মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬

এদিকে

উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা। আমি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলাম, রেজাল্টও প্রকাশ হলো। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলেই ...।

আমাদের মতো ছাত্রদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিশাল স্বপ্নের জায়গা। টিএসসির নাম শুনলেই একটি শান্তির ঝরনা হৃদয়ের কোনো একটি রেখা বরাবর বয়তে শুরু করে। আমি একটি ফর্মই তুললাম। ভর্তি হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই হবো। আমাকে সিট দেয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অন্য ছাত্রদের সিট দিবে এমনই গোঁয়ার আত্মবিশ্বাস। অনেকে আমাকে পরামর্শ দিলেন অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্ম সংগ্রহ করার জন্য। আমি সিদ্ধান্ত  নিয়ে নেয়ার পর আর কারো পরামর্শ গ্রহন করি না।

বৃহস্পতিবার। ট্রেনে করে ঢাকা আসি। থাকি মোস্তফা ভাইয়ের সাথে। পিলখানার আশেপাশে। মোস্তফা ভাই কোনো এক পরিবারের সাথে সাবলেট থাকে। পরিবারের সবাই শরিয়তি মানুষ। সাত বছরের মেয়ে বাবুটাও ঘরের ভেতর পর্দা করে। আমাকে দেখামাত্র পর্দা করা বাবু সালাম দেয় 'আসসালামু আলাইকুম '।

রাতটা শেষ হতে চায় না। তারপরও শেষ হলো। সকাল সকাল নাস্তা করে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে চললাম। আমার সিট এমবিএ ভবনে। ক্যাম্পাসে আসি পনেরো মিনিট আগে। তারপর সিট খোঁজার পালা। ওমা! সিট খোঁজে পাই না। এক লোক বলে এক কথা, অন্য লোক বলে অন্য আরেক কথা। নির্ধারিত সময় থেকে পাঁচ মিনিট চলে গেলো। আমার হার্টবার্ন শুরু হয়ে যায়। তারপরও সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করি। মন কিছুতেই শান্ত হতে চায় না।

হঠাৎ দেখলাম ভীড় থেকে অনেক দূরে এক লোক দাঁড়িয়ে বাদাম খাচ্ছে।

ভাই, এই সিট নাম্বারটা কোন ভবনে?

লোকটি প্রথমে আমার মাথায় হাত দেয়। শান্ত হও, এতো অস্থির হবার কিছু নেই।

লোকটি কে আমি তাকে চিনি না। কিন্তু তার স্নেহভরা কন্ঠ, স্নেহ তুলতুলে হাত আমাকে একদম শান্ত করে দেয়।

এই যে তোমার সামনের এই বিল্ডিং দেখছো,এর এগারো তলার কোনার রুমটা তোমার। যাও, একদম অস্থির হবে না।

লিফট কেবল টিচারদের জন্য। হেঁটে ওঠো রেজা। চোখ বন্ধ করে সিঁড়ি ভাঙ্গতে লাগলাম। রুমে যাওয়ার পর চোখে কিচ্ছু দেখছি না। ঘামে শরীর ভেজা ভেজা। পনেরো মিনিট হেজ গন! অপটিক্যাল মার্ক রিডার ও প্রশ্ন নিয়ে সিটে বসলাম।

একদিকে অস্থিরতা, অন্যদিকে শারীরিক ক্লান্তি, অন্য দিকে একটি মাত্র সুযোগ। চোখ বন্ধ করে শ্বাসপ্রশ্বাস নিজের নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করি। আমার নজর যখন শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত কাজে ব্যস্ত তখনই নাকে চমৎকার সুন্দর একটি গন্ধ আসে। চমৎকার সুন্দর গন্ধে ত্রিশ সেকেন্ডের মতো মগ্ন ছিলাম। চোখ খুলে দেখি ইশান কোনের মেঘের মতো কালো বর্নের একঝাঁক চুল। আমার চোখ ঝলসে যায়, মন ভুলে যায় পরীক্ষার চাপ।  এই চুলের সাথে কিছুক্ষন কল্পনা বিলাসী হয়ে উঠি। চুল দেখা গেলেও বনলতা সেনের মুখ দেখা যায় না। টিচার স্বাক্ষর খাতা নিয়ে আসেন। মেয়েটি স্যারের দিকে তাকায়। তার মুখ দেখার পর আমি আর পরীক্ষাতেই নাই। তার মুখ আর চুল নিয়ে মনে হলো হোসেন মিয়ার ময়না দ্বীপে চলে যাই।

স্যার ধমক দিলেন, এই ছেলে ফর্ম ফিল আপ করো।

এতোক্ষনে মনে হলো আমি পরীক্ষা দিতে আসছি। নাম লিখছি। লিখবো MD, লিখে ফেলছি MP। এমন সময় চোখ পড়ে একটি লেখায়-- OMR এ কোনো প্রকার কাটাকাটি করলে পরীক্ষা বাতিল বলে গন্য হবে। oh my God!

মন একদম অস্থির হয়ে যাবার কথা। কিন্তু মন একদম শান্ত। এমন সুন্দর চুল আর মুখ চোখের সামনে থাকলে নাবিক তার পথ হারাতে পারে না। আমিও পথ হারায়নি।

যা পারি তা উত্তরপত্রে পূরন করতে লাগলাম। এক মিনিট বাকী থাকতেই টিচার সতর্কবার্তা দিলেন। সময় শেষ হয়ে গেলো। পরীক্ষাও শেষ। মোবাইল ফোন অন করি। অসংখ্য ফোন আসতে শুরু করে। কথা বলি। কখন যে সেই মুখ আর চুল ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে যায় বলতেই পারিনি। আমার আর ময়না দ্বীপে যাওয়া হলো না....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন