শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০১৬

ইতেকাফ

রমজান মাস। ষষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। কিছু একটা করতে হবে। অবশ্যই ভালো কিছু। আত্মা সমৃদ্ধ হয় এমন কিছু। আমি কিছু করতে চাইলে কখনো আমার পরিবার আপত্তি করেন না। সেই কারনে আমার পরিবারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

ইতেকাফ করবো। দশ দিনের জন্য। মসজিদে করতে পারি। কিন্ত মসজিদে যারা ইতেকাফরত থাকেন তারা পৃথিবীর বাইরে যেতে পারেন না। আমি পৃথিবীর বাইরে যেতে পছন্দ করি। এখনো আমি পৃথিবীর বাইরে চলে যায় দুই-একদিনের জন্য। পৃথিবীর বাইরে থেকে পৃথিবীকে যখন দেখি তখন কেমন যেন নিজেকে আলগা আলগা লাগে।

রমজান মাসের বিশ তারিখ। ছোট্ট রুমটিতে বসে গেলাম। ইতেকাফরত দুনিয়াবি কথা বলা হারাম। দুনিয়াবি কথা তো দূরের বিষয় কথাই বলি না। একদিন একদিন করে পাঁচ  চলে গেলো।

তারপর সেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ রাত। রাত শ্রেষ্ঠ হলে ভালোই লাগে, কারন অন্ধকার আমার প্রিয় খাবার। মসজিদ থেকে শানে হাবিব, শানে রাসূল টাইপের ওয়াজ কানে আসতেছে। আমি নবীজির দরূদ পাঠে মশগুল। ভোর রাত, দুপুর রাত চলে গেলো। এখন বিকেল রাত। আমি দরুদ পাঠে মশগুল।

হঠাৎ দেখি টিনের চালা চোখের সামনে থেকে উধাও!  সারা শরীরে শীতল প্রবাহ শুরু হয়ে গেলো। আসমান-জমিন সমান এক লোক। লোকটির শরীরের তুলনায় মাথা নিতান্ত ছোট। শিকারি চিলের মতো লোকটি চেয়ে  থাকে। থরথর করে কাপতে থাকি। চিকন ঘাম বের হচ্ছে। আমাকে শোয়ানো হলো। মাথায় জল ঢালছেন মা, সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা চলছে -- কিচ্ছু হয়নি পুত, কিচ্ছু হয়নি, সব ঠিক অইয়্যা যাইবো, একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো বাপজান আমার...।
আমার চোখ দিয়ে জলের ধারা নেমে আসছে। কখন যেন লোকটিকে, চোখের জলকণাকে ফাঁকি দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম, বুঝতেই পারিনি।

ঘুম থেকে জেগে দেখি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ রাত উধাও, আসমান-জমিন সমান লোকটিও উধাও। কিন্তু ভয় রয়ে গেলো আমার অন্তরে অন্তরে। ভয়ে ভয়ে সবাই যখন ইবাদত করে আমি তখন ভয়ে ভয়ে ইবাদত করি না -- লোকটি যদি আবার চলে আসে, আবার যদি শরীর বেয়ে চিকন ঘাম বের হতে থাকে, আবার যদি আমাকে ঘুমিয়ে যেতে হয় ....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন