সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

একদিন

এখানে আলো নেই, এখানে দুপুর নেই, এখানে সূর্যভরা সকাল নেই, এখানে কেবল নিস্তব্ধ অন্ধকার।

অন্ধকারের গলিপথ দিয়ে হাঁটছি আর প্রাণ মেলে গান গাচ্ছি। অন্ধকারের নিজস্ব আলো যেখানে থাকে সেখানে আমাকে থেমে যেতে হয়-- কিছুক্ষণ বাধ্যতামূলকভাবে অন্ধকারের চোখে চোখ রাখি, অপ্রিয় কিছু কথা বলি, কিছু দুঃখ ভাগাভাগি করি। কিন্তু আজ শুধু গান গাচ্ছি একেবারে তারায় ওঠে।

সেন্ট্রাল লাইব্রেরি আর সেন্ট্রাল মসজিদের মাঝামাঝি অবস্থানে আমি। হঠাৎ এক লোক বললেন ` দাঁড়াও'।

এই শহরে প্রথম কেউ আমার কাজে বাধা দিলো। রাগ আমি কোথায় রাখি!

আমি কোথায় পড়াশোনা করি, গ্রামের বাড়ি কোথায় ইত্যাদি ইত্যাদি জানতে চাইলেন।

আমিও ছোট ছোট বাক্যে উত্তর দিচ্ছি।

আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত নিরীক্ষণ করলেন লোকটি। আমার গতরে টিশার্ট, হলুদ কালারের টিশার্ট। টিশার্টে পাখির বাসা আর পাখি, পাখির নিচে ইংরেজিতে লেখা peace ( আমিও পাখির গান গাচ্ছিলাম ~ পাখি তো জন্মের কানা),থ্রীকুয়াটার প্যান্ট ,আর এ্যাপেক্স কোম্পানির জুতা।

লোকটি আমাকে তাঁর মোবাইল নাম্বার লিখতে বললেন। আমি তো ভেতরে ভেতরে আগুন হয়ে যাচ্ছি। তারপরও কেন কিছু বলছি না তার সঠিক কারন জানি না। তবে এতটুকু জানি লোকটির উচ্চারণ নদীয়া, শান্তিপুর, কলকাতার মতো, এই জানাটুকু আমাকে শান্ত রেখেছে।

নাম কী লিখবো?

সুবর্ণ কাজী।

এখন আমার রাগও থেমে গেলো, ভাষাও ( নীরব, সরব ) থেমে গেলো।
গত ক্লাসে আমাদের সৌমিত্র শেখর দাদা সুবর্ণ কাজীর কথা বলেছিলেন, অবশ্যই সম্প্রসারণসহ। তখনই তাঁকে দেখার ইচ্ছা হয়েছিল আমার। আজ কাজী নজরুল ইসলামের জ্ঞাতিকে দেখলাম, কাজী নজরুল ইসলাম হয়তো যৌবনের কোনো এক সময়ে এমনই ছিলেন।

কাজী নজরুল, প্রিয় লেখক আমার,  আজকে তোমাকে খুব মিস করছি, তুমি তো কারো সাথে আপোষ করনি, তুমি দেখালে কেমন করে মানুষকে ভালোবাসতে হয়, শিখালে প্রতিবাদের ভাষা। তুমি জানতে জল আর পানির উপরে এসে কেমন করে মানবিক জীবনযাপন করা যায়, তুমি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে কেমন করে প্রতিক্রিয়াশীলদের ঠাণ্ডা করতে হয়, কাকে বলে প্রগতিশীল জীবনচর্চা।
আর প্রেম, প্রেমের কাছে তো নবজাতক শিশুর মতো তোমার আকাঙ্খা।
তোমাকে কে বলে তুমি বিদ্রোহী কবি!  তুমি প্রেমের কবি। আমি জানি বাংলা সাহিত্যে তুমিই প্রথম বিদ্রোহ আমদানি করেছো কিন্তু তোমার বিদ্রোহ তো প্রেমের। তাইতো তোমার প্রেম জলের মতো সাগরমুখী। 

রেললাইন

গভীর রাতে রেললাইনের আওয়াজ শোনা যেতো। চার বছর বয়স থেকে আওয়াজটা শুনতাম । সকাল হয়ে গেছে ভাবতাম।

কিন্তু না, সকাল হয়নি। আমার মনে সকালেরা অভিনয় করতো। সকাল সকাল ঘুমিয়ে গেলে ঘুমও একসময় ক্লান্ত হয়ে যায়।

সকাল থেকে রেললাইনের আওয়াজ আর শোনা যেতো না, স্থানীয় শব্দ যেহেতু  শক্তিশালী সেহেতু।

এক সময় প্রতি রাতে একটা নির্দিষ্ট সময় আমার ঘুম আস্তে করে শরীর থেকে চলে যায়। কান মেলে দেখি রেললাইনের আওয়াজ। রেললাইনের উপর দিয়ে ট্রেন যখন গতিমুখী চলতে থাকে তখন এমন আওয়াজ হয়। দিনে দিনে রেললাইনের আওয়াজটার প্রতি আমার গভীর ভালোলাগাবোধ জেগে ওঠে। এখনো তাকে রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুভব করি।

রেললাইন কিন্তু আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে। কেবল রাতেই সে আমাদের বাড়িতে আসতো।

রেললাইন এখনো গভীর রাতে আমাদের বাড়িতে আসে, আমি আর আমাদের বাড়িতে নেই 

শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

সেই দিনের কথা

রেললাইন। হাজার বছরের পুরাতন রেললাইন। রেললাইনের পাশে মসজিদ। এখনো নির্মাণাধীন। একজন পাহারাদার, মুখে তার সর্বহারা সিগারেট। মসজিদের রড-সিমেন্ট যেন চুরি না হয় সেজন্য সারারাত তার ডিউটি।

এই রেললাইনে কুকুর নিজের উপস্থিতি জানান দেয় প্রিয় কোনো শক্তিশালী ভঙ্গিমায়। রেললাইনের রেড এলার্ট কখন থেকে জারি করা  তা রেললাইন জানে না, তাকে জানতে দেয়া হয়নি। একজন মাতাল পথ ভুলে রেললাইন ব্যবহার করছে বাড়ি ফেরার তাগাদায়। একটি চাঁদ ঝুলে আছে রেললাইনের ঠিক মাথা বরাবর। কৃত্রিম লাইট দূর অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, দূর অন্ধকার থেকে ভেসে আসছে ঝিঁঝিঁপোকার আনন্দ ধ্বনি। দুটি আকাশচুম্বী বোকা গাছ লম্বা হতে হতে ছোট হওয়ার শিল্প ভুলে গেছে।

রাত কিন্তু এখন মধ্য বয়সী-- যৌবন এবং বৃদ্ধের হাতছানি। এই রাত বলে না কোনো কিছু আসবে ,বলে না কোনো কিছু যাবে। কেবলই স্বপ্ন দেখায়। এখন রাতেরও স্বপ্ন দেখার বয়স।  রাতের এমন আনচান করা বয়সে অব্যয় বড়শি পেতেছে জোছনার সাগরে।

অব্যয় উদভ্রান্ত পথিক। অব্যয় প্রেমিক।  অব্যয় ভাবছে সাতাশ ফেব্রুয়ারির কথা। অব্যয় এখন বীরপুর গ্রামে। সে তখনকার কথা ভাবছে। তখন বলতে ঠিক এক বছর আগের কথা।

এক বছর আগে অব্যয় শকুন্তলার সাথে ছিল। শান্তিনিকেতনে। তাদের প্রথম ডেটিং বৌদির দোকানে। বৌদি চা দিলেন। হাত কাপছে। অব্যয়ের হাত, যে হাতের উপর ভর দিয়ে পৃথিবী টিকে আছে সেই হাত।

আজ কিন্তু বৌদির দোকান নেই।

রাস্তা বড় হয়েছে। রাস্তা বড় হলে ছোট দোকান আরও ছোট হয়ে যায়, কখনো ছোট হতে হতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। বৌদির দোকান অস্তিত্বহীন। দোকানে যারা আড্ডা দিতো তারা এখন প্রত্যেকে নাগরিক লাইট কিংবা এই পুরাতন রেললাইনের রেড এলার্ট।

দূরে অন্ধকারের মতো গোল আলো দেখা যায়। লোকে হয়তো তাকে প্লাটফর্ম নামে চিনে। অব্যয় প্লাটফর্মকে ট্রান্সফরমার বলে। সময়, কাল, পাত্রের ট্রান্সফরমার।

শকুন্তলাকে বিষ্ণু মানুষ নামে চিনে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক মানুষ। মানুষ তাকে চিনে অন্য কোনো নামে। অব্যয়ের কাছে শকুন্তলা দূর অন্ধকারের মতো আলো দেখানো প্লাটফর্ম। কখনো যদি অব্যয় এই শহর ছেড়ে চলে যায় দূর কোনো অজানায় তখন এই শকুন্তলাপ্লাটফর্ম তার একমাত্র ভরসা।

অব্যয়ের সামনে এখন দুটি পথ, হয় রেললাইন দিয়ে হাঁটবে তো হাঁটবে নয় রাস্তাকে বাড়ি ফেরার সিরাত মনে করে চলবে গাড়ি ঠক্কর ঠক্কর। গাড়ি শব্দের সাথে চলন শব্দটি খুব প্রাসঙ্গিক। অর্থাৎ গাড়ি মানে চলনশীল প্রাণি। গতি তার প্রাণ।
কিন্তু দেহগাড়ি কতক্ষণ চলতে পারবে? সকাল থেকে জল ছাড়া আর কোনো ফুয়েল জমা নেই ইঞ্জিনে।

তারপরও অব্যয় হাঁটছে। তার চেষ্টা থেমে যেতে চায়। চেষ্টা একসময় দুর্বল হয়ে আসে। অব্যয় মাটিতে শুয়ে পড়ে। তার এক পা রেললাইনে, আরেক পা বাড়ি ফেরার পথে, একটি চোখ আটকে আছে চাঁদের ডকভরা জোছনায়, আরেকটি চোখ রেললাইনের রেড এলার্টের সেই নিয়ম নীতির বদ্ধঘরে 

সুখী

জলে নেমেছো সুখী
সাঁতারে রাখো কেন ভয়
চলো আমরা সাঁতারকাটি
জলের উপরে জল
কোনো এক জল হই 

দুই

ইতিহাস ঝরে পড়ে কাকের পাতায়
এক রাত ঘুম আসে দিনের খাতায়
তবুও কিছু দৃশ্য থাকে স্মৃতিকথায়
দিন তুমি রাত আমি দুই সীমানায় 

বহু

বহু নগ্ন নারীকে দেখেছি
তারা আমার ছোটকালের আদর্শ লিপি-- অ, আ, ক, খ
চোখ থেকে মাথায় নিতে হয় আদরে
বহুবার ঠোঁটে নিয়ে একবার ঠোঁটস্থ
খুব যতনে রাখতে হয় আদর্শলিপি বই,
ছিঁড়ে গেলে একবার পাঠহীন পাঠহীন হৃদয়
নগ্ন নারী আমার বাল্যকাল,
আঁতকে ওঠা একাকী রাতের ভয় 

শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

প্রয়োজনে

আমরা নিজের প্রয়োজনে কারো নামের আগে বসাতে থাকি অযথা বিশেষণ,  প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে কিংবা প্রয়োজনের সম্ভাবনা না থাকলে তখনও বসায় অযথা বিশেষণ। সবই কথার দান হয় পজিটিভ নয় নেগেটিভ।

রাস্তা-ঘাটের ভিক্ষুকও দান পেলে হাত উঠায় আকাশের দিকে, না পেলে মনে মনে গালি দেয় গর্ব করে। আমিও যে টাই-পেন্ট পরা ভিক্ষুক হতে পারি তা অনুধাবনের ক্ষমতা ভিক্ষুকের নেই। 

বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

শকুন্তলা

গাছে মেঘকালার। মাঠে মেঘকালার। বসন্তের শাখায় শাখায় মেঘকালার। কলাভবন থেকে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত যে রাস্তাটি চলে গেছে সেই রাস্তার হাড়-কংকাল-মাংসে মেঘকালার। প্রকৃতি আজ নয়টা পাঁচ ডিউটি থেকে মুক্ত। প্রকৃতি আজ নিজের মতো করে বাউলিপনা করবে বলে ঘরকে করেছে বাহির। শকুন্তলাও তার পুরাতন সাইকেলকে ডাক দিয়েছে। বাংলা সাহিত্যের প্রাকৃতিক সাইকেল। সাইকেল হাজির। পৃথিবীর ছাদের নিচে একমাত্র বাউল নারী শকুন্তলা। মেড্ডার অর্ধখণ্ড দিয়ে শকুন্তলা পড়েছে কপালের টিপ।

জল পড়ছে, বাসন্তী জল। জল থেকে রং এনে শকুন্তলা সম্পন্ন করছে পেডিকিউর। জলের সাথে নেমে আসছে শিলা। শিলাবৃষ্টি শরীরে মাখছে আর তাতেই তার শরীর থেকে ঝরে পড়ছে দুষ্মন্তশোক।

প্রকৃতি আর শকুন্তলা যেখানে এক সেইখানেই শকুন্তলার বাহুযুগল  কোমল গাছের মতো, তার ঠোঁটে নতুন পাতার শোভা।

শকুন্তলা তার সাইকেলের কাছে নিরাপদ, প্রকৃতির ভেতর নিরাপদ। দুষ্মন্ত শকুন্তলা থেকে অনেক দূরে -- কোনো এক নাগরিক শহরে।
প্রকৃতিকন্যা শকুন্তলা মাটির আকাঁবাকাঁ  রাস্তায় পোষা সাইকেলকে কান ধরে ঘোরাতে পারে কিন্তু নাগরিক মনে একরাত হারিকেন জ্বালাতে পারে না। হারিকেন নাগরিক মনে উপযোগিতা হারিয়েছে অনেক আগে, সেই এক দেশের এক রাজার দেশের কথার মতো 

মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আলাবালা


শকুন্তলা নায়িকা। বাংলা সাহিত্যের সুন্দরী নায়িকা। শকুন্তলা যে সুন্দরী তার জন্য তাকে প্রমাণ দিতে হয়নি। শকুন্তলা পার্লারে যায় না। শকুন্তলা যে পার্লারে যায় না তাতে কিন্তু পুঁজিবাজার গুসসা করে, মানুষও জেনে যায় মিডিয়া ক্যান কয়  আলাবালা কথা। 

সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ঝরা

পাতা ঝরছে
কিছু ঝরা পাতা ছিল সেইদিন পায়ের নিচে

আম্রকুঞ্জ, বকুলতলা, বিনয় ভবন সবখানেই ছিল শুন্যতা
মলচত্তর, মধুর ক্যান্টিন সবখানেই ছিল শুন্যতা
দুটি চোখ অন্য দুটি চোখের দিকে তাকিয়ে
দুটি ঠোঁট অন্য দুটি ঠোঁটের নেশায় মাঝখানের দৃশ্য যত, আর যত গল্প সব পুরোদমে উধাও

পাতা ঝরছে
আমরাও ঝরে গেছি বহুদিন হলো
আমরাও আজ অনেকের কথার নিচে

শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

অতৃপ্তি

সাহিত্য অতৃপ্তির খেলা। গভীর তৃপ্তি নিয়ে সাহিত্যের হৃদয় স্পর্শ করা যায় না। গভীর তৃপ্তি নেশার চেয়ে ভয়ঙ্কর। আত্মসমর্পণ আত্ম-হন্তারক।

বাজপাখি পাহাড়ে চলে যায়। বাজপাখি লোকালয়ে থাকে। লোকালয়ে যে বাজপাখি থাকে তার কাছে জীবন মানে শিকার-শিকারি। নতুন জীবনের আশায় যে বাজপাখি পাহাড়ে যায় তার কাছে জীবন মানে এক সাধনার নাম। সাধনার সামনে প্রতিদিন নতুন নতুন উপলব্ধি এসে ধরা দেয়। লোকালয় তো টেস্টটিউব বেবি-- হাওন পেলে যার কান্দন থেমে যায়।

অসন্তুষ্টি তাই আশীর্বাদের নাম। কারন হাতের পাঁচ কেবল সন্তুষ্টির কথা বলে। সাহিত্য হাতের পাঁচ দিয়ে হয় না, সাহিত্য হাতের পাঁচের সাপলুডু খেলা। 

?

বেকার যুবক বেকার রাস্তা গভীর রাতে কথা বলা 

?

বেকার যুবক বেকার রাস্তা গভীর রাতে কথা বলা 

,

আমি চাই তুমি সুখে থাকো, তোমার সুখ দেখে আমার কষ্টেরা বেঁচে থাকার সুখ পায়

সমাজ

দুই জনের হাসি এক অথচ দুই জনের চোখ একমুখী হওয়ার কথা ছিল, চোখের গভীরে জীবন যখন হাসির গভীরে  ফাঁদপাতা সমাজ 

শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

তার

আমি তার মতো লম্বা হতে চাইতাম, কিছু চাওয়া জন্মগ্রহণ করে বাউল হতে কিংবা গ্রহণ করে সন্যাসী জীবন 

ভুল

প্রেমের নায়ক কষ্ট বিক্রি করে বউয়ের জন্য ফুল নিয়ে আসে, সংসারের নায়ক ভুল বিক্রি করে বউয়ের জন্য ফুল নিয়ে আসে 

বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

পথে

কাপালিক বিশ্বাসই করতে পারে না কপাল কুণ্ডলা কোনো পথ হারানো পথিকের পথ দেখাতে পারে 

বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

তরবারি

অনেকে তরবারিবিদ্যা আয়ত্ত করার আগে যুদ্ধনীতি আয়ত্ত করে ফেলে,  তারা যখন যুদ্ধে যায় তখন তারাই তাদের মাথা কাটে

মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

প্রজাপতি ....

সভ্য সমাজ। যুক্তিবাদী সমাজ। জনসংখ্যায় টলমল করে এমন সমাজ। সমাজের নিকট প্রতিবেশি সবুজ-শ্যামল গ্রাম। সবুজ-শ্যামল গ্রামের পাশে আগুন ফলানো মরুভূমি। মরুভূমি থেকে অনেক দূরে একটি ছনের ঘর। ঘরটি আগুনে পুড়ছে, জ্বলছে। কোনো ফায়ার সার্ভিস নেই, নেই কোনো সংবাদকর্মী যারা আগুনের খোঁজে একটি দিন ব্যয় করবে। প্রত্যেকে চাকরি করে-- ব্যাখ্যা দেয়ার চাকরি, বেতন পাওয়ার চাকরি, বড়ো ভাই সাজবার চাকরি।

প্রজাপতি,
তুমি তো কোনো চাকরি করতে না, তোমার তো উপলব্ধি-ঘ্রাণ অনেক শক্তিশালী। তুমি কি একবারও শুনতে পাও না পুড়ে হাক যাওয়া মাংসঘ্রাণের মরণচিৎকার।

চাপা অভিমানকে পুঁজি করে আজ তুমি অনেক দূরে। আমিও আমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে গেছি-- নিয়মিত খাই, গোসল করি, ক্লাসে যাই, রাতের মানুষ দেখি কিন্তু আমার ভেতরের মানুষটা কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো। তাহলে এতো খাবার, পরিষ্কার থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা কার জন্যে?

ফেইসবুককে নিকট বন্ধু মনে হয়। ভাবছো মনে হয় কেন বলছি। তুমি ছাড়া সবাই তো আমার মনে হওয়া বন্ধু। বন্ধুরা শুনে নিশ্চিত মাইন্ড করবে। কিন্তু আমার কী বলার আছে! আমাকে স্বীকৃতি দেয় যে অস্তিত্ব সে-ই তো তুমি। তারপর আমি এবং আমার বন্ধুরা। ফেইসবুকে ঢুকলেই তোমাকে দেখতে পাই, তোমার কমেন্ট কিংবা স্ট্যাটাসে তোমার শব্দ শুনতে পাই। তোমার কণ্ঠ আমার এতো মুখস্থ যে তোমার পদচিহ্ন দেখেই বলে দিতে পারি কী বলতে চাও এবং কেন!

পৃথিবী হয়তো ভাবছে তাহলে সে এতো দূরে কেন, আমিও কেন দূরত্বপদ রচনা করছি?

দূরত্বকে সামনে রেখে সব কেন'র উত্তর দেয়া যায় না। কেন'র উত্তর দিতে গেলে দৃষ্টিতে দৃষ্টি বিনিয়োগ করা লাগে। আর আমাদের দৃষ্টি থেকে দৃষ্টির দূরত্ব হাজার মাইলের।

হাজার মাইল দূরত্বকে জয় করতে চেয়েছি আমরা। এতো দূরে থেকেও এতো নৈকট্য রচনা মেনে নিতে পারেনি পুঁজিবাদী  সমাজ, সমাজের প্রচলিত মূল্যবোধ।

আমরা আজ দূরে, দুটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। এক হলে পৃথিবীর কোনো ক্ষতি হবে না বরং পৃথিবী কিছুটা ভারমুক্ত হবে, মুক্ত হবে আদিপাপের কিছু দায় থেকে।

প্রজাপতি,
এখনো কি রাত হলে তুমি মোবাইলের দিকে তাকাও, মোবাইল হাতে নিয়ে ফোন দিতে গিয়ে থেমে যাও, পৃথিবীর কোনো অজানা শেকল তোমাকে পেছন থেকে টান দিয়ে ধরে-- থামো থামো বলে তোমার হাত চেপে ধরে। আমি তো থামিনি, আকাশকুসুম স্বপ্ন এখনো রচনা করে চলেছি, থেমে গেছে শুধু তোমার আয়োজিত পথ।

কতোবার ভোর রাতে তোমার ঘুম ভেঙেছি।  তুমি ঘুম ঘুম কণ্ঠে হ্যাঁ-না বলেই আমার সহযোগী হতে, বক্তার শ্রোতাসহযোগী। আমি সব সময় বক্তার মতো কথা বলি। আমি ভালো বক্তা কিনা জানি না,  কিন্তু তোমার মতো মনোযোগী শ্রোতা পেলে বক্তা হওয়ার ইচ্ছে জাগবে না এমন তো কেউ নেই। তুমি কী অসম্ভব সুন্দর মনোযোগী শ্রোতা।

একবার প্রিয় আমার ঘুম ভেঙে যাও, একবার আমি ভালো শ্রোতা হতে চাই,  আমি আবার সকালের রঙ মনে মেখে পৃথিবীর পথে হেঁটে তীব্র কণ্ঠে চিৎকার করে বলতে চাই তুমি আমার, একমাত্র আমার।

বন্ধু,
জীবনকে সাজানোর জন্যে একটি জীবন আর একটি স্বাবলম্বী ফুলের বাগান হলেই চলে। অনেক আয়োজন করে যারা জীবনকে সাজানোর কাজে ব্যস্ত, জীবনকে সুখ দেয়ার কাজে ব্যস্ত তারা সত্যিকার অর্থে জীবন নামক শিল্পের বুনন জানে না। যখন জানতে পারে ততোক্ষণে জীবন অনেক দূরে চলে যায়। আমি আর তুমি সেই পথে হাঁটছি না তো যারা জীবনকে সফল করতে গিয়ে জীবনের মানে ভুলে যায়!

মনে আছে, আমাদের সেই বাড়িটির কথা যেখানে ছিপছিপে নদীর ভেতর নবীন বসন্ত, রাত আর ঢেউ এসে মোলাকাত করে প্রতাপান্বিত মুগ্ধতায়, গাঙচিল অভ্যাসগতভাবেই বন্ধুকে গান শোনায়, কিছু পোষা পাখি বোকা বোকা আচরণে মাতিয়ে রাখে আমাদের পোষাগাছের ডাল-আবডাল, জোনাকিহৃদয় মেলে  ধরে প্রিমিয়াম আলো।

মনে কর বন্ধু,
আমাদের বন্য দিনগুলোর কথা, অসভ্য আবেগের অস্থির প্রলাপের কথা, তোমার কথা মনে করে এখনো আমি হৃদয়ের রাস্তা-ঘাটে, ফুটপাতে বেঁচে আছি যেখানে তোমার পায়ের শব্দ শুনতে পাই, বাতাসে কান পেতে থাকি, তোমার কিছু শব্দ বাতাস আমার কানে আনবে বলে কথা দিয়েছে তাই।

বাতাস কি তার কথা রাখবে?

আজও তো কেউ কথা রাখে নি, আমি এখনো কথা রেখে চলেছি, এখনো পথ চেয়ে আছি সুপারফাস্ট ট্রেনের সেই দরজাটির দিকে যেখানে আমি আর তুমি মুখোমুখি, আমাদের মাথার উপর জোছনার প্রেমিকাপ্রেমিক দুষ্টুমি। 

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

নেতা

একটি শক্তিশালী গাছের কখনো খুঁটির প্রয়োজন হয় না। একটি শক্তিশালী শব্দের প্রয়োজন হয় না সম্প্রসারিত বিশেষণ।

নেতা শব্দটি কী দুর্বল হয়ে গেলো? নতুবা কেন নেতার শৌর্য-বীর্য প্রকাশের জন্য রাজপথের লড়াকু সৈনিক, মেধাবী ছাত্র নেতা, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, তুলনাহীন ত্যাগী, হাসান-হোসাইনি প্রভৃতি আজাইরা বিশেষণ ব্যবহার করা হয়?


কোনো শব্দ যখন ইনটেনসিভ কেয়ারে চলে যায় তখন লাইফ সাপোর্ট হিসাবে আজাইরা বিশেষণের আমদানি করেন হাতুড়ে ডাক্তার। 

শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ফুল এবং

ফুলের ইতিবাচকতা সে ফুল, ফুলের নেতিবাচকতা তার ফুলেল গন্ধ। গন্ধ না থাকলে হয়তো ফুলের কোনোদিন মৃত্যু হতোনা, ফুলের মৃত্যু হবে এটাই হয়তো ফুলের নিয়তি। তাই ফুল এবং বন্ধুর কোনো নেতিবাচকতা নেই। সমাজের চোখে থাকতে পারে। তাতে কী? কিছু মানুষ থেকে যাক না অসামাজিক .... 

মেলায়

বইমেলা চলছে। মেলা তো চলারই বিষয়। মেলায় সাধারণত যাই না। না যাওয়ার কারন অনেক। যখন যাই তখন কারন একটাই থাকে-- প্রিয় মানুষ অথবা বন্ধুদের ফোন।

শুক্রবার। আজকে তো মেলায় যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। বন্ধুর ফোন -- মেলায় সে আসছে। সুতরাং নয় অবশ্যই মেলায় যেতে হবে।

বিশাল লাইন। আমি কখনো লাইনে দাঁড়াতে অভ্যস্ত নই-- এটি আমার ইগোয়িস্টিক সমস্যা, আমার সীমাবদ্ধতা। লাইনে না দাঁড়িয়ে সরাসরি বাংলা একাডেমির প্রধান ফটকে আমরা।

এখন কী হবে?

এখন তো লাইনে দাঁড়াতেই হবে।

মনে মনে কাচুমাচু করছি, আমার সাথে এই শহরের সবচেয়ে সুন্দরী বন্ধু। হঠাৎ দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার এগিয়ে আসলেন, কোনো প্রকার লাইন ছাড়াই (ভিআইপি পুলিশ আপ্যায়নে)  বাংলা একাডেমির ভেতরে ঢুকলাম আমরা।

আমি অবাক,
পুলিশ ভাই অন্তর্যামী হলেন কবে থেকে!
সুন্দরী বন্ধু আমার বার বার জানতে চাইলো, রহস্য কী রহস্য কী!

আমি তো কোনো রহস্য জানি না বন্ধু, রহস্য জানেন তিনি যিনি আমাকে নিয়ে প্রতিনিয়ত রহস্য করেন, আমাকে অন্ধকারের ঘ্রাণ নিতে ইশারা করেন, সাগরের ঢেউয়ের দিকে তাকাতে বাধ্য করেন-- বলতে থাকে সাগরই জীবন মিয়া, জলই জীবন মিয়া, ঢেউই জীবন....

মেয়েটি

মেয়েটি এই বসন্তের উৎসবমাখা গন্ধে সাঁতার না কেটে একা একটি রুমে বসে হারমোনিয়ামকে বন্ধু করে সুরের বাজারে সওদা করছে। জীবনের যে সুর তা সে জানে না, জীবনের সুরকে বোঝাবে বলে যে নাবিক সংসার নামক গন্ধমূষিক ঘ্রাণে মেয়েটিকে মুগ্ধ করতে চেয়েছিলেন আজ তার মোহ ভেঙে গেছে।

এখন মেয়েটি কোথায় যাবে?

মোহাচ্ছন্ন নাবিকের মোহকারন এখন অন্য কোনো আকাশ, অন্য কোনো প্রদেশ, পাহাড়ি কন্যার ছলছল করা চোখ, পরিশ্রমী নিতম্বের আস্ফালন।

এখন মেয়েটি কোন সুরে গান বাঁধবে? 

অভিযোগ

অভিযোগের নিচে মানুষের সমাজ
অভিযোগের নিচে প্রেমিকার সুর
অভিযোগের নিচে ফাল্গুনের সাজ
অভিযোগের নিচে লাল নীল দুঃখ
অভিযোগের নিচে গভীর অনুতাপ
অভিযোগের নিচে ফোঁটা ফোঁটা চোখের জল

অভিযোগ ছেড়ে চলে আসো প্রিয়, একটি জীবন নিয়ে বসে আছি অপেক্ষার লিভিংরুমে, জীবনের মানে জেনে নিবো অনুরাগে একদিন একদিন করে, মুহূর্ত মুহূর্তের পিনপথ ধরে 

বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

কুম্ভকর্ণ

ঘুম আসে না
কতকাল ঘুম নেমে আসে না চোখের বারান্দায়
প্রায় ঘুমানোর চেষ্টা করি মাত্র
অন্ধকারের দরজা খুলে যাওয়া হয় না ইচ্ছাঘরে, যেতে পারি না
রাতজাগা বেড়ালের মতো তারাও ইন্দুর শিকারি
আমিও জেগে আছি
আমিও জেগে থাকা সাগরের সুস্থ মাঝি 

পিছনে এবং সামনে

দৌড়াতে থাকো, দ্রুত দৌড়ঝাঁপ করো
এক পা যদি পিছনে পড়ে যায় -- ট্রেন মিস, বাস মিস, অফিস মিস, উপস্থিতি মিস
 আমি বসে গেছি, খুব করে বসে গেছি নির্ধারিত মধ্যমায়,
তারা বসে গিয়েছিল গুহার ভেতর, বৃক্ষের নিচে, মানুষের ভেতর-- আলো অধুনালুপ্ত বেদনায়
দৌড়াতে থাকো, দ্রুত, আরো দ্রুত, আরো আরো দ্রুত -- এক থেকে একশো মাইল দূরে আমারই মতো একজন মানুষ বসে আছে, বসে আছে জীবনের প্রেরণায়

পেছন আর সামনে এক,
মাঝখানে দৌড়াদৌড়ি, অভিমান অভিঘাতের মেঘ 

মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

অবয়ব

তিনি সিটি লাইট মুভির সেই মাতাল যিনি নেশা কেটে গেলে নিজের আত্মঘাতী অবয়ব কিংবা জীবনপ্রিয় বন্ধুকে ভুলে যান 

সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

লেখক এবং বই

তিনি অনেক চেষ্টার পর আমলা হলেন। মানে সরকারের নিজস্ব বাহিনিতে নিজের নাম লেখালেন। আমলাগিরি থেকে অবসর নেয়ার পর এবার জনগণের কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে হবে। তাই বই লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমলা থেকে লেখক। এবার প্রকাশকের সাথে তার বিশেষ খাতির। এখন তিনি পাঠকও চিনতে শুরু করেন। কিন্তু অবাক হোন পাঠক দেখে, পাঠক তো সেই লোক যার কাছ থেকে তিনি অনেক অনেক টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন।

লেখার চুলচুলানি থেকে অনেকে আবার লেখে। ভালো অভ্যাস। পাশের কয়েকজন বন্ধু লেখকের প্রসংশা করে। আর তাতেই সে নিজেকে নামীদামি গাড়ির মতো নামীদামী লেখক মনে করতে শুরু করে। সুতরাং একটি বই দরকার। শুরু হয় প্রকাশকের কাছাকাছি দৌড়াদৌড়ি। আর প্রকাশক তো মহান কসাই। হাসতে হাসতে  কেল্লা কেটে ফেলে কিন্তু লেখক বুঝবেনই না তার কেল্লা নাই।

একটি গাছ থেকে একটি পাতা খসে পড়লে পাতাটি যেমন গাছের থাকে না তেমনি একজন লেখক থেকে একটি লেখা খসে পড়লে সেই লেখাটি আর লেখকের থাকে না। সেই লেখাটি সমাজের হয়ে যায়। শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী। সমাজ এই লেখাটি তার প্রয়োজনে ব্যবহার করে। সমাজ লেখা সংগ্রহের এই দায়িত্ব দিয়েছিল সম্পাদকের হাতে, প্রকাশকের হাতে। মুরুববীদের বলতে শুনতাম, যে যায় লঙ্কায় সে হয় রাবণ। প্রকাশকও তাই টাকার কাছে নিজের আদর্শ বিক্রি করেছেন, বিক্রি নয়, বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন-- যৌন শিল্পীরা যেমন দেহ বিক্রি করতে বাধ্য হয়। আর সম্পাদক একটি তোষামোদকারী দল তৈরি করেন। ফলে লেখকরা সম্পাদকের কাছ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থাকেন।

লেখার ভাষা আছে অর্থাৎ অন্তমিল দিয়ে মেয়েদের সেলোয়ার কামিজ, কপালের টিপ, চুলের কালার চমৎকারভাবে উপস্থাপন করতে পারে এমন লেখকের লেখার উদ্দেশ্য আবার অন্যরকম। খ্যাতিমান লেখক হওয়ার তীব্র ইচ্ছা। নারীমহলে অন্তর্বাস হয়ে ঝুলে থাকার গোপন অভিলাষ। যেহেতু প্রথমে নারীদেরকে পাম্পিং করার মধ্য দিয়ে লেখকের অভিযান শুরু সেহেতু তেল-ঘি ঢালার অভ্যাসটা তার ভালো করেই  জানা। তাই সর্বদা তেল-ঘি ঢালার পাত্রের সন্ধান করতে থাকেন লেখক। তাই দেখা যায় সুন্নতে খাৎনা, বিয়ের অনুষ্ঠানে ( একটু সম্মান দিয়ে বললাম) নিজের অন্তমিল মার্কা লেখাখানা খুব আয়েশী ঢঙে উপস্থাপন করছেন লেখক। এমন লেখকেরও বই বের হয়।

কারা কিনে?

যারা আগে ঘর সাজানোর জন্য চায়ের কাপ, বাসন, টি-ট্রে, কাচের ট্রপলি কিনতো তারা এখন ঘর সাজানোর জন্য বই কিনে।

মাস্টাররা এখন একটি গোপন হাসপাতাল খুলছে। কোচিং হাসপাতাল তো অনেক পুরাতন, তাই শুধু তা দিয়ে আর চলছে না। এবার নিজের বই ছাত্রদের কিনতে বাধ্য করছেন। কোনো কোনো মাস্টার  আবার প্রকাশনীতে সেলসম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন। কোন ছাত্র তার বই কিনছে, কোন ছাত্র তার বই কিনছে না-- এই লিস্ট মনে মনে তৈরি করছেন। ছাত্ররা অসহায় কারন মহান শিক্ষকের সাথে সম্পর্ক রাখা তো চাই, নইলে আখেরী মোনাজাতে তার নাম আশীর্বাদের খাতায় উঠবে না।

মেয়েটি বুঝে গেছে দৈহিক সৌন্দর্য আর মানসিক সৌন্দর্য যদি একসঙ্গে থাকে তবে বাজারে তার কদর অনেক। তাই ডায়েরি লেখা থেকে বই বের করার তাগাদা অনুভব করে। কোনো খ্যাতিমান লেখককে এক দুই বেলা টকটকে লাল ঠোঁট আর সাপমাসী জিহব্বাটির কিছু অংশ ভাড়া দিয়ে লেখার ডায়েরিকে করে তোলে কবিতার খাতা অর্ফে কয়েক ফর্মার গার্হস্থ্য কবিতার বই।

মিডিয়া এক গুরুত্বপূর্ণ কুতুব যার পড়াপানি খেয়ে অনেক চোর-ডাকাত বিশেষ নেকি বান্দাতে পরিণত হয়েছেন, আর লেখকের ন্যাপকিনমার্কা লেখা পেয়েছে জাতীয় বইকাটতি। মিডিয়া তখন মনে মনে হাসে। কারন যে বইটি অধিক সংখ্যক পাঠকের কাছে গেলো তাতে কিন্তু তাদের বহুজাতিক কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো প্রকার শ্লেষ কিংবা সামষ্টিক ঘৃণা নেই।

বই বের হচ্ছে। বই বের হতে থাকবে হয়তো।  অনেকে বইকে সন্তান মনে করেন। সন্তানকে বাজারে না তুলে দিয়ে যোগ্য পাত্রস্থ করা যোগ্য বাবার উত্তম কাজ আমি বিশ্বাস করি। 

রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

প্রেমিকা

সাবেক প্রেমিকাকে ফোন দিয়ে বললাম আজ আমার প্রেমিকার মন ভালো নেই।

কিন্তু আমার মন অনেক ভালো, আনন্দে আছি।
আমার প্রেমিকার মন ভালো নেই, তার মনে আনন্দে নেই, আমি আনন্দে আছি তা হতে পারে না। তাই তোমাকে ফোন দেয়া। আমি জানি তোমাকে ফোন দিলেই এক আকাশ মেঘ বৃষ্টি হয়ে আমার মাথায় পড়তে থাকবে, কষ্টবাক্সের নীল দরজা খুলে যাবে, চিরচেনা বিষন্নতার সাথে আবার মোলাকাত হবে।

একটি শীতল হাওয়া মোবাইলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্পিকার দিয়ে ভেসে আসে। আমি প্যান্ডোরার বক্সে আতকা যেন ঢুকে গেলাম, ভুলে গেলাম পৃথিবীতে আনন্দ বলে কিছু আছে।

আজ আমার প্রেমিকার মন ভালো নেই, আজ আমার মন ভালো নেই .... 

শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ধোপা

কেউ নাকি কোথাও আজকে আমাকে ধইলো কিন্তু আমি তো কোনো ধোপা নিয়োগ করিনি 

নেই

তুমি নেই বলে এখনো আমার আছে শব্দটি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেনি 

কাক

কৃষ্ণনগর। ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কৃষ্ণনগর আমার মাসির বাড়ি। বাঁশঝাড় লালিত বাড়ি। প্রকৃতি এখানে কোকিলের মতো মাত্রাপ্রিয়। পাখি আর মানুষের অসম্প্রদায়িক জীবনের ধারাবাহিক প্রবাহ।

প্রকৃতির শান্ত নীরব পরিবেশ আমাকে টানে না। আমার ভেতর খেলা করে কোলাহল, কলরব, ক্রিকেট, ডাংগুলি।

মাসির বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথে আমার একজন বন্ধুর দরকার হয়। আমার জন্য একজন বন্ধু ব্যবস্থা করা থাকে। বন্ধু পাওয়া মানে অস্থিরতা ভাগাভাগির অপূর্ব এক সুযোগ পাওয়া। একদিন, দুইদিন, তিনদিন চলে যায়, আমি ভুলে যাই আমার ঠাকুরদাদার বাড়ি, ভুলে যাই আমার প্রিয় ইদগা মাঠ, কড়ই গাছের তলা, সকাল-সন্ধ্যা টেক টেক খেলা।

কৃষ্ণনগর গ্রামে মাসুদ আমার একমাত্র বন্ধু যার সঙ্গ বেশ আরামদায়ক। সে কথায় এবং কাজে বেশ চটপটে। কাজ বলতে তখন খেলাধূলাকেই বুঝি।

আমি আর মাসুদ বাঁশঝাড়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। কাক আক্রমণ করে বসলো। ভয়ানক আক্রমণ। মাসুদ চিৎকার করতে আরম্ভ করে। মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। আমি বেড়ালের বাচ্চার মতো দূরে গিয়ে মাসুদের দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে আছি। কথা বলার শক্তি নেই। হাবিব ভাই দৌড়ে এসে মাসুদকে  উদ্ধার করে।

মাসুদকে যে কাক আক্রমণ করলো মাসুদের অপরাধ?

মাসুদের অপরাধ মাসুদ কাকের বাসা ভেঙ্গেছিল, কাকের একটি বাচ্চাকে হত্যা করেছিল।

মাসুদ ভুলে গিয়েছিল কাক রাগ পোষে রাখে, কাক শত্রু চিনতে ভুল করে না, শত্রুতা দেখাতে কাকের দ্বিধাবোধ নেই ....

যৌথ

মানুষ অরক্ষিত প্রাণী। মানুষের শিং নেই, বড় বড় নখ নেই, ধূলিকণা থেকে রক্ষার জন্য শরীরচুলও তেমন নেই, রোগ প্রতিরোধ এন্টিবডিও যে খুব শক্তিশালী এমন নয়।

মানুষের একটি শক্তিশালী মস্তিষ্ক রয়েছে। হাজার হাজার বছরের পুরনো মস্তিষ্ক। মানুষ এই মস্তিষ্ক ব্যবহার করে ভিনগ্রহে যেতে চায় অথচ পৃথিবীর তিন ভাগ জলকে কাজে লাগানোর দিকে বিশেষ কোনো নজর নেই।

পৃথিবীতে মানুষের দ্বন্দ্ব শেষ হয় না, তাতেও পৃথিবীতে মানুষের বিকাশ থেমে নেই। মানুষ ঘোড়ার মুখে লাগাম দিয়েছে, গরুকে এনেছে গোয়ালঘরে, বাঘ-সিংহকে খাঁচায় বন্দী করেছে। মানুষই পারে একটি জায়গায় এক হয়ে যৌথভ্রমণের নাবিক হতে ,তাহলে সমস্ত প্রতিকূলতা মানুষের কাছে এসে অসহায় হয়ে যাবে....

শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

কই

মসজিদে যেতে চাইলে আপনাকে ধার্মিক হতে হবে, মন্দিরে যেতে চাইলে আপনাকে হতে হবে সনাতনী, প্যাগোডায় যেতে চাইলে আপনাকে হতে হবে বৌদ্ধ, গির্জায় যেতে চাইলে আপনাকে খ্রিস্টান হতে হবে।

কোথায় এমন সাম্যের জায়গা আছে যেখানে যেতে চাইলে মানুষ হলেই চলে! 

ছোট কাল থেকে শুনে আসছি দশের লাঠি একের বোঝা। এখন পর্যন্ত বোঝাই দেখি, দশের দেখা পেলাম না। 

বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ভ্রমণ

শীতের সকাল। স্নানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমিন ভাইয়ের ফোন। পরীক্ষা আছে কিনা জানতে চাইলেন। জানালাম পরীক্ষা নেই। বললেন বাংলামোটর অবস্থান করতে। জাস্ট এগারটায়।
কারন জিজ্ঞেস করিনি।

প্রশ্ন আসতে পারে কেন কারন জিজ্ঞেস করিনি।

বন্ধু কখনো বন্ধুর কাছে ব্যাখ্যা চায়না। বন্ধু যদি ব্যাখ্যা দেয় তবে তা বোনাস।

ব্যাখ্যাকে আমি ছোট্ট করে দেখছি না। ব্যাখ্যাবিদ যারা আছেন বিষয়টি তারা দেখবেন। এখনো আমি বন্ধুত্বের জায়গাটিকে উপলব্ধির আতুঁড়ঘর মনে করি, যেখানে কেরাবান-কাতিবানের প্রবেশাধিকার নেই।

হল থেকে বের হলাম। প্রকৃতিতে পা রাখি। প্রকৃতি অপূর্ব একা। কুয়াশা আর রোদকে  ব্লেন্ডারিং করলে যে দৃশ্যটি দেখা দিবে আজকে কিন্তু প্রকৃতির এমন অবস্থা।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সামনে আমরা অবস্থান করছি। আমরা বলতে আমি, আমিন ভাই, জীবন চৌধুরী। গাড়ি নিয়ে আসতেছেন মিন্টু ভাই। জাপানি কোম্পানির গাড়ি।

চার জনের কাফেলা। অবশ্যই অযান্ত্রিক গল্পে জগদ্দলও একটি চরিত্র। সেই হিসেবে পাঁচ জনের কাফেলা। উদ্দেশ্য ব্রাক্ষণবাড়িয়া। জাপানি মাইক্রো চলছে।
হানিফ ফ্লাইওভার অনেক বার চোখে দেখেছি কিন্তু তাকে ব্যবহার করা হয়নি। এইবার প্রথম তাকে ব্যবহার করছি। চমৎকার রাস্তা। আসমানের উপর দিয়া ভাসছি।

আমিন ভাই, ভূমিকম্প ঢাকা শহরকে শেষ করে দিতে চায়...

না, আগামী কয়েক দশক ঢাকা শহর ভূমিকম্পনের ধবংসলীলার হাত থেকে নিরাপদ....

কেন?

ইদানিং কয়েকটি ভূমিকম্পনের ফলে মাটি জুতসইভাবে নিজেদের ভিত শক্ত করে নিয়েছে...

গাড়ি চলছে। মিন্টু ভাই চমৎকার ড্রাইভ করে। সিনেমা মুভিতে দেখতাম এমন চমৎকার গাড়ি ড্রাইভ।

কাচপুর ব্রীজে আমাদের গাড়ি। ব্রীজের নিচে শীতলক্ষ্যা। পৃথিবীতে অনেক দূর্গন্ধ। দুর্গন্ধরা এক জায়গায় মিলিত হতে চায়। মিলিত হয়েছেও। অবশ্যই এই পবিত্র জায়গাটি আমাদের কাচপুর ব্রীজ। তাই কাচপুর ব্রীজের এই দুর্গন্ধের ইস্তেমায় আমি পারত মোনাজাত তুলতে আসি না।
কিছুক্ষণের মধ্যে আমার ভেতর যা আছে তা বের হতে চেষ্টা করছে। তীব্র চেষ্টা। প্রথমে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করি। কিন্তু ব্যর্থ। বের হয়ে যাক। বের হয়ে গেলে বড় ধরনের একটি শান্তি পাবো। বড় অশান্তির পর বড় প্রশান্তি।

গাড়ি চলছে, আমার বমিটিং চলছে। স্রাববমি। জীবন চোধুরী আমার পাশে বসা। আমার ভেতর কি ঘটছে সে বুঝতে পারছে বলে মনে হচ্ছে না। ভেতরে যা আছে সব বের হয়ে গেছে আলহামদুলিল্লাহ। এখন চিনচিন মাথা ব্যথা। বমির পর এই ব্যথাটা শুরু হয়ে থাকে।

নয়াপুর গ্রামে ঢুকলাম। গাড়ি গ্রামের রাস্তায়। চা-টা খেলাম, আমিন ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়ির সামনে কিছু ছবি তুললাম। তারপর আমরা আমিন ভাইয়ের প্রশান্তির বাড়িতে যাবো, তারপর হয় ব্রাক্ষণবাড়িয়া, হয় নরসিংদী নয় মাওয়া ফেরীঘাটে।

গাড়িতে বসি। গ্রামের রাস্তায় গাড়ি চলছে। আমার অস্বস্তি চরম আকার ধারণ করেছে। জাপানি গাড়ির সাথে এখনো সহ্যতা গড়ে ওঠেনি, হয়তো আমার দেহ বাহনকলোনী মানতে পারছে না। আবার সমস্যার কথা বলতেও চাচ্ছি না। কারন আমি চাই না আমার প্রত্যক্ষ ভূমিকায় ট্যুরটা নষ্ট হয়ে যাক।

গাড়ি চলছে। যখনই গাড়ি গ্রামের রাস্তা থেকে  প্রধান সড়কে উঠবে বলে বাঁক নিচ্ছে তখন ইঞ্জিন স্টপ!

 কী হলো? কী হলো?

আমরা জানি না।

তাহলে কে জানে?

একজন মেকানিক্যাল ম্যান জানে।

আমিন ভাই আর মিন্টু ভাই চলে গেলেন মেকানিক্যাল ম্যানের খোঁজে। আমি আর জীবন দা বসে আছি গাড়ির পাহারায়। গল্প করছি। তিনি মিউজিকের মানুষ আর আমি মিউজিক পাগল। তিনি শান্তিনিকেতনে কিছুদিন পড়াশোনার কাজে ব্যয় করেছেন।

আচ্ছা, জীবন দা, কলকাতার মোস্ট অব দি টি স্টলে মাটির পাত্রে চা দেয়া হয় এবং চা-কাপ দ্বিতীয় বার ব্যবহার করা হয় না। কারন তা এঁটো....

হুম, তাইতো দেখলাম....

এঁটো জিনিসের প্রতি তাদের গভীর মন্দাভাব বুঝলাম। কিন্তু দাদা, এঁটো মানুষের প্রতি তাদের কোনো মন্দাভাব নেই কেন .... একটি ঠোঁট সহজেই আরেকটি এঁটো ঠোঁটে কিস বসাচ্ছে, জব্বর কিস ....

জীবন চোধুরী হাসলেন। আমাদের হাসির মাঝামাঝি সময় মেকানিক্যাল ম্যানসহ তাঁরা হাজির। গভীর সমস্যা। গাড়ি এক্টিভেট হতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে। সমস্যা নেই" আমিন ভাইয়ের স্বভাবসুলভ উক্তি। সমস্যা তো আমার থাকার কথা না, কারন আমি সমস্যা থেকে বেঁচে গেছি।

আমিন ভাই শুরু করলেন গল্প। তাঁর গল্প বলার ভঙ্গিতে যথেষ্ট ওয়েব আছে, আছে অভিজ্ঞতা, আছে প্রাণ। আমরা গল্পের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করে চলে আসলাম।

গাড়ি মেরামত শেষ হলো। তখন রাত আটটা। ভ্রমণপরিকল্পনা ক্যান্সেল। এখন জাপানি গাড়ি ঢাকার অভিমুখে। আমার সরাসরি সামনে মনিরুজ্জামান মিন্টু, পাশে জীবন চোধুরী, মনিরুজ্জামান মিন্টুর পাশে সরকার আমিন, আমার কানে হেডফোন। গান শুনছি। দুরবীন শার গান -- নামাজ আমার হইলো না আদায় রে আল্লা, নামাজ আমার হইলো না আদায় ....

বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

নিরাপত্তা

মানুষটি যখন রিক্সায় বসা তখন মানুষটির নিরাপত্তা রিক্সাওয়ালার হাতে। মানুষ যখন মাইক্রো কিংবা বাসে বসা তখন তার নিরাপত্তা ড্রাইভারের হাতে। আপনি যখন রেস্টুরেন্টে খাচ্ছেন তখন আপনার জীবন জনাব খাবারের কাছে জিম্মি।
টয়লেট থেকে টাওয়ার পর্যন্ত প্রত্যেক নিরাপত্তা প্রত্যেক নিরাপত্তার উপর নির্ভরশীল। 

মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

শ ব্দ

শব্দকে বোরখা পরাতে পারবেন না, নগ্নতাই শব্দের সৌন্দর্য। শব্দ মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডার বাসিন্দা নয়, কারন শব্দের প্রার্থনার প্রয়োজন হয় না। শব্দকে আপনি কোনো তকমা দিতে পারবেন না, কারন শব্দ আছাড় খেয়ে খেয়ে বড় হতে থাকে। এক সময় শব্দের এমন বিবর্তন ঘটে যে সে ভুলে যায় তার বংশপরিচয়। 

সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আসা

জনাব পিটবোল,
মিস্টার মিশেল ফুকো
আমাদের গরীব দেশে আপনারা বেড়াতে আসবেন। কিন্তু আপনাদের দেশের ছেঁড়া হেতা আমাদের দেশে আনবেন না। আমাদের মায়েরা অনেক সুন্দর কারুকার্যখচিত হেতা বুনন করতে জানেন। এখানে এখনো বাকীতে লেনদেন চলে, এখনো টি-স্টল সম্প্রীতি তুঙ্গে, ছেলেটি এখনো গান গায় `নিজেকে আমি ভুলতে পারি তোমাকে যাবে না ভুলা'।