রবিবার, ৭ জুন, ২০২০

ক রো না বি ন তে কো ভি ড উ নি শ

covid-19! Co থেকে করোনা  Vi থেকে ভাইরাস  D থেকে ডিজিস। আর ১৯ মানে উনিশ সাল। নোভেল করোনা ভাইরাস অথবা কোভিড উনিশ। নোভেল মানে নতুন। করোনার বিশেষ কোনো অর্থ নেই। তবে করোনা শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ক্রাউন শব্দ থেকে। ক্রাউন মানে মুকুট। কদম ফুল বাংলার বর্ষাকালের চোখশান্তি। এই কদম ফুলের মতো করোনা গনের চীনের উহানে আক্রমন আনে দুই হাজার উনিশ সালের ডিসেম্বর মাসে। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস মেহমানদারি অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে করা শুরু করে দিয়েছেন যখন কদম ফুল বাংলার আকাশে বাতাসে।

এই ভাইরাস যখন গনের চীনের মানুষকে হতাশায় ফেলে দিয়েছে তখন পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে মজা করায় ব্যস্ত।এখানকার আলেম সমাজের কাছে তখন ওহী আসতে শুরু করে দিয়েছে যে চীনে মহান আল্লার গজব নাযিল হয়েছে। তাদের মতে আল্লার আর কোনো কাজ নাই-- গজব আর রহমত বর্ষন করা ছাড়া। একসময় তাদের  আল্লা ছিল বটগাছ,ছিল শাপ। তারা বটগাছ আর শাপের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতো। বটগাছ, শাপ, সূর্য থেকে মুখ ফিরিয়ে এখন তারা তাদের আল্লাকে কাবাঘর,মসজিদ পর্যন্ত নিতে সক্ষম হয়েছে। কয়েকদিন পর তারাই বলতে শুরু করবে কাবাঘরে মসজিদে আল্লা নাই। এখনি বলে কেউ কেউ। তবে তাদের মতো এই কেউ কেউ হলো মারফতি।

করোনা ভাইরাস একটি ফ্যামিলি ভাইরাস। এরা একত্রে থাকতে পছন্দ করে। আলিফ লায়লার কেহের মানের মতো বহু কার্যপদ্ধতি প্রনয়ন করতে পারে তারা। ইতিমধ্যে তারা নিজেকে চারশো বারের অধিক পরিবর্তিত করে নিয়েছে।তাই ডাক্তার হুজুরদের নির্দিষ্ট কোনো ফতুয়া পাচ্ছে না জনগন। কিন্তু নচিকেতা ঠিকই খিস্তি খাচ্ছে গানে গানে। কারন গানে গানে সে  ডাক্তারদের কসাই বলেছে। গানটি অবশ্যই অনেক আগে লেখা।

করোনা ভাইরাস নিয়ে রচনা লেখার ক্ষেত্রে সকল গবেষকই অত্যন্ত মহান জ্ঞানী "Coronaviruses are a large family of viruses that are known to cause illness ranging from the common cold to more severe diseases such as Middle East Respiratory Syndrome (MERS) and Severe Acute Respiratory Syndrome (SARS)." তবে তাদের এই মহান জ্ঞান মানুষকে পিপড়ার মতো গুহাজীবী করে তুলেছে।  মানুষ আর পিপড়ার মধ্যে পার্থক্য এখন এই যে পিপড়া শীতকালে তাদের পৃথিবী নির্মান করে গুহার ভেতর, গরম কালে বের হয়ে আসে। আর মানুষ? শীত কেন গরম কালেও গুহা থেকে বের হয়ে আসতে পারছেনা। তবে কোনো কোনো মহান সাইন্টিস্ট পিপড়ার জীবন গবেষণা করে প্রায় সিদ্ধান্ত নির্নয় করে ফেলেছিলেন যে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে কোভিড উনিশ পালাবে, অবসান হবে তাদের গুহাজীবন। তা হলো না। জাবেদা ভুল হওয়াতে চূড়ান্ত হিসাব মিললো না।

মহান সাধু সম্রাট আমেরিকা এই ভাইরাসের নাম দিয়ে দিলেন চায়না ভাইরাস। ভারতবর্ষ ( হিন্দুস্তান পাকিস্তান বাংলাদেশ) আমেরিকার এই সাধু মতের সাথে অত্যন্ত শক্তির সাথে মাথা ঝাকালেন। কারন নিজের মাথা নিজে ফাটিয়ে অন্যের নামে মামলা করার প্রবনতা ভারতবর্ষের মানুষের আছে। তাদের মতে চীন তথ্য গোপন করেছে।তথ্য গোপন করার বিষয়টি চীনের প্রতি দুর্বল আক্রমন। এই কথা অতীব সত্য যে চীন তথ্য আড়াল করার ব্যাপারে ওস্তাদ। চীনের কাউকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হলে চীন সরকার তাকে সন্দেহের চোখে দেখে এবং তাকে ঘরবন্দী করে তুলে এমন কথা চাওর আছে। আপনি যখন কেউ নোবেল পুরস্কার পেলে তাকে মাথায় নিয়ে নাচেন চীন তখন তাকে সন্দেহ করে ঘরবন্দী করে। সুতরাং আপনার বানানো প্রোগ্রাম চীনের মাথায় কাজ করবে না।

চীনে যখন কোভিড উনিশে প্রচুর লোক আক্রান্ত হচ্ছে চীন তখন আমেরিকার দিকে সন্দেহের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। কারন যুদ্ধবাজ আমেরিকা বায়োলজিক্যাল উইপোন ব্যবহার করতেই পারে। চীনের সন্দেহ ভুল প্রমান করে দিলো আমেরিকার লাখো লাখো কোভিড উনিশে আক্রান্ত রোগী।

একজন আরেকজন একদেশ আরেকদেশ যখন কাদা ছুড়াছুঁড়িতে ব্যস্ত তখন সমস্ত মহানদের তামাশা উপেক্ষা করে ছিল্লায় বসে গেলেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি অর্ফে ব্রিটিশ মাথা। সারা গিলবার্ট মানুষকে শোনালেন ভ্যাকসিন সম্পর্কে সবচেয়ে আশাবাদী কথা।আর প্রাচ্যের অক্সফোর্ড!?  বসে বসে সাধারণ জ্ঞান মুখস্থ করছে। সারা গিলবার্টের নাম নোট খাতায় তুলে রাখছে আর ভাবছে এইবার বিসিএস  প্রিলিমারিতে এক নাম্বার তার প্রায় হাতের কাছে, শুধু মুখে যাওয়া বাকী।

লকডাউন। ভিনদেশী শব্দ। এই শব্দের সাথে পরিচিত হতে পারছে না এখানকার মানুষ। সামাজিক দূরত্ব কিংবা শারীরিক দূরত্ব। ভদ্রলোকের শব্দ। এই শব্দের সাথে অভিযোজন করতে পারছে না শ্রমজীবী সমাজ। তাই দিব্যি তারা নিজেদের মতো সময় যাপন করছে। অতি ভয় এবং অতি সাহস এই এলাকার মানুষের মজ্জাগত। লাশের পর লাশ পরে থাকলে এখানকার মানুষ অতি ভয়ে নিজেই লাশ হয়ে যায়। দান খয়রাত বা ত্রান শব্দটি এখানকার মানুষ খুব ভালো জানে। তাই দেখা যায় ত্রান চুরি করে দায়িত্বশীলরা অত্যন্ত সাহসের সাথে। লাশের কাফন চুরি করে অভ্যস্ত।আর ত্রান ত রেডিমেড ব্যাপার স্যাপার।

চীন ইতালি স্পেন ইভেন আমেরিকার লকডাউন আর এখানকার লকডাউনের মধ্যে প্রভেদ আকাশ পাতাল।প্রত্যেক ঘরে ঘরে তারা খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। কাউকে ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না। বের হলেও নির্দিষ্ট নির্ধারিত নিয়ম মেইনটেইন করতে হচ্ছে আপ টু বটম। আর এখানে? সরকার যে খাবার বরাদ্দ করছে অসহায়দের জন্যে তা আপনি বাচলে বাপের নাম থিউরি অ্যাপ্লাই করে সংশয়হীনভাবে চুরি করছে চেয়ারম্যান, চুরি করছে মেম্বার।

গ্রামে গ্রামে হাত ধোঁয়া প্রকল্প বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো গ্রামীন। গ্রামে গেলে আপনার মাথায় অল্প সময়ের জন্যও আসবে না পৃথিবীতে করোনা বলে কিছু একটা আছে, ডব্লিউএইচও যে 'মহামারি' ঘোষনা দিয়েছে করোনাকে তা একেবারেই ফালতু ব্যাপার মনে হবে আপনার।

বাঙালি বীরের জাতি। কত ভাইরাস বুকে পীঠে নিয়ে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত খাচ্ছে দাচ্ছে ঘুমাচ্ছে। দুধের সাথে মেশানো ডিটারজেন্ট হজম করে ফেলে এরা। আর করোনা? করোনা ত তাদের এক লোকমার চর্বনধন্য বিধেয়ক মাত্র। কেবল সেনাবাহিনীর ভয়ে তারা তাদের পারঙ্গম সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারছে না। কারন সেনাবাহিনীকে এরা যত ভয় পাই তত ভয় এরা এদের ভগবানকে পায় কিনা সন্দেহ আছে।

পৃথিবীতে তেলের দাম নেমে আসছে। যানবাহন যেহেতু চলছে না সেহেতু এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। এমন ঘটনা ইতিহাসে প্রথম। বেড়ে গেছে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কদর।নেট চালানোর জন্য এমবি নামক তেল কেনার হিড়িক পড়েছে। উহানে হিড়িক পড়েছে বিয়ের। বহুদিন তারা অন্দরমহলের সঙ্গনিরোধ বাসিন্দা হয়ে বুঝতে শিখেছে হোয়াট ইজ বিয়ে। আর এখানকার বিবাহিতদের চেহারার দিকে তাকানো যায় না। কারন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া সাথে ভালো বন্ধুত্ব থাকলেও, ভালো বন্ধুত্ব নেই তাদের প্রোটিন আমিষের সাথে। ফলত দুঃখ  সারারাত।

পরিবেশ নাকি নিজেকে সাজিয়ে নিচ্ছে। ইয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স নাকি বিপদ সীমার উফ্রে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে না। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নাকি তিমি মাছ হানিমুন করতে আসা শুরু করে দিয়েছে। এমন আরও আরও ভালো সংবাদ এমবি তেল খরচ করে আমরা জানতেছি প্রতিনিয়ত। কিন্তু!? এই প্লাস্টিক মানুষ সমাজ তাতে মনে মনে ফুসফাস টুসটাস করতেছে। লকডাউন হালি তুইল্লা দেখেন! নিজে ত ভিজিটিং স্পটে যাইবো যাইবোই, নিজের বাড়ির গরুরে পর্যন্ত নিইয়া যাইবো পর্যাপ্ত লেদা চেনা রেখে আসার জন্যে। হালি ভ্যাকসিনটা আইতে দেন। অথবা টিভির মাইক দিয়ে ঘোষনা করে দেন এই গ্রহের মানুষের হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়ে গেছে। দেখবেন কত ধানে কত চাইল না-- কত চাইলে কত ময়দা। কত ধানে কত চাল না বলে কেন কত চাইলে কত ময়দা বললাম জানতে চান?

কারন ধান থেকে আর চাইল পাওয়ার সম্ভাবনা নাই।সমাজ সেবার নামে, ধান কাটার নামে যেহারে ফটো হেছা চলতাছে তাতে আর চাল পাওয়ার সম্ভাবনা নাই-- সরাসরি ময়দা পাওয়া যাবে। তাতে আপনাদেরই লাভ বেশি-- আফনে আর মামু, ময়দা পাবেন আর খাবেন। ময়দা খেয়ে খেয়ে এন্টিবডি বানাবেন।

এন্টিজেন আর এন্টিবডির যুদ্ধে কে জয়লাভ করবে তা অনেক পরের হিসাব, আগের হিসাব হলো তাল গাছটা নিজের থাকবে হবে। তালগাছ কার হবে পৃথিবী এখনো নির্ধারন করতে পারে নাই।তাই এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যারা দেশ স্বাধীন করেছে তাদের জন্য আমেরিকার একদল সাহসী যুবক নিয়ে এসেছে প্লাজমা থেরাপির বিজ্ঞাপন। তাই রক্ত যখন একবার দিয়েছেন রক্ত আরেকবার দেন তবু করোনামুক্ত করে ছাড়বেন এই গ্রহকে ইনশাআল্লাহ।

আসুন হাত ধোয়া প্রকল্প যে জাতির মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে সেই জাতির একটি ছোট্ট পরিচয় দেই।আমার বারান্দা থেকে ছাদটি দেখা যায়-- খুব দূরে নয় খুব কাছেও নয়।আমার বারান্দা পাচ তলায়, সেই ছাদের বিল্ডিংটা টোটাল তিন তলা। ছাদের এক পাশে কালো কালারের পানির ট্যাংক।

ছাদে মা তার দুটি সন্তানকে নিয়ে এসেছেন। রোজা রমজানের দিন, তার উপরে কোয়ারেইন্টাইন সময়। এমনিতেও সকাল বেলার এই সময়টা শহরের মহিলাদের কোনো কাজ থাকে না। বিশেষ করে রমজান মাসে।কারন রান্নাবান্নার কাজটা সেহরির সময়ই হয়ে যায়।

বাচ্চা দুটি খেলছে। বড় বাচ্চাটির বয়স পাচ কি ছয়। মেয়ে। ছোট বাচ্চাটির বয়স দুই কি তিন। ছেলে। বাচ্চা দুটি খুবই কিউট। তাদেরকে ফুলের সাথে নয়, দুই চার প্রকার ফুলকে তাদের সাথে তুলনা দেয়া যায়। বাচ্চারা খেলছে। ছাদে স্বর্গ যেন নেমে এসে আনন্দ করছে।
হঠাৎ মেয়ে বাচ্ছাটি মাকে কি যেন বলছে। মা কালো কালারের পানির ট্যাংকটির দিকে ইশারা করলেন। বাচ্চাটি ট্যাংকটির কাছে গেলো। গিয়ে প্যান্ট খুললো। খুলে মুততে শুরু করে। কিছুক্ষনের মধ্যে স্বর্গছাটটি মুতের গন্ধে ভরে গেলো।

খালে বিলে নদী নালায় মুতা পাবলিক আমরা। যৌথভাবে নদীতে মাঠে ঘাটে হাগুমুতা করার দৃশ্যায়ন এখনো ভারতবর্ষের অনেক জায়গায় বিদ্যমান। এখনো হাইজিনিক জীবনের সঠিক পর্যায় আবিষ্কার করতে পারেনি আমরা। অথচ আকাশ দখলের চেষ্টা আর অস্ত্রের ঝঝনঝনানিতে সিনেমার পর্দা ফেটে যায়। প্লাজমা থেরাপি নিয়ে কথা বলতে বেশ আনন্দ লাগে। অথচ প্লাজমা থেরাপি রোগীকে বাচানোর একেবারের শেষ চেষ্টা। প্রাথমিক চেষ্টার খবর নাই অথচ শেষ চেষ্টার ঘুম নাই। প্লাজমা ট্রান্সফার নতুন কোনো পদ্ধতি নয়। তবে মিডিয়া প্লাজমা থেরাপি বা ট্রান্সফারকে গ্রীন রুমের স্নো পাউটার মেখে এমনভাবে উপস্থাপন করছেন যেন করোনার এই দিনে জিব্রাইলের ওহী এটি তাদের কাছে।

একটি গল্প বলি। এক লোক ডাব গাছে উঠে আর নামতে পারছে না। আটকে গেছে। চিৎকার করে আকাশ বাতাস এক করে ফেলছে। কেউ এসে আল্লার কাছে আশ্রয় প্রার্থনার পরামর্শ দিলেন। কেউ এসে গাছ কেটে ফেলার পরামর্শ দিলেন। একজন এসে হেলিকপ্টার নিয়ে আসার পরামর্শ দিলেন। হেলিকপ্টার নিয়ে আসার পরামর্শ জয় হলো। কারন তার চেয়ে বেটার বিকল্পধারা কেউ দেখাতে পারেনি।ফলে বিকল্পধারা যেহেতু পরাজিত হেলিকপ্টার জয় হলো। এখন হেলিকপ্টার আনার অর্থ আসবে কোথা থেকে? লোকটির ত অর্থ নাই। রাষ্ট্র? লোকটিকে বাচানোর জন্য রাষ্ট্র টাকা দিবে!? রাষ্ট্রের লোকের অভাব নাই, টাকার অভাব আছে।

তারপর? তারপর লোকটির কী হলো? আপনারা ভাবছেন লোকটি মারা গেছে, তাই না? আপনারা ভাবছেন লোকটি বেচে আছে, তাই না?

লোকটি ভয়ে হতাশায় দোয়া ইউনুস পড়তে থাকে।লোকটি আগে যখন কোনো কঠিন বিপদে পড়েছে তখন দোয়া ইউনুস পড়ে বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। ভবিষ্যতে কোনো বিপদে পড়লেও দোয়া ইউনুস পড়বে লোকটি।

ইউনুস নবী মাছের পেটে আটকে গেছিলেন।মাছের পেটে থেকে যে দোয়া পড়ে ইউনুস নবী কোয়ারেন্টাইন-বিপদ অতিক্রম করেছিলেন তাই মুসলিম সমাজে দোয়া ইউনুস নামে পরিচিত। ইউনুস নবীর সময় থেকে আগত কিছু মুসাফির করোনার এই সময়ে বেশি বেশি দোয়া ইউনুস পড়ার তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু সরকার এই মুসাফিরদের কথা প্রজ্ঞাপনে কেন প্রকাশ করছেন না এই নিয়েও গ্রামীন চাস্টলে টকশো চলে। কেউ কেউ আবার বলছেন বাংলার চাস্টল মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মেডিসিন সাইনটিস্টদের আখড়া। এই আখড়া বন্ধ হওয়ার কারনে করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্স আবিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকার কেন এই আখড়া বন্ধ করতে গেলেন!  সরকারের এই অভব্য সিদ্ধান্তে জাতি আশাহত।

লোকটির দোয়া ইউনুস মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করলেন। উড়ন্ত দুরন্ত চলমান স্পাইডার ম্যান চলে আসেন। স্পাইডার ম্যান সবার জল্পনা কল্পনার অবসান করে বউয়ের স্বামী বউয়ের কুলে ফিরিয়ে দেন।

বউয়ের কোলে ফিরে আসা লোকটির নাম আবুল খায়ের। তার মতো আর্থিক অবস্থার মানুষ তাকে আবুল খাই বলে ডাকে। টাকা পয়সার ঝনঝানি আছে এমন কেউ তাকে ডাকে আবুইল্লা। গ্রামের সুন্দরী মেয়েরা তাকে আবুল নামে ডাকে।কারন সুন্দর মেয়েদের গাছে কোনোদিন সে ঢিল দেয় নাই। সুন্দরী মেয়ে চায় তার গাছে কেউ না কেউ ঢিলাঢিলি করে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় তাকে আলোচনায় রাখুক, তাতে পাশের বান্ধবীর কাছে তার একটা সুন্দরী-মর্যাদা তৈরি হয়।

তবে দুখের কথা অইলো মেয়েরা স্বামীর ঘরে যাওয়া মাত্র তার মা-বাবার রাখা প্রিয় নাম জাদুঘরে ঠাই পায়।তারা হয়ে যায় অমুকের বউ তমুকের বউ,সন্তান জন্ম দেয়ার পর অমুকের মা তমুকের মা।

নামের সাথে অর্থনীতির একটি বিশাল সম্পর্ক আছে। ছোটকালে রচনা লেখার বই থেকে মুখস্থ করেছিলাম A beautiful name is better than a lot of Wealth। মিছা কতা, ডাহা মিছা কতা। A lot of wealth থাকলেই নামের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। টাকা পয়সা থাকলেই নামের সাথে লেজ সংযুক্ত হতে আরম্ভ করে। পশুর জানামতে এখন পর্যন্ত একটি লেজই থাকে।তবে টাকা পয়সা মানুষের নামের আগে-পিছে ডাইনে-বাইয়ে সাদা কালো হলুদ নীল বেগুনি সবুজ ইত্যাদি ইত্যাদি লেজের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা করে দেয়।

ধরেন, কারো নাম চান মিয়া। লোকে তাকে ডাকবে চান্দু। টাকা পয়সার মালিক হওয়ার পর তার নাম হবে চান মিয়া সাহেব। টাকা ব্যয় করে মক্কা শরীফ ঘুরে আসার পর তার নাম হবে হাজী চান মিয়া সাহেব। এমনভাবে আরও লেজের ব্যবস্থা টাকা ব্যয় করে দানবীর হাজী চান মিয়া সাহেব করতেই পারেন। আর যার অর্থতেলের ব্যবস্থা নেই তার নাম হবে টোকাই,তার নাম হবে ধোপা,তার নাম হবে কামলা।

তবে আবুল খায়েরের বউ কিন্তু কোনোদিন তার নাম ধরে ডাকে না। স্বামীর নাম ধরে ডাকা পাপ।অনিন্দিতা খানম স্বামীকে স্বামী বলেই ডাকে।

আবুল খায়ের তার বউয়ের কাছে জানতে চায় যদি সে গাছ থেকে পড়ে মারা যেতো তাহলে তার বউ বাকী জীবনটা কীভাবে কাটাতো। তার বউ উত্তর দেয়,আমি পাগল হয়ে যেতাম।" আবুল খায়ের আরও স্পষ্টভাবে জানতে চায়, সে জানতে চায় অনিন্দিতা খানম আবার বিয়ে করতো কিনা।
অনিন্দিতা খানম উত্তর দেয়," পাগলে কিনা করে।"

আসলেই পাগলে কিনা করে!  করোনার কঠিন পরিস্থিতি ট্রাম্পকে পাগল করে দিলো কিনা, নাকি একটা পাগলকে আমেরিকা তাদের সিংহাসন ঠাই দিয়েছে। নতুবা সে কেমন করে বলে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি সংগ্রহ করে করোনা রোগীর ফুসফুসে ইনজেকশনের মাধ্যমে পোস করলে রোগী ভালো হয়ে যেতে পারে।আবার তার মতামত তুলেও নেয় এই বলে যে সে ফান করেছে। ইয়ার্কি, তাই না!?  লাখ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, হাজার হাজার রোগী মারা যাচ্ছে আর তিনি ইয়ার্কি করছেন। সাব্বাস ডোনাল্ড ট্রাম্প, সাব্বাস তোমার ইয়ার্কি।

মিডিয়া আমাদের সাথে ইয়ার্কি করছে কিনা?  zee২৪ ঘন্টায় দেখতে পেলুম একখান বিশাল আশার খবর। ফ্যামোটিডিন গ্রুপের এন্টাসিট যার প্রাইজ মাত্র চল্লিশ পয়সা তা নাকি করোনার ঔষধ হতে যাচ্ছে। ঔষধের দাম কম বা বেশি বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে অযথা আশার কথা বলে, আপডেট নিউজের নামে জনগনের বিশ্বাসের সাথে ধোকাবাজি খেলায় আবার না মিডিয়ার সম্মান জুতার নিচে নেমে যায়( বিটিভি বলছে, দেশে করোনা পরিস্থিতে স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে আছে!
বেসরকারি টিভিগুলো বলছে, বিটিভি মহাপরিচালক সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত!! 😇🤔)। ভয় পাচ্ছি আমি। কারন বিশ্বাস করার, আস্থা রাখার মাধ্যম খুজে না পেলে জীবন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে যায়। মিডিয়ার কথা শুনে অতি চালক হয়ে মাথা মোটা এই জাতি যদি ফ্যামোটিডিন মজুত করা আরম্ভ করে তাহলে পেট রোগা এই বাঙালি এন্টিহিস্টামিন পাবে কোথায়!?

মিডিয়ার উপর এতো আশাবাদী হওয়ারও কিছু নাই। মিডিয়া কর্মীরা হায়ার এন্ড ফায়ার পদ্ধতিতে মিডিয়া শ্রমিক।তারা সেই ইট ভাঙতে পারে যেই ইট ভাঙার কথা মালিকপক্ষ তাদের বলেন।

বিয়ে শেষ। এবার জামাই বউকে নিয়ে বাড়ি যাবে। বিদায়-নিয়ম- কানুন সেরে জামাই-বউ বাড়ির পথে যাত্রা করে। পথে ডাকাত আক্রমন করে। সুন্দরভাবে ডাকাতি করে ডাকাতপক্ষ  বিদায় নেয়।

কনের ভাই তার মাকে বলে যে জামাইয়ের ভাত খাওয়াবে না মাত্রাকে। মাত্রা কনের নাম। কেন কেন? বিয়েতে বরপক্ষ কনেকে যে স্বর্নঅলঙ্কার দিয়েছে তা নকল। রুস্তম কীভাবে জানলো যে অলঙ্কার নকল? রুস্তম মাত্রার ভাইয়ের নাম।

তুই কীভাবে জানলে স্বর্নঅলঙ্কার নকল? অলঙ্কার ত ডাকাতি হয়ে গেছে!
মা, ডাকাতি ত আমিই করেছি!

রুস্তম ডাকাতি করেছে এটা অপরাধ না, অপরাধ বরপক্ষ রুস্তমের বোনকে খাটি সোনা দেয়নি, দিয়েছে নকল সোনা।

আমাদের মিডিয়া, পৃথিবীর মিডিয়া হলো পোশাক, আর সেই পোশাকের ভেতরের যে শরীর রয়েছে তা প্রত্যেকে এক একটি রুস্তম। রুস্তমরা যা চায় তাই হয়। রুস্তমরা ভদ্র ভাষায় বিজনেস ম্যাগনেট নামে সমাদৃত। এই ম্যাগনেটরা চেয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক ঢাকায় আসবে-- শ্রমিকরা ঢাকায় এসেছে। তারা সাথে সাথে জনরোষের তাপে পড়ে মত বদল করেছে, শ্রমিকরা সাথে সাথে ফিরে গেছে, তারা চেয়েছে লকডাউন উঠে যাবে, লকডাউন শীতল হয়ে গেছে মানে উঠার পথে।

বাংলাদেশের পীর আমেরিকায় যখন করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দশ হাজার তখন তারা কঠিন লকডাউনে চলে যায়, জার্মানি, ইতালি, স্পেনেও তাই। আর বাংলাদেশে যখন করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অফিসিয়ালভাবে দশ হাজার তখন লকডাউন শীতল হয়ে যায়।

আমি বলছিনা করোনার বিরুদ্ধে ফাইট করার জন্যে লকডাউনই একমাত্র এবং বিশেষ পন্থা। আমি বলছি বাঙালি বীরের জাতি-- সিনেমা শুরু হওয়ার আগেই সিনেমা শেষ করে দিতে পারে তারা।
আমরা দেখেছি দুই হাজার আঠারো সালের এশিয়া ক্রিকেট কাপে এক হাতে মাঠে নামা তামিম ইকবালকে। অবিশ্বাস্য। দুর্দান্ত। আমরা পারি, আমরা সব পারি। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে নিজের প্রান দিয়ে পাকিস্তানের হয়ে ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি, এই আমরাই আবার ইন্ডিয়াকে সাথে নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে করে বাংলাদেশ স্বাধীন করি।আমরা ইজ আমরা। আমাদেরকে করোনা কাবু করতে আরও ট্রেনিং নিয়ে আসতে হবে। এতো অল্প ট্রেনিংয়ের বিনিময়ে করোনা আমাদের জাহাজের তেল শেষ করতে পারবে না। জাহাজের তেল শেষ হলেও করোনা বিনতে কোভিড উনিশ বুঝতেও পারবে না যে আমাদের জাহাজের তেল শেষ। কারন জলকে তেল হিসাবে চালিয়ে দেওয়ার ট্রেনিং করোনার জন্মের বহু আগে থেকে আমাদের নেয়া।

করোনা ভাইরাস জীবন্ত প্রাণী নয়। এটি প্রোটিনের অণু (ডিএনএ) যা লিপিডের (চর্বি) মোড়কে মোড়ানো। এটা আমাদের নাক-চোখ-মুখের মাধ্যমে শরীরে ঢুকে গেলে নিজের জেনেটিক কোড বদলে ফেলে শক্তিশালী ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। ভাইরাস যেহেতু কেবলই একটি প্রোটিন অণু এবং জীবন্ত নয় তাই এটাকে মেরেও ফেলা যায় না। তবে সে নিজে থেকে ধ্বংস হতে পারে।

যে ভাইরাস নিজে নিজে জন্ম হতে পারে আবার নিজে নিজে মৃত্যুবরন করতে পারে অর্থাৎ যাকে মারা যায় না, সে তো নিজের একটি পৃথিবী বানাবে স্বাভাবিক কথা। এই সহজ ব্যাপারটা অনুধাবন করার জন্য গৌতম বুদ্ধ হওয়ার দরকার পড়ে না।

তবে একটি ব্যাপার কিন্তু নোটিশ করার মতো। তিন ধর্মের সমাহার বা তিন বাদের সমাহার ভিয়েতনাম কিন্তু কোভিড উনিশের ব্যাপারে ম্যাজিক দেখাতে পেরেছে। আমরা জানি বুদ্ধের মতবাদ, কনফুসিয়াস থিউরি, তাও তে চিংয়ের হাজার বছরের সহজিয়া দর্শন ভাতপ্রিয় ভিয়েতনামের জীবানাচারে চর্চার বিষয়। তবে এই কথা সত্য যে চীনের ব্রার নিচে ভিয়েতনাম। ব্রা বললে নারীবাদীরা আবার রেগে যেতে পারে। চীনের আন্ডারপ্যান্ডের নিচে ভিয়েতনাম। চীনেও কনফুসিয়াস থিউরি, মাও সেতুঙ, তাও তে চিং অত্যন্ত আলোকোজ্জ্বল চর্চিত টপিক অথবা চীনই এমন মতবাদের ধারক। থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়ার ব্যাপারে আলোচনাটা কিছু সময়ের জন্য ফ্লাইট মোডেই রেখে দিলাম।

কনফুসিয়ানরা সর্বদা সর্বোচ্চভাবে সিনিয়রের কথা মেনে চলে। আর লকডাউনের ক্ষেত্রে আদেশমান্যনীতি শতভাগ কার্যকর হওয়া লাগে। একমুখে দুই কথা বললে লকডাউন কার্যকর করা যায় না। দক্ষিণ  কুরিয়া যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক আক্রান্ত হচ্ছিল সেখানকার নীতিপ্রবাহ কেমন করে পরিস্থিতি নিজেদের কন্ট্রোলে নিয়ে আসলো?  এরা মোবাইল ট্রেসিং করে পনেরো লক্ষ লোককে ঘরবন্দী করতে সক্ষম হয়। এরাও কিন্তু মহান কনফুসিয়াসের মতবাদে ইমান এনে প্রতিদিন নিজেদের সূর্যকে ব্যবহার করতে যায়।

আর বাংলাদেশ?
বাংলাদেশে ধর্ম আছে। এখানে ধর্মের চেয়ে দল, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বড়।কে সুন্নি কে ওয়াহাবি তা নিয়ে আলোচনা করতে করতে রাত শেষ হয়ে যায়।সকালে ঘুম থেকে উঠে অন্যের জমি দখল করতে যায়।

করোনা বিনতে কোভিড উনিশ যখন বাংলাদেশে মাত্র আঙুল ফেলতে শুরু করে দিয়েছে এখানকার একশ্রেনির আলেম শরীরের সমস্ত রক্ত মুখে এনে বলে '' প্রয়োজনে রক্ত দিবো তবু মাসজিদে যাওয়া থেকে কেউ আমাদের রুখতে পারবে না", করোনা যখন ফুসফুসের মধ্য দিয়ে রক্তের বাহাদুরি শেষ করতে আরম্ভ করে তখন তারাই বলে ভিন্ন কথা। তাই এক মুখে দুই কথা নয়-- এক মুখে চার অথবা ষোল কথার বলা ক্ষমতা বাংলাদেশ রাখে।

বাংলাদেশের মানুষের কিন্তু মুখে একটা অন্তরে আরেকটা না। এমন হলেও ভালো হতো। মুখে একটা অন্তরে আরেকটা রেখে যারা সহজে কাজ হাসিল করে নিতে পারে উন্নত বর্তমান আধুনিক বিশ্বে তারাই ডিপ্লোমেটিক ম্যান,যাদের কদর আধুনিক অস্ত্রের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

বাংলাদেশ এক কথাতে বেশিদিন থাকতে পারে না। এখানে শিক্ষার চেয়ে জনসংখ্যা বেশি। ফলে ডারউইনের বানরের মতো তাদের গাছে উঠতেও সময় লাগে না, আবার নামতেও সময় লাগে না।

ডারউইনের বানর ইভালোশন এন্ড জেনেটিক প্রক্রিয়ায় নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। তাই আজকে সে মানুষ। ডারউইনের বানর থেকে শিক্ষা নিয়ে প্লে নেইমার রোনালদো রিবালদোর দেশ ব্রাজিল করোনা ভাইরাসের এই দিনে কোনো প্রকার লকডাউননীতি গ্রহন করেনি। ফলে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার লোক। ব্রাজিলের পরে ব্রাজিলের পতাকা যে দেশের আকাশে সবচেয়ে বেশি উত্তোলিত হয়েছে সেই দেশটির নাম বাংলাদেশ। ব্রাজিল আয়তনে অনেক বড় রাষ্ট্র হলেও ব্রাজিলও বাংলাদেশের মতো বস্তিঘেষা জাতি। ফলে বাংলাদেশে হাজার হাজার লোক মারা গেলে আমরা অবাক হবো না। তাছাড়া বাংলাদেশের রাস্তা বহুদিন ধরে উপোস। রক্ত বাংলাদেশের রাস্তার প্রধান খাবার। খাবার না পেয়ে বাংলাদেশের রাস্তা প্রায় মারা যাচ্ছে। সরকার নিশ্চয়ই রাস্তার এই মরনময় দিনের অবসান কল্পে কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন।

তবে এই ভারতবর্ষের মানুষ 'সরকার' বিষয়টা এখনো বুঝে উঠতে পারে নাই। তাদের কাছে সরকার মানে সরকার প্রধান। ভালো মানে সরকার প্রধান ভালো, খারাপ মানে সরকার প্রধান খারাপ। এতে বিরাট সমস্যা। কারন মুরগী যখন চিলের কথা মাথার রেখে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে কেবল, শিয়াল এসে অথবা বিজি এসে মুরগির বাচ্চা নিয়ে যায়। করোনা ভাইরাস আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাবে এখনো আমরা জানি না। নাকি আমাদের জানতে দেওয়া হচ্ছে না!?

সংশয় সন্দেহ অবিশ্বাস অস্থিরতা বিলাসী মানসিকতার ব্যাপক আয়োজনে ক্যালেন্ডারের পাতায় জায়গা করে নেয় একবিংশ শতাব্দী। একবিংশ শতাব্দী এমন এক শতাব্দী যে শতাব্দী তার আসন্ন প্রজন্মের খাবার সংহার করে বেচে আছে। প্রয়োজনীয় জীবনের চেয়ে বিলাসী জীবন খুব গুরুত্বপূর্ণ তাদের কাছে। ঘরে খাবার থাকলেও ফাস্টফুড খেতে হবে তাদের। ঘরে টিভি থাকলেও ডিজিটাল টিভি কিনতে হবে তাদের। অর্থাৎ অভাবটা মনে নয়, চোখে। ক্ষুধাটা পেটে নয়, জিহবায়।

একসময় পাখি খাচায় বন্দী করে রাখার স্বভাবটা সো কল্ড এলিট শ্রেনির মাঝে ছিল।এখন মিডিয়া, ইন্টারেক্টিভ মিডিয়ার কল্যানে সবাই মোটামুটি এলিট ট্যাংক।

স্টুডেন্টদের মধ্যে দেখা যায় পাখিদের খাচায় বন্দী করে রাখার প্রবনতা। হোস্টেলে থাকে, নিজের টয়লেট নিজে পরিষ্কার করে না, মশা ডিম পাড়ে বিছানার নিচে, টয়লেট থেকে এসে হাতও ভালো করে পরিষ্কার করে না কিন্তু পাখিকে খাচায় বন্দী করে বিছানার পাশে রেখে দেন মহান স্টুডেন্ট। কাউকে বন্দী করে রাখার মধ্যে এক ধরনের প্রভুগিরি ফলানো যায়। ইনফিরিউর প্রবনতা প্রভু হতে পারলে শান্তি পায় বেশ, হাগু করতে কুতানি দেয়া লাগে না তখন।

এখন খাচায় বন্দী পাখির মতো আপনি বন্দী। মাইনাস প্লাস করা ছাড়া আপনার আর এখন কোনো কাজ নাই। পারলে একদিনে, দুঃখিত, এক ঘন্টায় কোটিপতি হয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। টিভিতে এতো মুখ দেখানোর জন্য ব্যস্ত ছিলেন যে নিজেই টিভি হয়ে যাবেন যেনো। হয়ে যানও বটে।
এখন?
এখন চিড়িয়াখানার পশুদের মতো আপনিও বন্দী। গুটি বসন্তে পৃথিবীর প্রায় ত্রিশ কোটি মানুষ মারা যায় এখন পর্যন্ত।পৃথিবী গুটি বসন্তের বাক্যে দাড়ি বসাতে সক্ষম হয়েছে। করোনা কবে যাবে পৃথিবী থেকে? হার্ড ইমিউনিটি আসলে। হার্ড ইমিউনিটি এতো সহজ কথা?

হার্ড ইমিউনিটি (herd immunity)। হার্ড মানে পাল। ইমিউনিটি মানে বিমুক্তি। হার্ড ইমিউনিটি দুইভাবে অর্জন করা যায়। ভ্যাকসিনের মাধ্যমে। প্রাকৃতিক উপায়ে।

প্রাকৃতিক উপায়ে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের জন্য কোনো জনগোষ্ঠীর ৬০ থেকে ৮০ পার্সেন্ট আলোচ্য বা পেন্ডামিক ভাইরাস দ্বারা আক্রান হতে হবে। ধরি, বাংলাদেশে জনসংখ্যা বাইশ কোটি। বাইশ কোটির ৮০ পার্সেন্ট সতেরো কোটি ৭৬ লক্ষ। সতেরো কোটি ৭৬ লক্ষ লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বাংলাদেশ অথবা ব্রাজিল হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করবে।

আমরা জানি ব্রাজিল আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক অনেক বড় হলেও জনসংখ্যায় প্রায় কাছাকাছি। জাইর মেসিয়াস বলসোনারো সামরিক বাহিনীর লোক। ডো অর ডায় নীতিতে আস্থা রেখে মানসিক বিকাশ এই পর্তুগিজের। সাও পাউলোর শৈশবজল পান করে বেড়ে উঠা এই বলসোনারো যখন একজন কংগ্রেসম্যাম আইনপ্রনেতা মহিলাকে বলতে পারে " আমি তোমাকে ধর্ষণ করবো না, কারন এটার যোগ্য তুমি নও" তখন হাজার হাজার লোক করোনায় মারা গেলে তিনি বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করতেই পারেন।

বাংলাদেশের সরকার প্রধান অবশ্যই বার বার বলছেন আশাহত না হওয়ার জন্যে। করোনার বিরুদ্ধে ফাইট করার জন্যে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বাংলাদেশের রয়েছে এমন কথা আকাশে বাতাসে শুনতে পাই। গার্মেন্টস কর্মীরা বলে অন্য কথা " ঘরে খাবার নাই, কাজ না করলে খামু কী?" করোনা আক্রমন করলে তিন বেলার বদলে ছয় বেলা খাবার খেয়েও কী তারা বাচতে পারবে? শুনেছিলাম দিনে একবেলা খেয়েও বেচে থাকা যায়।

খাবার দোহাই দিয়ে আপনি যখন চৌকাঠ পার হয়ে যাচ্ছেন তখন আপনি না মরলেও অন্যের মৃত্যুর কারন হচ্ছেন। ধরেন, মিস্টার আতর আলী করোনায় আক্রান্ত। আতর আলী থেকে জব্বার করোনায় আক্রান্ত হলো। জব্বার ভাবলো ঘরে বসে বসে আর কত কাল, এবার বউরে লইয়া শ্বশুর বাড়ি থেকে কয়েকদিনের জন্যে ঘুরে আসি।

জব্বার সাহেব করোনা নিয়ে শ্বশুর বাড়ি গেলেন মধুমাসের আম কাঠাল খাওয়ার জন্যে। জব্বার সাহেব থেকে তার শ্বশুর বাড়ির প্রত্যেকে করোনায় আক্রান্ত হলো। পরে জানতে পারি জব্বার সাহেবের শাশুড়ি মারা গেলেন। কারন জব্বার সাহেবের শাশুড়ির ভাইরাসের বিরুদ্ধে ফাইট করার জন্যে পর্যাপ্ত সক্ষমতা ছিল না।তাহলে খুনী কে? খুনী আতর আলী প্রথমে, তারপর জব্বার। এখন যারা ঘর থেকে বের হচ্ছে,আনন্দে আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে এরা প্রত্যেকে খুনী।

তাহলে আপনি বলতে পারেন সুইডেনের প্রত্যেকে ত আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারাও কী প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য খুনী? আরে ভাই, ওরে বোন, সুইডেন একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফ রাষ্ট্রপ্রধান হন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্তেফান লোফভেন (Sweden is a special country characterized by high levels of trust—not just between people but between people and government institutions)। তিনি সবাইকে বলে দিয়েছেন যে যেনো তারা কমনসেন্সের উপর ভরসা করে চলাফেরা করে। তাদের কমনসেন্সের মানে বুঝেন!? কমনসেন্সের ধারাপ্রবাহ আনকমনভাবে আমাদের মাথায় ঢুকে না। দুই-তিন দিন আপনার সাথে চলাফেরা করার পর জিজ্ঞেস করে বসবে আপনি চলেন কেমনে। আরে ভাই, এটা কোনো জানার বিষয় হলো?হাত পা চোখ কান নাক গলা মাথা মানে পর্যাপ্ত অঙ্গবহর থাকার পরও একজন মানুষের চলতে সমস্যা?

এক শিক্ষক ছাত্রকে উপদেশ দিলেন," বাবা একটা পিপড়াকেও মারবে না", ছাত্র পিপড়াকে মারে না ঠিকই কিন্তু রিকসাওয়ালাকে চড়থাপ্পড় সময়মতো দিয়ে থাকে দশ টাকা পাচ টাকার জন্যে। এই হলো এখানকার কমনসেন্স।

তাছাড়া আপনারা ত নিজেরা নিজেরা একটি আয়াত বানিয়ে ফেলেছেন। আয়াতটি হলো মুখ দিয়েছেন যে আল্লা রিযিকও দিবেন সেই আল্লা। এই আয়াতের উপর ভরসা রেখে কোটি কোটি সন্তান নিয়ে আসলেন পৃথিবীতে। ফলে সুইডেনে যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে একুশ জন বসবাস করে, আর আপনার দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে এগারো শত। সুইডেনের জনসংখ্যা দশ মিলিয়ন। সুইডেনের আয়তন ৪,৫০,২৯৫ বর্গকিলোমিটার (১৭৩,৮৬০ বর্গ মাইল)। আর আপনার দেশের?

সুইডেনকে মাথায় রেখে অনেকে আস্থাশীল পন্থার দিকে যাত্রা শুরুর করার অভিপ্রায় খুজে পাচ্ছেন প্রায়। তাই তাদের রচনায় উঠে আসছে "Herd Immunity Is the Only Realistic Option—the Question Is How to Get There Safely", আসলেই এটি একটি সংশয় ও আশার ব্যাপার। সংশয় ও আশার ব্যাপার যখন এক নৌকায় উঠে পড়ে মাঝির তখন কিচ্ছু করার থাকে না, মাঝি তখন বৈঠা ছেড়ে দিয়ে বাতাসের উপর ভরসা করতে থাকে।

এমন সময় অনেক মাঝি নৌকা ছেড়ে পালায়। এমন সময় অনেক যাত্রী নৌকা থেকে লাফ দিয়ে তীরে পৌঁছে যেতে চায়। বেলারুশ নৌকা থেকে লাফ দিলো কিনা এটাও একটা গবেষণার বিষয়।

মানছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাদের ২৫ পার্সেন্ট জনগণ মারা যায়, তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মানে কী ৮ মে দিনকে স্মরণ করার জন্যে উন্মুক্ত প্যারেডেরর ব্যবস্থা করতে হবে?  রাশিয়া যেখানে বিশাল আয়োজন করার পরিকল্পনা নিয়েও সীমিত আকারেও কোনো অনুষ্ঠান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেনি সেখানে তার মিত্র রাষ্ট্র  বেলারুশ কীভাবে করোনাকে এমন ওপেন চ্যালেঞ্জ করে তা অবশ্যই ভাববার বিষয়।

তবে বেলারুশের জনসংখ্যা ঘনত্ব কম। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪২ জন। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪২ জন বসবাস করা একপ্রকার জনবিচ্ছিন্ন জীবনের মতোই। কিন্তু সৌদি আরবে প্রতি বর্গকিলোমিটারে পনেরো জন লোক বসবাস করে। তারাও ত করোনার এই দিনে কারফিউ জারি করে। আমেরিকাতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৫ জন বসবাস করে। সেখানেও লকডাউন আরোপ হয়।অবশ্যই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিদিনই লকডাউন তুলে দিতে চায়। এতে অ্যান্থনি ফাউচিকে প্রতিদিনই ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতামতের বিরুদ্ধে অত্যন্ত ভদ্র ভাষায় গনতান্ত্রিক উপায়ে কথা বলতে হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প আর পৃথিবী বিখ্যাত সংক্রামক ভাইরাস গবেষক  অ্যান্থনি ফাউচির মুখের দিকে তাকিয়ে করোনার এই দিনে আমরা 😇 যখন কোনো সমাধান পাইনা তখন মনকে বলতে হয় when nothing is sure everything is possible!

'Nothing is sure absolutely nothing is sure' বিষয়কে সামনে রেখেও আমরা হ্যাপি বার্ড ডে টু ইউ জাতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারি। কয়েকদিন আগেও হ্যাপি বার্ড ডের যন্ত্রনায় কানমন ঝালাপালা। ঘরে চাল আনার মুরোদ নাই ঠিকই হ্যাপি বার্ড ডের কেক আসে নিয়ম করে। মাসিক যে বেতন পকেটে আসে তারই অধিকাংশ ট্রিট দেয়ার অলকমেঘে ভেসে যায়। বিবাহবার্ষিকী ত আছেই-- যেখানে প্রতিবছর স্বামী-স্ত্রী আবার নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অর্থাৎকম্পিউটারে অ্যান্টি-ভাইরাস যেমন বছর বছর রিনিউ করা লাগে তাদের বিয়েও প্রতি বছর রিনিউ করা লাগে আয়োজন করে নতুবা সম্পর্কে যে ইদ আসে না। রোজা রাখুক আর না রাখুক ইদ আসা লাগবেই।

আমাকে আপনাদের এলিট ভাবসাবের একমাত্র উপক্রোষ্টা ভাবতেই পারেন। তবে মাঝরাতে যারা উস্রি দেখতে চায় তাদের মনরোগ জাতির পৃথিবীর কোনো কাজে আসবে না,তারা নিজের হন্তারক। আর নিজ মানে তো অপর, অপর মানে তো পৃথিবী।

পৃথিবীতে জুন এলমিডা(৫ অক্টোবর ১৯৩০) এসে দেখেন তারা বাবা একজন ড্রাইভার। ড্রাইভারি করে সংসার চালান তিনি। এলমিডার পড়াশোনার খরচ জোগাতে অনেক কষ্ট হয় তার। অনেক কষ্ট করেও এলমিডাকে স্কুলের খরচ চালাচ্ছিলেন তিনি। স্কুলের পরে জুনের বাবার পক্ষে আর সম্ভব হয়নি একাডেমিক খরচের যোগান দেয়া। ষোল বছর পর যখন স্কুলের পড়াশোনা শেষ  জুন এলমিডা কাজে যোগদান করে।১৯৪৭ 'Glasgow Royal infirmary'তে  হিস্টোপ্যাথলজি টেকনিশিয়ান হিসাবে যোগদান করেন। পরে St Bartholomew's হাসপাতালে কয়েক বছর কাজ করেন। ক্যালেন্ডারের পাতায় চলে আসে ১৯৫৪ সাল।জুন এলমিডা একজন নারী। এবার তার সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা।জীবনে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে খুবই দক্ষ ও পরিশ্রমী তিনি। দক্ষতা আর পরিশ্রমমেশা তার উপক্রান্ত সিদ্ধান্তে পৃথিবী পেয়েছে অনেক নতুন নতুন মেন্টরপথ।

রুবেল্লা(Rubella) ভাইরাস নিয়ে যখন পৃথিবী আতঙ্কিত তখনই জুন এলমিডা ইমিউন- ইলেকট্রুমাইক্রোসকোপি ব্যবহার করে প্রথম রুবেল্লা ভাইরাসের চিত্র পৃথিবীর মানুষকে দেখাতে সক্ষম হোন। রুবেল্লা শব্দটি ল্যাটিন যার অর্থ pink red। তারপর জুন এলমিডা ডেভিড টাইরেলকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন নতুন একপ্রকার ভাইরাসের উপর গবেষণা। মুকুটের মতো আকৃতি বলে তারা নতুন রপ্ত ভাইরাসের নাম দেন করোনা।

করোনা ভাইরাস প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৩০ সালে। মোরগীর শ্বাসনালীতে এই ভাইরাস প্রথম বংশের বাতি ধরে রাখার চেষ্টা করে। মানুষ চিকেনপ্রিয় সম্প্রদায়। ১৯৬০ সালে করোনা ভাইরাস ডিম পারার স্থান আপডেট করে মানুষের শরীরের উপযোগী হয়ে উঠে।

দুই বছর আমি পোল্ট্রি মুরগির সাথে ছিলাম। ছিলাম বলতে পোল্ট্রি মুরগির বাচ্চা কিনে এনে বড় করে বিক্রি করতাম। আমাদের বাড়িতেই এই পোল্ট্রি মুরগির খামার ছিল।তখন আমি মাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। অবসর সময়। মুরগির বিভিন্ন প্রকার রোগের সাথে তখন পরিচিত হয়। পোল্ট্রি মুরগির সবচেয়ে ভভয়ঙ্কর রোগটির নাম গামবোরা। গামবোরা রোগ হলে মুরগির ঘনঘন পায়খানা হতে থাকে। অনেকটা মানুষের ডায়রিয়ার মতো। ফলে মুরগিকে তখন লাইট স্যালাইন দিতে হয়।এটি একটি ভাইরাস রোগ। পেটে পানি জমে যাওয়া তাদের আরেকটি রোগ। পানি জমার প্রধান কারন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।

মুরগির ঠান্ডা লাগতে দেখেছি।ঠান্ডা লাগলে মুরগি কককক করতে থাকে যেন কিছু বের করে দিতে চায়। এমন সময় তাদেরকে গভীরভাবে অব্জার্ভা করে দেখেছি তাদের গলায় অস্বস্তির  মাত্রা বেড়ে যায়, চোখ বের হয়ে আসতে চায়, তাদের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তখন তাদেরকে সুস্থ মুরগী থেকে আলাদা করে রাখতে হয়।

আজকের দিনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষের যে সিমটম প্রকাশ পাচ্ছে, প্রায় অধিকাংশ সিমটম আমি তখন আমার খামারের ঠান্ডালাগা মুরগির মাঝে দেখেছি। এই ঠান্ডালাগা মুরগিকে সুস্থ করার একটি মাত্র পন্থা ছিল তখন। হাই এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়ানো। এতে মুরগির ওজন কমে যেতো। কিন্তু মানুষের করোনা নামে যে ঠান্ডালাগা রোগ দেখা দিয়েছে তা এন্টিভাইরাল দিয়েও কাজ হচ্ছে না। এমন হতে পারে কোনো ঔষধ ছাড়াই মানুষকে কিছু মাস অথবা বছর জেলে রেখে সে এমনি এমনি চলে যাবে।

এই করোনা বিনতে কোভিড উনিশ কিন্তু মানুষকে মারতে চায় না, সে মানুষের মধ্যে বেচে থাকতে চায়।বেচে থাকার জন্য সে মানুষের নিজস্ব কোষকে মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে।একবার ভেবে দেখুন তো করোনার আচরন আপনার সাথে মিলে যাচ্ছে কিনা!?  এখনই ভাবনার সময়। ভাবুন। মনোযোগ দিয়ে মগজের তেল খরচ করে ভাবুন।

ভেবেই ফায়দা কী!? এখানে ভাবনার মূল্য জলের মূল্যের চেয়ে কম।এখানে যারা জলকে জল আর পানিকে পানি বলতে পারে তারাই সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী। জলকে গবেষণা করে যারা বলবে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন,জলকে আরও গবেষণা করে যারা প্লাজমা কনডিশনের কথা বলবে তারা এখানে মানুষ বটে, তাদের মূল্য সিস্টেমের একেবারে তলাবিহীন ঝুড়িতে। ফলে চুমুর চেয়ে চুমরানো এখানে জনপ্রিয় হয়ে উঠে স্বাভাবিক উপায়ে।

এখানে মসজিদের জন্যে অর্থ বরাদ্দ থাকে আর মন্দিরের জন্য বরাদ্দ থাকে প্রসাদ,আর বিজ্ঞানের জন্যে বরাদ্দ থাকে মসজিদ-মন্দিরের আশীর্বাদ কিংবা দোয়া। দোয়া আর আশীর্বাদ খেয়ে এখানকার বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী তেলাপোকার মতো দীর্ঘায়ু লাভ করে।

নিশ্চিত জীবনের আশায় এখানকার মানুষ দুটি কাজ নিশ্চিতভাবে করতে পারে।বিয়ে। চাকরি।বিয়ে করার আগে চাকরি অবশ্যই পাওয়া লাগবো,নতুবা বিয়ের বাজারে কদর কম।করোনার হাত থেকে আল্লা তাদের রক্ষা করলেও আল্লার নামে বেকার জামাইয়ের হাতে তারা মেয়ে তুলে দিতে রাজি নয়।আল্লার উপর ভরসা করে তারা জুতা মসজিদের বাইরে রেখে যেতে পারে না কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হলে আল্লা তাদের হেফাজত করবেন এই তাদের বিশ্বাস। হুজুগে যাকাত দিতে রাজি না তারা কিন্তু হুজুগে মারামারি করতে রেডি।

চাকরি শব্দটির সাথে আমি অবশ্যই দ্বিমত পোষণ করি।চাকরি শব্দটি এসেছে চাকর শব্দ থেকে। চাকর শব্দটি ফারসি।

দুই পরাক্রমশালী শক্তি যখন বাণিজ্যের সাথে সাথে ভারতবর্ষের ভূমিকেও কব্জা করার পরিকল্পনায় বুঁদ-ব্যস্ত, তখন ব্রিটিশদের প্রায় ছয় যুগ পর ১৬৬৭ সালে ভারতের জাহাজঘাটায় নতুন দুটি জাহাজ এসে নোঙর করে।

ব্রিটিশ আর ওলন্দাজদের সঙ্গে টক্কর দিতে ফরাসিরা ভারতবর্ষে আসে। তাই তারা একেবারে খাঁটি বণিকের মতো ব্যবসার সঠিক নথিপত্র নিয়ে আসে। অনেকের মতে,  সম্ভবত রাজা প্রথম ফ্রান্সিসের রাজত্বকালে,১৬০৩ সালে ফরাসিরা প্রথমবারের মতো ভারতবর্ষে পা রাখে। সেসময় জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন পমিয়ের ডি গনভিল।

রাজা, জমিদার, ওলন্দাজ, ফরাসি, ইংরেজদের চাপে পড়ে এই ভূমি তখনো জনগনের হতে পারেনি। এই ভূমির মালিক ছিল কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ শক্তি-- কাগজে  কলমে চলনে বলনে আচরনে জনগণ বা প্রজা ছিলো আমড়া কাঠের ঢেকি অথবা গাধা মশাইয়ের পীঠস্থান যা চাকর নামে পরিচিত-- চক্করের মতো আচরন করা যার কাজ।

এখন সেই ব্যবস্থা আর নেই। তবে চাকরি বা চাকর শব্দটি রয়ে গেছে। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ (১) অনুযায়ী জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক,আবার ২১(২) অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী কথাটি উল্লেখ রয়েছে। আমি অবশ্যই কর্মচারীও বলতে রাজি নয়। বলতে চাই সেবক।

একটি রাষ্ট্র চালানোর জন্যে মেথর থেকে শুরু করে মহতাজ পর্যন্ত প্রত্যেকে মূলত সেবক। তবে ক্যাডার ননক্যাডার সেবক হয়ে উঠার জন্যে বিশাল লাইনের কাহিনির পেছনে সাইকোলজিক্যাল ও সোসিও ইকোনমিক কনস্ট্রাকশন জনিত ব্যাপার বিদ্যমান।
একটা বিষয় নিয়ে কথা বললে বিষয়টি ক্লিয়ার হবে। বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান। তাহলে ঢাকা শহরে কোটি কোটি লোক কেন? ঢাকা শহরের নিশ্চয়ই বোরো ধানের ফলন ভালো হয় না কিংবা খামার বাড়িতে আমন ধান অথবা তরমুজের আশাতীত ফলন হয় না।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সারা বাংলাদেশকে করোনার ঝুকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছে। তাহলে কেবল ঢাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এতো বেশি কেন?

এই প্রশ্নের উত্তরে গেলেই আমরা জানতে পারবো আমরা একটা ছাগল জাতি-- বার পাতা খেয়েছি ঠিকই কোনো পাতায় ভালো করে খাইনি।ফলে ছাগলের মতো তিরিং বিরিং করতে পারি কিন্তু হালচাষ করতে পারি না।

হল অর্থ লাঙল। হাল অর্থও লাঙল। হলচালন থেকে হালচাষ কিনা তা নিয়ে গবেষণা করা যেতেই পারে। হল অর্থ আবার বৈঠকঘর। সিনেমা হল আবার অন্য একধরনের ঘর। আরবিতে তিন কালের এক কালকে বুঝাতে হাল শব্দ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফলে হাল অর্থ দাড়ায় অবস্থা, দশা, বর্তমান কাল। আর এখন হালকাল মানে করোনাকাল। এই হালকাল গরীবকে আরও গরীব করে তুলছে। এই হালকাল আমদানি নির্ভর মানসিকতাকে চ্যালেঞ্জ করে প্রত্যেক জাতিকে স্বনির্ভর হওয়ার দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। বর্তমান পৃথিবীতে পাচটি দেশ চা উৎপাদন ও রপ্তানিতে আলোচনার জায়গা দখল করে আছে -- চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া। শ্রীলঙ্কা মওকা পেয়ে চা রপ্তানিদাম বৃদ্ধি করেছে আরামসে। বাংলাদেশও চা উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাময় জায়গা হয়ে উঠতে পারতো। খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু হালচাষের দিকে বাংলাদেশের বিশেষ নজর নেই।

মুখে মুখে শুনে আসছি রাবন খুব অত্যাচারী রাজা ছিলেন। আসলে শয়তান না থাকলে ফেরেশতা হয়ে উঠার সুযোগ থাকে না। তাই ইতিহাসে একজন শকুনির প্রয়োজন একজন কৃষ্ণ মুরারি ( মুর+অরি)  প্রতিষ্ঠা করার জন্যে। মুর নামক দৈত্যকে কৃষ্ণ বধ করেছিলেন তাই তিনি কৃষ্ণ মুরারি। মায়াসীতা দ্রৌপদী নাম ধারন করে পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন। তার আগমন মানে হস্তিনাপুরের পাশাখেলা। আর হস্তিনাপুরের পাশাখেলা মানে কুরুক্ষেত্র। আর কুরুক্ষেত্র মানে নিষাদ আর ব্রাহ্মণ্যবাদের দ্বন্দ্ব রেখা, কুরুক্ষেত্র মানে রক্তের বন্যা।

বলছিলাম রাবনের কথা। রাবন ব্রাহ্মণদের কাছ থেকেও খাজনা নিতেন।ব্রাহ্মণরা হুজুর টাইপের মানুষ। দোয়া দরুদ তপ জপ করা যাদের কাজ। তারা খাজনা দিবে কোথা থেকে। খাজনা দিতে অক্ষম ব্রাহ্মণদের কাছ থেকে রাবন রক্ত নিতো, নিয়ে মাটির পাত্রে সংগ্রহ করতো।

ব্রাহ্মণরা অভিশাপ দিলো-- এই মাটির পাত্র যেখানেই রাখা হবে সেখানেই অভাব অনটন দেখা দিবে। রাবন জানতো ব্রাহ্মণদের অভিশাপ সত্য হবে। তাই সে রক্তভরা মাটির পাত্র মিথিলার রাজা জনকের রাজ্যে রেখে আসে রাতের  অন্ধকারে। জনকের রাজ্যে অভাব দেখা দেয়। জনক রাজা অভাব থেকে পরিত্রাণের জন্যে বিধান সভার সাহায্য প্রার্থনা করে। বিধান সভা তাকে হালচাষের পরামর্শ দেয়।রাজা জনক হালচাষ করতে গিয়ে বাচ্চা  সীতার দেখা পায়।সীতা মানে তাই হলরেখা।

জনক রাজার হালচাষের বিষয়টি মেটাফর হিসাবে নিলাম।অর্থাৎ রহস্যে ভরপুর এই বসুন্ধরার রহস্যময় ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দিয়ে থাকে কৃষি কাজের প্রতি দুর্যোগকালে বিশেষ নজর দিতে। দুর্যোগকালে কেন, সব কালেই কৃষি কাজের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া আবশ্যক। আজকের এই করোনাবাহী বিমান পৃথিবীর সব দেশের এয়ারপোর্টগামী বিমানের হতধী অবস্থার ব্যালেন্সশিট। গার্মেন্টস শিল্প কাপড় উৎপাদন করতে পারবে। কিন্তু খাবার উৎপাদন করবে কে?  সো কল্ড ইন্ডাস্ট্রি প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান করতে পারবে, আবার তাদেরকে পোটেনশিয়াল থ্রেটেও রাখবে দিনের পর দিন যাতে তাদের মেরুদণ্ড নরম লেকলেকে হয়ে উঠে, যাতে তারা কোনোকালে ত্রান নেয়ার যোগ্যতা না হারায়।

ইন্ডাস্ট্রির বিরোধিতা করছি না। ইইন্ডাস্ট্রির বিরোপন মৃতভাস নিয়ে কথা বলছি মাত্র।

করোনা ভাইরাস টেস্ট করা হচ্ছে মলিকুলার ডায়াগনস্টিক টেস্ট পদ্ধতিতে যার প্রধান প্রযুক্তি রিয়েল টাইম পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন ( RT-- PCR)। আরও আছে 'পয়েন্ট অব কেয়ার' কিট ও ডিভাইস, যেগুলোকে সাধারণত বলা হয় র‍্যাপিড টেস্ট।
আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার হৃদপিণ্ড বলা হয় ডায়াগনস্টিক টেস্টিংকে। ডায়াগনস্টিক কিট ও ম্যানুফেকচারিং বায়োটেক ইন্ডাস্ট্রির প্রধান কারিগর মূলত লাইফ সাইন্স গ্রাজুয়েট।

মেডিকেল ডিভাইস ইন্ডাস্ট্রি অবশ্যই সময়ের দাবি। এর মানে ত এই নয় যে লুঙ্গি খুলে টুপির ব্যবস্থা করতেই হবে।

আমরা লুঙ্গি খুলে টুপির ব্যবস্থা করছি কিনা তা উপলব্ধি করার জন্যে কয়েকটি গুগল টাইপ ইনফরমেশনই যথেষ্ট।

আয়ুর্বেদ ও ইউনানি পদ্ধতির চিকিৎসায় পাকা ফল ল্যাকজেটিভ, রোচক ও টনিক বা বলকারকরূপে ব্যবহৃত হয়। রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে পাকা আম এমনকি কাঁচা আম মহৌষধ। কচি পাতার রস দাঁতের ব্যথা  উপশমকারী। আমের শুকনো মুকুল পাতলা পায়খানা, পুরনো আমাশয় এবং প্রস্রাবের জ্বালা-যন্ত্রনা উপশম করে। জ্বর, বুকের ব্যথা, বহুমূত্র রোগের জন্য আমের পাতার চূর্ণ ব্যবহৃত হয়।

আজকাল কত ধরনের আমের নাম আমরা শুনতে পাই। কিন্তু কয়েকপ্রকার আম দেখতে পাই। বদরুল আসমার,রত্না, বেনারসি ল্যাংড়া, হিন্দি, খান বিলাস, সুন্দরী, বৃন্দাবনি, বাতাসা,বাদশা, চোষা, দুধ কুমারী, দুধ কুমার, মাধুরী, কৃষ্ণকলি, কলম সুন্দরী, হুসনে আরা, জামাই পছন্দ, গোপালভোগ,আমরুপালি, ফজলি, নীলাম্বরী।

নীলাম্বরী নাম শুনলেই কেমন রাধা রাধা একটা ফিল আসে। এক সময় এতো নামের খবর বাংলার মানুষ জানতো না। কিন্তু আমমাখা দুধভাত দারুন প্রিয় এই ভারতবর্ষের মানুষের কাছে। জামে যেনো গাছে একখণ্ড মেঘ এসে জমা হতো। এখন মাতৃগাছ মাতৃভূমি থেকে দিনে দিনে উধাও হয়ে যাচ্ছে।  মাতৃভূমিতে ঠাই করে নিচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের জ্বালানি গাছ, কাঠগাছ। কাঠগাছ অবশ্যই আমাদের প্রয়োজন। আমরা কেন ভুলে যাই মাতৃগাছও কাঠগাছ। কাঠাল গাছের কাঠ খুবই ভালো। মাতৃগাছগুলো যেনো একের ভেতর পাচ।

নিজস্ব প্রজাতির ধান ছিল আমাদের। চীনা ভাষার Ou-liz শব্দটি আরবিতে Oruz ও গ্রিক ভাষায় Oryza হয়ে শেষে Ritz ও Rice হয়েছে। ধান বা ধান্য শব্দের উৎপত্তি অজ্ঞাত। চামারা, বাশিরাজ,গাঞ্জিয়া, বাশফুল, রাতা বোরো, আঁশযুক্ত লাল বিরুই,হালকা আঁশযুক্ত লাল বিরুই,নুনিয়া, কালো জিরা, চিনিগুড়া, তুলসীমালা,বোনোতোষ, পাইজামসহ প্রায় ২৫০ প্রজাতির ধান ছিল আমাদের নিজস্ব। পাইজাম ধানের গন্ধে মন ব্যাকুল হয়ে যেতো। যদিও পাইজাম দেশী কিনা এই নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। বলা হয়ে থাকে পাকিস্তানের প, মালেশিয়ার ম, জাপানের জ থেকে পাইজাম নামকরণ করা হয়েছে।

নিজস্ব ধান ত দূরের কথা, আমাদের যারা কৃষক তারা আর কৃষিকাজ করতে রাজি না। তারা কৃষিকাজ ছেড়ে ডায়বেটিস কারখানায় কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। কৃষকের সন্তান আজ শিক্ষিত। শিক্ষিত সন্তান আজ বাবার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বাবাকে কৃষিকাজ করতে দিচ্ছে না।বাবাও চাইতো সন্তান শিক্ষিত হোক, কুলুর বলদ বা কলুর বলদ জীবন থেকে সে নিস্তার পাক অথবা এমন কলুর বলদ জীবনে যেনো তার সন্তানকে না থাকতে হয়।

দেশী তেল পেশাই যন্ত্রকে ঘানি, ঘানিযন্ত্র, ঘানিকল বলা হয়। অর্থাৎ যে যন্ত্রে সর্ষে বা সেরকম কোনো তৈলবীজকে নিষ্পেষণ করে তেল ও খোল আলাদা করা হয়। "তৈল নিষ্পেষণ" একটি প্রাচীন জীবিকা। এই পেশার লোকেদের বলা হয় কলু।

ঘানি কাজ করে ঘূর্ণন দ্বারা। সাধারণতঃ ঘানি টানবার জন্য বলদ ব্যবহার করে। অর্থাৎ ঘানি ঘূর্ননের জন্যে কলু যে বলদ ব্যবহার করে তাই "কলুর বলদ"। সারাদিন একটানা ঘানি টানা যার কাজ। কলুর বলদের অনেক সময় চোখ বাঁধা থাকে। ঘানি টানা খুব পরিশ্রমের কাজ। তাই আগেকার দিনে সশ্রম কারাদন্ডের বন্দীদের দিয়ে ঘানি ঘোরানো হত। তাই থেকে জেলে যাওয়াকেই অনেক সময় জেলের ঘানি ঘোরানো বলা হয়।

আমাদের কৃষক এই কলুর বলদ জীবন থেকে নিস্তার পেয়েছি কিনা পরিপূর্ণভাবে এই কথা ভাবনাতে আসার আগে চোখের সামনে ভেসে উঠে কালভার্টে ব্রিজ বিল্ডিংমুখী উন্নয়নের পতপতে পতাকা।  তবে আজকের দিনের এই করোনাবাহি বিমান আমাদেরকে এমন দেশে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে যেই দেশ নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থার প্রত্যেকটি ধাপকে গতিশীল করার প্রয়াস জানায়।

সৌদি সরকার ৫০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে জর্ডান ও মিশর সীমান্তে লোহিত সাগর ও আকাবা উপসাগরকে কেদ্র করে দশ হাজার দুইশো ত্রিশ বর্গমাইলের 'নিয়ম' প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখতেই পারেন। এই মেঘাসিটির জন্যে মোহাম্মদ বিন সালমান হোয়াইতাত নামে বেদুঈন গোত্রের প্রায় বিশ হাজার লোককে উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। কিন্তু করোনাকালে মক্কা শরীফ বন্ধ, তেলের দাম নেমে আসছে। তেল আর মক্কার হজ্জ কাফেলা থেকে সৌদি সরকার সবচেয়ে বেশি আয় করে। অর্জিত আয় দিয়ে আমেরিকা থেকে আনা ভাড়াটে সৈনিক দিয়ে নিজেদের হেফাজতের কার্যপ্রক্রিয়া সম্পাদনা করে থাকে। এখন?  এখন? এখন সৌদির রাজপরিবারের অবশ্যই ভাবনা তৈরি হবে ভাড়া করা মন্ত্র আর তন্ত্র দিয়ে ইরানের সাথে নিজেদের তুলনা করা যাবে না। রেজা শাহ পাহলভীর ইরান আর এখন নেই। এখনকার ইরান শিক্ষা চিকিৎসা সিনেমা স্বাস্থ্যে প্রায় নিজস্ব মন্ত্রে তন্ত্রে দীক্ষিত। ইরান হয়তো কিউবার মতো চিকিৎসক অন্য রাষ্ট্রের সেবার কাজে পাঠাতে পারছে না কিন্তু নিজেদের প্রয়োজন নিজেরা ফোলফিল ত করতে পারছে। এটাই সাফিসিয়েন্ট। সাফিসিয়েন্ট শব্দটির সাথে আমরা পরিচিত হতে পারে নাই বিধায় নদী হত্যা করে পুকুরে মাছ চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়ি যা কিনা বাংলা প্রবাদে গরু মেরে জুতা দান। সমস্যা নাই। গরু মেরে তার চামড়া দিয়ে জুতা ত বানিয়ে দিলেন। তাও কম কী!?

ফসল বিষয়টি বরাবরই পরকালের মতো গোপন বলে মনে করানো হয়েছে আমাদেরকে। রেজাল্ট শব্দটি বুঝলেও ফসল শব্দটি আমরা বুঝি না। আমাদের ঠিক বোঝানো হয় নাই। সব বিষয়ে পাশ করলে রেজাল্ট ভালো হয়। কোনো একটি সাবজেক্টে অকৃতকার্য হলে রেজাল্ট খারাপ। অথচ ফসল বলতে আমরা শুধু বুঝি ধান বা পাট অথবা সরিষা। ত্রিশ শতাংশ জমিতে আগে ধান হতো সাত থেকে আট মুন। তাও কৃষক কৃষিকাজ করতো, এখন ত্রিশ শতাংশে ধান হয় বিশ থেকে ত্রিশ মুন, এখন কৃষক কৃষিকাজ করে না। কিন্তু এই কথা ভুলে গেলে চলবে না আগে জমিতে একপ্রকার নাড়া হতো যা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যেতো, বর্ষাকালে আউশ ধান হতো, জলের সাথে সাথে বেড়ে উঠতো তার শরীর, এখন তা হয় না।

জমিতে বর্ষা শেষে প্রচুর মাছ হতো-- পুটি মাছ, হিং মাছ, মাগুর মাছ, জাগুর মাছ, লাডি মাছ, বাইম মাছ, কই মাছ,কাতলা মাছ,গুত্তুম মাছ,টেংরা মাছ,ইছা মাছ,বৈছা মাছ,বাশপাতা মাছ। এখন ক্ষেতে ত দূরের কথা নদীতেই মাছ নাই।বর্ষার জলে হালুক পাওয়া যেতো, পাওয়া যেতো শাপলা যা সবজি হিসাবে ধারুন পথ্যি।

কৃষক ধান ভাঙানোর পর চাল পেতো, পেতো কুরা, কুরা গরুর খাবার, পেতো চুহৈল যা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যেতো, গরু থেকে পেতো গোবর যা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হতো, ধানগাছ হয়ে যেতো বন, বন থেকে গরুর খাবার, চালকে দুইভাবে দেখা হতো-- হুদ চাল, মূল চাল।হুদ চাল দিয়ে গরুকে ঝাও করে খাওয়ানো যেতো, আবার হুদটালাও কৃষক ঘরে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। হুদটালা আর হুটকির ভর্তা খুবই জনপ্রিয় খাবার। পাট থেকে যে হুলা পাওয়া যেতো তা থেকে হতো জ্বালানি, পাটের ছোবরা থেকে হতো জ্বালানি। গরুর গু আবার জৈবসার। সরিষার গাছ জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হতো, সরিষা ভাঙানোর পর মানুষ পেতে নির্ভেজাল খাটি হুওরার তেল,পেতে হৈল। হৈল আবার গরুর খাবার। বর্ষায় কচুরিপানা ভেসে আসতো ক্ষেতে। ক্ষেতে জল টইটম্বুর করতো। কচুরিপানা দিয়ে গরুর খাবার হয়ে যেতো। বর্ষা শেষে ক্ষেতেই পড়ে থাকতো কচুরিপানা। তাকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যেতো আবার জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করা যেতো।

প্রতি বছর ঘরের চালে ছই গাছ বড় করে তুলতেন কৃষানি। প্রথমে ছই রান্না করে খাওয়া হতো, পরে পাকনা ছইয়ের অল্প কিছু অংশ বীজ হিসাবে রেখে বাকি অংশ ভেজে ভেজে সারা বছর খাওয়া হতো, বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে। টানা বৃষ্টি হতো,দশ থেকে এগারো দিনব্যাপী বৃষ্টি। আর এখন?  এখন তো পুলাফানের মুতের লাহান বৃষ্টি হয়, দশ বিশটা পুলার মুত একসঙ্গে করলে যে পানি হয় সারা বছরে সেই পরিমান বর্ষাও হয় না। কেন এমন হলো কেন এমন হয়?

এক লোক অসুস্থ হয়ে গেলেন। তিনি আর কোনোভাবেই সুস্থ হচ্ছেন না। না, তার করোনা হয়নি। তার কোনো প্রকার রোগও পাচ্ছে না ডাক্তার। দিনে দিনে রোগী যখন মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে তখন হঠাৎ একজন ডাক্তার নোটিশ করলে রোগীর মুখে মারাত্মক দুর্গন্ধ হচ্ছে। ডাক্তার ভাবলেন রোগীর দাতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। পরীক্ষা করে দেখা গেলো চাফার দাতের মাড়ি দিয়ে ফুইজ বের হচ্ছে (ডেন্টাল প্লাক হলো ব্যাকটেরিয়া কিংবা অন্যান্য জীবাণু দ্বারা তৈরি এক ধরণের আঠালো পদার্থ যা দাঁতের চারপাশে লেগে থাকে। এঁকে ব্যাকটেরিয়ান প্লাকও বলা হয়ে থাকে।
মূলত Streptococcus Mutants, Lactobacilli ব্যাকটেরিয়ার ফলে ডেন্টাল প্লাক সৃষ্টি হয়। ডেন্টাল প্লাক ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তৈরি হয়ে থাকে, এটি দাঁতের সাথে লেগে থাকে, যদি এটি ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পরিষ্কার না হয় তবে তা ধীরে ধীরে শক্ত হতে থাকে এবং ৯ থেকে ২১ দিনের মধ্যে এটা পাথরের রুপ ধারন করে মাড়ির সঙ্গে শক্তভাবে লেগে থাকে। ডেন্টাল প্লাক পাথরের রুপ ধারন করার পর মাড়িতে ব্যাথা অনুভব ও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া এবং দাঁত শিরশির করে। এই অবস্থাকে বলা হয় জিনজিভাইটিস বা Inflammation of the gingiva। জিনজিভাইটিস হওয়ার পরও যদি সচেতন না হয় তবে পরবর্তীতে মাড়ি লাল হয়ে যাওয়া, মাড়ী দিয়ে রক্ত পড়া, মাড়ি ও দাঁতের সংযোগস্থলে পুজ হওয়া, মুখে বিশ্রী গন্ধ, দাঁত নড়বড়ে হয়ে যায় এবং পরে যায়। এই অবস্থাকে পেরিওনটাইটিস বলা হয়ে থাকে। এসব মাড়ির রোগ মূলত যারা দাঁতের প্রতি যত্নশীল না, যাদের আঁকাবাঁকা দাঁত এবং গর্ভবতী মহিলাদের হরমোন পরিবর্তনের কারণে বেশী হয়ে থাকে)। এই ফুইজ রোগীকে ভালো থাকতে দিচ্ছে না। রোগীর দাতের চিকিৎসা করা হলো। রোগী আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে। সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়া কাজকর্মে মনোযোগ দেন। এখন প্রশ্ন যদি করি-- সমস্যা ছিল শরীরের একটি কেন্দ্রে-- তাহলে কেন সারা শরীর অসুস্থ হয়ে গেলো? উত্তর আসবে প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রত্যেকের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত,সম্পর্কিত। আমরা আমাদের বানানো রাসায়নিক বিষক্রিয়া প্রকৃতির উপর প্রয়োগ করে প্রকৃতির খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট করে ফেলেছি। ফলে প্রকৃতিতে দেখা দিচ্ছে ভয়ঙ্কর বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

অথচ একটা কৃষক পরিবার ছিল পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যের আখড়া  হিতকারী খাদ্যের আধার। ফলে ডাক্তার বিষয়টি তাদের কাছে বরাবরই অচেনা ছিল।মৃত্যুই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় রোগ।
আর এখন?
প্রত্যেকটি ঘর একটা ভাসমান হাসপাতাল। ঘরে ধান আসতেছে ঠিকই কিন্তু ফসলের যে পরিপূর্ণ আইডিয়া তা আর নেই। অত্যাধুনিক বিষক্রিয়া, ফার্টিলিটি বৃদ্ধির প্রকল্পে বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ব্যবহারের ফলে মাটির গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে। মাটিকে বাচতে দিচ্ছে না মানুষ। মাটি কিন্তু গাছকে বাচায় না, গাছ মাটিকে বাচায়।সাধারণ একটি বিষয় নোটিশ করলেই বিষয়টি উপলব্ধ হওয়ার কথা। নদীর ভাঙন রোধ কল্পে গাছ লাগানো হয় মাটির শরীরে।মরুভূমিতে কেন গাছ জন্মে না? সহজ কথা, মরুভূমি-মাটির মিন্সট্রেশন বন্ধ।ফলে স্বামীর মিললেও বাচ্চা হবে না তার।
কোনো মাটি যখন তার উর্বরতা শক্তি হারায় তখন সে কাঁটা গাছের জন্ম দিয়ে এসওএস বার্তা দিয়ে থাকে। গাছ প্রতিনিয়ত দিনের আলো ব্যবহার করে সূর্য থেকে খাবার সংগ্রহ করে শেকড় দিয়ে মাটির সৈনিকদের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়, ফলে মাটির সৈনিকরা বেচে থাকে, মাটি থাকে নিরাপদ সুস্থ। আর মানুষ? এই গাছ, গাছের আবাসভূমি জঙ্গলকে, মাটিকে ধর্ষণ করে চলছে, জলকে ধর্ষণ করে চলছে। মাটি জল মামলা করবে কার কাছে?  জলাভূমির দেশেও জল কিনে খেতে হয়। এটাই নাকি উন্নতি। এটা উন্নতি নয়। এটা গরু মেরে জুতা দান।

কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশের জাতীয় কবি।জাতীয় কবি বলে তার রচনা কিন্তু জাতীয় সঙ্গীত নয় এখানে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল অবদানে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি হলেন। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠক শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় পতাকা থেকে দেশের মানচিত্র বাদ দিয়ে জাতীয় পতাকা চূড়ান্ত করা হয়, 'আমার সোনার বাংলা' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা যা জাতীয় সঙ্গীত, 'চল চল চল' কাজী নজরুল ইসলামের রচনা যার প্রথম একুশ লাইন জাতীয় কুচকাওয়াজ সংগীত হিসাবে গৃহীত হয়।

২৩ চৈত্র ১৩২৭ সালে নজরুল ইসলাম কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুর গ্রামে আসেন। তিনি এখানে ৭১ দিন অবস্থান করেন। ১২০ কবিতা ও ১৬০ গান রচনা করেন বলে মনে করা হয় দৌলতপুর থাকা অবস্থায়।

দৌলতপুরের মেয়ে সৈয়দা আসার খানম। বাবা নাম রেখেছিলেন দুবরাজ, সবাই ডাকত দুবি।মামারা বলত, যুবরাজ আর যুবি। মুন্সি আব্দুল খালেক অকালেই যুবি আর তার ভাইবোনকে রেখে জান্নাতের সুখ ভোগ করার জন্যে চলে যান।ফলে সৈয়দা আসার খানম ও তার পরিবারের দেখভালের দায়িত্বভার ভর্তায় খানদের উপরে বিশেষ করে আলী আকবরের উপরে।

আলী আকবর নজরুল ইসলামকে দৌলতপুর নিয়ে আসেন। যুবিকে দেখে নজরুল ইসলামের মন উতলা হয়ে উঠে। যুবিকে প্রেমের প্রস্তাব দেন তিনি। যুবির নাম দিয়ে দিলেন নার্গিস। নজরুলের প্রিয় কবি নাকি হাফিজ। হাফিজের কবিতায় নাকি নার্গিস ফুলের কথা আছে। তাই সৈয়দা আসার খানমের নাম দিলেন তিনি নার্গিস। কিন্তু নার্গিস নিয়ে যে পৌরানিক কাহিনি বিদ্যমান তা তো খুবই হৃদয়বিদারক। নার্সাসিসের করুন পরিনতি নার্গিস। অর্থাৎ নার্সাসিস নিজপ্রেমে এতো ডুবে গিয়েছিলেন যে মুখ ডুবিয়ে জল পান করার কথা ভুলে যায় সে। ফলে তৃষ্ণায় বুক ফেটে মারা যায় সে। তার মৃতদেহ থেকে নার্গিসফুল। এই কাহিনি কি কাজী নজরুল জানতেন, নাকি জাদুকাব্য রচনার স্বার্থে তা তিনি মিউট করেছিলেন!?

জাদুকাব্য রচনা করে নার্গিসকে প্রেমিকা করে তুললেন এবং বিয়ে করলেন। বিয়েরাতে চলে গেলেন শ্রাবন মাসে আসবে বলে। শ্রাবন মাস আসে শ্রাবন মাস যায় কিন্তু আমাদের কাজীদা আর আসেন না নার্গিসফুলে ঘ্রানমুগ্ধ পথিক হতে।

দৌলতপুর গ্রাম থেকে চলে যান কুমিল্লা। সেখানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাথে সাথে পুরোদমে চলে 'দোলনচাঁপা' লেখার প্রস্তুতি (দোলনচাঁপার আদি নিবাস নেপাল ও ভারতের হিমালয় অঞ্চল। এটি কিউবার জাতীয় ফুল। এটি ব্রাজিলে প্রথম নেয়া হয় ক্রীতদাস যুগে; যেখানে ক্রীতদাসেরা দোলনচাঁপা গাছের পাতাকে তোষকের মত ব্যবহার করতো। বর্তমানে ব্রাজিলে এর ব্যাপকতার কারণে একে রাক্ষুসে আগাছা হিসেবে অভিহত করা হয়। হাওয়াই অঞ্চলেও একে আগাছা গণ্য করা হয়। স্পেনীয় উপনিবেশ আমলে নারীরা এই ফুলের মধ্যে গোপন বার্তা লুকিয়ে আদান প্রদান করতো)।
দুলির আরেক নাম দোলন।

প্রমীলার পিতার নাম বসন্ত কুমার সেনগুপ্ত। মায়ের নাম গিরিবালা সেনগুপ্তা। বসন্ত কুমার সেনগুপ্তের আরও দু’ভাই ছিলো। জগত কুমার সেনগুপ্ত তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা এবং ইন্দ্র কুমার সেনগুপ্ত তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা।

ইন্দ্র কুমার সেন তার স্ত্রী বিরজাসুন্দরী দেবীকে নিয়ে বসবাস করতো কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে। বসন্ত কুমার সেনের মৃত্যুর পর গিরিবালা দেবী তার মেয়ে দুলিকে নিয়ে দেবর ইন্দ্রকুমার সেনের আশ্রয় গ্রহণ করে।

ইন্দ্রকুমার সেনের স্ত্রী বিরজাসুন্দরী দেবীর মাতৃস্নেহে নজরুল অভিভূত হন। আর তার বড় ভাইয়ের মেয়ে আশালতা সেন দুলির গান শুনে বিমুগ্ধ হন কবি নজরুল।
কবি নজরুল তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘দোলনচাঁপা’ প্রমীলার নামে উৎসর্গ করেন। এটি ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে (আশ্বিন, ১৩৩০ বঙ্গাব্দ) আর্য পাবলিশি হাউস থেকে প্রকাশিত হয়।

বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট হয়ে যান প্রমীলা। ২৫ এপ্রিল ১৯২৪ নজরুল-প্রমীলা বিয়ে হয়ে গেলো। তখন প্রমীলার বয়স ১৬। তাই আহলে কিতাব অনুযায়ী নজরুল প্রমীলাকে বিয়ে করলেন। কারন সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুসারে বিয়ে করতে হলে মেয়ের বয়স হতে হবে ১৮।

আর নার্গিস?

তখনও শ্রাবন মাসের দিকে চেয়ে রইলেন। সৈয়দা আসার খানমের জন্ম ১৯০৪ সালে।নজরুল প্রমীলাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলেন হয়তো। নার্গিসের চোখে ঘুম নাই। নার্গিসের চোখের সমস্ত ঘুম কেড়ে নিলেন ধূমকেতু নজরুল। জেন্টেলম্যানকে আনার জন্যে আলী আকবর কলকাতায় গেলেন। জেন্টলম্যান আসলেন না। নার্গিস স্বয়ং গেলেন তাও তিনি আসলেন না। আলী আকবরের পীড়াপীড়িতে নার্গিস ভারতীয় লাইব্রেরির রাখাল আজিজুল হাকিমকে ১৯৩৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বিয়ে করে।আজিজুল হাকিমও নজরুলভক্ত একজন কবি। বিয়ের ৯ দিন আগে হলুদ খামে একটি চিঠি আসে নার্গিসের কাছ জেন্টলম্যানের পক্ষ থেকে। যেখানে তিনি বলেন," প্রেমের ভুবনে তুমি বিজয়িনী, আমি পরাজিত।আমি আজ অসহায়।"

এমন শান্তনু বানীও কি গরু মেরে জুতা দান নয়!?  নজরুলের জন্যে সতেরো বছর ধরে অপেক্ষার পর অপেক্ষা করতে করতে সৈয়দা আসার খানমের চোখের জলে যে সাগর হয়েছে তার খবর একেবারে না নিয়ে আপনি মানবিক বিদ্রোহী সাম্যবাদী কবি হয়ে যাবেন? এতো সোজা?  মেয়েটার স্বামী থেকেও স্বামীহারা। পারিপার্শ্বিক বাঙালি মধ্যবিত্ত মুসলিম সমাজ, চারপাশের নিমজ্জিত মানসিকতা সৈয়দা আসার খানমকে দিনের পর দিন সীতাগ্নি প্রশ্ন করে তার হৃদয়ে যে অগ্নিচুল্লি জ্বেলে রেখেছে তার দায় না মোচন করে আপনি মানবজাতির কান্ডারি হয়ে যাবেন? এতো সোজা!?

নার্গিসকে বিয়ে করার কয়েক মাসের মাথায় আপনি প্রমীলার প্রেমে পড়েন, আবার ফজিলাতুন্নেছার জন্যে আপনার হৃদয়ের হাহাকারের শেষ নাই, আবার নার্গিসকে চিঠিতে সান্ত্বনা নামক জুতা দিতেই থাকেন দিতেই থাকেন। গরু মারা গেলে যাক?  কুলিকে কে ঠ্যালা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছে এই নিয়ে আপনার চোখে জল আসে, লিখে ফেলেন কুলি-মজুর কবিতা।  আর একজন নারীকে স্বামী থেকেও স্বামীহারা করে দিলেন, আপনার হৃদয় এতটুকু কাপল না?

এমন তো নয় যে আপনার হৃদয়ে সেন্সর বলে কিছু ছিল না। আপনার হৃদয়ের সেন্সর আপনার ধীমান কল্পনা শক্তির প্রখরতা আকাশের  উজ্জ্বল নীহারিকাপুঞ্জ থেকেও স্পষ্ট স্বচ্ছ উন্মথন। আপনার ঐকবাদন মহিমাধরা চিত্তের সন্ধান পাই 'রিক্তের বেদন' গ্রন্থের ' স্বামীহারা' গল্পে। এই গল্পে একজন স্বামীহারা নারীর হৃদয়বেদনা কলেরা মহামারীর রূপক-কথার মাধ্যমে আপনি উপমা ইতিহাস সময়-বাস্তবতার নিষ্ঠাবান আচরন প্রয়াসে উপস্থিত কমান্ডো ধ্যানে উপস্থাপন করে গেলেন--
"এ হতভাগিনীকে জ্বালিয়ে কার মঙ্গল সাধন করছেন মঙ্গলময়? তাই ভাবি -- আর,ভাবি-- কোন কূলকিনারা পাই না,এর যেন আগাও নেই, গোড়াও নেই। কি ছিল-- কি হ'ল,-- এ শুধু একটা বিরাট গোলমাল!"

এই বিরাট গোলমালে আমি নজরুল-নার্গিস  দেখতে পাই। দেখতে পাই নার্গিসফুলের ম্লান হয়ে যাওয়ার চিত্র।রিক্তের বেদন মোট ৮টি গল্প নিয়ে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রকাশক ওরিয়েন্টাল প্রিন্টার্স এন্ড পাবলিশার্স লিমিটেড, কলিকাতা।

স্বামীহারা গল্পে আত্মহত্যার বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন নজরুল বিধবা নারীর জবানিতে (কেরোসিনে পোড়া, জলে ডোবা, গলায় দড়ি দেওয়া, বিষ খাওয়া, মেয়েদের জাতটার যেন রোগের মধ্যে দাঁড়িয়েছে!  আমার কপাল পুড়লেও আমি ও- রকম ' হারামি মওয়াত'কে  প্রাণ থেকে ঘৃণা করি)। কারন নার্গিস আত্মহত্যা করতে পারে এমন বার্তাও নজরুলের কাছে ছিলো।

কপালকুণ্ডলা (কপালকুণ্ডলা সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত দ্বিতীয় উপন্যাস। সম্ভবত এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক রোমান্টিক উপন্যাস। ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। বাংলা সাহিত্যের একটি কাব্যধর্মী উপন্যাস কপালকুণ্ডলা) উপন্যাসের যোগসাধক সন্ন্যাসী কাপালিক মনে হয় আপনাকে, মনে হয় না সপ্তগ্রামনিবাসী যুবক নবকুমার। কারন নার্গিসের লাশের উপর দিয়ে রচনা করেছেন আপনি সাহিত্য। মৃত মনের ভার বহন করতে নার্গিসকে কত কষ্ট যাতনা অনিদ্রা অনাহার বয়ে যেতে হয়েছে আপনার জেনেও না জানার উপায়ান্তর রূপান্তর ভাবান্তর সত্যিই আপনাকে একজন সাহিত্যের কাপালিকচর বলে দৃশ্যমান করে তুলে সময়নদীর জলে।আপনি পেয়েছেন বেদনা মানিক আর সৈয়দা আসার খানম পেয়েছে বেদনাঝড়।

তবে একজন কাপালিক হিসাবে আপনি স্বার্থক। নতুবা বাঙালি জীবনের কালিক মহামারী এতো সুন্দর করে কেমন করে উপস্থাপন করতে পারেন স্বামীহারা গল্পের ভাষা-বয়ানে-- ২০২০ সালে এসে পৃথিবী যখন থেমে যায় করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় তখনো আপনি প্রাসঙ্গিক--মনে হয় না আপনি হুজুগের, মনে হয় আপনি যুগের মানুষ।

হ্যাঁ, আমি কাজী নজরুল ইসলাম (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ –১২ ভাদ্র ১৩৮৩)  সম্পর্কে বলছি। তিনি স্বামীহারা গল্পে দেখালেন কলেরা রোগে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। তবে আজকের দিনের মতো এতো মিডিয়া ছিল না তখনকার আমলে। আজকের জীবনের মতো এতো গতি ছিল না মানুষের জীবনে। তবে কলেরা মহামারী গনহারে মৃত্যু বাঙালি জীবনে নতুন কিছু নয়। গ্রামের পর গ্রাম উজার হয়ে যেতো মহামারীর যমদূতগ্রাসে।

"যখন সবাই চলে গেল গ্রাম ছেড়ে, তখন গেলুম না কেবল আমরা, উনি বললেন " মৃত্যু নাই, এরূপ দেশ কোথা যে গিয়ে লুকুব?" সবাই যখন মহামারীর ভয়ে রাস্তায় চলা পর্যন্ত বন্ধ করে দিল, তখন কোমর বেঁধে উনি পথে বেরিয়ে পড়লেন, বললেন " এই ত আমার কাজ আমায় ডাক দিয়েছে।"

স্বামীহারা গল্পের আইন পড়ুয়া যুবক আর্তের সেবায় ঘর থেকে বের হয়ে আর ঘরে ফেরেনি চিরস্থায়ীভাবে, চিরস্থায়ীভাবে মাটির ঘরে চলে যায় যুবক। বিধবার সময়ও শেষ হয়ে আসে, 'শরাবান তহুরা'-ভরা পেয়ালা হাতে তার স্বামী তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে চিরস্থায়ী মাটির ঘরে।

তাই বলছি, বাঙালি জীবনে মহামারী নতুন কোনো ঘটনা নয়। বহু মৃত্যু বহু অত্যাচার সীমাহীন শোষনের রাহুগ্রাস সহ্য করে আজকের বাঙালি। তাই করোনা ভাইরাসে ভয় পেয়ে কলকারখানা বন্ধ করে অনাহারে দিনাপাত করার মানসিকতা বাঙালির রক্তে থাকার কথা নয়। ব্যাঙের কখনো সর্দি হয়েছে বলে কেউ বলতে পারবে না!
পৃথিবীর প্রথম রাজা বেন। বেনের পিতার নাম অঙ্গ। অঙ্গ বিয়ে করে যমকন্যা সুনীথাকে। সুনীথার পুত্র বেন। ঋষিরা রাষ্ট্রের সমস্ত নিয়ম কানুন সংবিধান সংসদ প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে চালনা করে। তারা মনে করে বেন রাজা হবে।তাই সেই রাজা হয়। বেন রাজা হয়ে নিজেকে ইশ্বর ভাবতে শুরু করে। তাকে পুজা দেবার আহবান জানায়। ঋষিরা ক্ষেপে যায়।ফলে বেনকে মরতে হলো। হত্যা হলো বেন।

বেনের দুই পুত্র। পৃথ্বী। নিষীদ।
পৃথ্বী দেখতে সুন্দর।
নিষীদ ঋষিদের চোখে আগলি। তাই নিষীদকে মনে করা হলো বেনের পাপের ফল। আর পৃথ্বী ঋষিদের ইচ্ছার ফসল। নিষীদ মানে বসে থাকা।ঋষিদের কথা মতো নিষীদ বসে থাকে। তাকে কোনো প্রকার কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়নি। অবশেষে তাকে বিন্ধ্যপর্বতের শৈলভূমিতে নির্বাসন দেয়া হলো চিরতরে। এই পর্বতে পশুপাখি শিকার করে দিনাপাত করতে থাকে নিষীদ। সময়ের পরিক্রমায় তার বংশ বিস্তার লাভ করে। নিষীদ থেকে নিষাদ।

নিষাদদের প্রধান জীবিকা পশুপাখি শিকার। বাঘ যেমন ইতর প্রানি খেয়ে বেচে থাকে, নিষাদরাও তাদের প্রয়োজনীয় পশুপাখি খেয়ে বেচে থাকে।

একদিন এক নিষাদ খাবারের সন্ধানে বের হয়। কোচবক পেয়ে যায় ব্যাধ। সাথে সাথে ক্রৌঞ্চকে তীরবিদ্ধ করে নিষাদ। মারা গেছে ক্রৌঞ্চ। তাই সঙ্গী-বিরহে আকুল হয়ে কাদছে ক্রৌঞ্চী!

নারদের কথা শুনে ডাকাত হয়ে যায় বাল্মিকী। বল্মীক মানে উইয়ের ঢিবি। বল্মীক থেকে বাল্মিকী। তিনি তখন সোলেমান নবীর মতো অথবা নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মতো দিব্যজ্ঞানের অধিকারী। কোচবকের বিরহব্যথা সে শুনতে পায়। পাখির ব্যথা যেন তার ব্যথা হয়ে গেলো। সাথে সাথে অভিশাপ দিলো। কী অভিশাপ?  মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাঃ ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।

এই অভিশাপে বলা হলো নিষাদরা কোনোদিন প্রতিষ্ঠা পাবে না। এই অভিশাপ বৈষম্যমূলক। এই অভিশাপ আর্যদের অন্তরে লালিত নিষাদদের প্রতি রাগের হিংসার বহিঃপ্রকাশ।

আর্যদের তিনটি প্রধান হাতিয়ারের মধ্যে  ভাষা বা সাহিত্য একটি। যেখানে সম্ভব হয়েছে সেখানেই তারা নিষাদদের বিরুদ্ধে এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে। তাতে পৃথিবীতে মানুষ সম্প্রদায়ের বিশেষ কোনো উপকার হয়নি, ক্ষতি ছাড়া।

নিষাদদের প্রতি আর্যদের এই বৈষম্যমূলক আচরন পৃথিবীর ইতিহাসে অবশ্যই ভয়ঙ্কর মারী। প্লেগ-সার্স-মার্স-কলেরা-স্প্যানিশ ফ্লুর মতো নিষাদের প্রতি আর্যদের হিংসাত্মক আচরনও মহামারী। স্প্যানিশ ফ্লু পৃথিবীর প্রায় পাচ কোটি মানুষের প্রান নিয়ে নেয়। আর নিষাদের প্রতি আর্যদের হিংসাত্মক আরচণের মারী পৃথিবীর কতশত মানুষের প্রান যে নিয়ে নিয়েছে তার হিসাব পৃথিবীর মানুষের কাছে থাকার কথা না। কারন এখানে প্রেমের নামে অপ্রেমের মাহফিল চলে। করোনার দিনেও জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের নারকীয় ইতিহাস রচনা করে অনেকের মতে উন্নত জীবনের ধারক আমেরিকার পুলিশ। করোনাকালেও তুরস্ক লাল চোখ নিক্ষেপ করে লিবিয়ার দিকে,শিরোনাম হয় "লিবিয়ায় এরদোয়ান না সিসি", সাগর দখল নিয়ে চলে চীন ইন্দোনেশিয়া মালেশিয়ার মধ্যে মোরগ লড়াই। এই মোরগ লড়াইয়ে আমেরিকা হতে চায় মাতব্বরি মহাজন। অমাবস্যার অন্ধকার যেমন চোর ডাকাতদের সুবিধার সময়, করোনাকালের এই অন্ধকারও 'পলিটিক্যাল ড্রিম' বাস্তবায়নের উপযুক্ত সময় মনে করছে পৃথিবীর উদীয়মান ক্ষমতায়ে বুজুর্গ হযরতরা।

এমন দিনে হযরতদের মোরগ লড়াইয়ের গ্রিল ফিতায় মনোযোগ না দিয়ে আমার মতো বিশুদ্ধ বেকার কবি ইউটিউবে পানি খাওয়ার উপকারিতা বিষয়ক ভিডিও দেখি-- জল বসে খেতে হয়, জল হজমে সহযোগিতা করে,মাঝেমধ্যে কুসুম গরম জল পান করা ভালো, ঢকঢক করে জল পান করা ঠিক না, খাবারের সময় জল খাওয়া ঠিক না, হালকা গরম জল রক্তের কোলেস্টেরল স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে, সকালে ঘুম থেকে উঠে দুই গ্লাস জল পান করা অত্যন্ত উপকারী, স্নানে যাওয়ার আগে এক গ্লাস জল রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। ইত্যাদি ইত্যাদি। পলিটিক্যাল ড্রিম বাস্তবায়নকারী গোষ্ঠীও চায় পৃথিবীর ভেতরে পৃথিবীর খবরটা যেন না জানি। কবিরা কবিতা লিখবে আকাশ বাতাস নদী জল বর্ষা পাখির পালক নিয়ে, রাজনীতির গোপন কথা থেকে যাক আলিফ লায়লা হয়ে। তাই আমিও মনে মনে হাসি আর সুনির্মল বসুর 'হবুচন্দ্রের আইন' কবিতাটি পড়ি

"হবুচন্দ্র রাজা বলেন গবুচন্দ্রে ডেকে--
"আইন জারী করে দিও রাজ্যেতে আজ থেকে,
                       মোর রাজ্যের ভিতর--
হোক্ না ধনী, হোক্ না গরীব, ভদ্র কিংবা ইতর,
কাঁদতে কেহ পারবে নাক, যতই মরুক শোকে--
হাসবে আমার যতেক প্রজা, হাসবে যত লোকে।
সান্ত্রী-সেপাই, প্যায়দা, পাইক ঘুরবে ছদ্মবেশে,
কাঁদলে কেহ, আনবে বেঁধে, শাস্তি হবে শেষে।"
                       বলে গবু- "হুজুর--
ভয় যদি কেউ পায় কখনো দৈত্য, দানা জুজুর,
কিম্বা যদি পিছলে পড়ে মুণ্ডু ফাটায় কেহ,
গাড়ীর তলে কারুর যদি থেঁতলিয়ে যায় দেহ;
কিম্বা যদি কোনো প্রজার কান দুটি যায় কাটা,
কিম্বা যদি পড়ে কারুর পিঠের ওপর ঝাঁটা;
সত্যিকারের বিপন্ন হয় যদি,
তবুও কি সবাই তারা হাসবে নিরবধি ?"
                      রাজা বলেন- "গবু-
আমার আইন সকল প্রজার মানতে হবে তবু।
কেউ যদি হয় খুন বা জখম, হাড্ডিতে ঘুণ ধরে,
পাঁজরা যদি ঝাঁঝরা হয়ে মজ্জা ঝরে পড়ে,
ঠ্যাংটি ভাঙে, হাতটি কাটে, ভুঁড়িটি যায় ফেঁসে,
অন্ধকারে স্কন্ধ কাটা ঘাড়টি ধরে ঠেসে,
কিম্বা যদি ধড়ের থেকে মুণ্ডুটি যায় উড়ে,
কাঁদতে কেহ পারবে নাক বিশ্রী বিকট সুরে।
                     হবুচন্দ্রের দেশে--
মরতে যদি হয় কখনো, মরতে হবে হেসে।"

পিটিয়ে দিলো ঢ্যাঁড়া গবু, রাজার আদেশ পেয়ে--
"কাঁদতে কেহ পারবে না আর, পুরুষ কিম্বা মেয়ে;
যতই শোকের কারণ ঘটুক হাসতে হবে তবু,
আদেশ দিলেন রাজাধিরাজ হবু;
রাজার আদেশ কেউ যদি যায় ভুলে,
                     চড়তে হবে শূলে।"

সেদিন হতে হবুর দেশে উল্টে গেল রীতি,
                     হররা-হাসির হট্টগোলে,
                     অট্টহাসির অট্টরোলে,
                     জাগলো তুফান নিতি।
হাসির যেন ঝড় বয়ে যায় রাজ্যখানি জুড়ে,
সবাই হাসে যখন তখন প্রাণ কাঁপানো সুরে।
প্যায়দা পাইক ছদ্মবেশে হদ্দ অবিরত,
                     সবাই হাসে আশে পাশে,
                     বিষম খেয়ে ভীষণ হাসে,
আস্তাবলে সহিস হাসে, আস্তাকুঁড়ে মেথর,
হাসছে যত মুমূর্ষরা হাসপাতালের ভেতর।
                     আইন জেনে সর্বনেশে
                     ঘাটের মড়া উঠছে হেসে,
বেতো-রোগী দেঁতো হাসি হাসছে বসে ঘরে;
কাশতে গিয়ে কেশো-বুড়ো হাসতে শুরু করে।
হাসছে দেশের ন্যাংলাফ্যাচাং হ্যাংলা হাঁদা যত,
গোমড়া উদো-নোংরা-ডেঁপো-চ্যাংরো শত শত;
                     কেউ কাঁদে না কান্না পেলেও,
                     কেউ কাঁদে না গাট্টা খেলেও,
পাঠশালাতে বেত্র খেয়ে ছাত্রদলে হাসে,
কান্না ভুলে শিশুর দলে হাসছে অনায়াসে।

রাজা হবু বলেন আবার গবুচন্দ্রে ডাকি,
"আমার আদেশ মেনে সবাই আমায় দিলে ফাঁকি ?
রাজ্যে আমার কাঁদার কথা সবাই গেল ভুলে,
                     কেউ গেল না শূলে ?
একটা লোকো পেলাম না এইবারে
                     শূলে চড়াই যারে।
                     নিয়ম আমার কড়া--
প্রতিদিনই একটি লোকের শূলেতে চাই চড়া।
যা হোক, আজই সাঁঝের আগে শূলে দেবার তরে--
যে করে হোক একটি মানুষ আনতে হবে ধরে।"

গবুচন্দ্র বল্লে হেসে চেয়ে রাজার মুখে,
"কাঁদতে পারে এমন মানুষ নাই যে এ মুল্লুকে;
আমি না হয় নিজেই কেঁদে আইন ভেঙে তবে
চড়ব শূলে, মহারাজের নিয়ম রক্ষা হবে।
কিন্তু একি, আমিও যে কাঁদতে গেছি ভুলে,
                     কেমন করে চড়ব তবে শূলে ?"
রাজা বলেন, "তোমার মত মূর্খ দেখি না-যে,
কাঁদতে তুমি ভুলে গেলে এই ক'দিনের মাঝে।
এই দ্যাখো না কাঁদে কেমন করে"--
এই না বলে হবু রাজা কেঁদে ফেল্লেন জোরে।

মন্ত্রী গবু বল্লে তখন, "এবার তবে রাজা--
নিজের আইন পালন করুন গ্রহণ করুন সাজা।"
বলেন হবু, "আমার হুকুম নড়বে না এক চুল,
আমার সাজা আমিই নেব তৈরি কর শূল !"

তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তিনিই বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তার বাবা মোহাম্মদ ইয়াসিন খান একজন মৌলভী ছিলেন। তার বাবার কাছ থেকে তিনি সর্বপ্রথম শিক্ষা বলতে কোরানের শিক্ষা লাভ করেন। তাজউদ্দীন আহমদ একজন কোরানের হাফেজ ছিলেন। তিনি ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বি এ (সম্মান) ডিগ্রি  লাভ করেন।

আবুল হাশিম( ১৯০৫- ১৯৭৪) ভারতীয় উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও ইসলামি চিন্তাবিদ ছিলেন। আবুল হাসিমের পিতা ছিলেন বর্ধমানের কংগ্রেসের বিধায়ক নেতা আবুল কাশেম। আবুল হাশিম বাংলাদেশের বামপন্থী বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরের পিতা।

আবুল হাশিম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ১৯৪৩ তাজউদ্দীন আহমদ রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হন।১৯৪৪ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলে সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সনদ ঘোষনা করা হয়।১১ এপ্রিল তাজউদ্দীন বেতারে ভাষন দেন। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।তাজউদ্দীন আহমদ হন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। অস্থায়ী সরকার ১৬ ডিসেম্বরে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত কলকাতা থেকে কার্য পরিচালনা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসলে তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাড়ান। তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সাবেক ঢাকা- ২০ আসন বর্তমান গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।তিনি বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় বাজেট পেশ করেন,প্রথম পাচশাল পরিকল্পনা প্রনয়ন করেন।

১৯৭২ সালের ৩০ জুন প্রথমবারের মতো ৭ শত ৮৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি।প্রথমবারের মতো বাজেট ১ হাজার কোটি ছাড়ায় ১৯৭৪ সালে। ২০০৮- ২০০৯ অর্থ বছরে বাজেট নির্ধারিত হয় ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে। ততত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম পেশ করেন এই বাজেট।

১১ জুন ২০২০। বৃহস্পতিবার। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষনা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। গত ৪৯ বছরের ব্যবধানে দেশের বাজেটের আকার বাড়ছে ৭২২ গুন। বাজাটের আকার বৃদ্ধি ইতিবাচক তবে বাস্তবায়নে ব্যর্থতার দায়ও নিতে হবে। বাজেটের গুনগত মান ও বাস্তবায়নের হার না বাড়লে এসব বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বাজেট বলা যায়।

আওয়ামিলীগ সরকারের চারজন অর্থমন্ত্রী ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ২১টি বাজেট ঘোষণা করেছেন। প্রত্যেক বাজেটে একশ্রেণির জনগণ চায় তামাকজাত দ্রব্য বিশেষ করে সিগারেটের উপর যেন করারোপ অধিক হারে করা হয় যাতে সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি পায়। কিন্তু জনগণের আশানুরূপ ফল দেখতে পাওয়া যায় না। এই বাজেটে কথাবলা মূল্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানো যুক্তিক কিনা এই নিয়ে তর্ক করা যায়। করোনার এই দিনে কালো টাকা সাদা করার একটি প্রয়াস দিয়েছে ২০২০- ২০২১ অর্থবছরের  বাজেট। এই নিয়ে বেশ টক ঝাল মিষ্টি জাতীয় কথা শুনতে পাওয়া যায়। আগে মোবাইল ফোনের কলের উপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ছিল। তবে করোনার এই মহামারী সময়েও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮.২ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি কমবে না বাড়বে এটি বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বাজেটে কৃষি নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন আমরা কী বড় আকারে বাজেট করেও সেই স্বপ্ন দেখতে পারছি কিনা!?  কৃষিতে এই বছরের বাজেটে রাখা হয়েছে ২৯৯৮৩ কোটি টাকা। ঘাটতি বাজেট ১ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা। ৮৫৭৬০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে শিক্ষা খাতে। আলোচিত স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ থাকছে ২৯২৪৬ কোটি টাকা।

করোনারকালের এই দিনে অর্থমন্ত্রী গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে প্রয়াস আরোপ করেন। প্রয়াস আর বাস্তবতার ফাকে বরাবরই জনগণের স্বপ্নে ছাই পড়ে। তবে করোনকালের এই বাজেট যে টিকে থাকার বাজেট তা তো চোখ বন্ধ করে বলা যায়।

পহেলা জুলাই ১৯৭২। শনিবার। তাজউদ্দীন আহমদ পেশ করেন স্বাধীন বাংলার প্রথম বাজেট, সেই সময়ের বিখ্যাত আলোচিত 'দৈনিক বাংলা'  বাজেটের উপর নির্মান করে প্রতিবেদন--

"স্বাধীন বাংলার প্রথম বাজেট করের অভিশাপ থেকে  মুক্ত। বিধ্বস্ত বাংলার এবার পুনর্গঠনের পালা। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ তাই বাজেটকে বলেছেন, উন্নয়ন-পুননির্মাণ-পুনর্বাসন বাজেট।

রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্প ও প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে প্রাপ্তি হিসেবে ধরা হয়েছে ১৫ কোটি আর ভূমি রাজস্বের অংক স্থির হয়েছে ৪ কোটি টাকা। রাজস্ব খাতে ব্যয়ের মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক পরিমাণ বরাদ্দ হয়েছে শিক্ষা খাতে। এই খাতে ৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। শিক্ষার উপর সরকার যে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন, এই বরাদ্দ তারই পরিচয় বহন করে।

অন্যদিকে ৩১৮ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে ১০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে কৃষি খাতে। এই বাজেটে নতুন কোন কর ধার্যের প্রস্তাব করাই হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে।"

যুদ্ধ ডিভাস্টেট পরবর্তী একটি দেশ কেমন বাজেট হবে তা অবশ্যই খুব করে মনোযোগ দেয়ার মতো। কারন প্রবাদে আছে 'সকালের সূর্য দিনের গতিবিধি ইঙ্গিত করে', বাজেটের সূর্য কেমন সুন্দর বা অসুন্দর হয়েছিল তার চেয়ে বড় কথা সবার মনে ছিল তখন স্বাধীনতার স্বস্তির নিশ্বাস। আর মাগরিব পাকিস্তানের দিকে চেয়ে থাকতে হবে না, এবার বাংলাদেশ নিজেই তুলবে অর্থনীতির জান্ডা; আশা,স্বপ্ন আর স্বাধীনতার পূর্ণ স্বস্তিবোধ নিয়ে স্বাধীন বাংলার সংসদ পেশ করে প্রথম বাজেট যেখানে কৃষি ও শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুসদয় দৃষ্টিতে দেখা হয়।

তারপর অনেক বছর কৃষি উপর অবহেলা চলে,চলছে। বাজেট থাকলেই হয় না, বাজেটের সঠিক বাস্তবায়ন দরকার। করোনাকাল আমাদের মনে ধাক্কা দিয়ে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে কৃষি আমাদের কত না আপন। এই কৃষিকে প্রকৃতি বান্ধব করে তুলতে হবে, কৃষিকে কৃষক বান্ধব করে তুলতে হবে। কৃষি ও শিক্ষা বিশেষ করে সঠিক ও সময়োপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা বৈঠাতুল্য যা বাংলাদেশ নামক নৌকাকে  সুদিন তো বটেই দুর্দিনেও রক্ষা করবে।

করোনা ভাইরাসের এমন দুর্দিনে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদরুদ্দিন আহমদ কামরানকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে হেলিকপ্টারে মাধ্যমে  ঢাকা আনা হয়। যমুনা নিউজে বার্তাটি দেখতে অথবা শুনতে পাই।শুনে আনন্দে মনটা ভরে উঠে। কারন ঢাকায় এখন উন্নত চিকিৎসা হয়। মোহাম্মদ নাসিম (২ এপ্রিল ১৯৪৮ –১৩ জুন ২০২০) যার পিতা মোহাম্মদ মনসুর আলী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যেতে পারেন না। দেশের গরীব দুহী মানুষের কথা তাকে মাথায় রাখতে হয়। তিনি ঢাকায় নিজের চিকিৎসা করিয়েছেন। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। তাই তার আস্থা ও বিশ্বাস ছিলো ঢাকায় তার যোগ্য চিকিৎসা সম্ভব। হায়াত মওত রিযিক আল্লার হাতে। তাই আল্লার ডাকে তাকে চলে যেতে হলো। কামরান সাহেবকেও চলে যেতে হলো। শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ - ১৩ জুন ২০২০) একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ছয় দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনিও আল্লার ডাকে আল্লার কাছে চলে গেলেন। ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার করে কেউ সিঙ্গাপুর অস্ট্রেলিয়া কানাডা যাননি নিজের চিকিৎসা করানোর জন্যে। এই হলো নেতা। বাঘ না খেয়ে মারা যায় কিন্তু ঘাস খায় না। দুর্দিনে কেমন করে সংগ্রাম করতে হয় এমন মহান নেতাদের কাছ থেকে আমরা শিখি। এবং তাদের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা থেকে এই শপথ আমরা নিতে পারি " মারা যাবো প্রয়োজনে তবু উন্নত চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যাবো না", দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত আর সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল (জন্ম ১৫ জুন ১৯৪৭)। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তিনি জন্মগ্রহণ করেন সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ তারিখ। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষনার সময় ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিলেন অর্থমন্ত্রী ( কয়েক প্রজাতির এডিস মশকী (স্ত্রী মশা) ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক। তাদের মধ্যে এডিস ইজিপ্টি মশকী প্রধানতম। ভাইরাসটির পাঁচটি সেরোটাইপ পাওয়া যায়। ভাইরাসটির একটি সেরোটাইপ সংক্রমণ করলে সেই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে রোগী আজীবন প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে, কিন্তু ভিন্ন সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সাময়িক প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে।পরবর্তীতে ভিন্ন সেরোটাইপের ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হলে রোগীর মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

যখন ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা কাউকে কামড়ায়, মশার লালার মাধ্যমে ভাইরাস ত্বকের ভিতর প্রবেশ করে। এটি বাসস্থান পাকা করে নেয় এবং শ্বেত রক্তকোষে প্রবেশ করে, এবং যখন কোষগুলি শরীরের সর্বত্র চলাচল করে তখন সেগুলির ভিতরে এই ভাইরাস প্রজননকার্য চালিয়ে যায়। এর প্রতিক্রিয়ায় শ্বেত রক্তকোষগুলি বহুসংখ্যক সিগন্যালিং প্রোটিন তৈরি করে, যেমন ইন্টারফেরন, যা অনেকগুলি উপসর্গের জন্য দায়ী, যেমন জ্বর, ফ্লু-এর মত উপসর্গ, এবং প্রচন্ড যন্ত্রণা। প্রবল সংক্রমণে, শরীরের ভিতরে ভাইরাসের উৎপাদন অত্যধিক বৃদ্ধি পায়, এবং অনেক বেশি প্রত্যঙ্গ (যেমন যকৃত এবং অস্থিমজ্জা) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এবং রক্তস্রোত থেকে তরল ক্ষুদ্র রক্তনালিগুলির দেওয়াল থেকে শরীরগহ্বরে চুঁইয়ে পড়ে। ফলে, রক্তনালিগুলিতে কম রক্ত সংবহিত হয় এবং রক্তচাপ এত বেশি কমে যায় যে প্রয়োজনীয় অঙ্গসমূহে যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত সরবরাহ হতে পারে না। উপরন্তু অস্থিমজ্জা কাজ না করায় অনুচক্রিকা বা প্লেটলেটসের সংখ্যা কমে যায় যা কার্যকরী রক্ততঞ্চনের জন্য দরকারি; এতে রক্তপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায় যা ডেঙ্গু জ্বরের অন্যতম বড় সমস্যা।) তবু বাজেট পেশ করার জন্যে হাসপাতাল থেকে চলে আসেন। বাজেট পাঠের কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি অসুস্থতাবোধ করেন। ফলে তার পক্ষে বাজেট পাঠ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২০- ২০২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে এসে তিনার মুখে মাস্ক। তার মুখে মাস্ক থাকলে কি হবে তিনি মার্ক্স পড়া লোক।

তবে আমাকে মুগ্ধ করে তার ক্রিকেটপ্রেম। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার অবদান অস্বীকার করা যাবে না। মাশরাফি বিন মুর্তজার কথা তো অবশ্যই বলতে হবে। তিনি ত উৎসাহবোমা। তবে করোনা ভাইরাসের এই দিনে তিনিও নিউজ হয়ে আসেন আমাদের কাছে "করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এই অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরিকল্পনা করছে তার পরিবার। আর এ ক্ষেত্রে মাশরাফির ব্যবস্থাপত্র করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ।"


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন