শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৬

আয়নাবাজি

বাংলা সিনেমা হিসাবে আয়নাবাজি  যথেষ্ট ভালো হয়েছে এমন কথা আমি বলতে রাজি না। বলতে পারি বাংলা সিনেমার এই ক্রাইসিস মুহুর্তে আয়নাবাজি বাংলাদেশীদের স্বাদ ধরতে পেরেছেন অমিতাভ রেজা চোধুরী। বাংলা সিনেমার দর্শক নাই এমন কথা আর মুখ বড় করে বলতে পারবে না হল মালিকেরা।
আয়নাবাজিতে আয়না ভালো অভিনয় করেছে। আয়নার কস্টিউম ভালো ছিল। ভালো হবে না কেন! সুদূর কলকাতা থেকে কস্টিউম ইঞ্জিনিয়ার আমদানি করা হয়েছে।

অতি অল্প খরচে ভালো কিছু করা সম্ভব এমন সত্যের মুখোমুখি আমরা বারবার হয়েছি। সুখ শান্তির জন্য যারা মঙ্গলগ্রহে বাড়ি বানাতে ইচ্ছুক তারা আসলে আজাইরা মানুষ। দর্শক বরাবরই সিনেমাতে বাস্তব কিছু চায়। যে সমাজের চোখের সামনের ঘটনা দেখার ক্ষমতা নাই তাদেরকে রাডার সেটেলমেন্টের কাহিনি শোনালে দেশ একেবারে উন্নত হয়ে যাবে এমন বলি আওড়ানোর সময় এখনো আসেনি।

আয়নাবাজি ছায়াছবিতে খরচ তেমন হয়নি। কিন্তু পারিপার্শ্বিক নান্দনিকতা দেখানোর প্রয়াস লখিন্দরযোগ্য দৃষ্টি রাখে।

আয়নাবাজিতে চমৎকার সুন্দর বৃষ্টি আওয়াজসহ দেখতে পাই। চোখে এখনো আয়নার কান্দন আর ঝুম বৃষ্টি লেগে আছে। শিশুরা ভালো অভিনয় করে, একেবারে বাস্তবের মতো করে-- তা আয়নাবাজিতে দেখতে পাই আবার দেখতে পাই মাজিদ মাজিদির The Song Of Sparrow মুভিতে।

The Song Of Sparrow মুভিতে রেজা নাজির জীবনের মতো নয় হুবহু জীবন আমাদের উপহার দিয়েছেন। এমন আচরনস্রোত ক্যামেরার সামনে প্রবহমান রাখা রেজা নাজির আর নওয়াজ উদ্দিন সিদ্দিকীর পক্ষেই সম্ভব। বদলাপুর কিংবা By Pass এ নওয়াজ উদ্দিন সিদ্দিকী যা করেছেন তা কেবল তার পক্ষেই সম্ভব।

আয়নাবাজি জাস্টকেবল অভিনয় গ্যালারি অথবা অভিনয়ের কোলাজ। ফলে দর্শককে প্রতিনিয়ত অভিনয় সত্যের মুখোমুখি হতে হয়।

আর মাজিদ মাজিদির The Song Of Sparrow সমাজ বিপ্লবের সিনেমেটিক আখ্যান। রেজা নাজির ও শিশুরা যখন পুরাতন কূপ পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত তখনই তাদের একজন মুরু মুরু ( সাপ সাপ)  বলে চিৎকার করে ওঠে,  আবার তাদেরই একজন সাপের গলা টিপে ধরে। একজন সমস্যা দেখায় আরেকজন সমাধানে নেমে পড়ে-- এমনই তো হওয়া উচিত না,  আবশ্যক।

প্রত্যেক সমাজে কিছু ফতোয়াবাজ আছে যাদের কামই হইলো দেয়াল তৈরি করা, তারা কখনো দেবীর পূজা করতে আসে না, তারা আসে দেবীর নাম বিক্রি করে সুনামি অর্জন করতে। সুনামিবাজদের জন্য আজ ঘরের পাশে ঘর আছে কিন্তু প্রতিবেশী শব্দটি জোড়ালোভাবে নেই।

চড়ুই পাখির গান মুভিতে প্রতিবেশী দিন আর রাতের মতো প্রাকৃতিক। রেজা নাজিও সাবেক সহকর্মীকে দেখে মুখ ফ্যাকাসে করে অন্যদিকে চলে যায় না, নিজের মোটর বাইকে তুলে নেয়।

আরে ভাই, ছবি বানাইলেই হবে? ছবি বানানো মানে সম্পর্ক স্থাপন, সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা তো থাকতে হবে, তাই না? 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন