শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৪

কেন এমন হল?

ভালোই ছিলাম। বিকেলটা আমারই ছিল। সকালটাও ছিল ফুরফুরে, দুপুর কেটে যেতো বন্ধুদের সাথে হাতাহাতি, চোখাচোখি, খুনসুটির খেলায়। রাতে মায়ের ভাষার ক্রোড়ে ঘুমিয়ে যেতাম, স্বপ্নের দেশে হতাম স্বপ্নের মতো রঙিন, গেলাসে গেলাসে করতাম আনন্দ পান।

কেন এমন হল?

জল হয়ে সাগরে ঢেউ তুলে জলাতিক আনন্দে, মেঘ হয়ে চুপ থেকে মেঘাতিক স্নিগ্ধতায়, বৃষ্টি হয়ে রুপালি সিঁড়ির মতো পৃথিবীতে এসে দলাতিক নন্দনে চলছিল আমার ট্রেন -- ঝকঝক, ঝকঝক।

কেন আজ আমি তেমন নই ?

শৈলবালা রাজকন্যা। এক প্রজার সাথে প্রেম করে। তাদের প্রেম মেনে নিতে চায়নি রাজপরিবার। শৈলবালা প্রেমিকের হাত ধরে রাজ্য ত্যাগ করে। দুজন অনেক দূরে চলে যাবে, চোখের সীমানা ছাড়িয়ে। কুমার নদীর কাছে ভাইদের হাতে ধরা পড়ে প্রেমিকযুগল। শৈলবালাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ভাইয়েরা। কুমার নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় শৈলবালার হাত, পা, মাথা, মস্তক।  কুমার নদী আজো বয়ে চলে সময়ের ধারায়। আজো কুমার নদী শৈলবালার অনুরাগে ছন্দময়।
কিন্তু কুমার নদী আমার বুকের ভেতর এতো ঢেউ তুলে কেন?

আমি তো শৈলবালা নই।

আমি তো ছোট্ট চাঁদের বুড়ি। পুতুলের মতো ঘুরাঘুরি করি। বিজ্ঞ জনের মতো হতে কত চেষ্টা করি অথচ পুতুলের ঘর-সংসারই আমার বাড়ি।
আমার ভেতরে আমি কত একা, আমার কেউ নেই,ব্যস্ত শহরের সবাই ব্যস্ত, আমার মতো কেউ নেই।

মা, তোমা থেকে আমি কততত দূরে, তুমি শুধু আমার কান্না শুন, আমার চোখে আর চুমু দিতে পারনা, বড় আপা, আমরা আর ভূত দেখে ভয় পাইনা, গল্পের সাথে কাটে না আমাদের  সারারাত।

আমি কত ভালো আছি মা,
কত ভালো আছি আপা!

বাবা মাঝেমধ্যে আমার খোঁয়ারে আসে। আমাকে ধমকের চকলেট দিয়ে যায়। আমি যেন শিশুর মতো আচরণ না করি। আমি নাকি অনেক বড় হয়ে গেছি, বিবাহিত নারীদের মতো বড় ।প্রায় আমার শহুরে কাকুকে পাঠায় খোঁয়ারে আছি কিনা যাচাই করতে।

বাবা, ও বাবা! আমি যে সকলের মাঝে থেকেও বড় একা, আমি যে বন্দিনী, আমার প্রতিটি অঙ্গ যে একাকীত্বের বনদস্যু, তুমি কী দেখতে পাও, শুনতে পাও?
বাবা,  ও  আমার পিয়ারা বাবা, বলো না।

ঐ যে, ঐ লোকটা আমাকে বলেছিল,  "ভালোবাসে "
আমি বিশ্বাস করিনি, আমার কী যে হাসি পেয়েছিল -- হা হা হা
লোকটি বলেছিল, তুমি হয়তো আমার কাছ থেকে এমন প্রস্তাব প্রত্যাশা করনি।
আমিও বলেছিলাম, প্রত্যাশা যেহেতু করেনি, উত্তর নঞর্থকই হবে।
এই নিয়ে আমার আন্টি কত হেসেছিল, হেসেছিল মামা। আমিও হেসেছিলাম বেশ।
হাসতে হাসতে কখন যে ফাঁসির মালা গলে পড়েছি, টেরই পাইনি। টের পেয়েছি বহুদিন পর যখন লোকটির, প্রতারকটির গার্লফ্রেন্ড আমাকে ফোন করেছিল।
সেদিন কী যে কেঁদেছিলাম আমি। বিছানায় শুয়ে আছি, কখন রাত আসে, কখন দিন আসে, এমনকি কোনো মুহুর্ত ছিল কিনা আমি কিচ্ছু বলতে পারিনা।
অনেক দিন পর আমি চোখ মেলে তাকালাম, নিজের দিকে তাকালাম। চেয়ে দেখি,
ও মা,  এ কী?
আমার কলিজাটা পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। আগুন জ্বলছে।  ছাইচাপা আগুন এখনো দাউদাউ করে জ্বলে।
বাবা, আমার প্রানের বাবা,
আমি পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি, তোমার বেহেশত থেকে আমাকে শান্তি এনে দাও,
শান্তি দাও, শান্তি!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন