রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৪

ঠোঁটের কাছে

সকাল। শীতের সকাল। হেতাকে ফাঁকি দিয়ে শিশির লুকানো বাতাস শরীরকে বিছানাতে  থাকতে বাধ্য করে। শুয়ে শুয়ে তার কথা, তাহার কথা কখনো ঠোঁটের কাছে, কখনো মস্তিষ্কের গোপন এলাকায় খেলা করে।প্রায় রাতসকালে তাকে ফোন করি। সে তখন ঘুমায়। তার ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য মাঝে মাঝে এই বিশেষ অভিযান চলে। মোবাইলের স্পিকার বেয়ে ভেসে আসে আড়মোড়া কণ্ঠ। আমার চমৎকার শিশুমনটা তখন জেগে উঠে।
বর্ষাকালে আমাদের এলাকায় পাটচাষ হতো।  বর্ষার যুবতী জলের মাঝে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতো পাটগাছ। বাতাসের সাথে তাদের মিহিকুচি বন্ধুসভা আমাদের আনন্দসভাকে মিছিলে নামাতো। পাটপঁচা গন্ধের একটি বিশেষ অর্থ ছিল আমার নাকের কাছে। যে অর্থের অর্থ উদ্ধার করা যায়না আজো, তবু আজো মনে পড়ে তার গন্ধের অদৃশ্য দৃশ্য।
পাটকাঠি রোদে শুকাতে দেওয়া হতো। অনেকটা তাবুস্টাইলে।  মনে হতো যেন কসমিক তাবু। আমরা এই তাবুতে ঢুকে পলাপলি খেলতাম। বিস্মিত এক ভালোলাগা খেলা করতো হৃদয়ের উজানে, হৃদয়ের ভাটিতে।
শহরে চলে আসি। গ্রামে আর বর্ষাকাল আসে না, হয়না পাটচাষ। হয়তো তারাও শহরে চলে গেছে।
তার, তাহার ঘুমভাঙা আইমের মাঝে, সাপভাঁজের শব্দের ঘাটে সেই কসমিক তাবু সুপ্ত ছিল, জানতাম না। আজ জানি।
ভুলে গিয়েছিলাম সেই বিস্মিত ভালো লাগা। আবার মনে হলো, আর ভুলবার নয়।
 কাছাকাছি আছি চোখ আর চোখের পাতার মতো।
আমরা কাছাকাছি আছি আকাশ আর পৃথিবীর মতো।
আমাদের সাধনা অনুভূতির সাধনা। অনুভূতির সাধনায় মানুষ আজ মানুষ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন