শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৪

বনগাঁ লোকাল

পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন আলোর পরম্পরা। সমাজ অন্ধকারের ভয়াল থাবা থেকে বেরিয়ে আসুক অধিকাংশ মানুষ চায়। কারণ পৃথিবীতে খারাপ মানুষের সংখ্যা আসলেই অল্প। ভালো মানুষের সংখ্যা বেশী। তবে বেশী ভালো মানুষের বিশাল অংশ নিরীহ। মেরুদণ্ড নেই। সহজভাবে বললে মেরুদণ্ডহীন ভালো মানুষ।
এমনি মেরুদণ্ডহীন ভালো মানুষ আমাদের অনন্ত দাস ( তাপস পাল)। ছাপোষা কেরানি। নিজের চেহারা আয়নায় দেখে শান্তি পাই। বউ, সন্তান আর বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে তার সংসার। সাদা সাদা মিথ্যার মতো ছোট ছোট অপরাধ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে অনন্ত দাস। নিজের অধিকার যে পরিপূর্ণ আদায় করতে পারে এমন নয়। তাইতো ভদ্র মানুষের প্রতিনিধি ( মুখোশধারী) দুলাল দার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা আদায় করতে পারেনি , একবার অনেক নকশা করে বললেও দুলাল দা অস্বীকার করে। নিজের জীবনে হুমকি আসবে এমন কিছু করতে রাজি নয় অনন্ত দাস।  তার সামনে কুপিয়ে হত্যা করেছে সত্যেন দাসকে(রাজীব) । কিন্তু সে থানায় এই সত্যটুকু প্রকাশ করতে যায়নি। এর জন্য কেবলি দায় মধ্যবিত্তভয়। আমরা দেখেছি মধ্যবিত্তের সমাজ বড় বেশী পছন্দ করে আরোপিত জীবন, জীবনবোধ। একই জীবনপ্রবাহের আবর্তন --

রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠা
একই রুটিন, সেই একই ছুটা

মধ্যবিত্তের মানসিকতা অর্থাৎ যারা ভয় পেতে পছন্দ করে, যারা নিরীহ ভালো মানুষ সেই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয় আমাদের চিরচেনা অসহায় অনন্ত দাস।
অনন্ত দাস এখন আলোর পরম্পরার একটি অংশ। তার মেরুদণ্ড খুব বেশী সোজা ও সাহসী হয়ে উঠেছে। সে এখন সব জায়গায় প্রতিবাদী। সে জেনে গেছে --

``স্পাইনাল কর্ড খুব খতরনক জিনিস "

অনন্ত দাস এখন তীব্রকণ্ঠে উচ্চারণ করে --

` আগে নিজেকে বিশ্বাস করতে হবে আমি মানুষ, আর আমার পাশের লোকটি মানুষ '

সত্যেস্রোতের দৃশ্য দেখে  বৃদ্ধ বাবাও কথা বলতে শুরু করে--

` আলো বাড়ছে তো তেজও বাড়ছে'

 মেরুদণ্ড সমেত একজন অনন্ত দাস ডক্টর ভদ্রের কাছে রোগী, সাংবাদিক রজতের কাছে প্রতিবাদী, রাজুর কাছে ত্রাস আর শ্রমজীবী দেবনের ( রঘুবীর) কাছে দেবতা। আর একজন শিশির দত্তের কাছে পলাতক আসামি। কিন্তু শিশির দত্তও  জানে --

` দুবেলা খেতে পায় না যে জায়গায় লোকেরা সেখানে জননেতার আলিশান বাড়ি '

তারপরও শিশির দত্ত কিছু বলতে পারে না, কারণ সে যে সরকারের চাকর, হুকুমের দাস। তাকে বোঝানো হয়েছে --
` The police always go with incident and clues and of course sometimes with political angle '
শিশির দত্ত যে পরিবর্তন চায় এটি আরামদায়ক আবেশ। কিন্তু তার চাওয়াটা ভদ্র চাওয়া, শরীরে যেন ধূলো না লাগে, ইউনিফর্মটা স্বচ্ছ থাকা খুব প্রয়োজন।
শিমুলেরা সমাজে প্রান্তিক,পতিতা হলেও অনন্ত দাস তাদের কাছ থেকে পেয়ে থাকে সংগ্রামী সহযোগিতা, জীবনের দার্শনিক দীর্ঘশ্বাস --

` আমরা সাহায্য না করলে কী হতো, জানো দাদা? মেয়েদেরকে আর কেউ মানুষ বলে গন্য করতো না '

সত্যিই তো,  রিনা রাস্তায় বের হতে পারে না, ট্রেনে সাবলীল আয়েশে করতে পারে  না যাতায়াত, বিরানির মাংসের মাপে হিসাব করা হয় রিনার মাংসের আদ্যোপান্ত।
ভাইসুলভ প্রতিবাদ করায় সত্যেনকে জীবন দিতে হয়, কেউ বুঝতে চায় না রিনার হাহাকার, একজন ভাইহারা বোনের অন্তরকাঁদন।
ভাইহারা বোনের হাহাকার, মেরুদণ্ড সমেত অনন্ত দাসের  প্রতিবাদী উচ্চারণ, বাবুল দত্তের রাজনৈতিক কারিশমা, দুলাল বাবুর ভোগবাদী বিলাসিতার এক স্পষ্ট দৃশ্য

``8.8- এর বনগাঁ লোকাল "

মুভিটির কাহিনি ও চিত্রনাট্য করেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। প্রযোজনা তরুণ রাউত।
পরিচালনা দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন