শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

টিয়া পাখি

টিয়া পাখি আমার শৈশব। শৈশবের প্রিয়তা। সাদা বক ঝাঁকে ঝাঁকে মেঘনার উপর দিয়ে উড়ে যেতো অস্তগামী লাল সূর্যের দিকে। এক সময় সাদা বক রক্তিম সূর্য হয়ে পালিয়ে যেতো আমার দৃষ্টির সীমানা থেকে।
টিয়া পাখিও ঝাঁকে ঝাঁকে সাঁ সাঁ শব্দে উড়ে যেতো রক্তিম সূর্যের দিকে। কিন্তু টিয়া পাখি কোথায় যেনো হারিয়ে যেতো। যাচ্ছে যাচ্ছে, উড়ছে উড়ছে। আমার চোখ আর তাদের খোঁজে পাচ্ছে না। পাচ্ছে না তো পাচ্ছে না। আমার চোখ আজও টিয়া পাখি খোঁজে, ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া পাখি। টিয়া পাখি যদি বকের মতো সূর্য হয়ে যেতো তাহলে সূর্যের কাছে চিটি লিখতে বসতাম,

জনাব সূর্য,

বিশ্বাস রাখি ভালো আছেন। আমি ভালো নেই। ভালো থাকার অভিনয় করে সময়ে ভাসছি। খুব পাক্কা অভিনেতা তো তাই কেউ আমার হৃদয়ের রান্না ঘরে সিদ্ধ হতে থাকা অনুভূতির গন্ধ পায় না। আজকাল গোপন রাখার সুবিধা উপভোগ করতে শিখে গেছি। কারো করুণা পেতে হয় না। করুণাকে বিষের চেয়ে কাঁটাযুক্ত মনে হয়। তুমি ভাবতেই পারো তোমার কাছে বকবক করছি কেন। কারণ তো অবশ্যই আছে। আমার টিয়া তোমাকে ভালোবেসে সূর্য হয়ে গেছে। প্লিজ তুমি আমার টিয়াকে ফিরিয়ে দাও। টিয়া আমার শৈশব, আমার যৌবন, আমার গানের গোপন সুর, অসীম প্রেরণা। টিয়া ছাড়াও তুমি সূর্য সূর্যই থাকবে কিন্তু আমি রেজা, রেজা থাকবো না, ভেজা ঘ্রাণের মতো অন্তিম হয়ে যাবো।

কিন্তু টিয়া পাখি তো সূর্য হয়নি, হয়েছে ভুল পথের ফকির। আমিও হতে পারি ফকির তবে আমার পথের। এইভাবে দুই পথ কোনোদিন এক হবে না, এই চোখে আর পাবো না তেঁতুল পাতার চিকন চিকন মাংসের ফাঁকে টিয়া পাখির হলুদ হলুদ কলকাকলি!
টিয়া পাখি টিয়া পাখি আমি এখনো বসে আছি, বসে আছি আমার শৈশব নিয়ে, বসে আছি দুটি চোখ এক করে স্বপ্নের পথে। আমি জানি আমার সময় তোমার সাথে ভালো আচরণ করে নি, সেজন্য আই এম সরি, প্লিজ ক্ষমা করে দাও। তোমার ক্ষমার নদী স্রোতস্বিনী হলেই প্রাণ পাবে মরুময় ভূমি, উর্বর হবে আগামীকালের সকাল-দুপুর-রাত,  রসালো হবে কালকের বীজ ও ফসল।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন