সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৫


আধখানা চোখে আধখানা দেনা 

তারপর

মানুষ অতঃপর শয়তান
মানুষ অতঃপর ফেরেশতা
মানুষ অতঃপর মানুষ

প্রথম লেখা

আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব পনেরো মিনিটের পথ। বিরতি দেয়া হতো দুপর একটায়। এক ঘণ্টার বিরতি। পনেরো মিনিটে আসা, পনেরো মিনিটে যাওয়া, পনেরো মিনিটে খাওয়া। আর বাকি পনেরো মিনিট  সালাত কায়েম করার কাজে ব্যবহার করতাম।

সালাত বললাম এই কারণে যে সালাত আর নামায এক কথা না, এক কথা না সাওম আর রোজা। রোজা মানে উপোস থাকা আর সাওম মানে প্রভুর হুকুমে উপোস থাকা এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ফাস্টিং ব্রেক করা। নামায মানে স্মরণ। আর সালাত মানে নিয়মতান্ত্রিক স্মরণ, অবশ্যই আল্লার স্মরণ।

দুপুরের খাবার শেষ করে মসজিদের দিকে যাচ্ছি। মসজিদ আমাদের বাড়ি থেকে এক ডাকের পথ। রাস্তায় নেমেই দেখি একটি শিশু কাঁদছে, আরেকটি শিশু তার কান্না দেখে হাসছে, মহান হাসি। হাসি শিশুটির কান্না আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। উপেক্ষা করতে পারছি না শিশুটির মায়াময় কান্না, উপেক্ষা করতে পারছি না শিশুটির অকপট হাসি। সবচেয়ে বড় প্যারাডক্স হল আমিও তখন শিশু। আমার শিশুমনে তখন এক ধরনের পেনসিভ মুড তৈরি হল। তখন কয়েকটি লাইন টপ টপ করে পৃথিবীতে নেমে আসে

বিচিত্র ধরায় আমি আসিয়াছি বিচিত্র রূপে
কারো দেখে মুগ্ধ হই কারো দেখে হাসি
কারো মুখে লাবণ্যের হাসি
কারো নেত্র তরে বারি যাইতেছে ভাসি।

শিশুমন আমার একেবারে হালকা হয়ে গেল। ফুরফুরে এক মেজাজ নিয়ে সালাত কায়েম করে স্কুলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি।
তখন থেকে লেখালেখি আমার জৈবিক কাজ। লিখলে শান্তি পাই।
আমি জানি মরণশীল এই পৃথিবীতে লেখকরা কখনো অসুস্থ,
কখনো পাগল,
কখনো আবার হাস্যকর প্রাণি।

রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৫

বেদনা

বেদনা, তুমি কখন আমার প্রিয়া হলে?
আমার পাশে থাকো গভীর আনন্দে
প্রতারিত পাপ আমাকে তাড়া করে গভীর থেকে গভীরে
আমি `মানুষ' কথাটি বলতে শুদ্ধ আত্মা লাগে, তেজ লাগে, দম লাগে, শুদ্ধ দম
আমার শুদ্ধতা লীন হয়ে গেছে বিগত দিনের গঙার জলে
আমি এখন কুকুর, বেড়াল কিংবা আরেকটু সাহসী হলে সুন্দর বনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার
যাকে মানুষ বলে তাকে কখনো এই দুই চোখে দেখেনি
তবে অনুমান করেছিলাম তার এক অদৃশ্য সত্তা, তার চোখ, নাক, তার গোল গোল কথা, ইয়ামি ইয়ামি দৌড় তোমারই মতো

বেদনা, তুমি আমাকে মানুষ করার দায়িত্ব নিয়েছ অসীম বেদনায়

হৃদয় এক অনিবার্য অসুখের নাম 

শুন্যতা

মায়ের মাঝে যখন মাতৃত্ব, পিতার মাঝে যখন পিতৃত্ব, শিক্ষকের মাঝে যখন আদর্শ কিংবা বন্ধুর মাঝে যখন ত্যাগের মহিমা খুঁজে না পাওয়া যায় তখন সচেতন মানুষেরা কষ্ট পায়। তাতে পৃথিবীর হয়তো কিছু আসে যায় না, আবার অনেক কিছু আসে যায়।

কারণ,  বলা তো যায় না কোন টমির মাঝে লুকিয়ে আছে বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিশন।

তাছাড়া যে শিক্ষাগুরু বৈষয়িক প্রয়োজনকে সামনে রেখে শিষ্য তৈরি করে, সেই শিষ্য আবার বৈষয়িক প্রয়োজনকেই  অস্ত্র করে শিক্ষাগুরু প্রত্যাখ্যান করে।

যে বাবা-মা তাদের সন্তানদের ক্লাসে ফার্স্ট  হওয়ার তাগাদা দিয়ে ক্লাসমেটদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শেখায় সেই বাবা-মা একদিন সন্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে যায়।

যে বন্ধু ত্যাগ করতে শিখেনি সেই বন্ধু দোকানদার হলে ভালো, যে দোকানে লেখা থাকবে ``এখানে বাকী চাহিয়া লজ্জা দিবেন না"। কারণ বন্ধুত্ব কোনো নগদ আদান-প্রদানের বিষয় না।

শনিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৫

সিন্দবাদ

আমার দেখা প্রথম নায়ক সিন্দবাদ। আলিফ লায়লার সিন্দবাদ। সিন্দবাদের বিপদগুলো সিঁড়ির মতো-- আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠে। উপরের দিক মানে ঝড়ো হাওয়ার প্লাবিত গুঞ্জন। কোনো বিপদই সিন্দবাদের মানসিক শক্তির কাছে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারিনি। সিন্দবাদের মানসিক নৌকা যখন বৈঠা ছাড়া হয়ে যেত তখনই সে প্রেমসুরে কাতর নয়নে চলে যেত তার স্মরণে --

আল্লা মাদাত কর
আল্লা মাদাত কর

তখন থেকে আমি জানি সমাজে চারটি লেয়ার-- সিন্দবাদ, শয়তান, আল্লা, মানুষ। তখন থেকেই আমি সিন্দবাদের উত্তর পুরুষ।

আমার মানসিক জল থেকে যখন সোনালি সূর্য চলে যায় তখন আমি হিজল গাছের নিচের শান্ত সমাহিত জল। যে জল ভয়শুন্য গ্রামের বাসিন্দা সেই জল। সেই জল থেকে একদিন সিন্দবাদের জন্ম।

আমার প্রথম হিরো সিন্দবাদ।

আমার দুই চোখে সিন্দবাদ, আমার লৌহ কণিকার পাড়ে পাড়ে সিন্দবাদ।

আমি সিন্দবাদের আধুনিক ভার্সন -- জিন্দাবাদ।

জিন্দাবাদ বাংলা সিনেমা দেখে কিন্তু ঘটনা কিংবা ঘটনার প্রতিক্রিয়া হয় না। কেবল ঘটনার কারণ হয়ে কখনো কাঁদে, কখনো হাসে।

হাসিগুলো ঝুলে থাকে হিংসার বারান্দায়, কান্নাগুলো তাচ্ছিল্য হয়ে বরফগলা নদী।

জিন্দাবাদ বয়ে চলে,
বয়ে চলে বসন্তের বাতাস হয়ে ডালে ডালে,
জ্যৈষ্ঠের বাতাস হয়ে ফলে ফলে,
আবার শীতের বাতাস হয়ে ঝরা পাতার প্রাত্যহিক সংসারে।

জিন্দাবাদ এমনই, বিপদ থেকে তুলে আনে একখণ্ড জীবন, পথ দেখায়, পথের প্যারামিটার হাতে তুলে দিয়ে বলে, বিদায় বন্ধু, বিদায়।

জিন্দাবাদ ভালো করেই জানে সুঁই-সুতা দিয়ে    কেমন রচনা করা যায় এক বিশ্ব জীবন -- জীবনের কাছে কতবার দেউলিয়া হওয়া যায়? যতবার জীবন ততবার।

জিন্দাবাদ একের ভেতর একাধিক, সীমার মাঝে অসীম তবুও আমি সিন্দবাদকে এড়াতে পারি না।

আমার দেখা প্রথম হিরো সিন্দাবাদ।

জুতা

জুতার ব্যাপারে আমি খুব চোজি। বেল্টযুক্ত জুতা আমার খুব পছন্দের। কারণ আমি চাই জুতা আমাকে আগলে রাখুক। কারণ কোনো কিছুই আমি রাখতে পারি না যদি আমার সাথে না থাকে। আমার প্রিয় বেল্টযুক্ত জুতাটি বিগত দিনের প্রিয় কিছু মুহুর্মুহু সময়ের সাথী। এখান থেকে সেখান, সেখান থেকে এখান, নদী থেকে জল, জল থেকে পাহাড়, অনেক অনেক জায়গায় ভ্রমণ, পরিভ্রণের একমাত্র নির্লস পরিষেবা প্রদানকারী আমার বেল্টযুক্ত জুতাটি।

ইদানীং জুতাটি আমাকে রক্তাক্ত করছে। কষ্ট হচ্ছে খুব। রক্ত ঝরছে।লাল মাংস উপমার মতো তাকিয়ে আছে। হাঁটতে পারছি না। জিয়া হল থেকে কলা ভবন রিক্সা দিয়ে যাই।

ভাবছি কতটুকু আর রক্তাক্ত করবে?

একসময় আমার পা ঠিকই মানিয়ে নিবে। আমার কষ্ট আমার সহ্য হলেও আমার বন্ধুদের সহ্য হয় না। তারা আমাকে কষ্ট থেকে মুক্ত রাখতে চায়।

এ মা, আপনি এখনি জুতা পরিবর্তন করেন....

ও মিয়া, পা রে কষ্ট দিতা ছ ক্যান....

শালা তুই এখনি জুতা কিনবি....

আমি আরেকটি ভালো জুতা কিনেছি। এই জুতাটিও আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। তবে সব নতুন জুতাই একটু কষ্ট দেয়। তারপর ঠিক হয়ে যায়। এখন যে জুতাটি আমি পড়ি এটি কিন্তু বেল্টযুক্ত না। ফিতাযুক্ত। জুতাটি আমাকে ধরে রাখে, আমিও ধরে রাখি। সমান সমান।

আসলেই ধরে রাখার হিসাবটা দুই দিক থেকে হলে সম্পর্কের পরিণতি এক দিকে যায়....

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৫

বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৫

সানি লিওন

সানি লিওন অনেক আগেই বাংলাদেশে এসে গেছে।

হ্যাঁ গেছে।

মানে Present Perfect Tense।

ছোট কালে শিখেছিলাম, যখন কোনো কাজ সংঘটিত হয়ে যাওয়ার পর তার ফলাফল বিদ্যমান থাকে তখন তাকে present perfect tense বলে।

যেমন : বই প্রকাশিত হয়েছে-- The book has been published.

বই প্রকাশের কাজটি শেষ কিন্তু প্রমাণ আমাদের চোখের সামনে।

Sani Layon has been arrived in Bangladesh = Present perfect Tense.

এখন প্রমাণ করার বিষয়।
প্রমাণ করা খুব সহজ। একটু কষ্ট করে আপনার ভাই, বন্ধু কিংবা ভাতিজার এন্ড্রয়েট মোবাইল ফোনবুথ চেক করুন। দেখবেন কোনো কোনো মোবাইল অপশনে আপনি ঢুকতে পারছেন না।

কারণ কী?

কারণ পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা।

কেন?

ঐখানে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার জমা রাখা?

অবশ্যই না।

মোবাইলের ঐ জায়গাটি সানি লিওনের জন্য বরাদ্দ।

অনেকে আবার মোবাইলের কোনো এ্যাপসে সানি লিওন সম্প্রদায়কে জমা রাখে না। তাদের কাছেও কিন্তু সানি লিওন বসবাস করে।

কীভাবে?

আপনি তাদের ইউটিউব চ্যানেলের হিস্ট্রি চেক করুণ। তাহলে বুঝতে পারবেন সানি লিওন কীভাবে Present Perfect Tense হয়ে অবস্থান করছে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে।

আশুগঞ্জে অনেক পুরনো একটি সিনেমা হল আছে। মেঘনা সিনেমা হল। মেঘনা নদীর পারে অবস্থিত তাই মেঘনা সিনেমা হল। একদিন গেলাম সিনেমা দেখতে।
অবাক হলাম দুটি কারণে।
প্রথম কারণ দর্শক নাই বললেই চলে। তাহলে সিনেমা হলটি চলে কীভাবে? অবাক হওয়ার দ্বিতীয় কারণটি হল এখানে সরাসরি যৌনকর্মী পাওয়া যায়।

সিনেমা চলছে তো চলছে। বাংলাদেশের কিং খান শাকিব খানের মুভি। হঠাৎ দেখি শাকিব খান আর নেই, সিনেমার পর্দায় সানি লিওন চলে এসেছে। সিনেমার পর্দায় সানি লিওন আর দর্শক গ্যালারিতে যৌনকর্মী -- অন্য এক সিনেমা-- দর্শক আমি আর আমার দুই বন্ধু।

আমরা ছিলাম বিকালের শোতে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি রাতের শো ভালো জমে।

কেন?

কারণ রিকসা চালক তাদের রিকসা জমা দিয়ে দেয়, চাতাল শ্রমিক সারা দিনের কাজ সেরে ফ্রি হয়, মাঝি নৌকাকে বিশ্রামে পাঠায়।

এই হাওয়ার জগতে সানি লিওন অনেক আগেই বাংলাদেশে এসে গেছে!

আমার এক বান্ধবী আঙুলের অসাধারণ ভঙ্গিমায় তার এক ছোট ভাইকে কুতকুতানি দিচ্ছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
``তুমি আঙুলের এই ভঙ্গি শিখলে কোথা থেকে? "

আমার দিদির কাছ থেকে।

আমি তখন মনে মনে হাসলাম। কারণ সানি লিওন অর্গাজম তৈরির কাজে আঙুলের এই ভঙ্গি ব্যবহার করে, একেবারে ইউনিক ভঙ্গি।

আবারো বলছি, সানি লিওন শুধু বাংলাদেশে আসেনি, সানি লিওনের ইউনিক ভঙ্গিও বাংলাদেশে চলে এসেছে।

কত জন অসাধারণ সাধারণ জ্ঞান শিখে
আমি শালা গোগন কথা ফুলের গন্ধ লিখে 

মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৫

একজন হেলেনের জন্ম হলে ট্রয় নগরীর যুদ্ধ অনিবার্য 

কাব্য মাতাল

বার বার করে দেখতে চাই তোকে রোজ
হাসির নিচে মাতাল করা জোছনামাখা সুখ
মনের কোণে লুকিয়ে রাখা অভিমানী মুখ
তুই যে আমার কাব্য মাতাল ডাহুক পাখির সুর


পরিণামের খোঁজ করে হতাশা চাষাবাদ করা যায়, যেতে পারে। আমি পথিক। পথের সন্ধ্যাকাল আমার সকাল, প্রত্যুষ, ভোর। পথে নামলেই আমি আশাবাদী হয়ে উঠি। পথই জানে কেমন করে শরীরমাটি ভেদ করে স্বপ্ন জেগে ওঠে।


তুই যে আমার সকাল বেলার আযান দেয়া ভোর প্রেমে মাতাল অসুর আমি ছন্দে বেতাল শোক
চোখের নেশায় পুড়াস আমায় একটু একটু রোজ
আমাকাশ, আমার বাতাস, সবখানেই তোর সুর


বিচ্ছেদ সংবাদ হতে বাধ্য। বিরহ সামাজিক হাসির খোরাক। যারা আমাদের কাছে ছিল বিস্তর  হাস্যকর আজ তাদের কাছে আমরা চরমভাবে হাস্যকর। এইভাবে হাসি বদলায়, খুশি রূপান্তরিত হয়ে থাকে।


আমার চোখে এখনো তুই কাব্য মাতাল ছবি
এখনো আমি আমিই আছি তোর চেনা সেই কবি

সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৫

মানুষ অবশেষে মানুষের কাছে যায়
মানুষ সব শেষে মানুষের গান গায় 

বিশ্ববিদ্যালয়

সাহিত্যের চরিত্রগুলো আর কতটুকু সাহিত্যিক? যতটুকু সাহিত্যিক তার চেয়ে বেশি বাণিজ্যিক। চরিত্রগুলোকে পণ্য করেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টররা টিকে আছে,সময়মতো ডাল-ভাত-গিলতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যিক হুজুরেরা মানিক বাবুর উপর ওয়াজ-মাহফিল করে, তবারকের আয়োজন করে। একদিনের ওয়াজ-মাহফিলের কস্টিউম খরচে যা ব্যয় হয়,তার অর্ধেক পেলেই মানিক বাবুর হাসি কিছু দিনের জন্য হলেও দীর্ঘমেয়াদি হতে পারতো। তবারক আবার আমদানি করা হয় ফাইভ স্টার হোটেল থেকে।ফাইভ স্টার হোটেলের নাম শুনলে আমার মানিক বাবুর শ্লেষকর্ম চোখে আসে--

``ঈশ্বর থাকেন ওই গ্রামে, ভদ্র পল্লিতে....।"

তবু বিরানির তাজা গন্ধে বিশ্বিবদ্যালয়ের মাস্টরদের গোবর-এষোণা শুনতে মাঝে মাঝে যেতে হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রতিত রুমে বসে তাদের খুৎবা শুনতে শুনতে চোখে ঘুম চলে আসে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে শীতল বাবুরে স্বপ্নে দেখি যে কয়েকটি মাছ চুরি করেছিলো।

মানিক বাবু, জানো তুমি?
তোমাকে জানতেই হবে, তোমার চরিত্রগুলো নিয়ে আজ সন্ত্রাসী করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টররা।

একদিন পরীক্ষার হলে আমি। আমাদেরকে দেয়া হলো 'প্রাগৈতিহাসিক' গল্পের বিষয় ও শিল্পরূপ লিখতে। আমি সামনের বেঞ্চে বসা। আমার সামনে আর কোনো ছাত্রবেঞ্চ নেই। আছে টিচারদের সিংহাসন। টিচাররা সিংহাসনে বসে হোমমেড তেলতেলে গন্ধে মাতম খাবার খাচ্ছে। আমার নাকে তখন গন্ধখাবার,কস্তুরি গন্ধখাবার আর মস্তিষ্কে খেলা করছে ভিখু-হৃদয়ের হাহাকার। খাতায় তখন আমি আর কিছু লিখতে পারিনি। চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা  জল গড়িয়ে পড়ে। পরীক্ষার খাতা ভিজে যায়। ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়।

আমার চোখের জল হয়তোবা ভিখু-হৃদয়ের হাহাকারের সমান নয়, কিংবা সমানের কাছাকাছিও নয়।
কিন্তু
আজ আমি জানি,কোন বুদ্ধিজীবী সন্ত্রাস ভিখুর মতো ডাকাত তৈরি করে।

কোন বুদ্ধিজীবী সন্ত্রাস স্যাডিজম চর্চা করে।

কোন বুদ্ধিজীবী সন্ত্রাস সামাজিক ব্রাত্য পর্দায় সমাপণ করে শিল্পীর বনলতার শেষকৃত্য।

শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫

ভিক্ষুক

আমরা প্রত্যেকে ভিক্ষুক। ভালোবাসা পাওয়ার ভিক্ষুক, প্রশংসা পাওয়ার ভিক্ষুক, অনুদান পাওয়ার ভিক্ষুক, সহানুভূতি পাওয়ার ভিক্ষুক।

চোখে কয়েকজন দানবীর দেখি যাঁরা প্রেমিক।

আমি ভিক্ষাটা খুব ভালোভাবেই করি। কারণ ভিক্ষা না করলে ভিক্ষুক চেনা যায় না।

কেউ যদি বলতো

কেউ যদি বলতো কী করছেন?

আমি হয়তো বলতাম অলসতার কূলে শুয়ে আছি।

তখন কেউ বলতো না না, একদম অলসতা করা যাবে না। এখনি স্নান সেরে দায়িত্ব সচেতন হয়ে পড়ুন।

আমি বলতাম, আরেকটু অলসতা পান করি, তারপর না হয়....।

আপনার রূপ-কথার রাণী সাত সমুদ্র তের নদীর পাড়ে অপেক্ষা করছে। অলস হলে দৈত্য এসে হালুম করে নিয়ে যাবে আপনার রাণীকে।

তাতে কী? দৈত্যের বুঝি মাংস খাওয়ার স্বাদ জাগে না। ভীতু হরিণের মাংস খুব বেশি লাল হয়ে থাকে, লাল মাংস দৈত্যের কাছে স্বাদ আর স্বাদ, লাফালাফি প্রিয়।

লজ্জা আর লজ্জা, ছি, ছি ছি

কেন? কী হলো আবার

নারীকে মাংস ভাবতে লজ্জা হলো না আপনার, আপনি এত নীচ।

নারীকে মাংস ভাবিনি  বলেই তো অলস হয়ে শুয়ে আছি হায় চিল বেদনায়, এখনো তেলোয়াত করি পদ্মঠোঁটের চুম্বন। আমার ঠোঁট আজ হিরোশিমা-নাগাসাকি যেখানে জন্মাবে না আর কোনো উর্বর চুম্বন!

তবে কী তাকে আর বাঁচাতে যাবেন না?

মৃত মানুষ বেঁচে ওঠার স্বপ্ন দেখতে পারে, বাঁচানোর স্বপ্ন তার কাছে যে নেই। জলে স্নান করতে করতে অনেকে যেমন জল হয়ে যায়, আমিও যে আজ অলসতা মোড়ানো মানুষ, চলনে বলনে অক্ষম!
তবে তার তুলসী পাতার মতো নরমগরম ডান চোখে চুম্বনদৃশ্য অঙ্কন করে বলেছিলাম,কসম খোদার, আমার দেহ থেকে ঝরে পড়েছে বিগত দিনের সকল পাপতাপ। আজ থেকে তোমার এই চোখ প্রেমের পবিত্র নগরী, আর আমি একমাত্র পর্যটক।

সে বলেছিল আমি কারো ব্যক্তিগত সম্পদ হতে পারবো না।

আমি তো তাকে সম্পদ ভাবিনি সে যেমন করে তার চুলের লাল ফিতাকে সম্পদ ভাবে। আমি তাকে আমার ভেবেছিলাম যেমন করে একজন মানুষ তার চোখ- মুখকে নিজস্ব অংশ মনে করে।
তারপর তার সাথে পিংপং খেলার উল্লাস করিনি, তারপর থেকে আমি ঝুলে আছি আসমান- জমিনের মাঝখানে অভিকর্ষ বলের উল্টো দিকের দিগশূন্য গ্রামের অলস পাড়ায়।

কেউ যদি বলতো কী করছেন?

আমি হয়তো বলতাম....। জানি কেউ বলবে না!

শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০১৫

সাপ

তোমার মাঝে একটা তুমি তুমি ভাব আছে
তোমার মাঝে একটা আমি আমি সাপ আছে

ইতিহাস

ইতিহাস সত্যের কবর, সত্যের জন্য কোনো হাশরের ময়দান নেই

History is the grave of the truth, no meadow be found for the truth 

বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৫

আল মাহমুদ

আল মাহমুদ জামায়েত-ই-ইসলামের অ্যাম্বাসেডর, ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর 

আন্দার

মাগরিবের আযান--

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার....

আযানের সাথে সাথে  মায়ের পোষা হাঁস-মোরগ খোয়ারে আসতে থাকে। হাঁস-মোরগ আযান বুঝে না, সূর্যের প্রস্থান বুঝে। সূর্য মুখ লুকালে, হাঁস-মুরগি মুখ লুকাতে চলে আসে খোয়ারে।
যদি কোনোদিন মায়ের পোষাদের আসতে একটু লেইট হয়ে যায়,  মা আমার হয়রান। হয়রান।  কারণ মা জানেন অন্ধকারে পথ চিনে না হাঁস-মোরগ।

মানুষ অন্ধকারে ঠিকই চিনে নেয় তার বাড়ির ঠিকানা। তাতে হয়তো কষ্ট হয় কিন্তু ব্যর্থ হয় না।
তারপরও অন্ধকারে মায়ের বড় ভয়! একটু আন্দার অইলেই আম্মার চিৎকার-কথা

কুফি জ্বালা, কুফি জ্বালা,
আন্দাইরে ফেরেশতা তাহে না,
তাহে শয়তান,
কুফি জ্বালা, কুফি জ্বালা

মাগো তোমার হারিকেনের আলো কতটুকু অন্ধকার দূর করে?

কতটুকু?

রাজ্যের শক্তি নিয়ে অন্ধকার পেতেছে আসন। আলোরা দাস হয়ে বসে আছে, গোপনে চলে বিনম্র উচ্চারণ

জ্বী হুজুর  জ্বী হুজুর, নম  নম তব তপস্যা নম

মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৫

কেমন যেন

জিন্দেগি বহৎ কুছ সিখাতে হে
কাভি হাসাতি হে
কাভি রোলাতি হে
হুদছে জাদা কিছিপে ভারোসা মাত কর না
আন্দেরে সে তো পারছায়ি বি সাত সুর ঝাতে হে

অন্ধকারে নাকি নিজের ছায়াও নিজের সাথে থাকে না। আমি বলি অন্য কথা। অন্ধকারে ছায়া আর আমি এক হয়ে যাই। বিপদ আসলেই নিজের চরিত্র আয়না হয়ে যায়। নিজেকে তখন নিজের চোখে দেখা যায়। কষ্টের ভেতর থাকে অন্য রকম মানব জীবন। কষ্টের গানই মূলত গান। কষ্টের কথাই মূলত পৃথিবীর আদি কথা।

মানুষকে অবশ্যই মানুষের উপর বিশ্বাস, ভরসা রাখতে হয়। একজন বিজ্ঞানীর সাথে একজন কৃষক জন্মগতভাবে থাকেন। কারণ কৃষকের উৎপাদিত ফসল বিজ্ঞানীকে ভোগ করতে হয়। একজন কৃষকের সাথে একজন তাঁতী বাধ্যতামূলকভাবে থাকেন। কারণ কৃষককে কাপড় পরিধান করতে হয়। একজন তাঁতীর মাঝে একজন ডাক্তার থাকেন। কারণ তাঁতীকে ঔষধ সেবন করতে হয়।

আসলে মানুষ নির্ভরশীল প্রাণী।

সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৫

দায়

জীবন আমার কোকিল শ্যামা সাগর পাহাড় নদী
কুন ফা ইয়া কুন হৃদয় খেলায় আর আমি নাই সুখী 

রবিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৫

প্রেমিক

ফুল কথা বলে ঘ্রাণে,
ঘ্রাণ নৃত্য করে প্রাণে
প্রেমিক বুঝে ফুলের ভাষা
অপ্রেমিকের মন যুক্তি-তর্কে ঠাঁসা 

মানুষ মূলত

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আশুগঞ্জ খুব সুবিধা করে যাওয়া যায় জয়ন্তিকা ট্রেনে। সরাসরি ঢাকা টু আশুগঞ্জ। জয়ন্তিকা ট্রেন আশুগঞ্জে স্টপেজ দেয়ার কথা না।

তারপরও কেন দেয়া হলো?

একটি কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। শফিউল আলম আড়াইসিধার সন্তান। তাঁর শ্বশুর তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খান। তিনিও তখন সচিব। এলাকায় বেড়াতে আসেন কোনো এক ছুটিতে। ছুটি শেষে গন্তব্যে ফিরছেন।আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখেন জয়ন্তিকা ট্রেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে।  তিনি সাথে সাথে ক্ষমতা বলে ট্রেন আশুগঞ্জ ফেরত আনেন এবং আশুগঞ্জে জয়ন্তিকা ট্রেনস্টপেজ নিশ্চিত করেন।

তাই জয়ন্তিকা ট্রেনে ওঠলেই আমার শফিউল আলমের কথা মনে পড়ে। অবশ্যই আরেকটি খাবারের কথাও মনে পড়ে। কাটলেট। কাটলেটে হলুদ আর মরিচের এক চমৎকার কম্বিনেশন আছে।

কিছু দিন আগে কাটলেট সংরক্ষণ কামড়ায় গেলাম। যা দেখলাম তাতে....!
তেলাপোকা, মাকড়সা পায়চারি করছে, পায়খানা করছে। যেহেতু ইতরপ্রাণি যেখানে বসবাস করে সেখানেই হাগু বিসর্জন করে সেহেতু আমার প্রিয় কাটলেট ইতর প্রাণির টয়লেট।

হায় রে ইতর প্রাণির টয়লেট এতোদিন আমি কত্ত মজা করে খেতাম, ওয়াক ওয়াক....।

কোনো মাংসই আমার কাছে খুব প্রিয় না। খেতে হয় তাই খাই। তবে নরসিংদী গেলে গরুর মাংস একটু মজা করেই খেতাম। মাংসের মাঝে কেমন যেন একটু আলাদা টেস্ট।

কিছুদিন আগে এক মাংস বিক্রেতাকে ব্যাপক মারধর করে নরসিংদীর মানুষ।

কেন?

কারণ সে পনেরো বছর যাবৎ গরুর মাংসের সাথে কুকুরের মাংস বিক্রি করে।

তাহলে আমি কি কুকুরের মাংস.... !

মানুষ যা খায় তাই মূলত সে। মানুষ কেন কুকুরের মতো আচরণ করে, কুকুর পুষতে চায় কিংবা তেলাপোকার মতো ভীতুর ডিম আজ আমার কাছে পরিষ্কার।

শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৫

প্রজাপতি....


প্রজাপতি,
তোমার গিফট হাতে পেলাম।
চমৎকার কারুকার্যখচিত আল্পনা। অনেকক্ষণ হাতে তৈরি খামের দিকে তাকিয়ে ছিলাম,তাকিয়ে ছিলাম খামের ভাঁজে ভাঁজে যে স্পর্শ লুকিয়ে আছে তার দিকে।
চোখে নাকি মন থাকে, আমি বলি চোখে থাকে জীবন। তাই জীবন দিয়ে খামের জীবনকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। উপলব্ধির জায়গায় আমি চমৎকার মানুষ, প্রকাশের জায়গায় এখনো আশাবাদী হয়ে ওঠতে পারি নি।

বেশি ফুলের নাম জানি না। কারণ আমার শৈশব কেটেছে সরিষার ফুলের গন্ধে। তা ছাড়া তথ্যগত জায়গা থেকে আমার শৈশব ততটা শিক্ষিত না। তারপরও তোমার পাঠানো খামের প্রচ্ছদে নীরবে শুয়ে থাকা অজানা ফুলের দিকে আমার চোখ। ফুলের মাঝখানে 'প্রজাপতি' শব্দটি  আমাকে মারাত্মক প্রেমিক করে তোলে। প্রিয় নাম যে ফুলের চেয়েও সুন্দর হতে পারে, হতে পারে ফুলের চেয়েও সুগন্ধী আমার জানা ছিল না। তার উপরে প্রিয় নামটি প্রিয়ার নিজ হাতে লেখা।

সকালে ঘুম ভাঙে আমার এক প্রিয় দাদার ফোনে। দাদাকে আমি `দেবতা' বলে সম্বোধন করি। তার পেছনে ছোট্ট এক ইতিহাস আছে। কারণ তিনি যখন চরমভাবে হতাশ সেই সময় তাঁকে আশা দেয়ার একমাত্র মানুষ ছিলাম আমি। আর আমি যখন আশা দিই তখন আশা আর আশা থাকে না, তা বিশ্বাসে পরিণত হয়। আজ তিনি বিশ্বাসী মানুষ। ইউনিভার্সিটির প্রভাষক। `দেবতা' শব্দটি তাঁর  জন্য তখন খুবই প্রাসঙ্গিক ছিল।

দেবতা নতুন স্কুটার কিনে। আমাকে তাঁর স্কুটারে তুলে একটু ড্রাইভ করবে সেজন্য চলে আসে আমার হলগেইটে। বৌদির পর আমি দ্বিতীয় মানুষ যে তাঁর নব্য স্কুটারে চড়ে।

আমিও তোমার মনে হয়তো দ্বিতীয় মানুষ!

দ্বিতীয় মানুষ হিসাবে নয়, একজন অন্ধ প্রেমিক হিসাবে খামের ভেতর পৃথিবীর দিকে আমার দৃষ্টি। কাগজে আঁকা ছয়টি বেলুন তোমার নান্দনিক মনকে আমার কাছে টেনে নিয়ে আসে। তিনটি বেলুন বাম দিকে সোজা হয়ে আছে, বাকি তিনটি ক্রমানুসারে ডান দিকে হেলে পড়ছে।

বেলুনগুলোর শেকড়ে লেখা `শুভ জন্মদিন'।

`শুভ' শব্দটি জন্মদিনের উপরে লেখা। তুমি হয়তো জানো `শুভ'র সাথে জন্মের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে তুমি যখন ভুল বল আমার কাছে তা ফুল হয়ে যায়। এটা আমার মাত্রার বাইরের ভালোবাসা কিনা আমি জানি না। এই মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসা একদিন তোমার কাছ থেকে আমাকে দূরে সরে আসতে সহায়তা করবে। কারণ তুমি প্রেমিকসুলভ নও,  অধ্যাপকসুলভ।

এখনো তোমার অধ্যাপকসুলভ মনে একটি শিশু খেলা করে। সেটি আমি প্রথম দিনই টের পেয়েছিলাম। নাকি টের পাইনি। তোমার সাথে এই ভাবে জড়িয়ে যাবো আমার ভাবনাতেই ছিল না।
আর এখন! তোমার কথা মুহূর্তে মুহূর্তে মনে পড়ে, পলকে পলকে আমি বিগলিত হয়ে পড়ি। আমার মায়ের কথাও এতো মনে পড়ে না। আম্মা ফোন দিয়েছিলেন কিছু মুখস্থ কথা বলার জন্য। তাঁর কথা শোনার সময়ই নেই আমার। আমি হয়তো এমনই-- ছোট্ট কাল থেকে এখন। তবে আম্মার মতো এতো সংগ্রামী `মা' বিরল। তাঁর সংগ্রামকে, সংগ্রামশক্তিকে মাথা নত করে শ্রদ্ধা জানাই, জানাতে হয়।

অনেকদিন পর ক্রিকেট খেললাম এলাকার মানুষের সাথে উদ্যানে। ভালো লাগলো বেশ।
ফেইসবুকে একটি নিদিষ্ট সময়ে ঢুকি। সমাজ নিয়ে লেখাটা পোস্ট করলাম।

এ্যানি ফোন দিল চা খাওয়ার জন্য। যেতে চাইনি । খুব করে বলল। তাও যেতে চাইনি। তারপর সুমনকে দিয়ে ফোন করালো। অবশেষে যেতে হলো।

জার্নালিজমে পড়ে আলিফ নামে একটি মেয়ের সাথে পরিচিতি হলাম। সুমনের বন্ধু। এই প্রথম কারো সম্পর্কে না জেনে আমি প্রাণ মেলে কথা বললাম। মেয়েটি আমাকে কীভাবে নিয়েছে আমি জানি না। তবে মেয়েটিকে আমার নিছক মেয়ে মনে হয়েছে। এমনিতেই আমি প্রচণ্ড শামুক টাইপের মানুষ। তা ছাড়া আমার চোখ শুধু তোমাকেই খুঁজে। ফলে পৃথিবীর কোনো মিষ্টিই আর মিষ্টি মনে হয় না।
তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগে আমার কত নারীকে যে ভালো লাগতো!
কিন্তু আমার ভালো লাগা কেবল আমার কাছেই থাকত, রাখতাম। কারণ প্রেমিকার ব্যাপারে আমি গাণিতিক হিসাব মেনে চলি। কিন্তু অবাক করার মতো ঘটনা হলো তোমার ব্যাপারে আমি কোনো গানিতিক যুক্তিই মেলাতে পারি না। তারপরও আমার মন দখল করে বসে আছো, সরানোর চেষ্টা করি কিন্তু সরাতে পারি না। হয়তো তোমার অবিশ্বাসী মনোভাব আর ঝগড়াটে আচরণ আমাকে চমৎকারভাবে সহায়তা করতে পারে।

এবার মূল এলাকায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করি যেখানে তিনটি রঙের খেলা। ক্লাস সেভেনে আমার রোল ছিল তিন। সেভেনে আমি খুব মনোযোগী ছাত্র। অষ্টম শ্রেণীতে দ্বিতীয় হয়েছিলাম। প্রথম হতে পারতাম। কিন্তু মামাতো ভাইটা পরীক্ষার হলে অসুস্থ হয়ে পড়ে আমার রোল যদি এক হয়ে যায় এই ভয়ে। সেদিন আমি তাকে ত্রিশ মার্কস দেখাই এবং তার রোলই এক থাকে, এক রাখি।

এই ভাবে আমি অনেক মানুষকে মূল্যায়ন করি যতক্ষণ আমার মানসিকতার বাঁধ ভেঙে না যায়। সবাই যখন আমার মেধা নিয়ে প্রশ্ন তুলল তখন আর ত্যাগের মহিমায় নিজেকে মহিমান্বিত করতে পারলাম না। দশম শ্রেণীতে আমি হই প্রথম, তাও আবার একশত নাম্বারের ব্যবধানে।

তোমার আর আমার ব্যবধান কত মার্কসের তার টের পাই তিন রঙের মাঝে প্রত্যক্ষ চোখে চেয়ে থাকা কয়েকটি কালো কালির লাইনের মাঝে যা আমার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আমি যেখানে স্বচ্ছ কুয়াশা। আমি যেখানে কেবলই আকর্ষণ যে আকর্ষণ এর মূল কারণ না-জানা যা অজানা থেকে উৎসারিত।

আজ একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার ফোন করেছিলেন। তিনি  অভিযোগ করেছেন
আমি নাকি তাকে মনে রাখি না।
কথাটা  আমার খুব ভালো লেগেছে। কারণ তিনি চান আমি যেন তাকে মনে রাখি।

ইউনিভার্সিটির টিচার হিসেবে তাঁর মূল্যায়ণ আমার কাছে নেই, তবে তিনি ভালো মানুষ।

তুমি হয়তো ভালো মানুষ, হয়তো ভালো মানুষ নও, কিন্তু  গঙ্গার জল অনেক গড়িয়ে যাওয়ার পরও আমি তোমার কল্পনার খাবার। তুমি কল্পনা নিয়ে খেলতে পছন্দ কর, তাইতো আমি তোমার কল্পনার পুরুষ। আমি তো তোমার কল্পনার বিলাসী উপকরণ হতে চাই নি কিংবা বিলাস দ্রব্যের মতো আনুষ্ঠানিক!
চাইনি
প্রজাপতি
চাইনি!

বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৫

একটু যদি

সেই তুমি আর একটু যদি দিতে পথ পাড়ি
আঁধার তুমি হয়ে যেতে আলো রাজ্যের রাণী
রাজ্যে তোমার জোনাক এসে করতো মিটিমিটি
আকাশের ঐ নীলাভ তারা জ্বলতো দিবানিশি
কোকিল এসে গাইতো গান, নাচত দোয়েল শ্যামা
রাজ্য তোমার ফুলের গন্ধে বাজাত দামামা
স্বপ্নগুলো বোনা থাকতো আমার সব পাশে
মিষ্টি তুমি হাসির ছন্দে রেগে যেতে হেসে
হাসি তোমার পান করে আমি হতাম পুরুষ
চোখের পাশে জীবন রেখে উড়াতাম ফানুস
ফানুস উড়ে জীবন হাসে রঙিন রুব্বান খেলা
স্বপ্নে স্বপ্নে কেটে যেত আনন্দ-সুখের ভেলা

বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০১৫

আমরা

আমরা প্রতিটি কাজ অনেক ভালোভাবে শুরু করি। বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে অনেক ভালোভাবে।

মাঝখানে আমাদের বিরতি সত্যিই অনেক উৎসবমুখর।

আমরা কোনো কাজ শেষ করতে পারি না। আমাদের যেকোনো কাজ শেষ হয় অনেক নোংরাভাবে। বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে অনেক নোংরাভাবে।

অতীত অলসতা আমাদের বর্তমান তৈরি করে। ফলে অলস বর্তমান নিয়ে আমরা শক্তিশালী ভবিষ্যতে হাঁটতে পারি না।

We start our journey within energetic throw that is so much manipulative than others.
The intermission is offensive and festival something.
We can't watch the final round of the game. We have to back to the pavilion before the back of nodding.
Lazy past makes our present, lazy present is unable to trace the energetic pavement.

মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০১৫

one to seven

1

বন্ধুত্ব করার জন্য এক কাপ চা-ই যথেষ্ট, শত্রুতা করার জন্য এক কোটি টাকাও পর্যাপ্ত না
To be a friend a cup of tea is enough, to be done an enemy complex one crore  mone is so much little

2

প্রথাগত ভালো কাজ করা সহজ, প্রথাগত খারাপ কাজ করা কঠিন।
Being a social man is so easy but being a man is so difficult

3

ভালোবাসা ভালো মনের বাসা তৈরি করে। ভালোবাসা আছে বলেই বাবুই পাখির কাঁচা ঘর খাসা
Love helps making a good nest of mind. Only for love the nest of Babui is so appealing great

4

মানুষ হয়তো মিথ্যাবাদী কিন্তু ইশ্বর অপরাধী।

Man may be a liar but God is culprit

5

যারা দেখে কম তারা দেখায় বেশি, যারা দেখায় বেশি তারা নারী
One who watch a little shows a huge, a huge showing one is girl

6

মানুষ সিনেমা দেখে না, সিনেমার চরিত্রে নিজেকে দেখে
Man busy on watching his own character over the cinema

7

শিশুরা নেতা মানে না, শিশুরা বন্ধুত্বে বিশ্বাসী

Children does not believe on the leadership, children believe on the friendship 

রবিবার, ৯ আগস্ট, ২০১৫

বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে একজন ছাত্র বিশ্বমানের একাকিত্ব বোধ করে। কাউকে চিনতে পারে না,  চিনতে পারলেও বুঝতে পারে না। আর বুঝতে না পারা চিনতে না পারার মতোই।
ছাত্র খুব স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে। বর্তমানে যারা উপস্থিত থাকতে পারে  না তারা অতীত নিয়ে থাকতে পছন্দ করে। তাইতো ছাত্রের অতীত জোনাকি পোকার মতো মনে এসে মিটমিট করে।

মায়ের হাতের রান্না, বাড়ির পাশের কাশবন, নদীর স্রোতে ভেসে থাকা, বোনের  সাথে খুনসুটির স্মৃতিপ্রিয়তা তখন কয়েক ফোঁটা চোখের জল বিসর্জনের কারণ হয়। তখন এক ধরনের শূন্যতা  তৈরি হয় মনের ঠিক মাঝখানে। তখন বন্ধুত্বের ছোঁয়া খাবারের মতো জৈবিক চাহিদা।
শূন্যতা আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে ছেলেটি পরিপূর্ণভাবে পূর্ণ হতে চায়। পরিপূর্ণভাবে পূর্ণ হওয়ার তীব্র ইচ্ছা থেকে ছেলেটি নারীর সান্নিধ্য কামনা করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মেয়েরা হয়ে ওঠে আরো বাস্তববাদী। এখানে তার কেউ নেই, এখানে তার কিছু হলে লজ্জা আর লজ্জা। খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। কারণ পায়ের নিচে বিশ্বমানের কাঁটা। তারপরও একজন ছেলের প্রয়োজন বোধ করে একজন ছাত্রী। কারণ হ্যান্ডনোট লাগবে, বাজার করা লাগবে, ফ্যান কিনা লাগবে, গভীর রাতে মাঝে মাঝে ফ্লেক্সিলোড করা লাগবে, ডাক্তারের কাছ থেকে কখনো ঔষধ আনা লাগবে। যে ছেলেটি পরিপূর্ণ সেবাদাস হতে পারে তাকেই বাস্তবতার বাইরে এসে একটু এক্সট্রা সময় দেয় মেয়েটি। মেয়েটি প্রয়োজনীয়তা সামনে রেখে হিসাব করা হাসি বিক্রি করে, আর ছেলেটি পূর্ণ হতে চায়।  এইভাবে চলতে থাকে মাছের বাজারনীতি আর মনের প্রেমরীতি।

তারপরও কিছু ছেলেমেয়ের  মাঝে চমৎকার বোঝাপড়া তৈরি হয়। বোঝাপড়া তৈরি হওয়ার সাথে সাথে ছেলেটি বাস্তববাদী হয়ে ওঠে। সময় করে লাইব্রেরি ওয়ার্ক শুরু করে। নারীর সেবাদাস থেকে জনগণের চাকর হওয়ার কাঠামোবাদী ধারণা মনের আনাচে কানাচে জন্ম নেয়।

কিছু ছাত্র আছে যারা নারীর সান্নিধ্য পায় না। ফলে সে মানসিকভাবে খুব একা হয়ে পড়ে। খুব একা। বড় একা একা লাগে। প্রথমে সে সঙ্গী হিসাবে বেছে নেয় সিগারেট, পরে এ্যালকোহল, তারপর ইয়াবা জাতীয় মরণব্যাধি।

আরেকটি মজার ঘটনা ঘটে। যে নারীটি দেখতে সুন্দর তার পেছনে পিঁপশঙ্কের লাইন। প্রথমে বন্ধু হিসেবে নারীর ফোন নাম্বারে ফোন দেয়ার অনুমতি লাভ করে। তারপর ম্যাসেজ আদান-প্রদান। ফেইসবুকে নারী যদি একটি লাড্ডু মার্কা পিক আপলোড করে ছেলে তখন চকলেট মার্কা কমেন্ট করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তখন প্রশংসা স্নো মেখে ঘুমাতে যায়, ঘুম থেকে ওঠে, সকালে ফাস্টিং ব্রেক করে মোবাইলে স্কিনে ভাসা কোনো এক যুবকের ম্যাসেজ কিংবা আস্তাবল ফোনে।
নারী তখন রাণী। রাণী তখন রাজাকে খুঁজে। আর ছেলেটি মেয়েটির জন্মতারিখ মুখস্থ করে, জন্মতারিখে সারপ্রাইজ দেয়ার চেষ্টা করে। মনে মনে ভাবে আর নয় পোষে রাখা, এবার সব বলে দিবো -- কপালে যা আছে লেখা, মনে যদি পাইও ব্যথা, দেখে নিবো আমি তার শেষ, মিথ্যে অভিনয় আর নয় আর নয় ....।

জন্মদিনে ছেলেটি চমৎকার এক গিফট মেয়েটির মনের দরজায় রাখে। এই গিফট কেনার জন্য যে পরিমাণ ঘাম ছেলেটির ঝরেছে সেই পরিমাণ সন্তুষ্ট মেয়েটি হয় না। জন্মদিন আসলেই মেয়েটি ভাবে এই বুঝি বয়স বেড়ে গেল। মেয়েটির স্বপ্নের রাজা তখন একজন বিসিএস ক্যাডার, একজন বিজনেস ম্যাগনেট। একজন রেডিমেড বর তার চাই-ই চাই।

একদিন স্বপ্নের রাজার সাথে মেয়েটির বিয়ে হয়।
তারপর ছেলেটি শূন্যতার গর্ভে লীন, বিলীন হয়ে যায়। সঙ্গী হিসেবে প্রথমে সিগারেট তারপর এ্যালকোহল, তারপর ইয়াবা। অনেকে আবার প্রথমেই গাঁজা-এ্যালকোহল থেকে নেশার জগতে প্রবেশ করে।

বিয়ের বয়স পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যেই মেয়েটি একধরনের শূন্যতা বোধ করে। গভীর শূন্যতা। কারণ তার মোবাইলে আর ম্যাসেজ আসে না, তার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেউ অপেক্ষা করে না, তার হাসি নিয়ে আর কেউ গবেষণা করে না। সে কেবল কাঠপেন্সিল জীবন বহন করতে থাকে, জাস্ট কাঠপেন্সিল জীবন।

অনেক মেয়ে কিছু ছেলের মাঝে চমৎকার সম্ভাবনা দেখতে পায়। ফলে কোনো এক মেয়ে কোনো এক সম্ভাবনাময় ছেলের সাথে প্রেম করে। প্রেমের প্রথম দৃশ্যে হৃদয় উজাড় করা আকুতি। একজনের কাঁধে আরেকজনের মাথা, একজনের মনে আরেকজনের প্রেম। যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে জীবনে অমর হয়ে রয় সেই প্রেম। মেয়েটি ছেলেটির কাছে অভিভাবকের ভূমিকায়। ফোন করে তিন বেলা খাওয়ানো, নিয়মিত পড়াশোনা করানো, গোসলের আগে মাথায় যেন শ্যাম্পু করে সেই দিকে সর্তক করে দেয়া কিংবা সন্ধ্যায় বের হওয়ার আগে ব্রাশ করে যেন বের হয় সেইদিকে মনোযোগ দিতে বাধ্য করানো প্রভৃতি পরিসেবায় মগ্ন থাকে নারী। ছেলেটি তখন নারীটির কাছে শিশু হয়ে যায়।
একসময় ছেলেটিকে আদ্যোপান্ত মুখস্থ করে ফেলে মেয়েটি। তারপর আর তাকে ভালো লাগে না। ধীরে ধীরে তাকে এ্যাবুয়েড করতে থাকে। ছেলেটি কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েটি অভিভাবকের দায় দিয়ে ছেলেটির কাছ থেকে পলায়ন করে। কোনো এক হাতির সাথে তার বিয়ে হয় এবং শুরু করে নামাতা নামাতা জীবন।
আর ছেলেটি কিছু দিন হাউমাউ করে কান্নাকাটি করে, মান্না দের গান শোনে, শোকে মুহ্যমান হয়ে থাকে। এক সময় সেও নারীপৃথিবীর নিয়ম বুঝে যায়। বুঝার সাথে সাথে শোককে শক্তিতে পরিণত করে। হাতের কাছের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আমি এখন ভালোবাসি শুধু আমাকে এই জাতীয় গান শুনে, গান গায়। আর যে ছেলেটি শোককে শক্তিতে পরিণত করতে ব্যর্থ হয় সে দেবদাস হয়ে দাড়িগোঁফ এক করে ফেলে।

এই হলো বিশ্ববিদ্যালয়,
এই হলো দেবতা হয়ে ওঠার, দেবতা থেকে দেবদাস হয়ে উঠার স্ক্রিনশট।

শুক্রবার, ৭ আগস্ট, ২০১৫

জলে

নরসিংদী এবং গাজীপুরের সীমান্তে। আকাশ আর জলের মাঝখানে। আমি অন্ধকারে। আমি শীতলক্ষ্যা নদীর বেডরুমে। জলের নিজস্ব আলোতে আমার কালো কালো মাজা মাজা শরীরহানা একটু-আধটুকু দেখা যায়।

পৃথিবীতে জলের আধিক্য। শরীরে জলের প্লাবন। আমারও আছে জল। একান্ত ব্যক্তিগত জল। আমার জলে কিছু দুঃখ লুকিয়ে থাকে। এই দুঃখতরঙ্গের কারণ শরীরনদী জানে না। তাইতো শরীরনদী সিনেমার দৃশ্য আর জল সাজঘরের খেলা। 

কুকুর

কুকুরের কাজ মানুষ করেছে কামড় দিয়েছে পায়
মানুষগুলো কুকুর হয়ে রোজ রোজ কামড়ায় 

বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৫

আকাশে

আকাশকে বলতে শুনেছিলাম তারও আকাশ আছে। হৃদয় আরেকটি হৃদয় প্রার্থনা করে। হৃদয়ের গভীরে কোনো হৃদয় নেই। 

মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০১৫

স্বপ্নপুর

বসে থাকি
শুয়ে থাকি
ঘন লিকারে চা খাই
মৃত কাফনের গন্ধ নাকে আসে
নিহত আশারা পাশে এসে বসে

সারাদিন বসে থাকি, শুয়ে থাকি
আধখানা চাঁদ বাজায় দুতারা
আধকাপ নদী গান গায় যদি
হয়ে যাবো ভাউল, চলে যাবো জন্মের আদি

সারাদিন স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন আঁকি
রাস্তাঘাট,ফুটপাত,অলিগলি,চেনাসুর,চর্বিত নীতি
একলাফে একশ তবু যেন শত শত মাইল দূর
যেতে হবে স্বপ্নপুর

বসে থাকি, শুয়ে থাকি
মানুষের ঠোঁটের কাছে, মুখের কাছে, হাতের কাছে
মানুষের নদীতে আমার জল তারা তা জানে না
আমার সাগরের তাদের ঢেউ জেনে গেছি বহু আগে
যেতে হবে বহুদূর
বহুদূরের স্বপ্নপুর 

সাহিত্যধর্ম

এক নবজাতক জন্মগ্রহণ করলো। পরিবার তাকে অভিবাদন জানালো আল্লাহু আকবার ধ্বনির মধ্য দিয়ে। জন্মের সাথে সাথে নবজাতক যে রেডিমেড আল্লাহকে পেয়ে গেল তার কারণ কী?  কারণ একটাই নবজাতক মুসলিম ঘরে জন্ম নিয়েছে। নবজাতক একদিন শিশু হয়। তখন তাকে মক্তবে পাঠানো হয়।
মক্তবে কেন?
মন্দিরে কেন নয়?
কারণ মুসলমানদের জন্য মন্দির হারাম জায়গা।
শিশু একদিন অনেক বড় হয়। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নিয়ম করে কায়েম করে। ততদিনে সে জেনে যায় গির্জা, প্যাগোডা, মন্দির তার জন্য নিষিদ্ধ জায়গা। শুধু জানা নয় একেবারে মর্মভূমিতে গেঁথে যায়, যেখান থেকে বের হয়ে আসা শিশুটির পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

এইভাবে ধর্ম মানুষকে সীমিত করে ফেলে। সীমাবদ্ধতা শান্তি কিংবা প্রশান্তির কারণ কিনা প্রশ্নটি করা যেতেই পারে। প্রশ্নটি ব্যক্তির, উত্তর যার যার।

সাহিত্য অবাধ বিচরণের বিরাণ ভূমি। চিন্তা খোলা আকাশের মুক্ত মেঘের মতো ভাসতে থাকে, ভাসতে পারে সাহিত্যে। শিল্পও তাই।

শিল্প-সাহিত্যের জন্য যখন প্রতিষ্ঠান খোলে  ইমামগণ ওয়াজ নছিহত করেন তখন মানুষ সাহিত্যের নামে আবার ধর্মে প্রবেশ করে কিনা? অবশ্যই করে।
কারণ প্রতিষ্ঠান কাঠামো শেখায়, কাঠামো মুখস্থ করায়,  কাঠামোর বাইরে কোনোকিছু চিন্তা করার সুযোগ প্রতিষ্ঠান দেয় না -- এটি প্রতিষ্ঠানের ধর্ম।

এক নবজাতক লেখক যখন সাহিত্যে জন্মগ্রহণ করে তখন তাকে কবিতাধর্ম, উপন্যাসধর্ম, নাটকধর্ম প্রভৃতি নানা ধর্মের সাথে পরিচয় করান গুরুজন। শিষ্য যখন লিখতে আরম্ভ করে তখন সে প্রথমেই ভাবে আমি কি কবিতাধর্ম গ্রহণ করবো নাকি উপন্যাস ধর্ম, না ব্লা ব্লা ধর্ম গ্রহণ করবো। তখন শিষ্যলেখকের অনুভূতি বাল্মীকির মতো স্রোতোস্বিনী হয় না। ইমামগণের কাছে তখন শোকানুভূতি হয়ে যায় শ্লোক। অথচ লেখকের কাছে তা ছিল হৃদয়ের মর্মকথার কালিরূপ।

সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০১৫

গণজাগরণ মঞ্চ

গণজাগরণ মঞ্চ। উত্তাল শাহবাগ। জয় বাংলা ধ্বনি- প্রতিধ্বনি। বসে আছি আমিও। বসে আছি মূল মঞ্চের খুব নিকটে। বার বার আমার চোখ ক্যামেরার দিকে। ক্যামেরা যদি একবার আমার চেহারাহানা ক্লিক করে তাইলে আমার গ্রামের মানুষ ঘরে বসে আমারে দেখতে পাইবো। দেখতে পাইলেই আমারে ফোন দিবো আর কইবো,

`` আফনারে অমুক টিভিতে দেখছি।"

তাতেই আমি খুশি, বসে থাকার উসুল হয়ে যাবে।

আমার পাশেই বসে আছে মোমবাতি মোমবাতি টাইপের এক নারী। তার সাথে কিউট কিউট এক শিশু। শিশুর কপালে বাংলাদেশের পতাকা, শরীরে পাঞ্জাবি। নারী আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

``মনে হচ্ছে আবার স্বাধীনতা যুদ্ধ চলে আসছে।"

উত্তর না দিয়ে মৃদু হাসলাম। মৃদু হাসলাম।

কিছুক্ষণ পর ছোট ছোট বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। নারী আর বসে থাকেনি। কারণ বৃষ্টির ফোঁটা নারীর ম্যাকাপ করা মুখে আক্রমণ করে, ম্যাকাপ নষ্ট হয়ে যায়, ক্যামেরায় রূপালী ফেইস আর আসবে না।
শিশুটি যেতে চায়নি। শিশুটিকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়। শিশুটি প্রস্থান করার পর আমার ভেতরের শিশুটি জেগে উঠে। জেগে উঠে লাল-সবুজের মুখরিত স্লোগান।

অঝোরে বৃষ্টি পড়তে লাগলো। সবাই চলে গেছে। আমি তখনো বসে আছি। কোনো ক্যামেরা আমারে ক্লিক করেনি, করতে পারবে না। কারণ গুলিবর্ষণের উপত্যকায় বসে থাকে বিপ্লবী যেখানে ক্যামেরার লেন্স পৌঁছায় না, ক্যামেরার লেন্সের নিচে বসে থাকে নারী যেখানে বিপ্লব গ্লুকোমেট লিপস্টিক।

রবিবার, ২ আগস্ট, ২০১৫

অভিজ্ঞতা

আমি তখন খুব ছোট। বয়স ছয়-সাত হতে পারে। ছয়-সাত হলে কী হবে অনেক পাকা।  বাংলা সিনেমার পোকা।
প্রত্যেক শুক্রবার বিটিভিতে সিনেমা দেখানো হতো। সিনেমার জন্য শুক্রবার ছিল আমার ছোট ইদ। আর বিটিভি ইদের ময়দান। মাঝে মাঝে টিভির পেছনে যেতাম আমাকে যদি পর্দায় দেখা যায়। আমি কিন্তু তখন জানতাম না টিভির পেছনে দাঁড়ালেই পর্দার সামনে দেখা যায় না।
বিটিভির পর্দায় আমার ছবি ভাসবে এমন ইচ্ছা  মনে গেঁথে গেল। তখন মানসিকভাবে সিদ্ধান্ত নিলাম নায়ক হবো। আর নায়ক হলে শুধু বিটিভি কেন, সিনেমা হলেও আমার ছবি আর আমার নায়িকার ছবি একসঙ্গে প্রদর্শিত হবে।

তখন থেকেই আমি শুধু নিজেকে জাহির করতে চাই। নিজেকে জাহির করলে ভালো লাগে। কেউ আমার প্রসংশা করলে উদ্যমী হয়ে উঠি।

আমার এই ছোট্ট বয়সে অনেক সংগ্রাম, অনেক বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছি। সংগ্রাম আর বাস্তবতা প্রতিনিয়ত শিক্ষকের ভূমিকায় উপস্থিত হয়েছে। গভীর জলে পড়েও স্বপ্ন থেকে এক বিন্দু দূরে সরে যাই নি।

আমার শিক্ষক ( সংগ্রাম আর বাস্তবতা) এখন আমাকে অনেক বড় করে তুলেছেন। এখন আমি বিটিভির পর্দায় নিজেকে প্রদর্শন করতে চাই না, বিটিভির মালিক হতে চাই,
এখন নায়ক হতে চাই না,
নায়ক তৈরি করতে চাই।

গত 30, 07, 2015 বিটিভি আমাকে ডাকে। আমাকে খুব করে বলা হয় আমি যেন উপস্থিত থাকি। এমন একজন আমাকে বললেন যাঁর মুখের উপর না করার ক্ষমতা আমার নেই। তাই বিটিভিতে গেলাম। শিল্প ও সাহিত্য অনুষ্ঠান। ভিডিও রেকর্ড হলো। লাইভ হবে আগামী বুধবার চারটা পাঁচ মিনিটে। আমার রেকর্ডিং প্রথমবারেই নিয়ে নিয়েছেন ক্যামেরাম্যান। অথচ অন্যদের কয়েকবার করে শুট নিতে হয়েছে।আমি শুধু শুনেছি,

লাইট- ক্যামেরা- এ্যাকশন।

আমিও শুরু করেছি আমার কাজ। কোনো প্রকার কম্পন নেই, কোনো প্রকার দ্বিধা নেই।

কীভাবে থাকবে?

টিভির পেছন থেকে পর্দার সামনে যাওয়ার প্রস্তুতিটা যে আমার সেই ছোট কাল থেকেই। এখন তো শুধু অবস্থানের বদল ঘটেছে-- ক্যামেরার সামনে থেকে বিটিভির পর্দায় যাওয়ার পরিভ্রমণ।