মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০১৫

মন্দিরদর্শন

বালিব্রিজ। বালিব্রিজের নিচে জলের কোলাহল। জলের সান্নিধ্য পেলে আমার এক হাজার বছরের পুরনো দুঃখগুলোর সন্তরণ ঘটে, আমি তখন স্বাভাবিক মানুষ, আমার দীর্ঘশ্বাসগুলোও তখন কেমনতেমন জীবন হয়ে ওঠে।

বালিব্রিজের  নিচে যে জল সম্প্রদায় তাদের প্রাদেশিক নাম গঙ্গা (গঙ্গা মা)। গঙ্গাকে আমার কিন্তু মা মনে হয় না-- বান্ধবী মনে হয়, রাজনগরের সেই বান্ধবী যে এখন চাকর হওয়ার জন্য কোমর বেঁধে নেমেছে পড়াশোনায়। বান্ধবী মনে হওয়ার অবশ্যই আরেকটি কারণ আছে -- কারণ সে ভাঙ্গতে জানে। বান্ধবী তো এমনই যে আমাকে গড়বে গড়বে কিন্তু ভাঙনের মধ্য দিয়ে।

বালিব্রিজের  নিচে গঙ্গা।  গঙ্গার সঙ্গে নয়, পাশে দক্ষিণেশ্বর মন্দির। মন্দিরটি জলাতঙ্ক প্রেমে আক্রান্ত। এখানে কিছু হনুমান দৃশ্যমান যারা মানুষের মতো সামাজিক। কিন্তু শান্তিনিকেতনের হনুমানগুলো এখনো যথেষ্ট অসামাজিক, নতুন মুখ দেখলেই তেড়ে আসতে চাই, পুলিশের ভয় দেখায়।

দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ঢুকেই পুরনো মানুষ-মাটির ঘ্রাণ পেলাম। মন ধ্যানে রেখে উপলব্ধি করা চেষ্টা করলাম এই মন্দিরের প্রথম যৌবনে কারা তাকে চর্চা করতেন। কবুতর এখানে গৃহপালিত মেহমান। কবুতরের জীবনপ্রবাহে শান্তি শান্তি গন্ধ।

মন্দিরকে কেন্দ্র করে ভক্তদের ভক্তি অসীম। যদিও ভক্তিতে কোনো প্রকার মুক্তি নেই, শক্তি আছে। তবে শক্তিটা তেলেভাজা বেগুনের মতো।
ভক্তদের মাঝে কিছু নারীভক্ত দেখলাম, দেখে মনে হয়েছে তারা এইমাত্র সিনেমার প্রোডাকশন হাউস থেকে নেমে এসেছে, শরীরে তাদের আইটেম সংয়ের পোশাক। একটি সুবিধা অবশ্যই হয়েছে, আর তা হলো দেব-দেবী দর্শন আর ওলা ওলা নায়িকা দর্শন এক সাথে অর্থাৎ এক টিকিটে দুই ছবি দেখার মতো আরামদায়ক।
কোনো জায়গায়  নতুন ভ্রমণে আমার দুটি পুরাতন কাজ --
(ক) চোখ ও মনকে দৃশ্যের গভীরে নেওয়া,
(খ) ছবিগ্রেফতার করা।
ছবি আমার কাছে ইটারনাল কাব্য। ছবিই সময়ের যোগ্য প্রতিনিধি। আমি হিমেলের ছবি গ্রেফতার করছি, হিমেল আমার ছবি।
এক সময় মন্দিরের পূর্ব কোণায় লেকের পাশে গেলাম। সিকিউরিটি গোপীনাথ দার কাছ থেকে অনুমতি নিলাম ছবিগ্রেফতার করার জন্য। তিনি অনুমতি দিলেন। দেয়ালের খাজ কাটা অংশে দাঁড়ালাম। আমার হাতের দুটি বই খাজ কাটা অংশে রাখলাম। ছবি নেয়া শেষ।

বের হয়ে যাবো। মন্দিরের কোণায় জলঘর। জল পান করলাম। গেইট থেকে বের হয়ে মনে হলো বই দুটি আনা হয়নি। তাড়াতাড়ি লেকের কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি বই নেই। গোপীনাথ দাও বলতে পারে না বই কোথায়। বিস্মিত হলাম। এতো অল্প সময়ে বই উধাও!

আগে জানতাম মন্দির থেকে জুতা চুরি হয়, আর এখন শিখলাম মন্দির থেকে বইও....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন