টিকেট না কেটেই কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশনের প্লাটফর্মে ঢুকলাম। গেটে সাদা পোশাক পড়া মানুষের অবস্থান। অনেককে অনেক কিছুই বলছে, টিকেট চেক চলছে কিন্তু আমাদেরকে কিচ্ছু বলেনি। হয়তো তার পেছনে কোনো আধ্যাত্মিক ঘটনা আছে।
আধ্যাত্মিক ঘটনা এক : জীবন দার পিঠে গিটার ঝুলছে। আমার চেহারায় ভদ্রলোকের লেবাস। সুতরাং আমরা টিকেট না সংগ্রহ করে প্লাটফর্মে অবস্থান করতে পারি তা অবিশ্বাস্য।
আধ্যাত্মিক ঘটনা দুই : এটি বাংলাদেশ রেলওয়ে। পুরো বাংলাদেশেই আধ্যাত্মিক ঘটনার মহড়া চলে।
জীবন চোধুরী অবাক হলেন। কারণ ইন্ডিয়ান প্লাটফর্মে কোনোদিন তিনি টিকেট ব্যতীত অবস্থান করেননি। জীবন চোধুরী কেন, কোনো ইন্ডিয়ানও প্লাটফর্ম-টিকেট ব্যতীত প্লাটফর্মে অবস্থান করার মতো মানসিকতা রাখে না।
আমরা যে ট্রেন দিয়ে যাত্রা শুরু করবো তার নাম মহানগর গোধূলী। শোভন সিটে দুজন মুখোমুখি বসলাম। ট্রেনে বসলেই আমার তার কথা মনে পড়ে যে কথা দিয়ে কথা রাখে নি, কথা দিয়ে কথা রাখে না ; তার কথা মনে পড়ে যে বিরহ নয়নে আজও পথ চেয়ে বসে আছে ট্রেনের জানালা ধরে।
জীবন দা কথা বলছেন। আমি মনোযোগী শ্রোতা। কেউ কথা বলতে থাকলে আমার চোখের দৃষ্টি থাকে তার চোখে। কান দিয়ে কথা শুনি আর চোখ দিয়ে অন্তর পাঠ করি। ট্রাভেল টিকেট চেকার আসলেন।
জীবন দা আস্তে করে বললেন এখন কী হবে?
প্রত্যেক ঘটনার শেষটা অনুমান করে নিই। আর ঘটনার শেষ জানা থাকলে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে যারা টিকেট না-সংগ্রহ করে ট্রেনে অবস্থান করে তাদেরকে একটি নিদিষ্ট পরিমাণ অথবা টিকেটের মূল্যের সমপরিমাণ মূল্য সরবরাহ করলেই ঝামেলা শেষ। চারপাশের যারা টিকেট কাটেনি তারা তাই করছে। এখন আমাদের পালা।
টিকেট?
টিকেট তো কাটিনি ( মুখে মৃদু হাসি)!
জনাব টি টি আর একটিও প্রশ্ন করেন নি, কোনো প্রকার মূল্যও কামনা করেন নি।
জীবনদা আবার অবাক হলেন।
কেন জনাব টিকেট চেকার টিকেট না-সংগ্রহ করার পরও আমাদের কাছে কোনো প্রকার মূল্য কামনা করেনি তা পৃথিবীর মানুষের জানবার কথা নয়। কিন্তু আজকে জানাতে ইচ্ছে হচ্ছে।
অনেক পুরাতন এক দিনে আমি ট্রেনে। ট্রেনে এমন ভিড় হাত-পা নাড়াচাড়া করার মতো কোনো অবস্থা নেই। টিকিট চেকার নিজেও টিকেট চেক করবেন তো দূরের কথা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ভিড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে ব্যতিব্যস্ত। এমন ভিড়ে আমার পাগল মনের ইচ্ছে হলো বই পড়বে। বই অবশ্যই আমার হাতেই ছিল। আহমেদ দফার ওঙ্কার। প্রতিটি লাইন যেন একটি অপটিক্যাল মহাসাগর। আর আমি মহাসাগরে কিনারায় বসা কোনো এক নবীন পর্যটক। যে পর্যটক ঢেউ গুণতে গুণতে সময় ভুলে যায়, ভুলে যায় নিজের শরীর বলে কোনো এক দৃশ্যমান অস্তিত্ব আছে, সেই পর্যটক।
হঠাৎ আমার চেতনালোকে শব্দের আবির্ভাব। নারীশব্দ-- দূরে দাঁড়ান, দূরে। যেখানে চুল রাখার মতো জায়গা নেই সেখানে আরও দূর কোথায় পাবো আমি! জনাব টিকেট চেকার রেগে গেলেন-- লোকটি আর দূরে কোথায় যাবে, পারলে আপনি যান, যান তো দেখি। নারী তার সাথে ঝগড়া করতে শুরু করে। ও মা ,এ কী অবস্থা! শব্দের ভীড়, শরীরের ভীড়, আবার চোখাচোখির ভীড়!
এক ঠেলা দিয়ে মানুষকে ফাঁক করে এই নারীর কাছ থেকে দুই তিন-হাত দূরে গেলাম। জনাব টিকেট চেকারকে বললাম ভাই আমার সাথে আসেন। তিনি আমার পাশে আসলেন।
টঙ্গী স্টেশন অতিক্রম করার সাথে সাথে নারীর পাশে দাঁড়ানো আরেকটি নারী শ্রাববমি করতে লাগলেন। নারীর সারা শরীরের বমিতে ভিজে গেল। চারপাশের লোক দূরে সরে গেল। যে বমি করছিলেন তাকে আমার জায়গায় এনে তার জায়গায় আমি গেলাম। আবারো নারীটির পাশে আমি। তার সারা শরীর বমি আর বমি, দুর্গন্ধ আর দুর্গন্ধ। এখন আর নারীটি বলে না দূরে দাঁড়ান, আর একটু দূরে। বরং ট্রেনের সবাই নারীটির দূরত্ব কামনা করছে। এমন সময় জনাব টিকেট চেকারের সাথে আমার চোখাচোখি। আমি মৃদু হাসলাম। সেও মৃদু হাসলো। আমাদের এই মৃদু হাসিটা আজীবনের জন্য আমাদের হয়ে গেলো, আমরা কেউ কাউকে চিনি না কিন্তু প্রত্যেকে প্রত্যেকের মৃদু হাসিটা চিনি, হাসিটার অর্থ জানি....
আধ্যাত্মিক ঘটনা এক : জীবন দার পিঠে গিটার ঝুলছে। আমার চেহারায় ভদ্রলোকের লেবাস। সুতরাং আমরা টিকেট না সংগ্রহ করে প্লাটফর্মে অবস্থান করতে পারি তা অবিশ্বাস্য।
আধ্যাত্মিক ঘটনা দুই : এটি বাংলাদেশ রেলওয়ে। পুরো বাংলাদেশেই আধ্যাত্মিক ঘটনার মহড়া চলে।
জীবন চোধুরী অবাক হলেন। কারণ ইন্ডিয়ান প্লাটফর্মে কোনোদিন তিনি টিকেট ব্যতীত অবস্থান করেননি। জীবন চোধুরী কেন, কোনো ইন্ডিয়ানও প্লাটফর্ম-টিকেট ব্যতীত প্লাটফর্মে অবস্থান করার মতো মানসিকতা রাখে না।
আমরা যে ট্রেন দিয়ে যাত্রা শুরু করবো তার নাম মহানগর গোধূলী। শোভন সিটে দুজন মুখোমুখি বসলাম। ট্রেনে বসলেই আমার তার কথা মনে পড়ে যে কথা দিয়ে কথা রাখে নি, কথা দিয়ে কথা রাখে না ; তার কথা মনে পড়ে যে বিরহ নয়নে আজও পথ চেয়ে বসে আছে ট্রেনের জানালা ধরে।
জীবন দা কথা বলছেন। আমি মনোযোগী শ্রোতা। কেউ কথা বলতে থাকলে আমার চোখের দৃষ্টি থাকে তার চোখে। কান দিয়ে কথা শুনি আর চোখ দিয়ে অন্তর পাঠ করি। ট্রাভেল টিকেট চেকার আসলেন।
জীবন দা আস্তে করে বললেন এখন কী হবে?
প্রত্যেক ঘটনার শেষটা অনুমান করে নিই। আর ঘটনার শেষ জানা থাকলে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে যারা টিকেট না-সংগ্রহ করে ট্রেনে অবস্থান করে তাদেরকে একটি নিদিষ্ট পরিমাণ অথবা টিকেটের মূল্যের সমপরিমাণ মূল্য সরবরাহ করলেই ঝামেলা শেষ। চারপাশের যারা টিকেট কাটেনি তারা তাই করছে। এখন আমাদের পালা।
টিকেট?
টিকেট তো কাটিনি ( মুখে মৃদু হাসি)!
জনাব টি টি আর একটিও প্রশ্ন করেন নি, কোনো প্রকার মূল্যও কামনা করেন নি।
জীবনদা আবার অবাক হলেন।
কেন জনাব টিকেট চেকার টিকেট না-সংগ্রহ করার পরও আমাদের কাছে কোনো প্রকার মূল্য কামনা করেনি তা পৃথিবীর মানুষের জানবার কথা নয়। কিন্তু আজকে জানাতে ইচ্ছে হচ্ছে।
অনেক পুরাতন এক দিনে আমি ট্রেনে। ট্রেনে এমন ভিড় হাত-পা নাড়াচাড়া করার মতো কোনো অবস্থা নেই। টিকিট চেকার নিজেও টিকেট চেক করবেন তো দূরের কথা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ভিড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে ব্যতিব্যস্ত। এমন ভিড়ে আমার পাগল মনের ইচ্ছে হলো বই পড়বে। বই অবশ্যই আমার হাতেই ছিল। আহমেদ দফার ওঙ্কার। প্রতিটি লাইন যেন একটি অপটিক্যাল মহাসাগর। আর আমি মহাসাগরে কিনারায় বসা কোনো এক নবীন পর্যটক। যে পর্যটক ঢেউ গুণতে গুণতে সময় ভুলে যায়, ভুলে যায় নিজের শরীর বলে কোনো এক দৃশ্যমান অস্তিত্ব আছে, সেই পর্যটক।
হঠাৎ আমার চেতনালোকে শব্দের আবির্ভাব। নারীশব্দ-- দূরে দাঁড়ান, দূরে। যেখানে চুল রাখার মতো জায়গা নেই সেখানে আরও দূর কোথায় পাবো আমি! জনাব টিকেট চেকার রেগে গেলেন-- লোকটি আর দূরে কোথায় যাবে, পারলে আপনি যান, যান তো দেখি। নারী তার সাথে ঝগড়া করতে শুরু করে। ও মা ,এ কী অবস্থা! শব্দের ভীড়, শরীরের ভীড়, আবার চোখাচোখির ভীড়!
এক ঠেলা দিয়ে মানুষকে ফাঁক করে এই নারীর কাছ থেকে দুই তিন-হাত দূরে গেলাম। জনাব টিকেট চেকারকে বললাম ভাই আমার সাথে আসেন। তিনি আমার পাশে আসলেন।
টঙ্গী স্টেশন অতিক্রম করার সাথে সাথে নারীর পাশে দাঁড়ানো আরেকটি নারী শ্রাববমি করতে লাগলেন। নারীর সারা শরীরের বমিতে ভিজে গেল। চারপাশের লোক দূরে সরে গেল। যে বমি করছিলেন তাকে আমার জায়গায় এনে তার জায়গায় আমি গেলাম। আবারো নারীটির পাশে আমি। তার সারা শরীর বমি আর বমি, দুর্গন্ধ আর দুর্গন্ধ। এখন আর নারীটি বলে না দূরে দাঁড়ান, আর একটু দূরে। বরং ট্রেনের সবাই নারীটির দূরত্ব কামনা করছে। এমন সময় জনাব টিকেট চেকারের সাথে আমার চোখাচোখি। আমি মৃদু হাসলাম। সেও মৃদু হাসলো। আমাদের এই মৃদু হাসিটা আজীবনের জন্য আমাদের হয়ে গেলো, আমরা কেউ কাউকে চিনি না কিন্তু প্রত্যেকে প্রত্যেকের মৃদু হাসিটা চিনি, হাসিটার অর্থ জানি....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন