মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৪

ক্লান্তির কান্না

পাখাগুলোর ক্লান্তি নেই ।ক্লান্তি নেই তার প্রতিবেশী টিউবলাইটারের ।মৃত মানুষের কান্নার মতো নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে ফ্লোরের উপরে দাঁড়ানো বেঞ্চগুলো ।যেন পাখা আর টিউব -লাইটারের উদারতাকে মাথা নত করে কৃতজ্ঞতার উৎসবে  শরীক করল নিজের সুবোধ সত্ত্বাকে ।জানালাগুলোও অলস নয় ।রুম মহাশয়ের সহানুভূতি ,সহমর্মিতা  প্রকাশক জানালার ইচ্ছাশরীর ।অবসরের ফুরসত নেই ক্লাসরুমের ধূলোবালির ।ছাত্রদের পায়ের আঘাতে আঘাতে মোট-তাজা হচ্ছে ধূলোর শরীর ।ছাত্রদের পা এখন প্রায় অলস ।

 দুটি ক্লাস হয়েছে ।তৃতীয় ক্লাসের জন্য প্রস্তুত ছাত্রদের ঝুলন্ত  বিবেক ।সদ্য জাগ্রত নবোঢ়া মেয়ের চুলের সাদৃশ্য প্রতিটি ছাত্রের পৃথক পৃথক সত্ত্বা ।ঘড়ির কাঁটার আলিঙ্গন ক্লাস হওয়ার সঠিক সময়ের যৌবনা স্রোতে ।তবুও আসছেন না মাননীয় শিক্ষক !ইউনিভার্সিটির টিচার বলে কথা । সময় যাদের হাতে জন্ম নেয়, তারা জন্মে না!  স্বর্গলোকে তারা দেবতা ছিলেন, তাইতো পৃথিবীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। যাদের কাছে কলিজা পোড়ার ঘ্রাণ পাওয়া যায়। প্রতিনিয়ত পুরোনো হতে হয় নতুন মোড়কে।  তবুও লজেন্স মানসিকতায় সময় কাটায় অন্ধপ্রদেশ!
 -স্যার আসছে ,স্যার আসছে
 -এই ওঠ ,আমাকে বসতে দে
 -দোস্ত ,তুই ভেতরে যা না

  সেকুলাসে বেজে ওঠে ভয়ার্ত প্রজার করুণ ধ্বনি ।উড়ন্ত বাতাসগুলোও মেনে চলে জনাব স্যারের হর্ষধ্বনি ।স্যারের পা রাজসিক উৎসবে  ওঠা -নামায় ব্যস্ত ।ক্লাসরুম চুপচাপ ।

 -১০২ ,১০৯ ,২০৯ আছো ক্লাসে
 -নেই স্যার
 -১০২ ,১০৯ ,২০৯গত ক্লাসেও ছিল না ।যারা গত ক্লাসে ছিল তাদের সবার উপস্থিতি দিয়ে দিচ্ছি  ,সময়ের দাম আছে

ক্লাস চলছে ।প্রজাকে নীল চাষ করার পদ্ধতি শেখানোর অবিকল নকল ।ক্লাসের দেয়ালে লেখা মিটমিট বাক্যগুলো পড়ছে রতন

   -কাউকে দাম দিও না
   -দাম দিলে লাভ নেই
   -দাম না দিয়ে চড় দেয়া উচিত
  -তাহলে কি চড় ফ্রি খাবে
 - আর কতদিন এফ ,এম ,রেডিওর লেকচার চলবে
 উদ্ভট বিরক্ত নিয়ে স্যারের বক্তব্য আশ্রয় নিচ্ছে রতনের কানের আশ্রমে
  -শাজাহান নাটকের বঙ্গ বিভাজন ব্যাপক প্রভাব ফেলে
  -সব মানুষের মধ্যে একজন কিং লিয়ার বসবাস করে ।
  -শাজাহানের একদিকে রাজত্ব অন্য দিকে পিতৃত্ব ।
হঠাৎ  নেমে আসে স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার ক্লাসের চোখে -মুখে ।আলো -তৃষ্ণা দৃশ্যত ক্লাসের সন্তানদের অভিপ্রায়ের উপত্যকায় ।চুপচাপ বসে আছে জনাব স্যারের  হাসির সৌরভ ।স্যারের কপালের উঁচু ভিটায় দু -চারটে লবণাক্ত পানির ফোঁটা -- সম্মুখের ফাঁকা -ফাঁকা কয়েকটি চুলের শেকড় থেকে উৎসারিত ।কারণ মামলা করার কোনো ব্যাপার নয় ।টিউবলাইটার ও পাখাগুলোর শক্তি নেই ।মিনিট খানেকের মধ্যে তারা শক্তি লাভ করে -- জ্বলে ওঠে টিউবলাইটারের আত্মা , পাখাও ব্যস্ত হয়ে পড়ে  ।বিজয়ের আলো সবুজ হয়ে ওঠেছে স্যারের চোখে-মুখে ,প্রকাশ করতে থাকে তরতজা সবুজ ভাষা -
 -তোমরা শয়তানের প্রার্থনা করছিলে
 -আমি ঈশ্বর প্রার্থনা করছিলাম ,রাবীন্দ্রিক ঈশ্বর ।
ঈশ্বর আকাশে থাকেন না
 স্যার আবারও হাজার বছরের পুরনো কাজে ।লেকচারের আয়োজনে ।দুর্বার ফ্যালফেলিয়ে তাকানোর সীমানা স্যারের কপাল ক্যাম্পাস ।লেকচার দেখছে ,শুনছে না ।কানে তার ইয়ার ফোন ।দুর্বার পেছনের বেঞ্চে বসে আছে দুর্জয় ।সে দুর্বার চুলের সৌরভ পান করছে
 -ইশ !চুল কত সুন্দর ।
 -বনলতা না ,কাজললতার চুল ।
দুর্জয়ের উরুর পাদদেশে চিমটিকাঁটা রোপণ করে মাসুম ।আঙ্গিক ইশারা
 -স্যার তোর দিকে তাকিয়ে আছে ।
 -ভালো করে বস ।
স্যার গর্জে ওঠে
-এই ছেলে তোমার সমস্যা কি ?ক্লাস করতে ভালো লাগে না ,তো চলে যাও ।
-না স্যার ব্যাপারটা এমন নয় ,রাতে ঘুমাতে পারিনি ,ছারপোকার বাড়াবাড়ি ।তাদেরকে রক্ত-কর দিয়ে ঘুমাতে হয় তো
-ঠিক আছে ,বসো ।
যথারীতি আবার ক্লাস চলছে ।যে ক্লাসের অর্থ খুঁজে পায় না পর্দা ।
 পর্দা ।ক্লাসের নারী বিপ্লবী ।হাস্যেজ্জ্বল তার নীরবতা ।চিন্তার চেতনা কেবল শোষণ মুক্তি ।পুঁজিবাদের অঢেল দল নিয়মিত যেন ক্ষতবিক্ষত হয় তার বিশ্বাসের তলোয়ারে ।নিয়মিত ক্লাস করা ,পুঁজিবাদের দালালদের জি স্যার ,ইয়েস স্যার সম্বোধনে মোটা মোটা মার্কস তুলে নেয়া তার আর্জি নয় সময়ের ঈশ্বরের কাছে ।
  আজ ক্লাস নেয়া নির্ধারিত সময়সূচিতে ছিল না। স্যারই নির্ধারণ করলেন ।
  নামকরা ইউনিভার্সিটির নামিক টিচার বলে কথা ।তাও আবার অধ্যাপকের তালিকায় বেশ মোটা দাগে নাম তিনার ।পর্দার চেতনা ভাষার আবেদনে বিকশিত -
-স্যার ,বাইরে যাব
-কেন ?
-মিছিল আছে
-যদি যেতে চাও ,তবে যাও ,আমার ক্লাসে আর আসতে পারবে না
-ঠিক আছে (পর্দার চলে যাওয়ার নীরব ভাষা )
- কোন মিছিলে গেল ও ,'বাম রাজনীতির মিছিল স্যার' বসে থাকা বিড়াল ছানাদের উচ্চারণ ।
-'কি শেখায় নেতারা ,জিজ্ঞেস করব' বাতাসে আছাড় খেয়ে পড়ে একসময়কার সক্রিয় বাম রাজনীতির সুবিধাভোগী অধ্যাপকের ঢুল ঢুল উচ্চারণ ।সময় তাকে সুযোগ-সুবিধার মেকআপের ফ্রেমে বন্দি করেছে ।

 সময়ের পায়ের মতো ক্লাস চলছে ।চশমার ফাঁকে বেরিয়ে আসছে স্যারের প্রতিভার ধোঁয়া ।যা কি না অদৃশ্য মননের দৃশ্যত জীবাণু ।বিড়ালছানাগুলো কলমের হাতিয়ারে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে শুভ্র পাতার কোমল বুক ।

 মাথার উপরে মাকড়শার জালগুলো কুসুম ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরেছে ছাদের শরীর ।তবুও কেন যেন মাকড়শার  স্বাস্থ্য ভঙ্গুর হওয়ার ব্যালেন্স জের প্রকাশ করে ।নৈতিকতার খতিয়ান এলোমেলো ,এলোমেলো ইউনিভার্সিটির খতিব !


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন