আমি যে হলটিতে থাকি তার নাম মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল। জিয়া হল নামে সবাই চিনতে পছন্দ করে, আমিও বলতে আয়েসবোধ করি।পাঁচতলার একটি রুমে আমার বাসা।জানালার পাশে টেবিল। জানালা দিয়ে আজিজ মার্কেট দেখা যায়। আজিজ মার্কেটের পাশে রাস্তা। রাস্তায় বাস চলে, রিক্সা চলে, বাইক চলে, বিলাসবহুল গাড়ি চলে, রাত দশটার পর চলে ট্রাক।
নীরব মন নিয়ে টেবিলে পড়তে বসি। বইয়ের কালো কালো শব্দ, বাক্য চোখ দিয়ে দেখি আর কান দিয়ে মুখস্থ করি রাস্তা থেকে আসা যানবাহনের ওয়াজ।
মহসীন হলের দুইশত সাতাশ নাম্বার রুমে মাঝে মাঝে যাই। ঘুমাই, মেডিটেশন করি। দুই বন্ধু মিলে সিনেমা দেখি। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সেহেতু একটি বাড়তি কাজ করতে হয়। বাড়তি কাজটি হলো জানালা বন্ধ করে দেওয়া।
কেন, কেন!
কারন জানালা দিয়ে যানবাহনের শব্দ আসে। তিড়িং বিড়িং শব্দ।
হেঁটে হেঁটে টিএসসিতে যাই, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা হবে সোনালি কার্পেট, জলজ মসৃণ হবে তার গতি। স্বপ্নের, চিন্তার এক একটি জীবন্ত অধ্যায় লেপ্টে থাকবে রাস্তার আনাচে-কানাচ। অথচ সৈনিক মেজাজে পার হতে হয় রাস্তা। এইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সৈনিক করে তোলে।
কাজী মোতাহার হোসেন ভবন। ভবনটি শহীদ মিনারের পাশে। শহীদ মিনারের পাশে ঢাকা মেডিকেল কলেজ। শহীদ মিনার আর কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের মাইদদে একটি প্রেমের নদী। যে নদীতে ঢেউ, গর্জন থাকে প্রায় চৌদ্দ ঘণ্টা। নদীর ঢেউ-গর্জনের মোহনীয় পরিবেশকে সামনে রেখে গবেষণা করতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র।
কার্জন হলে বসলে প্রাচীন স্বর্ণযুগের কোনো অধ্যায় ইতিহাসের ভেতর থেকে চোখের সামনে আসতে থাকে। কিছুক্ষণের জন্য ভুলে যেতে ইচ্ছে করে ব্যস্ততার গ্লানি। কিন্তু না! চার রাস্তার মিলন মেলা তার কাছে ডেকে নেবেই। কারন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন বাহনের কেওয়াজ উপস্থিত উপস্থিত বলে নিজেদের চেতনাশক্তির পরীক্ষা দিয়ে থাকে। বাহনের চেতনাশক্তি দিন দিন বাড়ছে বই কমছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক আগেই হাউজিং লিমিটেড বানানো হয়েছে। দালাল আর দালাল, দালান এবং দালান। অথচ যে ছাত্রদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সেই ছাত্রদের থাকার সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। ছাত্রের একটি ডাবলিং সিট পেতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়, মনে হয় যেন মারামারি করে চর দখল করছে।
নিউ মার্কেটের মশা-মাছি রাতে রেস্ট নিতে যায় শাহ নেওয়াজ, কুয়েত মৈত্রী, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে। মশার সঙ্গীত শুনতে শুনতে তারা ঘুমিয়ে যায়। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মাছিরে স্বপ্ন দেখে। ঘুম থেকে ওঠে দেখে শরীরে রক্তের দাগ। এইভাবে রক্ত দান করার অভ্যাস গড়ে তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।
রোকেয়া হল শব্দদ্বীপ। চারদিকে শব্দ মাঝখানে রোকেয়া হল। রোকেয়া হলের মেয়েরা যে এতো সাহসী তার জন্য তারা কিন্তু দায়ী নয়। দায়ী একমাত্র যানবাহন এবং যানবাহনের সন্তানেরা। শব্দ এবং যানবাহন কীভাবে মেয়েদের সাহসী করে তুলে আপনি রোকেয়া হলের বাসিন্দা না হলে বুঝতেই পারবেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরি। সাধারণ জ্ঞান-গবেষকদের প্রিয়তম আশ্রয়। প্রিয়-প্রিয়া এসে মুখোমুখি বসে, চোখাচোখি করে, বই পড়ে। প্রিয়তম মুহূর্ত যাপন করতে চায় তারা। অথচ তাদের মাঝে সতীন হয়ে অবস্থান করে যানবাহনের সুন্দরী কেওয়াজ।
সেন্ট্রাল লাইব্রেরির তিন তলা থেকে কাজী নজরুল ইসলামের কবর দেখা যায়। নজরুল বলেছিলেন মসজিদের পাশে তাঁকে কবর দিতে যেন মুয়াজ্জেনদের আযান শুনতে পায়। হ্যাঁ, নজরুলের মনের ছহি নিয়ত আল্লা কবুল করেছেন। যেহেতু তিনি ছহি নিয়ত করেছিলেন সেহেতু পরম করুণাময় তাঁকে যানবাহন ও জনগণের মিশেল আওয়াজকবিতাপাঠ শোনার বোনাস সুযোগ করে দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম যখন আমার পা পড়ে তখন অবাক হয়েছিলাম-- এমন নাগরিক শহরের ভেতর এতো সুন্দর গোছানো গ্রাম কী করে হতে পারে! এখনো অবাক হই। তবে অবাক হওয়ার কারন বদলে যাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক অবয়ব।
বাংলদেশে অবাক হওয়ার এমন অনেক কারন আছে তাতে কিন্তু আমি মোটেও অবাক নই।
ওমা কেন!
নরসিংদীতে নবী ভাইয়ের একটি রুম আছে অনেকটা কবরের মতো। রুমে আমি আর ফাইজুল ভাই ঘুমাচ্ছিলাম। সময় সকাল নয়টা থেকে দশটা হবে। জানালার দুই হাত দূরে একটি স্কুল, বাচ্চাদের স্কুল। শব্দ হচ্ছে ভীষণ। ফাইজুল ভাই জানালা খুলে কিছু শব্দ উচ্চারণ করলেন,
মিস, শুনতে পাচ্ছেন....
জ্বি বলুন...
ঘুমাচ্ছি তো, সাউন্ড পোলিয়েশন একটু বেশি হচ্ছে...
কী আর করবো বলুন, আজ বাচ্চারা পরীক্ষা দিচ্ছে তো তাই ....
আমি অবাক হবো! ছোটকাল থেকে আমার বিশ্বাস আমাকে শিখাচ্ছে পরীক্ষা মানে পিনপতন নীরবতার নিচে শব্দের ঘর -সংসার।
আর মিস এ কি অমৃত বাণী শুনালেন?
বাংলাদেশ এমন অনেক কিছুই আমাদের শুনায়, অনেক কিছুই আমাদের দেখায়। অবাক কিংবা হতাশ হওয়ার কোনো কারন নেই, কোনো কারন থাকতে পারে না....
নীরব মন নিয়ে টেবিলে পড়তে বসি। বইয়ের কালো কালো শব্দ, বাক্য চোখ দিয়ে দেখি আর কান দিয়ে মুখস্থ করি রাস্তা থেকে আসা যানবাহনের ওয়াজ।
মহসীন হলের দুইশত সাতাশ নাম্বার রুমে মাঝে মাঝে যাই। ঘুমাই, মেডিটেশন করি। দুই বন্ধু মিলে সিনেমা দেখি। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সেহেতু একটি বাড়তি কাজ করতে হয়। বাড়তি কাজটি হলো জানালা বন্ধ করে দেওয়া।
কেন, কেন!
কারন জানালা দিয়ে যানবাহনের শব্দ আসে। তিড়িং বিড়িং শব্দ।
হেঁটে হেঁটে টিএসসিতে যাই, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা হবে সোনালি কার্পেট, জলজ মসৃণ হবে তার গতি। স্বপ্নের, চিন্তার এক একটি জীবন্ত অধ্যায় লেপ্টে থাকবে রাস্তার আনাচে-কানাচ। অথচ সৈনিক মেজাজে পার হতে হয় রাস্তা। এইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সৈনিক করে তোলে।
কাজী মোতাহার হোসেন ভবন। ভবনটি শহীদ মিনারের পাশে। শহীদ মিনারের পাশে ঢাকা মেডিকেল কলেজ। শহীদ মিনার আর কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের মাইদদে একটি প্রেমের নদী। যে নদীতে ঢেউ, গর্জন থাকে প্রায় চৌদ্দ ঘণ্টা। নদীর ঢেউ-গর্জনের মোহনীয় পরিবেশকে সামনে রেখে গবেষণা করতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র।
কার্জন হলে বসলে প্রাচীন স্বর্ণযুগের কোনো অধ্যায় ইতিহাসের ভেতর থেকে চোখের সামনে আসতে থাকে। কিছুক্ষণের জন্য ভুলে যেতে ইচ্ছে করে ব্যস্ততার গ্লানি। কিন্তু না! চার রাস্তার মিলন মেলা তার কাছে ডেকে নেবেই। কারন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন বাহনের কেওয়াজ উপস্থিত উপস্থিত বলে নিজেদের চেতনাশক্তির পরীক্ষা দিয়ে থাকে। বাহনের চেতনাশক্তি দিন দিন বাড়ছে বই কমছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক আগেই হাউজিং লিমিটেড বানানো হয়েছে। দালাল আর দালাল, দালান এবং দালান। অথচ যে ছাত্রদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সেই ছাত্রদের থাকার সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। ছাত্রের একটি ডাবলিং সিট পেতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়, মনে হয় যেন মারামারি করে চর দখল করছে।
নিউ মার্কেটের মশা-মাছি রাতে রেস্ট নিতে যায় শাহ নেওয়াজ, কুয়েত মৈত্রী, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে। মশার সঙ্গীত শুনতে শুনতে তারা ঘুমিয়ে যায়। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মাছিরে স্বপ্ন দেখে। ঘুম থেকে ওঠে দেখে শরীরে রক্তের দাগ। এইভাবে রক্ত দান করার অভ্যাস গড়ে তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা।
রোকেয়া হল শব্দদ্বীপ। চারদিকে শব্দ মাঝখানে রোকেয়া হল। রোকেয়া হলের মেয়েরা যে এতো সাহসী তার জন্য তারা কিন্তু দায়ী নয়। দায়ী একমাত্র যানবাহন এবং যানবাহনের সন্তানেরা। শব্দ এবং যানবাহন কীভাবে মেয়েদের সাহসী করে তুলে আপনি রোকেয়া হলের বাসিন্দা না হলে বুঝতেই পারবেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরি। সাধারণ জ্ঞান-গবেষকদের প্রিয়তম আশ্রয়। প্রিয়-প্রিয়া এসে মুখোমুখি বসে, চোখাচোখি করে, বই পড়ে। প্রিয়তম মুহূর্ত যাপন করতে চায় তারা। অথচ তাদের মাঝে সতীন হয়ে অবস্থান করে যানবাহনের সুন্দরী কেওয়াজ।
সেন্ট্রাল লাইব্রেরির তিন তলা থেকে কাজী নজরুল ইসলামের কবর দেখা যায়। নজরুল বলেছিলেন মসজিদের পাশে তাঁকে কবর দিতে যেন মুয়াজ্জেনদের আযান শুনতে পায়। হ্যাঁ, নজরুলের মনের ছহি নিয়ত আল্লা কবুল করেছেন। যেহেতু তিনি ছহি নিয়ত করেছিলেন সেহেতু পরম করুণাময় তাঁকে যানবাহন ও জনগণের মিশেল আওয়াজকবিতাপাঠ শোনার বোনাস সুযোগ করে দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম যখন আমার পা পড়ে তখন অবাক হয়েছিলাম-- এমন নাগরিক শহরের ভেতর এতো সুন্দর গোছানো গ্রাম কী করে হতে পারে! এখনো অবাক হই। তবে অবাক হওয়ার কারন বদলে যাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক অবয়ব।
বাংলদেশে অবাক হওয়ার এমন অনেক কারন আছে তাতে কিন্তু আমি মোটেও অবাক নই।
ওমা কেন!
নরসিংদীতে নবী ভাইয়ের একটি রুম আছে অনেকটা কবরের মতো। রুমে আমি আর ফাইজুল ভাই ঘুমাচ্ছিলাম। সময় সকাল নয়টা থেকে দশটা হবে। জানালার দুই হাত দূরে একটি স্কুল, বাচ্চাদের স্কুল। শব্দ হচ্ছে ভীষণ। ফাইজুল ভাই জানালা খুলে কিছু শব্দ উচ্চারণ করলেন,
মিস, শুনতে পাচ্ছেন....
জ্বি বলুন...
ঘুমাচ্ছি তো, সাউন্ড পোলিয়েশন একটু বেশি হচ্ছে...
কী আর করবো বলুন, আজ বাচ্চারা পরীক্ষা দিচ্ছে তো তাই ....
আমি অবাক হবো! ছোটকাল থেকে আমার বিশ্বাস আমাকে শিখাচ্ছে পরীক্ষা মানে পিনপতন নীরবতার নিচে শব্দের ঘর -সংসার।
আর মিস এ কি অমৃত বাণী শুনালেন?
বাংলাদেশ এমন অনেক কিছুই আমাদের শুনায়, অনেক কিছুই আমাদের দেখায়। অবাক কিংবা হতাশ হওয়ার কোনো কারন নেই, কোনো কারন থাকতে পারে না....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন