ইলেকট্রন। প্রোটন। নিউটন। কোয়ার্ক। একসময় সময়ের চরে ভেসে উঠে প্রাণী। প্রাণী থেকে বিস্তৃর্ণ প্রাণিমাঠ। প্রাণিমাঠ থেকে মানুষের ইতিহাস। জন্ম থেকে প্রাণীকে প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। মানুষকেও যুদ্ধবিদ্যা আয়ত্ত করতে হয়েছে। মানুষ যুদ্ধে সমকালীন পারদর্শী। জ্ঞানের রাজ্যে ভ্রমণ করে জানতে পারি যে মানুষই প্রকৃতিরাজ্যের নায়ক, অন্যভাবে বললে 'চালাক শোষক'। প্রকৃতির প্রত্যেকটি বিভাগে মানুষ তার প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট রয়েছে, সফলও হচ্ছে। মানুষের ইতিহাস তাইতো প্রভাব বিস্তারের ইতিহাস যেখানে টিকে থাকা আসল কথা, পাপ-পুণ্যের প্রশ্ন অবান্তর।
মানুষ প্রথমে অভ্যাস তৈরি করে। পরে অভ্যাস মানুষকে চালিত করে। অভ্যাস সব সময় চাহিদাকে সামনে রেখে গঠিত হয় এমন নয়, চাহিদার আয়োজনকে ফাঁকি দিয়েও সে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে থাকে । অভ্যাস জন্মগত নয়, জন্মমাত্র মানুষের অভ্যাস থাকে। শব্দ উচ্চারণের অভ্যাসে ভাষার জন্ম। ভাষার জন্মের শুরুর দিকে বর্ণ বলে কিছু ছিল না , ছিল না ভাষার লিখিত রূপ। ভাষা কেবল ভাব বিনিময়ের হাতিয়ার। ভাবনার সাদৃশ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে ভাববলয়। সমাজ, জাতি, পরিবার, গঠনে ভাববলয় অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। প্রয়োজনের স্রোত ভেসে দৃশ্যায়িত হয় বর্ণপরিবার। মুখে মুখে উচ্চারিত শব্দকে বৈজ্ঞানিক করার প্রচেষ্টা। মুখের উচ্চারিত শব্দমালা গাছের পাতায়, খাতায়, গুহায় সংগৃহীত হতে থাকে।সূর্য যেহেতু পৃথিবীর সকল প্রান্তে সমানভাবে কিরণ দেয় না, সেহেতু সব এলাকার মানুষের মানসিক বিস্তার এক নয়।
শব্দ কিংবা শব্দমালা মানসিকতার একক। তাই শব্দের জাতীয় পরিচয়ে মানুষের মধ্যে জন্ম হয় জাতিগত বিভেদ। ধর্ম তখনো মূখ্য ছিল না। জাতিগত বিভেদকে নিজস্ব অধীনে সফল রাখার তাগিদে তৈরি হয় ধর্মের ঢামাঢোল।
আর আজ!
ধর্মের পার্থক্য সবচেয়ে বড় পার্থক্য! ধর্মের কারণে আমরা ভুলে গেছি আমাদের জন্মগত পরিচয়-- আমরা মানুষ।
প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে মানুষের আবর্তন-বিবর্তন। প্রয়োজন মানুষের মানবিক গুণের একক। প্রয়োজনের জায়গা থেকে মানুষ পশু শিকার করে, একই প্রয়োজনের জায়গা থেকে মানুষ পশুপরিবারে সন্ত্রাস হিসেবে তালিকাভুক্ত। 'প্রয়োজন' শব্দটি যখন মানুষের নিজ পরিবারের দিকে ছুটে আসছে তখনই 'বিপ্লব' হচ্ছে 'বিদ্রোহ', 'বিদ্রোহ' হচ্ছে 'বিপ্লব' ।
তারপরও আমরা প্রয়োজনের একটা মান নির্ধারণের চেষ্টা করি। প্রয়োজনকে তালিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই যাতে পাগলা ঘোড়া লাগামছাড়া না হয়। আর প্রয়োজনের প্রায়োগিক মানদণ্ড `মানুষ মানুষের জন্য', `জীবন জীবনের জন্য'। তালিকা নির্ধারনে ব্যক্তিরুচির চেয়ে যখন ভোক্তারুচি মূখ্য হয়ে উঠে তখনই প্রদর্শিত সিনেমার নাম `হুমকি', `বিশৃঙ্খলা', `ভাত দে হারামজাদা '।
সময়ের প্রাসঙ্গিকতায় মানুষের শেকড়মুখী প্রয়োজন দুই ধরনের
এক- বেঁচে থাকার প্রয়োজন
দুই- বিকশিত হওয়ার প্রয়োজন
বিকশিত প্রতিভা'র জায়গা থেকে মানুষ মূলত মানুষ। মানুষ খুব করে বিকশিত হতে থাকে যখন সে ভাবনার আদান-প্রদান যন্ত্রের সাথে পরিচিত হয়। ভাবনার আদান-প্রদানের যন্ত্রটির নাম 'ভাষা'।
পৃথিবীর প্রত্যেক ভাষার Syntax প্রায় (Sub-verb-object)এক। তাহলে আমরা বলতেই পারি মানুষের মানসিক গাঠনিক পর্যায়টা এক। আজকে মৌলবাদী বলতে আমরা যা বুঝি তা সৃষ্ট মৌলবাদী, প্রকৃত মৌলবাদীর জায়গায় মানুষ কখনো মানুষের শত্রু হতে পারে না। তাই মানুষ যে কোন উপায়ে মানুষের বিরুদ্ধে যখন রাজনীতি করে তা কখনো রাজনীতির পর্যায়ভুক্ত না। মানুষের বিরুদ্ধে যা কিছু যাবে তাই লিটলবয়, ফ্যাটম্যান, মানব অস্থিত্বের ধ্বংসের মরণাস্ত্র।
মানুষের মানসিক বিস্তার এক না হলেও মানসিক বিস্তারের কোষ যে পরিবেশ থেকে শক্তি লাভ করে তা কিন্তু এক। একক জায়গার কথা চিন্তা করে আমাদের ভ্রমণ একমুখী হলেই পৃথিবী মানুষের বাসযোগ্য হয়ে উঠবে ।
আশার কথা হল মানুষের দ্বন্দ্বের জায়গাগুলো সৃষ্ট,আর মৈত্রীর জায়গাগুলো প্রাকৃতিক। মানুষ যত চৈতন্যের কাছাকাছি যাবে ততই মানুষ প্রাকৃতিক হয়ে উঠবে।
প্রাকৃতিক মানুষ কেমন?
প্রাকৃতিক মানুষ অন্তত নিজ সম্প্রদায়কে প্রতিযোগী মনে করে না। প্রাকৃতিক মানুষ প্রকৃতির মতো সাহসী, উদার। বেঁচে থাকা তাদের কাছে প্রথম এবং শেষ কথা নয়, বাঁচানো তাদের বেঁচে থাকার মতো জন্মউদ্দেশ্য।