শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৫

প্রজাপতি....


প্রজাপতি,
তোমার গিফট হাতে পেলাম।
চমৎকার কারুকার্যখচিত আল্পনা। অনেকক্ষণ হাতে তৈরি খামের দিকে তাকিয়ে ছিলাম,তাকিয়ে ছিলাম খামের ভাঁজে ভাঁজে যে স্পর্শ লুকিয়ে আছে তার দিকে।
চোখে নাকি মন থাকে, আমি বলি চোখে থাকে জীবন। তাই জীবন দিয়ে খামের জীবনকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। উপলব্ধির জায়গায় আমি চমৎকার মানুষ, প্রকাশের জায়গায় এখনো আশাবাদী হয়ে ওঠতে পারি নি।

বেশি ফুলের নাম জানি না। কারণ আমার শৈশব কেটেছে সরিষার ফুলের গন্ধে। তা ছাড়া তথ্যগত জায়গা থেকে আমার শৈশব ততটা শিক্ষিত না। তারপরও তোমার পাঠানো খামের প্রচ্ছদে নীরবে শুয়ে থাকা অজানা ফুলের দিকে আমার চোখ। ফুলের মাঝখানে 'প্রজাপতি' শব্দটি  আমাকে মারাত্মক প্রেমিক করে তোলে। প্রিয় নাম যে ফুলের চেয়েও সুন্দর হতে পারে, হতে পারে ফুলের চেয়েও সুগন্ধী আমার জানা ছিল না। তার উপরে প্রিয় নামটি প্রিয়ার নিজ হাতে লেখা।

সকালে ঘুম ভাঙে আমার এক প্রিয় দাদার ফোনে। দাদাকে আমি `দেবতা' বলে সম্বোধন করি। তার পেছনে ছোট্ট এক ইতিহাস আছে। কারণ তিনি যখন চরমভাবে হতাশ সেই সময় তাঁকে আশা দেয়ার একমাত্র মানুষ ছিলাম আমি। আর আমি যখন আশা দিই তখন আশা আর আশা থাকে না, তা বিশ্বাসে পরিণত হয়। আজ তিনি বিশ্বাসী মানুষ। ইউনিভার্সিটির প্রভাষক। `দেবতা' শব্দটি তাঁর  জন্য তখন খুবই প্রাসঙ্গিক ছিল।

দেবতা নতুন স্কুটার কিনে। আমাকে তাঁর স্কুটারে তুলে একটু ড্রাইভ করবে সেজন্য চলে আসে আমার হলগেইটে। বৌদির পর আমি দ্বিতীয় মানুষ যে তাঁর নব্য স্কুটারে চড়ে।

আমিও তোমার মনে হয়তো দ্বিতীয় মানুষ!

দ্বিতীয় মানুষ হিসাবে নয়, একজন অন্ধ প্রেমিক হিসাবে খামের ভেতর পৃথিবীর দিকে আমার দৃষ্টি। কাগজে আঁকা ছয়টি বেলুন তোমার নান্দনিক মনকে আমার কাছে টেনে নিয়ে আসে। তিনটি বেলুন বাম দিকে সোজা হয়ে আছে, বাকি তিনটি ক্রমানুসারে ডান দিকে হেলে পড়ছে।

বেলুনগুলোর শেকড়ে লেখা `শুভ জন্মদিন'।

`শুভ' শব্দটি জন্মদিনের উপরে লেখা। তুমি হয়তো জানো `শুভ'র সাথে জন্মের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে তুমি যখন ভুল বল আমার কাছে তা ফুল হয়ে যায়। এটা আমার মাত্রার বাইরের ভালোবাসা কিনা আমি জানি না। এই মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা একদিন তোমার কাছ থেকে আমাকে দূরে সরে আসতে সহায়তা করবে। কারণ তুমি প্রেমিকসুলভ নও,  অধ্যাপকসুলভ।

এখনো তোমার অধ্যাপকসুলভ মনে একটি শিশু খেলা করে। সেটি আমি প্রথম দিনই টের পেয়েছিলাম। নাকি টের পাইনি। তোমার সাথে এই ভাবে জড়িয়ে যাবো আমার ভাবনাতেই ছিল না।
আর এখন! তোমার কথা মুহূর্তে মুহূর্তে মনে পড়ে, পলকে পলকে আমি বিগলিত হয়ে পড়ি। আমার মায়ের কথাও এতো মনে পড়ে না। আম্মা ফোন দিয়েছিলেন কিছু মুখস্থ কথা বলার জন্য। তাঁর কথা শোনার সময়ই নেই আমার। আমি হয়তো এমনই-- ছোট্ট কাল থেকে এখন। তবে আম্মার মতো এতো সংগ্রামী `মা' বিরল। তাঁর সংগ্রামকে, সংগ্রামশক্তিকে মাথা নত করে শ্রদ্ধা জানাই, জানাতে হয়।

অনেকদিন পর ক্রিকেট খেললাম এলাকার মানুষের সাথে উদ্যানে। ভালো লাগলো বেশ।
ফেইসবুকে একটি নিদিষ্ট সময়ে ঢুকি। সমাজ নিয়ে লেখাটা পোস্ট করলাম।

এ্যানি ফোন দিল চা খাওয়ার জন্য। যেতে চাইনি । খুব করে বলল। তাও যেতে চাইনি। তারপর সুমনকে দিয়ে ফোন করালো। অবশেষে যেতে হলো।

জার্নালিজমে পড়ে আলিফ নামে একটি মেয়ের সাথে পরিচিতি হলাম। সুমনের বন্ধু। এই প্রথম কারো সম্পর্কে না জেনে আমি প্রাণ মেলে কথা বললাম। মেয়েটি আমাকে কীভাবে নিয়েছে আমি জানি না। তবে মেয়েটিকে আমার নিছক মেয়ে মনে হয়েছে। এমনিতেই আমি প্রচণ্ড শামুক টাইপের মানুষ। তা ছাড়া আমার চোখ শুধু তোমাকেই খুঁজে। ফলে পৃথিবীর কোনো মিষ্টিই আর মিষ্টি মনে হয় না।
তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগে আমার কত নারীকে যে ভালো লাগতো!
কিন্তু আমার ভালো লাগা কেবল আমার কাছেই থাকত, রাখতাম। কারণ প্রেমিকার ব্যাপারে আমি গাণিতিক হিসাব মেনে চলি। কিন্তু অবাক করার মতো ঘটনা হলো তোমার ব্যাপারে আমি কোনো গানিতিক যুক্তিই মেলাতে পারি না। তারপরও আমার মন দখল করে বসে আছো, সরানোর চেষ্টা করি কিন্তু সরাতে পারি না। হয়তো তোমার অবিশ্বাসী মনোভাব আর ঝগড়াটে আচরণ আমাকে চমৎকারভাবে সহায়তা করতে পারে।

এবার মূল এলাকায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করি যেখানে তিনটি রঙের খেলা। ক্লাস সেভেনে আমার রোল ছিল তিন। সেভেনে আমি খুব মনোযোগী ছাত্র। অষ্টম শ্রেণীতে দ্বিতীয় হয়েছিলাম। প্রথম হতে পারতাম। কিন্তু মামাতো ভাইটা পরীক্ষার হলে অসুস্থ হয়ে পড়ে আমার রোল যদি এক হয়ে যায় এই ভয়ে। সেদিন আমি তাকে ত্রিশ মার্কস দেখাই এবং তার রোলই এক থাকে, এক রাখি।

এই ভাবে আমি অনেক মানুষকে মূল্যায়ন করি যতক্ষণ আমার মানসিকতার বাঁধ ভেঙে না যায়। সবাই যখন আমার মেধা নিয়ে প্রশ্ন তুলল তখন আর ত্যাগের মহিমায় নিজেকে মহিমান্বিত করতে পারলাম না। দশম শ্রেণীতে আমি হই প্রথম, তাও আবার একশত নাম্বারের ব্যবধানে।

তোমার আর আমার ব্যবধান কত মার্কসের তার টের পাই তিন রঙের মাঝে প্রত্যক্ষ চোখে চেয়ে থাকা কয়েকটি কালো কালির লাইনের মাঝে যা আমার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আমি যেখানে স্বচ্ছ কুয়াশা। আমি যেখানে কেবলই আকর্ষণ যে আকর্ষণ এর মূল কারণ না-জানা যা অজানা থেকে উৎসারিত।

আজ একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার ফোন করেছিলেন। তিনি  অভিযোগ করেছেন
আমি নাকি তাকে মনে রাখি না।
কথাটা  আমার খুব ভালো লেগেছে। কারণ তিনি চান আমি যেন তাকে মনে রাখি।

ইউনিভার্সিটির টিচার হিসেবে তাঁর মূল্যায়ণ আমার কাছে নেই, তবে তিনি ভালো মানুষ।

তুমি হয়তো ভালো মানুষ, হয়তো ভালো মানুষ নও, কিন্তু  গঙ্গার জল অনেক গড়িয়ে যাওয়ার পরও আমি তোমার কল্পনার খাবার। তুমি কল্পনা নিয়ে খেলতে পছন্দ কর, তাইতো আমি তোমার কল্পনার পুরুষ। আমি তো তোমার কল্পনার বিলাসী উপকরণ হতে চাই নি কিংবা বিলাস দ্রব্যের মতো আনুষ্ঠানিক!
চাইনি
প্রজাপতি
চাইনি!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন