শনিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৫

ধীরাজ

রাস্তার পাশে নদী। আমাদের ছোট নদী। তবে এঁকেবেঁকে চলে না। রাস্তাটির মতো বাঁক নেয়। বাঁক নেয়ার ফলেও তার স্রোতের জোয়ার জোয়ারই থাকে। ঋতু বদলে জলের গতিমুখ বদলায়। তখন আমাদের ছোট নদীকে আর নদী বলা যায়না। জলহীন খাল। জলহীন হলেও শুষ্ক নয়। সবুজ ঘাসের জোয়ার আসে নদীটির শরীরের এলাকায়। যে খণ্ডকালিন জেলে এখান থেকে ছোট ছোট মাছে তার ডুলা পূর্ণ করত,  সে-ই জেলেই  রাখাল হয়ে কেটে নিয়ে যায় সবুজ ঘাস। আবার সুমনের মা নদীটির কূলে রোপণ করে লাউগাছ। অল্পদিনেই লাউডগা তরতাজা হয়ে উঠে, লাউফুল দেখা যায়, ফুল থেকে সবুজযৌবনা লাউ মনোরম ভঙ্গিতে বেড়ে উঠে। এইভাবেই আমাদের নদী, আমাদের ছোট নদী মাছ, ঘাস, সবজির আধার।

নদীটির পাশে কলেজ। ক্লাসে বসেই জলের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। মাছদের খেলা সরাসরি চোখে আসে। লাউয়ের যৌবনঠাসা অপরূপ মনে সুরমার মতো লেপ্টে থাকে।

নদীটির পাশে যে কলেজ সে-ই কলেজের শিক্ষক ধীরাজ। বাংলা পড়ায়। প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগের অনেক কবিতা তার মুখস্থ। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে কবিতা তেলাওয়াত করে। আদর্শিক বক্তব্য আওড়াতে থাকে মিনিটের পর মিনিট। তার বক্তব্য মাটির কাছাকাছি ছাত্রদের কাছে দুর্বোধ্য জ্ঞানসূচী। তবুও রাতজাগা কষ্টে মুখস্থ করা কবিতাভাণ্ডার তাকে জাহির  করতেই হবে। ছাত্ররাও নিরুপায়  হয়ে তার তেলাওয়াত করা কবিতা শুনে না, দেখে।

আমিও তার ছাত্র ছিলাম। তার কোনো কথাই আমি তখন বুঝিনি । আজ বুঝি। অসম্ভব শ্রুতিধর হওয়াতে তার প্রতিটি বাক্য আজও কানে বাজে। আজ তিনি আমার কাছে প্রাসঙ্গিক। অথচ কত অপ্রাসঙ্গিকভাবে তার কণ্ঠে  শুনেছিলাম --

সই, কেমনে ধরিব হিয়া
আমার বঁধুয়া       আন বাড়ী যায়
আমার আঙ্গিনা দিয়া।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন