তুমি রাত হলে আমি অন্ধকারে ডুবে যাই
রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০
দেখার পর
ঠোঁটে পড়েছে ঠোঁটের ছায়া
বিশাল পৃথিবী বিশাল মায়া
বাংলাদেশ
Bangladesh is enjoying adolescence period yet, be careful my Dear Mentor
বাংলাদেশের এখন বয়ঃসন্ধিকাল, চেতনে সর্তক থাকুন মিস্টার অভিভাবক
তুমিতুমি
বিদ্যুৎ চমকে ভয় পাওয়া কিশোর আমি, তোমার ঝলকে মুগ্ধ হই।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা
গুলশান বনানী যেখানে গাছ থেকে শুরু করে টাস পর্যন্ত বিদেশী ফ্লেবার গতরে মেখে বাংলাদেশ হয়ে যাচ্ছে সেখানে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ব্যতিক্রম। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জন্মকাল থেকে আসি আমি তার গতরে ধীরলয়ে গর্জে উঠা আধুনিকা দেখতে। ভালো লাগে। খুব ভালো লাগে আমার।এখানে ছইগাছ থেকে শুরু করে কলাগাছও আধুনিকহারে বিদ্যমান। ভবিষ্যতে থাকবে কিনা অনিশ্চিত। এই এলাকার সবচেয়ে মজার দিক গ্রামীন ফ্লেবার। অর্থাৎ নেচারের আধিপত্য। নির্জনতা এখানে রয়েছে। রয়েছে পরিকল্পনা। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নগরী যেখানে পরিকল্পনাহীনভাবে গড়ে উঠছে আকাশকে ছিদ্র করে সেখানে এই এলাকার পরিকল্পনানীতি মুগ্ধ হওয়ার মতো। তবে এই এলাকার প্রত্যেকটি ইট বালু কংক্রিটের সাথে কতোটা দীর্ঘশ্বাস কতোটা গরীব লোকের চোখের জল মিশে আছে তা অবশ্যই সময় বিচার করবে।
বাবা রাফির দোকানে কফি খেলাম।দোকানই বললাম। কারন দুইপাশে রাস্তা মাঝখানে তার অবস্থান। গ্রামের ছেলে আমি।গ্রামে রাস্তার পাশে যা থাকে তা দোকান হিসাবে পরিচিত। গ্রামে যা দোকান শহরে তাই রেস্টুরেন্ট।অবশ্যই রেস্টুরেন্ট আর দোকানের মধ্যে চরিত্রগত পার্থক্য রয়েছে, শহরে আর গ্রামের মেয়ের মধ্যে যেমন পার্থক্য থাকে।
'বাবা রাফি' নামটির মধ্যে একখান সাপলুডু মজা আছে। রাফির বাবা না রাফিই বাবা এই নিয়ে শিশুতোষ ঝগড়া করাই যায়।তবে নামটির মধ্যে রাফিকে বাবা বলতেই হবে। তবে এটি একটি আন্তর্জাতিক খাদ্যসিল্ক।
বড় হয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার চেয়েও সুন্দর একটি নগরী গড়ে তুলবো। সেই নগরীতে রাজ্যের সুনাগরিক বসবাস করবে। শুধু টাকা থাকলেই সেই নগরীতে বসবাস করতে পারবে না কেউ।সেই নগরীতে বসবাস করতে হলে রাষ্ট্রের সুযোগ্য নাগরিক হতে হবে। সেই নগরীর ভিআইপি নাগরিক হবে শিক্ষক কবি সাহিত্যের পার্টনার পেট্রোন শিল্পী আর্টিস্ট। সেই নগরী হবে দেশী গাছ আর কালেক্টিভ কালচারের বস্তু মন মননের প্রাত্যহিক প্রয়োজনের আয়োজন।
শিশু
শিশুদের মন নিষ্পাপ কারন তাদের কোনো মন নেই
শ্যামা
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একটি জায়গায় বিশেষভাবে যেতাম। জায়গাটি উদ্ভুত সুন্দর। তার শরীরভর্তি সবুজের ঢালি। সবুজে পাখিদের কলকাকলি। চঞ্চল যৌবন তার শরীরে সাগরের ঢেউয়ের মতো লেপ্টে ছিলো। তার হাসি সাগর তীরে ভেঙে যাওয়া ক্রোকোডাইল ঢেউয়ের উদাম দেহ। কখনো সে আমাকে ডাকতো। কখনো বিনাডাকে তার কাছে চলে যেতাম আমি। তার কাছে যাওয়া মানে অসামাজিক জীবনের সামাজিক আনন্দ নিয়ে ঘরে ফেরা।
আজ অনেক বছর পরে জায়গাটি দেখতে গেলাম। কষ্টের ছায়ায় মন ভরে গেলো আমার।জাস্ট কানতে ইচ্ছে করলো আমার। এক নিষ্ঠাবান নিষ্ঠুর ডাকাত অপরিকল্পিত পেরেকঠোকা আনন্দে তাকে করে তুলেছে কংক্রিট জঙ্গল। এখন তার চোখে উখে মুখে পৃথিবীর বিষাক্ত বিষাদ।
এই জায়গাটির নাম শ্যামাজলবতী।
বাংলাদেশ দিবস
বাংলাদেশ দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ দিবস। ১৬ ডিসেম্বরকে বিজয় দিবসের পরিবর্তে বাংলাদেশ দিবস হিসাবে পালন করার পক্ষে আমি। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের মতো আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি নাই। পাকিস্তানের মতো সশস্ত্র শক্তিশালী বাহিনীর বিপরীতে কেবল চেতনাকে অস্ত্র করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তাই পৃথিবীর তাবৎ মানুষ এই দিবসটি পালন করা উচিত 'বাংলাদেশ দিবস' হিসাবে বাংলাদেশের সহস সরল মানুষের চেতনার সম্মানে।
সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০
চেয়ারম্যান
আক্কাস আলী বলে তালগাছটি তার।বাহাস মিয়া বলে তালগাছটি তার। চেয়ারম্যান স্থানীয় প্রশাসন। চেয়ারম্যান বলে "তোরা সব চুপ যা,আমি যা বলি মন দিয়া হুন, আমার বাফের বাফের আমল থেইক্কা তালগাছটি আমরার।" গ্রামের সব লোক বলে তালগাছটি তাদের। কেবল। কেবল আকরম আলীর মতো একজন বোকা লোক বলে তালগাছটি তার নয়। বোকা লোক আকরম আলী তার বাড়ির বাম ভিটে তিনটি তালগাছ রোপন করে। আকরম আলীর তিনটি তালগাছ বড় হচ্ছে। গ্রামের সব লোকের বড় হচ্ছে দ্বন্দ্ব, সেই একটি তালগাছ কার হবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব!
জল
একা আমি জলের ভেতরে
একা আমি পৃথিবীর ঘরে
বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২০
Someone is alive
Someone is there
In vacant or in pensive mood
Inward eye he or it looks me over
He looks me over and over
Haste away just haste away so soon
Something or someone is there
Beside the oration beneath the silence
Someone or something is there
Either dirge or psalm
Anecdote or more than a real
Someone is there someone is there
You can sing a song and you can be a wild judge
See the river and watch the water
Opportunity is nothing luck is nothing
Nothing is nothing just smile and watch
Someone or something is there
I love you I hate you I provide with you more than you want
Mind you my dear man someone is there
Here is you and your dream den before a shadow
Someone is there something is there
You can live in vernacular soul or not in
You can know how to swime
You can know how to drive
Live or love
Got ill or spend ill
Someone is there something is there
Something is there someone is there
ম্যাজিক গতি
সূর্য দেখা দেয় দূরে অনেক অনেক দূরে
জেগে উঠে আমার গ্রাম,আমার চোখের
হাত পা নাকের কাছের গ্রাম
আকাশে ভালোবাসার বিমান
দুটি চোখ
ওয়ান প্লাস ওয়ান
বাদলমেশানো চোখ
ঝড়দাপানো চোখ আমার
মানুষের সমুদ্রে ঢেউ গুনে গুনে ভোর আনে
রকেটের গতির মতো থেমে থাকে
জলের মাছের মতো হাসতে থাকে
এলাকার ভূমি অফিসে যে জল্লাদ বসে থাকে
আদালত পাড়ায় ডানাবিহীন পাখির চিৎকার
বিবেকের আইসক্রিমঠান্ডা আচরন
দেখে
দেখতে থাকে জলমেশানো চোখ আমার
বিলাসের জলে
স্বপ্নডাঙার তলে
ঘামহীন চোখ আমার ডুবে না সেবানন্দের পাড়ে
যখন আকাশ হবে ভালোবাসার
যখন বাতাস হবে প্রেমের
যখন জলে কচুরিপানার পরিবর্তে ভাসবে সহানুভূতি
সহমর্মিতা হাসপাতালে পায়চারি করবে পলকে পলকে
তখন শরীরপাড়াত চোখ আমার যাবে তোমার বাড়ি
দেখবে তোমারে মন ডুবিয়ে
তোমার হাসির ভূমিতে গন্ধমাদন উৎসব হবে
ফুলের ভাষা বুঝে নিবে আমাদের প্রজন্ম সন্ধ্যা তারা
রাত এখনো
রাত এখনো রয়েছে বারান্দার পুরাতন চানক্য চেয়ারে
রাতজাগা চোখ আমার সুন্দরতর দিনের দিকে
রাতমাখা চোখ আমার সুন্দরতম দিনের পথে
দৃষ্টিনেশাভরা সন্ধ্যার ফুলফল পাহাড়ে
জোছনামাখা চিত্রলিপি রাতের সাজঘরে
প্রভাতের নুরানি হাওয়ার গতিবেগ ধরে
এখনো মিছিলে মিছিলে জেগে থাকা চোখ আমার
স্বপ্ন দেখে
স্বপ্ন গায় সবুজের হিমোগ্লোবিনে
ভোর রাতে লিচু গাছের কলকাকলিতে আমি
বিদেশ থেকে গাছ এনে দেশের মাটিতে রোপন করলেই সেই গাছ দেশী হয়ে যায় না
দুর্দিন মানুষের আসে না-- সুদিন শেষ হয় না, সুদিন মানুষের আসে না-- দুর্দিন শেষ হয় না
যারা সম্পদ জমানোর চেষ্টা করেছে ইতিহাস তাদের মনে রাখে নাই, যারা নিজেকে অর্থময় করে তুলার চেষ্টায় ছিলো আজ তারা ইতিহাসের সম্পদ
কাশফুল অন্ধকারেও সাদা,গভীর অন্ধকারে প্রিয়তমা হয়ে উঠে আদিম গন্ধমফুল
তার মোড শেন ওয়ার্ন কিংবা মুরালিধরনের বলের চেয়ে অধিক সোয়িং করে, বল দেখে ব্যাট করো হে হিটার,আউট হলে ক্যারিয়ার চলে যাবে দর্শক গ্যালারিতে
হারানো রোদের গল্প শুনতে শুনতে যাদের দিন যায় তাদের ডান চোখের নিচের সবুজ গাছটির ছায়ায় বসে থাকি আমি
রাজপ্রাসাদের পাখি কখনো রাজা হয় না-- রাজপ্রাসাদের অলংকার হয় মাত্র
তরকারিতে লবন দিতে আপনাকে কে বলেছে!? এখন বলছেন লবন বেশি হয়ে গেছে। লবন দিবেন আপনি কষ্টও পাবেন আপনি। আপনি বরং কষ্টগুলোকে তরকারিতে ব্যবহার করতে শিখুন, আমরাও শিখছি অধিক লবনের জীবন যেনো আকাঙ্ক্ষার সবুজ জানালায় উকি না মারে।
সমাজে অপরাধী থাকে না, অপরাধীরা সমাজ বানায়,দেশে ক্রিমিনাল থাকে না, ক্রিমিনালরা দেশ বানায়।আমি অপরাধী প্রভু,তোমার বিপুলা পৃথিবীকে খন্ড বিখন্ড বিভক্ত করতে করতে দেশ কাল সমাজ নামক দেয়াল আর দেয়ালের সংবিধান রচনা করেছি।
চোখের জলে পাতার শব্দ বাড়ি ফেরার তাড়া
কথা নিভে এলে তোমাকে রোদে শুকাতে দিও
বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০
শুদ্ধ তারপর
তাকে বললাম এক বোতল বিশুদ্ধ চোখের জল দাও, এখন তার কান্নাই বন্ধ হয়ে গেছে। রাতে ভালো একটি সিনেমা দেখতে দেখতে চোখে জল আসতেছে, বোতল এনে সংগ্রহ করতে গেলাম জল আর চোখে আসে না।
আমাদের সভ্যতা বিশুদ্ধ কিছু ধরে রাখতে পারে না
মাও সেতুং
বেইজিং গনপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের অধীনে সরাসরি কেন্দ্রশাসিত পৌরসভা হিসেবে পরিচালিত। বেইজিং কথাটির অর্থ "উত্তরের রাজধানী"।
মহানগর এলাকার ভেতর দিয়ে হাই নদী ব্যবস্থার অনেকগুলো উপনদী প্রবাহিত হয়েছে, যাদের মধ্যে ছাওপাই নদী ও ইউংতিং নদীর কথা উল্লেখযোগ্যভাবে বলা যায়। বেইজিং সুসংহতভাবে গঠিত নয়; এখানে গ্রামীন বসতি ও স্থাপনার আধিপত্যই বেশি। প্রাদেশিক মর্যাদাবিশিষ্ট বেইজিং ষোলটি পৌরজেলা, উপ-পৌরজেলা এবং গ্রামীন জেলা নিয়ে গঠিত।
১৯৫০ সাল।১৯৫০ সালের বেইজিংয়ের কথা। ১৯৫০ সালের বেইজিংয়ের একটি গ্রামের কথা।১৯৫০ সালে বেইজিংয়ের একটি গ্রামের একটি ধর্ষিত মেয়ের কথা।চেয়ারম্যান তখন মাও সেতুং। বলা হয়ে থাকে মাও সেতুং কোনোদিন দাত মাজতেন না। কারন হিসাবে তিনি বলতেন বাঘের কথা। বাঘ নাকি দাত মাজে না।
চেয়ারম্যান তখন মাও সেতুং। একটি মেয়ে উদাম মাঠে গণধর্ষণের কবলে পড়ে! মেয়েটি আস্ত শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরে কান্না অভিমান অভিযোগ বীতাগ্নি রাগে। চীন দেশে তখন বিশ্বালোচিত মার্ক্সবাদকে হাতিয়ার করে লালফৌজ গঠন করে অক্লান্ত পরিশ্রম অবিরত চেষ্টা কঠিন অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৩৫ হাজার কিলোমিটার লংমার্চ করে মাও সেতুং চীনের মাটিতে জনমানুষের গণমানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার আয়নামতি আয়তিসুখদৃশ্য চলমান প্রশান্তিচোখ প্রতিষ্ঠা করেন। বিপ্লব সমাজতন্ত্র রক্ষা করার দায়িত্বে ঘরে বসে স্টাডি করছিলেন কেমন করে সাংস্কৃতিক বিপ্লব সংঘটিত ও সফল করা যায়। সেই সময় মেয়েটির ধর্ষিত হবার খবর তার কানে এসে পৌঁছে। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে।
বেইজিংয়ের জলবায়ুতে ঋতুভেদ আছে-- জলবায়ু মৌসুমী বায়ু দ্বারা প্রভাবিত আর্দ্র মহাদেশীয় ধরনের। উত্তপ্ত ও আর্দ্র গ্রীষ্মকালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮° সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি এবং হিমশীতল ও শুষ্ক শীতকালের জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা ১৫° সেলসিয়াসের চেয়েও কম হতে পারে। জুন থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে সিংহভাগ বৃষ্টিপাত হয়।
মাও সেতুং খবরটি শুনামাত্র জুলাই মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার চেয়েও উত্তপ্ত হয়ে উঠেন।তার মনে তখন জুন ও আগষ্ট মাসের বৃষ্টিধারার মতো জলাপাত হচ্ছিল। তিনি মেয়েটির কাছে গেলেন। মাথায় হাত রাখেন। তার চোখে ছায়াবর্ষনের চেষ্টা করেন।
তোমাকে যখন তারা ধর্ষন করছিল তুমি কী তখন চিৎকার করছিলে?
হ্যা,আমি চিৎকার করছিলাম।
তেমন করে আবার চিৎকার করতে পারবে?
সুবিচার পেলে তেমন করে ঠিক তেমন করে চিৎকার করতে পারবো। আপনার প্রতি আমার আস্থা রয়েছে।
মাও সেতুং তখন এক হাজার সিপাহি প্রস্তুত করেন।মেয়েটিকে স্পটে নিয়ে যায়।মেয়েটিকে চিৎকার করতে বলে। মেয়েটির চিৎকার যতদূর শোনা যায় ততদূরের সমস্ত মানুষকে বন্দী করে আনা হয়। মেয়েটি চারটি পুরুষকে সনাক্ত করে। সাথে সাথে তাদেরকে গুলি করে পরকালের অপ্সরাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
ধর্ষন তখনো ছিলো এখনো আছে! তখন মাও সেতুং ছিলো এখন মাও সেতুং নাই!! মাও সেতুং নাই বিধায় নদীর ঘরে জলের মতো বসে থাকি-- মাছ হয়ে কোনো এক সাগরের কথা ভাবি
তার দায়িত্ব আমার মনে বয়ে গেছে
কলাতলী। লোকে বলে। কলাবতী। আমি বলি। কলাবতী পয়েন্ট থেকে লাভনী পয়েন্টের দিকে যাচ্ছি। সাগর তখন নিচে নেমে গেছে। জোছনা আকাশে। জলে জোছনা পড়লে বিশেষ করে সাগরের জলে জোছনা পড়লে একটি ম্যাজিক সৃষ্টি হয়। এই ম্যাজিক এমন এক ম্যাজিক যা পৃথিবীর সমস্ত ম্যাজিককে হার মানায়।
সুন্দর। খুব সুন্দর এক মানুষ সাগর জলের পাশ দিয়ে হাটছে। এক লোক সুন্দর মানুষটিকে দেখে বেড সাউন্ড করে। মানুষটি লোকটির কাছে যায়। আমিও তার পাশে দাড়ালাম। লোকটি স্থানীয়। এবং মদ খেয়ে টাল হয়ে আছে। মেয়েটি কাকে যেনো ফোন দিলো। সাথে সাথে একটি ছেলে চলে আসে।এবং মাতাল লোকটিকে কান ধরে উঠ বস করায়।
মানুষটি আমাকে ধন্যবাদ দিলো।
তারপর আবার হাটা শুরু করি। লাভনী পয়েন্টের দিকে। মাতাল লোকটা আমার পেছনে পেছনে আসতে থাকে। কারন লোকটি বুঝতে পেরেছে আমি স্থানীয় মানুষ নহে। আমাকে যথাযোগ্য শাস্তি দেয়া দরকার। কেনো আমি অপরাধীকে অপরাধী বলিয়াছি এই শাস্তি। লাভনী পয়েন্টের কাছাকাছি ঝাউবনের সামনের জায়গায় যেখানে সাগর আরও নিচে নেমে গেছে সেখানে দাড়িয়ে জোছনা আর সাগর জলের ম্যাজিক দেখছি।শুনছি সাগরের গর্জন। আমি একা।স্যাররা চলে গেলেন সেন্টমার্টিন। রাত তখন প্রায় দশটা। লোকটা আমার কাছে এসে নানাবিধ কথা বলতে আরম্ভ করছে। পজিশন নিচ্ছে আমার ব্যাপারে মারধর জাতীয় ব্যাপার স্যাপারে যাওয়ার জন্যে। আমি ত তার কথা কিচ্ছু বুঝতেছি না। চট্রগ্রামের ভাষা আমি খুবই কম বুঝি। তাছাড়া সে রেগে আছে চরমভাবে।
কেবল হাসতেছি আর বলতেছি ' বিরক্ত করো না', 'আর কিছুক্ষন থাকবো, তারপর রুমে চলে যাবো, বিরক্ত করো না।'
কে শুনে কার কথা। সে বকবক করেই যাচ্ছে। এমন সময় মেয়েটি আমার পাশে এসে দাঁড়ায়, কোনো কথা না বলে বিশাল এক থাপ্পড় জাতীয় দমক দেয়। তারপর ইতিহাস।
মেয়েটি আমাকে ডিসি বাংলো পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যায়।তারপর আমার বাসায় যেতে সমস্যা হবে কিনা জানতে চায়।আমি খুব নিরীহভাবে উত্তর দিয়েছি যে সমস্যা হবে না। সে আমার মোবাইল নাম্বারটি নিয়ে তার মোবাইল থেকে আমাকে ফোন দেয়। কোনো সমস্যা হলে যেনো তাকে ফোন দিতে কোনো প্রকার সংশয় কাজ না করে এমন জাতীয় উপদেশ দিয়ে যায়।
দুইদিন পর ফোন দিয়ে জানতে চায় আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা। আমি অত্যন্ত নিরীহভাবে উত্তর দেই যে আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সৎ সাহসী মানুষের কাছে নিরীহ বনে যাওয়ার চেয়ে আনন্দ আর পৃথিবীতে নেই।
মেয়েটির দায়িত্ববোধ আমাকে মুগ্ধ করেছে। সুন্দর মেয়েদের অহংকার থাকে জানতাম, সুন্দর দায়িত্বজ্ঞানও থাকে নতুন করে জানলাম।
চোখে যে নদী কথা কইতে এসে
মিষ্টি ঢেউয়ের শব্দ। ঢেউয়ের মিঋষি শব্দ হৃদয়ের কারেন্ট জালে আটকে যায়। ঝাউপাতার ছায়ায় বসে মানুষের কথা মনে ভাসে মনে আসে করচগাছের মিহি রোদ আলোর খেলা।
জোছনা থেকে অনেক দূরে আজ কলাবতী কান্না। হঠাৎ করে বৃষ্টি এলে সাগরে দেখি একান্নবর্তী সিদ্ধান্ত সিনেমা। ধেয়ে আসা ঢেউ বসে থাকা সিটির মতো চোখ লাল করে সভাপতির চেয়ার দখল করে না। সাগরের জল হয়ে ভেঙেছেন তিনি সীমানার কালো হলুদ লাল নীল নীতি। বালুকাবেলা। সন্ধ্যাতারা। মানুষের ছায়ার শব্দে হেটে যেতে যেতে ভোর হয়ে আসে। সময়ের পুরনো বারান্দা।
চাদের জোছনায় পাখি হবো। ঢেউ হবো তোমার শিহরনে। হিংসা হবো প্রেমিকার ঠোঁটের ভাজে রাতভর। রাতভর ফটোজেনিক জলশহরে প্রেমিকের পায়ের শব্দ খুজে খুজে হয়রান। কালো শাড়ি পরে চোখে আসে সাগর জল নৃত্য। প্রিয় কোনো ব্যথার মতো আমাকে ভাসায় আমাকে বয়ে নিয়ে যায় দূরতমা শহরের কাছে। আমি ভুলতে পারি না ভুলতে দেয় না সে আমাকে। সময়ের পুরনো বারান্দা।
থেমে থাকে থোকা থোকা ফুলেল শব্দ। দূরে দেখা যায় জাহাজ। নাবিক কন্যার সুরে বাতাসের মতো মিশে যেতে ইচ্ছে করে গতকাল আজকাল আগামীকাল হয়ে।
পৃথিবী এক উদ্ভুত ঝনঝন শব্দ। আদমশুমারী পৃথিবী। আদিত্য জল আদমের কান্না হয়ে সাগরে ঘুরাফেরা করে। আদমের হাহাকার বাতাসি মাংসের দামে বিক্রি হচ্ছে রোজ বিলাসবহুল সময়চক্রের কাছে।
সবকিছু রেখে। সব হিসাব ভুলে পৃথিবীর নেমে আসো আমার বুকে চাদ যেমন করে শেষ রাতে গলে গলে গল্প হয়ে পড়ে সাগরের বিশাল আঙিনায় তেমনি করে তেমন করে অঙ্গে নাচো সঙ্গী হয়ে। আমিও মৃত্যুর মতো মিশে যেতে চাই কামতুফানে পৃথিবীর বাইরে এসে পৃথিবীর ভেতরে তোমার রক্ত মাংস ইচ্ছার স্বাধীন দেশে সাইক্লোন টর্নেডো কিংবা আরও কোনো তীব্র আকাঙ্ক্ষার টক ঝাল মিষ্টি রোদের শহরে।
সুগন্ধা,কক্সবাজার
২৮১০২০২০
মহেশখালীতে এমরানুর রেজা ভাই
যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম
যদি নতুন একখান মুখ পাইতাম
মইশখালীর পানের খিলি তারে
বানাই খাওইতাম।
এই গানটির সুরকার ও গীতিকার এম এন আখতার। তিনি জীবনে বিচিত্র ধরনের গান রচনা করেছেন। তার গানের সংখ্যা পাচ হাজারের অধিক। তার একনিষ্ঠ শিষ্য শেফালী ঘোষ।শেফালী ঘোষ চট্রগ্রামের গানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। শেফালী ঘোষের কন্ঠে প্রথম মহেশখালীর নামটি শুনি। অবশেষে মহেশখালী আসি। সবাই মহেশখালী এসে স্পটের দিকে দৌড়াতে আরম্ভ করে। মহেশখালীর দর্শনীয় স্থান আদিনাথ মন্দির, বৌদ্ধ মন্দির, শুটকি মহাল, হাসের চর ইত্যাদি ইত্যাদি। পৃথিবীর যেখানেই যাই সেখানে যাওয়ার পর আমি নিজে একটি জায়গা আবিষ্কার করি যেটা আমার দর্শনীয় স্থান এবং যেখানে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিতে থাকি। পাবলিক বাসের টুরিস্টদের মতো স্পটের দিকে ঘামেটামে দৌড়ানো পাবলিক এমরানুর রেজা নহে।
লোকাল ঘাট। লোকাল ঘাটে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায় আমার। মহেশখালীর পান খেতে খেতে চলতে থাকে রাসেল ভাইয়ের সাথে আড্ডা। রাসেল ভাই এই লোকাল ঘাটে পান বিক্রি করে। মহেশখালীর নারীদের কাছে প্রেমকুমার নামে পরিচিত সে। প্রায় এক হাজার প্রেম করেছে বলে সে আমাদের জানায়। আমাদের বলতে আমাকে আর সুমন এন্টমকে। রাসেল ভাই নিশ্চয়ই একদিন বিয়ে করবে এবং বউকে সুন্দর করে ইনিয়ে বিনিয়ে বলবে, "ওগো তুমিই আমার জীবনে প্রথম এবং তোমাকেই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।"
আহারে! বউকে খুশি করার জন্যে পুরুষরা কত্ত মিসাইল মিথ্যা কথা বলে-- পান খেয়ে বলে দেখো আমি পান খাইনি, দেখো আমার ঠোট লাল হয়নি দেখো দেখো। মহাভারত অবশ্যই পুরুষদের এই মিথ্যা কথা বলার পক্ষে সুন্দর যুক্তিবাদী ওয়াজ করেছে। যুক্তিবাদী ওয়াজ করবে না কেনো, মহাভারতও যে কোনো না কোনো পুরুষেরই রচনা।
ন নর্মযুক্তং বচং হিনস্তি
ন স্ত্রীষু রাজন ন বিবাহকালে।
প্রাণাত্যয়ে সর্বধনাপহারে
পঞ্চানৃতান্যাহুরপাতকানি।।
এন্টমকে নিয়ে ইদানিং একটু ঝামেলা হচ্ছে। কারন তার লম্বা চুল। শরীফ তার প্রাসাদ আমাদের জন্যে ছেড়ে দিয়ে আশুগঞ্জ অবস্থান করছে। জীবন স্যার আর আশরাফুল আজিজ স্যার চলে গেলেন সেন্টমার্টিন। আমি শরীফের প্রাসাদে একা। শরীফ তার প্রাসাদে ফিরতে আরও সপ্তাখানেক সময় নিবে। এমন সময় এন্টম সুমন নরসিংদীর রায়পুরা থেকে চলে আসে কক্সবাজারের ঘোনাপাড়া। শরীফের কাছে ফোন যায় আমার সাথে এই ববকাটিং চুলওয়ালা মেয়ে কে জানতে চাওয়ার নিরিখে। যিনি ফোন দেন তিনি শরীফের প্রাসাদের প্রতিবেশী ভাবি। আমিও নোটিশ করেছি যে এন্টম ঘোনাপাড়া আসার পর থেকে প্রতিবেশী ভাবি আর হাসি দিয়ে আমার সাথে কথা বলে না। অথচ এন্টম আসার আগে ভাবি প্রায়ই জিজ্ঞেস করতো আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা। শরীফ আমার কাছে ফোন দিয়ে জানতে চায় আমার সাথে লম্বা চুলওয়ালা কে আছে যে চুলে বেন পড়ে। শরীফের ফোন পাওয়ার পর নিশ্চিত হলাম কেনো প্রতিবেশী ভাবি আর হাসি দিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলে না।
মহেশখালীর লোকাল ঘাটটি সুন্দর সৃজিত গাছ আর পাখিদের জাদুঘর। সুন্দর বনের দারুন ফ্লেবার এই ঘাটের চারপাশে। এই ঘাটের চারপাশে নোনা পানির প্রচুর গাছ পাওয়া যায়। মাছও পাওয়া যায়। দেখা যায় প্রচুর কাক। বাংলার উপসাগর এখানে এসে হয়ে গেছে বাকখালী নদী। দেবতা মহেশের নাম থেকে মহেশখালী। শিবের ১০৮ নামের মধ্যে মহেশ একটি। আমি মনে করেছিলাম মহিষের নাম থেকে মহেশখালী। মনে মনে প্রচুর বইস বা মহিষ কল্পনাও করে রেখেছিলাম। মহেশখালীর বুকে যে যৌবনা নদী বাকে বাকে চলে ভেবেছিলাম তার নাভিমূলে শরীর ডুবিয়ে চোখভরা আকুতি নিয়ে আমাকে অমর্ত্য অভ্যর্থনা জানাবে গরমগতরের মহিষ। বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন। এখানে কোনো মহিষ আছে বলে মনে হইল না। মহিষ না থাকলেও বিচিত্র প্রকারের মাছ এখানকার বক্রনদীর ফেকে ছুটাছুটি খেলে। কেউ ধরতেও যেতে পারে না। কারন এই ফেক বড়ই চোরাবালি ফেক।
মহেশখালীর পান মৈনাক পাহাড়ের আদিনাথ মন্দিরের নিচে কাপড় ব্যবসায়ী আশু বৌদ্ধের হাসির মতো মিষ্টি। এই পান সাগরের ঢেউয়ের মতো স্লিম। মিষ্টি বলতে এই পান খেতে রাজশাহীর পানের মতো দাক লাগে না।
শ্বাসমূলী উদ্ভিদের চুলেমুলে বক আর নানান বর্নের রঙের পরিযায়ী পাখির উড়াউড়ির কোলাহল কুলাহক দেখতে দেখতে শুনতে শুনতে লোকাল ঘাটে বসা আমার সময়স্রোত কখন যে রাতের ঘরে পৌছে যায় বলতেই পারি না। রাতে রাসেল ভাই দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যায়। এই ঘাটে আরও যারা পান ব্যবসায়ী রয়েছে তারা সবাই চলে যায় নিজ নিজ আবাসনে। সন্ধ্যার পর মানে সাতটার পর কক্সবাজার যাতায়াতের সুযোগ সুবিধা জটিল ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। কিন্তু রাতে এই ঘাটে নামে রূপসী কুয়াশা এলোকেশী জোছনা নোলক বাতাস ঢেউয়ের ঠোটেল শব্দ। রাতে এই প্রাকৃতিক প্যারাবন হয়ে উঠে প্রথম প্রেমের প্রথম স্পর্শের প্রথম শিহরনের মতো পুলকসঞ্চারের প্যারামিটার।
কক্সবাজার থেকে মহেশখালীর এই ঘাটে যেতে খরচ হবে ত্রিশ টাকা থেকে ৭০ টাকা। আসতেও এমনই খরচ হবে। নৌকা দিয়ে যেতে কিংবা আসতে ভালো লাগে। যাওয়ার সময় মনে হয় সুন্দর বনের গোলপাতা গেওয়া সুন্দরী গরান গাছের রাজ্যে যেন ঢুকে যাচ্ছি। আদিনাথ মন্দিরের একেবারে চূড়া থেকে বাকখালী নদীকে দেখতে অনেকটা বাঘের চোখের মতো মনে হয়। আদিনাথ মন্দিরের জায়গায় দিয়েছে এক মুসলমান। একজন মুসলিম কেনো মন্দির প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিলো অবশ্যই তার পেছনে রয়েছে ইতিহাস।
আদিনাথ এলাকাবাসীর মতানুসারে আবিস্কৃত এবং মর্যাদা পায় নূর মোহাম্মদ শিকদার নামক একজন অর্থশালী মুসলিম ধর্মালম্বীর মাধ্যমে। শিকদার গাভী পালন করে এবং তার গাভী ভালোই দুধ দেয়, তার গাভী হঠাৎ দুগ্ধদান বন্ধ করে দেয়। তাতে সে রাখালের উপর সন্ধিহান হয়। রাখাল বিষয়টির কারন অণুসন্ধানে রাত্রিবেলায় গোয়ালঘরে গাভীটিকে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেখতে পায় গাভীটি গোয়ালঘর হতে বের হয়ে একটি কাল পাথরের উপর দাড়ায় এবং গাভীর স্তন হতে আপনা আপনি ঐ পাথরে দুধ পড়তে থাকে। দুধ পড়া শেষ হলে গাভীটি গোয়ালঘরে ফিরে আসে। রাখাল বিষয়টি নূর মোহাম্মদ শিকদারকে জানায়। শিকদার সাহেব বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে গাভীটিকে বড় মহেশখালী নামক স্থানে সরিয়ে রাখে। একদিন শিকদার সাহেব স্বপ্নাদেশ পায় গাভীটিকে সরিয়ে রাখলেও তার দুধ দেওয়া বন্ধ হবে না বরং সেখানে তাকে একটি মন্দির নির্মান ও হিন্দু জমিদারদের পুজোদানের বিষয়ে বলতে হবে। স্বপ্নানুসারে শিকদার সেখানে একটি মন্দির নির্মান করে। এখন পর্যন্ত যতটুকু জানি আদিনাথ মন্দিরই একমাত্র মন্দির যা মুসলিম ধর্মালম্বী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত।
মৈনাক শিখরেই আদিনাথ মন্দিরের পাশে অষ্টাভূজারূপী দেবী দুর্গার মন্দির রয়েছে। নূর মোহাম্মদ শিকদারই স্বপ্নাদেশ পায় অষ্টাভূজাকে সদূর নেপাল থেকে এখানে এনে প্রতিষ্ঠিত করার। নাগা সন্ন্যাসী নামক একজন সাধক ১৬১২ সালে নেপালের ষ্টেট মন্দির থেকে অষ্টাভূজাকে চুরি করে আনার সময় ধরা পড়ে জেলবন্দী ও বিচারের সম্মুখীন হয়। বিচারের পূর্ব রাত্রিতে সন্ন্যাসী যোগমায়াবলে মহাদেবের কৃপা সান্নিধ্য লাভ করে। মহাদেব অভয় বাণী প্রদান করেন এবং বিচারকের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ইচ্ছামোতাবেক উত্তর দিতে বলেন। বিচারকালে বিচারক প্রথমে নেপালের রাজার নিকট মূর্তির রং জানতে চাইলে রাজা কষ্টি পাথরের মূর্তির রং কালো বলে বর্ননা দেয়। একই প্রশ্ন সন্ন্যাসীকে করা হলে তিনি মূর্তির রং সাদা বলে। বিচারক পড়লো মহা বিপদে। বিপদ যেখানে আছে সেখানে সমাধানও আছে।
সমাধান কী?
সমাধান হলো মূর্তিকে সকলের সম্মুখে উন্মোচন করা। মূর্তি সকলের সম্মুখে উন্মোচন করা হয় এবং দেখা যায় মূর্তির রঙ সাদা। সবাই অবাক হয়ে যায়। এবং সন্ন্যাসীর পক্ষে রায় ঘোষণা করা হয়। রাজা প্রকৃত ঘটনা জানতে উদগ্রীব হলে সন্ন্যাসী রাজাকে বিস্তারিত বলে। পরবর্তীতে রাজা যথাযথ মর্যাদার সাথে মৈনাক শিখরে আদিনাথের পাশে মন্দির নির্মান করে অষ্টভূজাকে প্রতিষ্ঠান করে। মন্দির কমিটির তত্ত্বাবধায়কের মতে এখনও নেপাল সরকার মাঝে মধ্যে মন্দিরে যথাসাধ্য অনুদান দিয়ে থাকে।
এই মহেশখালীতে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধদের সম্প্রীতি খুবই দারুন বলে মনে হয়েছে। মনে করেছিলাম মহেশখালী পরিশুদ্ধ দ্বীপ।কিন্তু না। মহেশখালী চকোরিয়ার সাথে শারীরিক যোগাযোগ স্থাপন করেছে। মহেশখালীতে বৌদ্ধ মেয়েদের শারীরিক গঠন খুবই সুন্দর গোছানো ছিমছাম নরম তুলতুলে। বৌদ্ধ পুরুষদেরও তাই। তবে বৌদ্ধ পুরুষদের চোখে সন্দেহ রয়েছে যা বৌদ্ধ মেয়েদের চোখে দেখতে পাইনি। বৌদ্ধ ছেলেমেয়ে কেউ বসে থাকে না, সবাই কাজ করে।ব্যবসা করে। মেয়েদের বুকে উড়না নেই। সুন্দর গোছানো স্তন চোখে পড়ে কিন্তু তেতুল হুজুর হয়ে যেতে অন্তত আমার ইচ্ছে করেনি। মনে পাপ না থাকলে বাইরে দৃশ্য মনে পাপ সৃষ্টি করতে পারে না। দুধে মাছি বা ময়লা পড়লে দুধ নষ্ট হয়ে যায়, দুধে ফুল পড়লে দুধ নষ্ট হয় না।
আবারও বলছি, বৌদ্ধ হোক ছেলে হোক মেয়ে যারাই চোখে পড়েছে তাদের ফিগার খুব সুন্দর। একটি কথা বিশেষভাবে বলা দরকার যে পাহাড়ি প্রত্যেকটি মানুষের ফিগার সুন্দর ও গোছানো হয়।পাহাড়ি মানুষদের সংগ্রাম মানসিকতা কেন যে আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে কাজে লাগাতে পারি না তা আমার বোধগম্য নয়। সমতলের মানুষদের বিশেষ করে বাংলাদেশে মাথার চেয়ে পেট বড় হয়ে যায়। পেটের ভার সহ্য করতে তার বা তাদের খবর হয়ে যায়, জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক জীবনের সাথে খাপ খাওয়াবে কখন!?
মহেশখালীতে বৌদ্ধ এক দশমিক তিন পার্সেন্ট। নব্বই পার্সেন্ট মুসলমান। সাত পার্সেন্টের মতো সনাতনী ধর্মাবলম্বী। বৌদ্ধ মেয়ে মহিলা যাদেরকেই দেখেছি তাদেরকে খুব ভালো লেগেছে। কারন তাদের কর্মময় হাত মেদহীন শরীর। তারা ঘরে বসে টিভির মোবাইলের রিমোট নড়াচড়া করতে করতে ক্লান্ত হয়ে স্বামীপ্রভুর কায়াপ্রার্থী হয়ে বসে থাকে না।তারা কেবল সন্তান উৎপাদনের মেশিন নহে। তারা চব্বিশ ঘন্টার পূর্নাঙ্গ মানুষ। তাদের স্তন ডালিমের মতো সুন্দর। স্তন একটি স্পর্শকাতর এলাকা। মেয়েরা সবচেয়ে বেশি ইনফিরিউর ফিল করে ছোট স্তন নিয়ে। যাদের স্তন ছোট তারা মানসিকভাবে নিদারুন বিধস্ত দিন কাটায়।বাথরুমে অন্ধকার ঘরে একা একা কান্নাকাটি করে। ছোট স্তনধারী মেয়েদের মানসিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে থাকে কর্পোরেট হাউজ। কর্পোরেট হাউজ ব্রাবানিজ্য চাঙা করে।যাদের স্তন বড় তাদেরকেও কর্পোরেট হাউজ কান পড়া দিয়ে থাকে যথারীতি।
আপনার স্তন ছোট কোনো সমস্যা নেই, চলে আসেন আমাদের কাছে, আমরাই আপনার স্তনকে মার্কেটপযোগী করে তুলবো, আপনার স্তন বড়, ঝুলে পড়বে শীঘ্রই, একদম চিন্তা করবেন না, আধুনিক ব্রা থেকে শুরু করে আপডেট সার্জারির ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের কাছে, আপনার স্তন দেখাবে সুন্দর ও আকর্ষণীয়, ডালিমের মতো না হোক ডাবের মতো তো হবেই।
এমন এমন আরও জাঙ্ক কথাবার্তা প্রলোভন কর্পোরেট হাউজ উপস্থাপন করে থাকে আমাদের অবলা দুর্বলা স্বামীগাছা মেয়েদের কাছে। আর তারাও কর্পোরেট হাউজের প্রলোভন কথা নিজের মর্যাদাবোধকে মাটির নিচে চাপা দিয়ে গিলতে থাকে চোখ লাল হওয়ার আগ পর্যন্ত। কর্পোরেট হাউজ তাদের পড়া পানি মহেশখালীর বৌদ্ধ মেয়েদের গিলাতে অক্ষম। ফলে তারা ইজ তারা স্টিল নাউ।
'মহেশখালীর বাকে' হয়তো পুরনো সিনেমার নাম। বর্তমানে মহেশখালীতে উন্নয়নের নামে কোনো সার্কাস সিনেমা চলতেছে কিনা তার দিকে অবশ্যই আমাদের সুনজরের ধারাপতন নয় ধারাদৃষ্টি অটুট রাখতে হবে। কারন বালু দিয়ে কেবল গর্ত ভরাট করলেই উন্নয়ন হয় না। উত্তোলিত বালু বড় ধরনের গর্তসমস্যা তৈরি করছে কিনা তার দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা এনজিও কর্মীদের দায়িত্বের মধ্যে না পড়লেও, মানুষের দায়িত্ববোধের পর্যায়ে পড়ে।
মহেশখালীর লোকাল ঘাটটি যেকোনো সুন্দর নারীর চেয়ে সুন্দর, যেকোনো পুষ্টিকর খাবারের চেয়ে পুষ্টিমান সমৃদ্ধ, যেকোনো মনমোহন নৃত্যরত ফিগারের চেয়েও নৃশংস ভয়ংকর ভয়াবহ রকমের মুগ্ধতায় ভরপুর। এই ঘাটে বসে মিষ্টি পান খেতে খেতে রসিক রাসেল ভাইয়ের গল্প শুনতে শুনতে বাকখালী নদীর ঢেউ গুনি। ঢেউ গুনতে গুনতে বেরসিক সময় ফুরিয়ে যায়, ফুরিয়ে যায় কবিতার শেষ শব্দটি-- প্রেমের নেশা সৌন্দর্যের ডান হাতে চুমু দিতে গিয়ে পানকৌড়ির রক্ত পানে বিভোর হয়ে যায়।
মহেশখালীর কথা উঠলেই শেফালী ঘোষের নাম চলে আসে আড্ডাকথায়, চলে আসে মহেশখালীর মিষ্টি পানের কথা। সবকিছু ছাপিয়ে আমার মনে আসে বাকখালী নদীর কথা। বাকখালী অসাধারণ নীরব বিনয়ী নদী। কেউ তাকে দেখে বুঝতে পারবে না যে সাগরের সাথে তার বিশাল নেটওয়ার্ক। ভারতের মিজোরাম রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড় থেকে উৎসারিত কিছু স্রোতধারা বান্দরবন জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে মিলিত হয়ে যৌথ ধারায় বাঁকখালী নদীর সৃষ্টি করেছে।
বাকখালী নদীতে পাওয়া যায় পোয়া মাছ। বৈজ্ঞানিক নাম Pama pama। অনেকে এটিকে পামা,কই ভোলা বলে ডাকে।খাদ্য হিসেবে এই মাছ খুবই সুস্বাদু। খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন ছাড়া প্রাণীর অস্তিত্ব কল্পনা করা অসম্ভব। প্রোটিনকে সকল প্রাণের প্রধান উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। সব প্রোটিনই কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন দিয়ে গঠিত। আর পোয়া মাছের দেহে প্রায় ১৮ শতাংশ প্রোটিন। তাই প্রানিজ আমিষের বিশাল আয়োজন পোয়া মাছ তার আয়োজনে ধারন করে। এক জেলে ১২৫ কেজি ওজনের একটি লাল পোয়া মাছ ধরে একদিনে লাখপতি হয়ে যায়। ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশে।বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা ঘটনাটি জানে।
ছোট পোয়া জল থেকে উঠানোর প্রথম কিছুক্ষন তাকে সোনালি মনে হয়। তারপর পার্পল কালার ধারন করে,তারও কিছুক্ষন পর মাছটি হয়ে পড়ে সাদা বা জল রঙের। বাকখালী নদীর জল যখন আমার নিষাদ চামড়া স্পর্শ করে তখন আমার শৈশবের বারবার স্বপ্নে দেখা একটি সোনালি কালারের মাছের কথা মনে পড়ে। হয়তো পোয়া মাছকে বারবার স্বপ্ন দেখেছি হয়তো নয়। মনে পড়ে ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের কথা। অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে বার্মা আরাকান দখল করে উৎপীড়ন-নির্যাতন শুরু করলে হাজার হাজার শরনার্থী বাঁকখালী নদী তীরবর্তী রামু ও কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স তাদের পুনর্বাসন করে। নদী ভাঙন। দুর্ভাগ্যবশত ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের সমাধী বাঁকখালী নদীর ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
হিরাম কক্স (১৭৬০-১৭৯৯) একজন ব্রিটিশ কূটনীতিক, যিনি ১৮ শতকে বঙ্গ ও বার্মায় কর্মরত ছিলেন। আরাকান শরনার্থী ও স্থানীয় রাখাইনদের মধ্যে হাজার বছরের পুরনো সংঘাত ছিলো। হিরাম কক্স এই পুরনো সংঘাত শেষ করে দেয়ার কল্পে বহু পদক্ষেপ হাতে নেন।পদক্ষেপ পুরোপুরি বাস্তবায়নের আগেই তাকে প্রভুর সাথে মিশে যেতে হয়েছে। তার ভালো কাজের পদক্ষেপকে স্মরনীয় করে রাখার জন্যে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয় যার নাম রাখা হয় 'কক্স সাহেবের বাজার'। সাহেব উঠে গেছে,থেকে গেছে কক্সবাজার।
এইভাবে কত সাহেব আসলো গেলো, কত নদীতে চর পড়লো, কত সাগর হয়ে গেলো নদী, কত নদী হয়ে গেলো কালা মিয়া ওসমান মিয়া অনিন্দিতা কর্মকারের বাড়ি। জলের আদিতে জীবন, জীবনের আদিতে জল। এক রহস্যময় সময় ও সময়ের ঘেরাটোপে বাড়ছে মানুষ, মানুষের চাহিদা, বিলাসিতা।
আজকের দুরন্ত সাপের মতো বাকখালী নদী একদিন থাকবে কিনা আমরা কেউ জানি না। আমরা জানি না সময়ের মায়া আমাদের কোথায় নিয়ে যায়। নদীর কারনে সাগর, না সাগরের কারনে নদী আমরা জানি না।আমাদের জানাশোনার পরিধি খুবই সীমিত। একটা পুরাতন গল্প মনে পড়ে গেলো। গল্পটি কার কাছ শুনেছিলাম তার নাম মনে নাই।বলছি গল্পটি।
জাহাজের সব লোক মারা গেলো। বেচে থাকলো কেবল মিস্টার ডলফিন। মিস্টার ডলফিন ভাসতে ভাসতে একটি দ্বীপে আশ্রয় নিলো। দ্বীপের গাছপালা কাজে লাগিয়ে সে একটি ঘর নির্মান করে।অনেক কষ্টে সে দিনাপাত করছে। প্রায়ই বৃষ্টি হয়। ঘরের ভেতর বসে বসে সে মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষা করে। গাছের বাকল টাকল খেয়ে কোনো রকমে বেচে আছে মিস্টার ডলফিন।
দুপুর বেলা।সে খাবারের সন্ধানে বের হই। এমন সময় শুরু হয় প্রচন্ড বজ্রপাত ঝড় বৃষ্টি। বজ্রপাত থেমে গেলে ঘরের দিকে হাটা শুরু করে সে।
ও খোদা! বজ্রপাতে ঘর পুড়ে গেছে। সে মনে অত্যন্ত ব্যথা অনুভব করে।একমাত্র আশ্রয় তাও প্রভু নিয়ে গেলো তার কাছ থেকে। মনে বিষন্নতার ঝড় নেমে আসে।অঝোরে কাদতে আরম্ভ করে। কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে যায় মিস্টার ডলফিন।
হঠাৎ।হঠাৎ মানুষের শব্দ শুনে তার ঘুম ভাঙে। সে মানুষ দেখছে! তার চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না।
আপনারা কোথা থেকে আসলেন?
এই দিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। ধোঁয়া দেখে অনুমান করলাম এই দ্বীপে হয়তো মানুষ রয়েছে। তাই জাহাজ নোঙর করি।
মিস্টার ডলফিন আসমানের দিকে তাকালো। পুড়ে যাওয়া ঘরটির দিকে তাকালো।ধোঁয়া এখনো উড়ছে। মিস্টার ডলফিনের মনের ধোঁয়া মুছে গেছে।
ভালোবাসি তোমারে সহজে সহজে
ভালোবাসি ভালোবাসি
সকাল সন্ধ্যা তোমার গন্ধে
গোলাপ হয়ে আমি ফোটি
ভালোবাসি ভালোবাসি
রাতকাশে তোমার চোখে
চাদ হয়ে আমি উঠি
ভালোবাসি ভালোবাসি
সাগর জলে তোমার মনে
ঢেউ হয়ে আমি ভাসি
ভালোবাসি ভালোবাসি
গোপন কথার পুলক ধ্যানে
তোমার সাথে আমি আছি
তোমার জলে শাপলা ফুলে
নৃত্য হয়ে আমি বাচি
ভালোবাসি ভালোবাসি
তোমার কথা ভাবতে গিয়ে
আমি আস্ত ফুল হয়ে যায়
বোল হয়ে যায় লোকের মুখে
আকাশ যখন তারার সুখে
বাতাস হয়ে বয়ে চলি
তোমার স্বপ্নে তোমার চোখে
তোমার যখন ঘুম আসে না
ঘুম আসে না ঘুম আসে না
ঘুম হয়ে আমি আসি
আস্তে করে চোখের পাশে
চোখের পাশে মনের পাশে
আমিই তুমি ঘুমিয়ে হাসি
ভালোবাসি ভালোবাসি
ভালোবাসি ভালোবাসি
বলবো আমি আমৃত্যু কাল
তুমি আমার জন্ম মৃত্যু
ভালোবাসার আকাশ পাতাল
সেন্টমার্টিনের সাগর
জাজিরা। তারপর জিঞ্জিরা। তারপর নারকেল জিঞ্জিরা। তারপর সেন্টমার্টিন।তারপর দারুচিনিদ্বীপ। প্রবালদ্বীপ তারপর।
কৌতুক। একটা কৌতুক বলা যেতে পারে।
ডাক্তার সাহেব।
জ্বি বলুন।
আমার বউ আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারছে না!
কী বলেন!?
গ্রামের সব পুরুষ আপনার বউ দ্বারা সন্তুষ্ট, আর আপনি সন্তুষ্ট হতে পারছেন না!? না না তা হতে পারে না, আপনি শীঘ্রই আপনার স্বাস্থ্যের পরীক্ষা করান।
মাছের বারবিকিউ। কোরাল মাছের বারবিকিউ খাচ্ছি আর ডাক্তার সাহেবের কাছ থেকে কৌতুক শুনছি।তিনি মাঝে মাঝে এমন কৌতুক করেন। বলা হয়ে থাকে তিনি নারকেল জিঞ্জিরার একমাত্র ডাক্তার। এটি একসঙ্গে আশার এবং হতাশার কথা।কারন তো অবশ্যই আছে। তবে সব কারন সব সময় ওপেন করার প্রাসঙ্গিকতা রাখে না। মাছের বারবিকিউ জীবনে প্রথম খেলাম।ডাক্তার সাহেবকে ধন্যবাদ দেয়া দরকার। না। ধন্যবাদ দিলাম না। সেন্টমার্টিনে আমার প্রথম পদক্ষেপ এই আশ্বিন মাসে।১৪২৭। আমাদের ব্যাগপত্র আরাম করছে হোটেল হাসপাতালে। হোটেল হাসপাতাল! হ্যা হোটেল হাসপাতাল। ডাক্তার সাহেব দশটি রুমে,একতলা দুইতলা মিলে একাই থাকেন। তিনি না থাকলে মাকড়সা ইন্দুর সাপ তেলাপোকা থাকতো। যেহেতু তিনি থাকেন সেহেতু ইতরপ্রানিরা থাকেন না।
আমরা পাচটি রুম দখল করি। ডাক্তার সাহেবের নিজস্ব রিসোর্ট রয়েছে সেন্টমার্টিনে।নাম বলতে মানা।তবে রিসোর্টের প্রত্যেকটি রুম এক একটি বইয়ের নামে করা।যেমন একটি রুমের নাম বনলতা সেন,একটি রুমের নাম গীতাঞ্জলি ইত্যাদি ইত্যাদি। তিনার রিসোর্টে সাগরজল জোয়ারের সময় কবিতা পড়তে আসে,আবার ভাটায় কবিতা বানাতে চলে যায় সাগরপথে তার নিজস্ব জায়গায়। তিনার রিসোর্টের পাশে হুমায়ুন আহমেদের 'সমুদ্র বিলাস'। হুমায়ূন সাহেব শেষ জীবনে সমুদ্র বিলাসে থাকতে চেয়েছিলেন। প্রকৃতি তাকে থাকতে দিলো না। তিনি অসীম অপার সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে মিশে গেছেন। সময়ের উপাদান এখন তিনি।
ডাক্তার সাহেব তার রিসোর্টে আমাদেরকে থাকার জন্যে বলেছেন। অবশ্যই তিনি তা নিছক সৌজন্যকথা বোধে বলেছেন। কারন তিনিও চান যেনো আমরা তার সাথে কয়েকটি দিন যাপন করি। আত্মার কথা উপলব্ধি করার ক্ষমতা কাছের মানুষের থাকে। তাই আমরা হোটেল হাসপাতালে থেকে গেলাম। এটি সেন্টমার্টিনের একমাত্র সরকারি হাসপাতাল। দশ শয্যা বিশিষ্ট। সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার একমাত্র তিনি। অথচ তিনার পদবি উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। তিনি এই হাসপাতালে জয়েন করার আগেও হাসপাতাল ছিলো এবং ঔষধ রোগীকে সরবরাহ করতো হাসপাতালের এমএলএসএস(অফিস সহকারী)।
আমরা যে রুমে থাকি তার পাশেই হাসপাতাল এলাকার দেয়াল, দেয়ালের পাশে কয়েকটি পরিবার থাকে। সেই পরিবার হাসমুরগী পালন করে।একটি লাতা কী দিন কী রাত কী সকাল কী বিকাল ডাকে আর ডাকে।
১৭ তারিখ। সেপ্টেম্বর। ২০২০। ট্রলারে করে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাই। প্রথম সাগর পাড়ি দেয়া।ছোটোকালে সিন্দাবাদকে সাগর পাড়ি দিতে দেখতাম। সিন্দাবাদের মতো কেউ সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে এই প্রবালদ্বীপটি আবিষ্কার করে এবং এর নাম দেন জাজিরা, জাজিরা থেকে জিঞ্জিরা, জিঞ্জিরা থেকে নারকেল জিঞ্জিরা। জাজিরা মানে বিশ্রামস্থল।
এখানে সর্বপ্রথম মাত্র তেরো পরিবার জীবনযাত্রা শুরু করে। এখন জনসংখ্যা প্রায় আট হাজার। মাত্র দুটি সনাতনী পরিবার। বাংলাদেশে মাছধরাকাজ সনাতনী সম্প্রদায়কাজ। এখনো জেলে বলতে বাংলাদেশের মানুষ সনাতনী সম্প্রদায়কেই মনে মনে ফিল করে থাকে। কিন্তু। কিন্তু সেন্টমার্টিনে তিতাস একটি নদীর নাম উপন্যাসের চিত্রকল্প কাজ হবে না।এইখানে চিত্রকল্প পুরাই আলাদা। এখানে মুসলমানরা জেলে। মাছ ধরে। জলপুত্র উপন্যাস আমরা পড়েছি। হরিশংকর জলদাস নোনা পানির জেলেদের চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরেন।কিন্তু তার উপন্যাসেও সনাতনী জীবন।
আর সেন্টমার্টিনে? মুসলমানদের জেলেজীবন। এই জীবন নিয়ে কোনো উপন্যাস এখনো আমরা পাইনি।এই দ্বীপে যে কেবল বাঙালি মুসলমান বাস করে এমন না, রাখাইন মুসলমানদের বসবাস বিদ্যমান। অনেকের সাথে কথা হয়েছে আমাদের যারা মায়ানমারের জন্মনিবাসী। কেউ দশ বছর আগে কেউ পাচ বছর আগে বাংলাদেশ চলে এসেছে। বাংলাদেশ এসে জন্মসনদে বাংলাদেশের নাগরিকও হয়ে গেছে!
লাতামুরগী যখন অন্ধ হয়ে যায় তখন তার সময়-জ্ঞান থাকে না, যেকোনো সময় ডাকাডাকি করতে থাকে। প্রথমদিন লাতামুরগীর ডাক শুনে ঘুম ভাঙে। ভাবছি ভোর হয়ে যাচ্ছে। মোবাইলে নাই চার্জ। সাগরের দিকে হাটা দিলাম।সকালবেলার সাগর দেখবো। পথে একজন মানুষের দেখা পাই। লোকটার কাছ থেকে জানতে পারি রাত দুইটা বাজে। লাতা মুরগিরটির প্রতি মায়া হলো। আহারে তার চোখ নাই বিধায় তার মুখ সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। মনে হচ্ছে যারা বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করবে তাদের লাতামুরগিটির মতো চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে মন। তাই তাদের সময়-জ্ঞান নষ্ট হয়ে গেছে-- রাতের কাজ দিনে করছে, দিনের কাজ করছেই না!
ট্রলারের কান্দিতে আমি আর ভাই বসা যেনো ঘোড়া চালাচ্ছি আমরা। বঙ্গোপসাগরের স্ফটিক নীল জল আমাদের পায়ে শিশু শিশু খেল খেলে যাচ্ছে। দূরে দেখা যাচ্ছে ঢেউয়ের ঐহিক মর্ত্যেসুখ। নিখাকি বৌদি আমার মাঝির সাথে বসে কোনো এক দূরের সময়ের কথা ভাবছে। ট্রলারবুকে বসে আমরা দেখচ্ছি বার্মা মুলুকের পাহাড়,পাহাড়ের সাইডৌলি কোমড়ের ভাজ। একসময় বিপ্লবের বাঙালির গুরুত্বপূর্ণ ব্রাঞ্চ ছিলো এই বার্মা মুলুক। পথের দাবির সব্যসাচী এই বার্মা মুলুকে নিজেকে ওপেন করেছিলেন ডানাওয়ালা পাখির উড়ার মতো। এই বার্মা মুলুক আজ মায়ানমার, অস্ত্র তাক করে আছে আমাদের দিকে। সীমানা এক ইঞ্চি কিংবা আধ ইঞ্চি অতিক্রম করলেই চলবে ফায়ার। মাঝি তাই সদা সতর্ক,সদা জাগ্রত বাংলাদেশ নৌবাহিনী বাংলাদেশ কোস্টকার্ড। বিশাল সাগরের বুকে চিত্রিত হয়েছে সীমানানীতি যেনো মাকে ভাগ করেছে তার সন্তান। মায়ের একভাগ নিয়েছে মায়ানমার একভাগ নিয়েছে বাংলাদেশ। ভাগাভাগির দুনিয়ায় মায়ের মৃত্যু হয়েছে, তাতে তার স্বার্থখেকো সন্তানের অল্প করেও বোধপীড়ন হয় না।
নাফকে অনেকে নদী বলতে চায়, আমি বলি সে সাগরের লেজ। সাগরের লেজ থেকে আমরা যখন সাগরে প্রবেশ করি হৃদয়ের কোথায় যেনো একটা টান লাগে। এই টান জীবন ও মৃত্যুর মাঝে জীবনবোধের আঁকাবাকা স্রোতের এক ইছামতী ঢেউ।এই টান জল থেকে জীবনে ফিরে আসার গল্প, এই টান মানুষ হয়ে জন্মানোর আগেকার কথা। এই টান প্রেমিকের সাথে প্রেমিকার হঠাৎ দেখা হওয়ার পর পলকহীন নীরবতার পারঙ্গম কম্পন।
সেন্টমার্টিনে মসজিদ একুশটি,প্রাইমারি স্কুল পাচটি, মাধ্যমিক স্কুল একটি, কলেজ একটি আর মাদ্রাসা সেন্টমার্টিনের প্রত্যেকটি পরিবার।
সেন্টমার্টিনে ঔষধের দোকান প্রায় এগারোটা। কোনো কোনো ডাক্তার কোনোদিন প্রায় ত্রিশ হাজার টাকার ঔষধ বিক্রি করে। সেন্টমার্টিনে সরকারি হাসপাতাল থেকে পূর্বপাড়ার সৈকতের কাছাকাছি পর্যন্ত একটি পাকা রাস্তা বিদ্যমান, বাকি রাস্তা নামেমাত্র পাকা। সেন্টমার্টিনের মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় চারশো থেকে পাচশো কিন্তু শিক্ষক তেরো থেকে পনেরো জন।অর্থাৎ শিক্ষকের পর্যাপ্ত ঘাটতি রয়েছে। এই দ্বীপে সবাই আসে কিন্তু কেউ থাকতে চায় না।
এই দ্বীপে মাছের ব্যবসা বেশ জমজমাট। দুই ধরনের ট্রলার নির্মিত হয় এখানে। পারাপার ট্রলার। মাছধরা ট্রলার।পারাপার ট্রলার দুইভাগে বিভক্ত। মানুষ পারাপার। মালামাল পারাপার। একটি ট্রলারের নির্মান খরচ দশ থেকে পনেরো লাখ টাকা। কাঠ আনতে হয় মায়ানমার থেকে। কোনোদিন প্রায় দশ থেকে পনেরো লাখ টাকার মাছ ধরা দেয় জেলেজালে। এমন মাছপ্রাপ্তিকে চরম ভাগ্যের ব্যাপার বলে মনে করে জেলেরা।কোনো জেলে বছরে একবার কোনো জেলে ছয় মাসে একবার কোনো জেলে বছরে ছয় থেকে দশবার এই ক্ষেপ পেয়ে থাকে। এই মাছক্ষেপ পাওয়া মানে টাকায় লালে লাল হয়ে যাওয়া। প্রতিদিন দশ থেকে বিশ হাজার টাকার মাছ পাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। সাগরে বিপদ সংকেত থাকলে মাঝিরা মাছ ধরতে যায় না।বিপদ সংকেতকে তারা সিঙ্গেল বলে। শুটকির ব্যবসাও এই দ্বীপে বেশ রমরমা। তরমুজ এখানে ভালো জন্মে। এই দ্বীপতরমুজ বেশ রসালো ও মিষ্টি।তরমুজকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির ব্যবসায়ীর খোঁজ পাওয়া যায় এই দ্বীপে। কুকুর এখানে নারকেল খায়। অবাক হওয়ার মতো ঘটনা। কিন্তু সত্যি। কুকুর সবচেয়ে বেশি মানুষের আচরন কপি করে।এই দ্বীপের মানুষ অতিথি আপ্যায়ন করে ডাব দিয়ে মানে ডাব এদের কাছে অতিসুলভ সহজপাচ্য একটি খাবার উপাদান। হযরত মোহাম্মদ(স) এই দ্বীপে জন্মগ্রহন করলে ডাব হয়ে যেতো বেহেশতের সবচেয়ে অভিজাত খাবার। ডাবকে কেন্দ্র করে একপ্রকার ব্যবসার খোঁজ পাওয়া যায়।
এই দ্বীপের সবচেয়ে বড় ব্যবসা রিসোর্ট বিজনেস। একশোর অধিক রিসোর্ট রয়েছে এই দ্বীপে। রিসোর্টের পরের জায়গাটি খাবার বিজনেস। আট বর্গকিলোমিটার বা দুই হাজার একরের এই ইউনিয়নে প্রায় আটশো কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকে প্রতি বছরে। মানে টেকনাফ উপজেলার এই সেন্টমার্টিন ইউনিয়নটি প্রায় আটশো কোটি টাকার মার্কেট। শত শত কোটি টাকার লেনদেন যে দ্বীপে হয়ে থাকে সেই দ্বীপকে এমন গরিবি হালত করে রাখার মানে আমি খুঁজে পাইনা। যে গাভী রোজ দশ কেজি দুধ দেয় সেই গাভীর পেছনে রোজ মিনিমাম তিন কেজি দুধের টাকা খরচ করতে হবেই নতুবা গাভীর স্বাস্থ্যের অধিক ক্ষতি হবে নিশ্চিত। সেন্টমার্টিনে শতকোটি টাকা খরচ করে হাসপাতাল বানানো হলো অথচ ডাক্তার নাই, স্টাফ নাই, নির্মিত অপারেশন থিয়েটার রয়েছে অথচ ডেলিভারির জন্যে কোনো সুযোগ সুবিধা নাই।জরুরি মুহূর্তে বাচ্চা ডেলিভারির জন্যে টেকনাফ যেতে হয়।যেতে যেতে পথেই মারা যান মা।সাগরে বিপদ সংকেত থাকলে প্রাকৃতিক দায়মার উপর নির্ভর করতে হয়,বাচ্চা মারা যায়, মার স্বাস্থ্য পরে হুমকির মুখে। এখানে এই বাংলাদেশে কোনো মানুষ থাকে যাদের চৈতন্য রয়েছে!?
এটি পর্যটন এড়িয়া, এই কথা মানিব্যাগের ভেতর না রেখে মাথায় রাখতে হবে। পর্যটনকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হয়। পুলিশ বিজিপি কোস্টকার্ড নৌবাহিনী যে প্রয়োজনে মোতায়েন করা দরকার সেই প্রয়োজনে এখানে পরিবেশ বান্ধব প্রশান্তি বান্ধব সহজ গমনাগমন সহায়ক কমফোর্ট কমিনিকেটিব প্রতিবেশ নির্মান করা জরুরী। প্রকৃতি যেমন দিতে পারে তেমনি নিতেও পারে।
তবে সেন্টমার্টিনে তিনভাগের প্রায় পনেদুইভাগ জমির মালিকানা অন্য এলাকার মানুষদের হাতে।এমন সময় আসবে যখন সেন্টমার্টিনের মালিকানা স্থানীয় লোকদের হাতে থাকবে না। তখন বিদ্যুৎবাস স্থাপন হবে, উত্তর থেকে দক্ষিণ সেন্টমার্টিন যাতায়াতের জন্য নির্মিত হবে ইজি রাউন্ড প্যাসেজ, গড়ে উঠবে অত্যাধুনিক প্রাইভেট হাসপাতাল, নারকেল গাছ কেটে লাগানো হবে পরিবেশ বিনাশকারী অতি উচ্চ কাঠগাছ,কেয়া গাছকে বনসাই করে হোটেলের চমকভাঙা জাদুঘরে ঠাই করে রাখা হবে, প্রমোদতরী ভাসবে সেন্টমার্টিন টু টেকনাফ বরাবর, টেকনাফ টু বার্মার উন্মুক্ত হোটেল বরাবর। সবই হবে সবই হতে যাচ্ছে। সময় ঠিকই তার মতো করে মানুষকে নির্মান করে নিতে জানে। সময় এক আজব কারিগর।
রাত তিনটা। সাগর পাড় দিয়ে হাটছি আমরা চারজন। কেউ কেউ জেগে আছে তখনো। সাগর তখনো জেগে আছে। সাগর ঘুমায় না।সাগরের গর্জন তার প্রমান।সাগরের গর্জন পৃথিবীর সবচেয়ে ইউনিক চাংগা সংগীত। বিপ্লবী মারা গেলে সাগরের গর্জন হয়ে যায়। সেন্টমার্টিনে আসার পর আমাকে অবাক হতে হয়েছে। কারন বিপ্লব করতে করতে যারা টিভির পর্দা ফাটিয়ে ফেলে, টিএসসির মাটিকে ধূলায় রূপান্তর করে বড় বড় সোসালিষ্ট কলামিস্ট কমিনিস্ট ফমিনিস্ট মূর্তিমান সাজঘর সাজে তারা কই!? সব হালারা এটেনশন সেকার। নিজের ফেইস ডিগনিটি চকচকে করে তুলার জন্যে কমিনিস্ট ফমিনিস্ট সোসালিষ্ট বালিস্ট ইউনিয়ন ফিউনিয়ন তকমা লাগায়। মাত্র দুইজন কেবল দুইজন মানুষকামী আত্মা এই সেন্টমার্টিনে পদার্পন করামাত্র সেন্টমার্টিনের চেহারা বদলে যাবে। সেন্টমার্টিন হয়ে উঠতে পারতো বিপ্লবের ছুডিঘর। তাই সেন্টমার্টিনের মাটি ও মানুষের জীবন অবলোকন করে সো কল্ড বিপ্লবীদের মুখে থুথু দিতে ইচ্ছে করছে জাস্ট।
সাপ ধরেছে ব্যাঙকে। ব্যাঙ চিৎকার করছে। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে বিবেক।বিবেককে দেখে ব্যাঙ যেনো বেচে উঠলো। বিবেকের কাছে ব্যাঙ বাচার আকুতি জানালো।সাপ বলে আমি তিন দিন যাবৎ না খেয়ে আছি,আমার খাবার দরকার। বিবেক পড়লো মহা বিপদে! এখন বিবেক কী করবে? বিবেক সাপকে বললো 'ছেড়ো না' আর ব্যাঙকে বললো ' নড়ো না'। ব্যাঙ যখন নড়ছে না সাপ ভাবলো এবার তাকে মুখ থেকে মাটিতে রাখা যায়, মাটিতে রেখেই তাকে ভালোভাবে খাওয়ার প্রস্তুতি নিবে সাপ। যখন সাপ ব্যাঙকে মাটিতে রাখলো তখন ব্যাঙ দিলো লাফ। এক লাফে সাপের সীমানার বাইরে।
ব্যাঙ আর সাপের গল্প শুনতে শুনতে আমরা ইলিশ মাছ ভাজা খাচ্ছি। সাগরের ইলিশ। ডাক্তার সাহেব তিন হাজার টাকার মাছ কিনেছিলেন বাড়ির জন্যে। মাছ আর বাড়ি নেয়া হলো না তার। রিজিক এক উদ্ভুত ব্যাপার! রিজিককে আমার কাছে সময়ের উপহার মনে হয়। সাগরের ইলিশে নোনা গন্ধ তাজা মিহি স্বাদ রয়েছে। সাগরকে এখনো ইট ভাটা কলকারখানার শ্রমিকরা তাদের দূষণের কবলে পুরোপুরি নিতে পারে নাই। আমি তো অবাক, কেনো সেন্টমার্টিনে কোনো মন্ত্রী আমলা ইটকল বা বজ্রের ফ্যাক্টরি স্থাপন করেনি।
কুরমুরি ইলিশ ভাজা খেয়ে আমরা চললাম ডাক্তার সাহেবের রিসোর্টের দিকে। পরিবেশ অধিদপ্তর সেখানে একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মান করেছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে সমুদ্র দেখবো। রাত নয়টার পর থেকে জোয়ারজল ওয়াচ-টাওয়ার এলাকায় প্রবেশ করে। টাওয়ারের নিচে সমুদ্রের ঢেউ।আমরা উপরে। চারপাশে অন্ধকার। ঢেউজলে ভেসে আসছে শ্বেত ফসফরাস। চারপাশ কাপানো জলের গর্জন। মনে হচ্ছে এখন ভেঙে ফেলবে টাওয়ার। ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ডাক্তার সাহেবের রিসোর্ট,পুরো সেন্টমার্টিন। নিখাকি বৌদি আমার শিশুদের আনন্দে বয়স্কদের আতঙ্কে একসঙ্গে বয়ে যাচ্ছে জলগর্জনের তালে তালে। এমন সময় আমার মনে হলো সাগরের পুরাতন প্রেমিকা এই সেন্টমার্টিন। সাগরকে ছেড়ে সে সংসার করা শুরু করেছে। আর সাগর? হাজার বছরের মতো বাউল উদাসীন রয়ে গেলো। মাঝেমধ্যে সাগর তার প্রেমিকাকে দেখতে আসে শিবের নীলরং বেশে, কাছে আসে খুব কাছে আসে, তারপর সাগর সেন্টমার্টিনের কানে কানে বলে, 'বন্ধু তোমাকে নিয়ে যেতে পারি আমার হাজার বছরের পুরাতন পথে কিন্তু রেখে গেলাম তোমাকে পৃথিবীর এই সামাজিক নিয়মে রেখে গেলাম তোমাকে তোমারই ইচ্ছার বাধনে', তারপর সাগর আবার নেমে যায় তার পথে তার গতিতে। সাগরের এই নেমে যাওয়া গতিকে লোকে ভাটা বলে।
"আই ভাত ন হাইয়ুম গুসসা ওইয়ুম আর মনত জ্বালা
বেয়াতুনুর বউ সুন্দর সুন্দর আর বউয়া হালা
পূকর বাড়ির শসমো মিয়া ছোড আবতুন
কি সুন্দইয্যা বিয়া গইয্যে রাঙ্গামাটিরত্তুন
বদ্দা রাঙ্গামাটিরত্তুন
আল্লেই আইন্নি রাওজানূত্তুণ চুকচুইক্কে হালা
আর মনত জ্বালা"
এমন রেসিস্ট গান শুনতে নিশ্চয়ই কোনো সচেতন মানুষের ভালো লাগবে না। এই গানে প্রতিযোগী মনোভাবকে তেল দেয়া হয়েছে। একটি জাতি জাস্ট প্রতিযোগিতার মিছিলে স্লোগান দিয়ে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সুন্দর কোনো রং নয়, সুন্দরে রং থাকে। অথচ কলোনিয়াল মানসিকতার স্পষ্ট ছাপ এই গানে রয়েছে। আর এই গান শুনতে হচ্ছে আমাকে সেন্টমার্টিনে এসে।তবে নিঝুম দ্বীপে আব্দুর রশীদ ভাইয়ের গান শুনে মন ভরে গেলো। চোখের ক্লান্তি মনের ক্লান্তি মুছে গেলো।'মধু হই হই' গানটির সুরকার ও গীতিকার এই আব্দুর রশীদ ভাই। তার গান শুনে, চা খেয়ে আমরা চললাম ছেড়াদ্বীপের উদ্দেশ্যে। প্রবালদ্বীপ পার হয়ে ছেড়াদ্বীপ।ছেড়াদ্বীপে কোনো মানুষ থাকে না। জোয়ারজলে ভেসে যায় এই দ্বীপ। তবে অন্তরে অন্তরে সিনেমায় মৌসুমী সালমান শাহ এই ছেড়াদ্বীপে দুজনে নির্জনে প্রেমের পৃথিবী সাজানোর কথা বলেছিল। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৪ সালের ১০ জুন। ডিরেক্টর শিবলি সাদিক। জানি না এই ছেড়াদ্বীপে তখন সন্ধ্যা নাগাদ জোয়ারজল আসতো কিনা। আসলে প্রেমের পৃথিবী হয়ে যেতো সলিলসমাধি। তবে এই ছেড়াদ্বীপের সাগর একেবারে অন্যরকম। এখানে জল নীল শাড়ি পরে রাধিকারূপে যায় কৃষ্ণবিহারে। এখানে জল বৃন্দাবনসুখী রাধাকৃষ্ণ তপোবন।
অনেকে মনে করেন এই প্রবালদ্বীপটি টেকনাফের অংশ ছিলো।ভূমি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এটি আজকের রূপ ধারন করেছে। হতেও পারে। কারন টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের দূরত্ব এক ম্যারাথন দৌড় পরিমান।আর মায়ানমার তো সেন্টমার্টিন দ্বীপচোখের ছায়ার নিচে। যেহেতু এটি প্রবালদ্বীপ সেহেতু সংশয় থেকে যায়। কারন প্রবাল জমতে জমতে এই দ্বীপ আজকের অবয়ব ধারন করেছে এই কথা অনেকে মনে করেন। জীবিত প্রবালকে দা দিয়ে আঘাত করলে সাদা রক্ত বের হয়। প্রবালকে দেখে মনে হবে দলদলে জুলজুল করে তাকিয়ে আছে। বাস্তবে তা নয়। তারা অত্যন্ত সত্যনিষ্ঠ ঘনিষ্ঠ। ভাইয়ের দারা শখ করে প্রবালে উঠে পা কেটে ফেলে। এই প্রবালের লোমে লোমে বালুকনা জমতে জমতে আজকের দারুচিনিদ্বীপ। এই দ্বীপকে আবেক্ষণ করার পর বলতে পারি আরও প্রবাল এখানে জমা হবে। গবেষণা করে কেবল আবিষ্কার করতে হবে এমন কিছু আছে কিনা যা প্রবালজীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দারুচিনিদ্বীপকে প্রবালজীবনকে মুক্ত রাখতে পারলে তার আয়তন আরও বৃদ্ধি পাবে।
অ্যান্থজোয়া শ্রেনীভুক্ত সামুদ্রিক প্রানি প্রবাল। প্রবালের নিকটাত্মীয় সাগর কুসুম। এরা সাগর কুসুমের মতোই পলিপ তৈরি করে, তবে সাধারনত এরা কলোনি তৈরি করে বসবাস করে। কলোনির সমস্ত পলিপ জেনেটিক্যালি অভিন্ন হয়। এরা প্রানি হলেও অনেকটা সাধুপ্রানি, জীবনের পূর্ণবয়ষ্ক অবস্থায় সাগরতলে কোন দৃঢ় তলের উপর গেড়ে বসে বাকি জীবন পার করে দেয় নিশ্চল হয়ে (হুমায়ূন আহমেদ যেমনটি করতে চেয়েছিলেন সেন্টমার্টিনকে ঘিরে,তিনিও যেনো বয়স্ক প্রবাল হতে চেয়েছিলেন)। প্রতিটি প্রবাল-পলিপ যেখানে গেড়ে বসে সেখানে নিজের দেহের চারপাশে ক্যালসিয়াম কার্বনেট নিঃসরণের মাধ্যমে শক্ত পাথুরে খোলস বা বহিঃকঙ্কাল তৈরি করে।প্রবাল পলিপের মৃত্যুর পরেও খোলসটি রয়ে যায় এবং তা অস্মীভূত হয়ে যেতে পারে। এরকম অস্মীভূত প্রবালের দেহাবশেষের উপর নতুন করে আবার প্রবাল বসতে পারে। এভাবে একটা কলোনি বহু প্রজন্ম ধরে চলার ফলে বড়সড় পাথুরে আকৃতি ধারন করে। এভাবেই তৈরি হয় বড় প্রবাল দ্বীপ এবং প্রবাল প্রাচীর। প্রবাল প্রাচীর মাটিধর্ম থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
ক্রমবর্ধিষ্ণু প্রবাল কলোনিগুলোকে প্রবাল মস্তক বলা হয়। প্রচলিত ধারণায় সমস্ত মস্তকটিকেই একটি প্রবাল বলে মনে করা হলেও, তা আসলে প্রবাল পলিপ যৌথসভা। প্রবাল পলিপ যৌথসভা প্রত্যেকেই জিনগতভাবে অভিন্ন। তাদের দেহের ব্যাস মাত্র কয়েক মিলিমিটার হয়ে থাকে। কয়েক হাজার প্রজন্ম ধরে প্রবালের জীবনচক্র চলার ফলে একটি প্রবাল কলোনিতে তাদের প্রজাতীর বৈশিষ্ট্যসূচক একটি কঙ্কাল গঠন করতে পারে। প্রবাল মস্তকগুলো বেড়ে ওঠে পলিপগুলোর অযৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশবিস্তারের মাধ্যমে। তবে প্রবালেরা বংশবিস্তারে যৌন প্রজননেরও আশ্রয় নেয় প্রজনন ঋতুতে পূর্ণিমার রাতে বা তার কাছাকাছি সময়ে কয়েক রাত ধরে সাগরের পানিতে শুক্রানু এবং ডিম্বানু ছেড়ে দিয়ে। সাগরজীবন প্রবালকীট কমিনিউকেশনে অত্যন্ত সহায়ক। তবে স্কুবা ড্রাইভারের সংখ্যা ও গুরুত্ব বাংলাদেশে বৃদ্ধি পেলে প্রবালজীবন সম্পর্কে আরও ধারনাসমৃদ্ধ বক্তব্য আমাদের ভাষায় জন্ম নিবে।
মাটির প্রত্যেক উপাদানের সাথে তার প্রত্যেকটি উপাদানের যেমন সম্পর্ক তেমন সম্পর্ক প্রবালের সাথে টোটাল প্রবাল গোষ্ঠী কিংবা বালিকনার থাকে না। তাই সেন্টমার্টিনে যত ইট সিমেন্টের ব্যবহার হবে মানে গাথুনিনির্ভর দালান কোঠা নির্মান করা হবে ততই এই প্রবালদ্বীপকে বিপদজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। প্রবাল প্রাচীর আর মাটি এক না,সাধারণ এলাকার মাটি আর সাগর দ্বীপের মাটি এক না।
এক স্যার অন্ধদের ক্লাস নেন।ক্লাসে গিয়ে স্যার বললেন,'একজন দাড়াও।' একজন বাদে সবাই দাঁড়িয়ে গেলো। স্যার যে ছাত্র বসে আছে তাকে জিজ্ঞেস করলেন কেন সে দাড়ায়নি।' সে বলে, 'স্যার,গতকাল থেকে আমি চোখে দেখতে শুরু করেছি।'
সেন্টমার্টিনে যখন একটি বহুতল বিল্ডিং নির্মান করা হবে তখন সবাই বিল্ডিং নির্মানের দিকে নজর দিবে। একজনও খুজে পাওয়া যাবে না যে অন্ধকার থেকে বের হয় আলোর বাজারে যাবে। যাকে বলে গড্ডালিকা প্রবাহ। অর্থাৎ দেখাদেখি বিল্ডিং নির্মানের ঢল নামবে, সেই ঢলে ভেসে যাবে সেন্টমার্টিনের বিসতি কিসসা।
সেন্টমার্টিন মূলত জেলেপল্লী। ভাতে মাছে বাঙালি বলতে যা বুঝায় তা এলাকার মানুষের জন্মগত। আমরাও এই দারুচিনিদ্বীপে ভাতে মাছে বাঙালি হয়ে গেছি।আমাদের ইচ্ছা ছিলো দুই-তিন দিন থাকবো। কিন্তু আমাদের থাকতে হয়েছে সাত দিন। ছোটোকালে খালাম্মার বাড়ি গেলে নিজের ইচ্ছায় আসা যেতো না।খালাম্মা কাপড় লুকিয়ে ফেলতেন। এই সাগরও আমাকে দেখে বেশ আনন্দিত। তাই সে আমার বাড়ির ফেরার সময় নিজেকে উত্তাল করে তুলে, কালিরূপ ধারন করে,আবহাওয়া অফিসে জারি হয় তিন নাম্বার বিপদ সংকেত। জাহাজ ট্রলার চলা স্টপ। সাতদিন আপ্যায়ন করার পর সে শান্ত হয়। তাও পুরোপুরি নয়।
সাগর না শান্ত না অশান্ত এমন অবস্থায় আমরা ট্রলারে উঠি।আমি প্রথমে ছিলাম মাঝির সাথে। পরে দেখি ইঞ্জিনের ধোঁয়া আমার নাকে এসে লাগে। তারপর গিয়ে বসলাম ট্রলারের মাঝখানে। আমার পাশে এক হুজুর ও তার স্ত্রী। চোখবাদে তার স্ত্রীর কিচ্ছু দেখা যায় না।তারপরও দেখি মোবাইল দিয়ে সে তার স্ত্রীর ছবি তুলে। কীসের ছবি তুলে আমি ভেবে পাইনা! সাগরে ঢেউ বাড়ে। ট্রলারের কান্দি দিয়ে জল উঠে। আমার নিখাকি বৌদির ভয়ে চেহারা লাল হয়ে যায়, বোরখা মহিলা সিজদায় পড়ে যায়। আমি তাকে কানে কানে বললাম 'ভয় পাবেন না, আমি যে ট্রলারে আছি নিশ্চিত জেনে রাখুন সেই ট্রলার ডুববে না।' আর তার স্বামীকে বললাম 'আসতাগফিরুল্লাহ জপ করেন', বৌদিকে ইশারা দিয়ে বললাম 'নো টেনশন'। তারপরও বৌদি ডো টেনশনে ছিলো।কারন বৌদি সাতার জানে না। এক মহিলা বমি করা শুরু করে।
তারপর ধ্যানে বসলাম। তারপর আস্তে আস্তে নৌকা ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভাসতে শিখে গেলো। আস্তে আস্তে নাফ নদীর ভেতরে আমরা ঢুকে যাই। নাফ নদীতে ট্রলারের মাঝখানে বসে ভাবতেছিলাম শত শত বছর আগে কাঠের নৌকা করে কেমনে তারা আমেরিকা আবিষ্কার করে!? তখন ইঞ্জিন ছিল না। অথচ তাদের সাহস! আর আমরা পুকুরে নামতে ভয় পাই, নদীতে তো আরও ভয়। আর সাগর? সাগর তো মহা মুশকিলের জায়গা। পদ্মা মেঘনার ঢেউ গুনতে গুনতে আমাদের দিন যায়, আর তারা হয়ে উঠে কলম্বাস,ইবনে বতুতা,ভাস্কো দা গামা।
মুসলমান জেলেপল্লী আর সনাতনী জেলেপল্লীর মধ্যে পার্থক্য অনেক অন্তত বাংলাদেশে। সনাতনী জেলেপল্লী একটু নোংরা হয়,ময়লার আধিক্য থাকে। 'নোংরা' পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অর্থে ব্যবহার করেছি। আমরা যে সময়টাতে সেন্টমার্টিনে নোঙর করি সেই সময়টা কিন্তু সেন্টমার্টিনের প্রসাধনী সময় নহে। তার প্রসাধনী সময় নভেম্বর থেকে মার্চ।এই সময় সে চেহারা পার্লারে নিয়ে একেবারে বউসাজ সেজে পুতুল হয়ে থাকে। সনাতনী জেলেপল্লীর ছেলেমেয়েরা মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে কিন্তু সেন্টমার্টিনে সেই ব্যবস্থা নেই।সেন্টমার্টিনে আমরা সাতদিন ছিলাম কিন্তু কোনোদিন কোনো যুবতী মেয়ের বা মহিলার সেই অর্থে চেহারা দেখেনি। সেন্টমার্টিনছাড়ার আগের দিন হুমায়ূন আহমেদের বাড়ির আশেপাশে কয়েকজন মেয়েমহিলাকে উন্মুক্ত আলাপ আলোচনা করতে দেখি। এক চাচার কাছে জানতে চেয়েছি মেয়েদের এই ঘরবন্দী থাকার কারন।চাচার বয়স ৭০ থেকে ৭৫।কিন্তু চেহারায় বয়সের ছাপ কম। চাচার মতে মেয়েরা গোয়ালের গরুর মতো মালিকের ইচ্ছাধীন। চাচার হতা হুনে আর মাথায় যেনো বজ্র পড়ে! আই পুরাই ফঅল অয়ে যাই!!
ধীরাজ বাবুর সাথে কাজী নজরুল ইসলামের কোথায় যেনো একটি মিল দেখতে পাই। তবে ধীরাজ বাবুর মতো কাজীদাকে এতো স্পষ্ট সুরে কথা বলতে দেখি নাই। যখন পুলিশ ছিলাম বইটি পড়ে ধীরাজ বাবুর প্রতি আমার যথেষ্ট রাগ হয়েছিল। আবার ভাবলাম, লোকটি নিজের কথা লুকানোর চেষ্টা করেনি। এটাই তার মহৎ আবেশ। মোহব্যূহে পড়ে অনেক লেখক নিজেকে মহৎ করে তুলেন। ধীরাজ ভট্টাচার্য তা করেননি।তিনি বলেছেন মাথিনের কথা, তিনি বলেছেন তার জন্য মাথিন প্রান দিয়েছে কুয়ার জলে।
ওয়ানথিন প্রু চৌধুরীর মেয়ে মাথিন।ওয়ানথিন তৎকালীন সময়ে সেখানকার জমিদার। গোত্রনিয়মের বাইরে গিয়েও মাথিন ধীরাজ ভট্টাচার্যকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ধীরাজ সময়সংঘাতে শেষ পর্যন্ত মাথিনকে বিয়ে করতে পারেনি। মাথিন থেকে গেছে টেকনাফ থানার কুয়ার জলে। প্রেমের জন্য জলহীনা মাথিন সময়ের সাথে লেপ্টে আছে ইতিহাসের পাতায়।
টেকনাফ নেমে প্রথম কাজ সিএনজি ডাকা, তারপর বাজারে যাওয়া, বাজার থেকে কিছু কেনাকাটা করা। দরদাম করে কেনাকাটা করি। বাজার মানেই দরকষাকষি। সিএনজি ড্রাইভার বলে এতো দরদাম করে নাকি এখানকার মানুষ কেনাকাটা করে না। কারন তাদের কাছে নাকি প্রচুর টাকা। টাকার উৎস জানতে চায়লে সিএনজি চালক মাহবুব ইয়াবা ব্যবসার প্রতি সরাসরি ইঙ্গিত করে।
মেরিন ড্রাইভ রাস্তা দিয়ে চলছে আমাদের সিএনজি। আমি মাহবুবের পাশে বসা।সে দুর্দান্ত চালায়। চালক হিসাবে সে যথেষ্ট রুচিশীল ভদ্র। গান শুনছে মাহবুব। একটি ইয়ারফোন সে আমার কানে সংযোগ করে।আমি যে গানগুলো শুনি সেই গানগুলো বাজছে তার মোবাইলে। তাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্ট মনে হলো তাকে। কারন আমার ইউটিউব হিস্ট্রি তার কাছে থাকার কথা নয়।
আহা! মেরিন ড্রাইভ!! বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর সুন্দর একটি রাস্তা। একপাশে সমুদ্র, একপাশে পাহাড়। একসময় সাগরের মাতৃরূপ চোখে নামে একসময় পাহাড়ের বিশাল উদার কঙ্কনা চোখে আসে।সাগর আর পাহাড়ের ডেজল অবয়ব পাশে রেখে চোখে নৃত্য করে নৃশংস হৃদয়ছোয়া মেঘ। মনে হয় যেন বেহেশতের তিন হোর এসে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রশান্তির অধরা পৃথিবীর ছায়ায়। সেই ছায়াতে আমি শিমুল তুলার মতো উড়তে উড়তে হারানোর কথা ভুলে গিয়ে হারিয়ে যায়।আহা প্রশান্তি! প্রশান্তির ছবি তুলা যায় না।
কক্সবাজার? কক্সবাজার নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে রাজি না। জলরাশি আর বিল্ডিং দেখতে নিশ্চয়ই মানুষ টাকা খরচ করতে প্রস্তুত থাকবে না। শুনেছি কক্সবাজার নাকি পৃথিবীর বৃহৎ সমুদ্র সৈকত। আরে ভাই 'বৃহৎ' কথাটি বলতে যতটুকু মুখ ফোলে ততটুকু বুক তো ফোলে না।
কক্সবাজারে আমরা ছিলাম শরীফের বাসায়।সেও আমাদের জন্য গেস্টরুম প্রস্তুত করে রেখেছিল কিন্তু আমরা তার বাসাতেই রাতযাপন করি। শরীফ জীবনে যত জায়গায় অবস্থান করেছে প্রত্যেক জায়গায় আমি এক ঘন্টার জন্য হলেও অবস্থান করেছি।শরীফ ছোটোকাল থেকে স্কাউট করেছে, এখন স্কাউটিং তার জীবিকা। শরীফের বউ আমাদেরকে পেয়ে মহাখুশি। আনন্দে রান্না করেছে সে মজার মজার মাছ। আমরাও মজার মাছ খেতে খেতে ভাতেমাছে দিনগুনি।
শরীফের বাসা থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দশ মিনিটের পথ। সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখি কয়েকটি ছাতা টাঙানো। ছাতার নিচে বসতে ঘন্টায় ৬০ টাকা গুনতে হয়। সরকারি কোনো পদক্ষেপ আমার চোখে পড়েনি। এলাকাটিকে সরকারমুক্ত এলাকা মনে হলো। ভালোই, বাংলাদেশের একটি জায়গা পাওয়া গেলো যেখানে সরকার নাই। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আশেপাশের এলাকাকে একটি উপজেলা শহরের চেয়েও অগ্নুৎপাত বৃদ্ধভগ্নদশা বলিয়া বোধ হলো। ভালো সৈকতচিন্তার কোনো প্রভাব দেখলাম না।আবার ভাবলাম, যে দেশ তার জাতির পিতাকে হত্যা করে সেইদেশের মানুষ এর চেয়ে ভালো চিন্তা করতে পারে কী করে!?
ট্রেন মিস করেছি। এখন আবার সোনার বাংলা ট্রেনের টিকিট কাটলাম। শোভন চেয়ার। চিটাগং আমি স্নিগ্ধা করে আসা যাওয়া করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। শোভন চেয়ারে বসে আছি এমন সময় একজন ট্রেনকর্মী আমাকে ডেকে নিয়ে স্নিগ্ধায় বসালেন। ভালো লাগলো। আসলে আমরা যা গভীরভাবে প্রার্থনা করি তাই আমাদের জন্যে অপেক্ষা করে। গ্যালাক্সির প্রত্যেকটি বস্তু আমাদের জন্যে আমরাও গ্যালাক্সির প্রত্যেকটি বস্তুর জন্যে, মাঝখানে কোনো 'অর্থাৎ অথবা কিংবা এবং' জাতীয় শব্দ নাই -- এইখানেই জীবন আর জীবনের অভিধান একসঙ্গে লেপ্টে যায়।
হকবিলস প্রজাতির কচ্ছপ মূলত আটলান্টিক মহাসাগরের। ভারত মহাসাগরেও তার দেখা পাওয়া যায়। গভীর জলে তারা বসবাস করতে পছন্দ করে না। ফিশ, জেলিফিশ স্পঞ্জ তার খাবার। ৩০-৫০ বছর তার সাধারণ আয়ুকাল। ২৪-৪৫ ইঞ্চি তার দৈহিক গাঠনিক আকৃতি। ওজন ১০০--১৫০ পাউন্ড। জলপাই রঙের কিংবা সবুজ রঙের কচ্ছপের মতো তার নেস্টিং সময়টা আলাদা। ডিমপাড়ার সময় সে সাগরতীরের কাছাকাছি চলে আসে। তীরবাহু বালুতে কূপ খনন করে। একটি কূপে ১৩০--১৬০ ডিম রেখে বালু দিয়ে ঢেকে ফেলে। প্রায় ৬০ দিন ধরে চলতে থাকে তাপপ্রক্রিয়া। তাপপ্রক্রিয়ার এই সময়টা কচ্ছপদের জন্য সবচেয়ে জটিল কঠিনতম সময়। কচ্ছপের ডিমের তাপপ্রক্রিয়ার কথা আসলে এক সাধু ও তার শিষ্যের কথা মনে আসে। শিষ্য গুরুকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছে না। বিরহে কাতর। তাছাড়া তার মানে শিষ্যের অন্তরে তাসাউফও অর্জিত হয়নি।গুরুর আদেশ অবশ্যই তাকে মানতে হবে। গুরুবাক্য গঙ্গাজলের চেয়েও পবিত্র, গুরুবাক্য নূহ নবীর কিস্তির চেয়েও নিরাপদ, গুরুবাক্য চলক ধ্রুবক, গুরুবাক্য ভাব-বস্তু। গুরুবাক্য মেনে গুরুকে ছেড়ে যেতে হচ্ছে তাই তো তার মনে বিরহ অপার অসীম।
গুরু তার মনের দুঃখ বিরহ বুঝতে পারলেন। এবং শিষ্যকে বলেন, " তুমি যেখানেই থাকো তোমার সাথে আমি আছি, কচ্ছপ যেমন তীরে তার ডিম রেখে সাগরজল থেকে তাপ দিয়ে বাচ্চা ফোটায় তেমনি আমিও দূর থেকে তাপ দিয়ে তোমার অন্তর-আত্মা প্রকাশিত করে ফেলবো। তখন তোমার আর আমার মধ্যে কোন দূরত্ব থাকবে না।"
গুরু-শিষ্যের তাসাউফ তাপপ্রক্রিয়া যত সহজ মনে হচ্ছে তত সহজ কিনা জানি না। তবে কচ্ছপজীবনের ডিম তাপপ্রক্রিয়া সহজ নয়। এই সময়টাতে বিভিন্ন কাকড়া শঙ্খচিলের আক্রমনবলয়ের শিকার হয় তাদের। আর মহান মানুষদের বিজ্ঞাপনজ্ঞাপক প্রচারসুখ জাতীয় মহান কর্মকাণ্ডের কথা বলে অভিধান প্রসার না করি।
কচ্ছপের মাংসের কদর আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক। আইন করেও কচ্ছপের ব্যাপারে মানুষের আচরনে দাড়ি কমা সেমিকোলন টানা যাচ্ছে না। প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক উপাদান ধ্বংস করে হলেও মানুষ বিলাসী জীবনের পাহাড়সুখ নির্মান করবেই।
চুনাপাথর, কালোসোনার জন্য সেন্টমার্টিন বিখ্যাত আমরা জানি। আমরা জানি সেন্টমার্টিনের উপকূলে অলিভ, গ্রিন ও হকবিলস প্রজাতির কচ্ছপ ডিম পাড়ে। চোরবিজ্ঞানী যারা আছেন তারা নিশ্চয় কালোসোনা ও চুনাপাথরকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে উৎসাহী হবেন না, তারা উৎসাহী হবে অত্যন্ত ব্যাগ্রভাবে কচ্ছপজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়ার জন্য। কারন তারা বিশ্বাস করে চুরি করো নতুবা ডাকাত তোমাদের মেরে ফেলবে।
ডাকাত মনে করে সবকিছু গ্রাস করো নতুবা 'চোর' ডাকাত হয়ে যাবে। চোর-পুলিশ খেলতে খেলতে আমরা বৃহত্তর সমুদ্র সৈকতকে মেঘনা নদীর তীরঘর বানিয়ে ফেলি আর তারা পর্যটন শিল্পকে হাতিয়ার করে অর্থনৈতিক তরলচাকাকে চাঙ্গা করে তুলছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু দেশ মালদ্বীপের কথাই ধরুন। ১৯৭২ সালে প্রথম রিসোর্ট প্রতিষ্ঠা করে তারা।৩০০ বর্গকিলোমিটারের এই দ্বীপরাষ্ট্রটি কেবল পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে বছরে প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক ইনকাম করে থাকে। আর আমরা? কেউ ভারতপন্থী, কেউ পাকিস্তানপন্থী, কেউ পশ্চিমা জীবনপন্থী, কেউ বউজামাইপন্থী, কেউ নিয়তিপন্থী অন্ধতন্ত্রকে শাস্ত্র মেনে ব্লাক স্কিন হোয়াইট মাস্ক পাঠ করছি, মহাভারতের কথামৃত না যাচ্ছে আমাদের কানে, না যাচ্ছে আমাদের বোধে, না লাগছে আমাদের মননে--
ন জাতু কামঃ কামানামুপভোগেন শাম্যতি।
হবিষা কৃষ্ণবর্ত্মেব ভূয় এবাভিবধর্তে।।
যৎ পৃথিব্যাং ব্রীহিযবং হিরন্যং পশবঃ স্ত্রিয়ং।
একস্যাপি ন পর্যাপ্তং তস্মাৎ তৃষ্ণাং পরিত্যজেৎ।।
সোনার বাংলা ট্রেনের স্নিগ্ধায় বসে বসে পাওলো কোয়েলহোর দ্যা এ্যালকেমিস্ট পড়ছি। নিজেকে সান্তিয়াগো মনে হচ্ছে। দ্যা ওল্ড ম্যান এণ্ড সি উপন্যাসেও একজন সান্তিয়াগো ছিলো। তবে সে সাগরের লড়াকু সৈনিক বা সংশপ্তক। আর এ্যালকেমিস্টের সান্তিয়াগো মরুভূমির স্বপ্নবাজ স্বপ্নধারী তরুন। এই তরুণ ঘর ত্যাগ করে পৃথিবী দেখবে বলে, এই তরুন মরুভূমির বুকে প্রতান প্রতীম ফাতেমার খোঁজ পায়। ফাতেমা ভালোবাসে। ফাতেমাকে ভালোবাসে সে।
ফাতেমা মরুভূমিকন্যা। ভালোবাসার অনেক উপরে তার হৃদয়বিতান। গাছে যেমন পাখি ঠাঁই পায় তেমনি ফাতেমার হৃদয়ে ঠাঁই পায় ভালোবাসা। তাই ফাতেমা সান্তিয়াগোর স্বপ্নপথে স্পিডব্যাকার হয়ে অবস্থান করেনি। বরং সান্তিয়াগোর স্বপ্নপথকে আরও উৎসাহপ্রোথিত করে তুলেছে।
এ্যালকেমিস্ট পড়তে পড়তে মরুভূমির প্রেমে পড়লাম। চাঁদনী রাতে মরুভূমি কেমন দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। সেন্টমার্টিন মেরিনড্রাইভ রাস্তা, চিটাগাং টু কক্সবাজার যাওয়াপথের সর্পিল পথচলন যেমন করে নুনস্বাদের মতো চোখে লেগে রয়েছে তেমনি করে মনের চোখে আটকে আছে মরুভূমি, মরুভূমির চাঁদনী রাত। কিন্তু ট্রেন চলছে।
বাড়ি ফেরার ট্রেন।
আমাকেও ঘরে ফিরতে হয়। ঘরে ফেরার সুখ ঘরত্যাগ সুখের মতোই লাবন্যধারী-- এই বিষয়ে আমার কোন প্রতর্ক নেই -- সময়েরও কোন প্রতর্ক থাকবার কথা নয়!
মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২০
আগুনে ফাগুন
অন্ধকার তীব্র হলে মোমবাতির আগুনও কাজে লাগতে শুরু করে, অন্ধকার আরো তীব্র হলে দিয়াশলাইয়ের কাঠি হয়ে ওঠে মানুষের আরেক নাম
মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০
কবিতা
চিন্তার রক্তে লালিত পালিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে শব্দ, স্বাধীন শব্দ থেকে জন্ম নেয় কবিতা
রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
আমার নাই যে পাখা
সাগর তীরে ঘর বেধেছি
ঢেউয়ের সাথে দেখা
পাখি বলে গ্রামে যাবে
ক্যামনে বলি ক্যামনে বলি
আমার নাই যে পাখা
বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০
পাথর
হে কাবার পাথর, এতো গুনা তুমি কোথায় রাখো? الحجر الأسود!?
শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০
বাটপার
নিজের বাটপারি ঢাকতে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করুন অথবা মসজিদে দান করুন অথবা ইসলামি ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করুন, আপনি সহজেই জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক বাটপার হয়ে উঠতে পারবেন
বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০
কুকুর বনাম মানুষ
মানুষের কাছে বিশ্বস্ত হওয়ার চেয়ে কুকুরের কাছে বিশ্বস্ত হওয়া জরুরি। কারন কুকুর যখন ঝগড়া করে মানুষের নাম করে গালি দেয় না কিন্তু মানুষ নিজেরা নিজেরা ঝগড়া করে কুকুরের নামে গালি দিয়ে থাকে। মানুষ এই গ্রহের সবচেয়ে অবৈজ্ঞানিক প্রানি, প্রকৃতির সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি করেছে করছে এই মানুষ।
বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০
গাধা
গাধার নাকের সামনে ফুল রেখে দেখুন পাতা ভেবে খেয়ে ফেলবে
মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
দিন থেকে যায় দিন বয়ে যায়
দিন থেকে যায়
দিন বয়ে যায়
দিনঘরে স্মৃতি
ঘর থেকে বার
বার থেকে ঘর
বাড়ছে কমছে গতি
তোমার সাথে দেখা হলো
কথা হলো অনেক
দুজনে আজ পাতাকুড়ি
বৃষ্টিধরা মেঘ
কাজল কালো তোমার চোখে
খেলছে আমার কাল
আমি তোমার প্রথম পুরুষ
মহাকালের তাল
তোমার নামে আকাশ কিনে দেবো উপহার
হলুদ নদী আচলে তোমার চোখে পদ্মহার
একটা জীবন তোমাকে দেবো নেবো তোমার মন
সময় যেমন তেমন মতো রবো আজীবন
মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০
তা বি জ
যে মানুষ অতীত ভুলে যায় তার ভবিষ্যৎ অতীত হয়ে যেতে পারে, অতীত একটা ফুল গাছের মতো ফল গাছের মতো যাকে প্রয়োজনে জল দিতে হয় আবার ফল খেতে হয় গন্ধ নিতে হয়
শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০২০
এক লাইন
মেঘ নাই এমন আকাশ তো দেখি না
বুধবার, ১৯ আগস্ট, ২০২০
রেললাইনের পাথর
তুমি কি ভুলে গেছো
তুমি কি ভুলে গেছো
বিছানো সে রাত
পাখিদের ঘরে ফেরা
হয়নি হয়নি
হয়েছে আমাদের প্রভাত।।
প্রবাল
ভেসে যায় ভেসে যায়
থেকে যায় থেকে যায়
রেখে যায় রেখে যায় আমাদের রাত।।
গল্প জমা হলে
মেঘেদের দেশে গেলে
বৃষ্টি হয়ে ঝরে
সৃষ্টি হয়ে ঝরে গল্প বিরাট ।।
চোখে চোখে কথা বলা
ইশারায় পথ চলা
মনে মনে গন্ধ তুলা
দুটি মন এক হয়েছে
দুটি মন এক রয়েছে
হয়েছে লোপাট।।
শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০
ভাবনা
ভাবিয়া কী হবে বন্ধু
যা হবার তা হয়ে গেছে
সকাল বেলার পাখি এসে
রাতের কথা বলে গেছে
বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২০
সিন্দাবাদ টুর
সিন্দাবাদ টুর। আমাদের সিন্দাবাদ টুরের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আলাদা বৈশিষ্ট্য। সচারাচর আমরা যে টুর দিয়ে থাকি সিন্দাবাদ টুর তার থেকে আলাদা। সিন্দাবাদ নামটি নেয়া হয়েছে আরব্য রজনীর গল্পাংশ আলিফ লায়লা থেকে। আলিফ লায়লার সিন্দাবাদ খুবই আল্লাভক্ত মানুষ। আল্লা তার কথা শুনে। সিন্দাবাদ নাবিক। মূলত সে আল্লার প্রেরিত একজন মহাপুরুষ। এই মহাপুরুষ পৃথিবীর অপরাধচক্র দমন করার জন্যে সাগর টু সাগর কাফেলা নিয়ে টুর করে থাকে। আমাদের সময়ের, আমাদের শৈশবের নায়ক আলিফ লায়লার সিন্দাবাদ। এই সিন্দাবাদ ভ্রমনে আমরা আমাদের শৈশবের নায়ক সিন্দাবাদের বিভিন্ন দিক বর্তমান সামাজিক বিশ্লেষণে আলোচনা করে থাকি।
আমাদের সিন্দাবাদ টুর শুরু হয় দুই হাজার উনিশ সালের কোরবানির ইদের দ্বিতীয় দিন থেকে নাছিরনগরের চৈয়ারকুড়ি গ্রাম থেকে। চৈয়ারকুড়ি গ্রামটি মহাগঙা আর সিংরা নদীর আদুরে লালিত। এটি মূলত হাওড় গ্রাম। বর্ষাকালে এই গ্রামের আভিজাত্য হাওড়ের জল,আফালের আতঙ্ক,নদীর তরতাজা মাছ, প্রবীন লোকদের বংশধরা সূচীভেদ্য কিসসা,হিন্দু মুসলিম পরিবারের আয়েসি কৃষ্ণ মোহাম্মদ মাহফিল। চৈয়ারকুড়ি গ্রামের বাজারটি আমার খুবই ভালো লাগে। বাজারের দক্ষিনপ্রান্তে মাছবাজার সংলগ্ন বটতলা আমার একপ্রকার বেহেস্ত। আজ থেকে তিন হাজার বছর আগে এই বটতলা বসে ধ্যান করেছিলাম। ধ্যানে প্রেমে বহু বছর, ধ্যানের ফসল চৈয়ারকুড়ির বাজার সভ্যতা।
সিন্দাবাদ টুরের প্রধান শর্ত জোছনা থাকে এমন রাত নির্ধারণ করতে হবে। হাওড়ে রাতযাপন করবো আর জোছনা থাকবে না তা হবে না। জোছনা রাতকে নুরানি ছুরত দান করে। রাতদুপুর থেকে শুরু হবে জ্বিনভূতের গল্প। থাকবে পারসোনাল শৈশব থ্রিলিং স্টোরি। থাকবে দ্বন্দ্ব ও ঝগড়ার গল্প। থাকবে চরম তারুন্যচর্চা। অবশ্যই ডাকাত আসবে ডাকাত আসবে এমন একটি আতঙ্ক কাজ করতে হবে। হাওড়ের মাঝখানে থাকবে নৌকা। তারপর বাতাসে ভাসতে থাকবে নৌকা আপন মনে। রাতে একটু পর পর চলবে আতসবাজি। থাকবে বাউলের গান। প্রায় সকালের দিকে দুই একজন ব্যতীত সবাই ঘুমাবে। নৌকা তখনো ভাসতে থাকবে। পর্যাপ্ত ঘুমের পর নৌকা চলবে গন্তব্যের দিকে। নৌকাযাত্রা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খাওয়া দাওয়া নৌকাতে। যাত্রা শুরুর প্রথম পনেরো ঘন্টা বিভিন্ন বাজারে চলবে নোঙর। আমাদের নৌকা চলবে চারটি বিভাগের জলপ্লাবনে-- ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্রগ্রাম। থাকবে আফালের আতঙ্ক, থাকে সিন্দাবাদের দরবেশগিরি।
দুই হাজার বিশ সালের সিন্দাবাদ টুরে আমরা একুশ জন। দুইজন দুই এলাকার-- আমি আর হাসান মেহেদী। আমি আশুগঞ্জবাসী, হাসান মেহেদী নরসিংদীবাসী। হাসান মেহেদী নরসিংদী হিমু পরিবহনের টিম লিডার আর আমি এমরানুর রেজা স্বয়ং হিমু। আমি যে একনিষ্ঠ হিমু এই ব্যাপারে কোনো বুগিঝুগি নাই। তবে আমার রূপা নীল শাড়ি পরে বাড়ির বারান্দায় আমার জন্য অপেক্ষা করে না, মাঝে মাঝে হোয়াটসঅ্যাপের ইনবক্সে গালি দিয়ে যায়। আমার রূপা ইদানিং গালি শিখেছে। রূপার জন্যে আমার প্রার্থনা যেন সে ভীমকান্তি মহিলা না হয়ে যায়, যেন সে থাকে জামদানি শাড়ির গোপন ভাজ জীবনভর।
আমি আর হাসান মেহেদী বাদে সবাই চৈয়ারকুড়ি গ্রামের সম্মানিত অধিবাসী। সবার বাজারধর ও রাজনৈতিকধর অনেক উচুতে।
ছয় আগষ্ট দুই হাজার বিশ। বুধবার। সকাল আটটায় বাড়ি থেকে বের হই।মোস্তফার রিকসা করে যাই আশুগঞ্জ। আশুগঞ্জ গিয়ে বাসে উঠে যাবো বিশ্বরোড।কিন্তু মোস্তফা বলে সেই আমাদেরকে বিশ্বরোড দিয়ে আসবে। হাইওয়ে রোড দিয়ে রিকসা চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাকে নিষেধ করি। কিন্তু সে আমার নিষেধ শুনতে রাজি নয়।পীড়াপীড়ি করা আমার আচরনধর্মে নাই।তাই রিকসা চলছে মহাসড়ক দিয়ে। ভাবছি ট্রাফিক পুলিশ তাকে ধরলে তার অনেক বড় লস হয়ে যাবে। আমি তো তার জন্যে আধা ইঞ্চিও সুপারিশ করবো না। কারন অন্যায়ের পক্ষে সুপারিশ করা আমার আচরনধর্মে নাই।বেড়তলায় রিকসা চলে যায় পনেরো থেকে কুড়ি মিনিটের মধ্যে। বিষয়টি আমার কাছে ছোটোখাটো মিরাকলের মতো মনে হয়েছে। এতো অল্প সময়ে বেড়তলা যাওয়া সম্ভব নয়। তাও আবার চায়না রিকসা দিয়ে।বেড়তলা নেমে তিনজনে চা খাই। চাপানের বিরতির পর চায়না রিকসা চলে আসে বিশ্বরোড। এবার মোস্তফাকে বিদায় দেই।এবার আমাদের গন্তব্য দাতমন্ডল ব্রিজ।সরাইল হয়ে নাছিরনগর যাওয়ার পথে দাতমন্ডল ব্রিজ। মন্ডল সাবের নাম দাত ছিলো। ভাবতেই কেমন লাগে। আগের দিনের মানুষের নাম এমনই ছিল-- পয়সা,পয়সার মা, লোহা, টেহার মা, মিশ্রি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই দাতমন্ডল ব্রিজ নাম শুনে খুব বেশি অবাক হওয়ার কোনো কারন নাই। গুনে যার পরিচয় নামে কী আসে যায়।
আকিব নৌকা থেকে নেমে যাচ্ছে। সে যাবে না টুরে। তাকে নেয়ার জন্যে অনেকে আসছে। কী এক মহান কারনে তুহিনের সাথে আকিবের কথা কাটাকাটি হয়েছে। সুতরাং আকিব নৌকায় থাকবে না।আকিবের সাথে রাশিয়া ফেরত রিফাত মামাও নেমে গেছে। সেও যাবে না। আকিব সরকারি চাকরি করে। তুহিন সাংবাদিক। এরা এখনো ক্লাস সেভেন এইটের মতো ঝগড়া করে। কারো মনে অপার সৌন্দর্য না থাকলে রাষ্ট্রের এমন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থেকে শৈশবের গুল্লি খেলার মতো ঝগড়া করা যায় না। আকিবকে নৌকায় তুলতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। যতই কষ্ট হচ্ছিল ততই মনে আনন্দ পাচ্ছিলুম।শৈশবকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ। অবশেষে আকিব ও রাশিয়া ফেরত রিফাত মামা নৌকার আনন্দে যোগদান করে।
নৌকা চলছে। মহামান্য রাষ্টপতি রাস্তার দিকে। অষ্টগ্রাম কিশোরগঞ্জ ইটনা মিটামইন অঞ্চলের মানুষ মহামান্য রাষ্টপতির উপর ব্যাপকভাবে শ্রদ্ধাশীল। নৌকা চলছে। রাশিয়া ফেরত রিফাত মামা নৌকা থেকে লাফ দিলো। লাফ দিলো নদীর জলে। জলে লাফ দেয়ার আগে আমার সম্মতি নিলো।আমি শতভাগ সম্মতি দিলাম। আমি যে সম্মতি দিলাম আমি আর রিফাত মামা ব্যতীত কেউ জানে না, সুপ্রিমকোর্টের আইনবিদ মামাও জানে না। সবাই ভয় পেয়ে গেলো। ভাবছে 'যদি' রিফাত মামা মারা যেতো? 'যদি' শব্দ দিয়ে মানুষ কবর থেকে উঠে আসে না, তাই 'যদি' রিফাত মামা মারা যায়নি।
এক লোক ডাক্তারের কাছে যায়।তার প্রস্রাব হলুদ।ডাক্তারের কাছে প্রস্রাব স্বাভাবিক হওয়ার ঔষধ চায়।ডাক্তার খুবই মহান। ডাক্তার এমন ঔষধ দেয় যে লোকটির প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশে এমন ডাক্তারের অভাব নাই যারা প্রানের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে সৌন্দর্য নির্মান করে।কিন্তু ইটনা মিটামইন অষ্টগ্রামের এই রাস্তাটি দেখে এমন কেউ বলতে পারবে না রাস্তাটি নদী হন্তারক। হাওড়ের জলবুক বরাবর বয়ে যাওয়া সাব মার্চেবল রাস্তা। মহামান্য রাষ্টপতি আবদুল হামিদের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যায়, বেড়ে যায় শ্রদ্ধা এই রাস্তাটি নির্মান মানসিকতার প্রতি।
নৌকা থেকে নেমে আমি আর হাসান মেহেদী হাটতে থাকি। আমাদের হাটাসঙ্গী হয় শরীফ,তানবীর, রুমান মামা। শরীফকে আমি বয়াতি ডাকি। কারন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি শরীফকে বয়াতি নামে জানে। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদার আয়নায় শরীফের সাথে আমার প্রথম মোলাকাত। রুমান মামার চৈয়ারকুড়ি বাজারে ফলের দোকান। তিনি অবিবাহিত থাকতে পারেন নাই। হাটতে হাটতে আমরা একটা চায়না রিক্সা পেয়ে যাই।রিক্সার মালিক মিস্টার সোহেল।দারুন রসিক মানুষ। এমন সময় নামে হাওড়ের বৃষ্টি। জাস্ট অসাধারণ। বৃষ্টিপতনকে মনে হচ্ছে চুলখোলা আয়েশা আক্তার। রাস্তার সবদিক বৃষ্টিজল দিয়ে সূচীভেদ্য জলঘর নির্মান করে রেখেছে আকাশ।আমরা কয়েকজন সেই ঘরের আন্তরিক বাসিন্দা। ছুটছে আমাদের চায়না গাড়ি।এমন মুহূর্তে বলতে হয় নাই আনন্দরে আনন্দ তুই কোথায় থাকিস বল।কারন আনন্দের ভেতরে যে প্রশান্তি সেখানেই আমরা আছি।আমাদের অন্যরা নদীর জলে লাই খেলায় ব্যস্ত।
রাস্তায় অনেক মানুষের ভীড়।কেউ খেলছে। কেউ গান গাচ্ছে। কেউ প্রেমিকের হাত ধরে বসে আছে। কেউ পরিবার নিয়ে পারিবারিক আনন্দে ব্যস্ত।
বাংলাদেশের মানুষ প্রায় রাস্তায় নামে।তবে উদ্দেশ্য থাকে অন্যরকম। কাটা গাঙয়ের এই রাস্তায় মানুষের ভীড় কেবল আনন্দ প্রশান্তি আর একমোঠো স্বস্তি পাওয়ার আশায়।স্বস্তি আনন্দ আর মোঠো মোঠো প্রশান্তি নিয়ে আমরা চললাম অষ্টগ্রামের উদ্দেশ্যে।
হাওড়ে আফাল উঠে। সবার মনে ভয়।নৌকা ডুবে যেতে পারে। নৌকা ডুবেও যায়। পনেরো বিশ জনের মতো মারাও যায়।তবে আমাদের নৌকায় আফাল সুবিধা করে উঠতে পারে নাই। আমাদের মতো অন্য কারো নৌকায় এমন ঘটনা ঘটে। আফাল আতঙ্ক মাথায় নিয়ে আমরা পৌঁছে যাই অষ্টগ্রাম বাজারে। দুধ চা খাই।ভালো লাগার কারনে দুই কাপ দুধ চা খাই।অষ্টগ্রাম বাজারটিকে মনে হয়েছে গ্রামীন মা যার দর্শনধারী কোনো ব্যাপার স্যাপার নাই কিন্তু কার্যধারী দাত্রীগঙা।
এই বাজারে সবার মুখে পনিরের গুনাগুন শুনে মুগ্ধতা জন্মে। এই অষ্টগ্রাম বাজারে পুনির যেমন বিখ্যাত তেমনি বিখ্যাত হিন্দু-মুসলিম সম্প্রতি। পুনির কেনার লোভ সামলাতে হলো। কারন সংরক্ষণ করা পর্যাপ্ত জায়গা নেই।অষ্টগ্রামকে আমাদের দাদাদের বলতে শুনতাম আটগাও। আটগাও থেকে অষ্টগ্রাম হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
সারারাত নৌকায়। আমাদের আন্টি মানে তানবীরের আম্মা চমৎকার রান্না করে।আমি নিজেও ভালো রান্না করতে পারি।তাই ভালো রাধুনি চিনতে আমার ভুল হওয়ার কথা না। পোলাও আর মাংস খেলাম রাতে। আমাদের নৌকা নোঙর করেছে শ্মশানের পাশে। আকাশে সাইডৌলি জোছনা। হাওড়ের জলে ছিলান ঢেউ। চারপাশে মৃদুমন্দ বাতাস।এতো সৌন্দর্যের মাঝে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করে না। ছাদ থেকে নিচে যাই।চোখ বন্ধ করি। চোখ খুলে দেখি পৃথিবীর রাজা সূর্য আমার চোখে। নৌকা গন্তব্যে ফেরার জন্যে যাত্রা করেছে।
তুহিনের বাড়িতে গেলাম।দিলাম ঘুম।ঘুম আমার বরাবরই প্রিয়।ঘুম থেকে উঠে দেখি তুসার তার কবুতরকে নাস্তা করানোর কাজে ব্যস্ত।আন্টি আফালের মাছ বানাচ্ছে। আন্টিকে সহযোগিতা করছে আরও দুইজন। দুইজনই সনাতন ধর্মের। তুহিনদের বাড়ির সামনে সনাতন পরিবার, ডানে সনাতন পরিবার, পেছনে মুসলিম পরিবার।বাড়িতে ঢুকে কারো বুঝার ক্ষমতা নাই কে সনাতন ধর্মাবলম্বী আর কে মুসলিম ধর্মাবলম্বী। প্রতিবেশী সনাতন ধর্মের নতুন সন্তান পৃথিবীতে আসে। নতুন সন্তানের নাম রেখে দেয় তুসার। তুসার ঢাকার কোনো এক কলেজ ভর্তি হবে হয়তো। তখন সে শুনবে নাছিরনগরে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা। তখন তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে। তখন সে ভাববে তাও কী সম্ভব!? আসলে সুবিধার রাজনীতির জন্যে অনেক অসম্ভব ব্যাপারকে সম্ভব করতে হয় নতুবা ঘোলা জলের মাছধরা কবিতা রচনা হয়না। তবে এই কথা পৃথিবীর জানা জরুরি যে চৈয়ারকুড়ি গ্রামে হিন্দু মুসলিম বলে কোনো সম্প্রদায় আমার চোখে পড়েনি যা চোখে পড়েছে তা হলো আত্মীয় আর প্রতিবেশী। কারন চৈয়ারকুড়িতে হিন্দু বাড়ি আর মুসলমান বাড়ি বলে আলাদা কোনো দেয়াল নেই, নেই কোনো ধর্মীয় পোস্টার।
সকালের নাস্তা ছিডালরুডি পিডা।আমার অত্যন্ত প্রিয় পিডা এটা। মাংসের ঝুল দিয়ে খেতে বেশ ভালো লাগে।তবে ছিডালরুডি পিঠা খেয়েছি সবুজ ভাইয়ের বাড়িতে। সবুজ ভাইয়ের আম্মা, আমার মাঅই চমৎকার করে এই পিডা বানান যা পৃথিবী বিখ্যাত স্বাদের দাবিদার অন্তত আমার কাছে।
নাস্তা খেয়ে বাজারের বটতলায় বসে আড্ডা দিলাম কিছুক্ষণ। আড্ডায় ছিলাম আমি, তানবীর, বয়াতি,রিফাত মামা,কামরুল উৎস। কামরুলের কাছ থেকে কিছু ইসলামি ফান শুনে ভালোই লাগলো। কামরুলের গল্প বলার স্টাইলটা মাওলানা তোফাজ্জল হোসেনের মতো। তিনি কয়েকদিন আগে মারা গেছেন। তিনি মানুষকে কাদাতে ও হাসাতে পারতেন। কামরুল কাউকে কাদাতে পারে না। কারন তার বেড়ে উঠা অনেকটা সোজা হও আরামে দাড়াও পদ্ধতিতে।
জলিল ভাইয়ের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে আমরা চললাম হরিপুর জমিদার বাড়িতে। আল মাহমুদের মায়ের সোনার নোলক জমিদার বাড়ির সামনের তিতাস নদীতে হারিয়ে যায়। এখনো বাংলাদেশ সেই হারানো নোলক খুজে পায়নি।হুমায়ুন আহমেদ ঘেটুপুত্র কমলা সিনেমাটি এই জমিদার বাড়িতে ক্যামেরাস্থ করেছেন। এই জমিদার বাড়িটি হুমায়ুন আহমেদ মূলত আমার চোখস্থ করে তুলেছেন। এখন এই বাড়িটি দেখার জন্যে প্রচুর লোক আসে।
হরিপুরের জমিদারগণ ত্রিপুরার প্রভাবশালী জমিদারগণের উত্তরসুরী ছিলেন। জনশ্রুতি আছে সুনামগঞ্জ, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও আজমিরীগঞ্জের জনপদ কর প্রদান করতো এই জমিদারদের প্রভাবপ্রতিপত্তির কাছ। নাসিরনগর উপজেলাস্থ গুণীয়াউকের জমিদারগণের সহিত তাদের সুসম্পর্ক ছিল। দেশবিভাজনের পর ১৯৪৭ সালে প্রাসাদ ছেড়ে কলকাতায় চলে যান এখানকার জমিদারি ইতিহাস। ঐতিহাসিক নৌকা বাইচ মুলতঃ এখান থেকেই শুরু হয়। প্রাসাদের অনেক স্থানে ক্ষয় হোয়ে গেলেও দ্বিতলের পাশা খেলার ঘরটি আজও রয়ে গেছে । বাইজীরা প্রতি রাতেই জমিদারগনের আমোদ-প্রমোদের উদ্দেশ্যে নৃত্য পরিবেশন করতো।
দ্বিতীয় তলার একটি রুম তালাবদ্ধ। কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়না। কিন্তু আমি তো ঢুকতে চাই।কিন্তু ঢুকতে দেয়া হবে না। তারপর পরিচয় দিতে বাধ্য হলাম।পরিচয় পেয়ে আর নিষেধ করার ক্ষমতা ছিল না দায়িত্বরত লোকটির। দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখি জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ রায় চৌধুরী কুমিরের মতো পেট ফুলিয়ে ঘুমাচ্ছে। পাশে চেয়ার-টেবিল নিয়ে তিনজন মহিলা বসা। জমিদারের হুকুম তামিল করার জন্যে প্রস্তুত। পরে জানতে পারি তিনি জমিদার নন,তিনি এই অঞ্চলের চেয়ারম্যান। ভাবলাম, আমরা কী জমিদার বাড়িতে আসলাম না চেয়ারম্যান সাহেবের ইউনিয়ন বোর্ড অফিসে চলে আসলাম।বাংলাদেশ আসলে এমনই-- বুঝার ক্ষমতা নাই যে কোনটা জমিদার বাড়ি আর কোনটা পীরবাড়ি বা চেয়ারম্যান বাড়ি বা অফিস।
বাড়ি যেতে হবে। তাই নাসির নগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। মাধবপুর (উত্তরে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ও লাখাই উপজেলা, দক্ষিণে বি-বাড়ীয়া জেলা, পূর্বে চুনারুঘাট উপজেলা ও ভারত এবং পশ্চিমে বি-বাড়ীয়া জেলা) হয়ে বিশ্বরোড যাওয়া যায়, আবার নাসির নগর দিয়ে মিনি কক্সবাজার হয়ে বিশ্বরোড যাওয়া যায়। আমরা চায়না গাড়ি বা মিশুক নিয়ে নিলাম। চায়না গাড়ি চলছে। দুনিয়ামুখী জমিদার কায়কোবাদের বাগানবাড়ি হয়ে আমরা চলছি নাসির নগর উপজেলার পথে। রাস্তার দুই পাশে ধান আর ধান।বর্ষাধান। বর্ষাধানের পাশ দিয়ে, বুক দিয়ে বয়ে চলছে কোসা নৌকার আয়েসি ঢল।পাটের গন্ধহৃদয় শৈশব জীবনের মেমোরি সেল যেনো জীবন্ত করে তুলছে। প্রকৃতি এখানে স্বাধীন, আরও স্বাধীন এখানে মানুষের প্রাত্যহিক বয়েচলা বোধধন। শহরের মানুষ এখানে সভ্যতার থিউরি শেখাতে আসে না, এখানকার মানুষকে শিখতে হয় না চোখে ঘুম নামানোর দশ রকম ফর্মুলা। সহজিয়া জীবন এদের শিখতে হয় না, এরা বর্ষাধানের মতো সহজ-- প্রয়োজনে প্রয়োজনে বেড়ে উঠে। জীবনের প্রয়োজনে আমাকেও বাড়ি ফিরতে হয়।
মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০২০
যেমন চরম কোন
সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০
মেসেঞ্জারে নীল আকাশ
বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০২০
তুমির কত রং
বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০
যাকে যা বলার তাই বলে যাই
মানুষ হলো নদীর জলের মতো-- জলে প্রয়োজনের বেশি থাকলে ঠান্ডা লাগে, পানিবাহিত ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে হয়। জলে একেবারে না গেলে বিজ্ঞান তাকে খাটাস বলে। নিজেকে অন্তত খাটাস করে ফেলবেন না, আবার জলবাহিত রোগে আক্রান্তও করে ফেলবেন না-- এটাই জীবন।
মানুষ বন্ধুত্ব চায়, পাখিকে খাচায় বন্দী করে তার কাছ থেকেও বন্ধুত্ব চায়,এই মানুষই আবার বন্দনা চায়। বন্ধুত্বকে 'হ্যা' বলতে শিখুন আর বন্দনাকে বলতে শিখুন 'না'-- এটাই জীবন।
চলার পথে অনেক মানুষ আপনার উপকার করবে। কোনো মানুষ আপনার উপকার করতে পারবে না যদিনা আপনার পথটা উপকারমুখী না হয়। অনেক মানুষ আপনার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। ঝড় পাখির বাসা ভাঙতে পারে কিন্তু বাসা বানানোর কৌশল নষ্ট করতে পারে না। তাই উপকারী প্রতিটি মানুষের প্রতি প্রত্যেক প্রানির প্রতি কৃতজ্ঞচিত্তে নিজের শ্রদ্ধার্ঘ্যে অবনত থাকুন কিন্তু তাকে মাথায় নিয়ে বাজার করতে যাবেন না। অনিষ্টকর প্রত্যেক প্রানির ব্যাপারে সচেতন হোন কিন্তু বাথরুমের নির্জন প্রান্তরে তাকে ডেকে আনবেন না-- এটাই জীবন।
সোমবার, ২২ জুন, ২০২০
Nothing more nothing here
All alone not at all
Alone
Alone is heaven
Nothing more
None
Either nothing or anything
Alone
All alone not at all
Alone is heaven
Like a sea blind island
Like a sun over the night
Like a baby within the mother
Like a dark over the sun
Like a bitter cold within the hub heat water
Alone
Alone all not at all
Alone
Alone is heaven
Crowd
A crowd
A crowd is nothing
A crowd is just nothing but a crock
Alone
All alone not at all
Alone
Alone is heaven
Dew point on the sun light
Leaf water after the rain
A devastated battle field 💔 after the complete war
A man is about to die
Alone
All alone de facto
Alone
Alone
Alone is heaven
People want to know more about
Want
Want
Want is everywhere
Silence
Like a mother dark light
Like a titar owl flying
Like a mind catching wonderland
Like a dazzling owl Butterfly
Silence
Silence is peace of mind
Heaven
Heaven is state of peace
Alone
All alone de facto
Alone is peace
Alone is heaven
Alone is reincarnation
Alone is zero term onto power house
Alone
All alone de facto
Alone is the destination
Like a shadow of 🐦 bird flying
Like a breast of flying cloud
Like a losing sound of test
Alone
All alone de facto
Alone
Alone is life of death
বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০২০
আত্মহত্যা
এই বস্তুজগৎ প্রত্যেক বিষয়ের প্রত্যেক জিনিসের ডোজন ডোজন অল্টারনেটিভ নির্মান করে রেখেছে। এই বস্তুজগতে প্রত্যেক বস্তুর নেগেটিভ ও পজেটিভ রয়েছে। লবনের যেমন উপকার ও ক্ষতি রয়েছে, আপনারও তেমনি উপকারী ও ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে আপনার চারপাশে।
তারপরও আপনি বাচবেন, তারপরও আপনি হাসবেন, তারপরও আপনি সময়মতো কাদবেন।
আপনার ডিপ্রেশনকে ঘৃনা করবেন না, সে আপনারই অংশ, আপনার থট প্রসেসের অংশীদার সে। ডিপ্রেশনকে চিনতে শিখুন যেমন করে আপনার অফিসে যাওয়ার রাস্তাটি চিনেন যেমন করে প্রার্থনালয়ের যাওয়ার পথটি আবিষ্কার করেন। ফুল থেকে কাটা কেন সরাবেন!? কাটা ফুলের অলংকার। কাটাকে কাটার মতো থাকতে দেন, ফুলকে ফুলের মতো।
আপনি বাচবেন। কেন জানেন? বেচে থাকাটা আপনারই দরকার। আপনি হাসবেন। কেন জানেন? হাসলে আপনাকেই সুন্দর দেখায়। আপনি কাদবেন। কেন জানেন? কাদলেই আপনি জানতে পারেন আপনার চোখ যে সুন্দর ঝরনা।
মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০
দুঃখ
মৃত্যু
সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০
আদম নবী
রবিবার, ১৪ জুন, ২০২০
স্টাউট আলোর মতো সহজ হয়ে আসো
তখন থেকে নৌকা বানাতে শুরু করি
কাঠাল কাঠের নৌকা
শামুকভাঙা পেরেক
আলতা রঙের আলকাতরা
নুহ নবীর নৌকার কথা মনে আছে আমার
অভিশপ্ত সবাই ডুবে গেলো জলের ত্রাসে
আমার নৌকার নাম রেখেছি 'প্রেমকিস্তি'
একদিন প্রেমকিস্তির দিকে খুব করে তাকাই
দেখি বসন্ত ফুল পাতার আড়ালে লুক্রেতিউস
দেখি জাম্বুরা ফুলের ঘ্রান অনিন্দ্য সুনির্মল বন্দনা
অকাতরে প্রানফুল আলুর ডগার মতো বয়ে যাচ্ছে
বয়ে যাচ্ছে আমার হৃদয় থেকে দেহানুভূতির পরাগরেনু প্রান্ত থেকে কেন্দ্রে
প্রেমকিস্তি থেকে ঝরে গেলো অনেকগুলো বছর
আশ্বিন মাসের ঝড়ও থেমে গেলো
শহরের পুরাতন ইটটি কয়েকদিন আগে মারা গেলো
স্বপ্নদেশ দখল করলো পরদেশী আকাশ
নীল পাতলা ঠেঙি ভুলে গেলো সাতার
নদীতমা
তোমার জলেও আজ ঢেউ নেই
কোয়ারেন্টাইন তুমি বহু বছর আগ থেকে
তোমার লাশের উপর বড় বড় বিল্ডিং সোপার শপ নাইট ক্লাব
নদীতমা
আমার প্রেমকিস্তিও নিয়ে যাবে তারা
তোমার লাশের উপর যে ফাইবস্টার দৈত্য বসানো হয়েছে তার জন্য
তার লিপস্টিকের মতো চকচকে ঠোঁটের সামনে প্রদর্শন করবে
আমার প্রেমকিস্তিও লাশ হয়ে যাবে
তুমিও লাশ
আমার প্রেমকিস্তিও লাশ
নুহ নবীর নৌকার কথা মনে আছে আমার
অভিশপ্ত সবাই ডুবে গেলো জলের ত্রাসে
এই দিন দিন নয় আরও দিন আছে
বুধবার, ১০ জুন, ২০২০
সামনে নদ পেছনে নদী
যে মানুষ নিজের কাছে নিজে বিরক্তিকর তাকে অসীম ভালোবেসে দেখুন সে আপনার ভালোবাসা বমি করে দিবে,আপনাকে হেনস্তা করবে ঠিক আপনার ভালোবাসার সামনে।
ভালোবেসে দেখুন একটি কুকুরকে, দেখবেন আপনাকে ভালোবাসাময় করে তুলার জন্য বৃষ্টির রাতেও ঠিক আপনার ছায়ার পাশে কায়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।
কেউ কেউ আপনার সাথে মিশবে শতসহস্র আন্তরিকতা নিয়ে এবং গোপনে সিসি ক্যামেরা ওপেন করে রাখবে, হঠাৎ করে একদিন আপনি জানতে পারবেন আপনি যার সাথে আন্তরিকভাবে মেলামেশা করছেন সে আসলে মানুষ নয়, আধুনিক সিসি ক্যামেরা যে আপনার গতিবিধি নোট করছে।
এইসব সিসি ক্যামেরাকে প্রোগ্রামভেবে পরিবর্তন করতে যাবেন না, তাদেরকে তাদের মতো থাকতে দেওয়া জরুরি। গতির সামনে দাড়াতে নয়, গতির সামনে থেকে সরতে শিখুন। আপনার এতো বিখ্যাত হওয়ার দরকার নেই যে গ্যালারিতে দর্শক নড়েচড়ে উঠলে আপনি বলে ব্যাট লাগাতে পারেন/পারবেন না।
ভালোবাসার নাম যদি প্রাপ্তিবোধ হয় তাহলে আপনি ছাগলের ব্যবসা করতে পারেন। ভালোবাসা যেখানে মিলেমিশে থাকার নাম সেখানে সম্পর্ক বৃষ্টি আর নদীর মতো।
শিশুসময়টা সবচেয়ে আনন্দের। বড় হয়ে দেখবেন আপনার হাসিগুলো মাপা হয় কান্নাগুলো চাপা হয়। উড়তে উড়তে দেখবেন নিচে নেমে আসার পথ বন্ধ। উড়তে উড়তে সূর্যের কাছে গিয়ে দেখবেন নিচে নেমে আসার পথ খুব সোজা।
সোমবার, ৮ জুন, ২০২০
এইতো তুমি তোমার সকাল
খুব বেশি কাছে আসতে
খুব বেশি কাছে আসতে মানা করবো না আমি
কাছে এসে দেখো তোমার দেয়াল ভেঙে পড়বে না
তোমার সরিষা ক্ষেতের হলুদ কমে যাবে না
তোমার তর্জনী দিয়ে যে ঝরনাটা বের হয়েছে
তোমার চোখজল দিয়ে যে সোমেশ্বরী যৌবনা হয়েছে
যে আকাশ মেঘ করতে শিখেছে
যে আকাশ ভাসতে শিখেছে
ভাসতে শিখেছে তোমার কালো চুলের স্পর্শে
বিন্দুমাত্র তাদের কোনো লোকসান হবে না
কাছে এসে দেখো নদীতমা শীতাতপ সনেটগুচ্ছ আমার
একগুচ্ছ স্নিগ্ধ শুভ্র গ্রামীণ সকাল
এক আকাশ নীল বেগুনি ছায়ার তমাল
মাতার মমতায় পাতাদের আশ্বিনী দামাল
হিং মাছের চকিত লম্ফ ডাহুকের রজনী ডাক
খেলা করে খেলা করে হৃদয়ে আমার
ভোরে আসলেও আসতে পারো
দুপুরে আসলেও আসতে পারো
আসতে পারো সকাল কিংবা রাতে
বড় বেশি ক্ষতি হবে না তোমার
গাঙের পাড়ের মতো বিছাও তোমার দেহ
হেঁটে যাবে কালিয়া দেহ আমার
কালোজিরা শরীর কালোজিরা তনু তোমার
তোমার দেহের ভেতর চাষ হবে আমার দেহ
এক হলে তুমি আমি
এক হবে পৃথিবী
থেমে যাবে যুদ্ধ হিংসা কারাগার
সাদা কালো দ্বন্দ্ব যত্তসব আকার সাকার
রবিবার, ৭ জুন, ২০২০
ক রো না বি ন তে কো ভি ড উ নি শ
এই ভাইরাস যখন গনের চীনের মানুষকে হতাশায় ফেলে দিয়েছে তখন পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে মজা করায় ব্যস্ত।এখানকার আলেম সমাজের কাছে তখন ওহী আসতে শুরু করে দিয়েছে যে চীনে মহান আল্লার গজব নাযিল হয়েছে। তাদের মতে আল্লার আর কোনো কাজ নাই-- গজব আর রহমত বর্ষন করা ছাড়া। একসময় তাদের আল্লা ছিল বটগাছ,ছিল শাপ। তারা বটগাছ আর শাপের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতো। বটগাছ, শাপ, সূর্য থেকে মুখ ফিরিয়ে এখন তারা তাদের আল্লাকে কাবাঘর,মসজিদ পর্যন্ত নিতে সক্ষম হয়েছে। কয়েকদিন পর তারাই বলতে শুরু করবে কাবাঘরে মসজিদে আল্লা নাই। এখনি বলে কেউ কেউ। তবে তাদের মতো এই কেউ কেউ হলো মারফতি।
করোনা ভাইরাস একটি ফ্যামিলি ভাইরাস। এরা একত্রে থাকতে পছন্দ করে। আলিফ লায়লার কেহের মানের মতো বহু কার্যপদ্ধতি প্রনয়ন করতে পারে তারা। ইতিমধ্যে তারা নিজেকে চারশো বারের অধিক পরিবর্তিত করে নিয়েছে।তাই ডাক্তার হুজুরদের নির্দিষ্ট কোনো ফতুয়া পাচ্ছে না জনগন। কিন্তু নচিকেতা ঠিকই খিস্তি খাচ্ছে গানে গানে। কারন গানে গানে সে ডাক্তারদের কসাই বলেছে। গানটি অবশ্যই অনেক আগে লেখা।
করোনা ভাইরাস নিয়ে রচনা লেখার ক্ষেত্রে সকল গবেষকই অত্যন্ত মহান জ্ঞানী "Coronaviruses are a large family of viruses that are known to cause illness ranging from the common cold to more severe diseases such as Middle East Respiratory Syndrome (MERS) and Severe Acute Respiratory Syndrome (SARS)." তবে তাদের এই মহান জ্ঞান মানুষকে পিপড়ার মতো গুহাজীবী করে তুলেছে। মানুষ আর পিপড়ার মধ্যে পার্থক্য এখন এই যে পিপড়া শীতকালে তাদের পৃথিবী নির্মান করে গুহার ভেতর, গরম কালে বের হয়ে আসে। আর মানুষ? শীত কেন গরম কালেও গুহা থেকে বের হয়ে আসতে পারছেনা। তবে কোনো কোনো মহান সাইন্টিস্ট পিপড়ার জীবন গবেষণা করে প্রায় সিদ্ধান্ত নির্নয় করে ফেলেছিলেন যে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে কোভিড উনিশ পালাবে, অবসান হবে তাদের গুহাজীবন। তা হলো না। জাবেদা ভুল হওয়াতে চূড়ান্ত হিসাব মিললো না।
মহান সাধু সম্রাট আমেরিকা এই ভাইরাসের নাম দিয়ে দিলেন চায়না ভাইরাস। ভারতবর্ষ ( হিন্দুস্তান পাকিস্তান বাংলাদেশ) আমেরিকার এই সাধু মতের সাথে অত্যন্ত শক্তির সাথে মাথা ঝাকালেন। কারন নিজের মাথা নিজে ফাটিয়ে অন্যের নামে মামলা করার প্রবনতা ভারতবর্ষের মানুষের আছে। তাদের মতে চীন তথ্য গোপন করেছে।তথ্য গোপন করার বিষয়টি চীনের প্রতি দুর্বল আক্রমন। এই কথা অতীব সত্য যে চীন তথ্য আড়াল করার ব্যাপারে ওস্তাদ। চীনের কাউকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হলে চীন সরকার তাকে সন্দেহের চোখে দেখে এবং তাকে ঘরবন্দী করে তুলে এমন কথা চাওর আছে। আপনি যখন কেউ নোবেল পুরস্কার পেলে তাকে মাথায় নিয়ে নাচেন চীন তখন তাকে সন্দেহ করে ঘরবন্দী করে। সুতরাং আপনার বানানো প্রোগ্রাম চীনের মাথায় কাজ করবে না।
চীনে যখন কোভিড উনিশে প্রচুর লোক আক্রান্ত হচ্ছে চীন তখন আমেরিকার দিকে সন্দেহের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। কারন যুদ্ধবাজ আমেরিকা বায়োলজিক্যাল উইপোন ব্যবহার করতেই পারে। চীনের সন্দেহ ভুল প্রমান করে দিলো আমেরিকার লাখো লাখো কোভিড উনিশে আক্রান্ত রোগী।
একজন আরেকজন একদেশ আরেকদেশ যখন কাদা ছুড়াছুঁড়িতে ব্যস্ত তখন সমস্ত মহানদের তামাশা উপেক্ষা করে ছিল্লায় বসে গেলেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি অর্ফে ব্রিটিশ মাথা। সারা গিলবার্ট মানুষকে শোনালেন ভ্যাকসিন সম্পর্কে সবচেয়ে আশাবাদী কথা।আর প্রাচ্যের অক্সফোর্ড!? বসে বসে সাধারণ জ্ঞান মুখস্থ করছে। সারা গিলবার্টের নাম নোট খাতায় তুলে রাখছে আর ভাবছে এইবার বিসিএস প্রিলিমারিতে এক নাম্বার তার প্রায় হাতের কাছে, শুধু মুখে যাওয়া বাকী।
লকডাউন। ভিনদেশী শব্দ। এই শব্দের সাথে পরিচিত হতে পারছে না এখানকার মানুষ। সামাজিক দূরত্ব কিংবা শারীরিক দূরত্ব। ভদ্রলোকের শব্দ। এই শব্দের সাথে অভিযোজন করতে পারছে না শ্রমজীবী সমাজ। তাই দিব্যি তারা নিজেদের মতো সময় যাপন করছে। অতি ভয় এবং অতি সাহস এই এলাকার মানুষের মজ্জাগত। লাশের পর লাশ পরে থাকলে এখানকার মানুষ অতি ভয়ে নিজেই লাশ হয়ে যায়। দান খয়রাত বা ত্রান শব্দটি এখানকার মানুষ খুব ভালো জানে। তাই দেখা যায় ত্রান চুরি করে দায়িত্বশীলরা অত্যন্ত সাহসের সাথে। লাশের কাফন চুরি করে অভ্যস্ত।আর ত্রান ত রেডিমেড ব্যাপার স্যাপার।
চীন ইতালি স্পেন ইভেন আমেরিকার লকডাউন আর এখানকার লকডাউনের মধ্যে প্রভেদ আকাশ পাতাল।প্রত্যেক ঘরে ঘরে তারা খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। কাউকে ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না। বের হলেও নির্দিষ্ট নির্ধারিত নিয়ম মেইনটেইন করতে হচ্ছে আপ টু বটম। আর এখানে? সরকার যে খাবার বরাদ্দ করছে অসহায়দের জন্যে তা আপনি বাচলে বাপের নাম থিউরি অ্যাপ্লাই করে সংশয়হীনভাবে চুরি করছে চেয়ারম্যান, চুরি করছে মেম্বার।
গ্রামে গ্রামে হাত ধোঁয়া প্রকল্প বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো গ্রামীন। গ্রামে গেলে আপনার মাথায় অল্প সময়ের জন্যও আসবে না পৃথিবীতে করোনা বলে কিছু একটা আছে, ডব্লিউএইচও যে 'মহামারি' ঘোষনা দিয়েছে করোনাকে তা একেবারেই ফালতু ব্যাপার মনে হবে আপনার।
বাঙালি বীরের জাতি। কত ভাইরাস বুকে পীঠে নিয়ে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত খাচ্ছে দাচ্ছে ঘুমাচ্ছে। দুধের সাথে মেশানো ডিটারজেন্ট হজম করে ফেলে এরা। আর করোনা? করোনা ত তাদের এক লোকমার চর্বনধন্য বিধেয়ক মাত্র। কেবল সেনাবাহিনীর ভয়ে তারা তাদের পারঙ্গম সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারছে না। কারন সেনাবাহিনীকে এরা যত ভয় পাই তত ভয় এরা এদের ভগবানকে পায় কিনা সন্দেহ আছে।
পৃথিবীতে তেলের দাম নেমে আসছে। যানবাহন যেহেতু চলছে না সেহেতু এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। এমন ঘটনা ইতিহাসে প্রথম। বেড়ে গেছে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কদর।নেট চালানোর জন্য এমবি নামক তেল কেনার হিড়িক পড়েছে। উহানে হিড়িক পড়েছে বিয়ের। বহুদিন তারা অন্দরমহলের সঙ্গনিরোধ বাসিন্দা হয়ে বুঝতে শিখেছে হোয়াট ইজ বিয়ে। আর এখানকার বিবাহিতদের চেহারার দিকে তাকানো যায় না। কারন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া সাথে ভালো বন্ধুত্ব থাকলেও, ভালো বন্ধুত্ব নেই তাদের প্রোটিন আমিষের সাথে। ফলত দুঃখ সারারাত।
পরিবেশ নাকি নিজেকে সাজিয়ে নিচ্ছে। ইয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স নাকি বিপদ সীমার উফ্রে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে না। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নাকি তিমি মাছ হানিমুন করতে আসা শুরু করে দিয়েছে। এমন আরও আরও ভালো সংবাদ এমবি তেল খরচ করে আমরা জানতেছি প্রতিনিয়ত। কিন্তু!? এই প্লাস্টিক মানুষ সমাজ তাতে মনে মনে ফুসফাস টুসটাস করতেছে। লকডাউন হালি তুইল্লা দেখেন! নিজে ত ভিজিটিং স্পটে যাইবো যাইবোই, নিজের বাড়ির গরুরে পর্যন্ত নিইয়া যাইবো পর্যাপ্ত লেদা চেনা রেখে আসার জন্যে। হালি ভ্যাকসিনটা আইতে দেন। অথবা টিভির মাইক দিয়ে ঘোষনা করে দেন এই গ্রহের মানুষের হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়ে গেছে। দেখবেন কত ধানে কত চাইল না-- কত চাইলে কত ময়দা। কত ধানে কত চাল না বলে কেন কত চাইলে কত ময়দা বললাম জানতে চান?
কারন ধান থেকে আর চাইল পাওয়ার সম্ভাবনা নাই।সমাজ সেবার নামে, ধান কাটার নামে যেহারে ফটো হেছা চলতাছে তাতে আর চাল পাওয়ার সম্ভাবনা নাই-- সরাসরি ময়দা পাওয়া যাবে। তাতে আপনাদেরই লাভ বেশি-- আফনে আর মামু, ময়দা পাবেন আর খাবেন। ময়দা খেয়ে খেয়ে এন্টিবডি বানাবেন।
এন্টিজেন আর এন্টিবডির যুদ্ধে কে জয়লাভ করবে তা অনেক পরের হিসাব, আগের হিসাব হলো তাল গাছটা নিজের থাকবে হবে। তালগাছ কার হবে পৃথিবী এখনো নির্ধারন করতে পারে নাই।তাই এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যারা দেশ স্বাধীন করেছে তাদের জন্য আমেরিকার একদল সাহসী যুবক নিয়ে এসেছে প্লাজমা থেরাপির বিজ্ঞাপন। তাই রক্ত যখন একবার দিয়েছেন রক্ত আরেকবার দেন তবু করোনামুক্ত করে ছাড়বেন এই গ্রহকে ইনশাআল্লাহ।
আসুন হাত ধোয়া প্রকল্প যে জাতির মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে সেই জাতির একটি ছোট্ট পরিচয় দেই।আমার বারান্দা থেকে ছাদটি দেখা যায়-- খুব দূরে নয় খুব কাছেও নয়।আমার বারান্দা পাচ তলায়, সেই ছাদের বিল্ডিংটা টোটাল তিন তলা। ছাদের এক পাশে কালো কালারের পানির ট্যাংক।
ছাদে মা তার দুটি সন্তানকে নিয়ে এসেছেন। রোজা রমজানের দিন, তার উপরে কোয়ারেইন্টাইন সময়। এমনিতেও সকাল বেলার এই সময়টা শহরের মহিলাদের কোনো কাজ থাকে না। বিশেষ করে রমজান মাসে।কারন রান্নাবান্নার কাজটা সেহরির সময়ই হয়ে যায়।
বাচ্চা দুটি খেলছে। বড় বাচ্চাটির বয়স পাচ কি ছয়। মেয়ে। ছোট বাচ্চাটির বয়স দুই কি তিন। ছেলে। বাচ্চা দুটি খুবই কিউট। তাদেরকে ফুলের সাথে নয়, দুই চার প্রকার ফুলকে তাদের সাথে তুলনা দেয়া যায়। বাচ্চারা খেলছে। ছাদে স্বর্গ যেন নেমে এসে আনন্দ করছে।
হঠাৎ মেয়ে বাচ্ছাটি মাকে কি যেন বলছে। মা কালো কালারের পানির ট্যাংকটির দিকে ইশারা করলেন। বাচ্চাটি ট্যাংকটির কাছে গেলো। গিয়ে প্যান্ট খুললো। খুলে মুততে শুরু করে। কিছুক্ষনের মধ্যে স্বর্গছাটটি মুতের গন্ধে ভরে গেলো।
খালে বিলে নদী নালায় মুতা পাবলিক আমরা। যৌথভাবে নদীতে মাঠে ঘাটে হাগুমুতা করার দৃশ্যায়ন এখনো ভারতবর্ষের অনেক জায়গায় বিদ্যমান। এখনো হাইজিনিক জীবনের সঠিক পর্যায় আবিষ্কার করতে পারেনি আমরা। অথচ আকাশ দখলের চেষ্টা আর অস্ত্রের ঝঝনঝনানিতে সিনেমার পর্দা ফেটে যায়। প্লাজমা থেরাপি নিয়ে কথা বলতে বেশ আনন্দ লাগে। অথচ প্লাজমা থেরাপি রোগীকে বাচানোর একেবারের শেষ চেষ্টা। প্রাথমিক চেষ্টার খবর নাই অথচ শেষ চেষ্টার ঘুম নাই। প্লাজমা ট্রান্সফার নতুন কোনো পদ্ধতি নয়। তবে মিডিয়া প্লাজমা থেরাপি বা ট্রান্সফারকে গ্রীন রুমের স্নো পাউটার মেখে এমনভাবে উপস্থাপন করছেন যেন করোনার এই দিনে জিব্রাইলের ওহী এটি তাদের কাছে।
একটি গল্প বলি। এক লোক ডাব গাছে উঠে আর নামতে পারছে না। আটকে গেছে। চিৎকার করে আকাশ বাতাস এক করে ফেলছে। কেউ এসে আল্লার কাছে আশ্রয় প্রার্থনার পরামর্শ দিলেন। কেউ এসে গাছ কেটে ফেলার পরামর্শ দিলেন। একজন এসে হেলিকপ্টার নিয়ে আসার পরামর্শ দিলেন। হেলিকপ্টার নিয়ে আসার পরামর্শ জয় হলো। কারন তার চেয়ে বেটার বিকল্পধারা কেউ দেখাতে পারেনি।ফলে বিকল্পধারা যেহেতু পরাজিত হেলিকপ্টার জয় হলো। এখন হেলিকপ্টার আনার অর্থ আসবে কোথা থেকে? লোকটির ত অর্থ নাই। রাষ্ট্র? লোকটিকে বাচানোর জন্য রাষ্ট্র টাকা দিবে!? রাষ্ট্রের লোকের অভাব নাই, টাকার অভাব আছে।
তারপর? তারপর লোকটির কী হলো? আপনারা ভাবছেন লোকটি মারা গেছে, তাই না? আপনারা ভাবছেন লোকটি বেচে আছে, তাই না?
লোকটি ভয়ে হতাশায় দোয়া ইউনুস পড়তে থাকে।লোকটি আগে যখন কোনো কঠিন বিপদে পড়েছে তখন দোয়া ইউনুস পড়ে বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। ভবিষ্যতে কোনো বিপদে পড়লেও দোয়া ইউনুস পড়বে লোকটি।
ইউনুস নবী মাছের পেটে আটকে গেছিলেন।মাছের পেটে থেকে যে দোয়া পড়ে ইউনুস নবী কোয়ারেন্টাইন-বিপদ অতিক্রম করেছিলেন তাই মুসলিম সমাজে দোয়া ইউনুস নামে পরিচিত। ইউনুস নবীর সময় থেকে আগত কিছু মুসাফির করোনার এই সময়ে বেশি বেশি দোয়া ইউনুস পড়ার তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু সরকার এই মুসাফিরদের কথা প্রজ্ঞাপনে কেন প্রকাশ করছেন না এই নিয়েও গ্রামীন চাস্টলে টকশো চলে। কেউ কেউ আবার বলছেন বাংলার চাস্টল মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মেডিসিন সাইনটিস্টদের আখড়া। এই আখড়া বন্ধ হওয়ার কারনে করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্স আবিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকার কেন এই আখড়া বন্ধ করতে গেলেন! সরকারের এই অভব্য সিদ্ধান্তে জাতি আশাহত।
লোকটির দোয়া ইউনুস মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করলেন। উড়ন্ত দুরন্ত চলমান স্পাইডার ম্যান চলে আসেন। স্পাইডার ম্যান সবার জল্পনা কল্পনার অবসান করে বউয়ের স্বামী বউয়ের কুলে ফিরিয়ে দেন।
বউয়ের কোলে ফিরে আসা লোকটির নাম আবুল খায়ের। তার মতো আর্থিক অবস্থার মানুষ তাকে আবুল খাই বলে ডাকে। টাকা পয়সার ঝনঝানি আছে এমন কেউ তাকে ডাকে আবুইল্লা। গ্রামের সুন্দরী মেয়েরা তাকে আবুল নামে ডাকে।কারন সুন্দর মেয়েদের গাছে কোনোদিন সে ঢিল দেয় নাই। সুন্দরী মেয়ে চায় তার গাছে কেউ না কেউ ঢিলাঢিলি করে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় তাকে আলোচনায় রাখুক, তাতে পাশের বান্ধবীর কাছে তার একটা সুন্দরী-মর্যাদা তৈরি হয়।
তবে দুখের কথা অইলো মেয়েরা স্বামীর ঘরে যাওয়া মাত্র তার মা-বাবার রাখা প্রিয় নাম জাদুঘরে ঠাই পায়।তারা হয়ে যায় অমুকের বউ তমুকের বউ,সন্তান জন্ম দেয়ার পর অমুকের মা তমুকের মা।
নামের সাথে অর্থনীতির একটি বিশাল সম্পর্ক আছে। ছোটকালে রচনা লেখার বই থেকে মুখস্থ করেছিলাম A beautiful name is better than a lot of Wealth। মিছা কতা, ডাহা মিছা কতা। A lot of wealth থাকলেই নামের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। টাকা পয়সা থাকলেই নামের সাথে লেজ সংযুক্ত হতে আরম্ভ করে। পশুর জানামতে এখন পর্যন্ত একটি লেজই থাকে।তবে টাকা পয়সা মানুষের নামের আগে-পিছে ডাইনে-বাইয়ে সাদা কালো হলুদ নীল বেগুনি সবুজ ইত্যাদি ইত্যাদি লেজের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা করে দেয়।
ধরেন, কারো নাম চান মিয়া। লোকে তাকে ডাকবে চান্দু। টাকা পয়সার মালিক হওয়ার পর তার নাম হবে চান মিয়া সাহেব। টাকা ব্যয় করে মক্কা শরীফ ঘুরে আসার পর তার নাম হবে হাজী চান মিয়া সাহেব। এমনভাবে আরও লেজের ব্যবস্থা টাকা ব্যয় করে দানবীর হাজী চান মিয়া সাহেব করতেই পারেন। আর যার অর্থতেলের ব্যবস্থা নেই তার নাম হবে টোকাই,তার নাম হবে ধোপা,তার নাম হবে কামলা।
তবে আবুল খায়েরের বউ কিন্তু কোনোদিন তার নাম ধরে ডাকে না। স্বামীর নাম ধরে ডাকা পাপ।অনিন্দিতা খানম স্বামীকে স্বামী বলেই ডাকে।
আবুল খায়ের তার বউয়ের কাছে জানতে চায় যদি সে গাছ থেকে পড়ে মারা যেতো তাহলে তার বউ বাকী জীবনটা কীভাবে কাটাতো। তার বউ উত্তর দেয়,আমি পাগল হয়ে যেতাম।" আবুল খায়ের আরও স্পষ্টভাবে জানতে চায়, সে জানতে চায় অনিন্দিতা খানম আবার বিয়ে করতো কিনা।
অনিন্দিতা খানম উত্তর দেয়," পাগলে কিনা করে।"
আসলেই পাগলে কিনা করে! করোনার কঠিন পরিস্থিতি ট্রাম্পকে পাগল করে দিলো কিনা, নাকি একটা পাগলকে আমেরিকা তাদের সিংহাসন ঠাই দিয়েছে। নতুবা সে কেমন করে বলে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি সংগ্রহ করে করোনা রোগীর ফুসফুসে ইনজেকশনের মাধ্যমে পোস করলে রোগী ভালো হয়ে যেতে পারে।আবার তার মতামত তুলেও নেয় এই বলে যে সে ফান করেছে। ইয়ার্কি, তাই না!? লাখ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, হাজার হাজার রোগী মারা যাচ্ছে আর তিনি ইয়ার্কি করছেন। সাব্বাস ডোনাল্ড ট্রাম্প, সাব্বাস তোমার ইয়ার্কি।
মিডিয়া আমাদের সাথে ইয়ার্কি করছে কিনা? zee২৪ ঘন্টায় দেখতে পেলুম একখান বিশাল আশার খবর। ফ্যামোটিডিন গ্রুপের এন্টাসিট যার প্রাইজ মাত্র চল্লিশ পয়সা তা নাকি করোনার ঔষধ হতে যাচ্ছে। ঔষধের দাম কম বা বেশি বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে অযথা আশার কথা বলে, আপডেট নিউজের নামে জনগনের বিশ্বাসের সাথে ধোকাবাজি খেলায় আবার না মিডিয়ার সম্মান জুতার নিচে নেমে যায়( বিটিভি বলছে, দেশে করোনা পরিস্থিতে স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে আছে!
বেসরকারি টিভিগুলো বলছে, বিটিভি মহাপরিচালক সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত!! 😇🤔)। ভয় পাচ্ছি আমি। কারন বিশ্বাস করার, আস্থা রাখার মাধ্যম খুজে না পেলে জীবন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে যায়। মিডিয়ার কথা শুনে অতি চালক হয়ে মাথা মোটা এই জাতি যদি ফ্যামোটিডিন মজুত করা আরম্ভ করে তাহলে পেট রোগা এই বাঙালি এন্টিহিস্টামিন পাবে কোথায়!?
মিডিয়ার উপর এতো আশাবাদী হওয়ারও কিছু নাই। মিডিয়া কর্মীরা হায়ার এন্ড ফায়ার পদ্ধতিতে মিডিয়া শ্রমিক।তারা সেই ইট ভাঙতে পারে যেই ইট ভাঙার কথা মালিকপক্ষ তাদের বলেন।
বিয়ে শেষ। এবার জামাই বউকে নিয়ে বাড়ি যাবে। বিদায়-নিয়ম- কানুন সেরে জামাই-বউ বাড়ির পথে যাত্রা করে। পথে ডাকাত আক্রমন করে। সুন্দরভাবে ডাকাতি করে ডাকাতপক্ষ বিদায় নেয়।
কনের ভাই তার মাকে বলে যে জামাইয়ের ভাত খাওয়াবে না মাত্রাকে। মাত্রা কনের নাম। কেন কেন? বিয়েতে বরপক্ষ কনেকে যে স্বর্নঅলঙ্কার দিয়েছে তা নকল। রুস্তম কীভাবে জানলো যে অলঙ্কার নকল? রুস্তম মাত্রার ভাইয়ের নাম।
তুই কীভাবে জানলে স্বর্নঅলঙ্কার নকল? অলঙ্কার ত ডাকাতি হয়ে গেছে!
মা, ডাকাতি ত আমিই করেছি!
রুস্তম ডাকাতি করেছে এটা অপরাধ না, অপরাধ বরপক্ষ রুস্তমের বোনকে খাটি সোনা দেয়নি, দিয়েছে নকল সোনা।
আমাদের মিডিয়া, পৃথিবীর মিডিয়া হলো পোশাক, আর সেই পোশাকের ভেতরের যে শরীর রয়েছে তা প্রত্যেকে এক একটি রুস্তম। রুস্তমরা যা চায় তাই হয়। রুস্তমরা ভদ্র ভাষায় বিজনেস ম্যাগনেট নামে সমাদৃত। এই ম্যাগনেটরা চেয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক ঢাকায় আসবে-- শ্রমিকরা ঢাকায় এসেছে। তারা সাথে সাথে জনরোষের তাপে পড়ে মত বদল করেছে, শ্রমিকরা সাথে সাথে ফিরে গেছে, তারা চেয়েছে লকডাউন উঠে যাবে, লকডাউন শীতল হয়ে গেছে মানে উঠার পথে।
বাংলাদেশের পীর আমেরিকায় যখন করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দশ হাজার তখন তারা কঠিন লকডাউনে চলে যায়, জার্মানি, ইতালি, স্পেনেও তাই। আর বাংলাদেশে যখন করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অফিসিয়ালভাবে দশ হাজার তখন লকডাউন শীতল হয়ে যায়।
আমি বলছিনা করোনার বিরুদ্ধে ফাইট করার জন্যে লকডাউনই একমাত্র এবং বিশেষ পন্থা। আমি বলছি বাঙালি বীরের জাতি-- সিনেমা শুরু হওয়ার আগেই সিনেমা শেষ করে দিতে পারে তারা।
আমরা দেখেছি দুই হাজার আঠারো সালের এশিয়া ক্রিকেট কাপে এক হাতে মাঠে নামা তামিম ইকবালকে। অবিশ্বাস্য। দুর্দান্ত। আমরা পারি, আমরা সব পারি। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে নিজের প্রান দিয়ে পাকিস্তানের হয়ে ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি, এই আমরাই আবার ইন্ডিয়াকে সাথে নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে করে বাংলাদেশ স্বাধীন করি।আমরা ইজ আমরা। আমাদেরকে করোনা কাবু করতে আরও ট্রেনিং নিয়ে আসতে হবে। এতো অল্প ট্রেনিংয়ের বিনিময়ে করোনা আমাদের জাহাজের তেল শেষ করতে পারবে না। জাহাজের তেল শেষ হলেও করোনা বিনতে কোভিড উনিশ বুঝতেও পারবে না যে আমাদের জাহাজের তেল শেষ। কারন জলকে তেল হিসাবে চালিয়ে দেওয়ার ট্রেনিং করোনার জন্মের বহু আগে থেকে আমাদের নেয়া।
করোনা ভাইরাস জীবন্ত প্রাণী নয়। এটি প্রোটিনের অণু (ডিএনএ) যা লিপিডের (চর্বি) মোড়কে মোড়ানো। এটা আমাদের নাক-চোখ-মুখের মাধ্যমে শরীরে ঢুকে গেলে নিজের জেনেটিক কোড বদলে ফেলে শক্তিশালী ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। ভাইরাস যেহেতু কেবলই একটি প্রোটিন অণু এবং জীবন্ত নয় তাই এটাকে মেরেও ফেলা যায় না। তবে সে নিজে থেকে ধ্বংস হতে পারে।
যে ভাইরাস নিজে নিজে জন্ম হতে পারে আবার নিজে নিজে মৃত্যুবরন করতে পারে অর্থাৎ যাকে মারা যায় না, সে তো নিজের একটি পৃথিবী বানাবে স্বাভাবিক কথা। এই সহজ ব্যাপারটা অনুধাবন করার জন্য গৌতম বুদ্ধ হওয়ার দরকার পড়ে না।
তবে একটি ব্যাপার কিন্তু নোটিশ করার মতো। তিন ধর্মের সমাহার বা তিন বাদের সমাহার ভিয়েতনাম কিন্তু কোভিড উনিশের ব্যাপারে ম্যাজিক দেখাতে পেরেছে। আমরা জানি বুদ্ধের মতবাদ, কনফুসিয়াস থিউরি, তাও তে চিংয়ের হাজার বছরের সহজিয়া দর্শন ভাতপ্রিয় ভিয়েতনামের জীবানাচারে চর্চার বিষয়। তবে এই কথা সত্য যে চীনের ব্রার নিচে ভিয়েতনাম। ব্রা বললে নারীবাদীরা আবার রেগে যেতে পারে। চীনের আন্ডারপ্যান্ডের নিচে ভিয়েতনাম। চীনেও কনফুসিয়াস থিউরি, মাও সেতুঙ, তাও তে চিং অত্যন্ত আলোকোজ্জ্বল চর্চিত টপিক অথবা চীনই এমন মতবাদের ধারক। থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়ার ব্যাপারে আলোচনাটা কিছু সময়ের জন্য ফ্লাইট মোডেই রেখে দিলাম।
কনফুসিয়ানরা সর্বদা সর্বোচ্চভাবে সিনিয়রের কথা মেনে চলে। আর লকডাউনের ক্ষেত্রে আদেশমান্যনীতি শতভাগ কার্যকর হওয়া লাগে। একমুখে দুই কথা বললে লকডাউন কার্যকর করা যায় না। দক্ষিণ কুরিয়া যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক আক্রান্ত হচ্ছিল সেখানকার নীতিপ্রবাহ কেমন করে পরিস্থিতি নিজেদের কন্ট্রোলে নিয়ে আসলো? এরা মোবাইল ট্রেসিং করে পনেরো লক্ষ লোককে ঘরবন্দী করতে সক্ষম হয়। এরাও কিন্তু মহান কনফুসিয়াসের মতবাদে ইমান এনে প্রতিদিন নিজেদের সূর্যকে ব্যবহার করতে যায়।
আর বাংলাদেশ?
বাংলাদেশে ধর্ম আছে। এখানে ধর্মের চেয়ে দল, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বড়।কে সুন্নি কে ওয়াহাবি তা নিয়ে আলোচনা করতে করতে রাত শেষ হয়ে যায়।সকালে ঘুম থেকে উঠে অন্যের জমি দখল করতে যায়।
করোনা বিনতে কোভিড উনিশ যখন বাংলাদেশে মাত্র আঙুল ফেলতে শুরু করে দিয়েছে এখানকার একশ্রেনির আলেম শরীরের সমস্ত রক্ত মুখে এনে বলে '' প্রয়োজনে রক্ত দিবো তবু মাসজিদে যাওয়া থেকে কেউ আমাদের রুখতে পারবে না", করোনা যখন ফুসফুসের মধ্য দিয়ে রক্তের বাহাদুরি শেষ করতে আরম্ভ করে তখন তারাই বলে ভিন্ন কথা। তাই এক মুখে দুই কথা নয়-- এক মুখে চার অথবা ষোল কথার বলা ক্ষমতা বাংলাদেশ রাখে।
বাংলাদেশের মানুষের কিন্তু মুখে একটা অন্তরে আরেকটা না। এমন হলেও ভালো হতো। মুখে একটা অন্তরে আরেকটা রেখে যারা সহজে কাজ হাসিল করে নিতে পারে উন্নত বর্তমান আধুনিক বিশ্বে তারাই ডিপ্লোমেটিক ম্যান,যাদের কদর আধুনিক অস্ত্রের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
বাংলাদেশ এক কথাতে বেশিদিন থাকতে পারে না। এখানে শিক্ষার চেয়ে জনসংখ্যা বেশি। ফলে ডারউইনের বানরের মতো তাদের গাছে উঠতেও সময় লাগে না, আবার নামতেও সময় লাগে না।
ডারউইনের বানর ইভালোশন এন্ড জেনেটিক প্রক্রিয়ায় নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। তাই আজকে সে মানুষ। ডারউইনের বানর থেকে শিক্ষা নিয়ে প্লে নেইমার রোনালদো রিবালদোর দেশ ব্রাজিল করোনা ভাইরাসের এই দিনে কোনো প্রকার লকডাউননীতি গ্রহন করেনি। ফলে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার লোক। ব্রাজিলের পরে ব্রাজিলের পতাকা যে দেশের আকাশে সবচেয়ে বেশি উত্তোলিত হয়েছে সেই দেশটির নাম বাংলাদেশ। ব্রাজিল আয়তনে অনেক বড় রাষ্ট্র হলেও ব্রাজিলও বাংলাদেশের মতো বস্তিঘেষা জাতি। ফলে বাংলাদেশে হাজার হাজার লোক মারা গেলে আমরা অবাক হবো না। তাছাড়া বাংলাদেশের রাস্তা বহুদিন ধরে উপোস। রক্ত বাংলাদেশের রাস্তার প্রধান খাবার। খাবার না পেয়ে বাংলাদেশের রাস্তা প্রায় মারা যাচ্ছে। সরকার নিশ্চয়ই রাস্তার এই মরনময় দিনের অবসান কল্পে কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন।
তবে এই ভারতবর্ষের মানুষ 'সরকার' বিষয়টা এখনো বুঝে উঠতে পারে নাই। তাদের কাছে সরকার মানে সরকার প্রধান। ভালো মানে সরকার প্রধান ভালো, খারাপ মানে সরকার প্রধান খারাপ। এতে বিরাট সমস্যা। কারন মুরগী যখন চিলের কথা মাথার রেখে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে কেবল, শিয়াল এসে অথবা বিজি এসে মুরগির বাচ্চা নিয়ে যায়। করোনা ভাইরাস আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাবে এখনো আমরা জানি না। নাকি আমাদের জানতে দেওয়া হচ্ছে না!?
সংশয় সন্দেহ অবিশ্বাস অস্থিরতা বিলাসী মানসিকতার ব্যাপক আয়োজনে ক্যালেন্ডারের পাতায় জায়গা করে নেয় একবিংশ শতাব্দী। একবিংশ শতাব্দী এমন এক শতাব্দী যে শতাব্দী তার আসন্ন প্রজন্মের খাবার সংহার করে বেচে আছে। প্রয়োজনীয় জীবনের চেয়ে বিলাসী জীবন খুব গুরুত্বপূর্ণ তাদের কাছে। ঘরে খাবার থাকলেও ফাস্টফুড খেতে হবে তাদের। ঘরে টিভি থাকলেও ডিজিটাল টিভি কিনতে হবে তাদের। অর্থাৎ অভাবটা মনে নয়, চোখে। ক্ষুধাটা পেটে নয়, জিহবায়।
একসময় পাখি খাচায় বন্দী করে রাখার স্বভাবটা সো কল্ড এলিট শ্রেনির মাঝে ছিল।এখন মিডিয়া, ইন্টারেক্টিভ মিডিয়ার কল্যানে সবাই মোটামুটি এলিট ট্যাংক।
স্টুডেন্টদের মধ্যে দেখা যায় পাখিদের খাচায় বন্দী করে রাখার প্রবনতা। হোস্টেলে থাকে, নিজের টয়লেট নিজে পরিষ্কার করে না, মশা ডিম পাড়ে বিছানার নিচে, টয়লেট থেকে এসে হাতও ভালো করে পরিষ্কার করে না কিন্তু পাখিকে খাচায় বন্দী করে বিছানার পাশে রেখে দেন মহান স্টুডেন্ট। কাউকে বন্দী করে রাখার মধ্যে এক ধরনের প্রভুগিরি ফলানো যায়। ইনফিরিউর প্রবনতা প্রভু হতে পারলে শান্তি পায় বেশ, হাগু করতে কুতানি দেয়া লাগে না তখন।
এখন খাচায় বন্দী পাখির মতো আপনি বন্দী। মাইনাস প্লাস করা ছাড়া আপনার আর এখন কোনো কাজ নাই। পারলে একদিনে, দুঃখিত, এক ঘন্টায় কোটিপতি হয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। টিভিতে এতো মুখ দেখানোর জন্য ব্যস্ত ছিলেন যে নিজেই টিভি হয়ে যাবেন যেনো। হয়ে যানও বটে।
এখন?
এখন চিড়িয়াখানার পশুদের মতো আপনিও বন্দী। গুটি বসন্তে পৃথিবীর প্রায় ত্রিশ কোটি মানুষ মারা যায় এখন পর্যন্ত।পৃথিবী গুটি বসন্তের বাক্যে দাড়ি বসাতে সক্ষম হয়েছে। করোনা কবে যাবে পৃথিবী থেকে? হার্ড ইমিউনিটি আসলে। হার্ড ইমিউনিটি এতো সহজ কথা?
হার্ড ইমিউনিটি (herd immunity)। হার্ড মানে পাল। ইমিউনিটি মানে বিমুক্তি। হার্ড ইমিউনিটি দুইভাবে অর্জন করা যায়। ভ্যাকসিনের মাধ্যমে। প্রাকৃতিক উপায়ে।
প্রাকৃতিক উপায়ে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের জন্য কোনো জনগোষ্ঠীর ৬০ থেকে ৮০ পার্সেন্ট আলোচ্য বা পেন্ডামিক ভাইরাস দ্বারা আক্রান হতে হবে। ধরি, বাংলাদেশে জনসংখ্যা বাইশ কোটি। বাইশ কোটির ৮০ পার্সেন্ট সতেরো কোটি ৭৬ লক্ষ। সতেরো কোটি ৭৬ লক্ষ লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বাংলাদেশ অথবা ব্রাজিল হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করবে।
আমরা জানি ব্রাজিল আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক অনেক বড় হলেও জনসংখ্যায় প্রায় কাছাকাছি। জাইর মেসিয়াস বলসোনারো সামরিক বাহিনীর লোক। ডো অর ডায় নীতিতে আস্থা রেখে মানসিক বিকাশ এই পর্তুগিজের। সাও পাউলোর শৈশবজল পান করে বেড়ে উঠা এই বলসোনারো যখন একজন কংগ্রেসম্যাম আইনপ্রনেতা মহিলাকে বলতে পারে " আমি তোমাকে ধর্ষণ করবো না, কারন এটার যোগ্য তুমি নও" তখন হাজার হাজার লোক করোনায় মারা গেলে তিনি বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করতেই পারেন।
বাংলাদেশের সরকার প্রধান অবশ্যই বার বার বলছেন আশাহত না হওয়ার জন্যে। করোনার বিরুদ্ধে ফাইট করার জন্যে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বাংলাদেশের রয়েছে এমন কথা আকাশে বাতাসে শুনতে পাই। গার্মেন্টস কর্মীরা বলে অন্য কথা " ঘরে খাবার নাই, কাজ না করলে খামু কী?" করোনা আক্রমন করলে তিন বেলার বদলে ছয় বেলা খাবার খেয়েও কী তারা বাচতে পারবে? শুনেছিলাম দিনে একবেলা খেয়েও বেচে থাকা যায়।
খাবার দোহাই দিয়ে আপনি যখন চৌকাঠ পার হয়ে যাচ্ছেন তখন আপনি না মরলেও অন্যের মৃত্যুর কারন হচ্ছেন। ধরেন, মিস্টার আতর আলী করোনায় আক্রান্ত। আতর আলী থেকে জব্বার করোনায় আক্রান্ত হলো। জব্বার ভাবলো ঘরে বসে বসে আর কত কাল, এবার বউরে লইয়া শ্বশুর বাড়ি থেকে কয়েকদিনের জন্যে ঘুরে আসি।
জব্বার সাহেব করোনা নিয়ে শ্বশুর বাড়ি গেলেন মধুমাসের আম কাঠাল খাওয়ার জন্যে। জব্বার সাহেব থেকে তার শ্বশুর বাড়ির প্রত্যেকে করোনায় আক্রান্ত হলো। পরে জানতে পারি জব্বার সাহেবের শাশুড়ি মারা গেলেন। কারন জব্বার সাহেবের শাশুড়ির ভাইরাসের বিরুদ্ধে ফাইট করার জন্যে পর্যাপ্ত সক্ষমতা ছিল না।তাহলে খুনী কে? খুনী আতর আলী প্রথমে, তারপর জব্বার। এখন যারা ঘর থেকে বের হচ্ছে,আনন্দে আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে এরা প্রত্যেকে খুনী।
তাহলে আপনি বলতে পারেন সুইডেনের প্রত্যেকে ত আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারাও কী প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য খুনী? আরে ভাই, ওরে বোন, সুইডেন একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফ রাষ্ট্রপ্রধান হন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্তেফান লোফভেন (Sweden is a special country characterized by high levels of trust—not just between people but between people and government institutions)। তিনি সবাইকে বলে দিয়েছেন যে যেনো তারা কমনসেন্সের উপর ভরসা করে চলাফেরা করে। তাদের কমনসেন্সের মানে বুঝেন!? কমনসেন্সের ধারাপ্রবাহ আনকমনভাবে আমাদের মাথায় ঢুকে না। দুই-তিন দিন আপনার সাথে চলাফেরা করার পর জিজ্ঞেস করে বসবে আপনি চলেন কেমনে। আরে ভাই, এটা কোনো জানার বিষয় হলো?হাত পা চোখ কান নাক গলা মাথা মানে পর্যাপ্ত অঙ্গবহর থাকার পরও একজন মানুষের চলতে সমস্যা?
এক শিক্ষক ছাত্রকে উপদেশ দিলেন," বাবা একটা পিপড়াকেও মারবে না", ছাত্র পিপড়াকে মারে না ঠিকই কিন্তু রিকসাওয়ালাকে চড়থাপ্পড় সময়মতো দিয়ে থাকে দশ টাকা পাচ টাকার জন্যে। এই হলো এখানকার কমনসেন্স।
তাছাড়া আপনারা ত নিজেরা নিজেরা একটি আয়াত বানিয়ে ফেলেছেন। আয়াতটি হলো মুখ দিয়েছেন যে আল্লা রিযিকও দিবেন সেই আল্লা। এই আয়াতের উপর ভরসা রেখে কোটি কোটি সন্তান নিয়ে আসলেন পৃথিবীতে। ফলে সুইডেনে যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে একুশ জন বসবাস করে, আর আপনার দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে এগারো শত। সুইডেনের জনসংখ্যা দশ মিলিয়ন। সুইডেনের আয়তন ৪,৫০,২৯৫ বর্গকিলোমিটার (১৭৩,৮৬০ বর্গ মাইল)। আর আপনার দেশের?
সুইডেনকে মাথায় রেখে অনেকে আস্থাশীল পন্থার দিকে যাত্রা শুরুর করার অভিপ্রায় খুজে পাচ্ছেন প্রায়। তাই তাদের রচনায় উঠে আসছে "Herd Immunity Is the Only Realistic Option—the Question Is How to Get There Safely", আসলেই এটি একটি সংশয় ও আশার ব্যাপার। সংশয় ও আশার ব্যাপার যখন এক নৌকায় উঠে পড়ে মাঝির তখন কিচ্ছু করার থাকে না, মাঝি তখন বৈঠা ছেড়ে দিয়ে বাতাসের উপর ভরসা করতে থাকে।
এমন সময় অনেক মাঝি নৌকা ছেড়ে পালায়। এমন সময় অনেক যাত্রী নৌকা থেকে লাফ দিয়ে তীরে পৌঁছে যেতে চায়। বেলারুশ নৌকা থেকে লাফ দিলো কিনা এটাও একটা গবেষণার বিষয়।
মানছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাদের ২৫ পার্সেন্ট জনগণ মারা যায়, তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মানে কী ৮ মে দিনকে স্মরণ করার জন্যে উন্মুক্ত প্যারেডেরর ব্যবস্থা করতে হবে? রাশিয়া যেখানে বিশাল আয়োজন করার পরিকল্পনা নিয়েও সীমিত আকারেও কোনো অনুষ্ঠান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেনি সেখানে তার মিত্র রাষ্ট্র বেলারুশ কীভাবে করোনাকে এমন ওপেন চ্যালেঞ্জ করে তা অবশ্যই ভাববার বিষয়।
তবে বেলারুশের জনসংখ্যা ঘনত্ব কম। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪২ জন। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪২ জন বসবাস করা একপ্রকার জনবিচ্ছিন্ন জীবনের মতোই। কিন্তু সৌদি আরবে প্রতি বর্গকিলোমিটারে পনেরো জন লোক বসবাস করে। তারাও ত করোনার এই দিনে কারফিউ জারি করে। আমেরিকাতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৫ জন বসবাস করে। সেখানেও লকডাউন আরোপ হয়।অবশ্যই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিদিনই লকডাউন তুলে দিতে চায়। এতে অ্যান্থনি ফাউচিকে প্রতিদিনই ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতামতের বিরুদ্ধে অত্যন্ত ভদ্র ভাষায় গনতান্ত্রিক উপায়ে কথা বলতে হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প আর পৃথিবী বিখ্যাত সংক্রামক ভাইরাস গবেষক অ্যান্থনি ফাউচির মুখের দিকে তাকিয়ে করোনার এই দিনে আমরা 😇 যখন কোনো সমাধান পাইনা তখন মনকে বলতে হয় when nothing is sure everything is possible!
'Nothing is sure absolutely nothing is sure' বিষয়কে সামনে রেখেও আমরা হ্যাপি বার্ড ডে টু ইউ জাতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারি। কয়েকদিন আগেও হ্যাপি বার্ড ডের যন্ত্রনায় কানমন ঝালাপালা। ঘরে চাল আনার মুরোদ নাই ঠিকই হ্যাপি বার্ড ডের কেক আসে নিয়ম করে। মাসিক যে বেতন পকেটে আসে তারই অধিকাংশ ট্রিট দেয়ার অলকমেঘে ভেসে যায়। বিবাহবার্ষিকী ত আছেই-- যেখানে প্রতিবছর স্বামী-স্ত্রী আবার নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অর্থাৎকম্পিউটারে অ্যান্টি-ভাইরাস যেমন বছর বছর রিনিউ করা লাগে তাদের বিয়েও প্রতি বছর রিনিউ করা লাগে আয়োজন করে নতুবা সম্পর্কে যে ইদ আসে না। রোজা রাখুক আর না রাখুক ইদ আসা লাগবেই।
আমাকে আপনাদের এলিট ভাবসাবের একমাত্র উপক্রোষ্টা ভাবতেই পারেন। তবে মাঝরাতে যারা উস্রি দেখতে চায় তাদের মনরোগ জাতির পৃথিবীর কোনো কাজে আসবে না,তারা নিজের হন্তারক। আর নিজ মানে তো অপর, অপর মানে তো পৃথিবী।
পৃথিবীতে জুন এলমিডা(৫ অক্টোবর ১৯৩০) এসে দেখেন তারা বাবা একজন ড্রাইভার। ড্রাইভারি করে সংসার চালান তিনি। এলমিডার পড়াশোনার খরচ জোগাতে অনেক কষ্ট হয় তার। অনেক কষ্ট করেও এলমিডাকে স্কুলের খরচ চালাচ্ছিলেন তিনি। স্কুলের পরে জুনের বাবার পক্ষে আর সম্ভব হয়নি একাডেমিক খরচের যোগান দেয়া। ষোল বছর পর যখন স্কুলের পড়াশোনা শেষ জুন এলমিডা কাজে যোগদান করে।১৯৪৭ 'Glasgow Royal infirmary'তে হিস্টোপ্যাথলজি টেকনিশিয়ান হিসাবে যোগদান করেন। পরে St Bartholomew's হাসপাতালে কয়েক বছর কাজ করেন। ক্যালেন্ডারের পাতায় চলে আসে ১৯৫৪ সাল।জুন এলমিডা একজন নারী। এবার তার সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা।জীবনে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে খুবই দক্ষ ও পরিশ্রমী তিনি। দক্ষতা আর পরিশ্রমমেশা তার উপক্রান্ত সিদ্ধান্তে পৃথিবী পেয়েছে অনেক নতুন নতুন মেন্টরপথ।
রুবেল্লা(Rubella) ভাইরাস নিয়ে যখন পৃথিবী আতঙ্কিত তখনই জুন এলমিডা ইমিউন- ইলেকট্রুমাইক্রোসকোপি ব্যবহার করে প্রথম রুবেল্লা ভাইরাসের চিত্র পৃথিবীর মানুষকে দেখাতে সক্ষম হোন। রুবেল্লা শব্দটি ল্যাটিন যার অর্থ pink red। তারপর জুন এলমিডা ডেভিড টাইরেলকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন নতুন একপ্রকার ভাইরাসের উপর গবেষণা। মুকুটের মতো আকৃতি বলে তারা নতুন রপ্ত ভাইরাসের নাম দেন করোনা।
করোনা ভাইরাস প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৩০ সালে। মোরগীর শ্বাসনালীতে এই ভাইরাস প্রথম বংশের বাতি ধরে রাখার চেষ্টা করে। মানুষ চিকেনপ্রিয় সম্প্রদায়। ১৯৬০ সালে করোনা ভাইরাস ডিম পারার স্থান আপডেট করে মানুষের শরীরের উপযোগী হয়ে উঠে।
দুই বছর আমি পোল্ট্রি মুরগির সাথে ছিলাম। ছিলাম বলতে পোল্ট্রি মুরগির বাচ্চা কিনে এনে বড় করে বিক্রি করতাম। আমাদের বাড়িতেই এই পোল্ট্রি মুরগির খামার ছিল।তখন আমি মাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। অবসর সময়। মুরগির বিভিন্ন প্রকার রোগের সাথে তখন পরিচিত হয়। পোল্ট্রি মুরগির সবচেয়ে ভভয়ঙ্কর রোগটির নাম গামবোরা। গামবোরা রোগ হলে মুরগির ঘনঘন পায়খানা হতে থাকে। অনেকটা মানুষের ডায়রিয়ার মতো। ফলে মুরগিকে তখন লাইট স্যালাইন দিতে হয়।এটি একটি ভাইরাস রোগ। পেটে পানি জমে যাওয়া তাদের আরেকটি রোগ। পানি জমার প্রধান কারন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
মুরগির ঠান্ডা লাগতে দেখেছি।ঠান্ডা লাগলে মুরগি কককক করতে থাকে যেন কিছু বের করে দিতে চায়। এমন সময় তাদেরকে গভীরভাবে অব্জার্ভা করে দেখেছি তাদের গলায় অস্বস্তির মাত্রা বেড়ে যায়, চোখ বের হয়ে আসতে চায়, তাদের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তখন তাদেরকে সুস্থ মুরগী থেকে আলাদা করে রাখতে হয়।
আজকের দিনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষের যে সিমটম প্রকাশ পাচ্ছে, প্রায় অধিকাংশ সিমটম আমি তখন আমার খামারের ঠান্ডালাগা মুরগির মাঝে দেখেছি। এই ঠান্ডালাগা মুরগিকে সুস্থ করার একটি মাত্র পন্থা ছিল তখন। হাই এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়ানো। এতে মুরগির ওজন কমে যেতো। কিন্তু মানুষের করোনা নামে যে ঠান্ডালাগা রোগ দেখা দিয়েছে তা এন্টিভাইরাল দিয়েও কাজ হচ্ছে না। এমন হতে পারে কোনো ঔষধ ছাড়াই মানুষকে কিছু মাস অথবা বছর জেলে রেখে সে এমনি এমনি চলে যাবে।
এই করোনা বিনতে কোভিড উনিশ কিন্তু মানুষকে মারতে চায় না, সে মানুষের মধ্যে বেচে থাকতে চায়।বেচে থাকার জন্য সে মানুষের নিজস্ব কোষকে মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে।একবার ভেবে দেখুন তো করোনার আচরন আপনার সাথে মিলে যাচ্ছে কিনা!? এখনই ভাবনার সময়। ভাবুন। মনোযোগ দিয়ে মগজের তেল খরচ করে ভাবুন।
ভেবেই ফায়দা কী!? এখানে ভাবনার মূল্য জলের মূল্যের চেয়ে কম।এখানে যারা জলকে জল আর পানিকে পানি বলতে পারে তারাই সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী। জলকে গবেষণা করে যারা বলবে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন,জলকে আরও গবেষণা করে যারা প্লাজমা কনডিশনের কথা বলবে তারা এখানে মানুষ বটে, তাদের মূল্য সিস্টেমের একেবারে তলাবিহীন ঝুড়িতে। ফলে চুমুর চেয়ে চুমরানো এখানে জনপ্রিয় হয়ে উঠে স্বাভাবিক উপায়ে।
এখানে মসজিদের জন্যে অর্থ বরাদ্দ থাকে আর মন্দিরের জন্য বরাদ্দ থাকে প্রসাদ,আর বিজ্ঞানের জন্যে বরাদ্দ থাকে মসজিদ-মন্দিরের আশীর্বাদ কিংবা দোয়া। দোয়া আর আশীর্বাদ খেয়ে এখানকার বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী তেলাপোকার মতো দীর্ঘায়ু লাভ করে।
নিশ্চিত জীবনের আশায় এখানকার মানুষ দুটি কাজ নিশ্চিতভাবে করতে পারে।বিয়ে। চাকরি।বিয়ে করার আগে চাকরি অবশ্যই পাওয়া লাগবো,নতুবা বিয়ের বাজারে কদর কম।করোনার হাত থেকে আল্লা তাদের রক্ষা করলেও আল্লার নামে বেকার জামাইয়ের হাতে তারা মেয়ে তুলে দিতে রাজি নয়।আল্লার উপর ভরসা করে তারা জুতা মসজিদের বাইরে রেখে যেতে পারে না কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হলে আল্লা তাদের হেফাজত করবেন এই তাদের বিশ্বাস। হুজুগে যাকাত দিতে রাজি না তারা কিন্তু হুজুগে মারামারি করতে রেডি।
চাকরি শব্দটির সাথে আমি অবশ্যই দ্বিমত পোষণ করি।চাকরি শব্দটি এসেছে চাকর শব্দ থেকে। চাকর শব্দটি ফারসি।
দুই পরাক্রমশালী শক্তি যখন বাণিজ্যের সাথে সাথে ভারতবর্ষের ভূমিকেও কব্জা করার পরিকল্পনায় বুঁদ-ব্যস্ত, তখন ব্রিটিশদের প্রায় ছয় যুগ পর ১৬৬৭ সালে ভারতের জাহাজঘাটায় নতুন দুটি জাহাজ এসে নোঙর করে।
ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের সঙ্গে টক্কর দিতে ফরাসিরা ভারতবর্ষে আসে। তাই তারা একেবারে খাঁটি বণিকের মতো ব্যবসার সঠিক নথিপত্র নিয়ে আসে। অনেকের মতে, সম্ভবত রাজা প্রথম ফ্রান্সিসের রাজত্বকালে,১৬০৩ সালে ফরাসিরা প্রথমবারের মতো ভারতবর্ষে পা রাখে। সেসময় জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন পমিয়ের ডি গনভিল।
রাজা, জমিদার, ওলন্দাজ, ফরাসি, ইংরেজদের চাপে পড়ে এই ভূমি তখনো জনগনের হতে পারেনি। এই ভূমির মালিক ছিল কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ শক্তি-- কাগজে কলমে চলনে বলনে আচরনে জনগণ বা প্রজা ছিলো আমড়া কাঠের ঢেকি অথবা গাধা মশাইয়ের পীঠস্থান যা চাকর নামে পরিচিত-- চক্করের মতো আচরন করা যার কাজ।
এখন সেই ব্যবস্থা আর নেই। তবে চাকরি বা চাকর শব্দটি রয়ে গেছে। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ (১) অনুযায়ী জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক,আবার ২১(২) অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী কথাটি উল্লেখ রয়েছে। আমি অবশ্যই কর্মচারীও বলতে রাজি নয়। বলতে চাই সেবক।
একটি রাষ্ট্র চালানোর জন্যে মেথর থেকে শুরু করে মহতাজ পর্যন্ত প্রত্যেকে মূলত সেবক। তবে ক্যাডার ননক্যাডার সেবক হয়ে উঠার জন্যে বিশাল লাইনের কাহিনির পেছনে সাইকোলজিক্যাল ও সোসিও ইকোনমিক কনস্ট্রাকশন জনিত ব্যাপার বিদ্যমান।
একটা বিষয় নিয়ে কথা বললে বিষয়টি ক্লিয়ার হবে। বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান। তাহলে ঢাকা শহরে কোটি কোটি লোক কেন? ঢাকা শহরের নিশ্চয়ই বোরো ধানের ফলন ভালো হয় না কিংবা খামার বাড়িতে আমন ধান অথবা তরমুজের আশাতীত ফলন হয় না।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারা বাংলাদেশকে করোনার ঝুকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছে। তাহলে কেবল ঢাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এতো বেশি কেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে গেলেই আমরা জানতে পারবো আমরা একটা ছাগল জাতি-- বার পাতা খেয়েছি ঠিকই কোনো পাতায় ভালো করে খাইনি।ফলে ছাগলের মতো তিরিং বিরিং করতে পারি কিন্তু হালচাষ করতে পারি না।
হল অর্থ লাঙল। হাল অর্থও লাঙল। হলচালন থেকে হালচাষ কিনা তা নিয়ে গবেষণা করা যেতেই পারে। হল অর্থ আবার বৈঠকঘর। সিনেমা হল আবার অন্য একধরনের ঘর। আরবিতে তিন কালের এক কালকে বুঝাতে হাল শব্দ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফলে হাল অর্থ দাড়ায় অবস্থা, দশা, বর্তমান কাল। আর এখন হালকাল মানে করোনাকাল। এই হালকাল গরীবকে আরও গরীব করে তুলছে। এই হালকাল আমদানি নির্ভর মানসিকতাকে চ্যালেঞ্জ করে প্রত্যেক জাতিকে স্বনির্ভর হওয়ার দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। বর্তমান পৃথিবীতে পাচটি দেশ চা উৎপাদন ও রপ্তানিতে আলোচনার জায়গা দখল করে আছে -- চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া। শ্রীলঙ্কা মওকা পেয়ে চা রপ্তানিদাম বৃদ্ধি করেছে আরামসে। বাংলাদেশও চা উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাময় জায়গা হয়ে উঠতে পারতো। খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু হালচাষের দিকে বাংলাদেশের বিশেষ নজর নেই।
মুখে মুখে শুনে আসছি রাবন খুব অত্যাচারী রাজা ছিলেন। আসলে শয়তান না থাকলে ফেরেশতা হয়ে উঠার সুযোগ থাকে না। তাই ইতিহাসে একজন শকুনির প্রয়োজন একজন কৃষ্ণ মুরারি ( মুর+অরি) প্রতিষ্ঠা করার জন্যে। মুর নামক দৈত্যকে কৃষ্ণ বধ করেছিলেন তাই তিনি কৃষ্ণ মুরারি। মায়াসীতা দ্রৌপদী নাম ধারন করে পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন। তার আগমন মানে হস্তিনাপুরের পাশাখেলা। আর হস্তিনাপুরের পাশাখেলা মানে কুরুক্ষেত্র। আর কুরুক্ষেত্র মানে নিষাদ আর ব্রাহ্মণ্যবাদের দ্বন্দ্ব রেখা, কুরুক্ষেত্র মানে রক্তের বন্যা।
বলছিলাম রাবনের কথা। রাবন ব্রাহ্মণদের কাছ থেকেও খাজনা নিতেন।ব্রাহ্মণরা হুজুর টাইপের মানুষ। দোয়া দরুদ তপ জপ করা যাদের কাজ। তারা খাজনা দিবে কোথা থেকে। খাজনা দিতে অক্ষম ব্রাহ্মণদের কাছ থেকে রাবন রক্ত নিতো, নিয়ে মাটির পাত্রে সংগ্রহ করতো।
ব্রাহ্মণরা অভিশাপ দিলো-- এই মাটির পাত্র যেখানেই রাখা হবে সেখানেই অভাব অনটন দেখা দিবে। রাবন জানতো ব্রাহ্মণদের অভিশাপ সত্য হবে। তাই সে রক্তভরা মাটির পাত্র মিথিলার রাজা জনকের রাজ্যে রেখে আসে রাতের অন্ধকারে। জনকের রাজ্যে অভাব দেখা দেয়। জনক রাজা অভাব থেকে পরিত্রাণের জন্যে বিধান সভার সাহায্য প্রার্থনা করে। বিধান সভা তাকে হালচাষের পরামর্শ দেয়।রাজা জনক হালচাষ করতে গিয়ে বাচ্চা সীতার দেখা পায়।সীতা মানে তাই হলরেখা।
জনক রাজার হালচাষের বিষয়টি মেটাফর হিসাবে নিলাম।অর্থাৎ রহস্যে ভরপুর এই বসুন্ধরার রহস্যময় ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দিয়ে থাকে কৃষি কাজের প্রতি দুর্যোগকালে বিশেষ নজর দিতে। দুর্যোগকালে কেন, সব কালেই কৃষি কাজের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া আবশ্যক। আজকের এই করোনাবাহী বিমান পৃথিবীর সব দেশের এয়ারপোর্টগামী বিমানের হতধী অবস্থার ব্যালেন্সশিট। গার্মেন্টস শিল্প কাপড় উৎপাদন করতে পারবে। কিন্তু খাবার উৎপাদন করবে কে? সো কল্ড ইন্ডাস্ট্রি প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান করতে পারবে, আবার তাদেরকে পোটেনশিয়াল থ্রেটেও রাখবে দিনের পর দিন যাতে তাদের মেরুদণ্ড নরম লেকলেকে হয়ে উঠে, যাতে তারা কোনোকালে ত্রান নেয়ার যোগ্যতা না হারায়।
ইন্ডাস্ট্রির বিরোধিতা করছি না। ইইন্ডাস্ট্রির বিরোপন মৃতভাস নিয়ে কথা বলছি মাত্র।
করোনা ভাইরাস টেস্ট করা হচ্ছে মলিকুলার ডায়াগনস্টিক টেস্ট পদ্ধতিতে যার প্রধান প্রযুক্তি রিয়েল টাইম পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন ( RT-- PCR)। আরও আছে 'পয়েন্ট অব কেয়ার' কিট ও ডিভাইস, যেগুলোকে সাধারণত বলা হয় র্যাপিড টেস্ট।
আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার হৃদপিণ্ড বলা হয় ডায়াগনস্টিক টেস্টিংকে। ডায়াগনস্টিক কিট ও ম্যানুফেকচারিং বায়োটেক ইন্ডাস্ট্রির প্রধান কারিগর মূলত লাইফ সাইন্স গ্রাজুয়েট।
মেডিকেল ডিভাইস ইন্ডাস্ট্রি অবশ্যই সময়ের দাবি। এর মানে ত এই নয় যে লুঙ্গি খুলে টুপির ব্যবস্থা করতেই হবে।
আমরা লুঙ্গি খুলে টুপির ব্যবস্থা করছি কিনা তা উপলব্ধি করার জন্যে কয়েকটি গুগল টাইপ ইনফরমেশনই যথেষ্ট।
আয়ুর্বেদ ও ইউনানি পদ্ধতির চিকিৎসায় পাকা ফল ল্যাকজেটিভ, রোচক ও টনিক বা বলকারকরূপে ব্যবহৃত হয়। রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে পাকা আম এমনকি কাঁচা আম মহৌষধ। কচি পাতার রস দাঁতের ব্যথা উপশমকারী। আমের শুকনো মুকুল পাতলা পায়খানা, পুরনো আমাশয় এবং প্রস্রাবের জ্বালা-যন্ত্রনা উপশম করে। জ্বর, বুকের ব্যথা, বহুমূত্র রোগের জন্য আমের পাতার চূর্ণ ব্যবহৃত হয়।
আজকাল কত ধরনের আমের নাম আমরা শুনতে পাই। কিন্তু কয়েকপ্রকার আম দেখতে পাই। বদরুল আসমার,রত্না, বেনারসি ল্যাংড়া, হিন্দি, খান বিলাস, সুন্দরী, বৃন্দাবনি, বাতাসা,বাদশা, চোষা, দুধ কুমারী, দুধ কুমার, মাধুরী, কৃষ্ণকলি, কলম সুন্দরী, হুসনে আরা, জামাই পছন্দ, গোপালভোগ,আমরুপালি, ফজলি, নীলাম্বরী।
নীলাম্বরী নাম শুনলেই কেমন রাধা রাধা একটা ফিল আসে। এক সময় এতো নামের খবর বাংলার মানুষ জানতো না। কিন্তু আমমাখা দুধভাত দারুন প্রিয় এই ভারতবর্ষের মানুষের কাছে। জামে যেনো গাছে একখণ্ড মেঘ এসে জমা হতো। এখন মাতৃগাছ মাতৃভূমি থেকে দিনে দিনে উধাও হয়ে যাচ্ছে। মাতৃভূমিতে ঠাই করে নিচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের জ্বালানি গাছ, কাঠগাছ। কাঠগাছ অবশ্যই আমাদের প্রয়োজন। আমরা কেন ভুলে যাই মাতৃগাছও কাঠগাছ। কাঠাল গাছের কাঠ খুবই ভালো। মাতৃগাছগুলো যেনো একের ভেতর পাচ।
নিজস্ব প্রজাতির ধান ছিল আমাদের। চীনা ভাষার Ou-liz শব্দটি আরবিতে Oruz ও গ্রিক ভাষায় Oryza হয়ে শেষে Ritz ও Rice হয়েছে। ধান বা ধান্য শব্দের উৎপত্তি অজ্ঞাত। চামারা, বাশিরাজ,গাঞ্জিয়া, বাশফুল, রাতা বোরো, আঁশযুক্ত লাল বিরুই,হালকা আঁশযুক্ত লাল বিরুই,নুনিয়া, কালো জিরা, চিনিগুড়া, তুলসীমালা,বোনোতোষ, পাইজামসহ প্রায় ২৫০ প্রজাতির ধান ছিল আমাদের নিজস্ব। পাইজাম ধানের গন্ধে মন ব্যাকুল হয়ে যেতো। যদিও পাইজাম দেশী কিনা এই নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। বলা হয়ে থাকে পাকিস্তানের প, মালেশিয়ার ম, জাপানের জ থেকে পাইজাম নামকরণ করা হয়েছে।
নিজস্ব ধান ত দূরের কথা, আমাদের যারা কৃষক তারা আর কৃষিকাজ করতে রাজি না। তারা কৃষিকাজ ছেড়ে ডায়বেটিস কারখানায় কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। কৃষকের সন্তান আজ শিক্ষিত। শিক্ষিত সন্তান আজ বাবার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বাবাকে কৃষিকাজ করতে দিচ্ছে না।বাবাও চাইতো সন্তান শিক্ষিত হোক, কুলুর বলদ বা কলুর বলদ জীবন থেকে সে নিস্তার পাক অথবা এমন কলুর বলদ জীবনে যেনো তার সন্তানকে না থাকতে হয়।
দেশী তেল পেশাই যন্ত্রকে ঘানি, ঘানিযন্ত্র, ঘানিকল বলা হয়। অর্থাৎ যে যন্ত্রে সর্ষে বা সেরকম কোনো তৈলবীজকে নিষ্পেষণ করে তেল ও খোল আলাদা করা হয়। "তৈল নিষ্পেষণ" একটি প্রাচীন জীবিকা। এই পেশার লোকেদের বলা হয় কলু।
ঘানি কাজ করে ঘূর্ণন দ্বারা। সাধারণতঃ ঘানি টানবার জন্য বলদ ব্যবহার করে। অর্থাৎ ঘানি ঘূর্ননের জন্যে কলু যে বলদ ব্যবহার করে তাই "কলুর বলদ"। সারাদিন একটানা ঘানি টানা যার কাজ। কলুর বলদের অনেক সময় চোখ বাঁধা থাকে। ঘানি টানা খুব পরিশ্রমের কাজ। তাই আগেকার দিনে সশ্রম কারাদন্ডের বন্দীদের দিয়ে ঘানি ঘোরানো হত। তাই থেকে জেলে যাওয়াকেই অনেক সময় জেলের ঘানি ঘোরানো বলা হয়।
আমাদের কৃষক এই কলুর বলদ জীবন থেকে নিস্তার পেয়েছি কিনা পরিপূর্ণভাবে এই কথা ভাবনাতে আসার আগে চোখের সামনে ভেসে উঠে কালভার্টে ব্রিজ বিল্ডিংমুখী উন্নয়নের পতপতে পতাকা। তবে আজকের দিনের এই করোনাবাহি বিমান আমাদেরকে এমন দেশে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে যেই দেশ নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থার প্রত্যেকটি ধাপকে গতিশীল করার প্রয়াস জানায়।
সৌদি সরকার ৫০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে জর্ডান ও মিশর সীমান্তে লোহিত সাগর ও আকাবা উপসাগরকে কেদ্র করে দশ হাজার দুইশো ত্রিশ বর্গমাইলের 'নিয়ম' প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখতেই পারেন। এই মেঘাসিটির জন্যে মোহাম্মদ বিন সালমান হোয়াইতাত নামে বেদুঈন গোত্রের প্রায় বিশ হাজার লোককে উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। কিন্তু করোনাকালে মক্কা শরীফ বন্ধ, তেলের দাম নেমে আসছে। তেল আর মক্কার হজ্জ কাফেলা থেকে সৌদি সরকার সবচেয়ে বেশি আয় করে। অর্জিত আয় দিয়ে আমেরিকা থেকে আনা ভাড়াটে সৈনিক দিয়ে নিজেদের হেফাজতের কার্যপ্রক্রিয়া সম্পাদনা করে থাকে। এখন? এখন? এখন সৌদির রাজপরিবারের অবশ্যই ভাবনা তৈরি হবে ভাড়া করা মন্ত্র আর তন্ত্র দিয়ে ইরানের সাথে নিজেদের তুলনা করা যাবে না। রেজা শাহ পাহলভীর ইরান আর এখন নেই। এখনকার ইরান শিক্ষা চিকিৎসা সিনেমা স্বাস্থ্যে প্রায় নিজস্ব মন্ত্রে তন্ত্রে দীক্ষিত। ইরান হয়তো কিউবার মতো চিকিৎসক অন্য রাষ্ট্রের সেবার কাজে পাঠাতে পারছে না কিন্তু নিজেদের প্রয়োজন নিজেরা ফোলফিল ত করতে পারছে। এটাই সাফিসিয়েন্ট। সাফিসিয়েন্ট শব্দটির সাথে আমরা পরিচিত হতে পারে নাই বিধায় নদী হত্যা করে পুকুরে মাছ চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়ি যা কিনা বাংলা প্রবাদে গরু মেরে জুতা দান। সমস্যা নাই। গরু মেরে তার চামড়া দিয়ে জুতা ত বানিয়ে দিলেন। তাও কম কী!?
ফসল বিষয়টি বরাবরই পরকালের মতো গোপন বলে মনে করানো হয়েছে আমাদেরকে। রেজাল্ট শব্দটি বুঝলেও ফসল শব্দটি আমরা বুঝি না। আমাদের ঠিক বোঝানো হয় নাই। সব বিষয়ে পাশ করলে রেজাল্ট ভালো হয়। কোনো একটি সাবজেক্টে অকৃতকার্য হলে রেজাল্ট খারাপ। অথচ ফসল বলতে আমরা শুধু বুঝি ধান বা পাট অথবা সরিষা। ত্রিশ শতাংশ জমিতে আগে ধান হতো সাত থেকে আট মুন। তাও কৃষক কৃষিকাজ করতো, এখন ত্রিশ শতাংশে ধান হয় বিশ থেকে ত্রিশ মুন, এখন কৃষক কৃষিকাজ করে না। কিন্তু এই কথা ভুলে গেলে চলবে না আগে জমিতে একপ্রকার নাড়া হতো যা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যেতো, বর্ষাকালে আউশ ধান হতো, জলের সাথে সাথে বেড়ে উঠতো তার শরীর, এখন তা হয় না।
জমিতে বর্ষা শেষে প্রচুর মাছ হতো-- পুটি মাছ, হিং মাছ, মাগুর মাছ, জাগুর মাছ, লাডি মাছ, বাইম মাছ, কই মাছ,কাতলা মাছ,গুত্তুম মাছ,টেংরা মাছ,ইছা মাছ,বৈছা মাছ,বাশপাতা মাছ। এখন ক্ষেতে ত দূরের কথা নদীতেই মাছ নাই।বর্ষার জলে হালুক পাওয়া যেতো, পাওয়া যেতো শাপলা যা সবজি হিসাবে ধারুন পথ্যি।
কৃষক ধান ভাঙানোর পর চাল পেতো, পেতো কুরা, কুরা গরুর খাবার, পেতো চুহৈল যা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যেতো, গরু থেকে পেতো গোবর যা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হতো, ধানগাছ হয়ে যেতো বন, বন থেকে গরুর খাবার, চালকে দুইভাবে দেখা হতো-- হুদ চাল, মূল চাল।হুদ চাল দিয়ে গরুকে ঝাও করে খাওয়ানো যেতো, আবার হুদটালাও কৃষক ঘরে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। হুদটালা আর হুটকির ভর্তা খুবই জনপ্রিয় খাবার। পাট থেকে যে হুলা পাওয়া যেতো তা থেকে হতো জ্বালানি, পাটের ছোবরা থেকে হতো জ্বালানি। গরুর গু আবার জৈবসার। সরিষার গাছ জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হতো, সরিষা ভাঙানোর পর মানুষ পেতে নির্ভেজাল খাটি হুওরার তেল,পেতে হৈল। হৈল আবার গরুর খাবার। বর্ষায় কচুরিপানা ভেসে আসতো ক্ষেতে। ক্ষেতে জল টইটম্বুর করতো। কচুরিপানা দিয়ে গরুর খাবার হয়ে যেতো। বর্ষা শেষে ক্ষেতেই পড়ে থাকতো কচুরিপানা। তাকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যেতো আবার জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করা যেতো।
প্রতি বছর ঘরের চালে ছই গাছ বড় করে তুলতেন কৃষানি। প্রথমে ছই রান্না করে খাওয়া হতো, পরে পাকনা ছইয়ের অল্প কিছু অংশ বীজ হিসাবে রেখে বাকি অংশ ভেজে ভেজে সারা বছর খাওয়া হতো, বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে। টানা বৃষ্টি হতো,দশ থেকে এগারো দিনব্যাপী বৃষ্টি। আর এখন? এখন তো পুলাফানের মুতের লাহান বৃষ্টি হয়, দশ বিশটা পুলার মুত একসঙ্গে করলে যে পানি হয় সারা বছরে সেই পরিমান বর্ষাও হয় না। কেন এমন হলো কেন এমন হয়?
এক লোক অসুস্থ হয়ে গেলেন। তিনি আর কোনোভাবেই সুস্থ হচ্ছেন না। না, তার করোনা হয়নি। তার কোনো প্রকার রোগও পাচ্ছে না ডাক্তার। দিনে দিনে রোগী যখন মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে তখন হঠাৎ একজন ডাক্তার নোটিশ করলে রোগীর মুখে মারাত্মক দুর্গন্ধ হচ্ছে। ডাক্তার ভাবলেন রোগীর দাতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। পরীক্ষা করে দেখা গেলো চাফার দাতের মাড়ি দিয়ে ফুইজ বের হচ্ছে (ডেন্টাল প্লাক হলো ব্যাকটেরিয়া কিংবা অন্যান্য জীবাণু দ্বারা তৈরি এক ধরণের আঠালো পদার্থ যা দাঁতের চারপাশে লেগে থাকে। এঁকে ব্যাকটেরিয়ান প্লাকও বলা হয়ে থাকে।
মূলত Streptococcus Mutants, Lactobacilli ব্যাকটেরিয়ার ফলে ডেন্টাল প্লাক সৃষ্টি হয়। ডেন্টাল প্লাক ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তৈরি হয়ে থাকে, এটি দাঁতের সাথে লেগে থাকে, যদি এটি ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পরিষ্কার না হয় তবে তা ধীরে ধীরে শক্ত হতে থাকে এবং ৯ থেকে ২১ দিনের মধ্যে এটা পাথরের রুপ ধারন করে মাড়ির সঙ্গে শক্তভাবে লেগে থাকে। ডেন্টাল প্লাক পাথরের রুপ ধারন করার পর মাড়িতে ব্যাথা অনুভব ও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া এবং দাঁত শিরশির করে। এই অবস্থাকে বলা হয় জিনজিভাইটিস বা Inflammation of the gingiva। জিনজিভাইটিস হওয়ার পরও যদি সচেতন না হয় তবে পরবর্তীতে মাড়ি লাল হয়ে যাওয়া, মাড়ী দিয়ে রক্ত পড়া, মাড়ি ও দাঁতের সংযোগস্থলে পুজ হওয়া, মুখে বিশ্রী গন্ধ, দাঁত নড়বড়ে হয়ে যায় এবং পরে যায়। এই অবস্থাকে পেরিওনটাইটিস বলা হয়ে থাকে। এসব মাড়ির রোগ মূলত যারা দাঁতের প্রতি যত্নশীল না, যাদের আঁকাবাঁকা দাঁত এবং গর্ভবতী মহিলাদের হরমোন পরিবর্তনের কারণে বেশী হয়ে থাকে)। এই ফুইজ রোগীকে ভালো থাকতে দিচ্ছে না। রোগীর দাতের চিকিৎসা করা হলো। রোগী আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে। সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়া কাজকর্মে মনোযোগ দেন। এখন প্রশ্ন যদি করি-- সমস্যা ছিল শরীরের একটি কেন্দ্রে-- তাহলে কেন সারা শরীর অসুস্থ হয়ে গেলো? উত্তর আসবে প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রত্যেকের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত,সম্পর্কিত। আমরা আমাদের বানানো রাসায়নিক বিষক্রিয়া প্রকৃতির উপর প্রয়োগ করে প্রকৃতির খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট করে ফেলেছি। ফলে প্রকৃতিতে দেখা দিচ্ছে ভয়ঙ্কর বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
অথচ একটা কৃষক পরিবার ছিল পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যের আখড়া হিতকারী খাদ্যের আধার। ফলে ডাক্তার বিষয়টি তাদের কাছে বরাবরই অচেনা ছিল।মৃত্যুই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় রোগ।
আর এখন?
প্রত্যেকটি ঘর একটা ভাসমান হাসপাতাল। ঘরে ধান আসতেছে ঠিকই কিন্তু ফসলের যে পরিপূর্ণ আইডিয়া তা আর নেই। অত্যাধুনিক বিষক্রিয়া, ফার্টিলিটি বৃদ্ধির প্রকল্পে বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ব্যবহারের ফলে মাটির গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে। মাটিকে বাচতে দিচ্ছে না মানুষ। মাটি কিন্তু গাছকে বাচায় না, গাছ মাটিকে বাচায়।সাধারণ একটি বিষয় নোটিশ করলেই বিষয়টি উপলব্ধ হওয়ার কথা। নদীর ভাঙন রোধ কল্পে গাছ লাগানো হয় মাটির শরীরে।মরুভূমিতে কেন গাছ জন্মে না? সহজ কথা, মরুভূমি-মাটির মিন্সট্রেশন বন্ধ।ফলে স্বামীর মিললেও বাচ্চা হবে না তার।
কোনো মাটি যখন তার উর্বরতা শক্তি হারায় তখন সে কাঁটা গাছের জন্ম দিয়ে এসওএস বার্তা দিয়ে থাকে। গাছ প্রতিনিয়ত দিনের আলো ব্যবহার করে সূর্য থেকে খাবার সংগ্রহ করে শেকড় দিয়ে মাটির সৈনিকদের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়, ফলে মাটির সৈনিকরা বেচে থাকে, মাটি থাকে নিরাপদ সুস্থ। আর মানুষ? এই গাছ, গাছের আবাসভূমি জঙ্গলকে, মাটিকে ধর্ষণ করে চলছে, জলকে ধর্ষণ করে চলছে। মাটি জল মামলা করবে কার কাছে? জলাভূমির দেশেও জল কিনে খেতে হয়। এটাই নাকি উন্নতি। এটা উন্নতি নয়। এটা গরু মেরে জুতা দান।
কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশের জাতীয় কবি।জাতীয় কবি বলে তার রচনা কিন্তু জাতীয় সঙ্গীত নয় এখানে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল অবদানে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি হলেন। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠক শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় পতাকা থেকে দেশের মানচিত্র বাদ দিয়ে জাতীয় পতাকা চূড়ান্ত করা হয়, 'আমার সোনার বাংলা' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা যা জাতীয় সঙ্গীত, 'চল চল চল' কাজী নজরুল ইসলামের রচনা যার প্রথম একুশ লাইন জাতীয় কুচকাওয়াজ সংগীত হিসাবে গৃহীত হয়।
২৩ চৈত্র ১৩২৭ সালে নজরুল ইসলাম কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুর গ্রামে আসেন। তিনি এখানে ৭১ দিন অবস্থান করেন। ১২০ কবিতা ও ১৬০ গান রচনা করেন বলে মনে করা হয় দৌলতপুর থাকা অবস্থায়।
দৌলতপুরের মেয়ে সৈয়দা আসার খানম। বাবা নাম রেখেছিলেন দুবরাজ, সবাই ডাকত দুবি।মামারা বলত, যুবরাজ আর যুবি। মুন্সি আব্দুল খালেক অকালেই যুবি আর তার ভাইবোনকে রেখে জান্নাতের সুখ ভোগ করার জন্যে চলে যান।ফলে সৈয়দা আসার খানম ও তার পরিবারের দেখভালের দায়িত্বভার ভর্তায় খানদের উপরে বিশেষ করে আলী আকবরের উপরে।
আলী আকবর নজরুল ইসলামকে দৌলতপুর নিয়ে আসেন। যুবিকে দেখে নজরুল ইসলামের মন উতলা হয়ে উঠে। যুবিকে প্রেমের প্রস্তাব দেন তিনি। যুবির নাম দিয়ে দিলেন নার্গিস। নজরুলের প্রিয় কবি নাকি হাফিজ। হাফিজের কবিতায় নাকি নার্গিস ফুলের কথা আছে। তাই সৈয়দা আসার খানমের নাম দিলেন তিনি নার্গিস। কিন্তু নার্গিস নিয়ে যে পৌরানিক কাহিনি বিদ্যমান তা তো খুবই হৃদয়বিদারক। নার্সাসিসের করুন পরিনতি নার্গিস। অর্থাৎ নার্সাসিস নিজপ্রেমে এতো ডুবে গিয়েছিলেন যে মুখ ডুবিয়ে জল পান করার কথা ভুলে যায় সে। ফলে তৃষ্ণায় বুক ফেটে মারা যায় সে। তার মৃতদেহ থেকে নার্গিসফুল। এই কাহিনি কি কাজী নজরুল জানতেন, নাকি জাদুকাব্য রচনার স্বার্থে তা তিনি মিউট করেছিলেন!?
জাদুকাব্য রচনা করে নার্গিসকে প্রেমিকা করে তুললেন এবং বিয়ে করলেন। বিয়েরাতে চলে গেলেন শ্রাবন মাসে আসবে বলে। শ্রাবন মাস আসে শ্রাবন মাস যায় কিন্তু আমাদের কাজীদা আর আসেন না নার্গিসফুলে ঘ্রানমুগ্ধ পথিক হতে।
দৌলতপুর গ্রাম থেকে চলে যান কুমিল্লা। সেখানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাথে সাথে পুরোদমে চলে 'দোলনচাঁপা' লেখার প্রস্তুতি (দোলনচাঁপার আদি নিবাস নেপাল ও ভারতের হিমালয় অঞ্চল। এটি কিউবার জাতীয় ফুল। এটি ব্রাজিলে প্রথম নেয়া হয় ক্রীতদাস যুগে; যেখানে ক্রীতদাসেরা দোলনচাঁপা গাছের পাতাকে তোষকের মত ব্যবহার করতো। বর্তমানে ব্রাজিলে এর ব্যাপকতার কারণে একে রাক্ষুসে আগাছা হিসেবে অভিহত করা হয়। হাওয়াই অঞ্চলেও একে আগাছা গণ্য করা হয়। স্পেনীয় উপনিবেশ আমলে নারীরা এই ফুলের মধ্যে গোপন বার্তা লুকিয়ে আদান প্রদান করতো)।
দুলির আরেক নাম দোলন।
প্রমীলার পিতার নাম বসন্ত কুমার সেনগুপ্ত। মায়ের নাম গিরিবালা সেনগুপ্তা। বসন্ত কুমার সেনগুপ্তের আরও দু’ভাই ছিলো। জগত কুমার সেনগুপ্ত তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা এবং ইন্দ্র কুমার সেনগুপ্ত তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা।
ইন্দ্র কুমার সেন তার স্ত্রী বিরজাসুন্দরী দেবীকে নিয়ে বসবাস করতো কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে। বসন্ত কুমার সেনের মৃত্যুর পর গিরিবালা দেবী তার মেয়ে দুলিকে নিয়ে দেবর ইন্দ্রকুমার সেনের আশ্রয় গ্রহণ করে।
ইন্দ্রকুমার সেনের স্ত্রী বিরজাসুন্দরী দেবীর মাতৃস্নেহে নজরুল অভিভূত হন। আর তার বড় ভাইয়ের মেয়ে আশালতা সেন দুলির গান শুনে বিমুগ্ধ হন কবি নজরুল।
কবি নজরুল তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘দোলনচাঁপা’ প্রমীলার নামে উৎসর্গ করেন। এটি ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে (আশ্বিন, ১৩৩০ বঙ্গাব্দ) আর্য পাবলিশি হাউস থেকে প্রকাশিত হয়।
বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট হয়ে যান প্রমীলা। ২৫ এপ্রিল ১৯২৪ নজরুল-প্রমীলা বিয়ে হয়ে গেলো। তখন প্রমীলার বয়স ১৬। তাই আহলে কিতাব অনুযায়ী নজরুল প্রমীলাকে বিয়ে করলেন। কারন সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুসারে বিয়ে করতে হলে মেয়ের বয়স হতে হবে ১৮।
আর নার্গিস?
তখনও শ্রাবন মাসের দিকে চেয়ে রইলেন। সৈয়দা আসার খানমের জন্ম ১৯০৪ সালে।নজরুল প্রমীলাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলেন হয়তো। নার্গিসের চোখে ঘুম নাই। নার্গিসের চোখের সমস্ত ঘুম কেড়ে নিলেন ধূমকেতু নজরুল। জেন্টেলম্যানকে আনার জন্যে আলী আকবর কলকাতায় গেলেন। জেন্টলম্যান আসলেন না। নার্গিস স্বয়ং গেলেন তাও তিনি আসলেন না। আলী আকবরের পীড়াপীড়িতে নার্গিস ভারতীয় লাইব্রেরির রাখাল আজিজুল হাকিমকে ১৯৩৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বিয়ে করে।আজিজুল হাকিমও নজরুলভক্ত একজন কবি। বিয়ের ৯ দিন আগে হলুদ খামে একটি চিঠি আসে নার্গিসের কাছ জেন্টলম্যানের পক্ষ থেকে। যেখানে তিনি বলেন," প্রেমের ভুবনে তুমি বিজয়িনী, আমি পরাজিত।আমি আজ অসহায়।"
এমন শান্তনু বানীও কি গরু মেরে জুতা দান নয়!? নজরুলের জন্যে সতেরো বছর ধরে অপেক্ষার পর অপেক্ষা করতে করতে সৈয়দা আসার খানমের চোখের জলে যে সাগর হয়েছে তার খবর একেবারে না নিয়ে আপনি মানবিক বিদ্রোহী সাম্যবাদী কবি হয়ে যাবেন? এতো সোজা? মেয়েটার স্বামী থেকেও স্বামীহারা। পারিপার্শ্বিক বাঙালি মধ্যবিত্ত মুসলিম সমাজ, চারপাশের নিমজ্জিত মানসিকতা সৈয়দা আসার খানমকে দিনের পর দিন সীতাগ্নি প্রশ্ন করে তার হৃদয়ে যে অগ্নিচুল্লি জ্বেলে রেখেছে তার দায় না মোচন করে আপনি মানবজাতির কান্ডারি হয়ে যাবেন? এতো সোজা!?
নার্গিসকে বিয়ে করার কয়েক মাসের মাথায় আপনি প্রমীলার প্রেমে পড়েন, আবার ফজিলাতুন্নেছার জন্যে আপনার হৃদয়ের হাহাকারের শেষ নাই, আবার নার্গিসকে চিঠিতে সান্ত্বনা নামক জুতা দিতেই থাকেন দিতেই থাকেন। গরু মারা গেলে যাক? কুলিকে কে ঠ্যালা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছে এই নিয়ে আপনার চোখে জল আসে, লিখে ফেলেন কুলি-মজুর কবিতা। আর একজন নারীকে স্বামী থেকেও স্বামীহারা করে দিলেন, আপনার হৃদয় এতটুকু কাপল না?
এমন তো নয় যে আপনার হৃদয়ে সেন্সর বলে কিছু ছিল না। আপনার হৃদয়ের সেন্সর আপনার ধীমান কল্পনা শক্তির প্রখরতা আকাশের উজ্জ্বল নীহারিকাপুঞ্জ থেকেও স্পষ্ট স্বচ্ছ উন্মথন। আপনার ঐকবাদন মহিমাধরা চিত্তের সন্ধান পাই 'রিক্তের বেদন' গ্রন্থের ' স্বামীহারা' গল্পে। এই গল্পে একজন স্বামীহারা নারীর হৃদয়বেদনা কলেরা মহামারীর রূপক-কথার মাধ্যমে আপনি উপমা ইতিহাস সময়-বাস্তবতার নিষ্ঠাবান আচরন প্রয়াসে উপস্থিত কমান্ডো ধ্যানে উপস্থাপন করে গেলেন--
"এ হতভাগিনীকে জ্বালিয়ে কার মঙ্গল সাধন করছেন মঙ্গলময়? তাই ভাবি -- আর,ভাবি-- কোন কূলকিনারা পাই না,এর যেন আগাও নেই, গোড়াও নেই। কি ছিল-- কি হ'ল,-- এ শুধু একটা বিরাট গোলমাল!"
এই বিরাট গোলমালে আমি নজরুল-নার্গিস দেখতে পাই। দেখতে পাই নার্গিসফুলের ম্লান হয়ে যাওয়ার চিত্র।রিক্তের বেদন মোট ৮টি গল্প নিয়ে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রকাশক ওরিয়েন্টাল প্রিন্টার্স এন্ড পাবলিশার্স লিমিটেড, কলিকাতা।
স্বামীহারা গল্পে আত্মহত্যার বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন নজরুল বিধবা নারীর জবানিতে (কেরোসিনে পোড়া, জলে ডোবা, গলায় দড়ি দেওয়া, বিষ খাওয়া, মেয়েদের জাতটার যেন রোগের মধ্যে দাঁড়িয়েছে! আমার কপাল পুড়লেও আমি ও- রকম ' হারামি মওয়াত'কে প্রাণ থেকে ঘৃণা করি)। কারন নার্গিস আত্মহত্যা করতে পারে এমন বার্তাও নজরুলের কাছে ছিলো।
কপালকুণ্ডলা (কপালকুণ্ডলা সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত দ্বিতীয় উপন্যাস। সম্ভবত এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক রোমান্টিক উপন্যাস। ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। বাংলা সাহিত্যের একটি কাব্যধর্মী উপন্যাস কপালকুণ্ডলা) উপন্যাসের যোগসাধক সন্ন্যাসী কাপালিক মনে হয় আপনাকে, মনে হয় না সপ্তগ্রামনিবাসী যুবক নবকুমার। কারন নার্গিসের লাশের উপর দিয়ে রচনা করেছেন আপনি সাহিত্য। মৃত মনের ভার বহন করতে নার্গিসকে কত কষ্ট যাতনা অনিদ্রা অনাহার বয়ে যেতে হয়েছে আপনার জেনেও না জানার উপায়ান্তর রূপান্তর ভাবান্তর সত্যিই আপনাকে একজন সাহিত্যের কাপালিকচর বলে দৃশ্যমান করে তুলে সময়নদীর জলে।আপনি পেয়েছেন বেদনা মানিক আর সৈয়দা আসার খানম পেয়েছে বেদনাঝড়।
তবে একজন কাপালিক হিসাবে আপনি স্বার্থক। নতুবা বাঙালি জীবনের কালিক মহামারী এতো সুন্দর করে কেমন করে উপস্থাপন করতে পারেন স্বামীহারা গল্পের ভাষা-বয়ানে-- ২০২০ সালে এসে পৃথিবী যখন থেমে যায় করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় তখনো আপনি প্রাসঙ্গিক--মনে হয় না আপনি হুজুগের, মনে হয় আপনি যুগের মানুষ।
হ্যাঁ, আমি কাজী নজরুল ইসলাম (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ –১২ ভাদ্র ১৩৮৩) সম্পর্কে বলছি। তিনি স্বামীহারা গল্পে দেখালেন কলেরা রোগে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। তবে আজকের দিনের মতো এতো মিডিয়া ছিল না তখনকার আমলে। আজকের জীবনের মতো এতো গতি ছিল না মানুষের জীবনে। তবে কলেরা মহামারী গনহারে মৃত্যু বাঙালি জীবনে নতুন কিছু নয়। গ্রামের পর গ্রাম উজার হয়ে যেতো মহামারীর যমদূতগ্রাসে।
"যখন সবাই চলে গেল গ্রাম ছেড়ে, তখন গেলুম না কেবল আমরা, উনি বললেন " মৃত্যু নাই, এরূপ দেশ কোথা যে গিয়ে লুকুব?" সবাই যখন মহামারীর ভয়ে রাস্তায় চলা পর্যন্ত বন্ধ করে দিল, তখন কোমর বেঁধে উনি পথে বেরিয়ে পড়লেন, বললেন " এই ত আমার কাজ আমায় ডাক দিয়েছে।"
স্বামীহারা গল্পের আইন পড়ুয়া যুবক আর্তের সেবায় ঘর থেকে বের হয়ে আর ঘরে ফেরেনি চিরস্থায়ীভাবে, চিরস্থায়ীভাবে মাটির ঘরে চলে যায় যুবক। বিধবার সময়ও শেষ হয়ে আসে, 'শরাবান তহুরা'-ভরা পেয়ালা হাতে তার স্বামী তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে চিরস্থায়ী মাটির ঘরে।
তাই বলছি, বাঙালি জীবনে মহামারী নতুন কোনো ঘটনা নয়। বহু মৃত্যু বহু অত্যাচার সীমাহীন শোষনের রাহুগ্রাস সহ্য করে আজকের বাঙালি। তাই করোনা ভাইরাসে ভয় পেয়ে কলকারখানা বন্ধ করে অনাহারে দিনাপাত করার মানসিকতা বাঙালির রক্তে থাকার কথা নয়। ব্যাঙের কখনো সর্দি হয়েছে বলে কেউ বলতে পারবে না!
পৃথিবীর প্রথম রাজা বেন। বেনের পিতার নাম অঙ্গ। অঙ্গ বিয়ে করে যমকন্যা সুনীথাকে। সুনীথার পুত্র বেন। ঋষিরা রাষ্ট্রের সমস্ত নিয়ম কানুন সংবিধান সংসদ প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে চালনা করে। তারা মনে করে বেন রাজা হবে।তাই সেই রাজা হয়। বেন রাজা হয়ে নিজেকে ইশ্বর ভাবতে শুরু করে। তাকে পুজা দেবার আহবান জানায়। ঋষিরা ক্ষেপে যায়।ফলে বেনকে মরতে হলো। হত্যা হলো বেন।
বেনের দুই পুত্র। পৃথ্বী। নিষীদ।
পৃথ্বী দেখতে সুন্দর।
নিষীদ ঋষিদের চোখে আগলি। তাই নিষীদকে মনে করা হলো বেনের পাপের ফল। আর পৃথ্বী ঋষিদের ইচ্ছার ফসল। নিষীদ মানে বসে থাকা।ঋষিদের কথা মতো নিষীদ বসে থাকে। তাকে কোনো প্রকার কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়নি। অবশেষে তাকে বিন্ধ্যপর্বতের শৈলভূমিতে নির্বাসন দেয়া হলো চিরতরে। এই পর্বতে পশুপাখি শিকার করে দিনাপাত করতে থাকে নিষীদ। সময়ের পরিক্রমায় তার বংশ বিস্তার লাভ করে। নিষীদ থেকে নিষাদ।
নিষাদদের প্রধান জীবিকা পশুপাখি শিকার। বাঘ যেমন ইতর প্রানি খেয়ে বেচে থাকে, নিষাদরাও তাদের প্রয়োজনীয় পশুপাখি খেয়ে বেচে থাকে।
একদিন এক নিষাদ খাবারের সন্ধানে বের হয়। কোচবক পেয়ে যায় ব্যাধ। সাথে সাথে ক্রৌঞ্চকে তীরবিদ্ধ করে নিষাদ। মারা গেছে ক্রৌঞ্চ। তাই সঙ্গী-বিরহে আকুল হয়ে কাদছে ক্রৌঞ্চী!
নারদের কথা শুনে ডাকাত হয়ে যায় বাল্মিকী। বল্মীক মানে উইয়ের ঢিবি। বল্মীক থেকে বাল্মিকী। তিনি তখন সোলেমান নবীর মতো অথবা নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মতো দিব্যজ্ঞানের অধিকারী। কোচবকের বিরহব্যথা সে শুনতে পায়। পাখির ব্যথা যেন তার ব্যথা হয়ে গেলো। সাথে সাথে অভিশাপ দিলো। কী অভিশাপ? মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাঃ ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।
এই অভিশাপে বলা হলো নিষাদরা কোনোদিন প্রতিষ্ঠা পাবে না। এই অভিশাপ বৈষম্যমূলক। এই অভিশাপ আর্যদের অন্তরে লালিত নিষাদদের প্রতি রাগের হিংসার বহিঃপ্রকাশ।
আর্যদের তিনটি প্রধান হাতিয়ারের মধ্যে ভাষা বা সাহিত্য একটি। যেখানে সম্ভব হয়েছে সেখানেই তারা নিষাদদের বিরুদ্ধে এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে। তাতে পৃথিবীতে মানুষ সম্প্রদায়ের বিশেষ কোনো উপকার হয়নি, ক্ষতি ছাড়া।
নিষাদদের প্রতি আর্যদের এই বৈষম্যমূলক আচরন পৃথিবীর ইতিহাসে অবশ্যই ভয়ঙ্কর মারী। প্লেগ-সার্স-মার্স-কলেরা-স্প্যানিশ ফ্লুর মতো নিষাদের প্রতি আর্যদের হিংসাত্মক আচরনও মহামারী। স্প্যানিশ ফ্লু পৃথিবীর প্রায় পাচ কোটি মানুষের প্রান নিয়ে নেয়। আর নিষাদের প্রতি আর্যদের হিংসাত্মক আরচণের মারী পৃথিবীর কতশত মানুষের প্রান যে নিয়ে নিয়েছে তার হিসাব পৃথিবীর মানুষের কাছে থাকার কথা না। কারন এখানে প্রেমের নামে অপ্রেমের মাহফিল চলে। করোনার দিনেও জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের নারকীয় ইতিহাস রচনা করে অনেকের মতে উন্নত জীবনের ধারক আমেরিকার পুলিশ। করোনাকালেও তুরস্ক লাল চোখ নিক্ষেপ করে লিবিয়ার দিকে,শিরোনাম হয় "লিবিয়ায় এরদোয়ান না সিসি", সাগর দখল নিয়ে চলে চীন ইন্দোনেশিয়া মালেশিয়ার মধ্যে মোরগ লড়াই। এই মোরগ লড়াইয়ে আমেরিকা হতে চায় মাতব্বরি মহাজন। অমাবস্যার অন্ধকার যেমন চোর ডাকাতদের সুবিধার সময়, করোনাকালের এই অন্ধকারও 'পলিটিক্যাল ড্রিম' বাস্তবায়নের উপযুক্ত সময় মনে করছে পৃথিবীর উদীয়মান ক্ষমতায়ে বুজুর্গ হযরতরা।
এমন দিনে হযরতদের মোরগ লড়াইয়ের গ্রিল ফিতায় মনোযোগ না দিয়ে আমার মতো বিশুদ্ধ বেকার কবি ইউটিউবে পানি খাওয়ার উপকারিতা বিষয়ক ভিডিও দেখি-- জল বসে খেতে হয়, জল হজমে সহযোগিতা করে,মাঝেমধ্যে কুসুম গরম জল পান করা ভালো, ঢকঢক করে জল পান করা ঠিক না, খাবারের সময় জল খাওয়া ঠিক না, হালকা গরম জল রক্তের কোলেস্টেরল স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে, সকালে ঘুম থেকে উঠে দুই গ্লাস জল পান করা অত্যন্ত উপকারী, স্নানে যাওয়ার আগে এক গ্লাস জল রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ইত্যাদি ইত্যাদি। পলিটিক্যাল ড্রিম বাস্তবায়নকারী গোষ্ঠীও চায় পৃথিবীর ভেতরে পৃথিবীর খবরটা যেন না জানি। কবিরা কবিতা লিখবে আকাশ বাতাস নদী জল বর্ষা পাখির পালক নিয়ে, রাজনীতির গোপন কথা থেকে যাক আলিফ লায়লা হয়ে। তাই আমিও মনে মনে হাসি আর সুনির্মল বসুর 'হবুচন্দ্রের আইন' কবিতাটি পড়ি
"হবুচন্দ্র রাজা বলেন গবুচন্দ্রে ডেকে--
"আইন জারী করে দিও রাজ্যেতে আজ থেকে,
মোর রাজ্যের ভিতর--
হোক্ না ধনী, হোক্ না গরীব, ভদ্র কিংবা ইতর,
কাঁদতে কেহ পারবে নাক, যতই মরুক শোকে--
হাসবে আমার যতেক প্রজা, হাসবে যত লোকে।
সান্ত্রী-সেপাই, প্যায়দা, পাইক ঘুরবে ছদ্মবেশে,
কাঁদলে কেহ, আনবে বেঁধে, শাস্তি হবে শেষে।"
বলে গবু- "হুজুর--
ভয় যদি কেউ পায় কখনো দৈত্য, দানা জুজুর,
কিম্বা যদি পিছলে পড়ে মুণ্ডু ফাটায় কেহ,
গাড়ীর তলে কারুর যদি থেঁতলিয়ে যায় দেহ;
কিম্বা যদি কোনো প্রজার কান দুটি যায় কাটা,
কিম্বা যদি পড়ে কারুর পিঠের ওপর ঝাঁটা;
সত্যিকারের বিপন্ন হয় যদি,
তবুও কি সবাই তারা হাসবে নিরবধি ?"
রাজা বলেন- "গবু-
আমার আইন সকল প্রজার মানতে হবে তবু।
কেউ যদি হয় খুন বা জখম, হাড্ডিতে ঘুণ ধরে,
পাঁজরা যদি ঝাঁঝরা হয়ে মজ্জা ঝরে পড়ে,
ঠ্যাংটি ভাঙে, হাতটি কাটে, ভুঁড়িটি যায় ফেঁসে,
অন্ধকারে স্কন্ধ কাটা ঘাড়টি ধরে ঠেসে,
কিম্বা যদি ধড়ের থেকে মুণ্ডুটি যায় উড়ে,
কাঁদতে কেহ পারবে নাক বিশ্রী বিকট সুরে।
হবুচন্দ্রের দেশে--
মরতে যদি হয় কখনো, মরতে হবে হেসে।"
পিটিয়ে দিলো ঢ্যাঁড়া গবু, রাজার আদেশ পেয়ে--
"কাঁদতে কেহ পারবে না আর, পুরুষ কিম্বা মেয়ে;
যতই শোকের কারণ ঘটুক হাসতে হবে তবু,
আদেশ দিলেন রাজাধিরাজ হবু;
রাজার আদেশ কেউ যদি যায় ভুলে,
চড়তে হবে শূলে।"
সেদিন হতে হবুর দেশে উল্টে গেল রীতি,
হররা-হাসির হট্টগোলে,
অট্টহাসির অট্টরোলে,
জাগলো তুফান নিতি।
হাসির যেন ঝড় বয়ে যায় রাজ্যখানি জুড়ে,
সবাই হাসে যখন তখন প্রাণ কাঁপানো সুরে।
প্যায়দা পাইক ছদ্মবেশে হদ্দ অবিরত,
সবাই হাসে আশে পাশে,
বিষম খেয়ে ভীষণ হাসে,
আস্তাবলে সহিস হাসে, আস্তাকুঁড়ে মেথর,
হাসছে যত মুমূর্ষরা হাসপাতালের ভেতর।
আইন জেনে সর্বনেশে
ঘাটের মড়া উঠছে হেসে,
বেতো-রোগী দেঁতো হাসি হাসছে বসে ঘরে;
কাশতে গিয়ে কেশো-বুড়ো হাসতে শুরু করে।
হাসছে দেশের ন্যাংলাফ্যাচাং হ্যাংলা হাঁদা যত,
গোমড়া উদো-নোংরা-ডেঁপো-চ্যাংরো শত শত;
কেউ কাঁদে না কান্না পেলেও,
কেউ কাঁদে না গাট্টা খেলেও,
পাঠশালাতে বেত্র খেয়ে ছাত্রদলে হাসে,
কান্না ভুলে শিশুর দলে হাসছে অনায়াসে।
রাজা হবু বলেন আবার গবুচন্দ্রে ডাকি,
"আমার আদেশ মেনে সবাই আমায় দিলে ফাঁকি ?
রাজ্যে আমার কাঁদার কথা সবাই গেল ভুলে,
কেউ গেল না শূলে ?
একটা লোকো পেলাম না এইবারে
শূলে চড়াই যারে।
নিয়ম আমার কড়া--
প্রতিদিনই একটি লোকের শূলেতে চাই চড়া।
যা হোক, আজই সাঁঝের আগে শূলে দেবার তরে--
যে করে হোক একটি মানুষ আনতে হবে ধরে।"
গবুচন্দ্র বল্লে হেসে চেয়ে রাজার মুখে,
"কাঁদতে পারে এমন মানুষ নাই যে এ মুল্লুকে;
আমি না হয় নিজেই কেঁদে আইন ভেঙে তবে
চড়ব শূলে, মহারাজের নিয়ম রক্ষা হবে।
কিন্তু একি, আমিও যে কাঁদতে গেছি ভুলে,
কেমন করে চড়ব তবে শূলে ?"
রাজা বলেন, "তোমার মত মূর্খ দেখি না-যে,
কাঁদতে তুমি ভুলে গেলে এই ক'দিনের মাঝে।
এই দ্যাখো না কাঁদে কেমন করে"--
এই না বলে হবু রাজা কেঁদে ফেল্লেন জোরে।
মন্ত্রী গবু বল্লে তখন, "এবার তবে রাজা--
নিজের আইন পালন করুন গ্রহণ করুন সাজা।"
বলেন হবু, "আমার হুকুম নড়বে না এক চুল,
আমার সাজা আমিই নেব তৈরি কর শূল !"
তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তিনিই বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তার বাবা মোহাম্মদ ইয়াসিন খান একজন মৌলভী ছিলেন। তার বাবার কাছ থেকে তিনি সর্বপ্রথম শিক্ষা বলতে কোরানের শিক্ষা লাভ করেন। তাজউদ্দীন আহমদ একজন কোরানের হাফেজ ছিলেন। তিনি ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বি এ (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন।
আবুল হাশিম( ১৯০৫- ১৯৭৪) ভারতীয় উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও ইসলামি চিন্তাবিদ ছিলেন। আবুল হাসিমের পিতা ছিলেন বর্ধমানের কংগ্রেসের বিধায়ক নেতা আবুল কাশেম। আবুল হাশিম বাংলাদেশের বামপন্থী বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরের পিতা।
আবুল হাশিম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ১৯৪৩ তাজউদ্দীন আহমদ রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হন।১৯৪৪ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলে সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সনদ ঘোষনা করা হয়।১১ এপ্রিল তাজউদ্দীন বেতারে ভাষন দেন। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।তাজউদ্দীন আহমদ হন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। অস্থায়ী সরকার ১৬ ডিসেম্বরে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত কলকাতা থেকে কার্য পরিচালনা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসলে তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাড়ান। তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সাবেক ঢাকা- ২০ আসন বর্তমান গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।তিনি বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় বাজেট পেশ করেন,প্রথম পাচশাল পরিকল্পনা প্রনয়ন করেন।
১৯৭২ সালের ৩০ জুন প্রথমবারের মতো ৭ শত ৮৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি।প্রথমবারের মতো বাজেট ১ হাজার কোটি ছাড়ায় ১৯৭৪ সালে। ২০০৮- ২০০৯ অর্থ বছরে বাজেট নির্ধারিত হয় ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে। ততত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম পেশ করেন এই বাজেট।
১১ জুন ২০২০। বৃহস্পতিবার। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষনা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। গত ৪৯ বছরের ব্যবধানে দেশের বাজেটের আকার বাড়ছে ৭২২ গুন। বাজাটের আকার বৃদ্ধি ইতিবাচক তবে বাস্তবায়নে ব্যর্থতার দায়ও নিতে হবে। বাজেটের গুনগত মান ও বাস্তবায়নের হার না বাড়লে এসব বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বাজেট বলা যায়।
আওয়ামিলীগ সরকারের চারজন অর্থমন্ত্রী ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ২১টি বাজেট ঘোষণা করেছেন। প্রত্যেক বাজেটে একশ্রেণির জনগণ চায় তামাকজাত দ্রব্য বিশেষ করে সিগারেটের উপর যেন করারোপ অধিক হারে করা হয় যাতে সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি পায়। কিন্তু জনগণের আশানুরূপ ফল দেখতে পাওয়া যায় না। এই বাজেটে কথাবলা মূল্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানো যুক্তিক কিনা এই নিয়ে তর্ক করা যায়। করোনার এই দিনে কালো টাকা সাদা করার একটি প্রয়াস দিয়েছে ২০২০- ২০২১ অর্থবছরের বাজেট। এই নিয়ে বেশ টক ঝাল মিষ্টি জাতীয় কথা শুনতে পাওয়া যায়। আগে মোবাইল ফোনের কলের উপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ছিল। তবে করোনার এই মহামারী সময়েও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮.২ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি কমবে না বাড়বে এটি বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বাজেটে কৃষি নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন আমরা কী বড় আকারে বাজেট করেও সেই স্বপ্ন দেখতে পারছি কিনা!? কৃষিতে এই বছরের বাজেটে রাখা হয়েছে ২৯৯৮৩ কোটি টাকা। ঘাটতি বাজেট ১ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা। ৮৫৭৬০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে শিক্ষা খাতে। আলোচিত স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ থাকছে ২৯২৪৬ কোটি টাকা।
করোনারকালের এই দিনে অর্থমন্ত্রী গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে প্রয়াস আরোপ করেন। প্রয়াস আর বাস্তবতার ফাকে বরাবরই জনগণের স্বপ্নে ছাই পড়ে। তবে করোনকালের এই বাজেট যে টিকে থাকার বাজেট তা তো চোখ বন্ধ করে বলা যায়।
পহেলা জুলাই ১৯৭২। শনিবার। তাজউদ্দীন আহমদ পেশ করেন স্বাধীন বাংলার প্রথম বাজেট, সেই সময়ের বিখ্যাত আলোচিত 'দৈনিক বাংলা' বাজেটের উপর নির্মান করে প্রতিবেদন--
"স্বাধীন বাংলার প্রথম বাজেট করের অভিশাপ থেকে মুক্ত। বিধ্বস্ত বাংলার এবার পুনর্গঠনের পালা। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ তাই বাজেটকে বলেছেন, উন্নয়ন-পুননির্মাণ-পুনর্বাসন বাজেট।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্প ও প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে প্রাপ্তি হিসেবে ধরা হয়েছে ১৫ কোটি আর ভূমি রাজস্বের অংক স্থির হয়েছে ৪ কোটি টাকা। রাজস্ব খাতে ব্যয়ের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক পরিমাণ বরাদ্দ হয়েছে শিক্ষা খাতে। এই খাতে ৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। শিক্ষার উপর সরকার যে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন, এই বরাদ্দ তারই পরিচয় বহন করে।
অন্যদিকে ৩১৮ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে ১০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে কৃষি খাতে। এই বাজেটে নতুন কোন কর ধার্যের প্রস্তাব করাই হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে।"
যুদ্ধ ডিভাস্টেট পরবর্তী একটি দেশ কেমন বাজেট হবে তা অবশ্যই খুব করে মনোযোগ দেয়ার মতো। কারন প্রবাদে আছে 'সকালের সূর্য দিনের গতিবিধি ইঙ্গিত করে', বাজেটের সূর্য কেমন সুন্দর বা অসুন্দর হয়েছিল তার চেয়ে বড় কথা সবার মনে ছিল তখন স্বাধীনতার স্বস্তির নিশ্বাস। আর মাগরিব পাকিস্তানের দিকে চেয়ে থাকতে হবে না, এবার বাংলাদেশ নিজেই তুলবে অর্থনীতির জান্ডা; আশা,স্বপ্ন আর স্বাধীনতার পূর্ণ স্বস্তিবোধ নিয়ে স্বাধীন বাংলার সংসদ পেশ করে প্রথম বাজেট যেখানে কৃষি ও শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুসদয় দৃষ্টিতে দেখা হয়।
তারপর অনেক বছর কৃষি উপর অবহেলা চলে,চলছে। বাজেট থাকলেই হয় না, বাজেটের সঠিক বাস্তবায়ন দরকার। করোনাকাল আমাদের মনে ধাক্কা দিয়ে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে কৃষি আমাদের কত না আপন। এই কৃষিকে প্রকৃতি বান্ধব করে তুলতে হবে, কৃষিকে কৃষক বান্ধব করে তুলতে হবে। কৃষি ও শিক্ষা বিশেষ করে সঠিক ও সময়োপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বৈঠাতুল্য যা বাংলাদেশ নামক নৌকাকে সুদিন তো বটেই দুর্দিনেও রক্ষা করবে।
করোনা ভাইরাসের এমন দুর্দিনে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদরুদ্দিন আহমদ কামরানকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে হেলিকপ্টারে মাধ্যমে ঢাকা আনা হয়। যমুনা নিউজে বার্তাটি দেখতে অথবা শুনতে পাই।শুনে আনন্দে মনটা ভরে উঠে। কারন ঢাকায় এখন উন্নত চিকিৎসা হয়। মোহাম্মদ নাসিম (২ এপ্রিল ১৯৪৮ –১৩ জুন ২০২০) যার পিতা মোহাম্মদ মনসুর আলী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যেতে পারেন না। দেশের গরীব দুহী মানুষের কথা তাকে মাথায় রাখতে হয়। তিনি ঢাকায় নিজের চিকিৎসা করিয়েছেন। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। তাই তার আস্থা ও বিশ্বাস ছিলো ঢাকায় তার যোগ্য চিকিৎসা সম্ভব। হায়াত মওত রিযিক আল্লার হাতে। তাই আল্লার ডাকে তাকে চলে যেতে হলো। কামরান সাহেবকেও চলে যেতে হলো। শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ - ১৩ জুন ২০২০) একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ছয় দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনিও আল্লার ডাকে আল্লার কাছে চলে গেলেন। ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার করে কেউ সিঙ্গাপুর অস্ট্রেলিয়া কানাডা যাননি নিজের চিকিৎসা করানোর জন্যে। এই হলো নেতা। বাঘ না খেয়ে মারা যায় কিন্তু ঘাস খায় না। দুর্দিনে কেমন করে সংগ্রাম করতে হয় এমন মহান নেতাদের কাছ থেকে আমরা শিখি। এবং তাদের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা থেকে এই শপথ আমরা নিতে পারি " মারা যাবো প্রয়োজনে তবু উন্নত চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যাবো না", দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত আর সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল (জন্ম ১৫ জুন ১৯৪৭)। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তিনি জন্মগ্রহণ করেন সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ তারিখ। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষনার সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিলেন অর্থমন্ত্রী ( কয়েক প্রজাতির এডিস মশকী (স্ত্রী মশা) ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক। তাদের মধ্যে এডিস ইজিপ্টি মশকী প্রধানতম। ভাইরাসটির পাঁচটি সেরোটাইপ পাওয়া যায়। ভাইরাসটির একটি সেরোটাইপ সংক্রমণ করলে সেই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে রোগী আজীবন প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে, কিন্তু ভিন্ন সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সাময়িক প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে।পরবর্তীতে ভিন্ন সেরোটাইপের ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হলে রোগীর মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
যখন ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা কাউকে কামড়ায়, মশার লালার মাধ্যমে ভাইরাস ত্বকের ভিতর প্রবেশ করে। এটি বাসস্থান পাকা করে নেয় এবং শ্বেত রক্তকোষে প্রবেশ করে, এবং যখন কোষগুলি শরীরের সর্বত্র চলাচল করে তখন সেগুলির ভিতরে এই ভাইরাস প্রজননকার্য চালিয়ে যায়। এর প্রতিক্রিয়ায় শ্বেত রক্তকোষগুলি বহুসংখ্যক সিগন্যালিং প্রোটিন তৈরি করে, যেমন ইন্টারফেরন, যা অনেকগুলি উপসর্গের জন্য দায়ী, যেমন জ্বর, ফ্লু-এর মত উপসর্গ, এবং প্রচন্ড যন্ত্রণা। প্রবল সংক্রমণে, শরীরের ভিতরে ভাইরাসের উৎপাদন অত্যধিক বৃদ্ধি পায়, এবং অনেক বেশি প্রত্যঙ্গ (যেমন যকৃত এবং অস্থিমজ্জা) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এবং রক্তস্রোত থেকে তরল ক্ষুদ্র রক্তনালিগুলির দেওয়াল থেকে শরীরগহ্বরে চুঁইয়ে পড়ে। ফলে, রক্তনালিগুলিতে কম রক্ত সংবহিত হয় এবং রক্তচাপ এত বেশি কমে যায় যে প্রয়োজনীয় অঙ্গসমূহে যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত সরবরাহ হতে পারে না। উপরন্তু অস্থিমজ্জা কাজ না করায় অনুচক্রিকা বা প্লেটলেটসের সংখ্যা কমে যায় যা কার্যকরী রক্ততঞ্চনের জন্য দরকারি; এতে রক্তপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায় যা ডেঙ্গু জ্বরের অন্যতম বড় সমস্যা।) তবু বাজেট পেশ করার জন্যে হাসপাতাল থেকে চলে আসেন। বাজেট পাঠের কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি অসুস্থতাবোধ করেন। ফলে তার পক্ষে বাজেট পাঠ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২০- ২০২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে এসে তিনার মুখে মাস্ক। তার মুখে মাস্ক থাকলে কি হবে তিনি মার্ক্স পড়া লোক।
তবে আমাকে মুগ্ধ করে তার ক্রিকেটপ্রেম। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার অবদান অস্বীকার করা যাবে না। মাশরাফি বিন মুর্তজার কথা তো অবশ্যই বলতে হবে। তিনি ত উৎসাহবোমা। তবে করোনা ভাইরাসের এই দিনে তিনিও নিউজ হয়ে আসেন আমাদের কাছে "করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এই অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরিকল্পনা করছে তার পরিবার। আর এ ক্ষেত্রে মাশরাফির ব্যবস্থাপত্র করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ।"