সেকেন্ড মাস্টারের সাথে আমার পরিচয় ``একরাত্রি" (জ্যেষ্ঠ 1299) গল্পপাঠে। তিনি এই গল্পের নায়ক। তাঁর বাবা চোধুরী-জমিদারের নায়েব। বাবার কথা না মেনে চলাতেই তিনার গৌরব।
নায়েব সাহেব চাইতেন তাঁর একমাত্র উত্তরাধিকার জমিদারি-সেরেস্তার কোনো একটি পোস্ট দখল করুক। কিন্তু ছেলে তাঁর জয়নুল আবেদীন আর আমগো ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ'র মতো নিজসিদ্ধান্তে অটল। তাঁর পেশাচোখ পড়ে বাড়িপলাতক নীলরতনের উপর। নীলরতন কালেক্টর সাহেবের নাজির হয়েছে। তিনি নাজির যদি না হতে পারেন জজ-আদালতের হেডক্লার্ক তো হবেনই।
আমাদের বেনামী মাস্টার যে আদালতপাড়ায় নিজের অবস্থান শক্ত করার ব্যাপারে প্রত্যয়ী তারও একটি পরিবেশগত কারন আছে। কারনটা হলো নায়েব সাহেব আদালতজীবীদের অত্যন্ত সম্মান করিতেন। মাস্টার সাহেবের শিশুমনও তাদেরকে তেত্রিশ কোটি দেবতার ছোটো ছোটো নূতন সংস্করণ হিসাবে পূজা দিতে শুরু করে।
একসময় তিনি একটি মহৎ কাজ করেন। বাড়ি থেকে কলিকাতায় হিজরত করেন। স্বপ্নবিলাসী মন আলাপবিলাসী লোকের ঘরে আশ্রয় নেয়।
কিছুদিন মোটরবাইক নিজতেলে চলিল। তারপর আবার মালিকের কৃপা লাভ করিল।
কলিকাতার হাওয়া-বাতাস আমাদের মাস্টারের স্বপ্নসুর বদলে দেয়। মাস্টার এখন বিপ্লবের গান গান। পথে পথে বিজ্ঞাপন বিলি করেন। দেশ উদ্ধার করতেই অইবো -- এই তার প্রতি পদক্ষেপের জিকির। হুজুরেরাও তাঁরে বেশ তালিম দিতে থাকেন।
তালিম নেয়া আর দেশউদ্ধারের কাজে ব্রত হয়ে সময় চলিতে পারিত কিন্তু চলিল না!
বাপজান তাহার মারা যান ( হরি বল, বল হরি)!
মাস্টারের মনে পড়ে মাতা আর দুই ভগিনীর কথা যেখানে সে-ই প্রধানকর্তা। বাস্তবতা মাস্টারকে করাতকলের কাঠের মতো ফালি ফালি করে। বহু কষ্ট করে চাকর হবার যোগ্যতা অর্জন করেন। নওয়াখালি বিভাগের একটি ছোটো শহরে এনট্রেন্স স্কুলের সেকেন্ড মাস্টার।
হ্যাঁ, এই সেকেন্ড মাস্টারের সাথেই আমার পরিচয়।
আরেকটা কথা, সেকেন্ড মাস্টারের তলে তলে টেম্পু চালানোর কথা কিন্তু আফনাগোরে কই নাই। হুনছিলাম যে মানুষ কারো দোষ গোপন রাখে আল্লা নাকি হাশরের দিন তার দোষ গোপন রাখবে। এহন তাইলে কী করমু?
যা দেখি, কইয়া দিমু!
মাদার তেরেসা, নেনসন মেন্ডেলা ( A long walk to freedom এর পিতা) জাহান্নামে যাইবো, আমি জান্নাতে গিয়া কী করমু!
