বুধবার, ২৪ মে, ২০১৭

স্বাধীনতা শব্দটির মানে জানি

গল্পটা বলা যেতে পারে। গল্পটা অনেকটা ধূসর রঙের, ধূসর রং কেমন করে লাল রং, লাল রং কেমন করে সবুজ রং মানে পৃথিবী হয়ে ওঠে গল্পটা অনেকটা তেমন।

তাহলে বলছি।

আমি তখন গ্রামে থাকি। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। স্বাধীনতার অনেক গল্প শুনি। কিন্তু স্বাধীনতার মানেটা বুঝে ওঠতে পারি না। স্বাধীনতার মানে যখন বুঝি না গল্পটা তখনকার।

পিয়ারা গাছের নিচে সাবান রাখা। সাবানটা জালি দিয়ে মোড়ানো। জালি মানে একধরনের চিকন জাল যা দিয়ে গ্রামের মানুষ শরীর ঘসে ঘসে ময়লা সাফ করে।

সাবানের প্রতি কাকের এক বিশাল আকর্ষন রয়েছে। বাঙালি সমাজে যেমন খিচুড়ি প্রিয় কাক সমাজে তেমনি সাবান প্রিয়। এক ছোঁ  দিয়ে কাক সাবানটিকে গাছের ঢালে নিয়ে গেল। নিয়ে খুব মজা করে সাবান খাচ্ছে তো খাচ্ছে। জালি প্রথমে কাকের ঠোঁট দখল করল, তারপর মাথার পুরোভাগ। এবার কাক আটকে গেলো! কাকের চিল্লানি দেখে কে!

কাকের আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সবাই চলে আসছে। সব কাক চিল্লাছছে।

মানুষের বিপদের সময় সব মানুষ কান্নাকাটি করে না। কোনো কোনো মানুষ  নিশ্চুপ থাকে। নিশ্চুপ মানুষ কান্নারত মানুষের মাথায় হাত বুলায় আর সান্ত্বনার বানী দিয়ে থাকে, "কান্নাকাটি করে লাভ কী, আল্লাকে ডাহ মিয়ারা আল্লারে ডাহ, আল্লা অসাধ্যকে সাধ্য করতে পারে, আল্লা পাহাড়কে দরিয়া বানায়, দরিয়াকে বানায় পাহাড়।"

কাকেরা মিলেমিশে একসাথে কান্নাকাটি করে। কেউ একটুর জন্য কান্নাকাটি থামালে সিনিয়র কাক অত্যন্ত শক্তিশালী উপায়ে ফাফর দেয়, ফাফর শুনে কাকটি আরও কর্কশ সুরে কান্নাকাটি শুরু করে।

কাকদের কান্নাকাটি থামছে না, বাড়ছে এবং বাড়ছে।

আমার খুব মায়া হলো ....

গ্রামে আমার এক শক্তিশালী টিম ছিল। আম চুরি, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার থেকে মধুমাসে জাম পারা, কোহিনূর,মেঘনা সিনেমা হলে সিনেমা দেখা, ভূত দেখার অভিযান চালানো-- এমন অনেক কাজে আমরা মিশন চালাই।

সবাইকে ডাকলাম।

প্রথমে কয়েকজন গাছে ওঠলো। কাক তো আরও বেশি রেগে গেল। কাক ভাবল আমাদের বিপদের দিনে আমাদের শত্রুরা কেন আসবে, নিশ্চয় আরও বড় কোনো বিপদে আমরা পরতে যাচ্ছি।

কাক মানুষকে যে পরিমানে অবিশ্বাস করে অন্য কোনো প্রানিকে সেই পরিমানে অবিশ্বাস করে না। গ্রামের মানুষও কাককে এক প্রকার ভূত মনে করে। আর সিনেমা যারা বানায় তারা কাককে অমঙ্গললের প্রতীক হিসাবে মনতাজ করে থাকে।

কাকের আক্রমনের মুখে আমাদের প্রথম মিশন ব্যর্থ হলো।

তারপর আমাদের দুমাবাহিনীকে অভিযানে পাঠালাম। পাঠকাঠির মাথায় বন আর কেরোসিন দিয়ে দুমা তৈরি করলাম। আমাদের গ্রামীন দুমাসেলের মুখে কাক সমাজ টিকতে পারে নি।

 অপারেশন সাকসেস্ফুল।

কাকটি উদ্ধার করা হলো।

আস্তে আস্তে জালিমুক্ত করা হলো কাকটিকে। জালিমুক্ত হয়ে কাকটি আকাশে বিশাল এক উড়াল দিল। বিশাল এক উড়াল। কাকটির প্রত্যেক পাখায় তখন আমি নতুন জীবনের আনন্দ দেখি, প্রত্যেক উড়ালে উড়ালে  আমি স্বাধীন এক তেজ দেখি।

তখন থেকে আমি স্বাধীনতা শব্দটির মানে জানি ....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন