বাজে কাজ করতে অভ্যস্ত আমি। যেকোনো বাজে কাজই ঘোষণা দিয়ে করতে আমার আপত্তিতে বাঁধে না। এমন নয় বাজে কাজ কেবল আমিই করি। আমার এককালীন গুরু কাজী নজরুলের সুরকথার মতো আমার ভেতরও রচিত হয় আত্মকথন--
প্রভু, তুমি অন্তর স্থলের খবর জান/ভেবে আমি লাজে মরি/লোকচক্ষে ফাঁকি দিয়ে কি না ভাবি, কি না করি।
বাজে কাজ এত শক্তিশালী যে পৃথিবী এখনো টিকে আছে বাজে কাজের জাগতিক মহিমায়। পৃথিবী শিশুময় হতে পারতো কিন্তু বাজে কাজের জন্য প্রাকৃতিক গান ফিল্টারিং হয়ে কানে আসে। ফলে আওয়াজ আর কেওয়াজ ভিন্ন পরিবারের লোক। অসংখ্য বাজে কাজের মধ্যে আমি যে বাজে কাজটি বিশেষভাবে করি তা হল
`পড়াশোনা'।
জনাব পড়াশোনার সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য লাইব্রেরিতে যাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে । লাইব্রেরিতে জনাব পড়াশোনা বেশ জনপ্রিয়। লাইব্রেরিতে সব সময় গম গম, দম দম অবস্থা। মশা- মাছি তাড়িয়ে লাইব্রেরিতে ঢুকি। তিন তলার কোণায় একটি সিট আমার দিকে চেয়ে আছে। কোণার সিটটিতেই বসলাম। সিটটা সিট হিসেবে বেশ আরামদায়ক। টেবিলে ব্যাগ রেখে, ব্যাগের সাথে সিটের বন্ধন তৈরি করলাম যাতে বেদখল না হয়ে যায়। সিট, টেবিল, ব্যাগ যেন এক আত্মা।
বাইরে থেকে নাস্তা করে এসে দেখি এক আত্মার সম্পর্ককে ভেঙে দেয়া হয়েছে। আমার জন্য রাখা হয়েছে একটি অসুস্থ সিট। আমার সিটটি পাশের জনের পুটকির নিচে। মেজাজ কুড়ালের কুপের মতো মাত্রা মেনে রেগে উঠল -- ভেতরে ভেতরে।
ছোট কালে হারকিউলিস দেখতাম। হারকিউলিসকে যারা আক্রমণ করতে আসতো তাদের তরবারি রেগে উঠার আগে তারাই তেলে বেগুনে রেগে উঠতো। হারকিউলিস শুধু ঠাণ্ডা মাথায় তাদের রাগান্বিত অবস্থাটা কাজে লাগাতো। অনেকটা শচীন টেন্ডুলকারের স্ট্রেটকাট ড্রাইভের মতো। বলঅস্র যতই দ্রুত আসুক তরবারিবেট শুধু আস্তে করে পোস করবে।
আমিও রেগে গেলে হারকিউলিসনীতি মেইনটেইন করি। নিশ্চুপ এক দৃষ্টি প্রতিবেশী পড়ুয়ার প্রতি দিলাম। দেখলাম সে বিসিএসের ট্রেইনার। তার প্রশিক্ষণের এলাকা বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ। আস্তে আস্তে তার কানের কাছে মুখটি নিলাম। কইলাম,
ভাই, একটি এম সি কিউর (Collection Of Multiple Choice Questions) উত্তর মাথায় আসছে না, একটু সহযোগিতা করতে পারবেন?
সে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠল।
তারপর প্রশ্নের পালা,
আচ্ছা ভাই, আপনি তো বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ পড়ছেন। আশা করি যুগ বিভাজন সম্পর্ক আপনার ধারণা বেশ স্বচ্ছ। যদি বলতেন একজনের সিট আরেক জন নিয়ে যাওয়া কোনো যুগের ঘটনা তাহলে কৃতার্থ হই।
প্রশ্নটি শুনার সাথে সাথে ভাইয়ের চোখ বড় হয়ে আসে, কান খাড়া হয়ে যায়, অধর আর ওষ্ঠের মাঝে মাছি ঢুকার মতো ফাঁক তৈরি হয়, ডান হাতটি একটি শাদা কাগজের বিস্তৃত এলাকায়। শাদা কাগজের এক কোণায় কয়েকটি কালো শব্দ চোখ মেলে তাকিয়ে আছে --
জো সো বুধী সোই নিবুধী।
জো সো চৌর সোই সাধী।।
কালো শব্দগুলো দেখার সাথে সাথে আমি কোথায় আছি ভুলে গেছি। একটি অদৃশ্য আমের আত্মচিৎকার কানে আসছে কেবল, যে আমটি গাছের মগডালে ছিল, যে আমটি সূর্যের আর বাতাসের বিশেষ সহায়তায় পর্যাপ্ত সালোকসংশ্লেষণে হয়েছিল স্বাস্থবতী। ইচ্ছা ছিল যার আকাশ ছোঁয়ার, আকাশ ছোঁয়া আর হলো না তার , পেল না মাটিমানুষের প্রিয় হাতের স্পর্শ। তার শরীরে এখন কেবল কাকের ঠুকর, তার কণ্ঠে এখন কেবল কান্নার স্লোগান যেখানে আওয়াজ আর কেওয়াজ একই পরিবারের সদস্য।
প্রভু, তুমি অন্তর স্থলের খবর জান/ভেবে আমি লাজে মরি/লোকচক্ষে ফাঁকি দিয়ে কি না ভাবি, কি না করি।
বাজে কাজ এত শক্তিশালী যে পৃথিবী এখনো টিকে আছে বাজে কাজের জাগতিক মহিমায়। পৃথিবী শিশুময় হতে পারতো কিন্তু বাজে কাজের জন্য প্রাকৃতিক গান ফিল্টারিং হয়ে কানে আসে। ফলে আওয়াজ আর কেওয়াজ ভিন্ন পরিবারের লোক। অসংখ্য বাজে কাজের মধ্যে আমি যে বাজে কাজটি বিশেষভাবে করি তা হল
`পড়াশোনা'।
জনাব পড়াশোনার সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য লাইব্রেরিতে যাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে । লাইব্রেরিতে জনাব পড়াশোনা বেশ জনপ্রিয়। লাইব্রেরিতে সব সময় গম গম, দম দম অবস্থা। মশা- মাছি তাড়িয়ে লাইব্রেরিতে ঢুকি। তিন তলার কোণায় একটি সিট আমার দিকে চেয়ে আছে। কোণার সিটটিতেই বসলাম। সিটটা সিট হিসেবে বেশ আরামদায়ক। টেবিলে ব্যাগ রেখে, ব্যাগের সাথে সিটের বন্ধন তৈরি করলাম যাতে বেদখল না হয়ে যায়। সিট, টেবিল, ব্যাগ যেন এক আত্মা।
বাইরে থেকে নাস্তা করে এসে দেখি এক আত্মার সম্পর্ককে ভেঙে দেয়া হয়েছে। আমার জন্য রাখা হয়েছে একটি অসুস্থ সিট। আমার সিটটি পাশের জনের পুটকির নিচে। মেজাজ কুড়ালের কুপের মতো মাত্রা মেনে রেগে উঠল -- ভেতরে ভেতরে।
ছোট কালে হারকিউলিস দেখতাম। হারকিউলিসকে যারা আক্রমণ করতে আসতো তাদের তরবারি রেগে উঠার আগে তারাই তেলে বেগুনে রেগে উঠতো। হারকিউলিস শুধু ঠাণ্ডা মাথায় তাদের রাগান্বিত অবস্থাটা কাজে লাগাতো। অনেকটা শচীন টেন্ডুলকারের স্ট্রেটকাট ড্রাইভের মতো। বলঅস্র যতই দ্রুত আসুক তরবারিবেট শুধু আস্তে করে পোস করবে।
আমিও রেগে গেলে হারকিউলিসনীতি মেইনটেইন করি। নিশ্চুপ এক দৃষ্টি প্রতিবেশী পড়ুয়ার প্রতি দিলাম। দেখলাম সে বিসিএসের ট্রেইনার। তার প্রশিক্ষণের এলাকা বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ। আস্তে আস্তে তার কানের কাছে মুখটি নিলাম। কইলাম,
ভাই, একটি এম সি কিউর (Collection Of Multiple Choice Questions) উত্তর মাথায় আসছে না, একটু সহযোগিতা করতে পারবেন?
সে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠল।
তারপর প্রশ্নের পালা,
আচ্ছা ভাই, আপনি তো বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ পড়ছেন। আশা করি যুগ বিভাজন সম্পর্ক আপনার ধারণা বেশ স্বচ্ছ। যদি বলতেন একজনের সিট আরেক জন নিয়ে যাওয়া কোনো যুগের ঘটনা তাহলে কৃতার্থ হই।
প্রশ্নটি শুনার সাথে সাথে ভাইয়ের চোখ বড় হয়ে আসে, কান খাড়া হয়ে যায়, অধর আর ওষ্ঠের মাঝে মাছি ঢুকার মতো ফাঁক তৈরি হয়, ডান হাতটি একটি শাদা কাগজের বিস্তৃত এলাকায়। শাদা কাগজের এক কোণায় কয়েকটি কালো শব্দ চোখ মেলে তাকিয়ে আছে --
জো সো বুধী সোই নিবুধী।
জো সো চৌর সোই সাধী।।
কালো শব্দগুলো দেখার সাথে সাথে আমি কোথায় আছি ভুলে গেছি। একটি অদৃশ্য আমের আত্মচিৎকার কানে আসছে কেবল, যে আমটি গাছের মগডালে ছিল, যে আমটি সূর্যের আর বাতাসের বিশেষ সহায়তায় পর্যাপ্ত সালোকসংশ্লেষণে হয়েছিল স্বাস্থবতী। ইচ্ছা ছিল যার আকাশ ছোঁয়ার, আকাশ ছোঁয়া আর হলো না তার , পেল না মাটিমানুষের প্রিয় হাতের স্পর্শ। তার শরীরে এখন কেবল কাকের ঠুকর, তার কণ্ঠে এখন কেবল কান্নার স্লোগান যেখানে আওয়াজ আর কেওয়াজ একই পরিবারের সদস্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন