বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৪

জীবন নামের রেলগাড়িটা

সকাল হতেই ঘুমকে বিদায়। সহযোগিতায় পরিকল্পনা। মাতৃসুলভ নাস্তা প্রস্তুত। চায়ের চুমুতে শরীর চাংগা। ফোন আসে।
ভাই, আমার আসতে দশ মিনিট লাগবে।
সময় মতো বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের সামনে আমরা। মাজার মানে দেখার মতো জায়গা। সজাগ চোখে এখানে দেখার মতো হাজার বছরের পুরনো কাছিম অর্ফে কচ্ছপ। ডাকনাম মাদারি। মানুষের বিশ্বাস মাদারির রিজিক। মাদারি  যাদের প্রদত্ত খাবার বেশী খায় খোদায়ী সাহায্য তাদের প্রতি তত বেশী!
সুলতানুল আরেফিন বায়েজিদ বোস্তামী। আরেফিন মানে পরিচয় লাভকারী। ইসলামি ভাষায় যিনি আল্লাহর পরিচয় পেয়েছেন। তার তাপ-প্রতাপ আকাশ থেকে আসে। আমরা জমিনের মানু। তাই মাজার বলতে যা বোঝানো হয়েছে সেখানে যায়নি।
কোথায় যাব? দায়িত্ব চোখের উপর। চোখ আমাদের নিয়ে আসে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেন - এর সামনে। চোখ, মাতাল করা নীরবতায় বিস্মিত। পাহাড় ঘেরা। পাহাড়ের পোশাক গাছপালা। গরম সবুজ। সবুজ পরিবারে বিশ্ববিদ্যালয় !অস্তির। বাস্তব অস্তির। শুদ্ধ বাতাসে তরুণিমা কোলাহল।
চোখের ভরসায় বৈঠা ঘোরে। লক্ষ্য পাহাড়। কলেজে পাহাড়। পাহাড়ের পা থেকে মাথায় উঠবো। দেখি, পা এলাকায় গোলক-গর্ত। আসলে তা হলো ঝরনা-গর্ত। স্তরে -স্তরে যে পাহাড় গড়ে ওঠে তারাই কেবল এমন ঝরনা জন্ম দেয়ার হ্মমতা রাখে। যা কিনা পাহাড়িদের টিউবওয়েল।
আমরা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। বিজয় আমাদের। আমাদের পা পাহাড়ের মাথায়।আরেফিন নগর চোখের সামনে চঞ্চল। আহারে! বাচ্চা বাচ্চা লাগে।
অবাক! যখন পাহাড়ের মাথায় ছাগলপাল। জানতে পারি এখানেও মানুর কলোনি।চোখে তাদের খোঁজ। কিছু ঘর- দৃশ্য আবিষ্কার। যেতে থাকি কাছাকাছি কাছে।
টিন-মাটির মিশেল ঘর। ঘরের সামনে বাতাসি উঠোন। উঠোনে দাদি -নাতনির উকুন আনাআনি। পারদেশি আমাদের কাছে পুলক। তাদের কাছে  নিত্য জীবনপ্রবাহ। দাদির কাছে ভিবিন্ন কিছু জানতে চাই। দাদিরা মুখ থেকে আমাদের কানে আসে
  তুয়ার হতা ন বুঝি
খুব অসহায় বোধ করলাম। তখনি তাসলিমা অনুবাদের ভূমিকায়। ক্লাস টুতে পড়ে। ভারী মিস্টি।
হঠাৎ চোখে ভেসে আসে ইটঘর। পাহাড়ের এক কোনায়। আবুল কালাম আজাদ। এই ঘরের মাহাজন। দেখি তিনি রান্নার কাজে ব্যস্ত। পাহাড়ি চাচি থালা-বাসন ধোয়ায়। অল্পভাষা বিনিময়ে ভালো লাগার খেলাখেলি। চাচা চা খাওয়ার দাওয়াত দেন। লোভনীয় প্রস্তাব। মনে প্রাণে কবুল। চাচি চুলায় পানি বসায়। পাহাড়ি পানি। আমি গান ধরি
  টাকা -পয়সায় শান্তি মিলে না রে ,শান্তি কোন জায়গায়
চাচির চোখ বড় হয়ে  আসে। মুখে নেমে আসে  ভাষা
  তুয়ার গানওয়া আত্তে ভালা লাইগগি, তুর গলা বালা, আর ওগ্যা গা
অনুবাদে বুঝতে পারি গান গাইতে বলছে। গান গাইতে থাকি। গানের মাত্রা ওঠা-নামার সাথে ওঠা-নামা করে পাহাড়ি চাচির অংগ।
দোকানি কেক নিয়ে চাচা আসে। চলে চা কেক আর আটারুটির নাস্তা। মনে রাখার মতো স্বাদ।
মোবাইল ফোন কেপে ওঠে। ভাই, আমাদের ট্রেন কয়টায়? মনে পড়ে বাড়ি যেতে হবে।
আমাদের পা মধ্যাকর্ষ শক্তির পহ্মে। পেছনে চারটি চোখ টা টা দিচ্ছে। টা টা দিচ্ছে পাহাড়ের কোলঘেঁষা গায়েবী মাজার। যে মাজারের ইতিহাস জানে না পাহাড়প্রাণ সংগ্রামী মানুষ, আমি, সাবিহা কিংবা জুবায়ের হোসেন অপু

2:1:2014

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন