মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

প্রজাপতি ....

সভ্য সমাজ। যুক্তিবাদী সমাজ। জনসংখ্যায় টলমল করে এমন সমাজ। সমাজের নিকট প্রতিবেশি সবুজ-শ্যামল গ্রাম। সবুজ-শ্যামল গ্রামের পাশে আগুন ফলানো মরুভূমি। মরুভূমি থেকে অনেক দূরে একটি ছনের ঘর। ঘরটি আগুনে পুড়ছে, জ্বলছে। কোনো ফায়ার সার্ভিস নেই, নেই কোনো সংবাদকর্মী যারা আগুনের খোঁজে একটি দিন ব্যয় করবে। প্রত্যেকে চাকরি করে-- ব্যাখ্যা দেয়ার চাকরি, বেতন পাওয়ার চাকরি, বড়ো ভাই সাজবার চাকরি।

প্রজাপতি,
তুমি তো কোনো চাকরি করতে না, তোমার তো উপলব্ধি-ঘ্রাণ অনেক শক্তিশালী। তুমি কি একবারও শুনতে পাও না পুড়ে হাক যাওয়া মাংসঘ্রাণের মরণচিৎকার।

চাপা অভিমানকে পুঁজি করে আজ তুমি অনেক দূরে। আমিও আমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে গেছি-- নিয়মিত খাই, গোসল করি, ক্লাসে যাই, রাতের মানুষ দেখি কিন্তু আমার ভেতরের মানুষটা কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো। তাহলে এতো খাবার, পরিষ্কার থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা কার জন্যে?

ফেইসবুককে নিকট বন্ধু মনে হয়। ভাবছো মনে হয় কেন বলছি। তুমি ছাড়া সবাই তো আমার মনে হওয়া বন্ধু। বন্ধুরা শুনে নিশ্চিত মাইন্ড করবে। কিন্তু আমার কী বলার আছে! আমাকে স্বীকৃতি দেয় যে অস্তিত্ব সে-ই তো তুমি। তারপর আমি এবং আমার বন্ধুরা। ফেইসবুকে ঢুকলেই তোমাকে দেখতে পাই, তোমার কমেন্ট কিংবা স্ট্যাটাসে তোমার শব্দ শুনতে পাই। তোমার কণ্ঠ আমার এতো মুখস্থ যে তোমার পদচিহ্ন দেখেই বলে দিতে পারি কী বলতে চাও এবং কেন!

পৃথিবী হয়তো ভাবছে তাহলে সে এতো দূরে কেন, আমিও কেন দূরত্বপদ রচনা করছি?

দূরত্বকে সামনে রেখে সব কেন'র উত্তর দেয়া যায় না। কেন'র উত্তর দিতে গেলে দৃষ্টিতে দৃষ্টি বিনিয়োগ করা লাগে। আর আমাদের দৃষ্টি থেকে দৃষ্টির দূরত্ব হাজার মাইলের।

হাজার মাইল দূরত্বকে জয় করতে চেয়েছি আমরা। এতো দূরে থেকেও এতো নৈকট্য রচনা মেনে নিতে পারেনি পুঁজিবাদী  সমাজ, সমাজের প্রচলিত মূল্যবোধ।

আমরা আজ দূরে, দুটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। এক হলে পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হবে না বরং পৃথিবী কিছুটা ভারমুক্ত হবে, মুক্ত হবে আদিপাপের কিছু দায় থেকে।

প্রজাপতি,
এখনো কি রাত হলে তুমি মোবাইলের দিকে তাকাও, মোবাইল হাতে নিয়ে ফোন দিতে গিয়ে থেমে যাও, পৃথিবীর কোনো অজানা শেকল তোমাকে পেছন থেকে টান দিয়ে ধরে-- থামো থামো বলে তোমার হাত চেপে ধরে। আমি তো থামিনি, আকাশকুসুম স্বপ্ন এখনো রচনা করে চলেছি, থেমে গেছে শুধু তোমার আয়োজিত পথ।

কতোবার ভোর রাতে তোমার ঘুম ভেঙেছি।  তুমি ঘুম ঘুম কণ্ঠে হ্যাঁ-না বলেই আমার সহযোগী হতে, বক্তার শ্রোতাসহযোগী। আমি সব সময় বক্তার মতো কথা বলি। আমি ভালো বক্তা কিনা জানি না,  কিন্তু তোমার মতো মনোযোগী শ্রোতা পেলে বক্তা হওয়ার ইচ্ছে জাগবে না এমন তো কেউ নেই। তুমি কী অসম্ভব সুন্দর মনোযোগী শ্রোতা।

একবার প্রিয় আমার ঘুম ভেঙে যাও, একবার আমি ভালো শ্রোতা হতে চাই,  আমি আবার সকালের রঙ মনে মেখে পৃথিবীর পথে হেঁটে তীব্র কণ্ঠে চিৎকার করে বলতে চাই তুমি আমার, একমাত্র আমার।

বন্ধু,
জীবনকে সাজানোর জন্যে একটি জীবন আর একটি স্বাবলম্বী ফুলের বাগান হলেই চলে। অনেক আয়োজন করে যারা জীবনকে সাজানোর কাজে ব্যস্ত, জীবনকে সুখ দেয়ার কাজে ব্যস্ত তারা সত্যিকার অর্থে জীবন নামক শিল্পের বুনন জানে না। যখন জানতে পারে ততোক্ষণে জীবন অনেক দূরে চলে যায়। আমি আর তুমি সেই পথে হাঁটছি না তো যারা জীবনকে সফল করতে গিয়ে জীবনের মানে ভুলে যায়!

মনে আছে, আমাদের সেই বাড়িটির কথা যেখানে ছিপছিপে নদীর ভেতর নবীন বসন্ত, রাত আর ঢেউ এসে মোলাকাত করে প্রতাপান্বিত মুগ্ধতায়, গাঙচিল অভ্যাসগতভাবেই বন্ধুকে গান শোনায়, কিছু পোষা পাখি বোকা বোকা আচরণে মাতিয়ে রাখে আমাদের পোষাগাছের ডাল-আবডাল, জোনাকিহৃদয় মেলে  ধরে প্রিমিয়াম আলো।

মনে কর বন্ধু,
আমাদের বন্য দিনগুলোর কথা, অসভ্য আবেগের অস্থির প্রলাপের কথা, তোমার কথা মনে করে এখনো আমি হৃদয়ের রাস্তা-ঘাটে, ফুটপাতে বেঁচে আছি যেখানে তোমার পায়ের শব্দ শুনতে পাই, বাতাসে কান পেতে থাকি, তোমার কিছু শব্দ বাতাস আমার কানে আনবে বলে কথা দিয়েছে তাই।

বাতাস কি তার কথা রাখবে?

আজও তো কেউ কথা রাখে নি, আমি এখনো কথা রেখে চলেছি, এখনো পথ চেয়ে আছি সুপারফাস্ট ট্রেনের সেই দরজাটির দিকে যেখানে আমি আর তুমি মুখোমুখি, আমাদের মাথার উপর জোছনার প্রেমিকাপ্রেমিক দুষ্টুমি। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন