বাড়ির পাশে মেঘনা নদী। সাঁতার শেখার আগে নদীর কিনারায় বসে বসে ঢেউ হয়ে যাই। ঢেউ হয়ে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হই। আস্ত বিকাল চুপি চুপি ঢেউয়ের সাথে, জলের সাথে কেটে যায়। কাটা নয়, বয়ে যায়।
সাঁতার শেখার পর জলমগ্ন আমার মন। সুযোগ পেলেই নদী হয়ে উঠে আমার শৈশবের বন্ধু- বান্ধবী। কিছুদিনের মধ্যেই রেড এলার্ট জারি করেন অভিভাবক মহল। সব দিকে যাওয়া যাবে কেবল নদীর দিকে নয়। নদীতেই নাকি আমার দিদির সলিলসমাধি হয়েছিল, আমিও যদি।
তারপর থেকে নদী আমার চোখের,
আমার মনের মিউজিয়াম।
শেষ বল কিন্তু রান প্রয়োজন ছয়। আকরাম খান তাঁর বুড়ির সমস্ত শক্তি হাতে এনে তুললেন ব্যাট, গোল বল চলে গেল সরাসরি সীমানার বাইরে। বাংলাদেশের শিরা- উপশিরায় আনন্দের মাতম। আমিও আনন্দিত হয়েছি বেশ। চোখ দিয়ে ক্রিকেট খেলা সরাসরি আমার মগজে চলে গেল। মন্ত্রপাঠের মতো মগ্ন হয়ে ক্রিকেট খেলি। এলাকার বড় টিমের সাথে একমাত্র ছোট খেলোয়াড় আমি। সবাই আমাকে জন্ডিরোজ বলে সম্বোধন করে। আমিও আনন্দে চিপসের প্যাকেট হয়ে যাই। একদিন ঠাকুরমা বললেন,
``প্রেমিক আমার, বড়দের সাথে ছোটদের খেলতে নেই।"
তখন থেকে আমি আর খেলতে যাইনি, সকাল- সন্ধ্যা শুনি ধর্মের কাহিনি।
প্রত্যেক রোববার, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা হলেই চলে যাই মিলাদ মাহফিলে। ঘরে ফিরি কখনো রাত একটায়, কখনো দুইটায়। প্যান্টের পকেটে থাকে তাসবীহ, সারাক্ষণ চলে আল্লা জাল্লা শাহনুহুর জিকির ও তাঁর পেয়ারা হাবিব, আকারে মওলা তাজদারে মদিনা হযরত মোহাম্মদ সাল্লেহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরুদ। কোনো নারীর দিকে তাকায় না আমার তের- চৌদ্দ বয়সের চোখ, পাছে পাপ হয়। প্রতি বছর বাবার চাচাদের সাথে মসজিদে ইতেকাফে বসি। আমার কাছে লোক আসতে শুরু করে পানিপড়া নিতে। আমি লজ্জায় মরি মরি। ধর্মগুরু এক রাতে আমাদের বাড়িতে আসেন। আমাকে ঘুম থেকে জাগ্রত করে তিনি বলেন,
``এতো ছোট্ট বয়সে ধর্মের এতো গভীরে যেতে নেই, তোমার কাজ পড়াশোনা করা, এখন শুধু পড়াশোনা কর।"
তারপর থেকে আমি ছাত্র। ছাত্র নং অধ্যয়ন তপ। সারাদিন বই পড়ি। রাস্তায় বের হলেও হাতে থাকে চিরকুট। ঘুমেও পড়তে থাকি। এলাকায় প্রচার হয়ে গেল আমি নাকি মেধাবী ছাত্র। গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে যায়, আমি তখন ঘুম থেকে উঠি। আমার সাথে জেগে থাকে কেবল বাবার বাড়ির পোষা কুকুরটি। এলাকায় একটি ডাহের বাফের কথা আছে,
``বেশি বেশি কিছুই ভালো না"।
গভীর রাতে আমি টেবিলে বসে পড়ছি। মা আমার আস্তে করে পাশে বসলেন, মাথায় হাত রেখে বললেন,
``বাবা, তুমি আমার বংশের চেরাগ, তোমাকে এতো পড়তে হবে না।"
তারপর থেকে আমি আর বই পড়ি না। মানুষকে পাঠ করার চেষ্টা করি, সাংবাদিকতা করি, দুই একটা রিপোর্ট লিখি। শত্রুর সংখ্যা বাড়তে থাকে । আমি হয়ে উঠলাম তথায়কথিত সাংবাদিক।আইরনি করে অনেকেই আমাকে ডাকতে শুরু করে গাংবাদিক। স্বাস্থ্য ক্লিনিকের রোজি আপা আর আমার সাথে হাসি দিয়ে কথা বলে না, ডাক্তার কুয়াশা ভাই আমার প্রিয়জনের কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করে।
তখনই প্রথমবারের মতো বাবার নিষেধাজ্ঞা আমার ইচ্ছার উপরে নাযিল হয়। আমার আর সাংবাদিক হয়ে উঠা হলো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম বিশ্বমানের মানুষ হওয়ার জন্য। হলে আমার জন্য কোনো সিট নেই। সিট নিয়ে থাকতে গেলে রাজনীতি করা লাগবে। অথচ গ্রামের বড়জন আদেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে যেন রাজনীতি না করি। রাজনীতি শব্দটি আমার কাছে সুন্দর বনের বাঘ হয়ে দাঁড়াল, আমি হয়ে গেলাম ভীতু হরিণ। সাহিত্যের ছাত্র হয়েও আমার মতো করে কিছু লিখতে গেলে মানা, পরীক্ষার খাতায় খেলতে হয় মেথ মেথ খেলা। প্রাণের জ্ঞানীজন বলেন,
``পরীক্ষা একটি সিস্টেম, সৃজনশীলতা প্রকাশের জায়গা না।"
আমি এখন শুধু ভাবি, কেবলই ভাবি,
এতো ``না" এর মাঝে `` হ্যাঁ" কোথায়?
এতো `` না " এর মাঝে আমি কোথায়?
সাঁতার শেখার পর জলমগ্ন আমার মন। সুযোগ পেলেই নদী হয়ে উঠে আমার শৈশবের বন্ধু- বান্ধবী। কিছুদিনের মধ্যেই রেড এলার্ট জারি করেন অভিভাবক মহল। সব দিকে যাওয়া যাবে কেবল নদীর দিকে নয়। নদীতেই নাকি আমার দিদির সলিলসমাধি হয়েছিল, আমিও যদি।
তারপর থেকে নদী আমার চোখের,
আমার মনের মিউজিয়াম।
শেষ বল কিন্তু রান প্রয়োজন ছয়। আকরাম খান তাঁর বুড়ির সমস্ত শক্তি হাতে এনে তুললেন ব্যাট, গোল বল চলে গেল সরাসরি সীমানার বাইরে। বাংলাদেশের শিরা- উপশিরায় আনন্দের মাতম। আমিও আনন্দিত হয়েছি বেশ। চোখ দিয়ে ক্রিকেট খেলা সরাসরি আমার মগজে চলে গেল। মন্ত্রপাঠের মতো মগ্ন হয়ে ক্রিকেট খেলি। এলাকার বড় টিমের সাথে একমাত্র ছোট খেলোয়াড় আমি। সবাই আমাকে জন্ডিরোজ বলে সম্বোধন করে। আমিও আনন্দে চিপসের প্যাকেট হয়ে যাই। একদিন ঠাকুরমা বললেন,
``প্রেমিক আমার, বড়দের সাথে ছোটদের খেলতে নেই।"
তখন থেকে আমি আর খেলতে যাইনি, সকাল- সন্ধ্যা শুনি ধর্মের কাহিনি।
প্রত্যেক রোববার, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা হলেই চলে যাই মিলাদ মাহফিলে। ঘরে ফিরি কখনো রাত একটায়, কখনো দুইটায়। প্যান্টের পকেটে থাকে তাসবীহ, সারাক্ষণ চলে আল্লা জাল্লা শাহনুহুর জিকির ও তাঁর পেয়ারা হাবিব, আকারে মওলা তাজদারে মদিনা হযরত মোহাম্মদ সাল্লেহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরুদ। কোনো নারীর দিকে তাকায় না আমার তের- চৌদ্দ বয়সের চোখ, পাছে পাপ হয়। প্রতি বছর বাবার চাচাদের সাথে মসজিদে ইতেকাফে বসি। আমার কাছে লোক আসতে শুরু করে পানিপড়া নিতে। আমি লজ্জায় মরি মরি। ধর্মগুরু এক রাতে আমাদের বাড়িতে আসেন। আমাকে ঘুম থেকে জাগ্রত করে তিনি বলেন,
``এতো ছোট্ট বয়সে ধর্মের এতো গভীরে যেতে নেই, তোমার কাজ পড়াশোনা করা, এখন শুধু পড়াশোনা কর।"
তারপর থেকে আমি ছাত্র। ছাত্র নং অধ্যয়ন তপ। সারাদিন বই পড়ি। রাস্তায় বের হলেও হাতে থাকে চিরকুট। ঘুমেও পড়তে থাকি। এলাকায় প্রচার হয়ে গেল আমি নাকি মেধাবী ছাত্র। গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে যায়, আমি তখন ঘুম থেকে উঠি। আমার সাথে জেগে থাকে কেবল বাবার বাড়ির পোষা কুকুরটি। এলাকায় একটি ডাহের বাফের কথা আছে,
``বেশি বেশি কিছুই ভালো না"।
গভীর রাতে আমি টেবিলে বসে পড়ছি। মা আমার আস্তে করে পাশে বসলেন, মাথায় হাত রেখে বললেন,
``বাবা, তুমি আমার বংশের চেরাগ, তোমাকে এতো পড়তে হবে না।"
তারপর থেকে আমি আর বই পড়ি না। মানুষকে পাঠ করার চেষ্টা করি, সাংবাদিকতা করি, দুই একটা রিপোর্ট লিখি। শত্রুর সংখ্যা বাড়তে থাকে । আমি হয়ে উঠলাম তথায়কথিত সাংবাদিক।আইরনি করে অনেকেই আমাকে ডাকতে শুরু করে গাংবাদিক। স্বাস্থ্য ক্লিনিকের রোজি আপা আর আমার সাথে হাসি দিয়ে কথা বলে না, ডাক্তার কুয়াশা ভাই আমার প্রিয়জনের কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করে।
তখনই প্রথমবারের মতো বাবার নিষেধাজ্ঞা আমার ইচ্ছার উপরে নাযিল হয়। আমার আর সাংবাদিক হয়ে উঠা হলো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম বিশ্বমানের মানুষ হওয়ার জন্য। হলে আমার জন্য কোনো সিট নেই। সিট নিয়ে থাকতে গেলে রাজনীতি করা লাগবে। অথচ গ্রামের বড়জন আদেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে যেন রাজনীতি না করি। রাজনীতি শব্দটি আমার কাছে সুন্দর বনের বাঘ হয়ে দাঁড়াল, আমি হয়ে গেলাম ভীতু হরিণ। সাহিত্যের ছাত্র হয়েও আমার মতো করে কিছু লিখতে গেলে মানা, পরীক্ষার খাতায় খেলতে হয় মেথ মেথ খেলা। প্রাণের জ্ঞানীজন বলেন,
``পরীক্ষা একটি সিস্টেম, সৃজনশীলতা প্রকাশের জায়গা না।"
আমি এখন শুধু ভাবি, কেবলই ভাবি,
এতো ``না" এর মাঝে `` হ্যাঁ" কোথায়?
এতো `` না " এর মাঝে আমি কোথায়?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন