বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০১৪

জীবনের চড় থেকে

মোনায়েম ভাই। আমার চেয়ে বয়সে ছয় মাসের বড়। একদিনের বড় অইলেও বড়, গ্রাম তাই মনে করে। আমিও তাই মনে করি, প্রমাণ হিসাবে মুখ বড় করে ভাইও ডাকি। সেই ক্লাস ওয়ান থেকে এক সাথেই পড়াশোনা। এখন আর একসাথে নেই। তবে পাশাপাশি থাকি। তিনি পড়াশোনা করেন ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ আর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমাদের মাঝে দূরত্ব পনেরো মিনিটের পথ। সে রান্না ভালো করে। ভালো কিছু রান্না করলে আমাকে ফোন দেয়
রেজা,  তুই কই?
ভালো খাবারের সুযোগ আমার পেট ছাড়তে চায় না। ফলে জিয়া হলের 313 নাম্বার রুম থেকে ছুটে চলি মোনায়েম ভাইয়ের 113 নাম্বার  রুমের উদ্দেশ্য। এই ঘটনাটা প্রায় ঘটে।

মিয়া ভাই আফনের প্রেম অইয়া যাইবো.......

মোনায়েম ভাইয়ের রুমে থাকেন শাহীন ভাই । বাড়ি ফরিদপুর। তিনি ঝকঝকে একটি  এ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট কিনে আনলেন। পনেরো হাজার টাকা মূল্যের। সাথে সাথেই আগের সস্তা ড্রেস ডেকোরেশনও পরিবর্তন করলেন। এতো দামি সেট কেনার উদ্দেশ্য দুটি
ভাবসাব
গেইমস খেলা
আমি তার সেটটি হাতে নিলাম আর কইলাম এতো দামি সেট ব্যবহার করেন অথচ ফেইসবুক ব্যবহার করেন না, ইডা অইলো।
পরে আবার খিচুড়ির দাওয়াতে 113 নাম্বার রুমে যাওয়া হয়। যাওয়ার সাথে সাথে শাহীন ভাই জানান দিল সে ফেইসবুক আইডি খুলছে,  এখন তাকে প্রোফাইল পিকচার আপলোড করে দিতে হবে। করে দিলাম আর কইলাম
মিয়া ভাই এবার আফনের প্রেম অইয়া যাইবো
এই কথা হুইনা সে শিশুর মতো বয়স্ক হাসি দিল!

শাহীন ভাইয়ের বিয়ে

13 জুলাই 2014 ফারজানা ইসলামকে বিয়ে করেন। অপরূপ সুন্দরী মেয়ে। শাহীন ভাইয়ের ইচ্ছা ছিল 2018 সালে বিয়ে করা। টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে সে টিউশনি করাতো, আর তা থেকেই সে ব্যাংকে ডিপোজিট এ্যাকাউন্ট খোলে। 2018 সাল পর্যন্ত ডিপোজিট সময়সীমা। কিন্তু হায়! সেই এ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেটটি বিক্রি করে তাকে বিয়ে করতে হয়েছে। এখন আর তিনি  ফেইসবুক ব্যবহার করেন না । তার ভালো লাগে না। এখন মিনিটে মিনিটে বউয়ের কল আসে
এই তুমি কী করছো? এতো ফোন রিসিভ করতে তার আর ভালো লাগে না, তবে তার বউকে সে অনেক ভালোবাসে।

ফেইসবুক থেকে প্রেম তারপর বিয়ে.......

ফারজানা ইসলাম কবি নজরুল -এ পলিটিকাল সায়েন্স বিভাগের ছাত্রী। বাড়ি নারায়ণগঞ্জ। বাবার কঠোর শাষনামলে বড় হওয়া। ফেইসবুক আইডি নতুন খুলছে। বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সাথে হাই, হ্যালো বলে বন্দী সময়টাকে উপভোগ করার একটি মানসিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে দিন যাচ্ছে তার।
হঠাৎ এক কাঙ্খিত পুরুষ তার ফেইসবুক এলাকায় কড়া নাড়ে। তার হৃদয়আত্মা নড়ে উঠে। চলতে থাকে চেটের পর চেট। প্রায় এক মাস যাবত চেটইতিহাস । তারপর ছেলেটি মেয়েটির মোবাইল নাম্বার চায়। মেয়েটিও দেয়। এখন মোবাইলে কথার মিনিঝড় চলতে থাকে রাত- দিন।
এক সময় তারা দেখা করে। হাত ধরে, মন ধরে। কেটে যায় ছয় মাস। হুট করে ফারজানার বাবা বর ঠিক করে রেখেছেন বিয়ে দিয়ে দিবে বলে।  ফেইসবুকপ্রেমিকের  মন উতলা হয়ে উঠেছে, কী করা যায়, আঠারো সালের আগে বিয়ে, অসম্ভব! প্রেমিকমন শর্ত, তর্ক মানে না। সব কিছু ছেড়ে ফারজানা ইসলাম চলে আসলো শাহীন খানের কাছে। শাহীন খানও তাকে বিয়ে করে সরাসরি ফরিদপুর। বাবার বাড়ি। পরিবারের সবাই মানসিকভাবে বিয়াটি মেনে নিতে পারেনি। কারণ এই বিয়ের ঘটক যে ফেইসবুক!  তাদের যুগে ঘটক ছিল ছাতাওয়ালা এক মানুষ যে পান চিবায় আর সাজানো মিথ্যা বলে কথার ফাঁকে ফাঁকে। তারপরও ফারজানা ইসলাম আর শাহীন খান এখন ভালো সময় কাটাচ্ছেন! নদীর ঝড় থেমে গেছে। সব কিছু স্বাভাবিক।
শুধু ঐ প্রোফাইল পিকচার আর রাখতে পারেনি শাহীন খান, আমাদের শাহীন ভাই .......

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন