সময় বদলে গেছে। বদলে যাচ্ছে মানসিকতা। তৈরি হচ্ছে বিলাসিতার আপডেট ভার্সন।
আব্বা ফজরের আযানের আগে ঘুম থেকে উঠতেন। মাঠে যেতে হবে, জমিকে লাঙল চালিয়ে করতে হবে আবাদি, ফসলি। খুব তাড়া। এতো ভোরে রান্না করার সুযোগ নেই। আব্বা পানিতে জমানো ভাত থালায় তুলতেন, আম্মা তাড়াতাড়ি শুটকিভর্তা করে আব্বার পাতে দিতেন। পান্তা ভাত আর শুটকিভর্তার আদলে আব্বা তাঁর পেট মহাশয়কে সন্তুষ্ট করতেন। আমার ঠাকুরদাও তাই করতেন। এই হলো কৃষকশ্রেণীর নাস্তা করার স্টাইল। নাস্তা করার নাগরিক অর্থ তাঁরা জানেন না। তাঁরা কেবল উদরপূর্তি করার জন্য খায়। শর্করা, আমিষ, স্নেহ পর্দাথের খবর তাঁদের কান পর্যন্ত পৌঁছে না।
অথচ কৃষক শ্রেণী সত্যিকারের মানুষ, সব সাধকের বড় সাধক। সেই সাধকদের সঠিক মূল্যায়ন না করে, অবমূল্যায়নের সিনেমা তৈরি করে নাগরিক জীবন। সেই সিনেমার নাম `পান্তা- ইলিশ ভক্ষণ'। সিনেমা হলটির নাম `পহেলা বৈশাখ'। একটি ইলিশ এক বছরে হয়তো কোনো কৃষকের ঘরে খাবার হিসাবে রান্না করা হয় না। হয়তো নয়, সত্য, বেদনাদায়ক সত্য। বেদনাদায়ক সত্যটি কী নির্মমভাবে নাগরিক জীবনে বাস্তবিক বিলাসিতা।
নাগরিক জীবনে আরেকটি বিলাসিতা আছে, আর তা হলো অনুরাগবিচ্ছেদ বিলাসিতা। যুবক - যুবতী প্রেম করে না, রিলেশনের বাজেট তৈরি করে। কয়েকদিন রিলেশনের বাজেট ঠিকঠাক চলে। কিছুদিন পর লাভ- লোকসানের হিসাব আসে, ফলে দেখা দেয় ঘাটতি বাজেট। ঘাটতি বাজেটে রিলেশন কেরিঅন? ইমপসিবল! চলে ব্রেকআপ সংবিধান।স্বাতন্ত্র্য বিধানে দুজন আলাদা। আলাদা হয়েও পেইনচর্চা করতে হবে। নতুবা যে নীল ঘরে রঙিন পানির পেয়ালা আরামদায়ক হয়ে উঠবে না, মিউজিক প্লেয়ারের গানগুলো মুহূর্তের রসদ জোগাবে না। নাগরিক জীবনের কাছে নারী- বাড়ি, গাড়ির মতো পেইনচর্চাও এক আশ্চর্য রকমের বিলাসিতা। শ্রমজীবী মানুষের পেইনচর্চার সুযোগ নেই। কারণ সকালে কাজে না গেলে যে তাঁকে উপোস থাকতে হবে। তাঁদের তো আর ব্যাংকে জমা নেই টাকার খতিয়ান, নেই কোনো ক্রেডিট কার্ড কিংবা অবসরবীমা। শ্রমই তাঁদের বল। বলকে পুঁজি করে তাঁরা দিন আনে, দিন খায়। তাঁদেরও দিন যায়, তাঁদেরও দিন যায়।দিন আসবে সুদিন হয়তোবা, হয়তোবা কোনোদিন!