বোলপুর থেকে হাওড়ামুখী আমরা। সবার মনেই কেমন একটা ফুরফুরে ভাব। কোনো এক বাউলমুখী মানুষ ওঠলেন আমাদের কামড়ায়। কে ছেড়ে গেলে নাকি কাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না এমন জাতীয় গান ধরলেন। আমাদের স্যার আর সিটে বসে থাকতে পারলেন না। ধরলেন গান, করলেন ভিডিও। এক উৎসবমুখর চেহারা নেমে আসে ট্রেনের কামড়ায়।
বাউল নেমে গেলে থেমে যায় কলরব। তনুশ্রী গান ধরে। ওর আবার ক্লাসিক্যাল গলা। এমন গলা সন্ধ্যা অথবা বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি আড্ডায় বেশ আরামদায়ক। ট্রেনের আওয়াজে দরকার এমন গান যা ঝড়জল ঝকঝক আওয়াজের লগে বন্ধুত্ব করে। তাই ধরলাম গান। হামিং সাপোর্ট বেশ পেলাম। আমি আর আমি থাকলাম না। কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম। চারপাশে মানুষ জমে গেল। ইহা এক অন্যরকম অনুভূতি। গান শেষ। বায়তুল্লাহ কাদেরী স্যারের হাত মানিব্যাগে চলে গেল। চকচকে নরম একখান একশত টাকার নোট বের হয়ে আসে, শ্রাবন ভাই আরও একটি বড় নোট আমার হাতে তুলে দেন! ইহা এক অন্যরকম অনুভূতি।
জীবনে দ্বিতীয়বার গান গাওয়ার পর দিষ্টান্ন পেলাম। ইহা এক অন্যরকম অনুভূতি। অন্যরকম অনুভূতি লইয়্যা আমি সিটে বসে গেলাম। অধিক অধিক গলা যারা বাজাতে পারেন তাহারা অন্য জাতের মানুষ। চর্চায় কিনা হয়। চর্চা বা সাধনার অপর নাম আধ্যাত্মিক জীবন। নদীর জলে ভেসে থাকা যায় নৌকায়, জলের নিচে জীবন সন্ধানের প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত থাকার নামই তো সত্যিকারের বিজ্ঞান। আমরা বিজ্ঞান আর বাউল সাধনাকে আলাদা করে বিচার করি। না। বাউল সাধনা অন্য এক বিজ্ঞান। বিজ্ঞান মানে ধ্যানস্থ থাকা কোনো কিছু নতুন করে পাওয়ার নেশায়। তাই অধিক গলা বাজানোর চর্চা আমার নেই। তাইতো সিটে বসে গেলাম।
ট্রেন চলছে বর্ষার জলস্রোতের মতো। এই ট্রেন তো ট্রেন না-- স্মৃতি জাগানিয়া রেডিও যা মধ্য রাতের শেষ শব্দের মতো হৃদয়ে নির্ঘাৎ বাজে। তৃষা চুপচাপ দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। যেন বিরহিনী রাধা। আমার ভেতরে একটু পর পর এমন ঢেউ লাগছে যা হৃদয় ভাঙছে বারবার কিন্তু কেউ জানে না আমার ভেতরকার এ ভাঙন, বার বার চোখের ভেতর দেখা দেয় জোনাক কান্দন। তাজ মহলের পাশেই যমুনা নদী। চাঁদ নদী আর তাজমহল একসঙ্গে হলে মমতাজ আর বিরহী থাকে না, শাজাহান থাকে না কয়েদী। তাজমহল আমাকে তেমন টানেনি। চোখের গভীরে যার মমতাজ থাকে চোখের সামনের মৃত তাজমহল আর কতটুকু তার হৃদয় টানে-- গভীর ব্যথা ভুলে যেতে আরও গভীর ব্যথার প্রয়োজন। আমার হৃদয় ব্যথার চেয়ে তাজমহল তত বেশি রোমান্টিক নহে যা আমাকে ব্যথা ভুলিয়ে দেই। আমি বরং বারবার সেই সব শ্রমিকদের কথা স্মরন করছিলাম যাদের ঘাম আর রক্তে গড়ে ওঠেছিল এই বিলাসী সৌন্দর্য, যাদব আত্মা এই মহলের পাশে ঘুরেফিরে আর বিরহ মাতম করতে থাকে। ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে না দিয়ে যে শাসক বিলাসী প্রাসাদ বানায় তারা কখনো মানব মনের চিরকালীন কষ্টে উপশমের কারন হতে পারে না। আমার ভেতরে আমি নাই, আমি কেবল ট্রেনের ভেতর দিয়া স্মৃতি দেখি-- লাল নীল সবুজ হলুদ স্মৃতি। ট্রেন শ্রীরামপুর চলে আসে। এখানকার স্থানীয় স্টেশনে এতো মানুষ থাকে না। চমৎকার এক নীরবতা বিরাজ করে স্টেশনে। বাংলাদেশের মসজিদের মতো নীরবতা-- কোনো মুমিন মুসুল্লি নাই -- সময়ে সময়ে আসে।
শ্রীরামপুর আমি অনেকদিন ছিলাম। আমার বন্ধু সুপ্রিয়ের বাসায়। সুপ্রিয়ের বাসার সাথেই নদী। নদীর পরপারে ব্যারাকপুর। লেফট রাইট পার্টির ব্যারাক থেকে ব্যারাকপুর। রাতের ব্যারাকপুরকে জল মাতা গ্রাম মনে হয়। আগ্রার ফোর্টের ভেতরে যেমন করে রোদ এসে তার চরিত্র হারায়, অর্থাৎ আগ্রা ফোর্টের চরিত্র ধারন করে তেমনি ব্যারাকপুরে রাতের নদী এসে নিজের চরিত্র হারায়, ব্যারাকপুরের চরিত্রে চরিত্রবতী হয়ে ওঠে-- সে যে কী এক মহিমা আমি বলিতে পারিব না-- জল চিক চিক নদী বয়ে যায়, মন ধুক্ ধুক্ শান্তি রাখা ঠাঁই।
কিছুক্ষন পরে আমরা হাওড়া স্টেশনে নামবো। হাওড়া সত্যিকারের স্টেশন। কারন স্টেশন মানে তো মানুষ, তাই না? আরেকটি কথা বলা হয়নি আমরা ছিলাম শান্তিনিকেতনের উৎসবে। উৎসব কিন্তু উতসব নহে-- হোটেলের নাম। বেশ আরামদায়ক। বিশেষ করে তার উঠোন।
আমাদের কেউ শান্তিনিকেতনে তেমন আনন্দ পাইনি। শান্তিনিকেতন দেখতে দেখতে কাদেরী স্যার বলেই ফেললেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাঁচিয়ে রেখেছি আমরা মানে বাংলাদেশ। আমি স্যারের কথার সাথে একমত হতে পারলাম না। কারন কবির কোনো দেশ নেই, কবি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির নাম নহে যাকে সুপারিশ করে, তেলমর্ধন করে, সাবমেরিন ক্রয় করে রক্ষা করতে হয়, কবি এক আশ্রয়ের নাম। তারপর যতক্ষন শান্তিনিকেতনবিহারে ছিলাম ততক্ষনই এডগার এলান পোর Eldorado কবিতাটি বারবার পড়তে থাকি
Gaily bedight,
A gallant knight,
In sunshine and in shadow,
Had journeyed long,
Singing a song,
In search of Eldorado.
But he grew old-
This knight so bold-
And o'er his heart a shadow
Fell as he found
No spot of ground
That looked like Eldorado.
অবশ্যই মনে মনে এবং আমার মনে নতুন করে মনে হলো প্রেম আসলেই এক শব্দহীন নদী আর রাগ সেই জলপথে ফারাক্কা বাঁধ!
বাউল নেমে গেলে থেমে যায় কলরব। তনুশ্রী গান ধরে। ওর আবার ক্লাসিক্যাল গলা। এমন গলা সন্ধ্যা অথবা বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি আড্ডায় বেশ আরামদায়ক। ট্রেনের আওয়াজে দরকার এমন গান যা ঝড়জল ঝকঝক আওয়াজের লগে বন্ধুত্ব করে। তাই ধরলাম গান। হামিং সাপোর্ট বেশ পেলাম। আমি আর আমি থাকলাম না। কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম। চারপাশে মানুষ জমে গেল। ইহা এক অন্যরকম অনুভূতি। গান শেষ। বায়তুল্লাহ কাদেরী স্যারের হাত মানিব্যাগে চলে গেল। চকচকে নরম একখান একশত টাকার নোট বের হয়ে আসে, শ্রাবন ভাই আরও একটি বড় নোট আমার হাতে তুলে দেন! ইহা এক অন্যরকম অনুভূতি।
জীবনে দ্বিতীয়বার গান গাওয়ার পর দিষ্টান্ন পেলাম। ইহা এক অন্যরকম অনুভূতি। অন্যরকম অনুভূতি লইয়্যা আমি সিটে বসে গেলাম। অধিক অধিক গলা যারা বাজাতে পারেন তাহারা অন্য জাতের মানুষ। চর্চায় কিনা হয়। চর্চা বা সাধনার অপর নাম আধ্যাত্মিক জীবন। নদীর জলে ভেসে থাকা যায় নৌকায়, জলের নিচে জীবন সন্ধানের প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত থাকার নামই তো সত্যিকারের বিজ্ঞান। আমরা বিজ্ঞান আর বাউল সাধনাকে আলাদা করে বিচার করি। না। বাউল সাধনা অন্য এক বিজ্ঞান। বিজ্ঞান মানে ধ্যানস্থ থাকা কোনো কিছু নতুন করে পাওয়ার নেশায়। তাই অধিক গলা বাজানোর চর্চা আমার নেই। তাইতো সিটে বসে গেলাম।
ট্রেন চলছে বর্ষার জলস্রোতের মতো। এই ট্রেন তো ট্রেন না-- স্মৃতি জাগানিয়া রেডিও যা মধ্য রাতের শেষ শব্দের মতো হৃদয়ে নির্ঘাৎ বাজে। তৃষা চুপচাপ দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। যেন বিরহিনী রাধা। আমার ভেতরে একটু পর পর এমন ঢেউ লাগছে যা হৃদয় ভাঙছে বারবার কিন্তু কেউ জানে না আমার ভেতরকার এ ভাঙন, বার বার চোখের ভেতর দেখা দেয় জোনাক কান্দন। তাজ মহলের পাশেই যমুনা নদী। চাঁদ নদী আর তাজমহল একসঙ্গে হলে মমতাজ আর বিরহী থাকে না, শাজাহান থাকে না কয়েদী। তাজমহল আমাকে তেমন টানেনি। চোখের গভীরে যার মমতাজ থাকে চোখের সামনের মৃত তাজমহল আর কতটুকু তার হৃদয় টানে-- গভীর ব্যথা ভুলে যেতে আরও গভীর ব্যথার প্রয়োজন। আমার হৃদয় ব্যথার চেয়ে তাজমহল তত বেশি রোমান্টিক নহে যা আমাকে ব্যথা ভুলিয়ে দেই। আমি বরং বারবার সেই সব শ্রমিকদের কথা স্মরন করছিলাম যাদের ঘাম আর রক্তে গড়ে ওঠেছিল এই বিলাসী সৌন্দর্য, যাদব আত্মা এই মহলের পাশে ঘুরেফিরে আর বিরহ মাতম করতে থাকে। ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে না দিয়ে যে শাসক বিলাসী প্রাসাদ বানায় তারা কখনো মানব মনের চিরকালীন কষ্টে উপশমের কারন হতে পারে না। আমার ভেতরে আমি নাই, আমি কেবল ট্রেনের ভেতর দিয়া স্মৃতি দেখি-- লাল নীল সবুজ হলুদ স্মৃতি। ট্রেন শ্রীরামপুর চলে আসে। এখানকার স্থানীয় স্টেশনে এতো মানুষ থাকে না। চমৎকার এক নীরবতা বিরাজ করে স্টেশনে। বাংলাদেশের মসজিদের মতো নীরবতা-- কোনো মুমিন মুসুল্লি নাই -- সময়ে সময়ে আসে।
শ্রীরামপুর আমি অনেকদিন ছিলাম। আমার বন্ধু সুপ্রিয়ের বাসায়। সুপ্রিয়ের বাসার সাথেই নদী। নদীর পরপারে ব্যারাকপুর। লেফট রাইট পার্টির ব্যারাক থেকে ব্যারাকপুর। রাতের ব্যারাকপুরকে জল মাতা গ্রাম মনে হয়। আগ্রার ফোর্টের ভেতরে যেমন করে রোদ এসে তার চরিত্র হারায়, অর্থাৎ আগ্রা ফোর্টের চরিত্র ধারন করে তেমনি ব্যারাকপুরে রাতের নদী এসে নিজের চরিত্র হারায়, ব্যারাকপুরের চরিত্রে চরিত্রবতী হয়ে ওঠে-- সে যে কী এক মহিমা আমি বলিতে পারিব না-- জল চিক চিক নদী বয়ে যায়, মন ধুক্ ধুক্ শান্তি রাখা ঠাঁই।
কিছুক্ষন পরে আমরা হাওড়া স্টেশনে নামবো। হাওড়া সত্যিকারের স্টেশন। কারন স্টেশন মানে তো মানুষ, তাই না? আরেকটি কথা বলা হয়নি আমরা ছিলাম শান্তিনিকেতনের উৎসবে। উৎসব কিন্তু উতসব নহে-- হোটেলের নাম। বেশ আরামদায়ক। বিশেষ করে তার উঠোন।
আমাদের কেউ শান্তিনিকেতনে তেমন আনন্দ পাইনি। শান্তিনিকেতন দেখতে দেখতে কাদেরী স্যার বলেই ফেললেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাঁচিয়ে রেখেছি আমরা মানে বাংলাদেশ। আমি স্যারের কথার সাথে একমত হতে পারলাম না। কারন কবির কোনো দেশ নেই, কবি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির নাম নহে যাকে সুপারিশ করে, তেলমর্ধন করে, সাবমেরিন ক্রয় করে রক্ষা করতে হয়, কবি এক আশ্রয়ের নাম। তারপর যতক্ষন শান্তিনিকেতনবিহারে ছিলাম ততক্ষনই এডগার এলান পোর Eldorado কবিতাটি বারবার পড়তে থাকি
Gaily bedight,
A gallant knight,
In sunshine and in shadow,
Had journeyed long,
Singing a song,
In search of Eldorado.
But he grew old-
This knight so bold-
And o'er his heart a shadow
Fell as he found
No spot of ground
That looked like Eldorado.
অবশ্যই মনে মনে এবং আমার মনে নতুন করে মনে হলো প্রেম আসলেই এক শব্দহীন নদী আর রাগ সেই জলপথে ফারাক্কা বাঁধ!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন