শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৬

গ্রাম

জাঙালিয়া নামে এক গ্রামে গেলাম। গ্রামটি যেন মমতা দিয়ে ঘেরা, গ্রামের সারা শরীরে সবুজের লোম। হাড়িধোয়া নামে হ্রদের মতো একটি নদী গ্রামীণ পরিবেশে জলভেজা আবেদনকে পরিপূর্ণ করে রেখেছে। ধানের সবুজ অবুঝ মনটিকে সান্ত্বনার চকলেট দিয়ে নাচিয়ে রাখে সারাক্ষণ। নাম নাজানা কিছু পাখির অচেনা সুর হৃদয়ের কোন অচেনা গলিপথে যেন হামাগুড়ি দিয়ে জায়গা করে নেয়।

এখানকার মানুষেরা মানুষের মতো সহজ, সরল, সাবলীল। হোমিও ডাক্তার কাসেম চাচ্চু, কবিরাজ লিটনদা জীবনকে উপলব্ধি করে বিশ্বাসে। প্রশ্ন করা তারা এখনো শেখেনি।

তাতে কী?

শান্তিপূর্ণ জীবনই তো সকল প্রশ্নের উত্তর বাড়ি।

সমস্যা নেই। তারা শান্তিতেই আছে।

চায়ের স্টলগুলো যেন আত্মীয়বাড়ির আলগা ঘর -- আড্ডার আত্মার নিকটতম জায়গা। কাহারা সারা দিনের জমানো ব্যথা, অভিমান, চাপা ক্ষোভ, ঘৃণা এই চায়ের দোকানে রেখে যায়, চায়ের দোকান তাদের হাজারো কথা বুকে ধারন করে মূর্তিমান, নির্বাক অথচ সজীব। কলার হলুদ আবেদন খাবারের রুচিবোধকে শিল্পসম্মত করে তোলে।

চাস্টলে ঢুকলাম।

চার কাপ দুধ দাও ভাই

যেহেতু সরাসরি গরুর দুধ সেহেতু হাতছাড়া করার মানে হয় না। ছেলেটি দুধ দিলো। আমরা দুধ পান করছি।

কিছু মনে নিওন না

কেন রে ভাই

দুদডা একটু বাহি

জানতে পারি দুধ আগের দিন সকালের। রেগে যাওয়ার কথা কিন্তু শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে এলো, ছেলেটির সততার কাছে মাথা নত করতে হলো। জায়েদা সরবতের সাথে বিষ মিশিয়ে দিয়ে প্রানপ্রিয় স্বামী ইমাম হাসানকে  হত্যা করে ফেলে,
আর এই ছেলেটি বাহি দুধ আমাদেরকে খাওয়ানোর আগে অনুমতি প্রার্থনা করছে .....শহরের মানুষ টিস্যু পেপার সিদ্ধ করে দুধের ফ্লেবার মিশিয়ে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত ধোঁকা দিচ্ছে,
আর এই ছেলেটি বাহি দুধ খাওয়ানোর আগে অপরাধবোধ তাকে অতুলপ্রসাদ করে তুলছে....

সত্যিই সততা চকচকে কালার, বার্নিশ করা ফার্নিচার  আর ভদ্রপল্লীতে খুঁজিয়া পাওয়া বিরল, সততা থাকে এখানে-- সহজ সরল মানুষের কাছে, রাস্টটিক টাইপের মানুষের কাছে....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন