চিড়িয়াখানার পাশেই বোটানিকেল গার্ডেন। খুব সুন্দর। প্রানি দেখা হয়ে গেলে উদ্ভিদ দেখা। খুবই সুন্দর। তবে অনেকেই চিড়িয়াখানা দেখার পর আর বোটানিকেল গার্ডেনে যায় না। ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বোটানিকেল গার্ডেন কিন্তু সমস্ত ক্লান্তি দূর করার মতো ক্ষমতা রাখে!
চিড়িয়াখানায় আমার ছোট্ট কালে যাওয়ার কথা কিন্তু যাওয়া হয় নাই। যাওয়া যখন হলো তখন জীবনে আর ছোট কাল নেই, বিচার করার মানসিকতা চলে আসে।
শিশুরা সুখী কারন তারা বিচার করার মানসিকতা নিয়ে কারো সাথে মিশে না, তারা আনন্দ পাওয়ার বিনিময়ে আনন্দ বিনিয়োগ করে। তারা ভালোবাসতে গিয়ে কেঁদে ফেলে, তারা কাঁদতে গিয়ে ভালোবেসে ফেলে। ফলে জীবন মানে শিশুদের কাছে মাছ ধরা নয়, মাছ দেখা।
চিড়িয়াখানায় বাঘের মাংস খাওয়া দেখলাম, দেখলাম সাপের ঘুম, দেখলাম বিরহী বানরকে। সারস ক্রেনকেও দেখলাম। সারস সবুজ ডিম দেয়, বাংলাদেশে সারস পাখি সবচেয়ে বড় পাখি। আমরা যারা মানুষ সম্প্রদায়ের লোক তারা ময়ূরের মেখম মেলাকে পজেটিভভাবে দেখি কিন্তু একজন ময়ূর জানে পেখম মেলা কোনো পজেটিভ বিষয় নহে। পেখম মেলা আর ফনা তুলা একই কথা। সাপ যখন ফনা তুলে তখন সাপের গলায় চমৎকার এক ফুলচিহ্ন দেখা যায়, ময়ূরেরও তাই। প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর জন্য ময়ূর তার পেখম মেলে। পেখম মেলা ময়ূরের শরীরে তখন শুকনো সরিষা গাছের মতো ঝনঝন আওয়াজ ওঠে। আওয়াজ + রঙের খেলা। চমৎকার, চমৎকার সেই খেলা।
ধনেশ পাখি দেখলাম। আল মাহমুদের পানকৌড়ির রক্ত গল্পটির কথা মনে পড়ে। ধনেশ পাখি তার ঠোঁটের জন্য পপুলার। ঠোঁট বড় হওয়াতে চোখ তার খুবই ছোট। কাম পাখি ভারতবর্ষের পাখি না, তারপরও তা মিরপুর চিড়িয়াখানায় রয়েছে। হরিনকে দেখে নতুন এক উপলব্ধি মাথায় আসে। হরিনের মাথায় শিং মানে শক্ত জিনিস। আমাদের মেয়েদের মাথায় শিং নেই কিন্তু তামার কেউ কেউ সিলবারের কেউ কেউ পিতলের কাঁটা ব্যবহার করে।
দুর্বল প্রানিরা (দুর্বলতা ফিলিং এক মানসিক ব্যাপার) মাথায় প্রতিরক্ষা রাখে কেন?
বোটানিকেল গার্ডেনের পর্যবেক্ষন কেন্দ্রের পাশেই চায়ের দোকান। চায়ের দোকানের পাশে মসজিদ। দ্বীপ যেমন আনন্দ জাগানিয়া তেমনি এই চায়ের দোকানটি আনন্দ বিহার মনের একমাত্র অধিবাসী। চায়ের দোকানের আরেকটু সামনে গেলেই সুটিং স্পট। স্পটটি সুন্দর। খুবই সুন্দর।
বোটানিকেল গার্ডেনে একমাত্র রিকসা চালক সাঈদ ভাই। তার এক ছেলে তিন মেয়ে। ছেলের নাম রবি, বড় মেয়ের নাম বর্ষা, মেঝ মেয়ের নাম বৃষ্টি, ছোটজনের নাম বাগান। প্রত্যেকের নামের পেছনে শানেনযুল আছে। সাঈদ ভাইয়ের বড় মেয়ে যখন জন্মে তখন টইটম্বুর বর্ষা, বৃষ্টি হচ্ছে কয়েকদিন ধরে একটানা এমন সময় বৃষ্টি জন্মগ্রহন করে, বোটানিকেল গার্ডেনে জন্মে ছোট মেয়েটি, তাই তার নাম বাগান।
ছেলের নাম রবি কেন? কারন সে রবিবারের জন্মগ্রহন করেছে।
সাঈদ ভাইয়ের বউ এখানে পানি বিক্রি করে। সাঈদ ভাই আর সন্তান নিবে না, অপারেশন করিয়েছে। অপারেশন সে বউয়ের করায়নি নিজের করিয়েছে, বিনিময়ে সে পেয়েছে পনেরো শত টাকা।
সাঈদ ভাইকে আমি একটি আতরের বোতল উপহার দিয়েছি। সাঈদ ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার প্রিয় জিনিস কী? সে কোনো প্রকার দ্বিধাবোধ না করে বলে দিল সুগন্ধি।
ইন্ডিয়া যাওয়ার আগে বাংলা বিভাগের অফিস সহকারী সাঈদ ভাইয়ের সাথে বিভাগে দেখা। ভাইকে বললাম আপনার জন্য ইন্ডিয়া থেকে কী আনবো ... তিনিও কোনো প্রকার দ্বিধাবোধ না করে বলেছিলেন সুগন্ধি।
ইন্ডিয়া গেলাম, সুগন্ধি কিনলাম। কিন্তু বাংলাদেশে এসে আর সুগন্ধিটা পাই না। অনেক খুঁজেও পাইনি। ইতিমধ্যে সাঈদ ভাই চলে গেলেন পরকালে!
চিড়িয়াখানার টিকেট যখন আমি থ্রি কোয়ার্টারের নিচের পকেটে রাখতে গেলাম তখনই দেখি সেই সুগন্ধি। হাতে নিয়ে অনেকক্ষন চেয়ে রইলাম, সাঈদ ভাইয়ের মুখটা বার বার ভেসে ওঠলো।
কিন্তু রহস্যটা কেমন উদ্ভুত। সাঈদ ভাইকে সুগন্ধি দিতে পারেনি কিন্তু সাঈদ ভাইকেই দিয়েছি। বোটানিকেল গার্ডেনের সাঈদ ভাই অর্কিড গাছ বেশ ভালোবাসে, আমাদের সাঈদ ভাইও অর্কিড বেশ পছন্দ করতেন।
বোটানিকেল গার্ডেনের সাঈদ ভাইয়ের বুকেও মাঝেমধ্যে প্রচন্ড ব্যথা ওঠে, আমাদের সাঈদ ভাই বুকে ব্যথা নিয়ে পৃথিবী থেকে চলেই গেলেন। রহস্য আসলেই রহস্য। রহস্যের পৃথিবীতে আমরা আগন্তুক মাত্র!
চিড়িয়াখানায় আমার ছোট্ট কালে যাওয়ার কথা কিন্তু যাওয়া হয় নাই। যাওয়া যখন হলো তখন জীবনে আর ছোট কাল নেই, বিচার করার মানসিকতা চলে আসে।
শিশুরা সুখী কারন তারা বিচার করার মানসিকতা নিয়ে কারো সাথে মিশে না, তারা আনন্দ পাওয়ার বিনিময়ে আনন্দ বিনিয়োগ করে। তারা ভালোবাসতে গিয়ে কেঁদে ফেলে, তারা কাঁদতে গিয়ে ভালোবেসে ফেলে। ফলে জীবন মানে শিশুদের কাছে মাছ ধরা নয়, মাছ দেখা।
চিড়িয়াখানায় বাঘের মাংস খাওয়া দেখলাম, দেখলাম সাপের ঘুম, দেখলাম বিরহী বানরকে। সারস ক্রেনকেও দেখলাম। সারস সবুজ ডিম দেয়, বাংলাদেশে সারস পাখি সবচেয়ে বড় পাখি। আমরা যারা মানুষ সম্প্রদায়ের লোক তারা ময়ূরের মেখম মেলাকে পজেটিভভাবে দেখি কিন্তু একজন ময়ূর জানে পেখম মেলা কোনো পজেটিভ বিষয় নহে। পেখম মেলা আর ফনা তুলা একই কথা। সাপ যখন ফনা তুলে তখন সাপের গলায় চমৎকার এক ফুলচিহ্ন দেখা যায়, ময়ূরেরও তাই। প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর জন্য ময়ূর তার পেখম মেলে। পেখম মেলা ময়ূরের শরীরে তখন শুকনো সরিষা গাছের মতো ঝনঝন আওয়াজ ওঠে। আওয়াজ + রঙের খেলা। চমৎকার, চমৎকার সেই খেলা।
ধনেশ পাখি দেখলাম। আল মাহমুদের পানকৌড়ির রক্ত গল্পটির কথা মনে পড়ে। ধনেশ পাখি তার ঠোঁটের জন্য পপুলার। ঠোঁট বড় হওয়াতে চোখ তার খুবই ছোট। কাম পাখি ভারতবর্ষের পাখি না, তারপরও তা মিরপুর চিড়িয়াখানায় রয়েছে। হরিনকে দেখে নতুন এক উপলব্ধি মাথায় আসে। হরিনের মাথায় শিং মানে শক্ত জিনিস। আমাদের মেয়েদের মাথায় শিং নেই কিন্তু তামার কেউ কেউ সিলবারের কেউ কেউ পিতলের কাঁটা ব্যবহার করে।
দুর্বল প্রানিরা (দুর্বলতা ফিলিং এক মানসিক ব্যাপার) মাথায় প্রতিরক্ষা রাখে কেন?
বোটানিকেল গার্ডেনের পর্যবেক্ষন কেন্দ্রের পাশেই চায়ের দোকান। চায়ের দোকানের পাশে মসজিদ। দ্বীপ যেমন আনন্দ জাগানিয়া তেমনি এই চায়ের দোকানটি আনন্দ বিহার মনের একমাত্র অধিবাসী। চায়ের দোকানের আরেকটু সামনে গেলেই সুটিং স্পট। স্পটটি সুন্দর। খুবই সুন্দর।
বোটানিকেল গার্ডেনে একমাত্র রিকসা চালক সাঈদ ভাই। তার এক ছেলে তিন মেয়ে। ছেলের নাম রবি, বড় মেয়ের নাম বর্ষা, মেঝ মেয়ের নাম বৃষ্টি, ছোটজনের নাম বাগান। প্রত্যেকের নামের পেছনে শানেনযুল আছে। সাঈদ ভাইয়ের বড় মেয়ে যখন জন্মে তখন টইটম্বুর বর্ষা, বৃষ্টি হচ্ছে কয়েকদিন ধরে একটানা এমন সময় বৃষ্টি জন্মগ্রহন করে, বোটানিকেল গার্ডেনে জন্মে ছোট মেয়েটি, তাই তার নাম বাগান।
ছেলের নাম রবি কেন? কারন সে রবিবারের জন্মগ্রহন করেছে।
সাঈদ ভাইয়ের বউ এখানে পানি বিক্রি করে। সাঈদ ভাই আর সন্তান নিবে না, অপারেশন করিয়েছে। অপারেশন সে বউয়ের করায়নি নিজের করিয়েছে, বিনিময়ে সে পেয়েছে পনেরো শত টাকা।
সাঈদ ভাইকে আমি একটি আতরের বোতল উপহার দিয়েছি। সাঈদ ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার প্রিয় জিনিস কী? সে কোনো প্রকার দ্বিধাবোধ না করে বলে দিল সুগন্ধি।
ইন্ডিয়া যাওয়ার আগে বাংলা বিভাগের অফিস সহকারী সাঈদ ভাইয়ের সাথে বিভাগে দেখা। ভাইকে বললাম আপনার জন্য ইন্ডিয়া থেকে কী আনবো ... তিনিও কোনো প্রকার দ্বিধাবোধ না করে বলেছিলেন সুগন্ধি।
ইন্ডিয়া গেলাম, সুগন্ধি কিনলাম। কিন্তু বাংলাদেশে এসে আর সুগন্ধিটা পাই না। অনেক খুঁজেও পাইনি। ইতিমধ্যে সাঈদ ভাই চলে গেলেন পরকালে!
চিড়িয়াখানার টিকেট যখন আমি থ্রি কোয়ার্টারের নিচের পকেটে রাখতে গেলাম তখনই দেখি সেই সুগন্ধি। হাতে নিয়ে অনেকক্ষন চেয়ে রইলাম, সাঈদ ভাইয়ের মুখটা বার বার ভেসে ওঠলো।
কিন্তু রহস্যটা কেমন উদ্ভুত। সাঈদ ভাইকে সুগন্ধি দিতে পারেনি কিন্তু সাঈদ ভাইকেই দিয়েছি। বোটানিকেল গার্ডেনের সাঈদ ভাই অর্কিড গাছ বেশ ভালোবাসে, আমাদের সাঈদ ভাইও অর্কিড বেশ পছন্দ করতেন।
বোটানিকেল গার্ডেনের সাঈদ ভাইয়ের বুকেও মাঝেমধ্যে প্রচন্ড ব্যথা ওঠে, আমাদের সাঈদ ভাই বুকে ব্যথা নিয়ে পৃথিবী থেকে চলেই গেলেন। রহস্য আসলেই রহস্য। রহস্যের পৃথিবীতে আমরা আগন্তুক মাত্র!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন