের আশায় লাফ দিয়ে সাগরে পড়ে।

রাস্তার পাশে লিটন দা'দের বাড়ি। সোঁ সোঁ করে সিএনজি চলে যায়। মা দৌঁড় দিয়ে রাস্তায় যান, এই বুঝি আমার সোনা এলো, এই বুঝি আমার লিটন এলো। না, লিটন  আসেনি। লিটন নুরাইনকে নিয়ে সন্ধ্যাযাপন করছে, বাদাম খাচ্ছে, আর তার খোসা ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। অসহায় খোসা মৃত্যুকে মেনে নিয়ে ডাস্টবিনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাড়ির আম গাছের চিকন ডালে বসে কাক কা কা করে। মার মন আনন্দ ভরে ওঠে। কা কা শব্দের পেছনে মা লিটনের আগমনবার্তা দেখতে পান। একদিন যায়, দুই দিন যায় তিন দিন যায়, কাকের কা কা ফুরিয়ে যায় ,লিটন তো আর আসে না। লিটন নুরাইন আর তার ছোট ভাইকে নিয়ে কুমিল্লা বার্ডে ঘুরেফিরে । তারা ফুচকা  খায়, হালিম খায়, জীবনের গল্প করে, নানা খুঁনসুটি আর রসিকতায় মগ্ন থাকে। মা  চকবাজারে যান। মোবাইলঘরে লিটনের ফোনের খোঁজ করেন। লিটন ফোন দিয়েছিল কিনা জানতে চান। কিন্তু মা জানেন না গ্রামের বুড়া মানুষটির কাছে ফোন করার সময় লিটনের নেই। সে এখন মহা ব্যস্ত মানুষ। সে এখন গোমতী নদী চিনে, সে এখন গোমতীর পাড়ে গোধূলী লগ্নে হাঁটতে জানে।

গভীর রাতে মা দুঃস্বপ দেখে লিটন লিটন বলে চিৎকার করে ওঠেন, মা আস্তে আস্তে টিউবওয়েলের কাছে যান, এক গেলাস পানি খেয়ে তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা করেন।  লিটন তখন দেহের রন্ধনকলা শেষ করে আধুনিক লাইট জ্বেলে ওয়াশ রুমে নিজের শরীরে পরিষ্কার করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে থাকে।

ইতিমধ্যে লিটন ভালো একটি এনজিওতে চাকরি পেয়েছে। ভালো বেতন। দাম্পত্য জীবন আরও রসালো হয়ে ওঠে।  মাঠে খাঁ খাঁ রোদ ফলে, রোদ ঘন হয়ে আসে মায়ের হৃদয়ের ক্যাম্পাসে, মা ছটফট করে।রোদের তীব্রতা বাড়ছে-কমছে, মা হৃদয়ের হাহাকার বাড়ছে বই কমছে না।

লিটন এখন নয়টা-পাঁচটা ডিউটি করা মানুষ। মায়ের কথা এখন তার মনে পড়ে। ফোন করার সাহস পায় না । মা কবিরাজের বাড়ি যান, তাবিজ নিয়ে আসে। চারটি তাবিজ। বাড়ির চারকোণার চারটি গাছে ঝুলিয়ে দেন। তাবিজ দুলে আর মা বিশ্বাস করতে থাকেন লিটনের মন এই বুঝি বাড়ির দিকে ঝুঁকছে, দুলছে।

লিটনের পায়ের ব্যথাটা আবার দেখা দিয়েছে। নুরাইন বলে টেনশন করো না, শীতকালে বাতের ব্যথা একটু বেড়েই থাকে। ব্যথা বাড়ছে। দিন যাচ্ছে। আরও ব্যথা বাড়ছে। অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সে। ডাক্তার ব্যথানাশক ঔষধ দিয়েছে। ঔষধ খেলে আগে পায়ের ব্যথা থেমে যেতো। এখন থামছে না। ঢাকা শহরের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে সিরিয়াল নেয় নুরাইন। ডাক্তার হাজারটা
চেকআপ দেয়। প্রতি চেকআপে হাজার হাজার টাকা। লিটনের জমানো টাকা প্রায় শেষ হয়ে আসে। লিটনের মনে জন্ম নেয়া বিন্দু বিন্দু ভয় ভয়ানক বৃত্ত তৈরি করে।

ডাক্তারের ফাইনাল রিপোর্ট। মাসল ওয়াস্টিং। ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের ফল। পা কেটে ফেলে দিতে হবে। মায়ের হাতের কাঁচের গ্লাসটি মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়।

দুধ মিয়া ফোন নিয়ে আসে।

চাচি, লিটন ফোন করেছে....

মা বিশ্বাস করতে পারেন না। কাঁদো কাঁদো  গলায় লিটনের আম্মা ডাক মোবাইলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র বেয়ে ভেসে আসে। মা কথা বলা ভুলে যান। লিটন মাকে তার অসুখের কথা জানায়।

লিটনকে মা বাড়ি নিয়ে আসেন।নুরাইন গ্রামের কাদামাটির ঘরে আসেনি। শহরের  দালান, ফাস্টফুডে অভ্যস্ত সে, এক শহুরে লিটনের প্রতি তার অভ্যাসগত টান ছিল। কিন্তু মা,
পৃথিবীতে মা-ই একমাত্র আত্মা যে সন্তানের কঙ্কাল নিয়ে ঘুমাতে পারেন। লিটল ব্যথায় অস্থির। মায়ের অস্তিরতা আরও বেড়ে যায়। পৃথিবীতে মা-ই একমাত্র নারী যিনি সন্তানের সহমর্মি হতে পারেন।

বাংলাদেশের ডাক্তার লিটনের পা কেটে ফেলার প্রস্তাব দেয়। মা তাতে রাজি হননি। বাড়ির পাশের জমিটুকু মা বিক্রি করে ফেলেন । লিটনকে ইন্ডিয়া নেয়া হয়। মাও সাথে যান। ইন্ডিয়ান ডাক্তাররা লিটন দা'র নিজয়েন্ট মেটাল দিয়ে পরিবর্তন করে দেয়। লিটন দা আর কোনোদিন বাম পা ভাঁজ করতে পারবে না, কোনোদিন না।



লিটন  দা এখন বাড়িতে। এখন আবার টিউশনি করানো শুরু করেছে। ভালোই টাকা আসে। এখনো সিএনজি সোঁ সোঁ করে চলে, কাক কা কা করে ডাকে। কিন্তু মা আর বিচলিত হন না।

লিটন দা আবার বিয়ে করেছে। মায়ের পছন্দে, লিটল দা এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। মেয়েটি লিটন দা'র অসুস্থতার ভার একটু হলেও হালকা করার চেষ্টা করে।

বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫

শিক্ষা

প্রতিযোগিতার পরিণতি হিংসা। হিংসার পরিণতি দ্বন্দ্ব, ঝগড়া, ধবংস। আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থা প্রতিযোগিতামূলক। তাই আমাদের জীবন-ব্যবস্থা হিংসাত্মক, ধ্বংসাত্মক। 

মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

লোকটি

লোকটি আমাকে সামাজিক হতে বলে। লোকটি আমাকে তার মতো হতে বলে। কিন্তু আমি তো আমি। আমার মতো আমি তো কাউকে দেখিনি। আমি কেন তার মতো হবো... আমি কেন সমাজের সেই কলাপাতার নিচ থেকে সবুজ বিলাবো ...তার মতো হলে মিটে যাবে বিশৃঙ্খলা? না না, কখনো না। বরং তার মতো হতে গেলে দেখা দিবে বায়ুশূন্যতা, বায়ুশূন্যতা থেকে ঘূর্ণিঝড়, টানটান টর্নেডো, সাইক্লোন।

লোকটি আমাকে তার মতো হতে বলে। লোকটি আমাকে ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডো হতে বলে। 

আসবে

আসবে গো দিন আসবে
ঠোঁটের নিচে পুব আকাশের সূর্যটা ঠিক উঠবে
আসবে গো দিন আসবে
এক কাতারে মানুষ সকল জোছনালোকে হাঁটবে
নাকের দেশে ফুলের বাতাস সরল মনে হাসবে
আসবে গো দিন আসবে
পুলিশ মানুষ গিটার ধরে মানুষের গান গাইবে
নদীর সেই নাব্যতা সুখ স্রোতের পথে ভাসবে
বাউল সুরে মাঝির নৌকা আবার হেসে চলবে
অন্ধকারটা আলো হয়ে রোজ সকালে ফুটবে
আসবে গো দিন আসবে
জোনাকপোকা আলো জ্বেলে অন্ধকারে সাজবে 

নকল

তোমার চেহারা এ রকম নয়, অন্য রকম
অনেকটা আপেলের মতো, অনেকটা কাঁঠালের মতো
তুমি হাজার বছরের চেহারা চিনো না, তোমাকে চিনতে দেয়া হয়নি
আয়নায় তুমি যে চেহারা দেখো সেটা নকল
জলপাই, নারকেল, আপেলের বীজ থেকে নকল করা
তুমি নকল, সত্যিই তুমি নকলের সন্তান

পৃথিবীতে একটা নকল দেখাও যেখানে নকল নেই
নকলের জঙ্গলে আমি তুমি আমরা-- হুঙ্কার তুলি, গর্জন করি মৌলিক বলে কিচ্ছু নেই,
মৌলিক বলে ব্যবসা করি
নকলের ঘর থেকে নকল তুলে আনি 

সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

নায়ক

সময় নায়ক তৈরি করে। সময় পারফিউম মুভির নায়ককে তৈরি করেছে। পারফিউম মুভির নায়ক মানুষ হত্যা করেনি, হত্যা করেছে পুঁজিবাজার। মানুষের মাঝে প্রেমের সেতু তৈরি করে সভ্যতার কঙ্কাল ভেঙে ফেলে সময়ের নায়ক। পারফিউম মুভির নায়ক জন্মেছিল বেঁচে থাকতে নয়, বাঁচাতে। 

রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

শীতের

শীতের ভেতর গভীর এক রাতে গভীর কথা বলার প্রেরণায় কুয়াশারা পৃথিবীতে নেমে আসে। জলের শব্দের সাথে কুয়াশার কথা হয়, কুয়াশার আলপথে নতুন এক উচ্ছ্বাস। উচ্ছ্বাস তুমি আমার ঘরের হৃদয়ের ক্যাম্পাস। 

চলে যাবো বলে

চলে যাবো বলে একা একা হাঁটি
চলে যাবো বলে পান্থশালার ঘরে আমার এক ফালি বাঁশি
চলে যাবো বলে হৃদয়ের ঘরে সোডিয়াম আলো
হৃদয়ের পাড়ে অভিমানী গান, সৃষ্টির সুরে অঞ্জলিযান
চলে যাবো বলে চোখের আশায় বেঁচে থাকার অভ্যাস
মন থেকে বন, বন থেকে আলোকপাত, উদ্ভুত এক আলোকপাত
তবুও অপূর্ণ, অপূর্ব অপূর্ণ থাকবে চিরকাল, মহাকাল 

শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

আধ্যাত্মিক

টিকেট না কেটেই কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশনের প্লাটফর্মে ঢুকলাম। গেটে সাদা পোশাক পড়া মানুষের অবস্থান। অনেককে অনেক কিছুই বলছে, টিকেট চেক চলছে কিন্তু আমাদেরকে কিচ্ছু বলেনি। হয়তো তার পেছনে কোনো আধ্যাত্মিক ঘটনা আছে।

আধ্যাত্মিক ঘটনা এক :  জীবন দার পিঠে গিটার ঝুলছে। আমার চেহারায় ভদ্রলোকের লেবাস। সুতরাং আমরা টিকেট না সংগ্রহ করে প্লাটফর্মে অবস্থান করতে পারি তা অবিশ্বাস্য।

আধ্যাত্মিক ঘটনা দুই : এটি বাংলাদেশ রেলওয়ে। পুরো বাংলাদেশেই আধ্যাত্মিক ঘটনার মহড়া চলে।

জীবন চোধুরী অবাক হলেন। কারণ ইন্ডিয়ান প্লাটফর্মে কোনোদিন তিনি টিকেট ব্যতীত অবস্থান করেননি। জীবন চোধুরী কেন, কোনো ইন্ডিয়ানও প্লাটফর্ম-টিকেট ব্যতীত প্লাটফর্মে অবস্থান করার মতো মানসিকতা রাখে না।

আমরা যে ট্রেন দিয়ে যাত্রা শুরু করবো তার নাম মহানগর গোধূলী। শোভন সিটে দুজন মুখোমুখি বসলাম। ট্রেনে বসলেই আমার তার কথা মনে পড়ে যে কথা দিয়ে কথা রাখে নি, কথা দিয়ে কথা রাখে না ; তার কথা মনে পড়ে যে বিরহ নয়নে আজও পথ চেয়ে বসে আছে ট্রেনের জানালা ধরে।

জীবন দা কথা বলছেন। আমি মনোযোগী শ্রোতা। কেউ কথা বলতে থাকলে আমার চোখের দৃষ্টি থাকে তার চোখে। কান দিয়ে কথা শুনি আর চোখ দিয়ে অন্তর পাঠ করি। ট্রাভেল টিকেট চেকার আসলেন।

জীবন দা আস্তে করে বললেন এখন কী হবে?

প্রত্যেক ঘটনার শেষটা অনুমান করে নিই। আর ঘটনার শেষ জানা থাকলে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে যারা টিকেট না-সংগ্রহ করে ট্রেনে অবস্থান করে তাদেরকে একটি নিদিষ্ট পরিমাণ অথবা টিকেটের মূল্যের সমপরিমাণ মূল্য  সরবরাহ করলেই ঝামেলা শেষ। চারপাশের যারা টিকেট কাটেনি তারা তাই করছে। এখন আমাদের পালা।

টিকেট?

টিকেট তো কাটিনি ( মুখে মৃদু হাসি)!

জনাব টি টি আর একটিও প্রশ্ন করেন নি, কোনো প্রকার মূল্যও কামনা করেন নি।

জীবনদা আবার অবাক হলেন।

কেন জনাব টিকেট চেকার টিকেট না-সংগ্রহ করার পরও আমাদের কাছে কোনো প্রকার মূল্য কামনা করেনি তা পৃথিবীর মানুষের জানবার কথা নয়। কিন্তু আজকে জানাতে ইচ্ছে হচ্ছে।

অনেক পুরাতন এক দিনে আমি ট্রেনে। ট্রেনে এমন ভিড় হাত-পা নাড়াচাড়া করার মতো কোনো অবস্থা নেই। টিকিট চেকার নিজেও টিকেট চেক করবেন তো দূরের কথা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ভিড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে ব্যতিব্যস্ত। এমন ভিড়ে আমার পাগল মনের ইচ্ছে হলো বই পড়বে। বই অবশ্যই আমার হাতেই ছিল। আহমেদ দফার ওঙ্কার। প্রতিটি লাইন যেন একটি অপটিক্যাল মহাসাগর। আর আমি মহাসাগরে কিনারায় বসা কোনো এক নবীন পর্যটক। যে পর্যটক ঢেউ গুণতে গুণতে সময় ভুলে যায়, ভুলে যায় নিজের শরীর বলে কোনো এক দৃশ্যমান অস্তিত্ব আছে, সেই পর্যটক।

হঠাৎ আমার চেতনালোকে শব্দের আবির্ভাব। নারীশব্দ-- দূরে দাঁড়ান, দূরে। যেখানে চুল রাখার মতো জায়গা নেই সেখানে আরও দূর কোথায় পাবো আমি! জনাব টিকেট চেকার রেগে গেলেন-- লোকটি আর দূরে কোথায় যাবে, পারলে আপনি যান, যান তো দেখি। নারী তার সাথে ঝগড়া করতে শুরু করে। ও মা ,এ কী অবস্থা! শব্দের ভীড়, শরীরের ভীড়, আবার চোখাচোখির ভীড়!

এক ঠেলা দিয়ে মানুষকে ফাঁক করে এই নারীর কাছ থেকে দুই তিন-হাত দূরে গেলাম। জনাব টিকেট চেকারকে বললাম ভাই আমার সাথে আসেন। তিনি আমার পাশে আসলেন।

টঙ্গী স্টেশন অতিক্রম করার সাথে সাথে নারীর পাশে দাঁড়ানো আরেকটি নারী শ্রাববমি করতে লাগলেন। নারীর সারা শরীরের বমিতে ভিজে গেল। চারপাশের লোক দূরে সরে গেল। যে বমি করছিলেন  তাকে আমার জায়গায় এনে তার জায়গায় আমি গেলাম। আবারো নারীটির পাশে আমি। তার সারা শরীর বমি আর বমি, দুর্গন্ধ আর দুর্গন্ধ। এখন আর নারীটি বলে না দূরে দাঁড়ান, আর একটু দূরে। বরং ট্রেনের সবাই নারীটির দূরত্ব কামনা করছে। এমন সময় জনাব টিকেট চেকারের সাথে আমার চোখাচোখি। আমি মৃদু হাসলাম। সেও মৃদু হাসলো। আমাদের এই মৃদু হাসিটা আজীবনের জন্য আমাদের হয়ে গেলো, আমরা কেউ কাউকে চিনি না কিন্তু প্রত্যেকে প্রত্যেকের মৃদু হাসিটা চিনি, হাসিটার অর্থ জানি....

শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

হাইপেশিয়া

সমাজে চাকচিক্য দেখি সাধক দেখি না। অনেকে আমার মতো নিজের প্রদর্শনীর কাজে ব্যস্ত। অনেকে ভদ্রলোকের মোড়কে দুর্দান্ত ডাকাত, অনেকে তেইল্লাচুরা কেবল নষ্ট করে, কেবলই নষ্ট।

সমাজে সাধক দেখি কিন্তু তাঁদের  মূল্যায়ন দেখি না। তাঁরা  ফুলার রোড থেকে দুই হাজার আট নাম্বার রুমে যাওয়া-আসা করেন। তাঁরা দায়িত্ব ও কর্তব্যের আন্তরিকতা নিয়ে মগ্ন থাকেন। তাঁরা টাইমলাইন চান না, তাঁরা দুধ থেকে মাখন প্রক্রিয়া পর্যন্ত ভ্রমণে বিশ্বাসী।
তাঁদেরকে পাগল বলে অসামাজিক করার চেষ্টা চলে। সমাজ তাঁদের চিনে না, চিনতে চায় না, কারণ তাঁদের  দিয়ে টেবিলের নিচের কাজটি হবে না, কারণ কেবল ব্যক্তিউদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তাঁরা একটি কাশি দিতেও প্রস্তুত নন। কারণ তাঁরা  সাধক। 

বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

শীতকালে মধু উষ্ণতা বাড়ায়। মধু এইভাবে উষ্ণতার সেন্টার হয়ে যায় 

বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

তর্ক

সাধারণত কারো সাথে তর্ক করি না। তর্ক করা জ্ঞানীদের কাজ মনে করি। আমি জ্ঞানী লোক নই।
অথবা তর্ক করা একটি খেলা। ছোটোকাল থেকেই তর্কখেলায় আমার কোনো আকর্ষণ ছিল না। আকর্ষণ না থাকার অবশ্যই কারণ আছে। কারণ বন্ধু ছিল হয় আমার চেয়ে বয়সে ছোট নয় বয়সে আমার চেয়ে বড়। ছোটদের সাথে অনর্গল কথা বলে যেতাম আর তারা শুনতো, আর বড়রা অনর্গল বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতো আর আমি শুনতাম। মনোযোগী শ্রোতা ও আন্তরিক বক্তা হয়ে আমার বেড়ে ওঠা।

জানালার পাশে বসতে চাইলাম। কিন্তু মহিলা আমাকে বসতে দিলেন না। আইনগতভাবে আমিই বসার অধিকারী। কিন্তু আইনি লড়াইয়ে জয়ী হতে কথা বলা লাগবে, তাই কথা বললাম। কিন্তু কথা বলাতেও হলো না। তর্ক করা লাগবে। কিন্তু আমি তো তর্ক করবো না। তাই মহিলা জানালার পাশেই বসলেন।

সূর্য টকটকে লাল রং ধারণ করেছে। অন্ধকার আসবে আসবে করছে। কুয়াশা আস্তে আস্তে অন্ধকারের উপর আধিপত্য স্থাপনের অভিযানে ব্যস্ত। সবুজ কালারের গাছগুলো অন্ধকারের গুনে গুণান্বিত হচ্ছে।

ট্রেন আড়িখোলা স্টেশনে। ট্রেনের ভেতর ভীড় এবং ভীড়। কিছু যুবক জানালা বেয়ে ট্রেনের ছাঁদে জায়গা করে নিলো। ট্রেন চলছে এবং চলছে। মহিলা ঘুমিয়ে আছেন। গভীর ঘুম। মুখের দরজা খোলা রেখেই তিনি ঘুমিয়ে আছেন। হয়তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সান্ধ্যকালীন নাস্তা শেষ করছেন। নাস্তা শেষ করার পর হয়তো তার জলের তৃষ্ণা পেয়েছে। তাই তিনি হয়তো জল কামনা করছেন। আল্লা বান্দাদের ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেন না। ছাঁদ থেকে লবণাক্ত পানির একটি ধারা মহিলার মুখের ওপেন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে লাগলো।

মহিলা কডা কডা বলে চিৎকার করে চোখের দরজা ওপেন করলেন এবং মুখের দরজা ক্লোজ করলেন 

মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫

শব্দের

বেঢপ > বেডক = অসুন্দর
ডক = সুন্দর
হাবলা = আঁচড়ে ধরা
হেওযু = সেই দিকে
বাউজ = ভায়ের বউ
হাবলাদা = তাড়াতাড়ি
এওযু = এই দিকে
হুক্করদা = হঠাৎ
আইব= লজ্জাজনক
ইতা = এইগুলি
বাইত= বাড়ি
আছলাম = ছিলাম
কামরি = আমাশয়
বাইসারে বাইসা = আশ্চর্যবোধক উচ্চারণ
ইডা = এটা
হাঅন = খাবার
হামুক = শামুক

সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫

পুলিশ ভোর

ভোর দেখলেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে এই বুঝি ভোর
মানুষ দেখলেই বুক পেতে রাখি
বায়োমেট্রিক চোখে প্রেম রাখি, মন রাখি
পুলিশ দেখলেই চিৎকার করে বলতে চাই ভাই আমরাও মানুষ

ভোরের ভেতর গভীর অন্ধকার, মানুষের বুকে হিংস্রতার ভিসুভিয়াস, পুলিশের চোখে টেবিলের নিচে এক বান্ডিল হাত 

প্রেম

যদি প্রেম দাও তাহলেই আমি নদী হবো, নৌকা চালাবে আপনে যতনে আমার যৌবন জলে। প্রেমহীন জলঘের আমার জন্য না, সব ঘের ভেঙ্গে পাড়ি দিবো সাগরে, বাড়ির নাম স্রোতের মোহনা। 

রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৫

আহত

ভালোবাসাহীন এই ভূমি। ভূমির সন্তান মানুষ। মানুষ সইতে পারে না ভালোবাসার অসীম ভার। হালি ছটফট, ছটফট করে। আকুম-বাকুম শব্দ তোলে। ভালোবাসা গো যমুনা নদী আমার পুকুরের পোনা তোমার সংসারে আনিও না। পুকুরের পোনা স্রোত চিনে না, শৈবালে শৈবালে জীবন তাহার। শৈবাল চিনে পুকুর, পুকুর চিনে পোনা, শৈবালে পুকুরে পোনার জীবন-- দশ হাত ফুসফাঁস এক হাত চলন। 

শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

ভুল

মানুষ ভুল করে না, মানুষ ভুলের ফসল। মানুষের মৃত্যু হলেও মানুষের ভুলের মৃত্যু নেই। ভুল মিশে থাকে বাতাসে, ঠোঁটের বারান্দায়, আকাশের বেডরুমে।

ভুল চরিত্রবান, শুদ্ধতার আন্তরিক বন্ধু।

একটি বিখ্যাত ভুল করতে একটি বিখ্যাত জীবন প্রয়োজন। একটি বিখ্যাত জীবনের পাশে থাকা মানে বিখ্যাত সাহসের সাথে থাকা।
সাহস, জীবন, ভুল, শুদ্ধতা, বিখ্যাত আরো আছে যত সবকিছুই এক শিশি নারকেল তেলের কাছে তুচ্ছ। এমন করে সকাল গুরুত্বপূর্ণ, সকালের চেয়ে সন্ধ্যা এবং রাত। রাত এলেই ভুলের দরজায় বাজে কড়া নাড়ার গান, সুনসান নীরবতা এবং নীরবতা। 

সঙ্গীত

গানের মধ্যে থাকে কথা, গানের মধ্যে থাকে সুর, মৌখিক সুরের সাথে সাপোর্ট হিসেবে যুক্ত হয় যন্ত্র। ফলে সুর, কথা, যন্ত্রসুর মিলে গান।

প্যান্টের চেয়ে আন্ডারপ্যান্ট বড় হওয়ার রীতি চালু না হলেও কথা ও সুরের চেয়ে যন্ত্রসুরকে তীব্র আকারে উপস্থাপন করে সঙ্গীতসন্ধ্যা-যাপনের রীতি চালু হয়ে গেছে।

নতুনকে গ্রহণ করতে আপত্তি থাকার কথা না, তবে কী বর্জন করা হচ্ছে তা অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে। কারণ আকাশে উড়ে বেড়ানো যায় কিন্তু আকাশে ঘর বানানোর বিধিবদ্ধ হিসাব-নিকাশ এখনো সমাজ গ্রহণ করতে পারেনি। তাই জমিন এখনো আমাদের বাসস্থানের নাম, আমাদের শেকড়ের নাম।

শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

বিয়ে

সরকার আমাদের বিশ বছর পড়ায় তারপর ত্রিশ বছরের জন্য একটি চাকরি দেয়। মাওলানা পঁচিশ বছর পড়াশোনা করে তারপর ফতোয়া দেয়ার ক্ষমতা লাভ করে। সাধু বহুদিন সাঁইজির সঙ নেয়ার পর অবশেষে একদিন সুমতি লাভ করে।

সব কিছুতেই একটি নির্দিষ্ট সময় বিনিয়োগের ব্যাপার থাকে। কিন্তু একজন মেয়ে একজন ছেলেকে সারা জীবনের জন্য বন্ধু হিসেবে বেছে নিবে সেখানে কোনো সময় নির্ধারিত থাকে না। সেখানে বাইলাক নীতিকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

একজন মানুষকে বুঝতে হলে কিছু সময় বিনিয়োগ করা আবশ্যক। বিয়ের পর বোঝাপড়ার সময় থাকে না। কারণ বিয়ের পর সমাজ একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।
প্রথমে সমাজ দুজনকে বোঝাপড়া করতে বাঁধা দেয়, তারপর পুতুলবিয়ের মতো যখনই দুজনের বিয়ে হয় তাদের দূরে সরে যাওয়াকে কলঙ্ক মনে করে।

এইভাবে আমাদের সমাজ নারী-পুরুষের সম্পর্কের মাঝে শাঁখের করাত হয়ে অবস্থান করে। 

টিয়া পাখি

টিয়া পাখি আমার শৈশব। শৈশবের প্রিয়তা। সাদা বক ঝাঁকে ঝাঁকে মেঘনার উপর দিয়ে উড়ে যেতো অস্তগামী লাল সূর্যের দিকে। এক সময় সাদা বক রক্তিম সূর্য হয়ে পালিয়ে যেতো আমার দৃষ্টির সীমানা থেকে।
টিয়া পাখিও ঝাঁকে ঝাঁকে সাঁ সাঁ শব্দে উড়ে যেতো রক্তিম সূর্যের দিকে। কিন্তু টিয়া পাখি কোথায় যেনো হারিয়ে যেতো। যাচ্ছে যাচ্ছে, উড়ছে উড়ছে। আমার চোখ আর তাদের খোঁজে পাচ্ছে না। পাচ্ছে না তো পাচ্ছে না। আমার চোখ আজও টিয়া পাখি খোঁজে, ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া পাখি। টিয়া পাখি যদি বকের মতো সূর্য হয়ে যেতো তাহলে সূর্যের কাছে চিটি লিখতে বসতাম,

জনাব সূর্য,

বিশ্বাস রাখি ভালো আছেন। আমি ভালো নেই। ভালো থাকার অভিনয় করে সময়ে ভাসছি। খুব পাক্কা অভিনেতা তো তাই কেউ আমার হৃদয়ের রান্না ঘরে সিদ্ধ হতে থাকা অনুভূতির গন্ধ পায় না। আজকাল গোপন রাখার সুবিধা উপভোগ করতে শিখে গেছি। কারো করুণা পেতে হয় না। করুণাকে বিষের চেয়ে কাঁটাযুক্ত মনে হয়। তুমি ভাবতেই পারো তোমার কাছে বকবক করছি কেন। কারণ তো অবশ্যই আছে। আমার টিয়া তোমাকে ভালোবেসে সূর্য হয়ে গেছে। প্লিজ তুমি আমার টিয়াকে ফিরিয়ে দাও। টিয়া আমার শৈশব, আমার যৌবন, আমার গানের গোপন সুর, অসীম প্রেরণা। টিয়া ছাড়াও তুমি সূর্য সূর্যই থাকবে কিন্তু আমি রেজা, রেজা থাকবো না, ভেজা ঘ্রাণের মতো অন্তিম হয়ে যাবো।

কিন্তু টিয়া পাখি তো সূর্য হয়নি, হয়েছে ভুল পথের ফকির। আমিও হতে পারি ফকির তবে আমার পথের। এইভাবে দুই পথ কোনোদিন এক হবে না, এই চোখে আর পাবো না তেঁতুল পাতার চিকন চিকন মাংসের ফাঁকে টিয়া পাখির হলুদ হলুদ কলকাকলি!
টিয়া পাখি টিয়া পাখি আমি এখনো বসে আছি, বসে আছি আমার শৈশব নিয়ে, বসে আছি দুটি চোখ এক করে স্বপ্নের পথে। আমি জানি আমার সময় তোমার সাথে ভালো আচরণ করে নি, সেজন্য আই এম সরি, প্লিজ ক্ষমা করে দাও। তোমার ক্ষমার নদী স্রোতস্বিনী হলেই প্রাণ পাবে মরুময় ভূমি, উর্বর হবে আগামীকালের সকাল-দুপুর-রাত,  রসালো হবে কালকের বীজ ও ফসল।  

বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

নদী আমার

নদী আমার বহে না
নৌকা আমার চলে না
আমার মনের আন্ধারটুকু কাটে না, কাটে না।।

স্বপ্ন দেখার মেশিন কল থামে না, থামে না
সমাজের এই করাত কল বুঝে না, বুঝে না
আমার মনের কুয়াশা কাটে না, কাটে না।।

আলো আসে তবু আলো আসে না, আসে না
ভোর হবে তবু ভোর হলো না, হলো না
আমার মায়ের চোখের জল থামে না, থামে না।। 

বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

সিনেমা

নায়ক কখনো অসামাজিক কাজ করতে পারে না। কারণ নায়ক তো নায়ক, ফেরেশতার মানবিক ভার্সন।ভিলেন কখনো সামাজিক কাজ করতে পারে না। কারণ ভিলেন তো শয়তানের একমাত্র উত্তরসুরী।
বাস্তবিকপক্ষে কোনো মানুষের পক্ষেই একশত ভাগ খারাপ হওয়া সম্ভব নয়, একশো পার্সেন্ট ভালো হওয়া সম্ভব নয়। একশো ভাগ ভালো এবং একশো ভাগ খল চরিত্রের মানুষ আমরা সিনেমাতে দেখতে পাই। তাই আমাদের সিনেমা এক পরকালের নাম যার উপরে ইমান না আনাই চরিত্রবানের লক্ষণ। 

শব্দ

দোহান < দোকান

বিরিজ < ব্রীজ

আইয়্যা = এসে

আনহে = আপনি

কইত্তে = কোথা থেকে

জিগাইতে অইবো = জিজ্ঞেস করতে হবে
এনদা = এই দিকে

আজগা = আজকে

এ ন অই = এখানেই

টাইট বাফ ডাহাই লাইছে = বাধ্য করেছে বাপ ডাকতে

ইয়াত = আমতা আমতা জাতীয় শব্দ

লেংরা = পঙ্গু

ডর = ভয়

গানদা = পঁচা খাবার

অহনে = এখন

বন = বসেন

আনতাজি = অনুমান করে, এমনি এমনি

হরেন = হর্ণ

বাইলে পরলে = সুযোগ আসলে, সুযোগ হলে

মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

তোমাকে খুব ছোট করে দেখলে আকাশ মনে হয়, বড় করে দেখলে বৃষ্টির রাত 

সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

কথা

কথা বিক্রি হয়ে যায় জানালার বাইরে গাছের নিচে যেখানে অনেক বছর আগে একবার সূর্য এসেছিল বলে মনে করা হয়। কথা বিক্রি হয়ে যায় আদালতের কম্পনের সুরম্য দরজায়। কথা বিক্রি হয়ে যায় কঙ্কালের কাছে। কথা বিক্রি হয়ে যায় দর্জির গজগজ কাঁচির কাছে। কথা আজ আর কথা নেই, কথা আজ কথার কথা, কথাগুলো দাঁতের প্লেটে পেস্টের ফেনা। 

রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

এখনো আছি

বাসে খুব একটা ভ্রমণ আমার করা হয়ে ওঠেনি। ভ্রমণযান হিসাবে নৌকা আর ট্রেন সবচেয়ে প্রিয়। নৌকার সাথে পরিচয় মায়ের পেট থেকে। যদিও নানাবাড়ি ঠাকুরদাদার বাড়ি থেকে অল্প দূরত্বের পথ তবুও মা আমার নৌকাযানে  আসা-যাওয়া করতো। অবশ্যই বর্ষার সময়।

মাসির বাড়ি দুইভাবে যাওয়া যায়। পায়ে  হেঁটে এবং নৌকাযানে। কখনো আমাদের বাড়ির ঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ করে সরাসরি মাসির বাড়ির ঘাটে, আবার কখনো লোকাল নৌকাযানে। লোকাল নৌকাযানটি বাইশ মৌজা বাজারে নোঙর করে। তারপর বাকি পথ পায়ে হেঁটে। বাকি পথ বলতে প্রায় ছয় সাত মাইল পথ।

আমি আর আম্মা হাঁটা ধরতাম। আম্মা অনেক দ্রুত  হাঁটতে পারে। অনেক দ্রুত। প্রতিযোগিতা করে হাঁটতো। চোরা প্রতিযোগিতা। সামনের মানুষটাকে টার্গেট করে তার সামনে এগিয়ে যাওয়ার তীব্র চেষ্টা। তাতে আম্মা সফলও হতো। একটি লোককে অতিক্রম করার সাথে সাথে আম্মা আর আমি মিলে হাসতাম। মা ছেলের বিজয়ী হাসি। অবশ্যই এই হাসির কারন পৃথিবীর মানুষের জানবার কথা নয়।
নৌকা থেকে জলের দৃশ্য অসাধারণ। হযরত আলীর নৌকা। আমাদের ঘাট থেকে দুটি নৌকা বাইশ মৌজার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। মলাই মিয়ার নৌকা আর হযরত আলীর নৌকা। হযরত আলীর নৌকা বামন টাইপের শক্তিশালী। তাই হযরত আলীর নৌকাটি আমাদের খুব প্রিয়। আমি ছাঁদে, টিনের ছাঁদে বসে জলের খেলা দেখি। মেঘনা নদীতে যদিও তেমন স্রোত নেই আজ মনে হয় কিন্তু তখন মেঘনা নদীর স্রোত মনে বিশেষ এক থ্রিলিং তৈরি করতো। তিমি মাছ লাফ দিয়ে দিয়ে নৌকার এক পাশ থেকে আরেক পাশ গিয়ে পড়তো। জলরং ঘেষা কালো তিমির।
মাছরাঙা,  তাদের মাছশিকার। আকাশ থেকে হঠাৎ করে চিলের আক্রমণ। মাঝিনৌকা, তাদের  মাছধরা। লালপুর গ্রাম থেকে ভেসে আসা শুঁটকি শুঁটকি গন্ধ। পালতোলা নৌকার জলে-বাতাসে ভেসে চলা। আন্ডার প্যান্ট পড়ে বের বাওয়া জেলেদের হাসির বিন্দু বিন্দু দৃশ্য।  অনেক অনেক, আরো আরো মনমাতানো নয়নাভিরাম দৃশ্যকর্ম দেখে কখন যে বাইশ মৌজা বাজারে পৌঁছে যেতাম তা বলতেই পারতাম না। তারপর মাসির বাড়ি উদ্দেশে যাত্রা  অর্থাৎ কৃষ্ণনগর গ্রাম। অসম্ভব সুন্দর গ্রাম। বাঁশঝাড় প্রচুর। বাঁশপাতার সাথে বাতাসের সম্পর্ক হলে একধরনের সুর উৎপন্ন হয়ে থাকে যেখানে কৃষ্ণের বাঁশি জীবন্ত। এক কথায় বললে গ্রামটি সবুজের সন্তান, মানুষ সবুজসন্তানের উপাদান। এই গ্রামেই আমি কৃষ্ণনামের সাথে পরিচিত হয়, পরিচিত হয় রাধার কান্নার সাথে।

বাসে খুব একটা ভ্রমণ আমার করা হয়ে ওঠেনি। ভ্রমণযান হিসাবে নৌকা আর ট্রেন।

ট্রেনে আমি বসা। আমার পাশে এক মুরুব্বি লোক। আমি তাকে বসতে দিলাম। আমি যেখানে দাঁড়ানো তার পাশে একটি সিট। শোভন চেয়ার। দুইজন একসাথে বসা যায়। দুইজনই বসা। একজন মেয়ে, একজন পুরুষ।
হঠাৎ দেখি মেয়েটি কী যেন খুঁজছে। নাকফুল খুঁজছে।
পুবাইল স্টেশন চলে গেল, ঘোড়াশাল চলে গেল, টঙ্গী স্টেশন চলে গেল। নাকফুল পাচ্ছে না  তো পাচ্ছে না। আশেপাশের সবাই চেষ্টা করলো। সবার চেষ্টা বৃথা। আমি তখনও চেষ্টায় নামেনি। আমি চেষ্টা করার আগে মনে মনে মন্ত্রপাঠ করে নিলাম-- ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মুকসুদুল মোমিন কিতাব থেকে মন্ত্রটি শেখা। এই কিতাবটি বাংলাদেশের নারী মুসলমানদের খুবই প্রিয়। আমার বড় দিদি বিশ টাকা দিয়ে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে কিনেছিলেন। ফেরিওয়ালা হয়তো কোরআন শরীফ চিনে না কিন্তু মুকসুদুল মোমিনকে চিনে। কারন তাতে অর্থনৈতিক বেনিফিট আছে। মুকসুদুল মোমিনে শিখেছিলাম কোনো জিনিস হারিয়ে গেলে পাওয়ার জন্য কোন মন্ত্র পড়তে হয়, সম্মান বৃদ্ধির জন্য কোন মন্ত্র পড়তে হয়, কোনো নারীর সাথে প্রেম করতে হলে কোন মন্ত্র পড়তে হয়।

আমি মন্ত্রটি নিরানববই বার পড়ে নিলাম। তারপর মেয়েটিকে বললাম পা সরাতে। ও মা! পায়ের নিচে ছোট্ট নাকফুলটি।

মানুষ সকল অবাক!

মেয়েটি বিমানবন্দরে নেমে গেল। আমাকে একবার ধন্যবাদও দিলো না। শুধু নেমে যাওয়ার সময় একবার ফিরে তাকালো। দেখলাম তার চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু জল আমার দিকে চলে আসতেছে। আমি সেই জল নেবার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। খোদার কসম,  তার চোখের জল গ্রহণের ক্ষমতা আমার ছিল না!

অনেক দিন পর মেয়েটির সাথে আমার দেখা । আমাকে সে চিনতে পারেনি। আমার একটি সমস্যা আমি যা মনে রাখি তা ভুলতে পারি না। দাঁড়ি কমা বিন্দু বিসর্গ পর্যন্ত মনে থাকে। ঘটনা মনে করে দেয়ার পর সে চিনতে পারে। তারপর ছোট্ট একটি সূর্য তার মুখে উদিত হয়। সূর্যের তাপ অধিক ছিল না বলে আমি তৃষ্ণার্ত হইনি।  কিন্তু তার মুখে সূর্য দেখবো বলে আমি ততদিন পর্যন্ত বেঁচে  ছিলাম। এখনো বেঁচে আছি....

বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫

স্বচ্ছ

স্বচ্ছ ছিল ভোরের কুয়াশা
শীতের কবোষ্ণ উষ্ণ রোদ
তুসকের তলে শুয়ে থাকা ভোর
আম্মার হাতে জন্ম নেয়া পিঠাসকাল
আজকের সময় খ্যাত, বিখ্যাত, দগ্ধ, বিদগ্ধ
আজকের সময় চায়ের রঙে রঙিন
তবু যেন জীবনবোধ কনসার্টের সুরে কৃত্রিম, এক আকাশ সমান পরাধীন এবং পরাধীন এবং পরাধীন 

বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

যত গভীর ততই জলাভূমি
জলাভূমির গভীরে হৃদয়ের রান্নাঘর 

শ্মশানে

শ্মশানবৈরাগ্য আমার গোধূলির রাস্তায়
সেই সকাল, সেই দুপুর, সেই সন্ধ্যা
চিরচেনা একই ঘোর বারংবার

ফানুস আউস তুলে, আউসে বেঁচে থাকে মন

তবু বেঁচে থাকা কেন?

কেন কলকাকলি আর নীরবতার দ্বীপে মধ্যবিত্ত জীবন?

অসীম আকাশের পেছনে আকাশ, অসীম ব্যবধানের ভেতর অসীম ব্যবধান,
ব্যবধানে সমাধানে যেখানে হৃদয়প্রতিম বন্ধু সেখানে জন্মে হৃদয়বিস্ময়-- মরিবার স্বাদ-- জন্মিবার চক্রাকার অভিলাষ।
তবু কেন আশা জাগে কলাপাতার সবুজ ভাঁজে-- জানিবার চাই,

প্রশ্নটা আসল।

প্রশ্ন তুমি শ্মশানবৈরাগ্য আমার হৃদয়ের গহীনে জানাযায় 

শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

এক শব্দটি ভুল

আল্লা প্রথমে রোবট বানালেন। রোবটের কোরানিক নাম ফেরেশতা। একসময় ফেরেশতার বিবর্তন ঘটে। বিবর্তিত রোবটের নাম শয়তান।
শয়তান আর ফেরেশতাকে সামনে রেখে আল্লার ইচ্ছা হলো তৃতীয় কোনো এক শক্তির অবয়ব দিবেন। আল্লা বানালেন ইনসান।
মানুষ ফেরেশতা কিংবা শয়তানের মতো রোবট নয়, মানুষ এক স্বাধীন প্রাণি অনেকটা পাখির মতো, যে পাখি  খাঁচা থেকে বের হয় স্বাধীনতার আশায় কিন্তু  আকাশ নামক খাঁচায় আবারো প্রবেশ করে। এইভাবে খাঁচা থেকে খাঁচায়, বাসা থেকে বাসায় পাখিদের জীবন, মানুষের জীবন। 

বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

একা একা


একা চলা একটি যোগ্যতা।
একা চলা এক অসুস্থতার নাম।
অসুস্থতা কেমন করে যোগ্যতা হয়ে ওঠে তা যে একা চলে সেই কেবল জানে।
মানুষ তো ব্যবসায়ী, হৃদয়ের বিনিময়ে সমাজ অদল বদল করে। তর্কব্যবসা তোমাদের ভালো মানায়, আমি বসে থাকি কোনো এক রুমে আমার প্রভুর সাথে গোপন অভিসারে যেখানে রফরফ যায় না, যেতে পারে না। তর্ক এক পাশবিক নেশা বিষন্ন নেশার মতো। এক কাপ পরাজয় ঠোঁটে নিয়ে শুয়ে থাকি নিস্তব্ধতার বিছানায়। 

বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫

আগুন ফিরে এলো

লোকটি মানুষের কথা ভাবে, সমাজের কথা ভাবে। লোকটি সমাজের পরিবর্তন চায়। লোকটি সমাজ এবং মানুষকে চিনে। লোকটি সমাজ এবং মানুষের মঙ্গল কামনা করে। কোনো মানুষের অসঙ্গতি দেখলেই লোকটি আস্তে করে মানুষটিকে সতর্ক করে দেয়। মানুষও সতর্ক হতে বাধ্য। এইভাবে লোকটি মঙ্গলের মানদণ্ড হয়ে ওঠে।

একদিন আগুনের সাথে লোকটির দেখা।

ভাই আগুন, তুমি অনেক ক্ষমতাবান, তবে আমার একটা কথা আছে।

কী কথা?

দগ্ধ করা বাদ দাও, প্লিজ দেশে ফিরে যাও।

লোকটির কথা শুনে আগুন দেশে ফিরে গেল। আগুন দেশে ফিরে যেতে চায়নি, তাকে ফিরে যেতে বাধ্য করা হলো।

তারপর থেকে লোকটির বাড়িতে রান্না- বান্না সব বন্ধ, অফিস আদালতের কর্মচারীরাও সব চুপচাপ, তাদের চোখের নিচে পুষ্টিহীন জলের দাগ

লোকটি যেহেতু মানুষের মঙ্গলের চিন্তা করে সেহেতু সে আবার আগুনকে ফিরিয়ে আনতে গেলে। আগুন আবার ফিরে আসলো। তবে পৃথিবীতে না, লোকটির মনে। 

মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫

এক হাত

ঘর থেকে বের হলেই বারান্দা
বারান্দা থেকে মাটিতে পা রাখলেই পৃথিবী
পৃথিবী থেকে এক হাত দূরে আমার বাড়ি
এই এক হাত পথ পাড়ি দিতে জীবনের সমস্ত আয়ু খেয়ে ফেলে সাধু, সন্যাস, দরবেশ আর কালা মিয়ার বাড়ির বন্দী ডাহুক 

মিছামিছি

সাবের চোখে মাঝির জীবন মিছে
মাঝির চোখে সাবের জীবন মিছে
মিছামিছির খেলায় সব কিছু মিছে
সত্য তাই বাষ্পের শরীর শিশির কণার জীবন
অস্ত যায় না মৃত্যু খেলা, মেলা থেকে বেলা, বেলা থেকে মেলা 

স্বাগত রোদের ভেতর

বোধের ভেতর ভাবনা গো আমার কালে কালে তুমিই মহান
তোমার ভেতরে থাকে পালে পালে অসুর লাল নীল গোলাপী রঙের একঝাঁক বুদবুদ
বেদম বেদনাধরা একাধিক লোভ
কাল থেকে কালে মান থেকে মানে তুমি এক সরব প্রাণ
ছেলাকুছি ফল যৌবন লাল হলে পাখিদের খাবার
ভাবের দরজায় স্বভাবের তালা
স্বাগত রোদের ভেতর সাপের খেলা
ছেলাকুছি ফল গো আমার পলিফনিক উচ্চারণ তোমার ন মানায়
যৌবন ফলে বন সবুজ হলে বাঁশি বাজায় পুরুষ কানাই

শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৫

গভীর রাত

গভীর রাত। গভীর অন্ধকার। গভীর নীরবতা। গভীর এক পোকা বিষ ঢালছে মাথা থেকে পা, পা থেকে মাথা। ট্যাব থেকে নেমে আসা জলের কলকল ধ্বনি জলবিষ হয়ে কামড়ে ধরছে বাতাসের আত্মা। একটু পর পর রেলওয়ে স্টেশন থেকে উড়ে উড়ে আসছে ঘণ্টার ঢং ঢং শব্দ যেন পৃথিবীর প্রথম এবং শেষ শব্দদূষণ।

কুকুর ডাকছে শব্দের ভেতর। কুকুর ডাকছে দেহের ভেতর। ট্রেনের ঝকঝক ওয়াজ শরীর জাগিয়ে দিচ্ছে বারংবার।

সারাদিন দূরে ছিল দরজার দুটি অংশ। গভীর রাত তাদের মিলনের বৈধতা দিয়েছে। তবুও রেজা মরে জল পিপাসায় পাশে নিয়ে নদী মেঘনা! 

বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫

মা দিবস

কথাযুদ্ধের কাছে অনেকেই অসামান্য,অথচ হৃদয়ের কাছে তারা সামান্য কেরানি মাত্র। আম্মা তোমাকে ধন্যবাদ। অবশ্যই সম্পর্কের কাছে ধন্যবাদ কখনো জীবন রচনা করতে পারে না, ধন্যবাদ সম্পর্ক তৈরিতে সহায়তা করতে পারে মাত্র। আম্মা তুমি একটি পৃথিবী দিয়েছো, শিখিয়েছো পৃথিবীর সংবিধান। পৃথিবী, সংবিধান আর তোমার সামনে আমি সম্পূর্ণ নতুন এক অস্তিত্ব। আমার এই অস্তিত্বের নাম নাকি মানুষ।

আমার জন্ম তোমাকে মা বানালেও আমাকে সন্তান বানাতে পারেনি। কয়েকশতবার মা মা বলে ডাকলেই সন্তান হওয়া যায় না, সন্তান হতে গেলে মায়ের মতো হতে হয়, সৃজনশীল। সৃজনশীলতার সাথে যখন তেমন কোনো চরম ত্যাগ এসে জড়িত হয় তখন মা রচিত হয়ে থাকে, তখনই পৃথিবীতে নেমে আসে তেমন কোনো প্রিয় ডাক 'আম্মা'।

আম্মা, আজ মা দিবস। আজ তোমার এবং আমার বিদায় দিবস। আজই তোমাকে ছেড়ে আমি এই পৃথিবীতে নেমে আসি। আজ পৃথিবীর মানুষ বলেছিল আমি নাকি তোমাদের প্রতিনিধি। আম্মা তোমার পৃথিবী আমাকে রাখতে পারেনি। তাই মানুষের পৃথিবীতে এসে আমি তীব্র কণ্ঠে চিৎকার দিয়েছিলাম ওঁয়া ওঁয়াও ওঁয়া। মানুষ আমার ভাষা বোঝেনি। তাইতো আমি যখন আপন পৃথিবী হারানো ব্যথায় কাতরাচ্ছি মানুষ তখন আল্লাহকে মহান করার কাজে ব্যস্ত।
হায়রে পৃথিবী! হায়রে পৃথিবীর মানুষ!! কে বুঝে কার দুঃখ, কে বুঝবে চোখের জলে কেন শ্যাওলা পড়ে না!!!
আজ আমার জন্মদিন,
আজ তোমার জন্মদিন,
আজ আমার এবং তোমার জন্মদিন। আমি ডেকেছিলাম মা, আর তুমি পেয়েছিলে সন্তান।
আজ আম্মার আর আমার  অপূর্ব ঐকতান। 

এই জীবন তোমার আমার

আমাদের প্রথম পরিচয় কোনো এক সন্ধ্যায়। কোনো এক সন্ধ্যায় আম্রকুঞ্জের সুব্রত পাতার সঠিক নিচে। সোডিয়াম আলো মদনমোহন বেদনায় ডায়েরি লেখায় ব্যস্ত। আমাদের পেছনে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি। আমাদের সাথে ঝিঁঝিপোকার গ্রাম্য ডাকাডাকিও মাত্রাগত বায়না ধরে। তোমার চোখে সোনালি তাপ। আমার চোখে এক নদী বরফ। রবীন্দ্রনাথকে সাক্ষি রেখে তোমার চোখকে আমার চোখের বন্ধু করেছি।

তুমি বন্ধু চিকন কালা আমার নাইয়্যা ঢেউ
নৌকা চলে জলের তালে তুমি নৌকার ছেও

আম্রকুঞ্জের অসংখ্য নীরবতার মাঝে সরব কেবল দুটি প্রাণ। প্রাণে প্রাণে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথের গান।
তোমার চোখের কাছে যেতে না যেতেই আরেকটি চোখ জাস্ট একটি দৃশ্য হয়ে আমার চোখের সামনে। সেই চোখটি নিথর কোমল। চোখটিতে সাইক্লোন, টর্নেডো নেই, কোনো এক অচেনা বসন্তকাল বিরাজ করে বারোমাস।

চোখটির সাথে পরিচয় আমার দুই বছর আগে। চোখওয়ালা মানুষটি চা-বিক্রেতা। সাধারণত দিনে এক-দুই কাপ চা খাই। তার কাছে গেলেই কাপের পর কাপ চা খেতে থাকি। চা খাওয়ার ছুঁতোয় তার চোখ দেখি। তার চোখে হেলেনকে দেখি, তার চোখে আমি লায়লিকে দেখি,
তার চোখে বনলতাকে দেখতাম।

একদিন চোখটি বিক্রি হয়ে যায়। দোকানে যাই তবে এক কাপ চা খাই। অনেক বার চোখটি খুঁজতাম, প্রত্যাশা আশা হিসাবেই থেকে যেতো, প্রাপ্তি কেবল শুন্যতায়।

ঠিক একদিন চোখটি আবার ফিরে আসে। আমিও আবার চা খেতে যাই সকাল-সন্ধ্যা। সেই চোখ আর এই চোখ এক না। আমার আর তার চোখের মাঝে একটি কিন্তুর দেয়াল গড়ে ওঠেছে খুব শক্ত করে।  জানি কাছে থাকার জন্য ভুল কখনো দেয়াল হয়ে থাকতে পারে না বরং দূরত্ব রচনা করার জন্য দেয়াল প্রতিষ্ঠা করা লাগে। তারপরও এই সমাজ, এই মূল্যবোধ ক্যানসারের মতো রক্তের, চিন্তার পরতে পরতে বিস্তার করে আছে।

এখন আমি চাইলেই চোখটিকে দেখতে পারি, চোরাদৃষ্টি বিনিয়োগ করতে হয় না, আজ কিন্তু চোখটি আমাকে একের অধিক কাপ চা খেতে বাধ্য করতে পারে না।

তারপর যখন পুরাতন দৃশ্যকে সনাতন  করে তোমার চোখের দিকে তাকালাম তখন তোমার পোষা সাইকেলের সামনের চাকার কথা মনে পড়লো, নিশ্চিত হলাম সামনের চাকাটি পেছনের চাকার বন্ধু -- একজনের ইচ্ছা ছাড়া আরেকজনের ইচ্ছা পরিপূর্ণ পঙ্গু। তোমার চোখের কাছে গেলাম, চোখে চোখ রেখে শপথ নিলাম এই জীবন তোমার আমার, এই জীবন আমার তোমার। 

বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫

সরি এবং সরি

আজকে তোমাকে বললাম সরি। কালকে তুমি বলবে সরি। সরি এবং সরি। তুমি এবং আমি। আমাদের সরির নাম সম্পর্ক, আমাদের সরির নাম প্রেম, আমাদের সরির নাম আরো কয়েকটি রাতজাগা, ক্লাস ফাঁকি, উঠোনের প্রান্তে সময়ের কার্নিবাল।
তাহলে প্রিয় তাইতো ভালো
সরি এবং সরি বেঁচে থাক
আগুনের দেশে জলপ্রভাত 

সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৫

একটি রাত

একটি রাত একটি দীর্ঘ প্রতিক্ষার নাম
একটি রাত তোমার আমার পরিচয়ের নাম
একটি রাত কোনো এক মৃত্যুদিবসের নাম
একটি রাত আমাদের অভিমানের নাম
একটি রাত একটি ঘুমের নাম
ঘুম ঘুম চোখ, চোখে উলঙ্গ আগুন 

রবিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৫

গোল্লাছুট

ভালোবাসার গোল্লাছুট আর খেলি না
তোমার কথায় তবুও বন্ধু দাড়িগোফ আর ফেলি না 

চোখের ভেতর

চোখের ভেতর তারা আছে জেনেও আকাশের তারা এক আকাঙ্ক্ষার নাম 

চাঁদেরবুড়ি!তোমার সাথে একলক্ষ আড়ি!!

অতীত মানুষ

অতীত মানুষকে বিভ্রান্ত করে। নদীর স্রোত, চাঁদের জোছনা অতীতমুখী নয়। মানুষই অতীতমুখী। ইটের পর ইট সাজিয়ে যেমন একটি দালান তৈরি হয় তেমনি অতীতের পর অতীত সাজিয়ে তৈরি হয় বর্তমান। বর্তমানই আজকের সমাজ।

দালান থেকে কয়েকটি ইট সরিয়ে ফেললে দালানটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য কিন্তু বর্তমান থেকে অতীত সরিয়ে ফেলা যায় না। অতীতকে ব্লেন্ডারিং করেই বর্তমান। আখের রস পান করার পর তার ছোবরা নিয়ে টানাটানি পশুপাখির কাজ, মানুষ পশুপাখির চেয়ে একটু নয়, অনেকটা এগিয়ে। 

চাল চিত্রে চলচিত্র
মান চিত্রে মানচিত্র 

পেছনের বেঞ্চ

অন্ধকারের ভেতর গাঢ় শব্দ কৃমির মতো দেহ বিস্তার করে পড়ে থাকে সবপাশ।  চরিত্রবান অন্ধকার চরিত্রবান আলোর সাথে বন্ধুত্ব করে। এমনি করে সময় চলতে থাকে সারাৎসার। কলমের কালি কেবল ফুরিয়ে যায়। লেখা হয় না শব্দ, শব্দের ভেতরের ভাষা। ভাষাহীন এক চোখ শাদা শাদা কাফন আঁকা ডেডবডির ইতিহাস লিখে। ভাষাহীন কাফন গাঢ় অন্ধকারের দিকে ছুঁড়ে দেয় একফোঁটা জল। জল তো পেছনের বেঞ্চে বসা সেই ছাত্র যার মস্তিষ্কে ভর দিয়ে টিকে থাকে পৃথিবী। 

একটি ভুল

আমি আর তুমি। একদিন তুমি আর আমি। আমি-তুমি আসলেই এক আধ্যাত্মিক শব্দ। যার মহামায়া থেকে বের হওয়া যায় না।
একদিন আমরা ট্রেনে। সুপার ফার্স্ট ট্রেনের কামড়ায়। আমাদের সাথে লোকটি। লোকটির সাথে তার বনলতা। তোমার মাথা আমার বিশ্বস্ত কাঁধে। বনলতা আমাদের সাথে বিশেষ করে আমার সাথে কথা বলতে শুরু করে। আমার কণ্ঠ শুনে লোকটির কণ্ঠও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারপর লোকটির পাশের লোকটি আমার সাথে কথা বলতে চায়। আমার কান তার মুখের কাছে। ফিসফিস করে কিছু একটা বললেন। আমার কান আমার জায়গায়, তার মুখ যখন তার জায়গায় তখন আমি এবং সে মুচকি হাসি দিলাম। আমাদের হাসি দেখে তুমি অবাক হলে। কারণ বয়স্ক লোকের সাথে এমন নাট্যজন আচরণ তুমি আগে কখনোই দেখনি।

অবাক হওয়া তোমার নেশা। অবাক হওয়া নিয়ে তুমি বেশ গল্প তৈরি করতে পারো।
তুমি আরো অবাক হয়েছিলে লোকটি এবং তার বনলতা যখন আমার কাছে জমি বিক্রি করতে চাইলো। তারা আমার মোবাইল নাম্বারও নিলো। নাম্বারের একটি ডিজিট ভুল ছিল, ট্রেন থেকে নামার পর বুঝতে পারি।

তারা হয়তো আজও আমার কাছে জমি বিক্রি করতে চায়, বার বার হয়তো আমাকে খোঁজে। কিন্তু আমাকে তো তারা পাবে না, আমিও পাবো না। আমাদের যোগাযোগের মাঝখানে মোবাইল নাম্বারের একটি ভুল ডিজিট মহাকালের ভুল হয়ে দূরত্ব রচনা করে চলেছে। একটি ডিজিট!

জীবন থেকে জীবন একটি ভুলের কারণে কত দূরে চলে গেলো। একটি ভুল!

মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৫

স্রোত

নদীর স্রোতের মতো মানুষের জীবন। কোনো স্রোত মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হবে, আবার কোনো স্রোত বঙ্গোপসাগরের সাথে।
মেঘনা নদীর সাথে যে স্রোত মিলিত হবে সেই স্রোতের নিজেকে বড় ভাবার কোনো কারণ নেই, বঙ্গোপসাগরের সাথে যে স্রোত মিলিত হবে তারও অহমিকা প্রকাশের কোনো উপায় নেই। কারণ দুই স্রোতেরই উদ্দেশ্য মিলিত হওয়া।

রোদ! তোমাকে পোড়াবে এমন বৃষ্টি কোথায় 

সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৫

ট্রেনের জানালা আমার আত্মার বান্ধবী-- দেহ থেকে দূরে মন থেকে নয় 

ভণ্ডামি

Twinkle Twinkle Little Star

সূর্যের ভণ্ডামি মানি না তো আর

Up above the world so high

মানুষের শান্তি চাই চাই

Like a dazzle in the sky

রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৫

নগ্ন আকাশ

আমারে না জানাইয়্যা পৃথিবী ঢুক্কু ঢুক্কু খেলে
শ্রাব্য-অশ্রাব্য শব্দের মাইদ্যে আমি
টুয়াপাতি খেলে যায় কানা ঘোষ স্বামী
তরও আকাশ ছিল আমারও ছিল চোখ
চোখভরা নগ্ন আকাশ হাতভরা দুহ 

শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫

জীবন

জীবন আমার সময়ের কোন তীরে তোমার বাড়ি?


কতগুলো সময় মিলে একটি জীবন হয়ে ওঠে?


জীবনের পিতামহ কি আপনি সময়?


ছায়া আর জীবন কি দুধভাই? 

শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫

Dark

When every dark flies over our eyes we are ready to reckon the reality of light 

বার বার

ষড়্ঋতু আমার তাকে দিয়েছো বার ঋতুমন
সকালে জন্ম তার সকালেই মরণ

জল আর কুমির

জলে থেকেই কুমিরের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। কারণ কুমির জলেই থাকে। গীতাঞ্জলি সিনেমা হলে কুমিরের দৃশ্য পাওয়া যায়, কুমিরকে পাওয়া যায় না। 

কাভি না কাভি

শীতার্ত হৃদয়ে অনন্ত কালের জমানো বরফ,আস্তে আস্তে পোষা হৃদয় বরফের পাহাড় হয়ে উঠে, উষ্ণ আলিঙ্গনে গলে যেতে চায় হৃদয় চিরতরে।

কাভি না কাভি, কাহি না কাহি, কোয়ি না কোয়ি তো আয়েগা
আপনা মুঝে বানায়েগা

দৃষ্টির কোনো চাষযোগ্য জমি নেই। আজ এখানে, কাল সেখানে, পরের দিন ঐখানে নোঙর ফেলে চলে। দৃষ্টির একনিষ্ঠ আবাসিক জমির ভেতর একটা তৃপ্তির ঢেকুর।

কাভি না কাভি,কাহি না কাহি, কোয়ি না কোয়ি তো আয়েগা
আপনা মুঝে বানায়েগা

ভাড়াটে কথা আর ভালো লাগে না। কথা হবে ঘুমের চুলের মতো অগোছালো তবুও যেন প্রাণে প্রাণে মেশাল এক দাতব্য গজল।

কাভি না কাভি, কাহি না কাহি,কোয়ি না কোয়ি তো আয়েগা
আপনা মুঝে বানায়েগা

এক রাতের ভেতর আরেক অন্ধকার এসে হামলা করে, ডাকাতি করে নিয়ে যায় সিন্ধুকে রাখা সরল মুক্তা। এক রাতের ভেতর বন্য এক জোছনা চাই।

কাভি না কাভি ,কাহি না কাহি, কোয়ি না কোয়ি তো আয়েগা
আপনা মুঝে বানায়েগা

আমার ভেতর তোমারে চাই যে তুমি চোখের জলে মিটিয়ে ছিলে আমার আজন্ম তৃষ্ণা।

বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫

কুমড়া

একটি ভাতও প্লেট থেকে পড়া যাবে না।

পড়লে কী হবে?

একটি ভাত মরার পরের জীবনে একটি আস্ত কুমড়া হবে। কুমড়াটি  তখন পায়ু পথে ঢুকানো হবে। মাগো মাগো ভয়ে তখন  হৃদয় কেঁপে ওঠতো। আজও অপচয় করতে ভয় পাই। একটি ভাত সমান একটি কুমড়া!

আজকাল অনেক টাকাওয়ালা মানুষদের বাংলোতে যেতে হয় ; কখনো ডিনার, কখনো লাঞ্চ করতে হয়। জনাব টাকাওয়ালারা যতটুকু খায় তার চেয়ে বেশি অপচয় করে। তাদের অপচয় দেখে আমি কুমড়ার হিসাব করি। আর ভাবতে থাকি তাদের পাছার অবস্থা কী হবে!

তাদের পাছার অবস্থা হয়তো কিছুই হবে না। কারণ বড় বড় সাবদের বড় বড় মাথা। কবরে যাবার আগেই হয়তো মেইড ইন আমেরিকা জাতীয় ভ্যাকসিন নিয়েই কবরে যাবে ....

জলের বাড়ি

নদীর স্রোতে ঢেউ চলেছে
ঢেউয়ের বাড়ি কই
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
মেঘের বাড়ি কই

ঢেউয়ের টানে মেঘ চলেছে,
মেঘের টানে ঢেউ
আকাশ পাতাল জলের খেলা
জলের বাড়ি কই

জলের বাড়ি কুসুমবাগে ঘুমের আগে পড়ে
ঘুমের বাড়ি শ্যামবাজারে রাধাকৃষ্ণ করে  

গোলাপ নগ্ন বলেই গোলাপের দিকে চেয়ে থাকে বেশ্যা চোখ

বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৫

তোমাকে

তোমাকে দেখলে ভুলে যাই পেছনের চোখ
তোমাকে দেখলে ভুলে যাই কোটি কোটি দুঃখ
তোমার কণ্ঠে মিশে আছে হাজার বছরের সুখ 

মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৫

এমন বাংলাদেশ

বাংলাদেশের প্রধান প্রধান সড়কে ভ্যান চলে, বাস চলে, রিক্সা চলে, মোটর বাইক চলে, চলে আরো বিলাসবহুল গাড়ি। জগাখিচুড়ি রাস্তা। রাস্তা দেখেই বাংলাদেশের মানুষের মানসিকতা অনুধাবন করা যায়।জগাখিচুড়ি মানসিকতা। অর্থাৎ এখানে আদর্শের কোনো ঐক্য নেই। এখানকার মেয়েরা বোরখাও পড়তে চায়, আবার পার্কের অন্ধকারাচ্ছন্ন গাছের নিচেও বসতে চায়। আর ছেলেরা টুপি পড়বে, সারারাত ধর্মের কাহিনি শুনবে কিন্তু সকালে সালাত কায়েম করবে না।

জনাব পীর সাহেব মোনাজাত ধরেন মানুষের মুক্তির জন্য যতটুকু তার চেয়ে বেশি নিজস্ব দল ভারী করার জন্য। পীর সাহেবদের মধ্যে শত শত গ্রুপ। হযরত মাওলাদের মধ্যেও শত শত গ্রুপ। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে ফতোয়ার উপর ফতোয়াবর্ষণ করতে থাকে, কাফের ফতুয়া।

এখানে আছে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক ভাগে বিভক্ত। সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক ভাগে বিভক্ত। এখানে নারীদের জন্য আছে আলাদা স্কুল- কলেজ, বিত্তবানদের জন্য আলাদা স্কুল-কলেজ। ভিআইপিদের জন্য রাস্তায় কোনো সময় যানজট থাকে না। ফলে জ্যামে আটকে পড়া শিশুটির অসহায় চোখ কেবল দেখতে থাকে কেমন করে সা সা করে চলতে থাকে ভিআইপিবাহন।

বিভিন্ন উপায়ে যখনই নদীর পানি দূষিত হতে থাকে তখন দূষণ দূর করার কোনো সক্রিয় চেষ্টা থাকে না, চেষ্টা থাকে পানি দূষণকে  কাজে লাগিয়ে কীভাবে বিজনেস করা যায়। ফলে মার্কেটিং বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন পানি বাজারজাতকরণের প্রক্রিয়া।

নদী শুকিয়ে গেলে আনন্দে মিলাদ মাহফিল পড়ান দেবতা কুবের। কারণ শুকনো নদীর উপর তিনি  গড়ে তুলেন বহুতল ভবন।

আর তিনি এসি বাড়িতে ঘুমান, এসি গাড়িতে চড়েন, এসি শপিং কমপ্লেক্সে মার্কেট করেন। তিনিই তৈরি করেন এসি রেস্তোরাঁর তুলতুলে পরিবেশ। গ্রাম থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রটি তখন গণরুমের গিঞ্জি পরিবেশে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এসি রুমের স্বপ্ন দেখে। টিউশনি থেকে মাসিক টাকা আসলে এক বেলার জন্য এসিরেস্তোরাঁয় যায় আর দীর্ঘশ্বাসের ঢেকুর তুলে।

এখানে একদল মানুষ  রাজাকার রাজাকার বলে চিৎকার করে প্রমাণ করতে চায় আমরা দেশপ্রেমিক, আমরা প্রগতিশীল। কিন্তু দেশপ্রেমিক, প্রগতিশীলদের যখন  হত্যা করে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করা  হয় তখন তারা নিশ্চুপ।

এখানে তামাক চাষের নামে ধবংস করা হয় হাজার বছরের ভূমিউর্বরতা, তৈরি হয় পাটকলের জাদুঘর। সোনালি আঁশ , রূপালী শস্যকে রূপকথার গল্প হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। নদীতে বজ্র ফেলে ধবংস করা হয় মাছের খামার, প্রাকৃতিক মাছের খামার ধবংস করে তৈরি করা হয় ব্যক্তিগত মাছের ফার্ম।

গ্রামের খোদাভীরু, সহজ সরল মানুষ গাছের দুটি কাঁঠাল থেকে একটি কাঁঠাল নিয়ে যায় পীরে কামেলের দরবারে। কাঁঠাল পেয়ে পীরে কামেল মহাখুশি। পীরে কামেলের তরতাজা চোখ একবারও দেখে না সরল মানুষটির অপুষ্টিকর মুখ। হযরত মাওলানা তিন ঘণ্টা আসমানের ওয়াজ করে তিরিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা পকেটে ভরে। অথচ একবারও ভেবে দেখেনি গ্রামের রিক্সাচালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, জেলে, প্রান্তিক কৃষক কোথা থেকে সংগ্রহ করলো এতোগুলো টাকা।

এখানে সাহিত্য মানে দলবাজি। এখানকার সাহিত্যের নাম হোসেন মিয়া, হুজুর কেবলা, মজিদ,ভিখু। তালেব মাস্টারের চোখের জল কেবল দুদণ্ড করুণা পায়, কখনো পরিবর্তনের স্লোগান হয়ে ওঠে না।

এখানকার সিনেমায় পুলিশ আসে দৃশ্যের শেষ পর্যায়ে। গান, সেক্সুয়াল দৃশ্য, ফাইটিং প্রভৃতি পর্ব সামনে রেখে সাজানো হয় মুভির প্লট, উপাখ্যান। নায়িকাকে প্রথমে অভিনয় করতে হয় প্রোডিউসারের সাথে একান্ত গোপনে কোনো এক আলো- আধাঁরি রুমে। তারপর মডেল বিট দেখেন এমন কিছু জার্নালিস্টের সাথে।

গ্রাম্য মোড়ল বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখে সমস্যা। এক পক্ষকে বলে তোমার সাথে আছি, কোনো চিন্তা করো না। আরেক পক্ষকে বলে আমরা আছি না, দেখবো তো কী হয়। এইভাবে সমস্যাকে সামনে রেখে তারা আদায় করে মোড়লফায়দা।

এখানকার যৌনশিল্পীরা সবচেয়ে অসামাজিক, নিচু জাতের মানুষ। অথচ সকালে মর্নিং ওয়াকের নাম করে তাদের কাছে হাজিরা দিয়ে আসে সমাজের সবচেয়ে সামাজিক মানুষটি।

টেলিভিশনে প্রোগ্রাম সাজানোর নামে চলে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনী। বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে প্রোগ্রাম দেখানো হয়। প্রোগ্রামেও আস্তে করে পাখি পোশাকের বিজ্ঞাপন করা হয়।

যে রান্নাশ্রমিক ঘরের ভেতর কাজ করে সে হয়ে ওঠে মনিবের সেক্সুয়াল দাস। মনিবের পাশাপাশি সদ্য যৌবন প্রাপ্ত ছেলেটিও যখন তার আঁচল টেনে ধরে সে তখন ঘৃণা, লজ্জায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় চকলেট বিক্রি করে। শহরের ভদ্র মানুষটিও তখন চকলেট ক্রয়ের নামে তার হাত চেপে ধরে। একসময় বাধ্য হয়ে মেয়েটি নেমে পড়ে দেহ ব্যবসায়। তাদের দেহ ব্যবসার কাহিনির পেছনের ইতিহাস নিয়ে তবুও এখানে লেখা হয় না রিজারেকসন উপন্যাস।

ক্লাসের সব চেয়ে মেধাবী ছাত্রটি এখানে পেছনের বেঞ্চের মেম্বর। ধীরে ধীরে তাকে করে দেয়া হয় স্রোতহীন। স্রোতে থাকা তেলাপোকার ছানা হয়ে ওঠেন আমাদের স্মরণীয় সালাম বাবু।

এখানে সড়কদুর্ঘনার নামে সম্পূর্ণ করা হয় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। লাশের উপরে টিকে থাকে ক্ষমতার লড়াই। ঘটনার পর ঘটনা সাজিয়ে চাপা দেয়া হয় দুর্ঘটনার নিউজ।

এখানকার খাবার মাথাকে স্বাস্থ্যকর করে না, বুড়িকে স্বাস্থবান করে তোলে। মাথার আগে বুড়ি সামনে চলে আসে। পৃথিবীর সমান গোল বুড়ি নিয়ে তারা ফুটবল খেলে, আর গলা ফাটিয়ে বলতে থাকে আমিও কিন্তু আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়।

এখানে কেবল দেয়াল গড়ে উঠে,
এখানে কেবল গর্ত আর গর্ত। তবুও ফুল ফোটে, পাখি গায় গান, নদীর বুকে জাগে সাগরের টান।

সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৫

অপরাধ

ইটভাটার ধোঁয়া উড়ে যায়, উড়ে যাওয়া দেখে জেনেছি প্রথম মাফিয়াদের গোপন আস্তানার নাম আকাশ। কাতারে কাতারে ইটের লাশ আর আমাদের পুলিশের পিস্তল কামান রকেট লঞ্চার কেবল প্রস্ততির আদব শেখায়।
প্রস্তুতিতলার যথার্থ নিচে বেড়ে ওঠে রক্তবীজ মন্ত্রপাঠপূর্বক কারিসমায়।

অপরাধ! অপরাধ!! বলে চিৎকার করতে থাকুন। আপনাদের চিৎকার তাদের ছাদের নিচে লালিত হতে থাকবে কাল টু আগামীকাল।   

প্রেম একবার

কোনো মেয়ে যখন সত্যিকারের এক বন্ধু পায় তখন সে লাউয়ের ডগার মতো তরতরিয়ে আকাশমুখী হতে থাকে। বৃষ্টির স্পর্শ পেয়ে লাউয়ের ডগা যেমন সুস্থ সবুজ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে তেমনি মেয়েটিও শান্ত কোমল নদীর মতো কলকল, খলখল করতে থাকে যেখানে ঢেউ থাকে না, থাকে জীবনের স্রোত।

কোনো ছেলে যখন মনের মতো এক বান্ধবী পায় তখন সে হয়ে ওঠে বটবৃক্ষের মতো বিস্তারী। তার বিস্তারের শেকড় থাকে মেয়েটি।

কিন্তু দেহের মতো দেহ যেমন নেই তেমনি  মনের মতো মনেরও বড় অভাব।ফলাফলে এক জনের ঘরে আরেক জনের মন, এক জনের মনে অন্য জনের ঘর।

তাই সংসারকে ট্রেনের ঝকঝক ঝকঝক  আওয়াজ মনে হয় যেখানে শব্দটি কেবল শুনি, অর্থ বুঝি না, অর্থহীন সমাজ তা বুঝতে পারে না।

শিক্ষক

এই ছেলে বই-খাতা কোথায়?

স্যার, আপনি তো মাথা থেকে কথা বলেন, তাই আস্ত একটা মাথা নিয়ে এসেছি।

নারী-পুরুষ বাসর ঘরে যাবার আগে সমাজ নামক একটি তালা খুলে নিতে হয়। কবুল শব্দটি সেই তালার চাবি।

ছাত্র আর শিক্ষকের মাঝে কোনো তালা নেই, নেই কোনো কবুলচাবি।

কবুলচাবির ইঞ্জিনিয়ার আল্লামা হুজুর।

ছাত্র আর শিক্ষকের মাঝে কোনো হুজুর নেই। ছাত্র আর শিক্ষকের মাঝে হুজুর এলেই শিক্ষক হয়ে পড়েন দৈনিক মজুর।

এই ছেলে বই-খাতা কোথায়?

স্যার, বই-খাতায় বিদেশী কুকুর পেশাব করেছে, তাই রোদে শুকাতে দিয়েছি। 

রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫

আলো

আলো যখন পাতা হয়ে ছায়া দেয় ঘর থেকে ঘরে
রক্তের পা থেকে ঝড়ে পড়ে ইটের বাতাস
রং তবু ঢং হয়ে জেগে থাকে কালের সীমায়
নদীর তীরে বসে সাহসের আশা
কথার বুকে তবু জলের নেশা 

তিনি ক্লাসে

তিনি ক্লাসে। তার মুখভর্তি কালো চুল। তার ঠোঁটের দিকে দৃষ্টি ফেলে শান্তি পাই। তার ঠোঁট ওঠা-নামা করে, আমার চোখ তা অনুসরণ করে। তার ঠোঁটের আলপথে যে ভাষা বের হয়ে আসে তা কোনো প্রকারেই হৃদয়বাহী হয়ে ওঠে না।

মন আমার পড়ে থাকে জানালার মাংস ভেদ করে যে বটবৃক্ষ আকাশমুখী তার দিকে।
গাছের প্রাণ মাটি হলেও বটবৃক্ষের প্রাণ আধার। বটবৃক্ষের আনন্দ বিস্তার থেকে বিস্তারে, ডাল থেকে ডালে।
অসাধারণ পাখি সব করে রব বটগাছের ডালে, বটগাছের পালে। পাখি হয়তো জানে না বটগাছ শেকড়মুখী না, আকাশমুখী। বটগাছ আকাশমুখী বলেই তার দেহ থেকে পৃথিবীতে নেমে আসে অনাগত ছায়া, তার ছায়ার নিচে রচিত হয় পূজামণ্ডপের ইতিহাস।

পূজা, তুমি আমাদের মতো এতো ভাসমান কেন?

হয়তো ভাসমান হলেই বেঁচেবর্তে থাকে মানুষ অন্ধকার থেকে অন্ধকারে ঝিলাম নদীর জলে। পাগলা থেকে টেমসের মোহনা এক উদভ্রান্ত সারদাপথিক।

পথিকের ডানা কখনো ক্লাসের দেয়ালে আটকে থাকে না, উড়তে থাকে আকাশমুখী বটবৃক্ষের সাথে।
  

তাইতো

পৃথিবীর সব ঘোড়ারক্ষক শেক্সপিয়র হতে জন্মগ্রহণ করে না, অসংখ্য জমিদারের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই লেখক, রাখাল বালক মানেই বৃন্দাবনের কৃষ্ণ না 

তাই যেন

গভীর রাতে চাঁদের সাথে জেগে থাকে যারা
তারা কিন্তু মানুষ নয় নীল আকাশের তারা 

শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫

প্রিয় অসুখ

একটি বদঅভ্যাস প্রায় আমার সাথে দেখা করতে আসে। কেন আসে আজো জানি না। ধীরে ধীরে বদঅভ্যাসটি আমার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। অনেক শক্তিশালী এক জায়গা।

আমার কাছে বদঅভ্যাসটি এখন অভ্যাস। অত্যন্ত প্রিয় এক অভ্যাস। প্রিয়তার ব্যাখ্যা আমি খোঁজ করি না। অভিজ্ঞতার চোখ দিয়ে দেখেছি ব্যাখ্যার ভেতর ভালোলাগা, ভালোবাসা, প্রিয়তা অনেক অস্বস্তিবোধ করে। তাছাড়া সীমাবদ্ধ ভাষাপরিবারে ব্যাখা দিতে গেলেই গণ্ডগোল বাধে।

যেমন : ফুল কী? ফুল একটি গন্ধসমেত বস্তু ব্যাখ্যা দেয়া যেতে পারে। কিন্তু গন্ধ কী তার ব্যাখ্যা দেয়া এখন পর্যন্ত আবৃত।
গন্ধ একটি উপলব্ধি। ধরা যাক উপলব্ধি জায়গা থেকে কাউকে ম্যাসেজ পাঠালাম

Sometimes miss you much.
But why?
Think you know nothing and me too.

আমার উপলব্ধি যখন ম্যাসেজে জায়গা করে নিলো তখন উপলব্ধির জায়গা  অনেকটা হ্রাস পায়, ম্যাসেজ গ্রহীতা যখন পাঠানো ম্যাসেজ অনুবাদ করতে যাবে তখন মূল উপলব্ধি মাঠে মারা যাবে। তাই উপলব্ধিকে উপলব্ধি দিয়ে অনুধাবন করতে হয়।

আমার প্রিয় বদঅভ্যাস অর্ফে অভ্যাসটির নাম নির্জনতা। আমার পরে নির্জনতা আমার একমাত্র প্রেমিকা। আমি আর আমার প্রেমিকা একসঙ্গে থাকা মানে পৃথিবীর সময় অফ, সময়ের অফ ডিউটিতে আমাদের পিক আওয়ার সময়। চুপচাপ নিথর মনে একটি অজানা রুমে পড়ে থাকি। চোখ মেলে দেখি পৃথিবীর দুই -তিন দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে।

নির্জনতা আমাকে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েই উপলব্ধি করতে পারি পৃথিবীর গতি। পৃথিবীর গতির কাছে প্রত্যেক মানুষ একরকমের পোকা যার গতির মোহনায় মানুষ নিজেকে হারায়, দলছুট হয়ে পড়ে, অনেক সময় পাগলা কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে।

বাঘ একা হলে যতটুকু নিরীহ পিঁপড়া একা হলে তার চেয়ে বেশি অসহায়। নির্জনতা আমাকে পিঁপড়ার মতো একা করে দেয়, পিঁপড়ার মতো নিরীহ করে তোলে। মানুষ আসলে নিরীহ, অসহায়। তাই প্রতিনিয়ত তাকে শক্তির পরীক্ষা দিতে হয়।প্রতিনিয়ত অস্ত্রের সামনে থেকে নিজেকে শক্তিশালী প্রমাণ করতে হয়। কোনো প্রকার বোমা, অস্ত্রের সহায়ক ছাড়াও বাঘ কিন্তু রয়েল বেঙ্গল টাইগার। 

বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৫

কুম্ভকর্ণ

কুম্ভকর্ণ তপস্যা করবে সীমান্তের বিন্দু থেকে বিসর্গ পর্যন্ত। আর একটু বেশি হলে কমলালেবুর শিরা থেকে উপশিরা বরাবর। কখনো সীমানা ক্রস করা যাবে না। তবু সীমানার বাইরে দেখেছিলাম কুম্ভকর্ণের সাধন নৃত্য। দেখেছিলাম ব্রক্ষ্মার গভীর ষড়ঙ্গ খলকৃত্য।

কুম্ভকর্ণ ভুলে যাবে না পিতার অবদান -- অনন্ত জীবনের পরিবর্তে অনন্ত ঘুমের  দান।

তপস্যা, আন্তরিক তপস্যা কুম্ভকর্ণকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে ঘুমের দেশে। তারপর থেকে অতঃপর , অতঃপর থেকে নির্বাসিত মানুষের চিন্তাশীল সমাজ। 

প্রশ্ন

কিছু প্রশ্ন থাকে যা উত্তরের চেয়েও সুন্দর 

বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৫

রাতে

রাতে দলে দলে ঘুম নেমে আসে 

ঋতু

আজকাল বর্ষা হয় না। আমার ছোট্ট কালে বড় বড় বর্ষাকাল দেখতে পেতাম। বর্ষা আমার প্রিয় ঋতু। বর্ষার সাথে সাথে  শীতকালও আমার প্রিয়। প্রিয়দের মধ্যে আমি কখনো ক্লাস নির্ধারণ করি না। কারন ক্লাস নির্ধারণ অপ্রিয় কাজ।

আজকাল শীতকালটাও তেমন করে আর আসে না। সেও যেন কেমন বৃদ্ধ হয়ে গেছে।

শীতকাল আর বর্ষাকালের বৃদ্ধ বয়সে এখনো আমি যুবক।

এক যুবক বৃদ্ধ হবে বৃদ্ধ বয়স গায়ে মেখে! 

মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৫

তোমার কণ্ঠ


তোমার কণ্ঠ নদীর স্রোতের মতো কল্লোলপ্রবণ। গানের কণ্ঠের কথা বলিনি। বলেছি কথা বলার কণ্ঠ। কখনো কান বিরক্ত হয় না। পৃথিবীর সব আয়োজন যখন আমাকে ক্লান্ত করে তোলে তখন আমি শান্ত হওয়ার আশায় আস্তে করে তোমাকে ফোন দেই। তোমার কণ্ঠের তরঙ্গ আমার মস্তিষ্কে আশ্রয় নিতেই আমি শীতের রাতের গভীর নদীর মতো শান্ত হয়ে যাই। তারপর থেকে তোমার কণ্ঠকে সান্ত্বনার মেডিসিন হিসেবে জানি।

পৃথিবী মানুষের জন্য, চারদিকে মাংস আর মাংস। তবুও মানুষ কেন মানুষের মাংস খায়। কারন তারা আজ পর্যন্ত তোমার কণ্ঠ শোনেনি। শোনেনি বিষয়টি হুবহু এমন না, শুনতে চেষ্টা করেনি। চেষ্টা করলে কত কিছু হয়, চেষ্টা করে হ্যাঁ এর ভেতরও একটি না ইমপোর্ট করে দেয়া যায়, দেয়া যায় নেগেটিভের ভেতরে পজেটিভ। আরেকটি কথা, আজ যারা শয়তানের পূজা করে আমি নিশ্চিত তারা তোমার কণ্ঠ শোনেনি।

পাপড়ি থেকে যেমন আস্তে আস্তে ফুল বের হয়ে আসে তেমনি তোমার অনুভূতি থেকে আস্তে আস্তে শ্রুতি লাভ করে তোমার ভাষা। তোমার ভাষায় কণ্ঠ এমনভাবে লেপ্টে থাকে যেমনভাবে লেপ্টে থাকে কিরণচন্দ্র সূর্যের সাথে। আমি তাই তোমার কণ্ঠকে সেই আবিষ্কৃত পারফিউম মনে করি যার অপার মহিমায় পৃথিবী গেয়ে চলে সাম্যের গান।

পৃথিবীতে যেদিন সাম্যের মিছিল হবে, আমার হাতে থাকবে শাদা আর কালো রঙের এক জীবন্ত মশাল। মশালের এক প্রান্তে ছোট্ট করে লেখা থাকবে তোমার নাম, মধু মাসের দিকে চলতে থাকবে আমাদের স্লোগান। মধুমাসের শেষে আমাদের কণ্ঠে থাকবে আমাদের অর্থাৎ মানুষের গান, ততদিনে তোমার কণ্ঠের সমস্ত রঙ, সমস্ত সুর ব্লেন্ডারিং করে, করে নিবো আমার। কারণ আমি তোমার প্রেমিক,
প্রেমিকেরা প্রেমিকের মতো হয়ে জন্মাবে বার বার, এক হাজার বছর পর আরো এক বার।

মাঝে মাঝে তোমার কণ্ঠে শীত আসে আমার হৃদয়ে তখন বর্ষসেরা বর্ষাকাল। প্রেমিক হয়েছি বলেই ঘর থেকে বার বার, বার থেকে ঘর ঘর করতে থাকি। গরীব মানুষ তো বর্ষাযাপন হয়ে ওঠে না। ইচ্ছা করলেই কণ্ঠে তোমার থাকবে চিরকাল বসন্ত। সময়কে হাতে নিয়ে খেলার ক্ষমতা তো তোমারই আছে, তাই না? শীতের কুয়াশা কুয়াশা আবহাওয়া থাকুক না অন্য কোনো এক জীবনের জন্য।
এই জীবনটা আমাদের মতো করে হোক চিলের ডানার সুখ, এক আকাশের মতো স্বপ্নীল। 

রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৫

কান্তার

গ্রামের অধিকাংশ রাস্তা কাঁচা। তার উপরে  আবার একটানা বৃষ্টি। কাদা আর কাদা। পা ফেলার সুস্থ জায়গা একেবারে নেই বললেই চলে। অন্ধকার রাত। বাজার চারতলা থেকে মধুপুরের দিকে যাত্রা। অন্ধকারে মানিয়ে মানিয়ে হয়তো পথ চলা যায় কিন্তু কাদা। তাছাড়া জুতা আর কাদার মধ্যে সতীন সতীন সম্পর্ক।

আমি আর আমার ভাইস্তা। আমাদের সাথে কোনো টর্চ নেই। মধুপুর যেতেই হবে। বাড়ি ফিরে যাওয়ার উপায় থাকলেও ইচ্ছা নেই। একটা অস্বস্তি অত্যন্ত মানসম্মত উপায়ে আমাদের মনের সদর দরজায় ক্লিং ক্লিং করেই চলছে। একসময় ভাইস্তা বলে উঠলো,

কাকা, আসেন নজরুলকে কাজে লাগাই।

কীভাবে?

উত্তর না দিয়েই সে গান ধরলো--

দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে!
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার।।

নজরুলকে ব্যবহার করতে করতে মধুপুর চলে আসি, মধুপুর আসার পর বুঝতে পারি কাদা আর অন্ধকার কেমন করে পাড়ি দিতে হয়।


ভালো রকমের সামাজিক

বনে গেলে বাঘ ভালো, বন্যরা বনে সুন্দর। অথচ বাঘের সাহসের উপমা সৈনিকের মতো পাহারারত দেহের সীমান্তে। বেড়ালকে ভালোবেসে আমি মানুষ তোমাদের ঘরের লিবিংরুমে। তোমার ঘুমের সাথে আমিও ঘুমন্ত বেড়াল। বেড়াল থেকে বেড়াল হয়ে আমি মানুষ থেকে মানুষ, বাঘ আসলে শব্দেই ভালো রকমের সামাজিক।  

শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৫

হাসিগুলো অন্য রকম, অনেকটা কান্নার সতীন। কান্নাগুলো একই রকম, অনেকটা  রূপকথার গল্প। 

দ্ব

দিন রাত হলেই ভোরের স্বপ্নে ঘুমিয়ে পড়ি






It is too night to sink into your thought 

শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৫

তারা বাঘের গল্প করতে করতে বিড়ালকে নিয়ে ঘুমায় 

হৃদয়

এক আকাশ হৃদয়ের আশায় এক কাপ ঠোঁট পেয়েছিলাম। কাপের ঠোঁটে ছিল অভিনয় আক্রান্ত তরল লিকার। 

তো

ট্রেন প্রতিদিন যাত্রী তুলে, যাত্রী নামায়, ট্রেন কখনো লাইন থেকে সরে আসে না দূরারোগ্য রাস্তায়। যদি কখনো নেমে আসে রাস্তার পারিবারিক আঙ্গিনায় তখন চরম এক পরকালের দিন তার।

প্রিয় আমার,
তোমাকে আজকাল ট্রেনের মতো সেবক মনে হয়। কত শত যাত্রী তোমার কামড়া থেকে কামড়ায়। আমি পড়ে আছি রাস্তা থেকে রাস্তায় হায়চিল বেদনায়। 

কাফের

বোরখা পরিহিত কাউকে দেখলে জুম্মার নামাযের কথা মনে হয়। সাপ্তাহিক ইদে লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটে চলে বুজুর্গ  ইমানদার মসজিদের দিকে। আমি তখন নামাযহীন কাফের। 

বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫

শাদা

আমার এক বন্ধু ছিল নতুনের মতো সাদা।
শাদা বক উড়ে গেলে সকাল-দুপুর-সন্ধ্যার কফিনে জমা হয় একগুচ্ছ মায়া।

মায়া তো প্রাইমারি স্কুলের হেড স্যার যিনি আমাকে ভয় দেখিয়েছেন। ফেল করার ভয়। তিনি আমাকে বলেছেন--
বাবু, দৈনিক আট ঘণ্টা পড়ো, তা না হলে তুমি পাশ করতে পারবে না।

পাঠ্যসূচির কঙ্কালে আমি আট ঘণ্টা করে চোখ রাখতে পারিনি স্যার,
সরি স্যার আমি পারিনি। আমি কিন্তু স্যার পাশ করেছি।
শুধু কি পাশ?
অনেক বিখ্যাত পাশ জমা হয়েছে আমার কঙ্কাল মার্কা নাম্বারের পাতায়। বুজুর্গ ভয় আমার কোনো কাজেই আসেনি।

আমার এক বন্ধু ছিল কাফনের মতো সাদা।

বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫

মানুষ থামতে জানে না, থামাতে জানে 

মেথ

দোকানে গিয়ে বললাম,
মামা, আমাকে চার দুগুণে ছয়টি চকলেট দেন

দোকানি মামা হাসলেন এবং আমাকে ছয়টি চকলেট দিলেন

পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন এক কাকু। চার দুগুণে ছয় হয় কীভাবে কাকুর শক্তিশালী প্রতিবাদ!?


আমি আর উত্তরে যাই নি। আমার উত্তর থেমে গেল মামার হাসি আর কাকুর প্রশ্নের বাউড়ি উপত্যকায়।

মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৫

শেষ পর্যন্ত লেখকের কাছেই পৃথিবীর আমানত 

হাড্ডি

বিদেশী কুকুর কিন্তু হাড্ডি খায় না, মাটি খায়

জনাব দেশী মাটির হিসাব যেন থাকে 

মশার

মশার কামড় এতো বিরক্তিকর কেন?
কারন আবর্জনা মশার জন্মস্থান। 

হিল

এখানে উঁচু হিল আমদানি করা হয়। অথচ ভোক্তা জানে না হিল এই মাটির জন্য প্রযোজ্য না। কারণ এখানকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট কাঁচা। ফলে দেখা যায় তারা মাটিতে এমনভাবে পা ফেলে যেন সার্কাসের চিকন রশিতে পা ফেলছে।

হিলযুক্ত জুতা পায়ের সামনের অংশ থেকে পেছনের অংশকে দুই থেকে তিন ইঞ্চি উঁচু করে। এর প্রভাব গিয়ে পড়ে বুকে। ফলে বুক হাঁসের মতো সামনের দিকে ঝুলে থাকে, বুক যখন সামনের দিকে ঝুলে থাকে তখন এর একটি প্রভাব পড়ে কোমরে। কোমর তার স্বাভাবিক ব্যালেন্স হারায়। কোমর হেলেদুলে চলতে থাকে। নিতম্ব যেহেতু রাবারের মতো সেহেতু কোমরের চাপে নিতম্ব  প্রশস্ত হয়ে পড়ে।

একদিকে বুক সামনের দিকে, অন্যদিকে নিতম্ব পেছনের দিকে রাবারের মতো স্প্রিং করে চলে। নিতম্ব আর বুকের দুলদুল তখন পুরুষের মনে ঝনঝনা শব্দ তৈরি করে। পুরুষ কামনার ঘরে বাঁধ দিয়ে রাখতে পারে না। কারণ জলের স্বভাব প্রবাহিত হওয়া। ফলে ধর্মের পর্দা ভেদ করে নারীর নিতম্ব আর বুক হয়ে পড়ে হাজার বছরের জৈবিক ধর্ম।

তখন পুরুষের কামনা আর নারীর প্রদর্শনের সামনে আসে সামাজিক নিয়ম,  ব্যক্তিগত রুচিবোধ। ব্যক্তিগত রুচিবোধ অবশ্যই সামাজিক নিয়মেরই অপভ্রংশ। তখনই নিয়ম নিয়মকে শত্রু মনে করে, আত্মরক্ষা আত্মহূতির কারন হয়ে দাঁড়ায়।

তাই অবশ্যই পদ্ধতি আমদানি করার আগে প্রায়োগিক জায়গা কতটুকু উর্বর সে বিবেচনাবোধ মাথায় রেখেই সামনের দিকে পদক্ষেপ ফেলতে হয়। তা না হলে সম্পদ নষ্ট, সময় নষ্ট এক অনিবার্য হিসাব হয়ে পড়ে।

যেমন :

ফাস্টফুডের জন্মদেশে, জন্মদোকানে বসার কোনো জায়গা নেই। অথচ এখানকার ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে আলো-আধাঁরি ব্যবস্থা। যে ডিএনএ ঘণ্টার পর ঘণ্টা চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে অভ্যস্ত সেই ডিএনএ যখন আলো-আধাঁরি সাইলেন্স স্যার স্যার পরিবেশ পায় তখন মন আর উঠতে চায় না। চলতে থাকে আড্ডা আর আড্ডা। সময়কে খেয়ে ফেলে অলসতা, অর্থচক্র নেমে আসে ভোগবাদে।

ইউক্লিপটাস কার্বন মনোঅক্সাইড (Co) ত্যাগ করে।  আমাদের রক্তের হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন পরিবহন করে থাকে। মজার কথা হলো হিমোগ্লোবিনের কার্বন মনোঅক্সাইডের প্রতি আকর্ষণ বেশি। শরীরের যখন  কার্বন মনোঅক্সাইড বেশি পরিবাহিত হয় তখন শ্বাসকষ্টসহ অনেক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। ইউক্লিপটাসের উপকারের কথা অস্বীকার করা যাবে না অবশ্যই। কিন্তু উপকার সময় এবং অবস্থান দ্বারা নির্ধারিত। তাই ইউক্লিপটাসকে এদেশের পাখি, ফুল, ফলের উপযোগী করে তোলার আগে আবশ্যিকভাবে নিরীক্ষাধর্মী প্রায়োগিক পরীক্ষার প্রয়োজন আছে। প্রায়োগিক পরীক্ষাই মূলত নৈতিকতার চিরায়ত শুদ্ধি।

কলম

এক কলমি শাক বহুদিন জলে ছিল শাপলা হওয়ার আশায়, হাজার বছর পরও লোকে তাকে শাপলা বলে না। কলমি শাক জানে না জল থেকে শাপলার জন্ম, জলে থাকলেই শাপলা হওয়া যায় না। 

রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৫

পাতা

হৃদয়ে শীতকাল, পাতাঝরা সময় 

বন্ধু

আমিও জেগেছিলাম আমার সাথে
জেগেছিলো আরেকটি  প্রাণি
লোকে তাকে চাঁদ বলে জানে
আমি তাকে বন্ধু বলে মানি

মানুষ

যে গরম তলা থেকে হাঁসের জন্ম সেই গরম তলা থেকেই মোরগের জন্ম। হাঁসের বাচ্চা জন্মানোর সাথে সাথেই জলে সাঁতার কাটে। জল তার জন্মগত খেলার মাঠ। সাঁতার কাটা মোরগের সাধনার জায়গা। জল তার ভয়ের অনিবার্য আলাপ।


জন্মস্থান এক হলেই পরিচয় এক হয় না




মানুষ কখনো হতে পারে না, মানুষ হয়েই জন্মগ্রহণ করে 

তারা প্রেমের নামে বাজার আমদানি করে 

শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫

প্রতিযোগিতা

পৃথিবীর সামনে দুটি শব্দ,

এক~ সহযোগিতা

দুই~ প্রতিযোগিতা

সহযোগিতা এবং প্রতিযোগিতা যখন  সমানভাবে চলে তখন পৃথিবীতে চলে স্নায়ুযুদ্ধ। প্রতিযোগিতা যখন জয়লাভ করে তখন পৃথিবীতে নেমে আসে অরাজকতা। 

শিশুর মতো

আমি তাকে শিশুর মতো ভালোবাসি। আর সে আমাকে জ্ঞানীর মতো বিবেচনা করে। ভালোবাসতে ভালোবাসতে আমি আরো শিশু হয়ে যাই। আর সে হয়ে যায় কিতাবুল মুফতি। হযরত মুফতি আমাকে ফতুয়া দেয় আমি নাকি কাফের।
কসম খোদার এই কাফেরের হৃদয়ে প্রেমের যে খুশবু তা মালাকাত- মান্দে তন্নতন্ন করেও খোঁজে পাওয়া যাবে না।

সেও জয় হল, আমিও জয়ী

সে জেনেছে সূর্য একটি আলোকপিণ্ড, আর আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি সূর্য এক ছায়ায় অপভ্রংশ। 

বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৫

পুজো

পুজো দেখতে বের হলাম। আবহাওয়া স্বাস্থ্যকর। আকাশের চাঁদ নদীর স্রোতের মতো বাঁকা। রাত তাই নরম তুলার মতো আরামদায়ক বাতাস হয়ে মস্তিষ্কের এক দিগন্ত থেকে অজানা দিগন্তে।

পুজো দেখতে বের হলাম কথাটি সামাজিক সত্য। বাস্তব সত্য সুন্দর মানুষ দেখতে বের হলাম। সনাতনী মানুষ চোখের বাতায়নে শীতল হাওয়া-বাতাস নিয়ে আসে।

সনাতনী মানুষ এতো সুন্দর হয় কেন?

সুন্দর বলতে আমি যা বুঝি তা হলো সজীবতা, তাদেরকে সজীব দেখায় কারন  তাদের খাবারের ম্যানুয়েল। তাদের খাবার সরাসরি প্রকৃতির সাথে জড়িত। ফলে প্রকৃতির শ্যামল শোভা তাদের চেহারায় প্রবেশ করে। তাইতো শিল্পীর আঁকা প্রতিমার চেয়ে অনেক প্রতিমাময় চোখের সামনের কিছু মুখ।

প্রতিমাময় কিছু মুখ দেখার জন্যই পুজামণ্ডপে আমি। দুর্গার সামনে মাথা নত করে প্রণাম করছি। চোখ মেলে দেখি প্রসাদ। প্রসাদ খেয়ে বেশ তৃপ্তি পেলাম। মাজারের খিচুড়িও বেশ তৃপ্তিদায়ক। মসজিদের জিলাপির নাম শুনলেই জিহ্বায় জল চলে আসে। একটু পরে গান শুরু হয়। চমৎকার হিন্দি গান। আবার হিন্দি গানের সুর নকল করে বাংলা গান। গানের কথাগুলো কানে লেগে আছে--

রসগোল্লা রসে টলটল

আমি তখন দুর্গার দিকে তাকাই। কোথাও কোনো রস দেখতে পাই না।
তাহলে রস কোথায়?
হ্যাঁ, রস আমাদের মনে। মনে রস নিয়ে সবাই চরম মাস্তিতে ব্যস্ত। দেখলাম দুর্গার  পা থেকে মিউজিক বের হয়ে আসছে। আর্য-অনার্য দ্বন্দ্বে নারী হয়ে ওঠেছিল পুজোর উপকরণ, প্রথমবারের মতো  স্থাপিত হয়েছিল পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব।
কিন্তু দুর্গার পায়ের নিচে আলো-আঁধারি মিউজিক আসলো কী করে?

এখানে হয়তো কোনো অমানবিক অজ্ঞতা লুকায়িত!

কড়া মিউজিকের শব্দে প্রস্থান করতে বাধ্য হলাম। যখন পুজামণ্ডপ থেকে অনেক দূরে তখন উপলব্ধি করতে পারি কানে শুনতে পাচ্ছি না। কড়া মিউজিক আমার শ্রবণে বাঁধ দিয়েছে।

সমস্যা নেই, দুর্গা দর্শনে এমন দুই একবার শ্রবণে সাময়িক সমস্যা তৈরি হতেই পারে। আবার সমস্যা দূর হয়ে যাবে( দুর্গা দুর্গতিনাশিনী) , আবার প্রতিমা দর্শনে বের হবো, আবার থেকে আবার,
এইভাবেই ভুলের পর ভুল সাজিয়ে তৈরি হয় আমার সমাজ।



প্যাকেট

অলস রুমে একা শুয়ে থাকা। ভালোলাগা বড় বেশি বেহায়া। ভালোলাগা বড় বেশি কৃপণ। পদানত শর্ত বার বার ঘিরে ধরে চারপাশ। আমরা নষ্ট করি আমিকে। আমির বাজারে রাজাদের হাহাকার। এক দুর্লভ শুন্যতা আজকাল শীতের মতো নেমে আসে পৃথিবীর সস্তা প্রতিজ্ঞায়। এক পাখি চোখের জল যদি রাস্তায় নেমে আসে নদী হবে?
 হবে না!
পাখির ঠোঁট জল চিনে না, জলের স্রোতে গতরের পেক পরিষ্কার করে নেয় মাত্র।

আচ্ছা, এইভাবে যদি কিছু কথা বলি তাতে কী হবে? কিচ্ছু হবে না। আমাদের চিরচেনা পৃথিবী চায় গোছানো প্যাকেট, প্যাকেটের ভেতর পরিতৃপ্ত খাবার। 

প্যাকেট

অলস রুমে একা শুয়ে থাকা। ভালোলাগা বড় বেশি বেহায়া। ভালোলাগা বড় বেশি কৃপণ। পদানত শর্ত বার বার ঘিরে ধরে চারপাশ। আমরা নষ্ট করি আমিকে। আমির বাজারে রাজাদের হাহাকার। এক দুর্লভ শুন্যতা আজকাল শীতের মতো নেমে আসে পৃথিবীর সস্তা প্রতিজ্ঞায়। এক পাখি চোখের জল যদি রাস্তায় নেমে আসে নদী হবে?
 হবে না!
পাখির ঠোঁট জল চিনে না, জলের স্রোতে গতরের পেক পরিষ্কার করে নেয় মাত্র।

আচ্ছা, এইভাবে যদি কিছু কথা বলি তাতে কী হবে? কিচ্ছু হবে না। আমাদের চিরচেনা পৃথিবী চায় গোছানো প্যাকেট, প্যাকেটের ভেতর পরিতৃপ্ত খাবার। 

মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৫

চিন্তার

বিজ্ঞাপন মানে বিশেষভাবে জ্ঞাপন বা জানানো। শহরের আকাশে অনেক অনেক বিলবোর্ড দেখা যায়। বিলবোর্ডে প্রথমে বিজ্ঞাপিত হয়ে থাকে চকচকে মোমের মতো কোনো নারী অথবা সামাজিক মর্যাদাশীল কোনো পুরুষ।

তারপর বিলবোর্ড যা বলতে চায় তাহলো যেহেতু তারা( বিলবোর্ড প্রদর্শিত যারা) একটি ব্যক্তিগত জীবন যাপন করে এবং যাপিত জীবনে কিছু পন্যের প্রয়োজন হয় সেহেতু তারা কী পন্য ব্যবহার করে তা আপনাদের মানে আমাদের জানা প্রয়োজন। ফলস্বরূপ বিলবোর্ডের মানুষটির পাশে একটি পন্য খুব আস্তে করে প্রদর্শন করা হয়।

কিন্তু যিনি বিজ্ঞাপনের আয়োজন করেছেন তিনি ব্যক্তির প্রর্দশনীর ব্যবস্থা করেছেন তার পন্যকে বিজ্ঞাপিত করার জন্য যেখানে ব্যক্তির মূল্য খুবই নগন্য( অদৃশ্যভাবে)।

এইভাবে একজন মানুষ পন্য হয়ে ওঠে। এইভাবে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে বিক্রি করে।

ক্রয়-বিক্রয়ের এই সময়ে যখন দেখি কোনো কোম্পানি তাদের পন্য বিক্রি করার জন্য কোনো মানুষ নয় আরেকটি পন্যকে মাধ্যম করেছেন তখন একটি সুবিন্যস্ত চিন্তার খোঁজ পাই। চিন্তাটিকে শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছা হয়,
চিন্তাটিকে বিজ্ঞাপিত করার বাসনা তৈরি হয় ....

শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৫

চেনা

তোমারে চিনিতে গেলে সোঁজা রাস্তা হয় বাকাঁ
আমি মদন প্রেমিক কানা পথ চিনি না, চিনি না।।

আকাশেতে সূর্য ওঠে
জমিনেতে ছায়া পড়ে
ছায়ার কভু কায়া হয় না
তবু ছায়া কথা কই।।

দেহের ভেতর আলোর বাড়ি
আলোর ভেতর পাগল আমি
আমির ভেতর নিরাকার তুমি
নিরাকারে কেমনে রই।।



03102015

বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৫

যার স্বপ্নে আমার ঘুম ভাঙ্গে তার ঘুম যেন ভালো হয় 

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৫

সুমির দা

সুমির দা ভালো আছো?
তুমি কি এখনো নীরব অভিমান ঢেলে দাও চায়ের কাপে?
তোমার চা খেয়ে খেয়ে সে এখন অভিমানী তারা
শরতের সফেদ মেঘ আর তার লুকোচুরি খেলা
আমি যদি চলে যাই অন্য মহাদেশে কিংবা গান শুনি অন্য কোনো কালের
তোমাদের ব্যস্ত কুলিকাতা অসুস্থ হবে জন্য চিরকালের 

পরি উড়ে গেলে কল্পনায় পড়ে থাকে লিকারের মৃত দেহ 

মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৫

শিক্ষা বোর্ড

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। পাহাড়ের উপরে মাস্তানি করে দাঁড়িয়ে আছে। তার গায়ে সুনসান নীরবতা। পাহাড়ি মেজাজে ছাত্ররা ক্লাসে যায়, হলে ঘুমায়। ঝিঁঝিপোকার মাত্রাবৃত্ত কোলাহল, শিয়ালের কমলা রঙ্গের ডাক, অন্ধকারের মতো গাঢ় কুয়াশা পাহাড়ের শীতকালীন চরিত্র। হলের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছি।

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ হল।

ধীরেন্দ্রনাথ ছিলেন সাহসী ভাষা সৈনিক। পাকিস্তানি পার্লামেন্টে যখন উর্দু ভাষাকে পূর্বপাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পরিকল্পনা চলছে তখনই  ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বিরোধিতা করেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন প্রথম মানুষ যিনি উর্দু ভাষাকে পূর্বপাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার বিরোধিতা করেছিলেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ভাষাকে বাংলার রাষ্ট্র  করার বিরোধিতা করে বাংলার বিমান বন্দরের ল্যান্ড করেন। দেখেন কয়েকজন যুবক দাঁড়ানো। কুয়াশার কারনে তাদের চেহারা তেমন দেখা যায় না। তিনি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিলেন। তিনি চোখ বন্ধ করে সামনের দিকে হাঁটছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি অনুভব করতে লাগলেন তাঁর মাথায় কিছু পড়ছে। তিনি নিশ্চিত হলেন আজ তাঁর মৃত্যু।

কিন্তু না।

তাঁর মাথায় যা পড়ছে তা পাথরের মতো শক্ত না, ফুলের মতো নরম। তখনও তাঁর চোখ বন্ধ। চোখ খুললেন। সত্যিই তাঁকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে। তাঁর সামনে তখন দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় তরুণ।

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ হলের এক কোণায় আমি। পাহাড়ের চরিত্র উপলব্ধি করার চেষ্টা। তবুও মনে আছে অন্য এক ভয়। ভয়টাকে অবশ্যই শঙ্কা হিসাবে চালিয়ে দেয়া যায়-- কী যে হয়, কী যে হয়!

আর মাত্র দশ দিন। দশ দিন পর ভাইভাফেইস করতে হবে। আজকের পর ইদের ছুটি। সুতরাং আজকের কর্মদিবসই আমার জন্য শেষ। ঘুমের ভেতর শঙ্কা জেগে থাকায় ঘুম ভালো হয়নি।

সকাল সকাল কুমিল্লা বোর্ডে এলাম। শিক্ষা বোর্ডের প্রত্যেক ইট ঘুষ খাওয়ার ব্যাপারে খুব আগ্রহী। আমিও ঘুষ দেয়ার ছহি নিয়ত নিয়ে এসেছি। তবুও আমার কাজ আজকের ভেতর শেষ করতেই হবে।

বলছি,স্যার আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন।

কোন স্যার?

আড়াইসিধা কে বি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামাল স্যার।

ও আচ্ছা, তিনি কেমন আছেন?

বেশ ভালো।

আচ্ছা বাবা, তোমার জন্য কী করতে পারি?

আমার এস.এস.সি সার্টিফিকেটে আম্মার নামের বানানে একটি বর্ণ ভুল আছে।

আচ্ছা বাবা, কাজটি তো অনেক জটিল, তারপরও কামাল ভাই যেহেতু পাঠিয়েছেন ....।

কাজটি জটিল হতে পারে কিন্তু আমাকে তা আজকের মধ্যেই করতে হবে।

অসম্ভব, একদম অসম্ভব।

সব পথ যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন একটি অদৃশ্য পথ খুলে যায়, যে পথ আগের পথগুলোর চেয়ে অনেক মসৃণ, যারা হতাশ তারা সেই মসৃণ পথটি আবিষ্কার করতে পারে না। আমি তাই হতাশ হইনি।

দেখুন না কোনো পথ খোলা আছে কিনা।

দেখ বাবা, তুমি আমার ছেলের মতো। কীভাবে বলি, তারপরও বলতে হবে। যদি তিন হাজার টাকা দিতে পারো তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যে কাজটি সম্পূর্ণ করে তোমার ঠিকানায় পৌঁছে দেব।

আমার সাথে জীবন ভাই। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেজাজ তার আচরণে।

ও মিয়া, কী কন, আমরারে বোদাই পাইছেন!

জীবন ভাইকে অনেক চেষ্টা করে শান্ত করে বললাম আপনি চা খেয়ে আসেন। জীবন ভাই চলে গেলেন।
লোকটির হাতে আড়াইশত টাকা দিয়ে বললাম বাকিটুকু পরে দিচ্ছি। প্লিজ মনে কিছু করবেন না ....।

চা খেয়ে আমি আর জীবন ভাই সিদ্ধান্ত নিলাম কাজটি নিজেরাই করবো। তিনশত টাকা ব্যাংক ড্রাফট করে প্রক্রিয়ামতো ধীরে ধীরে কাজ করতে লাগলাম। অত্যন্ত নিরিহভাবে সবাইকে আমার সমস্যার কথা খুলে বললাম। নিরীহ সারল্যে এতো  শক্তি প্রথমবারের মতো অনুধাবন করি।

দুপুর থেকে সন্ধ্যার দিকে সূর্য। কাজও প্রায় শেষ। ফাইল সব অফিস ঘুরে এখন চেয়ারম্যানের রুমে। তার রুম থেকে আমার হাতে হয়তো আসবে।

স্যার আমি এমরানুর রেজা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ভর্তিভাইভা ইদের পর। বানান কারেকশনের জন্য আপনাদের স্মরণাপন্ন হয়েছি। এখন আপনি স্বাক্ষর করলেই .....।

আমার কাছে আপনার ফাইল আপনি কীভাবে জানেন?

সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ফাইল ট্রান্সফরমার আমার হাত দিয়েই তো হয়েছে।

কী!!!!! যান, আপনার ফাইল আর মুভ করবে না!

মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। আস্তে করে চোখ বন্ধ করলাম। চোখ বন্ধ করেই ফ্লোরে পড়ে গেলাম। তারপরও ....।

মজার ঘটনা।
ক্লিং ক্লিং ক্লিং
আমাকে পানি দিতে নিয়ে যাওয়া হলো। জীবন ভাই চিন্তিত। জীবন ভাইয়ের কানের কাছে মাথা নিলাম, আস্তে করে বললাম-- আমার কিছু হয় নি। কথা শুনে জীবন ভাই স্বাভাবিক। ফ্যানের নিচে বসানো হলো। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার ফাইল কমপ্লিট।

এখন বাড়ি যাওয়ার পালা। হাসতে হাসতে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামছি । নিচে নামতেই লোকটির সাথে দেখা।

আপনার কাজ শেষ?

শেষ তবে আরেকটি ছোট্ট কাজ রয়েছে।

কী?

আপনার কাছে আমার আড়াই শত টাকা রয়েছে।

লোকটি বুকপকেট থেকে আড়াই শত টাকা বের করে দিলো। তার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে বিদায় নিলাম।

একটু সামনে গিয়ে পেছনে ফিরে তাকালাম, লোকটিও তাকালো। তার মুখে মৃদু হাসি। তার হাসির দিকে তাকিয়ে বলতে ইচ্ছে হলো যে কিছু পাখি আছে যাদের পালক অনেক বেশি স্বচ্ছ তবুও তাদের চেনা যায় না!

সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৫

প্রচার

আত্মপ্রচার। আত্মকে প্রচার।

দোষ + গুণ = আত্ম

কিন্তু আত্মপ্রচার বলতে আমরা কেবল ভালো কিছুর প্রচারকেই বুঝি। যা কিছু আমাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে সেই প্রিয় কিছুর প্রচার করে বলতে চাই যে তোমাদের সমাজে আমিও পারি অথবা তোমাদের সমাজে আমারও উপযোগিতা রয়েছে কিংবা আমিও ভাই মিছিলের লোক।

তাই আজকের সমাজে আত্মপ্রচার মানে  পরিকল্পিতভাবে নিজপ্রিয়তার প্রচার।

খাবারের টেবিলে বসে সেলফি তোলা এবং তা প্রচার করা এক প্রকার সামষ্টিক নিজপ্রিয়তার প্রচার।
 
মানুষ তো তাই প্রচার করে যা তার কাছে প্রিয় এবং আরাধ্য। এখনো আমাদের কাছে খাবার অতি আরাধ্য বিষয়। আরাধ্য বিষয়টি যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা ঘটা করে জানাতে চাই যে আমরাও ভাই ভালো কিছু খেতে পারি। খাবার টেবিলটি এখনো আমাদের কাছে অন্যকে  জানানোর বিষয়, প্রচারের বিষয়!

কারো বাসা বাড়িতে গেলেই, কিংবা অফিসে কিছুক্ষণের জন্য সৌজন্য সাক্ষাতে গেলেই তারা কী খাওয়া যায় এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তারা মনে করে, যে লোকটি তার কাছে এসেছে সে এক হাজার বছরের ক্ষুধা নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ আমাদের প্রিয়-অপ্রিয় জায়গাগুলো এখনো খাবার টেবিলে ঘোরাঘুরি করে, আমাদের আত্মপ্রচার খুব বেশি জৈবিক।

আপনারাই তো  বলেন আমরা আধুনিক, পোস্ট আধুনিক মানুষ!

কিন্তু প্রাগৈতিহাসিক মানুষের মতো এখনো আপনাদের মস্তিষ্কের চাকা খাবারকে কেন্দ্র করেই চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে পনেরো ঘণ্টা চলতে থাকে।

তাহলে বলেন তো আপনারা কি আধুনিক মানুষ, না আধুনিকতা একপ্রকার খাবারের নাম!?

প্রচার

আত্মপ্রচার। আত্মকে প্রচার।

দোষ + গুণ = আত্ম

কিন্তু আত্মপ্রচার বলতে আমরা কেবল ভালো কিছুর প্রচারকেই বুঝি। যা কিছু আমাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে সেই প্রিয় কিছুর প্রচার করে বলতে চাই যে তোমাদের সমাজে আমিও পারি অথবা তোমাদের সমাজে আমারও উপযোগিতা রয়েছে কিংবা আমিও ভাই মিছিলের লোক।

তাই আজকের সমাজে আত্মপ্রচার মানে  পরিকল্পিতভাবে নিজপ্রিয়তার প্রচার।

খাবারের টেবিলে বসে সেলফি তোলা এবং তা প্রচার করা এক প্রকার সামষ্টিক নিজপ্রিয়তার প্রচার।
 
মানুষ তো তাই প্রচার করে যা তার কাছে প্রিয় এবং আরাধ্য। এখনো আমাদের কাছে খাবার অতি আরাধ্য বিষয়। আরাধ্য বিষয়টি যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা ঘটা করে জানাতে চাই যে আমরাও ভাই ভালো কিছু খেতে পারি। খাবার টেবিলটি এখনো আমাদের কাছে অন্যকে  জানানোর বিষয়, প্রচারের বিষয়!

কারো বাসা বাড়িতে গেলেই, কিংবা অফিসে কিছুক্ষণের জন্য সৌজন্য সাক্ষাতে গেলেই তারা কী খাওয়া যায় এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তারা মনে করে, যে লোকটি তার কাছে এসেছে সে এক হাজার বছরের ক্ষুধা নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ আমাদের প্রিয়-অপ্রিয় জায়গাগুলো এখনো খাবার টেবিলে ঘোরাঘুরি করে, আমাদের আত্মপ্রচার খুব বেশি জৈবিক।

আপনারাই তো  বলেন আমরা আধুনিক, পোস্ট আধুনিক মানুষ!

কিন্তু প্রাগৈতিহাসিক মানুষের মতো এখনো আপনাদের মস্তিষ্কের চাকা খাবারকে কেন্দ্র করেই চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে পনেরো ঘণ্টা চলতে থাকে।

তাহলে বলেন তো আপনারা কি আধুনিক মানুষ, না আধুনিকতা একপ্রকার খাবারের নাম!?

প্রচার

আত্মপ্রচার। আত্মকে প্রচার।

দোষ + গুণ = আত্ম

কিন্তু আত্মপ্রচার বলতে আমরা কেবল ভালো কিছুর প্রচারকেই বুঝি। যা কিছু আমাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে সেই প্রিয় কিছুর প্রচার করে বলতে চাই যে তোমাদের সমাজে আমিও পারি অথবা তোমাদের সমাজে আমারও উপযোগিতা রয়েছে কিংবা আমিও ভাই মিছিলের লোক।

তাই আজকের সমাজে আত্মপ্রচার মানে  পরিকল্পিতভাবে নিজপ্রিয়তার প্রচার।

খাবারের টেবিলে বসে সেলফি তোলা এবং তা প্রচার করা এক প্রকার সামষ্টিক নিজপ্রিয়তার প্রচার।
 
মানুষ তো তাই প্রচার করে যা তার কাছে প্রিয় এবং আরাধ্য। এখনো আমাদের কাছে খাবার অতি আরাধ্য বিষয়। আরাধ্য বিষয়টি যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা ঘটা করে জানাতে চাই যে আমরাও ভাই ভালো কিছু খেতে পারি। খাবার টেবিলটি এখনো আমাদের কাছে অন্যকে  জানানোর বিষয়, প্রচারের বিষয়!

কারো বাসা বাড়িতে গেলেই, কিংবা অফিসে কিছুক্ষণের জন্য সৌজন্য সাক্ষাতে গেলেই তারা কী খাওয়া যায় এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তারা মনে করে, যে লোকটি তার কাছে এসেছে সে এক হাজার বছরের ক্ষুধা নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ আমাদের প্রিয়-অপ্রিয় জায়গাগুলো এখনো খাবার টেবিলে ঘোরাঘুরি করে, আমাদের আত্মপ্রচার খুব বেশি জৈবিক।

আপনারাই তো  বলেন আমরা আধুনিক, পোস্ট আধুনিক মানুষ!

কিন্তু প্রাগৈতিহাসিক মানুষের মতো এখনো আপনাদের মস্তিষ্কের চাকা খাবারকে কেন্দ্র করেই চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে পনেরো ঘণ্টা চলতে থাকে।

তাহলে বলেন তো আপনারা কি আধুনিক মানুষ, না আধুনিকতা একপ্রকার খাবারের নাম!?

প্রচার

আত্মপ্রচার। আত্মকে প্রচার।

দোষ + গুণ = আত্ম

কিন্তু আত্মপ্রচার বলতে আমরা কেবল ভালো কিছুর প্রচারকেই বুঝি। যা কিছু আমাদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে সেই প্রিয় কিছুর প্রচার করে বলতে চাই যে তোমাদের সমাজে আমিও পারি অথবা তোমাদের সমাজে আমারও উপযোগিতা রয়েছে কিংবা আমিও ভাই মিছিলের লোক।

তাই আজকের সমাজে আত্মপ্রচার মানে  পরিকল্পিতভাবে নিজপ্রিয়তার প্রচার।

খাবারের টেবিলে বসে সেলফি তোলা এবং তা প্রচার করা এক প্রকার সামষ্টিক নিজপ্রিয়তার প্রচার।
 
মানুষ তো তাই প্রচার করে যা তার কাছে প্রিয় এবং আরাধ্য। এখনো আমাদের কাছে খাবার অতি আরাধ্য বিষয়। আরাধ্য বিষয়টি যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা ঘটা করে জানাতে চাই যে আমরাও ভাই ভালো কিছু খেতে পারি। খাবার টেবিলটি এখনো আমাদের কাছে অন্যকে  জানানোর বিষয়, প্রচারের বিষয়!

কারো বাসা বাড়িতে গেলেই, কিংবা অফিসে কিছুক্ষণের জন্য সৌজন্য সাক্ষাতে গেলেই তারা কী খাওয়া যায় এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তারা মনে করে, যে লোকটি তার কাছে এসেছে সে এক হাজার বছরের ক্ষুধা নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ আমাদের প্রিয়-অপ্রিয় জায়গাগুলো এখনো খাবার টেবিলে ঘোরাঘুরি করে, আমাদের আত্মপ্রচার খুব বেশি জৈবিক।

আপনারাই তো  বলেন আমরা আধুনিক, পোস্ট আধুনিক মানুষ!

কিন্তু প্রাগৈতিহাসিক মানুষের মতো এখনো আপনাদের মস্তিষ্কের চাকা খাবারকে কেন্দ্র করেই চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে পনেরো ঘণ্টা চলতে থাকে।

তাহলে বলেন তো আপনারা কি আধুনিক মানুষ, না আধুনিকতা একপ্রকার খাবারের নাম!?

রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫


*
পাগলও নিজের ভালো বুঝে। কিন্তু পাগল কোথায়? সবখানে দেখি বুদ্ধিজীবীর পাল

*
আপনি কথা শেষ করতে চান মানে আপনি প্রভাব বিস্তারনীতিতে বিশ্বাসী

*
বুদ্ধিজীবীদের মক্কা-মদিনা টকশো

*
মানুষের সন্তান (পারমাণবিক বোমা, বিদ্যুৎ) মানুষের চেয়ে শক্তিশালী, ইশ্বরের সন্তান মানুষও ইশ্বরের চেয়ে শক্তিশালী

*
নদীর আয়োডিন কমে গেলে নারী হয়ে ওঠে

*
মিথ্যা সত্যের চেয়েও বাস্তব

*
আমার সীমাবদ্ধতা প্রমাণ করে তুমি অসীম
*
Times is itself no stages and classes

*
উৎসাহ উৎসের কথা বলে। উৎসব মানে  উৎসাহ আক্রান্ত

*
বাঙালি যখন সত্য কথা বলে বুঝতে হবে তার পেছনে কোনো স্বার্থ আছে, হুমায়ূন আজাদ সত্যবাদী বাঙালি

*
শিক্ষকতার নামে ব্যবসানীতি চলে-- জনপ্রিয়তার ব্যবসা, খাতা দেখার ব্যবসা, বই বিক্রির ব্যবসা, নিজেকে উপস্থাপনের ব্যবসা

*
গরীবের বউ বৌদি হবে, দিদি হবে না

*
কিতাব এক প্রকার মসজিদ যেখান থেকে পূজা-প্রার্থনা শেখা যায়

*
অপূর্ণাঙ্গ নারী, অপূর্ণাঙ্গ জাতি 

শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৫

গইঅম = পেয়ারা

আঞ্জা = কোলাকুলি, আলিঙ্গন

গাদলা < বাদলা

আলাবালা = মিছামিছি

লায়ক < নায়ক

বুইত্তামারা = মোটা-তাজা

ততা = গরম

পাতাইরা = আড়াআড়িভাবে

আজগের = আজকের

কিলা = ওগো, এই শোনো

কুছু = কিছু, অল্প  

শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৫

এক থেকে

1
মৃত্যু প্রসব করে মা হাসে, নবজাতক মৃত্যুর ঘ্রাণে কাঁদে

2

যন্ত্র এবং যন্ত্রণা

3

ছিলাম বলে আছি, থাকবো বলে ছিলাম না

4
দুইজন মিলে বিয়ে, তিন জন মিলে পরিবার

5
আপনার ভোট আপনিই দিবেন, প্রার্থী কিন্তু তারা দিবে

6

মেঠোবক্তা হুজুর চিনে না

7
দশ জন পুলিশ এক রকম ভাবে, দশ জন মানুষের ভিন্ন রকম ভাবনা

8

মানুষের মৃত্যুবার্ষিকী, তাহাদের জন্মউৎসব

9

ক্ষুধা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি, তবে কেন খাবার চেয়েছিলেন?

10

এখানে যৌনতার কার্নিবাল হয়, তবুও যৌনতা ভালোবাসার নাম

11

আপনি অসাধারণ মনিব, আপনার বাড়ির কুকুর কী আমার মতোই অসাধারণ?

12

মায়ের জাত কাপড় কিনে না, রং কিনে

13

লায়লি-মজনু ইতিহাসের সৃষ্টি, মানুষের না

14

ব্যক্তি! ব্যক্ত করাই যার কাজ হওয়ার কথা ছিল

15

পুঁজি তুমি তাকে বলো স্লিম হতে, তাকে বলো মাসল নিয়ে বেড়ে ওঠতে, এইভাবে তুমি তাদের মাঝে এবং জুড়ে দাও

বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৫

এক থেকে চৌদ্দ


১.
দেয়ালে পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ
দেয়াল নিজেই এক দীর্ঘমেয়াদি পোস্টার

২.
সামনে চেক পোস্ট-- অবৈধ মাল বৈধ করা হয়

৩.
শিক্ষক ছাত্র চিনেন না, সিলেবাস চিনে

৪.
চোখের জল খুব দ্রুত মারা যায়

৫.
রাজনীতি নয়, সাজনীতি

৬.
প্রেম এক ঘুমের নাম যেখানে স্বপ্ন আছে, আছে বিড়ালের মিউ মিউ ডাক

৭.
প্রয়োজন সম্পর্কের প্রাণ

৮.
সৃষ্টি স্রষ্টার দুর্ঘটনা

9.
ভালোবাসা এক বর্ডারের নাম আর প্রেমিক-প্রেমিকা বর্ডারের কাঁটাতার

10.
লজ্জা এখানে ভূষণ, লজ্জার বাঁধ ভেঙে গেলে শুরু হয় ক্ষুধার্তের ক্ষুধাতুর তর্জমা

11.
চুল লম্বা হয় তাই মেদ জমানোর প্রয়োজন পড়ে না

12.
স্বপ্নেও বাঙালি সাপের কামড় খায়, আর ইমানদার মক্কা-মদিনায় যায়

13.
পাগলামোর উৎস প্রেম, পাগলামোর উৎসব প্রেম

14.
পথ এক ভয়ানক নেশার নাম 

এক থেকে চৌদ্দ


১.
দেয়ালে পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ
দেয়াল নিজেই এক দীর্ঘমেয়াদি পোস্টার

২.
সামনে চেক পোস্ট-- অবৈধ মাল বৈধ করা হয়

৩.
শিক্ষক ছাত্র চিনেন না, সিলেবাস চিনে

৪.
চোখের জল খুব দ্রুত মারা যায়

৫.
রাজনীতি নয়, সাজনীতি

৬.
প্রেম এক ঘুমের নাম যেখানে স্বপ্ন আছে, আছে বিড়ালের মিউ মিউ ডাক

৭.
প্রয়োজন সম্পর্কের প্রাণ

৮.
সৃষ্টি স্রষ্টার দুর্ঘটনা

9.
ভালোবাসা এক বর্ডারের নাম আর প্রেমিক-প্রেমিকা বর্ডারের কাঁটাতার

10.
লজ্জা এখানে ভূষণ, লজ্জার বাঁধ ভেঙে গেলে শুরু হয় ক্ষুধার্তের ক্ষুধাতুর তর্জমা

11.
চুল লম্বা হয় তাই মেদ জমানোর প্রয়োজন পড়ে না

12.
স্বপ্নেও বাঙালি সাপের কামড় খায়, আর ইমানদার মক্কা-মদিনায় যায়

13.
পাগলামোর উৎস প্রেম, পাগলামোর উৎসব প্রেম

14.
পথ এক ভয়ানক নেশার নাম 

তাই

হাঁটতে হাঁটতে যারা পথ হারায় তারাইতো পর্যটক।
হাঁটতে হাঁটতে যে ছায়া পথের দেখা পায় সেই তো পথিক।
হেলেন, তোমাকে গন্তব্য মেনে যারা হেঁটেছিল তারা পর্যটক পৃথিবীর।
আমি এবং তুমি ঠোঁটে ঠোঁটে ঝুলে থাকি, আমাদের বাদরপৃথিবী, আমরাও বাদরপথিক। 

তাহারা মিনিপ্যাক ব্যবহার করতে করতে আজ তাহাদের মিনিপ্যাক মন 

ধানমন্ডি লেক

ধানমন্ডি লেক।
নিশ্চুপ দ্বীপ। নীরব হাহাকার। যার চুলের গন্ধে মাতাল হওয়ার কথা তার ঠোঁটে নিকোটিনের কড়া লিকার। ফান্টার ঝালাপালা টেস্ট।
ধানমন্ডি লেক।
কিছু পাখি পালক উড়ায় ত্যাগের মহিমায়। কথাকথি, চোখাচোখি। খালি চোখে আহা কী প্রেম, কী প্রেম!
ধানমন্ডি লেক।
জলের দেশে নাগরিক কপোত গড়ে তোলে আলিশান বাড়ি, তা কি প্রেম নাকি কাড়াকাড়ি? কিছু কাক এখানেও স্বাধীন, এখানেও কাকের কা কা চার চোখের মাঝে সম্পর্কের এস্ট্রোলোজার।কনফিডেন্স শুন্য দ্বীপের মতো বড় বেশি একা।
ধানমন্ডি লেক নাগরিক সুজাতা।

সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৫

শিয়ালকে ঘরে আনতে নেই, সে খোয়ার  খুঁজে বের করবেই যেখানে পাখিগুলো অনেক দিন শান্তিতে ছিল

এখানে ফসল ফলানোর আগে লাঠি ফলানো প্রয়োজন 

রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৫

শিক্ষা

স্কুলে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে শিশুর হাতে বই ধরিয়ে দেয়া হয় না, দেয়া হয় প্রতিযোগিতার অসীম গোলক ধাঁধাঁ। গোলক ধাঁধাঁয় পড়ে প্রথমে শিশুটি তার পাশের শিশুটিকে প্রতিযোগী ভাবতে শিখে। জীবনের প্রথম শিক্ষালয়ে শিশু শিশুর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার পরিবর্তে কাঁধে অস্ত্র রেখে চলার শিক্ষা লাভ করে।

এইভাবে শিশু বড় হতে থাকে, হতে থাকে ব্যক্তিগত, হতে থাকে আপনি বাঁচলে বাপের নাম পরিবারের বাসিন্দা। অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমতে থাকে। অপরকে যে শ্রদ্ধা করে না সে কখনো পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারে না।

অপূর্ণাঙ্গ মানুষ আবিষ্কারের কাহিনি মুখস্থ করে, কখনো আবিষ্কারক হয়ে ওঠতে পারে না।
আবিষ্কারক হয়ে ওঠার জন্য যে সমতার নীতি প্রয়োজন তা কিছু বিসর্জন দেয় স্কুলে, কিছু কলেজে, বাকি সবটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে।

প্রত্যেক ছাত্র কঠোর পরিশ্রম করে। লাইফটারে একেবারে তেজপাতা বানাইয়া ফেলে। তারপর তারা চাকর হওয়ার যোগ্যতা লাভ করে। সত্যিই ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতার শক্তি অনেক(!)টাই পড়া শিখতেও সে মানুষকে জীবনের অর্ধসময় ব্যয় করতে বাধ্য করে!

এখানকার ছাত্র সকাল-সন্ধ্যা মুখস্থ করে আমাদের ব্যবহৃত দ্রব্যের প্রায় 95 শতাংশ সিনথেটিক। আর ভিনগ্রহের মানুষ সেই সিনথেটিক দ্রব্য সরবরাহ করে। এখানকার ছাত্র প্রযুক্তির নাম মুখস্থ করে হয় দেশ পরিচালনার কর্ণধার। আর তারা প্রযুক্তির নিত্য নতুন কৌশল আবিষ্কার করে হয় জনগণের সেবক।

পরবর্তীতে দেখা যায় সাধারণ জ্ঞান মুখস্থকারী কর্ণধারেরা দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে বেশ পরিচালনা করতে থাকে। যে বেশে মিশে থাকে আপনি বাঁচলে বাপের নামের গন্ধ। কর্মক্ষেত্রে এসেও পাশের চেয়ারে বসা মানুষটি কখনো তার সহযোগী হয়ে ওঠে না, হয়ে উঠে প্রতিযোগী। ফলে বস্তুগত কিছু আবিষ্কার করার পরিবর্তে অবস্তুগত নিন্দাপাঠ হয়ে ওঠে দিনাপাতের মূল আলোচ্য বিষয়।

এখানকার বড় বড় ডিগ্রি কেবল বিশেষ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, কখনো ক্রিয়ার মুখ দেখে না। ফলে এখানকার ক্রিয়ার নাম হিংসা, এখানকার ক্রিয়ার নাম নিন্দাপাঠ, এখানকার ক্রিয়ার নাম মিথ্যা আমিত্বের প্রকাশ এবং প্রকাশ।

ক্লাস ডিঙানো, ভালো নম্বর পাওয়া, একটি চাকরিকে নিশ্চিত নির্ভরতা মনে করা এবং প্রমোশন পাওয়ার চকলেটকে সামনে রেখে জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যায়! পৃথিবীর ইতিহাসে লেখা হয় উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত রাষ্ট্র। জাতি ভুলে যায় মোটা হওয়া মানে স্বাস্থ্য হওয়া না।

জাতি কি কোনোদিন বুঝবে না গাছের গুণগত অবস্থান ভালো না হলে ফলগত অবস্থান ভালো হয় না!?

বাদ

একটি গর্ত পূর্ণ করতে গিয়ে  আরেকটি গর্ত তৈরির কোনো মানে নেই। তাহলে গর্তচক্র আর পূর্ণচক্র অব্যহত থাকবে।

যারা নারীবাদী তারা পুরুষতন্ত্রের উপর মই চালায়, আর যারা পুরুষ তারা শিয়ালের মতো লেজকাটানীতি গ্রহণ করে। ফলে কাকড়ানীতিতে পড়ে থাকে সমাজ, স্থবির হয়ে থাকে মানব সভ্যতা।

আসলে যারা মানুষ তারা মানুষনীতিতে বিশ্বাসী। 

শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৫

কালা

তোমার মনে কালা ছিল না
ছিল কালার বাঁশি
রাধা, রাধা গো
বৃন্দাবনে ভোর হলে কিচিরমিচির, ডাকাডাকি করে সব পাখি
ভোরের ডাকে পাখির ঘুম ভাঙ্গে
তুমিও রাধা পাখি হলে
বৃথা তোমার অভিযোগ
থাকো তুমি অভিমানে
অভিমানের জল ঘোলা হলে ঢেউ উঠে মনে 

পুকুর

আমরা পুকুর কেটে বাড়ি বানাই 

শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০১৫

কুকুর আশ্বস্ত করে, কারণ বিশ্বস্ত থাকার ঐতিহ্য কুকুরেরই রয়েছে

Dog makes a hopeful dune as for the belief system is properly tenable to dog 

বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৫

গাল দিতে গিয়ে গালি দিয়ে ফেল, চুমু খেতে গিয়ে চামার হয়ে পড়ি 

বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

পাখি

পাখিটা উড়ি উড়ি করে
পাখিটা ঘুরি ঘুরি চলে।।

পাখিটা পথ চিনে না
পাখিটা ভাষা জানে না
পাখি তো জন্মের কানা
পাখিটা পথে পথে পথে ঘোরে।।

পাখিটার আশায় ফুরায় না
দুনিয়া তাকে ছাড়ে না
পাখি তো স্রোতে ভাসে না
পাখিটা ভেসে ভেসে চলে।।

পাখিটা কান্নায় হাসে
পাখিটা পিঞ্জিরা ভাঙে
পাখি তো দমে দমে চলে।। 

মা

মার কাছে শুনেছিলাম প্রথম ইশ্বর বলে কেউ আছেন। তারপর থেকে আমি আস্তিক। মা কত মহান বোকা ইশ্বর হয়ে ইশ্বর চেনান, ইশ্বর করেন ইশ্বরের বয়ান, মা কত বোকা মহান! মা দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন। মা আমার বাড়ির পাশের মেঘনা নদী, স্রোতের ভাষণ আর কলকল ধ্বণি। মা আমার কালো মাটির ঘ্রাণ, মা আমার সংগ্রাম থেকে জন্ম নেয়া একমুঠো প্রাণ।

মা তুমি যদি বল মরে যা, আমি নিজ হাতে প্রাণ উড়িয়ে দিব আকাশে। তুমিই তো মা ধরে ধরে শেখালে দৃশ্য কীভাবে আকাশ হয়ে উঠে।
ভুল হয় মাঝে মাঝে মানুষ ভেবে তোমায়, আম্মা তুমি তো মানুষ নও,জন্মান্তরের স্রষ্টা।

মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

স্মৃতির ডায়রি

কলকাতা স্টেশনে নামলাম। চিতপুর স্টেশনকে কলকাতা স্টেশন বলা হয়ে থাকে। এখন ট্যাক্সি করে যেতে হবে হাওড়া স্টেশন।
তখন রাত, তখন অন্ধকার। অন্ধকার এবং রাতের সাথে আমার ভালো পরিচয় থাকলেও কলকাতার ট্যাক্সি চালকদের সাথে আমার তেমন ভালো পরিচয় নেই। তাছাড়া আমার বন্ধুরা আগেই সর্তক করে দিয়েছে কলকাতা খুব নিরাপদ শহর না। আমি কিন্তু ভয় পেতে ভালোবাসি। তাই ভয়টাকে উপভোগ করছি। ভয় আর আমি মিলে ট্যাক্সি চালকের গাছে গেলাম।

যাবেন?

কোথায়?

আড়াই শত টাকায় যতদূর নেয়া যায়( কথাটি শুনেই ট্যাক্সি চালকের মুখে অনবদ্য হাসি)।

বসেন।

আমি ট্যাক্সি চালকের পাশের সিটে বসলাম। বসেই শুরু হলো কথা। রিক্সাচালক আর ট্যাক্সি চালকের সাথে আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্যে কথা বলি, তারাও।

কাকু, এই যে কলকাতা শহর, কলকাতা শহরে এতো আলো ঢিসঢিস করছে, অন্ধকার পরাজিত হয়ে মামার বাড়ি চলে গেছে, কার জন্য জানেন?

কার জন্য?

টমাস আলভা এডিসন, আইনস্টাইন, মাইকেল ফ্যারাডে প্রমুখ ব্যক্তিদের জন্য।

আচ্ছা কাকু,
ধরেন, টমাস আলভা এডিসন আমার মতো বয়সী, তখনও তিনি বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার করেননি। তিনি কোনো এক অপরিচিত ট্যাক্সিতে উঠলেন। আর ট্যাক্সি  চালক তাঁর কাছে যা আছে সব কিছু ছিনতাই করে তাঁকে রাস্তায় ফেলে দেয়, পরে রাস্তা থেকে একদল মানুষ তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার নাম করে তাঁর একটি কিডনিসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিক্রি করে দেয়। সুস্থ টমাস আলভা এডিসন প্রায় অসুস্থ হয়ে যায়। তাহলে কি আমরা আজকের এই বৈদ্যুতিক উন্নতি উপভোগ করতে পারতাম? আজকের এই আলোকিত কলকাতা শহর পেতাম?
আমি কি একজন টমাস আলভা এডিশন হতে পারি না!

কাকু মিটমিট করে হাসলেন। হেসে আমাকে বললেন,
কাকু তুমি টমাস আলভা এডিসন কেন, তাঁর চেয়ে অনেক শক্তিশালী হতে পারো, কিন্তু আমি সেই ছিনতাইকারী হতে পারি না!

না কাকু আমি কিন্তু আপনাকে ছিনতাইকারী বলছি না। আমি বলতে চাচ্ছি প্রতিটি মানুষ অনেক বড়, অনেক সম্ভাবনাময়!

বা প রে,  তোমার মতো করে যদি কেউ ভাবতো তাহলে আংশিক হলেও তার বাস্তবায়ন দেখতে পেতাম, পৃথিবী অনেক সুন্দর হয়ে যেত।

আমার তখন মনে পড়লো সুফিয়া কামালের কথা যিনি বলেছিলেন পৃথিবীতে ভালো মানুষদের সংখ্যা বেশি কিন্তু তাঁরা বিচ্ছিন্ন, আর খারাপ মানুষদের সংখ্যা কম কিন্তু তারা একত্রিত। 

সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

কম জানলে

এখানে কম জানলে বোকা, বেশি জানলে পণ্ডিত, মধ্যমজ্ঞানী হারিকেন মার্কা বলদ।
এখানে বোকাদের জন্য রয়েছে তাচ্ছিল্য, পণ্ডিতদের জন্য গালি আর বলদের জন্য পায়ের চাপাতি। 

মানুষ কত বাঁকা কুকুরের লেজও সোজা দেখতে চায় 

রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

তুমি তুমি

যখন ঘুমাই তখন শুধুই ঘুমাই
যখন খেলি তখন শুধুই খেলি
যখন পড়ি তখন কেবলই পাঠক
যখন অস্ত্র হাতে তুলি তখন কেবল গুলি চালাই-- লাল, নীল, হলুদ গুলি

আমি যখন তোমাকে দেখি শুধু তোমাকেই দেখি,
কসম খোদার, তোমাকে যেভাবে দেখি কেউ তোমাকে এমন করে দেখে না, এমনকি তুমিও না,
যে মশাটি সময় করে তোমার দেহ থেকে তুলে নেয় রক্ত সেও জানে না তোমার লালায় কীভাবে আমি মানুষ হয়ে উঠি, তোমার বাম চোখে আমার চুম্বন কেমন করে মন্দিরের ঘণ্টা হয়ে যায়।

আমি তোমাকে দেখি একজন মা প্রসব ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে তার সন্তানকে যেমন করে দেখতে চায়। আমি তোমাকে দেখি মাঝ রাতের সেই পাগলটির মতো যে চানকে আগলে রাখতে চায় বুকের দিন্দুকে। আমি তোমাকে দেখি সাগরের তীব্র স্রোতে ভাষা যেখানে নিশ্চুপ।

আমি তোমাকে দেখি দেখার মতো বলার মতো না, বলার মতো না।

শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বিরহের গান

একজন মেয়ে সবচেয়ে কম্পিত হয়ে থাকে যখন কেউ তাকে বলে ভালোবাসি। মেয়েটি বিশ্বাস করতে চায় না তাকে কেউ ভালোবাসতে পারে। কারণ এই সমাজ তাকে বঞ্চিত হতে শেখায়। এই সমাজ তাকে বঞ্চিত করে। বেডরুম থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের করিডোর পর্যন্ত মেয়েটিকে মনে রাখতে হয় সে মেয়ে।

বিজ্ঞাপনের প্রধান প্রসাধনী মেয়ে। বিলবোর্ডের স্লিম ফিগার নারী জানে না দোকানের বাদাম-চানাচুর মতো উঠানো-নামানো হয় তার দর-দাম। মেয়েটিও জানে না কেন তার ফিগার স্লিম রাখতে হবে।
প্রথমে মেয়েটি দুর্বল হয় ঘরে। কারণ তার দাদার চেয়ে কম খেতে হয়। তারপর মেয়েটি দুর্বল হয় বাইরে। কারণ বাইরে মেয়েরা খাবে(?),এই সমাজ তা হতেই দিবে না।আরেকবার মেয়েটি দুর্বল হয় স্লিম ফিগারের বাহানায়। শারীরিক দুর্বলতা এক সময় চিত্তে প্রবেশ করে। আমাদের মায়ের জাত হয়ে পড়ে চিত্তগতভাবে দুর্বল, তেলাপোকা দেখলে ভয় পায়, কুকুরের ডাক শুনলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

অপর দিকে পুরুষ হয়ে ওঠে নায়ক। নারী কখনো নায়িকা হয়ে ওঠতে পারে না। বরাবরই হয়ে ওঠে লতানো বৃক্ষ যে প্রতিনিয়ত আশ্রয় খোঁজে, অবলম্বন খোঁজে, তার কণ্ঠে থাকে আশ্রয় নির্ভর গান--

এক জাতের লতা আছে
বাইয়্যা সে উঠে গাছে
গাছ মরিলে লতাও মরে
তবুও লতা গাছ ছাড়ে না।।


আর পুরুষ প্রথমে ভালোবাসার ইয়ামি ইয়ামি চকলেট খাওয়ায়, চকলেট পর্যন্তই তার ভালোবাসা সীমাবদ্ধ, তারপর কালো কাপড় দিয়ে বন্ধ করে দেয় মেয়েটির দেখার দৃষ্টি। অনেকটা এক সময়ের ভালো লাগা বিটিভি বিজ্ঞাপনের মতো--


ও সুন্দরী মরতে পারি, তুমি গলার মালা

ভালো কথা, খুবই আবেগময় কথা। কিন্তু পরে শুনতে পাই--


এই না দেখ তোমার জন্য আনছি আর সি কলা
কন্যা কেন নাও ডাইব কিংবা লেমন
ডাইব বোতলে বুঝবে সুখী ভালোবাসি কেমন


কেমন দারুণ ভালোবাসার চিত্র! যার জন্য মরতে পারে তার জন্য নাকি লেমন বোতলে ভালোবাসা জমা হয়। হায়রে পুরুষ নারী চিনলে না, হায়রে এক হাত তোমার অপর হাতের কথা ভাবলে না!

নারীর বিশাল, অসীম এলাকা সে মা। জমি উর্বর থাকলে বীজ ভালো হবে, বীজ ভালো হলে জমি ফসলা-শ্যামলা হবে। প্রত্যেক মানুষকে মায়ের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে আসতে হয়। মা যদি দুর্বল থাকে সমস্ত জাতি জন্মগতভাবে দুর্বল হতে বাধ্য।
আসলে পাগলই নিজের ভালোটা বুঝে, সামাজিক মানুষ পাগলকে বুঝে না।

সিনেমার পর্দায় প্রত্যেক পুরুষ মেয়েকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়। আর মেয়েটি রাতে বিছানায় শুয়ে স্বপ্ন দেখে। প্রেম এখনো মেয়ের কাছে স্বপ্ন আর ছেলের কাছে কর্ম। কর্ম আর স্বপ্নের মাঝখানে প্রেম হয়ে পড়ে প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী প্রেম কখনো পরিণতির খোঁজ পায় না। তাই প্রেম এখানে বিরহের অপর নাম। বিরহের গান এখানে মূলত গান। 

বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ইদ

Either eat or be eaten কথাটির আজ আনুষ্ঠানিক উৎসব,
আজ ইদ-উল-আযহা 

ইচ্ছা

জন্ম হবে আমার হয় সুরে নয় নদীর জলে, হয় কৃষ্ণের বাঁশির তলে নয় মৃত্যুর একনিষ্ঠ নলে 

ইচ্ছা

জন্ম হবে আমার হয় সুরে নয় নদীর জলে, হয় কৃষ্ণের বাঁশির তলে নয় মৃত্যুর একনিষ্ঠ নলে 

ইচ্ছা

জন্ম হবে আমার হয় সুরে নয় নদীর জলে, হয় কৃষ্ণের বাঁশির তলে নয় মৃত্যুর একনিষ্ঠ নলে 

ইচ্ছা

জন্ম হবে আমার হয় সুরে নয় নদীর জলে, হয় কৃষ্ণের বাঁশির তলে নয় মৃত্যুর একনিষ্ঠ নলে 

মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

মন

বেয়াদব চোখ মন দেখে না, স্তন দেখে
বোকা চোখ স্তন দেখে না, মন দেখে
মানবিক চোখ মনের পাশে এক দেশের এক পাহাড় দেখে 

সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

শূন্যতা

বায়ু শূন্যতা পছন্দ করে না। যেখানে বায়ু শূন্য হয়ে যায় সেখানেই ছুটে চলে দলে দলে বাতাস। বায়ু খেয়ে, বায়ু মেখে বেঁচে আছে মানুষ।

দুর্গা, পুরুষ তোমার অবয়ব বানাতে গিয়ে বানিয়ে ফেলে তার প্রেমিকার অবয়ব

শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বউ

মুরুব্বিরা  গরু কিনতে যায়। গরুর দাঁত দেখে, পা দেখে, চামড়া দেখে, চামড়ার কালার দেখে, মাংস কিংবা দুধের হিসাব-নিকাশ করে।

আসলেই গরু গৃহপালিত প্রাণি!


মুরুব্বিরা বউ কিনতে যায়। বউয়ের দাঁত দেখে, পা দেখে, চামড়া দেখে, চামড়ার কালার দেখে, চুল দেখে, আসমানী জ্ঞান কেমন আছে তা যাচাই করে।


আসলেই বউ গৃহপালিত রমণী! 

আগুন থেকে আগুন নিলে মনে হয় মানুষ থেকে মানুষ 

কন্যাসন্তান

দায় মানে কোনো কিছুর উপর অন্যের অধিকার। কন্যাসন্তান পিতা-মাতার কাছে এক প্রকার দায়। প্রতিটি কন্যাসন্তান দায় হয়ে জন্মগ্রহণ করে  যাহাদের শরীরে অদৃশ্যভাবে লেখা থাকে চাহিবার মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবেন।

শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ডায়রি

এখন নিজের একটু প্রচার করবো, আত্মপ্রচারণা....

স্বরকল্পন আবৃত্তিচক্র ঢাকার আবৃত্তি পরিবারে একটি পুরাতন ও গুরুত্বপূর্ণ নাম। তারা সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রযোজনা তৈরি করে থাকে।

এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না
এই জল্লাদের উল্লাস মঞ্চ আমার দেশ না " এই শিরোনামে মাহাদী হাসানের নির্দেশনায় প্রায় দুই ঘণ্টা সময়কে সামনে রেখে একটি স্ক্রিপ্ট তৈরি করা হয়। তৈরি করা স্ক্রিপ্ট-এ আমার লেখা রংপুরে এক পাখি জন্মে " গানটি এবং তারানি সিরিজের কয়েকটি অংশ সংযুক্ত হয়। আমি তাতে বিশাল খুশি। আমার খুশি দেখে কে!

এখন আসি আসল কথায় ....

অনুষ্ঠান শেষে আমাকে মঞ্চে আহবান করা হলো। জানতে চাওয়া হলো আমার অনুভূতি।

আচ্ছা আপনারাই কন, আমার লেখা আবৃত্তি শিল্পীরা মুখস্থ করবে, আবৃত্তি করবে, আর আমি শুনবো,  আমি আনন্দে আনন্দে ফালা ফালা হয়ে যাওয়ার কথা না, আর যদি আনন্দে ফালা ফালা না অই তাইলে আমার মিছা ভাব নেয়া অইবো।

আমি যা কইছি ....

ছোট কালে দেখতাম আব্বা বাজার থেকে লাল শাক কিনে আনছে। টকটকে লাল শাক। আমার বোনেরা শাক বানাচ্ছে। ঠাকুরমা শাক কেটে কেটে আম্মার কাছে দিচ্ছে। আম্মা রান্না করে আমাকে খেতে ডাকছে। আর আমি লাল শাক পেয়ে মহা খুশি।
আমি জানি না আজ স্বরকল্পন পরিবার কার কাজটি করেছে-- আমার মায়ের?  আমার বাবার?  আমার বোনের? না আমার ঠাকুরমার!

বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

সূর্য কি মেঘের প্রেমিক যার তাপে মেঘ ধীরে ধীরে নি:শেষ হয়ে যায়?

Is the cloud loveable beloved of the sun that amortizes the cloud slowly slowly? 

বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

অন্ধ

অন্ধ ডাক্তার, অন্ধ কবিরাজ, অন্ধ ছাত্র, অন্ধ ব্যবসায়ী হতে পারে।
অন্ধ প্রেমিক?
অসম্ভব!
প্রেমিক হওয়ার জন্য উন্মুক্ত দুটি চোখ থাকা আবশ্যক। একটি চোখ হলেও চলবে না। কারণ প্রেমের মন্দিরে ডিসকাউন্ট চলে না। 

ভালোবাসতে গিয়ে

ভালোবাসতে গিয়ে মানুষ হয়ে ওঠি।
কোনো কালে মানুষ ছিলাম না।
মানুষের জন্য ঘর-সংসার, আদা-মরিচ, পেঁয়াজের ঘাটতি বাজার। বিশ্বায়নের মতো দৃষ্টিভঙ্গির বদল তোমাদের হতে পারে। আমার আপেল গাছের নিচে নিউটন বসা থাকে। কৃষ্ণের বাঁশি আমার ঠোঁটের অলঙ্কার। লিপজেল চামড়ায় আর নিরাপদ বোধ করি না। যে নিরাকার মানুষ আমার হৃদয় কামড়ে রাবার করেছিল তাহার সংবিধান গঙার স্রোতের মতো ভাসমান। আমি তো জলের নিচের এক ঝাঁক চিত্রকল্প স্রোতহীন ভাস্কর্যের মতো স্থির।

মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

পরাজয় মানুষকে নিজের দিকে টেনে আনে আর জয় মানুষকে ভাসমান করে

মার্কেটিং

নগদে পন্য বিক্রি করা হলো পাঁচ হাজার টাকা এবং এর জন্য ভ্যাট ধার্য করা হলো পঞ্চাশ টাকা।

নগদান হিসাব ডেবিট
বিক্রয় হিসাব ক্রেডিট
ভ্যাট হিসাব ক্রেডিট

ভ্যাট হিসাবটি এখানে দায়। হিসাববিজ্ঞানের ভাষায় দায় বৃদ্ধি ক্রেডিট। যেহেতু প্রতিষ্ঠানের দায় বৃদ্ধি পেয়েছে তাই ভ্যাট হিসাবটি ক্রেডিট দেখানো হয়েছে।
হিসাববিজ্ঞানের এই সহজ হিসাবটিও জটিল করে বাংলাদেশের হিসাব বিজ্ঞানীরা। খুব গোপনে ভ্যাট হিসাবটি বিক্রয়ের সাথে এ্যাড করে ক্রেডিট দেখায় যার ফলে দায়টিও প্রতিষ্ঠানের আয় হিসাবে পরিগণিত হয়ে যায়।
আবার যিনি হিসাব বই অডিট করার জন্য আসেন তিনিও সন্তুষ্ট থাকেন যদি এমন এনকাউন্টার এন্ট্রি পাওয়া যায়। কারণ তাতেই তিনার পকেট ভারি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এমন আরো অনেক সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ।

এখানে টাকা উপার্জনের জন্য ব্যবসা করতে হয় না সব সময়। এতিমখানার নামেও ব্যবসা করা যায়। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কিন্তু লাভেমূলে গাদাগাদা।
প্রত্যেক পীরে কামেলের একটি এতিমখানা থাকে। ছদকার সমস্ত অর্থ, সরকারি অনুদান, বিদেশি অনুদানে এতিমখানার ফান্ড জমজমা। আবার মুরীদগনের বিশেষ অর্থদান তো আছেই। এতিমখানাতেও চলে হিসাবের কারচুপি। যে কর্ম দিবসে সরকারি লোক এতিমখানা পরিদর্শনে আসে সেই কর্ম দিবসে এতিমখানার এতিমদের সংখ্যা বেড়ে যায়। সরকারি পরিদর্শক যেনো এতিমখানার প্রতি বিশেষ নজর দেন সেই জন্য চলে বিশেষ অ্যাপায়ন। সরকারি লোক আল্লার বিশেষ বান্দাদের খেদমত বিশেষভাবে মনে রাখেন।

এইভাবে সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যদি সেবাখাত নামে কোনো খাত থাকে তবে সরকার সেবাখাতদারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কর কম নেন। কর কম দেয়ার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলে। কিন্তু সেবাখাতের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে রমরমা ব্যবসা।

এইভাবেই বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীর নির্ভয়যোগ্য আশ্রয়স্থল।

ছোট কালে নিউজ পেপার নামে প্যারাগ্রাফ লিখতে হতো আমাদের। প্রশংসা বনাম প্রশংসা বাক্য দিয়ে আমরা শেষ করতাম নিউজ পেপার প্যারাগ্রাফ লেখা। আর আজকে দেখি নিউজ পেপার বের করা পরিপূর্ণ একটি মার্কেটিং প্লান। যেকোনো গ্রুপ অব কোম্পানির একটি জীবন্ত মিডিয়া থাকা আবশ্যক। কারণ তাতে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা তৈরি হয়।

একদিনের কথা।

বাসে বসা। পাঞ্জাবি গায়ে, টুপি মাথায় এক দাড়িওয়ালা লোক বাসে ওঠলেন। ওঠেই তিনি মধুর কণ্ঠে সবাইকে সালাম দিলেন,

আল্লার পেয়ারা বান্দাদের একটু সুনজর কামনা করি। আল্লা ইনসানকে সৃষ্টি করেছেন ইনসানের  কল্যানের জন্য। ইনসানের কল্যানের চিন্তা যে ইনসান করে স্বয়ং আল্লা সেই ইনসানের জামিনদার হয়ে যান। মানুষের রোগ তিন হাজারেরও উপরে। ডাক্তার, বিজ্ঞানী আজও তা আবিষ্কার করতে পারে নাই। এই আল্লার আয়াত আপনাদের সমস্ত বালা মুছিবত দূর করে দিবে ইনশাল্লাহ।

তখনো লোকটির কথা কেউ শুনছে না। কারণ এমন কথা তারা অনেক শোনে থাকে। যখনি লোকটি বলে, আল্লার পেয়ারা বান্দারা এই আয়াতের জন্য কোনো প্রকার হাদিয়া দিতে হবে না তখনই সবার মনোযোগের দরজা সজাগ হয়ে গেল। তখন যাত্রীরা একে একে সবাই আল্লার আয়াত নিতে লাগলো। অনেকে আবার দুটি করে আল্লার আয়াত নিতে লাগলো।

এইখানে আয়াতের বরকত শেষ হতে পারতো কিন্তু হল না। কারণ হুজুরের অনেক ওয়াজ তখনো অসমাপ্ত। হুজুর আবার ওয়াজ শুরু করে --

আল্লাহতালার এই পবিত্র আয়াত একটি তাবিজের মধ্য দিয়ে ব্যবহার করতে হবে। তাবিজের মাল-মসলা হতে হবে রূপার এবং তামার। ঝমঝম কূপের পানির মধ্যে তাবিজটি তৈরি করার সাথে সাথে একদিন ডুবিয়ে রাখতে হবে, তারপর.... ।

খোদার কসম এইভাবে তাবিজ তৈরি করার পর যখন আল্লার এই পবিত্র আয়াত ব্যবহার করবেন তখন আপনার শরীরে মৃত্যু ব্যতীত অন্য কোনো রোগ থাকবে না।
সবার প্রফুল্ল চেহারা তখন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।

তখন হুজুর আবার বলে চলল--

আপনাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে আমি নিজেই তাবিজ তৈরি করে এনেছি। তাবিজ তৈরি করতে আমার খরচ হয়েছে চল্লিশ টাকা। আপনাদের জন্য মাত্র বিশ টাকা, বিশ টাকা। এই পোশাকের ভেতরে যদি কোনো মানুষ থেকে থাকে কসম খোদার মৃত্যু ব্যতীত আপনাদের অন্য কোনো রোগ থাকবে না।

তখন প্রত্যেক ফাও-খাওয়া-সদস্য একটি করে তাবিজ নিতে বাধ্য। আর হুজুর তার ব্যবসা চমৎকারভাবে করে চলে গেলেন।
এইভাবেই বাংলাদেশ, বাংলাদেশের বিজনেস প্লান, বাংলাদেশের মার্কেটিং প্লান ( Marketing is nothing but a cheating where minimum input and maximum output is the main warble)।