সমাজে এখনো নারীর জন্ম হয় না, জন্ম হয় এক অভিশাপের!
মায়ের প্রসবব্যথা। একটি চিৎকার বলে দেয় শিশু পৃথিবীতে আসলো। চিৎকার নিচু স্বরে হওয়া মানে গৃহকর্তা নিশ্চিত, যে শিশুটির জন্ম হলো সে অবলা।
জননী এক সময় চোখ মেলে তাকায়, চোখে নেমে আসে প্রশান্তির ছায়া। কিন্তু গৃহকর্তার মানসিক প্রভাবে গড়ে উঠা গিন্নির মনে কালো মেঘ জমে উঠে! যে মেঘের কারণ কেবলই ছেলের ক্রাইসিস।
শিশুটি বড় হতে থাকে মেয়ে হিসেবে, তার বেশী খাবারের প্রয়োজন হয় না। কারণ মেয়েরা ঘরে থাকার বিষয়।আসবাবপত্র যেমন ঘরে থাকে। তাদের তো এতো ক্যালরির দরকার নেই।
আবার আকাশ ফেটে বৃষ্টি হলে ছেলেরাই ভিজবে। তাদের তো আর সর্দি- কাশি হবেনা। কারণ তাদের ইমিউনিটি কেপাসিটি অনেক বেশী। তখন শক্তির উৎস সম্পর্কে ইমাম সাহেবের ওয়াজের প্রাসঙ্গিকতা খোঁজতে ইচ্ছে হয় ( আইনাল হাদি, আইনাল হক, লাইসাল হাদি ইল্লাল্লাহ)।
মেয়েটি এখন যুবতী। জানালার লোহা ভেদ করে খেলার মাঠে তার দৃষ্টি। ছেলেরা মানে মানুষেরা খেলছে। তার মনটাও মানুষের সাথে খেলোয়াড় হয়ে যায়। দেহ পড়ে থাকে জানালার ভেতরে চুলা-চুল্লির সাথে।
এক সময় মেয়েটি আয়নার সামনে দাঁড়ায়। এই দাঁড়ানো অর্থ চুলের শরীর দেখা নয়। এই দাঁড়ানো অর্থ এক এবং একক। মেয়েটি অবাক হতে থাকে। এতো দিন যে পারিপার্শ্বিক মানুষগুলো বলতো সে আবুল- সাবুলের মতো না, আজতো তাই তার মনে হচ্ছে। ওয়াশরুমের দরজায় সিটকানোর দাপট চলে। নিকটস্থ আন্তরিক চোখে নিজেকে পাঠ করে। একটি মর্মার্থ বের হয়ে আসে-- যুবতীটির বক্ষের এলাকা আবুল- সাবুলের মতো নয়।
কিছু দিন পর মেয়েটি চিৎকার করে কাঁদে। `ও মা আমার এ কী হলো, রক্ত আসে কেন? ' মা বোঝায় `মা, এ কিছু না, ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই, তুমি এখন সাবালক হয়েছো।'
মেয়েটিও মায়ের কথায় সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করে। এবং তার ধারণা পরিবর্তন হয় যে শুধু কেটে গেলে কিংবা আঘাত পেলেই রক্ত আসে না, রক্ত আসার অনেক কারণ।
তারপর থেকে মেয়েটি রমণী!
তার চরিত্র নিয়ে যে কোনো সময় প্রশ্ন উঠতে পারে। স্কুল, কলেজ, বাস, ট্রেন কোথাও সে নিরাপদ নয়। হরিণীর মাংসের( মাংস = মায়ের অংশ) মতো সেও দামি মাংস। মাংসের রং নিয়ে কথার কলরব। স্মরণে আসেনা রমণীরও মন বলে কিছু একটা আছে। রমণীও রমণ কার্যের যোগ্য হতে তৈরি করে পার্লারদেহ।
আস্তে আস্তে সূর্যটা চাঁদ হয়ে রাতের ঘরে আসে।
সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশ। ইভালোশন এন্ড জেনেটিক্স প্রবাহের প্রায়োগিক প্রাণী। সবার মন তেলাওয়াত করে তাকে কথা বলতে হয়, হাসতে হয়, এমনকি কাঁদতে হয়!
হঠাৎ অভ্যাসগত রক্তমাইনাস বন্ধ হয়ে যায়। মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে, হতে থাকে শারীরিক অবয়বের আবর্তন।
রমণী এখন জননী!
সবাই দোয়া-মন্ত্র এবং আশার নিশ্চয়তায় সময়ের উপর ভর করে বসে আছে -- সূর্য আসবে জননীর সংসারে, বংশের বাত্তি জ্বালাবে। অবলা তো ঘরের শোভা, বাইরে তাদের যেতে মানা, বাইরে যদি যেতেই হয় সঙ্গে থাকবে জাতীয় পুরুষ।
এই জাতীয় পুরুষের অধীনে অবলা হয়ে উঠে রমণী, রমণী থেকে জননী। অর্থাৎ অবলার বাস্তবিক জীবনচক্র।
এই চক্র থেকে তারা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেনি এমন নয়, চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে কালের স্রোতে, তাতে পরিপূর্ণ সফল না হলেও বিফল নয়।
গ্রীক পুরাণ আমাদেরকে একটি গল্প শোনায় --
মানুষ মেয়েদের উপর অমানবিক অত্যাচার শুরু করে! ভোগের সামগ্রী তারা কেবল! তাদের মানসিক বিকাশ থেমে যেতে থাকে। অত্যাচারে মাত্রা যখন সহ্যসীমানা অতিক্রম করে তখনই গর্জে উঠে প্রতিবাদী উচ্ছ্বাস, উচ্চারণ! ইতিহাসের প্রতিবাদীপাতায় লিখিত হয় ``আমাজন " কণ্ঠস্বর! আমাজন হচ্ছে শক্তিশালী মহিলা সম্প্রদায়। আমাজনেরা এশিয়া- মাইনরের থার-মোডল নদীর তীরে এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলে এবং অত্যাচারী মাংসভোজী পুরুষদের তাড়িয়ে দেয়। পশ্চিম আফ্রিকার ডাহোমী- আমাজনেরা যুদ্ধ ও প্রশাসন যন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারাই আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহের প্রচলন করে, হয়তো ভেবেছিল বিয়ের মাধ্যমে আমৃত্যু মানুষ হিসাবে বাঁচতে পারবে! কিন্তু না! মাঘের কাছে হরিণের বন্ধু হওয়ার সম্ভাবনা কোনো কালে ছিলনা, আসবেও না!
তারপর আমরা যেহেতু মানুষ সেহেতু চরম আশাবাদী
একদিন নিশ্চিত সবাই বলবে --
আমরা কেউ ইভ কিংবা এ্যাডাম নয়, সকলেই মানুষ!
মায়ের প্রসবব্যথা। একটি চিৎকার বলে দেয় শিশু পৃথিবীতে আসলো। চিৎকার নিচু স্বরে হওয়া মানে গৃহকর্তা নিশ্চিত, যে শিশুটির জন্ম হলো সে অবলা।
জননী এক সময় চোখ মেলে তাকায়, চোখে নেমে আসে প্রশান্তির ছায়া। কিন্তু গৃহকর্তার মানসিক প্রভাবে গড়ে উঠা গিন্নির মনে কালো মেঘ জমে উঠে! যে মেঘের কারণ কেবলই ছেলের ক্রাইসিস।
শিশুটি বড় হতে থাকে মেয়ে হিসেবে, তার বেশী খাবারের প্রয়োজন হয় না। কারণ মেয়েরা ঘরে থাকার বিষয়।আসবাবপত্র যেমন ঘরে থাকে। তাদের তো এতো ক্যালরির দরকার নেই।
আবার আকাশ ফেটে বৃষ্টি হলে ছেলেরাই ভিজবে। তাদের তো আর সর্দি- কাশি হবেনা। কারণ তাদের ইমিউনিটি কেপাসিটি অনেক বেশী। তখন শক্তির উৎস সম্পর্কে ইমাম সাহেবের ওয়াজের প্রাসঙ্গিকতা খোঁজতে ইচ্ছে হয় ( আইনাল হাদি, আইনাল হক, লাইসাল হাদি ইল্লাল্লাহ)।
মেয়েটি এখন যুবতী। জানালার লোহা ভেদ করে খেলার মাঠে তার দৃষ্টি। ছেলেরা মানে মানুষেরা খেলছে। তার মনটাও মানুষের সাথে খেলোয়াড় হয়ে যায়। দেহ পড়ে থাকে জানালার ভেতরে চুলা-চুল্লির সাথে।
এক সময় মেয়েটি আয়নার সামনে দাঁড়ায়। এই দাঁড়ানো অর্থ চুলের শরীর দেখা নয়। এই দাঁড়ানো অর্থ এক এবং একক। মেয়েটি অবাক হতে থাকে। এতো দিন যে পারিপার্শ্বিক মানুষগুলো বলতো সে আবুল- সাবুলের মতো না, আজতো তাই তার মনে হচ্ছে। ওয়াশরুমের দরজায় সিটকানোর দাপট চলে। নিকটস্থ আন্তরিক চোখে নিজেকে পাঠ করে। একটি মর্মার্থ বের হয়ে আসে-- যুবতীটির বক্ষের এলাকা আবুল- সাবুলের মতো নয়।
কিছু দিন পর মেয়েটি চিৎকার করে কাঁদে। `ও মা আমার এ কী হলো, রক্ত আসে কেন? ' মা বোঝায় `মা, এ কিছু না, ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই, তুমি এখন সাবালক হয়েছো।'
মেয়েটিও মায়ের কথায় সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করে। এবং তার ধারণা পরিবর্তন হয় যে শুধু কেটে গেলে কিংবা আঘাত পেলেই রক্ত আসে না, রক্ত আসার অনেক কারণ।
তারপর থেকে মেয়েটি রমণী!
তার চরিত্র নিয়ে যে কোনো সময় প্রশ্ন উঠতে পারে। স্কুল, কলেজ, বাস, ট্রেন কোথাও সে নিরাপদ নয়। হরিণীর মাংসের( মাংস = মায়ের অংশ) মতো সেও দামি মাংস। মাংসের রং নিয়ে কথার কলরব। স্মরণে আসেনা রমণীরও মন বলে কিছু একটা আছে। রমণীও রমণ কার্যের যোগ্য হতে তৈরি করে পার্লারদেহ।
আস্তে আস্তে সূর্যটা চাঁদ হয়ে রাতের ঘরে আসে।
সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশ। ইভালোশন এন্ড জেনেটিক্স প্রবাহের প্রায়োগিক প্রাণী। সবার মন তেলাওয়াত করে তাকে কথা বলতে হয়, হাসতে হয়, এমনকি কাঁদতে হয়!
হঠাৎ অভ্যাসগত রক্তমাইনাস বন্ধ হয়ে যায়। মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে, হতে থাকে শারীরিক অবয়বের আবর্তন।
রমণী এখন জননী!
সবাই দোয়া-মন্ত্র এবং আশার নিশ্চয়তায় সময়ের উপর ভর করে বসে আছে -- সূর্য আসবে জননীর সংসারে, বংশের বাত্তি জ্বালাবে। অবলা তো ঘরের শোভা, বাইরে তাদের যেতে মানা, বাইরে যদি যেতেই হয় সঙ্গে থাকবে জাতীয় পুরুষ।
এই জাতীয় পুরুষের অধীনে অবলা হয়ে উঠে রমণী, রমণী থেকে জননী। অর্থাৎ অবলার বাস্তবিক জীবনচক্র।
এই চক্র থেকে তারা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেনি এমন নয়, চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে কালের স্রোতে, তাতে পরিপূর্ণ সফল না হলেও বিফল নয়।
গ্রীক পুরাণ আমাদেরকে একটি গল্প শোনায় --
মানুষ মেয়েদের উপর অমানবিক অত্যাচার শুরু করে! ভোগের সামগ্রী তারা কেবল! তাদের মানসিক বিকাশ থেমে যেতে থাকে। অত্যাচারে মাত্রা যখন সহ্যসীমানা অতিক্রম করে তখনই গর্জে উঠে প্রতিবাদী উচ্ছ্বাস, উচ্চারণ! ইতিহাসের প্রতিবাদীপাতায় লিখিত হয় ``আমাজন " কণ্ঠস্বর! আমাজন হচ্ছে শক্তিশালী মহিলা সম্প্রদায়। আমাজনেরা এশিয়া- মাইনরের থার-মোডল নদীর তীরে এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলে এবং অত্যাচারী মাংসভোজী পুরুষদের তাড়িয়ে দেয়। পশ্চিম আফ্রিকার ডাহোমী- আমাজনেরা যুদ্ধ ও প্রশাসন যন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারাই আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহের প্রচলন করে, হয়তো ভেবেছিল বিয়ের মাধ্যমে আমৃত্যু মানুষ হিসাবে বাঁচতে পারবে! কিন্তু না! মাঘের কাছে হরিণের বন্ধু হওয়ার সম্ভাবনা কোনো কালে ছিলনা, আসবেও না!
তারপর আমরা যেহেতু মানুষ সেহেতু চরম আশাবাদী
একদিন নিশ্চিত সবাই বলবে --
আমরা কেউ ইভ কিংবা এ্যাডাম নয়, সকলেই মানুষ!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন