বলছিলাম তারিক আজিজ আমার উপরের সিটে নামাযও পড়ে আবার পাদও দেয়। বলিনি আরেকটি কথা। তারিক আজিজ বিসিএসের শিটও পড়ে। চাকরিটা তার পেতেই হবে। জানিনা বেলা নামে কেউ তার আছে কিনা যার কাছে চাকরি পেয়ে ফোন দিতে হবে-- "চাকরিটা আজ পেয়ে গেছি বেলা শুনছো।"
বেলা থাকুক আর না থাকুক তারিক আজিজের জন্য সময় বসে থাকে না। ভ্রমন হোক কিংবা বিয়ে বাড়ি হোক সাধারন জ্ঞান তার মুখস্থ করতেই হবে। সময় কারো জন্য বসে থাকে না। গ্রীন ভ্যালিতে আমরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ আর তারিক আজিজ শিট পড়ছে। বিসিএস ক্যাডার তার হতেই হবে। তারিক আজিজ যাতে ক্যাডার হতে পারে সেজন্যে আমাদের সবার প্রার্থনা অটুট থাকবে ইনশাল্লাহ।
ইসলামে আছে মুসাফিরের প্রার্থনা আল্লা কবুল করে। সফরে থাকলে মন একেবারে পবিত্র হয়ে আসে। আসল কথা গতির সাথে থাকলে মনে কখনো আবর্জনা জমতে পারে না। মুসাফির তো সেই যার মধ্যে যাবো যাবো একটা ভাব থাকে। যাব যাব ভাব যাওয়ার চেয়ে আনন্দের--
"মহতাজ যো মনজিল কা তো নাহি হ্যায় /একতরফা মেরা সফর /সফর খুব সরত হ্যা মনজিল সে ভি!"
ট্রেনজানালা জীবন্ত মনিটর। প্রকৃতি যে ডকুমেন্টারি তৈরি করে রেখেছে তা দেখায় সরাসরি। সরাসরি গতির কাছে গেলে ছোট হয়ে আসে অহংবোধ। ইন্ডিয়ান ট্রেন চলেও বেশ গতিতে। শুধু পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তার বুক চিড়ে যে টয় ট্রেন চলছিল তা টয় ট্রেনের মতো চলছিল বলা যায়। আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে নতুন জামাইয়ের হাঁটার মতো কিংবা চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের মতো।
ভ্রমন শুরুর দিন থেকে প্রায় পাঁচ দিন আমরা যানবাহনে ছিলাম। ইন্ডিয়ান রাস্তাঘাট ভালো। যোগাযোগের দিকে ইন্ডিয়ান সরকারের দৃষ্টি আরামদায়ক। কিন্তু...!
আগ্রা থেকে কলকাতা আসার সময় আমি এসি রুমে। এসি রুমে আমাদের সিট ছিল না। এসি রুমে যারা ছিলেন তাদের অনেকের সিট ক্যানসেল হওয়াতে আমাদের প্রমোশন হয়।ইন্ডিয়ান ট্রেনের এই সিস্টেমটা ভালো লেগেছে। টিকেট কেটে কেউ আসে নি। কোনো সমস্যা নেই। যার পেছনে আছে মানে নিচের ক্লাসে আছে তাদের প্রমোশন দিয়ে দাও। বেশ, হয়ে গেল।
এসি রুমের জানালায় ইন্ডিয়ান প্রকৃতি দেখছি। খুব ভালো লাগছে। ভোর হয়ে আসছে। লাল রঙের ডিমের মুখ দেখা যাচ্ছে পূর্ব দিকে। পৃথিবীর সব দেশেই পূর্ব দিক থেকে সূর্য দেখা যায়। এসিরুমগ্লাস আমার চশমাটার মতো-- সব কিছুকে সুন্দর দেখায়। সূর্য ততক্ষনে খুব ভালো করে জায়গা করে নিয়েছে। সব কিছু সুন্দর ও স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে। জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে আছি। দেখি। খুব স্পষ্ট করে দেখছি। পুটকি। মানুষের পুটকি। খোলা ময়দানে এক লোক আয়েস করে হাগু করছে। আরেকটু সামনে দেখি লাইন ধরে আড্ডা আড্ডা দিতে দিতে হাগু করছে। চিনারা আড্ডা দিতে দিতে খাবার খায়। আর তারা আড্ডা দিতে দিতে হাগু করে। ভালোই ত। আড্ডাটা হলো জীবনে আসল কথা।
আড্ডা জীবনের জন্য ভাতমাছের মতো জরুরী। তবে বাঙালি সমাজে একটি সমস্যা আছে-- ভাত মাছের চেয়ে আড্ডা গুরুত্বপূর্ন বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ফলে আড্ডা দেয়ার তেল ফুরিয়ে যায়, তেল ফুরিয়ে গেলে মানুষমিশিন অযথা গ্যাজর গ্যাজর করে।
আমাদের সাথে গ্যাজর গ্যাজর করার লোক কেউ নেই। সবাই ভেতরে ভেতরে অনেক কথা বলে কিন্তু বাইরে বাইরে খুব চুপচাপ। আমাদের মাঝে সবচেয়ে চুপচাপ আলমগীর, তারপর গিয়াস শামীম স্যার। বোলপুর থেকে হাওড়া যাওয়ার সময় স্যার জিন্সের পেন্ট পরেছেন। স্যারকে তখন চমৎকার লাগছিল। অবাকগনিতও করতে হয়েছে। কারন স্যার জিন্সের পেন্ট পরবেন আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারি না। স্যারকে তাঁর ব্যক্তিদর্শনের বাইরে কখনো কিছু করতে দেখিনি-- তিনি প্রতিনিয়ত নিজের ইচ্ছাদর্শকে প্রকাশ করে থাকেন কথায়, আচরনে, পোশাকে। এই ভ্রমনে স্যার আমাকে অনেকবার ধমক দিয়েছেন। স্যারের ধমক আমার কাছে খুব ভালো লাগে। স্যারের ধমক শুনে আমার মুখে অটোমেটিক হাসি চলে আসে। আমার আম্মা আমাকে ধমক দিয়ে আজ পর্যন্ত রাগাতে পারেন নি। আম্মার ধমক শুনে আমি হেসে দেই-- আম্মার তাতে বিশাল গর্ব " আমার হে কোনোদিন আমার লগে ছেত দেহাই নাই।"
আমি যে মাবাবার লগে রাগ দেখাই না তার একপ্রকার মানসিক কারন আছে। আমি মনে করি অভিভাবক যখন শাষন করতে পারেন তখন তারা মানসিকভাবে নিজেকে শক্তিশালী মনে করেন। একজন মানুষ মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকলে কোনো রোগব্যাধি সহজে আক্রমন করতে পারে না। অভিভাবক সুস্থ থাকুক এমন কামনা তো আমাদের সবার, তাই না?
ভ্রমনে কয়েকজন গ্যাজর গ্যাজর মানুষ না থাকলে ভ্রমন তেমন আনন্দের হয় না। ট্রেন কিন্তু গ্যাজর গ্যাজর করেই চলেছে। টয় ট্রেন তেমন গ্যাজর গ্যাজর করে না।
তবে টয় ট্রেন শাদা পোশাক পরিধান করে আনন্দ দিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে টয় ট্রেন বোরখাও পরে। বোরখা পরিধান করার জন্য ছেলেমেয়ে অর্থাৎ লিঙ্গজ্ঞান কোনো গুরুত্বপূর্ন বিষয় নহে। বোরখা ইসলামি পোষাক নহে, আরবি পোশাক। আরবে পুরুষদের বোরখা পরতে হয়।
মুজিব ভাই নামে আমগো এক বড় ভাই সৌদি আরব থাকেন। অনেক বছর পর পর সে দেশে আসে। তখন তার সব কাজ প্রায় আরবিময়। এমনকি বাংলা ভাষাও সে আরবির মতো নক্তা সমেত উচ্চারন করতে থাকে। একদিন দেখলাম সে তার ভাতিজার নাম ভুলে গ্যাছে, তাই তাকে ডাকছে ' ইয়া ভাতিজা ইয়া ভাতিজা'। ইয়া ভাতিজা তার পরবাসী ডাক শুনে বিশাল এক দৌঁড়। কারন আমাদের গ্রাম এলাকায় এক গোপন ধারনা আছে যে জ্বিন লম্বা হয় এবং আরবিতে কথা বলে।
আরেকটি কথা, দেশে এসে প্রথমে সে ঘরেও বোরখা পরে। কয়েকদিন যাওয়ার পর ঘরে বোরখা পরা বাদ দেয়। এখন বাইরে গেলে শুধু বোরখা পরে। কয়েকদিন এমন করে যায়। এখন শুধু সালাতের সময় বোরখা পরে যায়। কয়েকদিন এমন করে যায়। তারপর ঘটে আসল মানে রিয়েল ঘটনা-- লুঙ্গি ন্যাংটি দিয়ে কাম করতে নামে, আযান পড়ে, তার কাম শেষ হয় না, আর মাত্র অল্প সময় সালাতের জন্য বাকি, তাড়াতাড়ি করে মসজিদে যায়, শরীরে তখনো কাপড় পরিধান করেনি। তড়িঘড়ি করে সালাতে দাঁড়াচ্ছে আর কাপড় পরিধান করছে। এই হলো আমাদের মুজিব ভাই, মুজিব ভাইয়ের বোরখা রীতি।
তবে টয় ট্রেন যে নিয়ম নামক বোরখা পরিধান করে তা ভালোই লাগে। টয় ট্রেন আস্তে আস্তে চলে। মেট্রো রেল চলে টয় ট্রেনের তিনগুন গতিতে। কলকাতার মেট্রো রেল আর দিল্লীর মেট্রো রেলের মধ্যে বোরখাগত পার্থক্য আছে। শহুরে মেয়ে আর গ্রামীন মেয়ের বোরখাগত পার্থক্য। গ্রামীন মেয়ে বোরখা পরলে মনে হয় যেন ঝুপড়ি হেঁটে যাচ্ছে, শহুরে মেয়েকে বোরখায় একমাত্র অন্ধকারে একমাত্র মোমবাতি বলিয়া বোধ হয়।
তাজমহলে খুব সকাল সকাল আমাদের ঢুকার কথা। কিন্তু আমরা সকাল সকাল ঢুকতে পারবো না। আমরা আযান দিয়ে ঢুকতে পারবো না। ঢুকতে হবে চুপিচুপি। চোরের মতো। কারন আমরা বিদেশি হিসাবে ঢুকতে চাই না। আমরা ইন্ডিয়ান হিসাবে তাজমহলে ঢুকবো (এবার প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ এসেছে, কারন বাংলাদেশের অনেক লুন্ঠিত সম্পদ এই তাজমহল নির্মানে অবশ্যই ব্যবহার করা হয়েছে)।
ইন্ডিয়ান হিসাবে ঢুকলে টাকা কম। বিদেশি হিসাবে ঢুকলে পাঁচ শত রুপির উপরে। আমি একা সাধু হতে পারবো না এমন না, সাধু যারা আছেন তাদের আমলনামা আমার চেয়ে বেশ শক্তিশালী, তাই আমার আপাততঃ চুপ থাকা মানে স্রোতে তাল মেলানো মঙ্গলজনক নহে, উত্তম।
টিকেট চেকার আমার কাছে জানতে চাইনি আমি ইন্ডিয়ান কিনা, জানতে চাইলে সোজা বলে দিতাম আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। অনেকের কাছে জানতে চেয়েছে, তারা ফাঁকি দেয়ার চেষ্টাও করেছে কিন্তু ফাঁকি দিতে পারেনি।
আমরা যারা পাঁচ শত টাকার জন্য নিজের চরিত্র বিক্রি করতে পারি, আমাদের মানব ভাবনা যত সুন্দরই হোক পৃথিবীর কোনো কাজে আসবে না আমি নিশ্চিত। লালসালুর মজিদকে কিংবা পদ্মা নদীর মাঝির হোসেন মিয়াকে আমরা খুব নেগেটিভ চরিত্র হিসাবে উপস্থাপন করি কিন্তু সুযোগ পেলে আমরাও যে খুব বড় মানের মজিদ কিংবা হোসেন মিয়া হয়ে ওঠতে পারি তা প্রমানে সলাপে ধরা পড়ে। আরেফ আলীর তখন কিচ্ছু করার থাকে না-- জোছনা তখন তার মনে জীবন্ত লাশ, সুযোগ পেলে আমরা ভিখুর মতো সব কিছু আমার করে নিতে আমাদের বিন্দুমাত্র দ্বিধা হবে না। এই কারনেই একজন খাওয়ার কারনে মারা যায় অন্যজন না খেয়ে মারা যায়! প্রকৃতি কখনো বৈষম্য করে না, বৈষম্যের দেয়াল তৈরি করি আমরা, এই আমরা-- যারা ভালো ভালো ভালো কথা বলে পেটের দূষিত বাতাস কিছুটা হালকা করার চেষ্টা করি।
আবদুল হাফিজ চাচা এতো ভালো ভালো কথা বলেন না। কেবল নিজের কাজটি করে যান। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন, চাচা চাচি মিলে ফজরের সালাত কায়েম করেন। তারপর কোনোদিন ঘরে নাস্তা করেন কোনোদিন করেন না। তারপর বেরিয়ে পরেন তাজমহলের উদ্দেশ্যে।
হাফিজ চাচা তাজমহলে ছবি তুলেন। মানুষের ছবি। বিনিময়ে তিনি প্রতি জনের কাছ থেকে প্রতি ছবির জন্য বিশ টাকা নেন। তাঁর ছেলে মেয়ে দুজনই ইন্ডিয়ান সরকারের চাকর। খুব ভালো বেতনের চাকর। তারপরও চাচা কেন এখানে আসেন? অভ্যাস জাস্ট অভ্যাসের কারনে। অভ্যাসের বাইরেও আরেকটি কারন আছে। তা আমি খুব কষ্টে জানতে পেরেছি।
চাচা আমার চারটি ছবি তুলেন। আমার গরীব মোবাইল দিয়ে চাচার দুটি ছবি তুলি। চাচা খুব অবাক হয়েছেন। সাধারনত তিনি সবার ছবি তুলেন, আর আজকে কেউ তার ছবি তুলল, তাও আবার অত্যন্ত যত্ন করে।
বলছিলাম হাফিজ চাচা এখানে রোজ নিয়ম করে আসে একটি গোপন কারনকেও সামনে রেখে। যৌবনে এক নারীর ছবি তুলতে গিয়ে তার প্রেমে পড়েছিল যুবক হাফিজ। যমুনা নদীতে তখন নৌকা ছিল। নৌকাতে তারা অনেকটা সময় এক সাথে ভেসেছিল।
তখন মোবাইলের যুগ চালু হয়নি, চাচা ঠিকানা লিখে রাখে, ঠিকানা হারিয়ে যায়, সেই সাথে হারিয়ে যায় চাচার অবলা প্রেম। হাফিজ চাচার সেই প্রেমটাই ছিল একমাত্র, তাঁর জীবনে আর প্রেম আসেনি, সংসার এসেছে। সংসার আসতো না যদি না চাচা তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান না হতেন। চাচার বিশ্বাস তাঁর মধুমালা ঠিকই এখানে আরেকবার আসবে। তাই প্রতিদিন তিনি আশা নিয়ে আসেন, প্রতিদিনের শেষ সময় পর্যন্ত আশা রাখেন আজকে তার মধুমালার সাথে দেখা হবে। কিন্তু দেখা হয় না।
একটি দিন নিয়ম করে একটি রাতের সাথে মিলিত হচ্ছে, হাফিজ চাচার দীর্ঘশ্বাস কেবল দীর্ঘশ্বাসের সাথে মিলনের দিকে যায়-- দিন ফুরিয়ে যায় দিন ফুরিয়ে যায়, মন ফুরিয়ে যায় মন ফুরিয়ে যায় ....
দিন তখন ফুরিয়ে যাচ্ছে। দিন তখন আর কয়েক ঘন্টা বাকি যখন আমরা আগ্রার ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছি। খুব গরম এবং কম ঠান্ডা এমন সময় আমরা আগ্রায় পা রাখি। আগ্রার ভেতরে ঢুকে এক শাদা চামড়ার বিদেশি পরিবার দেখি। তাদের সাথে দুটি বাচ্চা। এক বাচ্চাকে সুন্দর খেলনা গাড়িতে বসিয়েছে, আরেক বাচ্চাকে নিজেদের দেহের সাথে রেখেছে। এক বাচ্চা গাড়িতে বসে আনন্দে আছে, আরেক বাচ্চা গাড়িতে বসা বাচ্চাকে মানে ভাই কিংবা বোনকে দেখে আনন্দে আছে। একটু পর পর বাচ্চাদের অবস্থান বদল হয়। ফলে বাচ্চাদের কান্নাকাটি করার সুযোগটা থাকেই না। আর আমাদের অভিভাবক যখন বাচ্চা নিয়ে কোথাও ঘুরতে যান, বাচ্চাও কান্দে অভিভাবকও কান্দে। বাচ্চা কান্দে স্বভাবে, অভিভাবক কান্দেন দুঃখে ( টাকা খরচ করে ঘুরতে যাওয়া বলে কথা)।
আগ্রার ভেতর একটি বিষয় দেখে খুব দুঃখ পেয়েছি। বাথটাব। বাথটাবটির উচ্চতা প্রায় বারো ফুট। এখানে মহারাজা স্নান করতেন। মহারাজ তার বাইজিদের সাথে সঙ্গমক্রিয়া শেষ করে এই বাথটাবে স্নান করতেন। বাথটাবটি তখন বিচিত্র ফুলজল দিয়ে সজ্জিত। ফুলের গন্ধ শরীরে মেখে মহারাজ তার সাংবিধানিক মানুষটির কাছে যেতেন।
এমন আরও অনেক কাজ তারা করতেন যা মানুষকে বঞ্চিত করার প্রাগৈতিহাসিক ফলাফল। মানুষ তখন মুখ খুলবার মতো সচেতন হয়ে ওঠেনি। মানুষ যাতে ঐক্যঘর না গড়তে পারে সে ব্যাপারে মহারাজাদের সতর্ক দৃষ্টি ছিল। মানসিক ঐক্য এটম বোমার চেয়ে শক্তিশালী।
আগ্রার ভেতরে একটি গ্রুপ দেখলাম চিনা অথবা জাপানিদের, তাদের হাঁটাচলা কর্মকান্ডে মানসিক ঐক্য স্পষ্ট। আর আমাদের সাতাশ জন সদস্যদের মধ্যে চল্লিশটা গ্রুপ। এই দ্বিধাবোধ গ্রুপিং মানসিকতার জন্য অবশ্যই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দায়ি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা লেং দেয়া নীতিবোধকে সামনে রেখে শতভাগ স্বাক্ষরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে অভিভাবক মহল জীবনের বানান না জানলেও প্রতিযোগিতার বানানরীতি খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করেছে। ফলে একটি মহল খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে আরেকটি মহল শক্তিশালীভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বলরা শক্তিশালীকে নিচের দিকে টানে, শক্তিশালীরা উপরের দিকে ওঠতে চায়। টানাটানিতে তাদের দিন যায়, টানাটানিতে আমাদের দিন যায়, ইহা এক অন্যরকম মহাজাগতিক খেলা, দিন ফুরিয়ে যায় ....
দিন ফুরিয়ে হয়তো রাত আসে। রাতে ঘুমিয়ে যাই কোনো এক ভোরকে সামনে রেখে। ভোরে নুরানি হাওয়া গতরে মাখতে মাখতে রাতের অনেক কথাই আমরা কষ্ঠভরা মনে গারগিল করি। কিন্তু তখন কিচ্ছু করার থাকে না, তখন শেখ মুজিবুর রহমান, কর্নেল তাহের, ইন্দিরা গান্ধী কেবল এক ইতিহাস, স্মৃতির ইতিহাস।
সব ইতিহাস স্মৃতি হয়ে ওঠতে পারে না। ইন্দিরা গান্ধী যিনি প্রচুর বই পড়তেন তার দিল্লির বাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে আমরা এই স্মৃতি মনে করি, বই পড়তেন বলেই হয়তো তাঁর কথায় স্পষ্ট স্পষ্ট এক দিগবলয় ছিল। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন এক আশ্রম, আর আশ্রম মানে এক সাংস্কৃতিক জীবনাচার। ইন্দিরা গান্ধী একটু হলেও তো আশ্রম সংস্কৃতি ধারন করতে পেরেছিলেন। আর রবীন্দ্র-আশ্রম-সংস্কৃতি রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের বটঝুড়ির ফাঁকের মতো সরল কিন্তু গতিশীল।
ইন্দিরা গান্ধীর একটি গতিশীল পা ছিল। কিন্তু এই যে বিশ্বাস। সত্যিকারের জীবনবোধ মানুষকে বিশ্বাসী এবং সরল করে তুলে। বিশ্বাসী ও সরল মানুষদের জায়গা এই পৃথিবীতে নেই। সত্যিই বলছি, শতভাগ ভালো মানুষ কারো মনের অলঙ্কার হয় না। যে মানুষ মিথ্যা চমৎকার সত্যের মতো করে বলতে পারে, যে মানুষ আশ্বাস দিয়ে প্রতারনা করতে পারে সেই মানুষই এখানে পূজনীয় আত্মা। আমাদের সাথের সবচেয়ে সরল মানুষ শাপলা। আমি তাকে শাপলা সুন্দরী ডাকি। তার নায়ক তার একমাত্র পৃথিবী। পৃথিবীর অতসী জটিলতায় তার কোনো আগ্রহ নেই। আমাদের তুনু যেমন মনভাসানিয়া কান্দনে জলের জোয়ার আনতে পারে তেমনি শাপলার ভেতরে একটি সরল গিরিদেশ আছে যার রাজধানী তার নায়ক। তার নায়ক তাকে অনেক ভালোবাসে। বাসে শাপলা সুন্দরী বমি করে। অনেক বমি। শাপলার নায়ক নিজের হাতে আজলা ভরে ভরে তা পরিষ্কার করে। এখানেই প্রেম। প্রেম চকচকে রেস্টুরেন্টের হালকা আলো ঘরে পাওয়া যায় না। আমি কথা দিয়েছি শাপলা সুন্দরীকে নিয়ে আমি একটা গান লিখবো। কখন লিখতে পারবো জানি না, কিন্তু লিখবো।
বলছিলাম আশ্রম সংস্কৃতির কথা। আশ্রম সংস্কৃতি মানুষকে যৌথ পদক্ষেপ শেখায়, আশ্রম সংস্কৃতি মানুষকে জলতান উপলব্ধি করতে সহায়তা করে। এখানে কেউ বড় কেউ ছোট নয়, সবাই গানের মানুষ, সবাই প্রানের মানুষ। এখানে দই বিক্রেতার কন্ঠেও মধুরতা আছে, প্রহরীর কাজেও আছে চমৎকার আনন্দ। অর্থাৎ আশ্রম সংস্কৃতি অমল মানসিকতা ধারন করে।
বুঝলেন তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর নাটকের অমলের কথা বলছি। অমলকে আমার এতো ভালো লাগে কেন আমি জানি না, হয়তো তার সঙ্গচেতনার জন্যে, হয়তো তার জীবনবাদী মৌলিক জিজ্ঞাসার জন্য। আমার তো পথের দাবির সব্যসাচীকেও ভালো লাগে, ভালো লাগে টিনের তলোয়ারের বেনীমাধবকেও।
ভালো লাগে না রবি বাবুর পোষ্ট মাস্টারকে, বিভূতিভূষনের উপেক্ষিতা গল্পের বিমলকে। রবি বাবুর গাড়িটিও আমার ভালো লাগে না। এতো দামি গাড়ি তিনি ব্যবহার করবেন কেন? তবে প্রয়োজন নামক শব্দে একটা উত্তর থেকে যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি আদর্শিক এলাকা আমাকে খুব মুগ্ধ করে।
তখন শান্তিনিকেতন কেবল হচ্ছে হচ্ছে। ঘরবাড়ি তেমন করে ডানা মেলেনি। বর্ষাকাল। বৃষ্টি হচ্ছে। এখনো বৃষ্টি হয়। কিন্তু এখনকার বৃষ্টির মধ্যে তেমন তেজ নেই। একটানা ঝুমকোজবা বৃষ্টি হচ্ছে। ছাত্রদের ঘরে বৃষ্টি পড়ছে। ছাত্ররা অভিযোগ জানাতে ক্ষিতিমোহন দত্তের কাছে গেলেন। তাঁর ঘরেও বৃষ্টি পড়ছে। তারপর তিনি ছাত্রদের বললেন চলো আমরা কবি গুরুর কাছে যাই। তারা চলল রবীন্দ্রনাথের ঘর অভিমুখে। গিয়ে দেখলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঘরের এক কোনায় বসে আছেন। তাঁর ঘরেও বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি তাঁকে কোনামুখী করে তুলে। কী আর অভিযোগ জানাবে, এই অবস্থা দেখেই সবাই হতবাক। তারপরও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বললেন তোমরা যেহেতু এসেছো একটি গান লিখেছি, শুনে যাও "ও আমার ঘুম ভাঙানিয়া "।
আর আমরা আগে নিজের আসন ঠিক করে অন্যের দিকে দৃষ্টি দেই। তাও আবার ঐখানে আমার আসন পাকাপোক্ত করার কোনো ব্যাপার আছে কিনা তা নিয়ে ভাবি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদার সন্তান হয়েও আশ্রম সংস্কৃতি পালনে সচেতন। অন্যভাবে দেখলে পরিবারও তো একটি আশ্রম। প্রাথমিক আশ্রম সন্তানের জন্য। এখানে বাঙালি সন্তান দ্বিধাবোধ শিক্ষা পায়। পরিবার শিক্ষা দেয় একা একা যখন কিছু খেতে চাও দরজা বন্ধ করে খাও, অন্যরা দেখলে চোখ লাগায় দিব, পেট খারাপ করবো।
ফলত জেনারেশন হচ্ছে বধির বোবা অন্ধ। তবে কায়নাতের একটি কথা খুব ভালো লেগেছে। কায়নাত বায়াতুল্লাহ কাদেরী স্যারের বড় ছেলে। আমরা তখন বাংলাদেশে ঢুকে গেছি। বাসে বসা। সে বলছে, ভাই নিজেকে এখন মাইকেল মধুসূদন মধুসূদন মনে হচ্ছে।
কেন?
দেশের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে গেছে, আমরা তো পারি সবাই মিলে দেশটাকে সুন্দর করতে।
অবশ্যই কায়নাত, আমরা পারি, আমরা জীবনের প্রত্যেকটি ভাঁজ সুন্দর করে অনুপম নিরুপমা করে তুলতে পারি।
তাহনু যারিওন।
মানে কী?
মানে হলো কৃষিকাজ।
প্রভু নিজেও কৃষক। তাইতো এই পৃথিবী চাষ করলেন। আমরা যদি নিজেদের চাষ করতে পারি তাহলে পৃথিবী ও আমাদের জীবনের এক অর্থময় বাঁক তৈরি হবে।
ততক্ষনে আমরা জলে ভাসছি। কায়নাতও ভাবনায় ভাসতে থাকে ....
বেলা থাকুক আর না থাকুক তারিক আজিজের জন্য সময় বসে থাকে না। ভ্রমন হোক কিংবা বিয়ে বাড়ি হোক সাধারন জ্ঞান তার মুখস্থ করতেই হবে। সময় কারো জন্য বসে থাকে না। গ্রীন ভ্যালিতে আমরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ আর তারিক আজিজ শিট পড়ছে। বিসিএস ক্যাডার তার হতেই হবে। তারিক আজিজ যাতে ক্যাডার হতে পারে সেজন্যে আমাদের সবার প্রার্থনা অটুট থাকবে ইনশাল্লাহ।
ইসলামে আছে মুসাফিরের প্রার্থনা আল্লা কবুল করে। সফরে থাকলে মন একেবারে পবিত্র হয়ে আসে। আসল কথা গতির সাথে থাকলে মনে কখনো আবর্জনা জমতে পারে না। মুসাফির তো সেই যার মধ্যে যাবো যাবো একটা ভাব থাকে। যাব যাব ভাব যাওয়ার চেয়ে আনন্দের--
"মহতাজ যো মনজিল কা তো নাহি হ্যায় /একতরফা মেরা সফর /সফর খুব সরত হ্যা মনজিল সে ভি!"
ট্রেনজানালা জীবন্ত মনিটর। প্রকৃতি যে ডকুমেন্টারি তৈরি করে রেখেছে তা দেখায় সরাসরি। সরাসরি গতির কাছে গেলে ছোট হয়ে আসে অহংবোধ। ইন্ডিয়ান ট্রেন চলেও বেশ গতিতে। শুধু পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তার বুক চিড়ে যে টয় ট্রেন চলছিল তা টয় ট্রেনের মতো চলছিল বলা যায়। আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে নতুন জামাইয়ের হাঁটার মতো কিংবা চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের মতো।
ভ্রমন শুরুর দিন থেকে প্রায় পাঁচ দিন আমরা যানবাহনে ছিলাম। ইন্ডিয়ান রাস্তাঘাট ভালো। যোগাযোগের দিকে ইন্ডিয়ান সরকারের দৃষ্টি আরামদায়ক। কিন্তু...!
আগ্রা থেকে কলকাতা আসার সময় আমি এসি রুমে। এসি রুমে আমাদের সিট ছিল না। এসি রুমে যারা ছিলেন তাদের অনেকের সিট ক্যানসেল হওয়াতে আমাদের প্রমোশন হয়।ইন্ডিয়ান ট্রেনের এই সিস্টেমটা ভালো লেগেছে। টিকেট কেটে কেউ আসে নি। কোনো সমস্যা নেই। যার পেছনে আছে মানে নিচের ক্লাসে আছে তাদের প্রমোশন দিয়ে দাও। বেশ, হয়ে গেল।
এসি রুমের জানালায় ইন্ডিয়ান প্রকৃতি দেখছি। খুব ভালো লাগছে। ভোর হয়ে আসছে। লাল রঙের ডিমের মুখ দেখা যাচ্ছে পূর্ব দিকে। পৃথিবীর সব দেশেই পূর্ব দিক থেকে সূর্য দেখা যায়। এসিরুমগ্লাস আমার চশমাটার মতো-- সব কিছুকে সুন্দর দেখায়। সূর্য ততক্ষনে খুব ভালো করে জায়গা করে নিয়েছে। সব কিছু সুন্দর ও স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে। জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে আছি। দেখি। খুব স্পষ্ট করে দেখছি। পুটকি। মানুষের পুটকি। খোলা ময়দানে এক লোক আয়েস করে হাগু করছে। আরেকটু সামনে দেখি লাইন ধরে আড্ডা আড্ডা দিতে দিতে হাগু করছে। চিনারা আড্ডা দিতে দিতে খাবার খায়। আর তারা আড্ডা দিতে দিতে হাগু করে। ভালোই ত। আড্ডাটা হলো জীবনে আসল কথা।
আড্ডা জীবনের জন্য ভাতমাছের মতো জরুরী। তবে বাঙালি সমাজে একটি সমস্যা আছে-- ভাত মাছের চেয়ে আড্ডা গুরুত্বপূর্ন বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ফলে আড্ডা দেয়ার তেল ফুরিয়ে যায়, তেল ফুরিয়ে গেলে মানুষমিশিন অযথা গ্যাজর গ্যাজর করে।
আমাদের সাথে গ্যাজর গ্যাজর করার লোক কেউ নেই। সবাই ভেতরে ভেতরে অনেক কথা বলে কিন্তু বাইরে বাইরে খুব চুপচাপ। আমাদের মাঝে সবচেয়ে চুপচাপ আলমগীর, তারপর গিয়াস শামীম স্যার। বোলপুর থেকে হাওড়া যাওয়ার সময় স্যার জিন্সের পেন্ট পরেছেন। স্যারকে তখন চমৎকার লাগছিল। অবাকগনিতও করতে হয়েছে। কারন স্যার জিন্সের পেন্ট পরবেন আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারি না। স্যারকে তাঁর ব্যক্তিদর্শনের বাইরে কখনো কিছু করতে দেখিনি-- তিনি প্রতিনিয়ত নিজের ইচ্ছাদর্শকে প্রকাশ করে থাকেন কথায়, আচরনে, পোশাকে। এই ভ্রমনে স্যার আমাকে অনেকবার ধমক দিয়েছেন। স্যারের ধমক আমার কাছে খুব ভালো লাগে। স্যারের ধমক শুনে আমার মুখে অটোমেটিক হাসি চলে আসে। আমার আম্মা আমাকে ধমক দিয়ে আজ পর্যন্ত রাগাতে পারেন নি। আম্মার ধমক শুনে আমি হেসে দেই-- আম্মার তাতে বিশাল গর্ব " আমার হে কোনোদিন আমার লগে ছেত দেহাই নাই।"
আমি যে মাবাবার লগে রাগ দেখাই না তার একপ্রকার মানসিক কারন আছে। আমি মনে করি অভিভাবক যখন শাষন করতে পারেন তখন তারা মানসিকভাবে নিজেকে শক্তিশালী মনে করেন। একজন মানুষ মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকলে কোনো রোগব্যাধি সহজে আক্রমন করতে পারে না। অভিভাবক সুস্থ থাকুক এমন কামনা তো আমাদের সবার, তাই না?
ভ্রমনে কয়েকজন গ্যাজর গ্যাজর মানুষ না থাকলে ভ্রমন তেমন আনন্দের হয় না। ট্রেন কিন্তু গ্যাজর গ্যাজর করেই চলেছে। টয় ট্রেন তেমন গ্যাজর গ্যাজর করে না।
তবে টয় ট্রেন শাদা পোশাক পরিধান করে আনন্দ দিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে টয় ট্রেন বোরখাও পরে। বোরখা পরিধান করার জন্য ছেলেমেয়ে অর্থাৎ লিঙ্গজ্ঞান কোনো গুরুত্বপূর্ন বিষয় নহে। বোরখা ইসলামি পোষাক নহে, আরবি পোশাক। আরবে পুরুষদের বোরখা পরতে হয়।
মুজিব ভাই নামে আমগো এক বড় ভাই সৌদি আরব থাকেন। অনেক বছর পর পর সে দেশে আসে। তখন তার সব কাজ প্রায় আরবিময়। এমনকি বাংলা ভাষাও সে আরবির মতো নক্তা সমেত উচ্চারন করতে থাকে। একদিন দেখলাম সে তার ভাতিজার নাম ভুলে গ্যাছে, তাই তাকে ডাকছে ' ইয়া ভাতিজা ইয়া ভাতিজা'। ইয়া ভাতিজা তার পরবাসী ডাক শুনে বিশাল এক দৌঁড়। কারন আমাদের গ্রাম এলাকায় এক গোপন ধারনা আছে যে জ্বিন লম্বা হয় এবং আরবিতে কথা বলে।
আরেকটি কথা, দেশে এসে প্রথমে সে ঘরেও বোরখা পরে। কয়েকদিন যাওয়ার পর ঘরে বোরখা পরা বাদ দেয়। এখন বাইরে গেলে শুধু বোরখা পরে। কয়েকদিন এমন করে যায়। এখন শুধু সালাতের সময় বোরখা পরে যায়। কয়েকদিন এমন করে যায়। তারপর ঘটে আসল মানে রিয়েল ঘটনা-- লুঙ্গি ন্যাংটি দিয়ে কাম করতে নামে, আযান পড়ে, তার কাম শেষ হয় না, আর মাত্র অল্প সময় সালাতের জন্য বাকি, তাড়াতাড়ি করে মসজিদে যায়, শরীরে তখনো কাপড় পরিধান করেনি। তড়িঘড়ি করে সালাতে দাঁড়াচ্ছে আর কাপড় পরিধান করছে। এই হলো আমাদের মুজিব ভাই, মুজিব ভাইয়ের বোরখা রীতি।
তবে টয় ট্রেন যে নিয়ম নামক বোরখা পরিধান করে তা ভালোই লাগে। টয় ট্রেন আস্তে আস্তে চলে। মেট্রো রেল চলে টয় ট্রেনের তিনগুন গতিতে। কলকাতার মেট্রো রেল আর দিল্লীর মেট্রো রেলের মধ্যে বোরখাগত পার্থক্য আছে। শহুরে মেয়ে আর গ্রামীন মেয়ের বোরখাগত পার্থক্য। গ্রামীন মেয়ে বোরখা পরলে মনে হয় যেন ঝুপড়ি হেঁটে যাচ্ছে, শহুরে মেয়েকে বোরখায় একমাত্র অন্ধকারে একমাত্র মোমবাতি বলিয়া বোধ হয়।
তাজমহলে খুব সকাল সকাল আমাদের ঢুকার কথা। কিন্তু আমরা সকাল সকাল ঢুকতে পারবো না। আমরা আযান দিয়ে ঢুকতে পারবো না। ঢুকতে হবে চুপিচুপি। চোরের মতো। কারন আমরা বিদেশি হিসাবে ঢুকতে চাই না। আমরা ইন্ডিয়ান হিসাবে তাজমহলে ঢুকবো (এবার প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ এসেছে, কারন বাংলাদেশের অনেক লুন্ঠিত সম্পদ এই তাজমহল নির্মানে অবশ্যই ব্যবহার করা হয়েছে)।
ইন্ডিয়ান হিসাবে ঢুকলে টাকা কম। বিদেশি হিসাবে ঢুকলে পাঁচ শত রুপির উপরে। আমি একা সাধু হতে পারবো না এমন না, সাধু যারা আছেন তাদের আমলনামা আমার চেয়ে বেশ শক্তিশালী, তাই আমার আপাততঃ চুপ থাকা মানে স্রোতে তাল মেলানো মঙ্গলজনক নহে, উত্তম।
টিকেট চেকার আমার কাছে জানতে চাইনি আমি ইন্ডিয়ান কিনা, জানতে চাইলে সোজা বলে দিতাম আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। অনেকের কাছে জানতে চেয়েছে, তারা ফাঁকি দেয়ার চেষ্টাও করেছে কিন্তু ফাঁকি দিতে পারেনি।
আমরা যারা পাঁচ শত টাকার জন্য নিজের চরিত্র বিক্রি করতে পারি, আমাদের মানব ভাবনা যত সুন্দরই হোক পৃথিবীর কোনো কাজে আসবে না আমি নিশ্চিত। লালসালুর মজিদকে কিংবা পদ্মা নদীর মাঝির হোসেন মিয়াকে আমরা খুব নেগেটিভ চরিত্র হিসাবে উপস্থাপন করি কিন্তু সুযোগ পেলে আমরাও যে খুব বড় মানের মজিদ কিংবা হোসেন মিয়া হয়ে ওঠতে পারি তা প্রমানে সলাপে ধরা পড়ে। আরেফ আলীর তখন কিচ্ছু করার থাকে না-- জোছনা তখন তার মনে জীবন্ত লাশ, সুযোগ পেলে আমরা ভিখুর মতো সব কিছু আমার করে নিতে আমাদের বিন্দুমাত্র দ্বিধা হবে না। এই কারনেই একজন খাওয়ার কারনে মারা যায় অন্যজন না খেয়ে মারা যায়! প্রকৃতি কখনো বৈষম্য করে না, বৈষম্যের দেয়াল তৈরি করি আমরা, এই আমরা-- যারা ভালো ভালো ভালো কথা বলে পেটের দূষিত বাতাস কিছুটা হালকা করার চেষ্টা করি।
আবদুল হাফিজ চাচা এতো ভালো ভালো কথা বলেন না। কেবল নিজের কাজটি করে যান। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন, চাচা চাচি মিলে ফজরের সালাত কায়েম করেন। তারপর কোনোদিন ঘরে নাস্তা করেন কোনোদিন করেন না। তারপর বেরিয়ে পরেন তাজমহলের উদ্দেশ্যে।
হাফিজ চাচা তাজমহলে ছবি তুলেন। মানুষের ছবি। বিনিময়ে তিনি প্রতি জনের কাছ থেকে প্রতি ছবির জন্য বিশ টাকা নেন। তাঁর ছেলে মেয়ে দুজনই ইন্ডিয়ান সরকারের চাকর। খুব ভালো বেতনের চাকর। তারপরও চাচা কেন এখানে আসেন? অভ্যাস জাস্ট অভ্যাসের কারনে। অভ্যাসের বাইরেও আরেকটি কারন আছে। তা আমি খুব কষ্টে জানতে পেরেছি।
চাচা আমার চারটি ছবি তুলেন। আমার গরীব মোবাইল দিয়ে চাচার দুটি ছবি তুলি। চাচা খুব অবাক হয়েছেন। সাধারনত তিনি সবার ছবি তুলেন, আর আজকে কেউ তার ছবি তুলল, তাও আবার অত্যন্ত যত্ন করে।
বলছিলাম হাফিজ চাচা এখানে রোজ নিয়ম করে আসে একটি গোপন কারনকেও সামনে রেখে। যৌবনে এক নারীর ছবি তুলতে গিয়ে তার প্রেমে পড়েছিল যুবক হাফিজ। যমুনা নদীতে তখন নৌকা ছিল। নৌকাতে তারা অনেকটা সময় এক সাথে ভেসেছিল।
তখন মোবাইলের যুগ চালু হয়নি, চাচা ঠিকানা লিখে রাখে, ঠিকানা হারিয়ে যায়, সেই সাথে হারিয়ে যায় চাচার অবলা প্রেম। হাফিজ চাচার সেই প্রেমটাই ছিল একমাত্র, তাঁর জীবনে আর প্রেম আসেনি, সংসার এসেছে। সংসার আসতো না যদি না চাচা তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান না হতেন। চাচার বিশ্বাস তাঁর মধুমালা ঠিকই এখানে আরেকবার আসবে। তাই প্রতিদিন তিনি আশা নিয়ে আসেন, প্রতিদিনের শেষ সময় পর্যন্ত আশা রাখেন আজকে তার মধুমালার সাথে দেখা হবে। কিন্তু দেখা হয় না।
একটি দিন নিয়ম করে একটি রাতের সাথে মিলিত হচ্ছে, হাফিজ চাচার দীর্ঘশ্বাস কেবল দীর্ঘশ্বাসের সাথে মিলনের দিকে যায়-- দিন ফুরিয়ে যায় দিন ফুরিয়ে যায়, মন ফুরিয়ে যায় মন ফুরিয়ে যায় ....
দিন তখন ফুরিয়ে যাচ্ছে। দিন তখন আর কয়েক ঘন্টা বাকি যখন আমরা আগ্রার ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছি। খুব গরম এবং কম ঠান্ডা এমন সময় আমরা আগ্রায় পা রাখি। আগ্রার ভেতরে ঢুকে এক শাদা চামড়ার বিদেশি পরিবার দেখি। তাদের সাথে দুটি বাচ্চা। এক বাচ্চাকে সুন্দর খেলনা গাড়িতে বসিয়েছে, আরেক বাচ্চাকে নিজেদের দেহের সাথে রেখেছে। এক বাচ্চা গাড়িতে বসে আনন্দে আছে, আরেক বাচ্চা গাড়িতে বসা বাচ্চাকে মানে ভাই কিংবা বোনকে দেখে আনন্দে আছে। একটু পর পর বাচ্চাদের অবস্থান বদল হয়। ফলে বাচ্চাদের কান্নাকাটি করার সুযোগটা থাকেই না। আর আমাদের অভিভাবক যখন বাচ্চা নিয়ে কোথাও ঘুরতে যান, বাচ্চাও কান্দে অভিভাবকও কান্দে। বাচ্চা কান্দে স্বভাবে, অভিভাবক কান্দেন দুঃখে ( টাকা খরচ করে ঘুরতে যাওয়া বলে কথা)।
আগ্রার ভেতর একটি বিষয় দেখে খুব দুঃখ পেয়েছি। বাথটাব। বাথটাবটির উচ্চতা প্রায় বারো ফুট। এখানে মহারাজা স্নান করতেন। মহারাজ তার বাইজিদের সাথে সঙ্গমক্রিয়া শেষ করে এই বাথটাবে স্নান করতেন। বাথটাবটি তখন বিচিত্র ফুলজল দিয়ে সজ্জিত। ফুলের গন্ধ শরীরে মেখে মহারাজ তার সাংবিধানিক মানুষটির কাছে যেতেন।
এমন আরও অনেক কাজ তারা করতেন যা মানুষকে বঞ্চিত করার প্রাগৈতিহাসিক ফলাফল। মানুষ তখন মুখ খুলবার মতো সচেতন হয়ে ওঠেনি। মানুষ যাতে ঐক্যঘর না গড়তে পারে সে ব্যাপারে মহারাজাদের সতর্ক দৃষ্টি ছিল। মানসিক ঐক্য এটম বোমার চেয়ে শক্তিশালী।
আগ্রার ভেতরে একটি গ্রুপ দেখলাম চিনা অথবা জাপানিদের, তাদের হাঁটাচলা কর্মকান্ডে মানসিক ঐক্য স্পষ্ট। আর আমাদের সাতাশ জন সদস্যদের মধ্যে চল্লিশটা গ্রুপ। এই দ্বিধাবোধ গ্রুপিং মানসিকতার জন্য অবশ্যই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দায়ি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা লেং দেয়া নীতিবোধকে সামনে রেখে শতভাগ স্বাক্ষরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে অভিভাবক মহল জীবনের বানান না জানলেও প্রতিযোগিতার বানানরীতি খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করেছে। ফলে একটি মহল খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে আরেকটি মহল শক্তিশালীভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বলরা শক্তিশালীকে নিচের দিকে টানে, শক্তিশালীরা উপরের দিকে ওঠতে চায়। টানাটানিতে তাদের দিন যায়, টানাটানিতে আমাদের দিন যায়, ইহা এক অন্যরকম মহাজাগতিক খেলা, দিন ফুরিয়ে যায় ....
দিন ফুরিয়ে হয়তো রাত আসে। রাতে ঘুমিয়ে যাই কোনো এক ভোরকে সামনে রেখে। ভোরে নুরানি হাওয়া গতরে মাখতে মাখতে রাতের অনেক কথাই আমরা কষ্ঠভরা মনে গারগিল করি। কিন্তু তখন কিচ্ছু করার থাকে না, তখন শেখ মুজিবুর রহমান, কর্নেল তাহের, ইন্দিরা গান্ধী কেবল এক ইতিহাস, স্মৃতির ইতিহাস।
সব ইতিহাস স্মৃতি হয়ে ওঠতে পারে না। ইন্দিরা গান্ধী যিনি প্রচুর বই পড়তেন তার দিল্লির বাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে আমরা এই স্মৃতি মনে করি, বই পড়তেন বলেই হয়তো তাঁর কথায় স্পষ্ট স্পষ্ট এক দিগবলয় ছিল। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন এক আশ্রম, আর আশ্রম মানে এক সাংস্কৃতিক জীবনাচার। ইন্দিরা গান্ধী একটু হলেও তো আশ্রম সংস্কৃতি ধারন করতে পেরেছিলেন। আর রবীন্দ্র-আশ্রম-সংস্কৃতি রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের বটঝুড়ির ফাঁকের মতো সরল কিন্তু গতিশীল।
ইন্দিরা গান্ধীর একটি গতিশীল পা ছিল। কিন্তু এই যে বিশ্বাস। সত্যিকারের জীবনবোধ মানুষকে বিশ্বাসী এবং সরল করে তুলে। বিশ্বাসী ও সরল মানুষদের জায়গা এই পৃথিবীতে নেই। সত্যিই বলছি, শতভাগ ভালো মানুষ কারো মনের অলঙ্কার হয় না। যে মানুষ মিথ্যা চমৎকার সত্যের মতো করে বলতে পারে, যে মানুষ আশ্বাস দিয়ে প্রতারনা করতে পারে সেই মানুষই এখানে পূজনীয় আত্মা। আমাদের সাথের সবচেয়ে সরল মানুষ শাপলা। আমি তাকে শাপলা সুন্দরী ডাকি। তার নায়ক তার একমাত্র পৃথিবী। পৃথিবীর অতসী জটিলতায় তার কোনো আগ্রহ নেই। আমাদের তুনু যেমন মনভাসানিয়া কান্দনে জলের জোয়ার আনতে পারে তেমনি শাপলার ভেতরে একটি সরল গিরিদেশ আছে যার রাজধানী তার নায়ক। তার নায়ক তাকে অনেক ভালোবাসে। বাসে শাপলা সুন্দরী বমি করে। অনেক বমি। শাপলার নায়ক নিজের হাতে আজলা ভরে ভরে তা পরিষ্কার করে। এখানেই প্রেম। প্রেম চকচকে রেস্টুরেন্টের হালকা আলো ঘরে পাওয়া যায় না। আমি কথা দিয়েছি শাপলা সুন্দরীকে নিয়ে আমি একটা গান লিখবো। কখন লিখতে পারবো জানি না, কিন্তু লিখবো।
বলছিলাম আশ্রম সংস্কৃতির কথা। আশ্রম সংস্কৃতি মানুষকে যৌথ পদক্ষেপ শেখায়, আশ্রম সংস্কৃতি মানুষকে জলতান উপলব্ধি করতে সহায়তা করে। এখানে কেউ বড় কেউ ছোট নয়, সবাই গানের মানুষ, সবাই প্রানের মানুষ। এখানে দই বিক্রেতার কন্ঠেও মধুরতা আছে, প্রহরীর কাজেও আছে চমৎকার আনন্দ। অর্থাৎ আশ্রম সংস্কৃতি অমল মানসিকতা ধারন করে।
বুঝলেন তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর নাটকের অমলের কথা বলছি। অমলকে আমার এতো ভালো লাগে কেন আমি জানি না, হয়তো তার সঙ্গচেতনার জন্যে, হয়তো তার জীবনবাদী মৌলিক জিজ্ঞাসার জন্য। আমার তো পথের দাবির সব্যসাচীকেও ভালো লাগে, ভালো লাগে টিনের তলোয়ারের বেনীমাধবকেও।
ভালো লাগে না রবি বাবুর পোষ্ট মাস্টারকে, বিভূতিভূষনের উপেক্ষিতা গল্পের বিমলকে। রবি বাবুর গাড়িটিও আমার ভালো লাগে না। এতো দামি গাড়ি তিনি ব্যবহার করবেন কেন? তবে প্রয়োজন নামক শব্দে একটা উত্তর থেকে যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি আদর্শিক এলাকা আমাকে খুব মুগ্ধ করে।
তখন শান্তিনিকেতন কেবল হচ্ছে হচ্ছে। ঘরবাড়ি তেমন করে ডানা মেলেনি। বর্ষাকাল। বৃষ্টি হচ্ছে। এখনো বৃষ্টি হয়। কিন্তু এখনকার বৃষ্টির মধ্যে তেমন তেজ নেই। একটানা ঝুমকোজবা বৃষ্টি হচ্ছে। ছাত্রদের ঘরে বৃষ্টি পড়ছে। ছাত্ররা অভিযোগ জানাতে ক্ষিতিমোহন দত্তের কাছে গেলেন। তাঁর ঘরেও বৃষ্টি পড়ছে। তারপর তিনি ছাত্রদের বললেন চলো আমরা কবি গুরুর কাছে যাই। তারা চলল রবীন্দ্রনাথের ঘর অভিমুখে। গিয়ে দেখলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঘরের এক কোনায় বসে আছেন। তাঁর ঘরেও বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি তাঁকে কোনামুখী করে তুলে। কী আর অভিযোগ জানাবে, এই অবস্থা দেখেই সবাই হতবাক। তারপরও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বললেন তোমরা যেহেতু এসেছো একটি গান লিখেছি, শুনে যাও "ও আমার ঘুম ভাঙানিয়া "।
আর আমরা আগে নিজের আসন ঠিক করে অন্যের দিকে দৃষ্টি দেই। তাও আবার ঐখানে আমার আসন পাকাপোক্ত করার কোনো ব্যাপার আছে কিনা তা নিয়ে ভাবি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদার সন্তান হয়েও আশ্রম সংস্কৃতি পালনে সচেতন। অন্যভাবে দেখলে পরিবারও তো একটি আশ্রম। প্রাথমিক আশ্রম সন্তানের জন্য। এখানে বাঙালি সন্তান দ্বিধাবোধ শিক্ষা পায়। পরিবার শিক্ষা দেয় একা একা যখন কিছু খেতে চাও দরজা বন্ধ করে খাও, অন্যরা দেখলে চোখ লাগায় দিব, পেট খারাপ করবো।
ফলত জেনারেশন হচ্ছে বধির বোবা অন্ধ। তবে কায়নাতের একটি কথা খুব ভালো লেগেছে। কায়নাত বায়াতুল্লাহ কাদেরী স্যারের বড় ছেলে। আমরা তখন বাংলাদেশে ঢুকে গেছি। বাসে বসা। সে বলছে, ভাই নিজেকে এখন মাইকেল মধুসূদন মধুসূদন মনে হচ্ছে।
কেন?
দেশের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে গেছে, আমরা তো পারি সবাই মিলে দেশটাকে সুন্দর করতে।
অবশ্যই কায়নাত, আমরা পারি, আমরা জীবনের প্রত্যেকটি ভাঁজ সুন্দর করে অনুপম নিরুপমা করে তুলতে পারি।
তাহনু যারিওন।
মানে কী?
মানে হলো কৃষিকাজ।
প্রভু নিজেও কৃষক। তাইতো এই পৃথিবী চাষ করলেন। আমরা যদি নিজেদের চাষ করতে পারি তাহলে পৃথিবী ও আমাদের জীবনের এক অর্থময় বাঁক তৈরি হবে।
ততক্ষনে আমরা জলে ভাসছি। কায়নাতও ভাবনায় ভাসতে থাকে ....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন