শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আমি যদি হতাম বনহংস

আমাদের সমাজ বোনকে বোঝা মনে করে। কোনো বোন যখন পৃথিবীতে আসে তখন আযান দেয়ার রীতি নেই। অথচ ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী কোনো মানুষ জন্মগ্রহন করলে তাকে নতুন পৃথিবীতে স্বাগতম বার্তা হিসাবে আযান দেয়ার রীতি ধর্মবৈধতা লাভ করেছে। কিন্তু আমাদের সমাজে কেবল বেটাছেলে পৃথিবীতে এসেই স্বাগতম বার্তা লাভ করে। স্বাগতম বার্তার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিষম বাহুর হিসাব নিকাশ যেখানে তিন বাহু কখনো এক হয় না।

দেখা যায় সমদ্বিবাহুর বিপরীত কোনের মানে অবস্থান করে নারী আর বেটাছেলে একেবারে নব্বই ডিগ্রি। অর্থাৎ দুজন মেয়ে সমান একজন ছেলে।

আদিমকালে প্রত্যেক সম্প্রদায় প্রার্থনা করতো মাটিতে অধিক ফসলের, গাভীর অধিক বেটিসন্তান আর অধিক উর্বর নারীর। আদিম ধারনার পরিবর্তন কিছুটা হয়েছে। এখন সমাজ অধিক সন্তান কামনা করে না।

গ্রামে দেখতাম গাভী যখনই বেটাসন্তান প্রসব করতো তখন বুরুব্বির মুখ ম্লান হয়ে যেতো। কারন বেটিবাছুর যেমন অর্থময় বেটাবাছুর তেমন অর্থময় না । পক্ষান্তরে পুরুষসন্তান হলে গ্রামের মানুষ খুব খুশি, জরিনা কিংবা সখিনা হলে মুরুব্বিরা তেমন খুশি না। কারন গ্রামের মানুষ মনে করে বেটাশিশু মানে বংশের চেরাগ, অর্থের যোগান; মাইয়্যা তো চলে যাবে অন্যের ঘরে।

ফলত দেখা যায় মেয়েটি বাপের বাড়িকে অস্থায়ী বাড়ি মনে করে, আবার স্বামীর বাড়িকে নিজের বাড়ি মনে করতে পারে না। ফলে আমাদের সমাজে নারী ভাসমান কচুরিপানার মতো ভাসতে থাকে যাদের কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্য বা ঘর নেই।

মেয়েছেলের প্রাকৃতিক সম্পর্ক এখানে ট্যাবু। প্রেম শব্দটি এখানে ট্যাবু। এখানকার গালিগুলি মা জাতির উপরে গিয়ে বর্তায়। শালা গালিটি একসময় মনে করতাম খারাপের ভালো। পড়ে দেখা গেলো শালা গালিটির ভেতরেও পুরুষসুলভ অহংকার খেলা করে। শালা গালিটি মানে তর বোন আমার নিচে, আমার অধীনে। শালা গালিটির মধ্য দিয়ে ভাইটিকে মনে করিয়ে দিতে চায় তর বোন এখনো আমার দাস। অন্য গালিগুলির কথা না-ই বললাম।

বর্ষাকালে আমাদের এলাকায় বেদে সম্প্রদায় আসে। ছোট্ট কাল থেকে বেদে সম্প্রদায়ের প্রতি আমার এক বিশেষ আকর্ষন আছে। বেদে সম্প্রদায়ের মেয়েরা আমাদের সমাজের ছেলেদের মতো কাজকর্ম করে। আর ছেলেরা নৌকায় বসে রান্নাবান্না করে। খুব কাছ থেকে দেখেছি তাদের দাম্পত্য জীবনে সুখ আছে, শান্তি আছে। বেদেমেয়েদের শরীরে রক্ত সঞ্চালনও বেশ ভালো। আর আমাদের বোনদের শরীরে চিংড়ি মাছের রক্ত বসবাস করে। বোনেরা রান্নাবান্নার সাথে জড়িত অথচ তাদেরই একান্ত আন্তরিক রোগের নাম গ্যাস্ট্রিক।

গয়নার বাক্স ছবিতে ভূত বুড়িমার যৌবনের টান ওঠে। ক্ষুধা না চিনে জাতের বাহার। কাজের ছেলের সাথে যৌনচাহিদা শেয়ার করতে চায় সে। কিন্তু কাজের ছেলে আর যৌবনের বুড়িমার সামনে দেয়াল রচনা করে সমাজ। সমাজ এমনই ভদ্র মানুষ যে আপনি ক্ষুধাতুর মনে কাতরাতে থাকবেন কিন্তু খাবার দিবে না, তবে আপনাকে বলা হবে আপনি যেন চুরি না করেন।

অর্থাৎ যে ছেলেটি মাস্টরের বেত্রাঘাত খেয়ে সাতদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল সেই যখন মাস্টর হয় তখন সে আবার তার ছাত্রকে বেত্রাঘাত করে হাসপাতালে পাঠায়।

ম্যানিলা মুভিতে একটি ছেলে এক সুন্দর মেয়ের প্রতি আকর্ষন অনুভব করে। মেয়েটিকে কিশোর ছেলেটি অনুসরন করতে থাকে। মেয়েটি যখন কাপড় বদল করে ছেলেটি ফোঁকর দিয়ে চেয়ে থাকে। অনেক কষ্ট করে মেয়েটির ব্রা সংগ্রহ করে রাতে ব্রা নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে। ছেলেটির অভিভাবক বিষয়টি লক্ষ করে এবং সোজা তাকে পতিতালয়ে নিয়ে যায়।

কল্পনা করা যায় বাবা তার ছেলেকে পতিতালয়ে নিয়ে যাচ্ছে! ম্যানিলা মুভির এই ছেলেটি যখন ভারতবর্ষের ফড়িং ছবিতে আসে তখন তাকে অনেক মানসিক যন্ত্রনার শিকার হতে হয়। স্বাভাবিক সত্য সুন্দর বিষয় নেয়ার মানসিকতা এখানে নেই।


কেন নেই?

কারন এখানকার মানুষ কাজধর্ম পালনে আস্থা রাখে না, ভাবধর্মে বিশ্বাসী। কাজধর্মে আস্থা রাখলে মা জাতির সঠিক মূল্যায়ন আমরা বুঝতে পারতাম।

রান্নাঘরে যে পৃথিবী উৎপাদন হতে পারে তা আমাদের উপলব্ধিতে আসতো। আমাদের সুন্দর বুড়িমা কখনো ভূত বুড়িমা হওয়ার সুযোগ থাকতো না। ছেলেটি ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইল মিনিটে নিজের জীবনের বীর্য নষ্ট করতো না, টুকরো টুকরো মৃত্যু আর থাকতো না -- আমি যদি হতাম বনহংস, বনহংসী হতে যদি তুমি! 

1 টি মন্তব্য: