বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০১৫

বাংলাদেশে পা রাখলাম

ইমিগ্রেশনের যাবতীয় কাজ শেষ করে বাংলাদেশে পা রাখলাম। দূর পথের যাত্রায় আমার একমাত্র বাহন ট্রেন। এখন তো বাসে ওঠতেই হবে। কারণ বাস ব্যতীত যশোরের বেনাপোল টু ঢাকা আসার অন্য কোনো সহজ বিকল্প পথ নেই।

ভাবছি কী করবো।

 মনকে বললাম হাজার হাজার লোক বাসে চড়ে, আমিও চড়তে পারবো। আর যদি বমি করি তাতে কী, বমি হতেই পারে। বমি করবো এমন একটি মানসিক প্রস্তুতিও শেষ।

সোহাগ কাউন্টার থেকে হিমেল দুটি টিকিট নিল। তাও আবার এসি বাস। সাধারণ বাসে যদিও বমি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে, এসি বাসে বমি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।  বাসের পেছনের দিকে আমাদের সিট। আজকে মৃত্যুর স্বাদ নিতেই হবে। মৃত্যুর স্বাদ বললাম এই কারণে যে মৃত্যুর সময় শুধু আত্মা বের হতে চাই, আর বমির সময় আত্মাঘর যেন বের হওয়ার জন্য কমিটি গঠন করে।

বাসে ওঠেই কন্ট্রাক্টরকে বললাম,

``আমি তো বমি করবো, কিছু কী দিবেন?"

সামনের সবাই ঘার ফিরিয়ে আমার দিকে তাকালেন।

কী রে ভাই আমি এমন কী বললাম সবাইকে আমার দিকে তাকাতেই হবে।

কন্ট্রাক্টর পলিথিন দিয়ে গেলেন।

আমাদের পেছনে আরও সিট আছে কিন্তু যাত্রী নেই। টোটাল বাসে যাত্রী সংখ্যা দশ। পরিচালকপক্ষ ইচ্ছা করেই এই বাসে যাত্রী কম রেখেছেন পরে জানতে পারি। অর্থাৎ এই বাসে সিলেকটিভ যাত্রীদের তোলা হয়েছে। সুতরাং এই সিলেকটিভ যাত্রীদের মধ্যে একজন ঘোষণা দিয়ে বমি করবে এটা স্বাভাবিকভাবেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো ইস্যু।

বাস চলছে এমন সময় এক ভদ্র মানুষ আমাকে বলে উঠলেন,
`` আপনি লেখক আমি আগেই বুঝতে পেরেছি।"
অবাক হলাম। আমার মুখে তো কোনো সাইনবোর্ড নেই। তাঁর সিক্স সেনস আমাকে মুগ্ধ করলো। তারপর তার  সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করলো আমার চোখ এবং আমার মন।
জানতে পারি তিনি অভিনেত্রী মিস জয়া চৌধুরী। চমৎকার, অত্যন্ত চমৎকার  মানুষ। শরীর এবং মনে অহংকারের কোনো আলগা পাউডার নেই। আমি, হিমেল আর জয়ার এক বন্ধুপ্রিয় আড্ডা চলতে থাকে, বাসও চলতে থাকে।

ফরিদপুর আসলাম। ফেরি পার হবো। রাত তখন প্রায় নয়টা। ফেরির ছাদে ওঠলাম। ছাদ থেকে দেখছি পদ্মা নদী। সর্বনাশা পদ্মা নদী। জলের গায়ে প্রিয় অন্ধকার শুয়ে আছে, বসে আছে, খেলা করছে।
হঠাৎ দেখি আমার পাশে দাঁড়ানো মিস জয়া চোধুরী। আমরা দুজন প্রিয় দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছি। আমি একবার তাঁর চোখের দিকে তাকায় আরেকবার নদীর জলের দিকে।

-আপনার চোখে জল, নদীর জল। জলের সাথে আপনার চোখের এতো মিল কেন?

-জলেও কাহিনি আছে, আমার চোখেও কাহিনি আছে।

-Don't mind, আমি সিগ্রেট খাই না কিন্তু আজকে পদ্মাকে দেখে ধোঁয়া জ্বালাচ্ছি। যদি আপনার সমস্যা হয় তাহলে ....

- সিগ্রেট না খেলে পুরুষদের  আমার পুরুষই মনে হয় না।

লে... আমি তো সিগ্রেট খাই না। তাহলে এখনো পুরুষ হইনি! মেয়েদের কাছে পুরুষ হতে গেলে শালার কত রকমের প্রসাধনী-ভাবের যে প্রয়োজন হয় তা বলার অবকাশ রাখে না।

প্রিয় মুহূর্ত অল্পতেই শেষ হয়ে যায়। বাস আবারো চলছে। হিমেল গান গাইলো, জয়া শুনলো, গানের শেষে আমি একটু একটু তেহাই দিলাম।
গান, গল্প, আড্ডা, আনন্দ এবং আনন্দ। কন্ট্রাক্টর বলছেন,
``রেজা ভাই, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।"

আমি নেমে গেলাম। কিন্তু বমির কথা একবারও মনে হলো না। বার বার শুধু মনে হয় জয়ার কথা, আমি এখনো পুরুষ হতে পারিনি, কারণ আমি সিগ্রেট খাই না। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন