শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৬

টমি

গল্পটি শোনা।
কোথাও পড়িনি।
গল্পটি আইনস্টাইনকে নিয়ে।
আইনস্টাইন একদিন ট্রেনে করে কোথাও যাচ্ছেন। টিকেট চেকার আসলেন। তো আইনস্টাইন টিকেট খুঁজে পাচ্ছেন না। টিটি আইনস্টাইনকে চিনত। তাই সে বললো সমস্যা নেই আপনাকে আমি চিনি। আইনস্টাইন জবাব দিলেন সমস্যা টিকেট পাওয়া কিংবা না পাওয়াতে না, সমস্যা হলো টিকেটে লেখা আমি কোথায় যাবো।

আইনস্টাইনের মতো লোক কোথায় যাবেন এই বিষয়টি তাঁর মনে নেই। তাহলে বিষয়টি  পরিষ্কার অন্য কোনো বিষয়ে তিনি শতভাগ মনোযোগী। তাই তিনি কোথায় যাবেন তা মনে রাখতে চান না। আসলেই তো তাই-- যা বই খুললে পাওয়া যায় তা কেন মাথায় থাকবে, মাথা তার পছন্দমতো সংগ্রহ করবে বিপুলা এই প্রকৃতির বিশাল আয়োজন থেকে।

আমাদের মাথা পছন্দমত কিছু সংগ্রহ করতে পারে না। মাথা কেন মুখও পারে না। প্রত্যেক খাবারে জনাবদের পছন্দ অনুযায়ী মেশানো হচ্ছে ভেজাল। গ্রামে থাকতে দুধে ভেজাল মানে বুঝতাম পানি মেশানো। আর এখন যখন আমি পুরোদস্তুর শহুরে তখন দুধে ভেজাল মানে দুধের সবটা অংশই পানি, সাথে দুধফ্লেবার।

শরীরে অপুষ্টি, মস্তিষ্কে অপুষ্টি-- এমন দুই অপুষ্টি নিয়ে বাংলাদেশী ক্যামনে পাড়ি দিবে জীবননদী। মাঝিও বৈঠা নিতে পারবে না। কারন তার শরীরেও শক্তি নাই। তুফান আসলে শিক্ষিত বাবুও মারা যাবে, সাঁতার জানা মাঝিও মারা যাবে।

এখন কিন্তু শিক্ষিত বাবুও তৈরি হয়না, পন্ডিতও তৈরি হয় না-- তৈরি হওয়ার মেশিন প্রায় নষ্ট হয়ে গ্যাছে। নষ্ট মেশিন কাজের চেয়ে শব্দ করে বেশি। নষ্ট মেশিনের উদ্ভট শব্দে কাজের মানুষ কাজ করতে পারে না। মশার কামড়ের চেয়ে মশার গান খুবই বিরক্তিকর।

মশার গানসহ কামড়, সমাজের লতাচাপালী তাচ্ছিল্যকে সহ্য করে যারা কাজ করে যান তাঁরা  সমাজের ফাউন্ডেশন। তাঁদের দলে কাজী নজরুল ইসলাম থাকতে চান-- আমি আজ তাহাদের দলে যাহারা কর্মী নন ধ্যানী।

ধ্যানী মানুষেরা প্রচার বিমুখ এমন না, তাঁরা বরং প্রচারে উৎসুক,  কিন্তু তাঁরা ততটুকুই প্রচার করে যতটুকু তাঁদের মানায়।

আইনস্টাইন তখনো আবিষ্কারক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেননি। জীবিকার প্রয়োজনে  বিভিন্ন প্রতষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করেন। কোথাও তাঁর চাকরি হয় না। কয়েকদিন পর যখন  তিনি e= mc√ তত্ত্ব পৃথিবীকে উপহার দিলেন তখন প্রতিষ্ঠানগুলি আইনস্টাইনের আবেদনপত্র তাদের অফিসের সামনে ঝুলিয়ে রাখলেন যার মধ্য দিয়ে তারা জানাতে চায় দেখো আমাদের প্রতিষ্ঠান কত ভালো আইনস্টাইন এখানে চাকরির আবেদন করেন।

প্রতিষ্ঠান এমনই-- ছোট্ট টমিকে অবজ্ঞা করে কিন্তু এই টমিই যখন টমাস আলভা এডিশন হয়ে ফিরে আসে তখন তাঁকে মাথায় তুলে নাচে-- তখন আমার বঙ্কিমচন্দ্রের বড় বাজার প্রবন্ধটির কথা মনে পড়ে যেখানে দেখানো হয়েছে মানুষ আর মানবিকতার মাঝে প্রধান দেয়াল অর্থজ্ঞান প্রবনতা, প্রকৃত মানুষের কোনো আবেদনই নাই-- ঠাঁই নাই ছোট সে তরী। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন