সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭

পাগলা ঘন্টা

রাত। নয়টা বিশ। ঘন্টা বাজে ঢং ঢং।
রাত। নয়টা ত্রিশ। ঘন্টা বাজে ঢং ঢং ঢং ঢং। পাগলা ঘন্টা-- হলে কিন্তু ঢুকতেই হবে।

এটা একটা উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের চিত্র।

নয়টা ত্রিশের মধ্যে ছেলেদেরকে হলের ভেতর ঢুকে যেতে হয়। কারন রাতের অন্ধকারে কিছু মাংসাশী প্রানী নেমে আসে পৃথিবীতে। মাংসাশী প্রানীরা পুরুষ ধরে ধরে খায়। প্রানীরা আবার নারী খায় না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী কর্তৃপক্ষ ছেলেদের বিশেষ ভালোবাসা দিয়ে অন্ধকারকালীন সময়টা খাঁচায় বন্দী করে রাখে।

ছেলেরা সারারাত খাঁচায় ছটফট করে। রাত মানেই তাদের কাছে এক অভিশাপের নাম। তাদের প্রেমিকারা চাঁদনী রাতে জোছনা মেখে নদীতে সেলফি তুলে, লং ড্রাইভে বের হয়। আর তারা ইমোতে ইনবক্সে সুখ ভাগাভাগি করে। মানেটা কী জানেন তো!? প্রেমিকারা আপেল খায় আর প্রেমিক আপেলের গল্প শুনে।

সকাল হলে খাঁচা খুলে দেয়া হয়। ছেলেদের বন্দীশালার রেশ কাটতে কাটতে দুপুর হয়ে যায়, দুপুরের পর বন্দীশালায় ঢুকতে হবে এই ভাবনা ভাবতে ভাবতে নয়টা বেজে যায়, নয়টা ত্রিশ বেজে যায়।

তখন ঘন্টা বাজে ঢং ঢং ঢং ঢং। পাগলা ঘন্টা।

শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৭

আবুল কালাম আজাদ

আজাদ। আজাদ নামে এক ছেলে। ছেলেটি এক গরীব পরিবারে জন্মগ্রহন করে। গরীবের মনেও শখ জাগে। অনেক দিনের পয়সা জমানো আয়ে একটি ময়না পাখি কিনে আনে আজাদ।

অনেক আদুর করে সে ময়নাটিকে। রাতদিন তার মনোযোগ বেঁচে থাকে ময়নাটি ঘিরে। সহজ মনের সরল আদুর নিতে পারেনি ময়না। ময়নাটিকেও বিশেষ কোনো দোষ দেয়া যায় না।  কারন এতো হৃদয়ভর্তি আদুর গ্রহনে জন্য প্রস্তুত ছিল না ময়নাটি। আজাদ যতই আদুর করে ততই তিরিং বিরিং করে ময়না। তারপরও ময়নার তিরিং বিরিং মেনে নেয় আজাদ। কারন আজাদ ময়নাটিকে সত্যিই ফিল করে।

এক সময় ময়নাটি আজাদকে হায়চিল ইনজেকশন দিয়ে স্রোতের বরফে শরীর ঢাকা দেয়।

বৃষ্টি, একটানা বৃষ্টি নামে আজাদের চোখে। বৃষ্টিও থেমে যাওয়ার নিয়তি নিয়ে জন্মায়। থেমে যায়।

আজাদ এখন অনেক বড় মানুষ। আজাদ এখন আবুল কালাম আজাদ। আবুল কালাম এখন তাঁর বাড়ির সামনে দুটি মাতৃগাছ রোপন করেছে। এখন অনেক পাখি দিনরাত আজাদের বাড়ির সামনে কিচিরমিচির করে।

পাখিদের গান শুনে তিনি ঘুমাতে যান, পাখিদের গান শুনে তাঁর ঘুম ভাঙে, বহু বিচিত্র রঙের পাখি

শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭

আশা নিয়ে

এক সেকেন্ডের জন্য আমি হতাশ থাকতে চাই না, কারন এই এক সেকেন্ডে জীবনের সবচেয়ে আরাধ্য আশা কিংবা প্রাপ্তি আমার দরজায় কড়া নেড়ে মুখ ফিরিয়ে চলে যেতে পারে 

সত্য মিথ্যা

লেখক মিথ্যা বলে না, মিথ্যাকে সত্যের মতো করে বলে, লেখকের মিথ্যা তাই সত্যের চেয়ে সুন্দর

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭

তোমার কথা মনে হলে

তোমার কথা মনে আসলে
সুন্দর একটি চোখের দিকে তাকাই, চোখের উঠোন থেকে বিছান, বিছান থেকে উঠোন নিবিড় মনে পাঠ করতে  থাকি ঘন্টার পর ঘন্টা।

তোমার কথা মনে আসলে
যুবতী এক মেঘের দিকে তাকাই,মেঘের ভরাট মুখ দেখি একটানা,মেঘ উড়ে উড়ে চলে যায় পাখির বাসায়,পাখির বাসার দিকে তাকাই একটানা,পাখির বাসা দেখতে দেখতে আমিও পাখি হয়ে যায়-- তখন গভীর রাত।

তোমার কথা মনে হলে
জলের দিকে তাকাই
যে জলের ঘর নেই বাড়ি নেই রাগ নেই অভিমান নেই আছে কেবল ছুঁয়ে চলা ছুঁটে চলা।

তোমার কথা মনে ভাসলে
বিকালের রোদের দিকে হাঁটি, হাঁটতে হাঁটতে গোধূলি বর্ডার পার হয়ে চলে যায় রাতের বাড়ি।

তোমার কথা মনে আসলে
বাউলের গান শুনি "কিছুদিন মনে মনে শ্যামের পিরিত রাখ গোপনে",গান শুনতে শুনতে আমার চোখে আষাঢ় নামে।

তোমার কথা মনে আসলে
শিশুর একমাত্র রাগ দেখি, কোনো কারন ছাড়া শিশুরা রাগ করতে পারে, কোনো কারন ছাড়া শিশুরা ভালোবাসতে পারে,
শিশুর রাগে
শিশুর ভালোবাসায় ডুবে থাকি অন্তত সময়।

তোমার কথা মনে হলে
বৃষ্টির দিনে ছাতার নিচে একজোড়া কম্পন দেখি-- ভিজবে না বলেও তারা ভিজে যায়, তারপর মনভর্তি সুখ নামে তাদের,ঘোরাঘুরি করি তাদের মনের আনাচকানাচ।

তোমার কথা মনে হলে
তুমি আমি হয়ে যায়, তুমি আমার পাশের অগনিত সুন্দর হয়ে যাও

.:.

আমেরিকা কোনো দেশ নয়, আমেরিকা এক আইডিয়ার নাম

মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০১৭

মানবতার স্লোগান বন্ধ

অপরাধ খুলে কেউ
ভুলে গেছে মানুষের মুখ
অপরাধ খুলে কেউ
কেড়ে নিল মানুষের সুখ।

ঘর নেই বাড়ি নেই রাস্তায় সুখ নেই
জেগে আছে অবিচার দ্বন্দ্ব
মানবতা মানবতা মানবতা মানবতা মানবতার স্লোগান বন্ধ।। 

আজকের শিশু নেশায় ভাসছে
কালকের শিশু অস্ত্র হাতে
ফুল কন্যাটি ভুল পথে হাঁটছে 
জেগে আছে অবিচার দ্বন্দ্ব 
মানবতা মানবতা মানবতা মানবতা মানবতার স্লোগান বন্ধ।। 

পাখিদের ঘর নেই
জলেতে মাছ নেই
শান্তিতে নেই শান্তির পায়রা
জেগে আছে অবিচার দ্বন্দ্ব
মানবতা মানবতা মানবতা মানবতা মানবতার স্লোগান বন্ধ।।

সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭

মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০১৭

মরেও মরেনি

সুহিনি সাবেত্রী। ছিপছিপে শরীরে আটসাঁট বাঁধন তার। তার দাঁত যেন সাগরের বালি-- চিকচিক করে। শাড়ি তার একমাত্র পোশাক। অবশ্যই রুমের ভেতর সে থ্রি কুয়াটার আর টিশার্ট পরে। সাইকেল তার প্রিয় বাহন। শুধু তার কেন, শান্তিনিকেতনের প্রায় স্টুডেন্টদের প্রিয় বাহন সাইকেল। টাকা হলে স্কুটার কিনবে এমন কথা সে প্রায় বলে বেড়ায়।

সুহিনি হাসলে গালে টোল পড়ে। তার চোখে কাজল দেয়া লাগে না, জন্মগতভাবেই তার চোখে কাজল দেয়া। তার মামা তাকে কাজল নামেই ডাকে।

সুহিনি যখন সাইকেলে চেপে বসে তখন মাঝেমধ্যে হালকা বাতাসে নাভিমূলের উপর থেকে শাড়ি সরে যায়, আর ঠিক তখন মাই গড টাইপের এক সৌন্দর্য নেমে আসে যেন বহু প্রত্যাশিত কাঞ্চনজংঘা!

সুহিনি শান্তিনিকেতনে অনীলদেব শর্মার অধীনে পিএইচডি করছে। বিষয় বাংলা সাহিত্যে গ্রামীন জীবন। বাংলা সাহিত্যে নারীদের অবস্থান নিয়ে সে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে চেয়েছিল। তখন তার এক দাদা বললেন,

"তুই যদি 'বাংলা সাহিত্যে গ্রামীন জীবন' বিষয়টি  নিয়ে পিএইচডি করতে পারিস তাহলে নারী পুরুষের বৈষম্যের পেছনের অনেক কারন সুন্দর করে তুলে আনা সম্ভব, আর আমাদের অর্থনীতির মূল এখনো তো অনেকাংশেই গ্রামীন।"

দাদার কথাতে যুক্তি ছিল বলে তার ধারনা। তাইতো ....

আসল কথাটা কিন্তু এখনো বলা হয় নি। সুহিনির প্রেমিক আছে। তার সমস্ত কাজ প্রেমিককে দিয়েই করায়। বই ফটোকপি করা থেকে শুরু করে ব্রাশ পেস্ট কেনা পর্যন্ত সব কিছু অর্জুন চৌধুরীই করে।

বাড়ি যাবে সুহিনি। বিশাল বিশাল ব্যাগ বহন করতে হবে প্রেমিককে। শান্তিনিকেতনে সাধারনত রিক্সা টিক্সা পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় তবে খুবই ব্যয়বহুল। অর্জুন চৌধুরী যদি ব্যাগ বহন করতে হালকা কোনো আপত্তি দেখায় তখন সুন্দরীর বিশাল এক ডায়লগ,

"প্রেম করবা আর ব্যাগ বহন করতে পারবা না, আমার কী আট দশটা প্রেমিক?"

প্রেমিক তখন চুপ হয়ে যায়, চুপ হয়ে নদীর মতো কলকল করে বয়তে আরম্ভ করে। প্রেমিকার সব দায়িত্ব পালন করতে করতে সে ভালো মানের গাধাই হয়ে ওঠেছিল। সুহিনি অবশ্যই তাকে আদর করে গাধা বলেই ডাকতো।

একদিনের ঘটনা। সুহিনি কিন্তু একা একটি রুমে থাকে। তার সাথে অবশ্যই একটা বিলাইও থাকে। বেড়ালের সাথে কথা বলতে বলতে তার চোখে ঘুম নামে প্রতি রাতে। আজ আর তার চোখে ঘুম নেই। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি। সাথে তুমুল ঝড়। সে অর্জুনকে ফোন দেয়।

আমার আম খাওয়ার খুব শখ হয়েছে, ঝড়ের আম।

এমন তুমুল বৃষ্টিতে কেমন করে আম কুড়াতে যাবো, তাছাড়া সকাল থেকে একটু জ্বর জ্বর ভাব।

দেখো, ন্যাকামো রাখো, প্রেম করবা আর প্রেমিকারে আম খাওয়াতে পারবা না।

দমক শুনে বেছারা ঝড়ের রাতে আম কুড়াতে বের হয়। আপনারা ভাববেন না সেই ঝড়ের রাতটা ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক রাত্রির গল্পের ঝড়ের রাতের মতো রোমান্টিক কিংবা মামার বাড়ির ঝড়ের দিনে আম কুড়ানো ছড়ার মতো সুখ। ঝড়টা ছিল আসলেই ঝড়।

সকাল হয়ে গেলো। অর্জুন চৌধুরীর আর কোনো খোঁজ নাই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর কোপাই নদীতে তার লাশ পাওয়া গেল।

সুহিনিকে এখন প্রায় দেখায় যায় বোলপুর রেলওয়ে স্টেশনে, প্রায় দেখা যায় প্রান্তিক রেলওয়ে স্টেশনে, মাঝেমাঝে ময়ূরাক্ষী নদীর আশপাশের এলাকায়ও দেখা যায়। তার মুখে এখনো সেই ডায়লগ, তবে একটু চেঞ্জ হয়েছে,

"প্রেম করবা আর মরবানা,
প্রেম করবা আবার বেঁচেও থাকবা,
ইশ আমার প্রেমিকরে ..... "

সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭

রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭

আমার নারী

হলুদ শাড়ি
কালো ব্লাউজ
ছোট্ট একটা কালো টিপ
গলায় মুক্তা ফুলের মালা
নীল রঙের সহজ স্যান্ডেল
চোখে নিরাপদ হাসি
চুল বাঁধনহারা
নো লিপস্টিক
নো কানফুল
সবুজ আর বেগুনি রঙের একুশটি চুড়ি
হাতে জলপাই রঙের ছোট্ট একটি ব্যাগ
বাম পায়ে হালকা সাদা রঙের একটি নূপুর

তারপর একটি নির্জন গোধূলি
একপাশে জল একপাশে বন

বুধবার, ১২ জুলাই, ২০১৭

মহিমার রিক্সা ড্রাইভার

আয়নাবাজি সিনেমার পর বাদশা ভাই সবচেয়ে জনপ্রিয়। না, বাদশা ভাই কোনো সিনেমার নাম না। বাদশা ভাইয়ের দোকান। ভাসমান দোকান। উদ্যানে তার ভাসমান খাবারের দোকান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থেকে শুরু করে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সবাই তার খাবারের ভক্ত।

সে যখন প্রথম উদ্যানে খাবার চালু করে আমি ছিলাম তার দোকানের প্রথম কাস্টমার। আমি তার খাবার খেয়ে বলেছিলাম আপনি তো একদিন অনেক জনপ্রিয় হয়ে যাবেন, আমার কথা কিন্তু মনে রাখবেন। সে একটি বিনয়ের হাসি দিয়েছিল। আজকেও বাদশা ভাই আর তার বউয়ের আচরনে বিনয় আছে কিন্তু প্রথম কাস্টমার হিসাবে আমার কোনো আলগা সুবিধা নাই।

বারোটার মধ্যে তারা উদ্যানে চলে আসে। প্রায় চারটা পর্যন্ত তাদের খাবার চলে। আজকে আসতে একটু লেইট হচ্ছে। একটু বলতে প্রায় দেড় ঘন্টা। সবাই খাবার খেতে আসে কিন্তু খাবার তো আসেনি। অপেক্ষা করছে। বৃষ্টিও পড়ছে। ছাতা নিয়ে অপেক্ষা করছে। ভালো কিছুর জন্য মানুষ অপেক্ষা করতে পারে এখনো। বিষয়টা পজেটিভ। আমিও অপেক্ষা করছি। ভাত পাতানো টেবিলে রাখা। তরকারি বাদশা ভাই আর তার বউ বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে আসে। আমি টেবিলের পাশে দাঁড়ানো।

তিনজন মেয়ে আসে। একজন খুব সুন্দর। গল্প করার মতো সুন্দর। হুমায়ূন থাকলে বলত " দাদা এ মেয়েটা আপনার সাথে খুব মানাবে "। হুমায়ূনের ধারনা শহরের সব সুন্দর মেয়েরা আমার সাথে মানাবে বেশ। আর ক্যাম্পাসে সুন্দর মেয়ে দেখলেই তুহিনের বক্তব্য " রেজা, এই মেয়েটা তর জন্য পার্ফেক্ট, ক্যাম্পাসে তর প্রেম করতেই হবে, আমি দেখতে চাই "। আমি দুজনের কথা শুনেই মৃদু মৃদু হাসি ....

বলছিলাম তিনজনের মধ্যে একজন খুব সুন্দর। আমি প্রায় তিন মিনিট লুকানো চোখে তাকে দেখছি। আমার মধ্যে অবশ্যই সিভিক সেন্স আছে। মেয়েটি আস্তে আস্তে আমার কাছে আসে। আমার হার্টবিট একটু একটু বাড়তে আরম্ভ করে, আমার প্রায় আধ হাত কাছে আসে, কাছে এসে বলে
"আপনাদের খাবার কখন চালু হবে?"

আমি কী বলবো কিছু বুঝতে পারছি না,  কী বলেছি মনে নেই, তবে কিছু একটা বলেছি নিশ্চয়। মেয়েটি আমাকে দোকানদার ভাবতে পারলো!

মেয়ে তিনজন আস্তে আস্তে অন্য কোনো খাবারের দোকানের দিকে চলে যায়। তাদের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে আমার জীবনে আরেক জন নারীর কথা মনে পড়ে ....

বাড়ি যাবো। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের বাইরে রিক্সার সামনে দাঁড়ানো। রিক্সাওয়ালা গ্যাছে টাকা ভাঙতি আনতে। বাড়ি যাওয়ার সময় প্রায় আমার সাথে ব্যাগট্যাগ কিছু থাকে না। দাঁড়িয়ে আছি। আমার পাশেই গাড়ি থেকে এক ড্রেসিং গার্ল নামে। মুখ হা করে রাখার মতো সুন্দর।আমি অবশ্যই মুখ হা করে রাখিনি। মেয়েটি আমাকে ডাক দিল। গেলাম।

আমার ব্যাগ দুটি ট্রেনে নিয়ে চলো।

জ্বি আফা ( মনে মনে বেশ আনন্দ পেলাম)।

সুন্দরী সামনে সামনে যাচ্ছে, আর আমি তার পেছনে পেছনে। আমার জীবনে আমি এতো ভারী বোঝা বহন করি নাই। ট্রেনে তাকে তুলে দিলাম। আমাকে সে পাঁচ শত টাকা দিল।

আফা একশ দিলেই অইবো।
আরে নাও পাঁচ শত টাকাই নাও।

পাঁচ শত টাকাই হাতে নিলাম। রিক্সাওয়ালা পাঁচশত টাকার ভাঙতি নিয়ে এসে হয়তো আমাকে না পেয়ে চলে গ্যাছে হয়তো আমাকে টাকা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
কিন্তু আমার আর তার কাছে যাওয়ার সময় নেই। কারন ট্রেন কিছুক্ষনের মধ্যে ছেড়ে দিবে।

সিগারেট খাওয়া আমার অভ্যাস না, তারপর একটি সিগারেট কিনলাম। মালবরো এ্যাডভান্স। নিকোটিন পয়েন্ট টু পার্সেন্ট। স্টেশনের এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত হাঁটাচলা করলাম কিছুক্ষন। ট্রেন গার্ডকে টিকেট দেখালাম। সে আমাকে আমার কামড়া দেখালো। এসি গ ষোল নাম্বার সিট।

ও মাই গড কামড়ায় সেই মেয়েটি! মেয়ে আমাকে দেখে অবাক! ভাবলাম মেয়েটিকে অবাক করানো যাবে না। বিভিন্ন ধরনের গল্প শুরু করলাম তার সাথে। আমার গল্প শুনে মেয়েটি বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় আমি একজন রিক্সাচালক, ঢাকা শহরে রিক্সা চালাই।

আমি আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে নেমে যাই। মেয়েটি আমার মোবাইল নাম্বার  নিয়ে যায় এবং বলে " আমি তোমাকে ফোন দিবো, তোমার রিক্সা করে ঢাকা শহরে ঘুরবো।"

আমি বিশ্বাস করিনি মহিমা চৌধুরী আমাকে ফোন দিবে। মহিমা চৌধুরী সত্যিই আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমেরিকা থেকে বছরে একবার সে বাংলাদেশে আসে এবং আমাকে ফোন দেয়। কোনো এক ছুটির দিনে সে আমার রিক্সা করে সমস্ত ঢাকা শহর ঘুরে।

একদিনের জন্য আমি রিক্সা ভাড়া করি, মহিমার রিক্সা ড্রাইভার হয়ে সমস্ত ঢাকা শহর ঘুরি ....

মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০১৭

0

চিঠি এলে ফোন দিও

হলুদ শাড়ি

হলুদ শাড়িতে তোমাকে কেমন লাগবে ভাবতে ভাবতে সূর্যটা হলুদ হয়ে গেল 

যাওয়া হল না আর

মাখো মাখো বৃষ্টি
আকাশের মতো চোখের ভেতর নিয়ে আসে অসীম আকাশ

কাঁঠালপাতার ঘরে যৌবন সুখ-- একবার চোখ মেলে আবার ঘুমায় আবার চোখ মেলে তাকায় প্রিয়তমা নর্তকীর কেশব ডানায়

জানালা খুলে বসে আছে নির্জন চোখ-- কার রুমে যেন অ্যালকোহলের কড়া গন্ধ

এমন দিনে
এমন দিনে

সব কাজ ভুলে তার পাশে একচ্ছত্র চুমু মানে নেশার কাল
জীবনের সুখ এতটুকু
এ সুখ মলিন হতে দেয়না আপনার সুর-- গভীর থেকে গভীরে আয়তক্ষেত্র থেকে বহুতল ভবন

বৃষ্টিস্নাত বাতাস জমা থাকে গোপন ঘরে নীরব চোখের একদফা আয়নায়-- চুলের ঘ্রানে ঘুম ভেঙ্গে যায় মধুর রাত। সন্ধ্যা মালতীর মতো তার বুকে তখন সন্ধ্যা নামে

বৃষ্টি চলতে থাকে একটানা
ভেতরে
বাইরে কেবল সাপরেখার বিদ্যুৎ খেলা

খেলা শেষে মনের আলপথে ঘাম জমা পড়ে-- কার সাথে যেন জমা ছিল কিছু কথা
সে কথা আর এল না
হল না যাওয়া তার
হল না যাওয়া আর

রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭

আইনে

রাষ্ট্র মনে করে তার প্রত্যেকটি জনগন আইন সম্পর্কে সচেতন।

জনগন মনে করে আইন মানে পুলিশ, আইন মানে এডভোকেট, আইন মানে কোর্টকাছারি।

পুলিশ মনে করে আইন মানে টাকা, এডভোকেট মনে করে আইন মানে ধনাঢ্য ব্যক্তি,কোর্টকাছারি মনে করে আইন মানে দিবসের পর দিবস। 

কাঁটা র বাগান

চোখ বন্ধ করে হাঁটতে গেলে পায়ে কাঁটা লাগে, চোখ খোলা রেখে হাঁটতে গেলে চোখে কাঁটা লাগে। পৃথিবী কাঁটার বাগান। 

1007

মুগ্ধতার বয়স চোখের চেয়ে ছোট 

77

আমার তো কোনো ইশ্বর নাই
ইশ্বর পেয়েছি
ইশ্বর তো দূরেই থাকে, তাই না? 

শনিবার, ৮ জুলাই, ২০১৭

শেখ মুজিবুর রহমান

শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি যখন ছাত্র তখন কোনো একদিন অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে বহিষ্কার করল। তাঁর জীবন সেই দিনই থেমে যেতে পারতো। না, থামে নি। একটি বহিষ্কার মাথায় নিয়েও তিনি হয়ে ওঠলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

আমার একটি কথা খুব জানতে ইচ্ছে করে-- এখন কী অনিয়ম নাই! অনিয়ম থাকলে কোনো নেতা বহিষ্কার হয় না কেন!? 

321

আমার থেকে আমার ছায়ার দূরত্ব এক পৃথিবী

শুক্রবার, ৭ জুলাই, ২০১৭

কান্দে রাধে

যমুনার তীরে বসে কান্দে রাধা
মথুরার রাজা হলো কৃষ্ণ বেটা
বৃন্দাবন পথে স্মৃতিরা হাসে
কদমের ঢালে ঢালে কৃষ্ণ নাচে
শ্রীমতি রাধামন ক্যামনে বাঁচে ক্যামনে বাঁচে।।

কৃষ্ণ ভুলে গ্যাছে নীল শাড়ি জল
ভুলে গ্যাছে  বৃন্দার তমালের তল
ভুলে গ্যাছে কৃষ্ণ আপনার পন
শ্রীমতি রাধামন অনল সমন।।

রাজার রাজঘরে অনাবিল সুখ
রাধার মনঘরে বিরহের সুর
কৃষ্ণ তুমি আসো রাধার ঘরে
রাধার রাজা হয়ে বাঁচাও তারে।।

অসহায়

শেষ পর্যন্ত নিজেকে বাঁশি ভাবলে আমি যেন বাজাই
আমি যে মথুরার রাজা অসহায় কানাই 

বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০১৭

প্রশ্নরাজিতে

তোমাকে একটি প্রশ্ন করতে চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে একটি উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলে, তুমি আমাকে একটি প্রশ্ন করতে চেয়েছিলে, আমি তোমাকে একটি উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।

কেমন করে যেন আমাদের প্রশ্নরা আমাদের অজান্তে উত্তর হয়ে বসে আছে!  

অনেক অনেকের মতো

না হয় রাজাকে বন্দী করলেন, দাবাঘরের বাইরেও জীবন আছে।

পৃথিবী থেকে দেখা যায় চাঁদের পাশে ছোট্ট তারা, তারার দেশে গিয়ে দেখুন তারার পাশে ছোট্ট চাঁদ।

কান থাকে সমাজকে নিয়ে, চোখ থাকে হৃদয়কে নিয়ে।

যা বলতে পারো না তাই তুমি। 

মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০১৭

শিরদাঁড়া

আম্মা ছোট কালে আমাকে  টাইফয়েডের টিকা দিয়েছিলেন যেন ছেলে তার সুস্থ থাকে কিন্তু মেরুদন্ড শক্ত হওয়ার টিকা দেননি, দিলে শিরদাঁড়া আরও শক্ত হতো।

আপনাদের সন্তানদের অবশ্যই শিরদাঁড়া যাতে শক্তিশালী থাকে সেজন্য টিকা দিবেন।

বড় প্রতিষ্ঠানে সন্তান ভর্তি হলেই ভাববেন না আপনার সন্তান বড় মানুষ হবে।

প্রতিষ্ঠান আপনার সন্তানকে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মানুষ করে তুলবে, বর্নের সাথে বর্নের মিলনে কেমন করে শব্দ তৈরি করতে হবে তা শেখাবে কিন্তু কখনো শব্দ ভেতরে যে শক্তি আছে, শব্দশক্তি অর্জনের মধ্য দিয়ে যে চেতনার মানুষ হওয়া যায় তা শেখানোর ভার প্রতিষ্ঠান নিবে না।

তাই আপনাকে হতে হবে টমির (টমাস আলভা এডিসন) মা যে মা জানে প্রত্যেকটি সন্তানের ভেতর রয়েছে অসীম সম্ভাবনা।

বিষহরী

কেমন করে যেন রাজনীতির ঘরে ঢুকে গেল সাপ আর প্রজার ঘরে বিষ। সাপ বিষহীন, বিষ সাপহীন।

সোমবার, ৩ জুলাই, ২০১৭

:

শরীর নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ছায়ার পথে হেঁটে যাই 

রবিবার, ২ জুলাই, ২০১৭

ই ছা ম তি

ইছামতি,
এই মুহূর্তে তুমি কী করছো?
আমি?
আমি আমার দিকে তাকিয়ে আছি। যতবার আমার দিকে তাকাই ততবার তোমার কথা মনে পড়ে। মানুষ শব্দটি আজকাল অ্যাবস্ট্রাক্ট মনে হয়। অথবা মানুষ একটা পুতুল যে নাচে যখন নাচানো হয়। কে নাচায় তা আমি জানি না। আবার এইও মনে হয়, যে পুতুল নাচে সে তো কোনোদিন বলতে পারে না যে সে নাচে কিংবা তাকে নাচানো হচ্ছে। আমি কেন বলতে পারি?

পৃথিবীর অনেকগুলো বছর অতিক্রম করে ফেললাম। আজও বুঝলাম না আমার পৃথিবীর মানে কী! খেলে বেঁচে থাকি না খেলে মারা যাই।খাওয়ার অভিধানে আমরা মানুষ। কী নিষ্ঠুর আমাদের অভিধান! আমার খাওয়া মানে তো অন্য কারো মৃত্যু, তাই না?

জানো ইছামতি, মাংস জাতীয় খাবার খেতে আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগে,আবার ভাবি সবজিও তো একপ্রকার মাংস। কিছু না খেয়ে যদি বেঁচে থাকতে পারতাম তাহলে নিজেকে অন্য প্রানির চেয়ে আলাদা মনে করতে পারতাম। একটি বাঘ শিকারে বের হয় আমিও বের হই, বাঘের কোনো ব্যাংক নেই আমার ব্যাংক আছে অর্থাৎ আমি ভোগের জায়গায় শক্তিশালী, অনেক বেশি শক্তিশালী, অনেক বেশি নিশ্চয়তার দরকার হয় আমার। আমাদের গুদামঘরে প্রতিদিন জমা পড়ে টন টন নিষ্ঠুরতা। প্রয়োজনের বাইরে আমরা নিষ্ঠুর হতে পারি বিধায় আমরা মানুষ, অনেকে বলে আশরাফুল মাখলুকাত!

ইছামতি,
তোমাকেও আজকাল অনেক বেশি নিষ্ঠুর মনে হয়। প্রেমের চোখ যে নেগেটিভ কিছু দেখার ক্ষমতা রাখে না তা ত তুমি ভালো করেই জানো। তোমার জানার আর মানার মধ্যে যে বিস্তর ফারাক আমার চেয়ে অন্তত ভালো কেউ জানে না। অনেক কিছু জেনে কিছু হয় না, পথবিভ্রম তৈরি হয় মাত্র। একটা নিমগাছ দেখছি বোকার মতো নির্বাক দাঁড়িয়ে থেকে অক্সিজেন বিতরন করে যাচ্ছে। পৃথিবী মানুষকে বোকা হতে দেয় না। মানুষের কাছে বোকার চেয়ে বক্র শব্দটি অনেক দামি। যা কিছু দামি তা কিছুর চাহিদা বেশি। বোকা বোকা আচরন করি বিধায় অনেক বেশি সস্তা হয়ে গেছি আজকাল। কিন্তু একটি কথা জানো তো, সস্তাও জীবনচক্রের স্রোতে অনেক দামি হয়ে যায়। তখন কী প্রতিশোধ নেয়ার পালা আসবে? অবশ্যই না। প্রতিশোধ বলে কোনো শব্দ আমার কাছে জমা থাকে না। কত শব্দ কানের দেয়ালে আটকে যায়।

ইছামতি,
একটি সত্যের মুখোমুখি হবে তুমি একদিন। আমাদের আম্মা আব্বা সেই সত্যটির মুখোমুখি হয়েছিলেন বলে আজকে আমরা পৃথিবীতে। সেই কষ্টের মিষ্টতার জায়গায় আমাকে খুব করে উপলব্ধি করতেই হবে তোমাকে। কেন জানো? চরম উত্তেজনার জোয়ারে কয়েকটা দাগ আঁচড় দুজনকে দূরে সরাতে পারে না। উত্তেজনা শেষ হয়ে গেলে দাগগুলো খুব বড় করে চোখে আসে কিন্তু মনে আসে না।

ইছামতি,
তোমার মন বলে কী কিছু আছে যেখানে অভিমান বড় বড় পাহাড়ের মতো দেখায় যা আমার মতো মানুষকে জয় করতে হয় জীবনকে বাজি রেখে? জীবন তো একটাই, আসো না  ঘাসের দেশে সবুজ হয়ে বাঁচি।

এই মুহূর্তে তুমি কী করছো খুব জানতে ইচ্ছে করে...

~

তুমি তুড়ি দিলে আমি উড়ি, তবেই না আমার নাম হয়েছে ঘুড়ি