কাহিনিটা হলো রামলোচনবাবুর স্ত্রীর সাথে মাস্টারের পরকীয়া সম্পর্ক। রামলোচনবাবু সরকারি উকিল। উকিলের বাড়িতে আমাদের মাস্টার সাহেব ভারতবর্ষের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে বেশ আয়েশবোধ করেন। কিন্তু আইহনজ্ঞানীর জানবার কথা নয় কৃষ্ণ কেন বাএ বাঁশী কালিনী নইকূলে।
সুরবালার চকিত চাহনি মাস্টারের মনকে উতলা করে , চুড়ির টুংটাং শব্দ তাঁর মনে জাগ্রত করে বেদনামানিক, পায়ের একটুখানি শব্দ তাঁকে অতীতচারিতার রঙে সাজিয়ে তোলে ( দূরে বহুদূরে / স্বপ্ন লোকে উজ্জয়িনীপুরে / খুঁজিতে গেছিনু কবে শিপ্রানদীরপারে/ মোর পূর্বজনমের প্রথমা প্রিয়ারে)।
রামলোচনবাবু বড়ো মোকদ্দমায় কিছু কালের জন্য বাড়ির বাইরে যান। কৃষ্ণমন মনে করে এখনই সুযোগ। রাত্রি তখন একটা- দেড়টা। পুকুরপাড়টি যেন যমুনা নদী, আর আমাদের সুরবালা এবং মাস্টার মশাই যেন নৌকা খণ্ডের রাধা-কৃষ্ণ।
শিশুকালের দুজনা চিরকালের এক মোহনায় সাঁতার কাটতে চায়( সুরবালার সঙ্গে একত্রে পাঠশালায় গিয়াছি, এবং বউ-বউ খেলিয়াছি)।
মন মানতে চায়না সময়ের শৌর্য-বীর্য ( ঠিক সময়ে ঠিক কাজ করতে কাহারও মনে পড়ে না, তাহার পরে বেঠিক সময়ে বেঠিক বাসনা লইয়া অস্থির হইয়া মরে)।
তারপর আমাদের কৃষ্ণ মহাপ্রলয়ের তীরে দাঁড়াইয়া অন্তত আনন্দের আস্বাদ লাভ করেন। রাত্রি শেষ হয়ে যায়, ঝর থেমে যায়, জল নেমে যায়, সুরবালা কোনো কথা না বলে চলে যায় ( silence is the most powerful crying), চলে আসেন আমাদের মাস্টার সাহেব....
নায়েব সাহেব চাইতেন তাঁর একমাত্র উত্তরাধিকার জমিদারি-সেরেস্তার কোনো একটি পোস্ট দখল করুক। কিন্তু ছেলে তাঁর জয়নুল আবেদীন আর আমগো ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ'র মতো নিজসিদ্ধান্তে অটল। তাঁর পেশাচোখ পড়ে বাড়িপলাতক নীলরতনের উপর। নীলরতন কালেক্টর সাহেবের নাজির হয়েছে। তিনি নাজির যদি না হতে পারেন জজ-আদালতের হেডক্লার্ক তো হবেনই।
আমাদের বেনামী মাস্টার যে আদালতপাড়ায় নিজের অবস্থান শক্ত করার ব্যাপারে প্রত্যয়ী তারও একটি পরিবেশগত কারন আছে। কারনটা হলো নায়েব সাহেব আদালতজীবীদের অত্যন্ত সম্মান করিতেন। মাস্টার সাহেবের শিশুমনও তাদেরকে তেত্রিশ কোটি দেবতার ছোটো ছোটো নূতন সংস্করণ হিসাবে পূজা দিতে শুরু করে।
একসময় তিনি একটি মহৎ কাজ করেন। বাড়ি থেকে কলিকাতায় হিজরত করেন। স্বপ্নবিলাসী মন আলাপবিলাসী লোকের ঘরে আশ্রয় নেয়।
কিছুদিন মোটরবাইক নিজতেলে চলিল। তারপর আবার মালিকের কৃপা লাভ করিল।
কলিকাতার হাওয়া-বাতাস আমাদের মাস্টারের স্বপ্নসুর বদলে দেয়। মাস্টার এখন বিপ্লবের গান গান। পথে পথে বিজ্ঞাপন বিলি করেন। দেশ উদ্ধার করতেই অইবো -- এই তার প্রতি পদক্ষেপের জিকির। হুজুরেরাও তাঁরে বেশ তালিম দিতে থাকেন।
তালিম নেয়া আর দেশউদ্ধারের কাজে ব্রত হয়ে সময় চলিতে পারিত কিন্তু চলিল না!
বাপজান তাহার মারা যান ( হরি বল, বল হরি)!
মাস্টারের মনে পড়ে মাতা আর দুই ভগিনীর কথা যেখানে সে-ই প্রধানকর্তা। বাস্তবতা মাস্টারকে করাতকলের কাঠের মতো ফালি ফালি করে। বহু কষ্ট করে চাকর হবার যোগ্যতা অর্জন করেন। নওয়াখালি বিভাগের একটি ছোটো শহরে এনট্রেন্স স্কুলের সেকেন্ড মাস্টার।
হ্যাঁ, এই সেকেন্ড মাস্টারের সাথেই আমার পরিচয়।
আরেকটা কথা, সেকেন্ড মাস্টারের তলে তলে টেম্পু চালানোর কথা কিন্তু আফনাগোরে কই নাই। হুনছিলাম যে মানুষ কারো দোষ গোপন রাখে আল্লা নাকি হাশরের দিন তার দোষ গোপন রাখবে। এহন তাইলে কী করমু?
যা দেখি, কইয়া দিমু!
মাদার তেরেসা, নেনসন মেন্ডেলা ( A long walk to freedom এর পিতা) জাহান্নামে যাইবো, আমি জান্নাতে গিয়া কী করমু!
কাহিনিটা হলো রামলোচনবাবুর স্ত্রীর সাথে মাস্টারের পরকীয়া সম্পর্ক। রামলোচনবাবু সরকারি উকিল। উকিলের বাড়িতে আমাদের মাস্টার সাহেব ভারতবর্ষের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে বেশ আয়েশবোধ করেন। কিন্তু আইহনজ্ঞানীর জানবার কথা নয় কৃষ্ণ কেন বাএ বাঁশী কালিনী নইকূলে।
সুরবালার চকিত চাহনি মাস্টারের মনকে উতলা করে , চুড়ির টুংটাং শব্দ তাঁর মনে জাগ্রত করে বেদনামানিক, পায়ের একটুখানি শব্দ তাঁকে অতীতচারিতার রঙে সাজিয়ে তোলে ( দূরে বহুদূরে / স্বপ্ন লোকে উজ্জয়িনীপুরে / খুঁজিতে গেছিনু কবে শিপ্রানদীরপারে/ মোর পূর্বজনমের প্রথমা প্রিয়ারে)।
রামলোচনবাবু বড়ো মোকদ্দমায় কিছু কালের জন্য বাড়ির বাইরে যান। কৃষ্ণমন মনে করে এখনই সুযোগ। রাত্রি তখন একটা- দেড়টা। পুকুরপাড়টি যেন যমুনা নদী, আর আমাদের সুরবালা এবং মাস্টার মশাই যেন নৌকা খণ্ডের রাধা-কৃষ্ণ।
শিশুকালের দুজনা চিরকালের এক মোহনায় সাঁতার কাটতে চায়( সুরবালার সঙ্গে একত্রে পাঠশালায় গিয়াছি, এবং বউ-বউ খেলিয়াছি)।
মন মানতে চায়না সময়ের শৌর্য-বীর্য ( ঠিক সময়ে ঠিক কাজ করতে কাহারও মনে পড়ে না, তাহার পরে বেঠিক সময়ে বেঠিক বাসনা লইয়া অস্থির হইয়া মরে)।
তারপর আমাদের কৃষ্ণ মহাপ্রলয়ের তীরে দাঁড়াইয়া অন্তত আনন্দের আস্বাদ লাভ করেন। রাত্রি শেষ হয়ে যায়, ঝর থেমে যায়, জল নেমে যায়, সুরবালা কোনো কথা না বলে চলে যায় ( silence is the most powerful crying), চলে আসেন আমাদের মাস্টার সাহেব....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন