মানুষ হয়ে মানুষের ভেতর অসংখ্য বার জন্ম নিতে চাই
মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০১৭
ময়লা
জামাকাপড়ে,গতরে যেমন ময়লা থাকে তেমনি মনেও ময়লা থাকে। মনের প্রধান ময়লার নাম রাগ। ময়লা ডাস্টবিনে যাওয়ার কথা। কিন্তু মানুষ ময়লা ফেলে মানুষের উপরে। ফলে মানুষ নিজের অজান্তে খুব উন্নত মানের ডাস্টবিন।
রবিবার, ২৮ মে, ২০১৭
মানুষ নামে
ঘরে নেমে আসে জলস্রোতের আলোকবাহি প্রোফাইল
জলঘর থেকে জন্ম নেয় ঘর
ছায়া জন্মের বহু বছর পর মানুষের পরিচয়
ডান চোখটা মানুষ নয়
বাম চোখটা মানুষ নয়
মুখের ওঠানামা একেবারেই নয়
মানুষ শব্দটি অনেক গভীরে
গভীর থেকে গভীরে এক বোধগ্রাম যেখানে শাপলা আর সাপের মিলনের টান
সেখানেই এক পাতাফুল চুপ করে বসে থাকে মানুষ নামে
আমি তাকে গন্ধ বলি জীবনের বাঁকে
আমরা তাকে ছন্দ বলি চলার পথে
রাত থেকে আলো কেড়ে নিলে মানুষ শব্দটি থাকে জীবনের বাঁকে কিংবা চলার পথে
গন্ধ ও ছন্দ কেবলই এক ধাঁধাঁর জগৎ
জলঘর থেকে জন্ম নেয় ঘর
ছায়া জন্মের বহু বছর পর মানুষের পরিচয়
ডান চোখটা মানুষ নয়
বাম চোখটা মানুষ নয়
মুখের ওঠানামা একেবারেই নয়
মানুষ শব্দটি অনেক গভীরে
গভীর থেকে গভীরে এক বোধগ্রাম যেখানে শাপলা আর সাপের মিলনের টান
সেখানেই এক পাতাফুল চুপ করে বসে থাকে মানুষ নামে
আমি তাকে গন্ধ বলি জীবনের বাঁকে
আমরা তাকে ছন্দ বলি চলার পথে
রাত থেকে আলো কেড়ে নিলে মানুষ শব্দটি থাকে জীবনের বাঁকে কিংবা চলার পথে
গন্ধ ও ছন্দ কেবলই এক ধাঁধাঁর জগৎ
মানুষমাছ
অক্সিজেনের জলে আমরাও মানুষমাছ
খাই দাই ঘুমাই সকাল হলে অফিসে যাই
বিয়ে করে কিংবা না করে বাচ্চা বানাই
মনের ভেতর যে সাইকেল তাও চালাই
রাগ করি
অভিমান ধরি
অভিযোগ বক্সে কতিপয় কাগজ পাঠাই
নিজেকে দেখাই
নিজেকে পাঠাই
নিজেকে দেখি পাতানো আয়নায়
সকাল হলে গতরে মাখি ঔষধ বাতাস
ভোতা হতাশায় ফিরি করি রঙিন আকাশ
চোর ধরে লকাবে পাঠাই, আমিই আবার জজকোর্টে বসে ডাকাত সাজাই
এক আমি উত্তম হুজুর, দক্ষ কসাই অক্সিজেনের জলে
অক্সিজেনের কূপ মন্ডপে জলসিড়ি মাছ মানব সমাজ
ডাঙায় ওঠালে মরন তোমার
ডাঙায় ওঠলে মরন আমার
খাই দাই ঘুমাই সকাল হলে অফিসে যাই
বিয়ে করে কিংবা না করে বাচ্চা বানাই
মনের ভেতর যে সাইকেল তাও চালাই
রাগ করি
অভিমান ধরি
অভিযোগ বক্সে কতিপয় কাগজ পাঠাই
নিজেকে দেখাই
নিজেকে পাঠাই
নিজেকে দেখি পাতানো আয়নায়
সকাল হলে গতরে মাখি ঔষধ বাতাস
ভোতা হতাশায় ফিরি করি রঙিন আকাশ
চোর ধরে লকাবে পাঠাই, আমিই আবার জজকোর্টে বসে ডাকাত সাজাই
এক আমি উত্তম হুজুর, দক্ষ কসাই অক্সিজেনের জলে
অক্সিজেনের কূপ মন্ডপে জলসিড়ি মাছ মানব সমাজ
ডাঙায় ওঠালে মরন তোমার
ডাঙায় ওঠলে মরন আমার
শনিবার, ২৭ মে, ২০১৭
একলা আমি
পৃথিবী দশের
কবরটা একার
তুমি ছাড়া আমি না হতে পারি দশের না হতে পারি একার
কবরটা একার
তুমি ছাড়া আমি না হতে পারি দশের না হতে পারি একার
শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭
প্রচারের নিজস্ব একটি যোগ্যতা
প্রত্যেক আচারের একটি নিজস্ব যোগ্যতা আছে প্রচারিত হবার। অথচ যার কোনো নিজস্ব আচার নেই সেই প্রচারে ব্যস্ত। সমাজে অনেক সিকি পয়সা থাকে যার কোনো ব্যবহারিক মূল্য নেই কিন্তু মানিব্যাগের আয়তন দখল করে।
বুধবার, ২৪ মে, ২০১৭
স্বাধীনতা শব্দটির মানে জানি
গল্পটা বলা যেতে পারে। গল্পটা অনেকটা ধূসর রঙের, ধূসর রং কেমন করে লাল রং, লাল রং কেমন করে সবুজ রং মানে পৃথিবী হয়ে ওঠে গল্পটা অনেকটা তেমন।
তাহলে বলছি।
আমি তখন গ্রামে থাকি। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। স্বাধীনতার অনেক গল্প শুনি। কিন্তু স্বাধীনতার মানেটা বুঝে ওঠতে পারি না। স্বাধীনতার মানে যখন বুঝি না গল্পটা তখনকার।
পিয়ারা গাছের নিচে সাবান রাখা। সাবানটা জালি দিয়ে মোড়ানো। জালি মানে একধরনের চিকন জাল যা দিয়ে গ্রামের মানুষ শরীর ঘসে ঘসে ময়লা সাফ করে।
সাবানের প্রতি কাকের এক বিশাল আকর্ষন রয়েছে। বাঙালি সমাজে যেমন খিচুড়ি প্রিয় কাক সমাজে তেমনি সাবান প্রিয়। এক ছোঁ দিয়ে কাক সাবানটিকে গাছের ঢালে নিয়ে গেল। নিয়ে খুব মজা করে সাবান খাচ্ছে তো খাচ্ছে। জালি প্রথমে কাকের ঠোঁট দখল করল, তারপর মাথার পুরোভাগ। এবার কাক আটকে গেলো! কাকের চিল্লানি দেখে কে!
কাকের আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সবাই চলে আসছে। সব কাক চিল্লাছছে।
মানুষের বিপদের সময় সব মানুষ কান্নাকাটি করে না। কোনো কোনো মানুষ নিশ্চুপ থাকে। নিশ্চুপ মানুষ কান্নারত মানুষের মাথায় হাত বুলায় আর সান্ত্বনার বানী দিয়ে থাকে, "কান্নাকাটি করে লাভ কী, আল্লাকে ডাহ মিয়ারা আল্লারে ডাহ, আল্লা অসাধ্যকে সাধ্য করতে পারে, আল্লা পাহাড়কে দরিয়া বানায়, দরিয়াকে বানায় পাহাড়।"
কাকেরা মিলেমিশে একসাথে কান্নাকাটি করে। কেউ একটুর জন্য কান্নাকাটি থামালে সিনিয়র কাক অত্যন্ত শক্তিশালী উপায়ে ফাফর দেয়, ফাফর শুনে কাকটি আরও কর্কশ সুরে কান্নাকাটি শুরু করে।
কাকদের কান্নাকাটি থামছে না, বাড়ছে এবং বাড়ছে।
আমার খুব মায়া হলো ....
গ্রামে আমার এক শক্তিশালী টিম ছিল। আম চুরি, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার থেকে মধুমাসে জাম পারা, কোহিনূর,মেঘনা সিনেমা হলে সিনেমা দেখা, ভূত দেখার অভিযান চালানো-- এমন অনেক কাজে আমরা মিশন চালাই।
সবাইকে ডাকলাম।
প্রথমে কয়েকজন গাছে ওঠলো। কাক তো আরও বেশি রেগে গেল। কাক ভাবল আমাদের বিপদের দিনে আমাদের শত্রুরা কেন আসবে, নিশ্চয় আরও বড় কোনো বিপদে আমরা পরতে যাচ্ছি।
কাক মানুষকে যে পরিমানে অবিশ্বাস করে অন্য কোনো প্রানিকে সেই পরিমানে অবিশ্বাস করে না। গ্রামের মানুষও কাককে এক প্রকার ভূত মনে করে। আর সিনেমা যারা বানায় তারা কাককে অমঙ্গললের প্রতীক হিসাবে মনতাজ করে থাকে।
কাকের আক্রমনের মুখে আমাদের প্রথম মিশন ব্যর্থ হলো।
তারপর আমাদের দুমাবাহিনীকে অভিযানে পাঠালাম। পাঠকাঠির মাথায় বন আর কেরোসিন দিয়ে দুমা তৈরি করলাম। আমাদের গ্রামীন দুমাসেলের মুখে কাক সমাজ টিকতে পারে নি।
অপারেশন সাকসেস্ফুল।
কাকটি উদ্ধার করা হলো।
আস্তে আস্তে জালিমুক্ত করা হলো কাকটিকে। জালিমুক্ত হয়ে কাকটি আকাশে বিশাল এক উড়াল দিল। বিশাল এক উড়াল। কাকটির প্রত্যেক পাখায় তখন আমি নতুন জীবনের আনন্দ দেখি, প্রত্যেক উড়ালে উড়ালে আমি স্বাধীন এক তেজ দেখি।
তখন থেকে আমি স্বাধীনতা শব্দটির মানে জানি ....
তাহলে বলছি।
আমি তখন গ্রামে থাকি। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। স্বাধীনতার অনেক গল্প শুনি। কিন্তু স্বাধীনতার মানেটা বুঝে ওঠতে পারি না। স্বাধীনতার মানে যখন বুঝি না গল্পটা তখনকার।
পিয়ারা গাছের নিচে সাবান রাখা। সাবানটা জালি দিয়ে মোড়ানো। জালি মানে একধরনের চিকন জাল যা দিয়ে গ্রামের মানুষ শরীর ঘসে ঘসে ময়লা সাফ করে।
সাবানের প্রতি কাকের এক বিশাল আকর্ষন রয়েছে। বাঙালি সমাজে যেমন খিচুড়ি প্রিয় কাক সমাজে তেমনি সাবান প্রিয়। এক ছোঁ দিয়ে কাক সাবানটিকে গাছের ঢালে নিয়ে গেল। নিয়ে খুব মজা করে সাবান খাচ্ছে তো খাচ্ছে। জালি প্রথমে কাকের ঠোঁট দখল করল, তারপর মাথার পুরোভাগ। এবার কাক আটকে গেলো! কাকের চিল্লানি দেখে কে!
কাকের আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সবাই চলে আসছে। সব কাক চিল্লাছছে।
মানুষের বিপদের সময় সব মানুষ কান্নাকাটি করে না। কোনো কোনো মানুষ নিশ্চুপ থাকে। নিশ্চুপ মানুষ কান্নারত মানুষের মাথায় হাত বুলায় আর সান্ত্বনার বানী দিয়ে থাকে, "কান্নাকাটি করে লাভ কী, আল্লাকে ডাহ মিয়ারা আল্লারে ডাহ, আল্লা অসাধ্যকে সাধ্য করতে পারে, আল্লা পাহাড়কে দরিয়া বানায়, দরিয়াকে বানায় পাহাড়।"
কাকেরা মিলেমিশে একসাথে কান্নাকাটি করে। কেউ একটুর জন্য কান্নাকাটি থামালে সিনিয়র কাক অত্যন্ত শক্তিশালী উপায়ে ফাফর দেয়, ফাফর শুনে কাকটি আরও কর্কশ সুরে কান্নাকাটি শুরু করে।
কাকদের কান্নাকাটি থামছে না, বাড়ছে এবং বাড়ছে।
আমার খুব মায়া হলো ....
গ্রামে আমার এক শক্তিশালী টিম ছিল। আম চুরি, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার থেকে মধুমাসে জাম পারা, কোহিনূর,মেঘনা সিনেমা হলে সিনেমা দেখা, ভূত দেখার অভিযান চালানো-- এমন অনেক কাজে আমরা মিশন চালাই।
সবাইকে ডাকলাম।
প্রথমে কয়েকজন গাছে ওঠলো। কাক তো আরও বেশি রেগে গেল। কাক ভাবল আমাদের বিপদের দিনে আমাদের শত্রুরা কেন আসবে, নিশ্চয় আরও বড় কোনো বিপদে আমরা পরতে যাচ্ছি।
কাক মানুষকে যে পরিমানে অবিশ্বাস করে অন্য কোনো প্রানিকে সেই পরিমানে অবিশ্বাস করে না। গ্রামের মানুষও কাককে এক প্রকার ভূত মনে করে। আর সিনেমা যারা বানায় তারা কাককে অমঙ্গললের প্রতীক হিসাবে মনতাজ করে থাকে।
কাকের আক্রমনের মুখে আমাদের প্রথম মিশন ব্যর্থ হলো।
তারপর আমাদের দুমাবাহিনীকে অভিযানে পাঠালাম। পাঠকাঠির মাথায় বন আর কেরোসিন দিয়ে দুমা তৈরি করলাম। আমাদের গ্রামীন দুমাসেলের মুখে কাক সমাজ টিকতে পারে নি।
অপারেশন সাকসেস্ফুল।
কাকটি উদ্ধার করা হলো।
আস্তে আস্তে জালিমুক্ত করা হলো কাকটিকে। জালিমুক্ত হয়ে কাকটি আকাশে বিশাল এক উড়াল দিল। বিশাল এক উড়াল। কাকটির প্রত্যেক পাখায় তখন আমি নতুন জীবনের আনন্দ দেখি, প্রত্যেক উড়ালে উড়ালে আমি স্বাধীন এক তেজ দেখি।
তখন থেকে আমি স্বাধীনতা শব্দটির মানে জানি ....
শনিবার, ২০ মে, ২০১৭
চোখে রেখে ঘুম
জলকেলি জীবন আমার নদীর ঘোমটাপরা
গ্রামের ঘরে জীবনধরা শাপলা সবুজ আকাশ তারা
ঘর থেকে ঘরে বন থেকে বনে
মন থেকে মনে তাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান
প্রানের কোকিল প্রানে ডাকে কুহুতান
জলের কলতানে ঘুম আসে
গ্রামের ছায়ায় হাত রেখে চোখে হাঁটি অফুরান
গ্রামের ঘরে জীবনধরা শাপলা সবুজ আকাশ তারা
ঘর থেকে ঘরে বন থেকে বনে
মন থেকে মনে তাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান
প্রানের কোকিল প্রানে ডাকে কুহুতান
জলের কলতানে ঘুম আসে
গ্রামের ছায়ায় হাত রেখে চোখে হাঁটি অফুরান
বৃহস্পতিবার, ১৮ মে, ২০১৭
ঘর থেকে এখনো প্রথম আলোর ভোর দেখা যায়
সবুজ পাতা নুয়ে পড়ে আঁধারে, আকাশের ঘর থেকে নেমে আসে বৃষ্টি, উদ্যান বন্ধ হয়ে যায় সময় করে, ফুল গাছটি কোনো দিন ঋতুকে আপন করে পাইনি-- তারা আসে তারা যায়, এক থেকে একাধিক ভাঁজে পালানো জীবন।
সূর্যের মতো কান্না হাসে, দূর্বাঘাসে বসে থাকে কতিপয় যুবক, পালতোলা নৌকার দামে তারা বিক্রি করে ইতিহাস, একটা একটা দিন করে ভালোলাগা মরে যায়, বেঁচে থাকে কতিপয় অসুখ, বাদাম ফুলের মতো ধূসর ধূসর অসুখ।
মলিন বেদনা কাজে লাগে না ঘরে কাজে লাগে না বাইরে, মলিন বেদনায় চলছে ঝকঝক ঝকঝক রেললাইন, আমাদের বাড়ির ঠিকানায় বহুবছর যাবৎ কোনো ডাক আসে না, সকাল বেলা নিয়ম করে পত্রিকা আসে, পত্রিকার পাতায় পাতায় দেয়ালের চিত্র, অসুখ আনন্দে মন ভরে ওঠে।
রাস্তার পাশে একটা বাতাস আনন্দ তো থাকতেই পারে, না, তাও থাকতে পারবে না, নিজের অসুখ নিজেই লালন করবে মানুষ, আমাদের বহুজাতিক বেরাম, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র লাল আলো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মানবিক বোধে, অফিস পেলে ঠিকই বেড়ানো বিড়াল বিপ্লবী মফিজ, জাস্ট স্বল্পদৈর্ঘ্য ক্রোধে আমাদের মিছিল আন্দোলন, হাত বদলে কমে আসে প্রীতিলতা ভোল্ট।
সংসারের নামে মেয়েটি মারা যায়, প্রেমের নামে ছেলেটি মারা খায়, মারা যাওয়া মারা খাওয়ার অভিজ্ঞতায় বাড়ছে জেনারেটর বিদ্যুৎ বিল ফেইসবুক বিলাসী কুহুতান-- অন্ধকার অনেক গভীর অন্ধকার।
নির্মোহ নির্মল সকালের নদী স্বপ্নে আসে আসে প্রিয় জলতান। আমাদের ঘর থেকে এখনো প্রথম আলোর ভোর দেখা যায়।
সূর্যের মতো কান্না হাসে, দূর্বাঘাসে বসে থাকে কতিপয় যুবক, পালতোলা নৌকার দামে তারা বিক্রি করে ইতিহাস, একটা একটা দিন করে ভালোলাগা মরে যায়, বেঁচে থাকে কতিপয় অসুখ, বাদাম ফুলের মতো ধূসর ধূসর অসুখ।
মলিন বেদনা কাজে লাগে না ঘরে কাজে লাগে না বাইরে, মলিন বেদনায় চলছে ঝকঝক ঝকঝক রেললাইন, আমাদের বাড়ির ঠিকানায় বহুবছর যাবৎ কোনো ডাক আসে না, সকাল বেলা নিয়ম করে পত্রিকা আসে, পত্রিকার পাতায় পাতায় দেয়ালের চিত্র, অসুখ আনন্দে মন ভরে ওঠে।
রাস্তার পাশে একটা বাতাস আনন্দ তো থাকতেই পারে, না, তাও থাকতে পারবে না, নিজের অসুখ নিজেই লালন করবে মানুষ, আমাদের বহুজাতিক বেরাম, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র লাল আলো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে মানবিক বোধে, অফিস পেলে ঠিকই বেড়ানো বিড়াল বিপ্লবী মফিজ, জাস্ট স্বল্পদৈর্ঘ্য ক্রোধে আমাদের মিছিল আন্দোলন, হাত বদলে কমে আসে প্রীতিলতা ভোল্ট।
সংসারের নামে মেয়েটি মারা যায়, প্রেমের নামে ছেলেটি মারা খায়, মারা যাওয়া মারা খাওয়ার অভিজ্ঞতায় বাড়ছে জেনারেটর বিদ্যুৎ বিল ফেইসবুক বিলাসী কুহুতান-- অন্ধকার অনেক গভীর অন্ধকার।
নির্মোহ নির্মল সকালের নদী স্বপ্নে আসে আসে প্রিয় জলতান। আমাদের ঘর থেকে এখনো প্রথম আলোর ভোর দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা দিবে,তাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন
বুধবার, ১৭ মে, ২০১৭
মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০১৭
মার্কেট
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি মার্কেট হলে আমিও একটা কাপড়ের দোকান দিব
শব্দ
আশেপাশে এতো শব্দ, হৃদয়ের শব্দ শুনি না, গন্ধের কাছে গেলে বুঝতে পারি নাক নামে একটি অঙ্গ আছে, চারপাশে এতো গন্ধ হৃদয়ের গন্ধ পাই না
সোমবার, ১৫ মে, ২০১৭
জানালা
জানালা দিয়ে অনেক দূর দেখা যায়, শরীর আটকে থাকে জানালায়
শনিবার, ১৩ মে, ২০১৭
এমন করে বলতে পারি
জীবনে কিছু অন্ধকার থাকে কখনো বদলায় না, জীবনে কিছু আলো থাকে কখনো বদলায় না, জীবনে অনেক প্রেম থাকে কখনো বদলায় না।
শুনেছি, অনেক কিছু নাকি বদলে যায়, শোনা কথাগুলো আজও বদলায় না।
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব যেমন করে আযান দিতেন এখনো দেন, মেঘনার ঢেউ যেমন করে বাপের বাড়ি নাইঅর যাইতো এখনো যায়, সারাদিনের ভুবন চিল যেমন করে খাবারে যৌবনে অতিবাহিত করতো সময় এখনো করে, বেকার যুবক যেমন করে চাকরির জন্য বুকের ভেতর জমা করতো দীর্ঘতম শ্বাস এখনো করে, এখনো ভোর হয় রাত আসে সিগারেট টানে ইমাম মামার টিস্টল।
বিপ্লব জিন্দাবাদ বলে এখনো তার হাতে নামে কুয়াশা আলুভাজা ডাল ভাত।
এখনো প্রেমিকদের হৃদয়ে জমা হয় হায় চিল বেদনা। সংসার মানে ঘর, ঘরের ভেতর এখনো জমা করে তারা আসবাব, লাল নীল হলুদ বর্নের কাগজ।
সব কিছু থেকে যায় সব কিছুর মতো, সব সম্পর্ক সব হাদিস কন্যা তেলশোধন কাহিনির সিন্দাবাদের জিন্দাবাদ শক্তিমানের রোমান্স।
একটা বদল কখনো এক হাজার জীবনে আসে না, অনেক হাজার বছর আগের ডারউইন বলেছিল এক বদলের কিসসা, আজও এই বদল নিয়ে যুদ্ধ সংগ্রাম ইতিহাস।
বাউল এখনো মনে করে পৃথিবীটা তার!
বাবা সন্তানের পিতা, সন্তান বাবা হলেও বদল হয় না কোনো, রূপান্তর থেকে রূপান্তরে মানুষের জীবন, সাহিত্যের নামে আজ যার বানিজ্যিক মন, ডাকাত হলেও সে গভীর প্রতারক।
প্রতারনা প্রেম অভিমান এক ঢাল থেকে আরেক ঢালে যায়, এক আকাশ থেকে আরেক আকাশে যায়, হয় নাকো বদল। পিঁয়াজের খোসার মতো পৃথিবীর জীবন-- এক বাঁক থেকে আরেক বাঁক, চন্দন ভাঁজ থেকে মদন ভাঁজ সব একই রকম সব একই রকম।
বলতে পারেন, মরিচের ঝাঁজ নেই আগের মতন সরিষায়ও ছেলেবেলা নেই যেমন তেমন, মরিচের সরিষার এমনকি সব কিছুর রূপান্তর জীবন।
রূপান্তরের তেপান্তরে কেটে যায় বেলা, প্রেম থেমে গেলে আসে অবহেলা।
পালকিতে চড়ে কন্যা স্বামীঘরে যায়, বাসর ঘরে স্বামী সুগন্ধি পানসুপারি খায়, গাড়িতে চড়ে কন্যা প্রেমিকের বাড়ি যায়, সঙ্গমের আগে প্রেমিক বায়াগ্রা খায়-- বদলায় না কিছু, বদলায় না শাষন শোষন, বদলায় না লেবু পাতা হলুদ আদর, রক্তের আপন মানসিক আপন।
শুনেছি, অনেক কিছু নাকি বদলে যায়, শোনা কথাগুলো আজও বদলায় না।
আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব যেমন করে আযান দিতেন এখনো দেন, মেঘনার ঢেউ যেমন করে বাপের বাড়ি নাইঅর যাইতো এখনো যায়, সারাদিনের ভুবন চিল যেমন করে খাবারে যৌবনে অতিবাহিত করতো সময় এখনো করে, বেকার যুবক যেমন করে চাকরির জন্য বুকের ভেতর জমা করতো দীর্ঘতম শ্বাস এখনো করে, এখনো ভোর হয় রাত আসে সিগারেট টানে ইমাম মামার টিস্টল।
বিপ্লব জিন্দাবাদ বলে এখনো তার হাতে নামে কুয়াশা আলুভাজা ডাল ভাত।
এখনো প্রেমিকদের হৃদয়ে জমা হয় হায় চিল বেদনা। সংসার মানে ঘর, ঘরের ভেতর এখনো জমা করে তারা আসবাব, লাল নীল হলুদ বর্নের কাগজ।
সব কিছু থেকে যায় সব কিছুর মতো, সব সম্পর্ক সব হাদিস কন্যা তেলশোধন কাহিনির সিন্দাবাদের জিন্দাবাদ শক্তিমানের রোমান্স।
একটা বদল কখনো এক হাজার জীবনে আসে না, অনেক হাজার বছর আগের ডারউইন বলেছিল এক বদলের কিসসা, আজও এই বদল নিয়ে যুদ্ধ সংগ্রাম ইতিহাস।
বাউল এখনো মনে করে পৃথিবীটা তার!
বাবা সন্তানের পিতা, সন্তান বাবা হলেও বদল হয় না কোনো, রূপান্তর থেকে রূপান্তরে মানুষের জীবন, সাহিত্যের নামে আজ যার বানিজ্যিক মন, ডাকাত হলেও সে গভীর প্রতারক।
প্রতারনা প্রেম অভিমান এক ঢাল থেকে আরেক ঢালে যায়, এক আকাশ থেকে আরেক আকাশে যায়, হয় নাকো বদল। পিঁয়াজের খোসার মতো পৃথিবীর জীবন-- এক বাঁক থেকে আরেক বাঁক, চন্দন ভাঁজ থেকে মদন ভাঁজ সব একই রকম সব একই রকম।
বলতে পারেন, মরিচের ঝাঁজ নেই আগের মতন সরিষায়ও ছেলেবেলা নেই যেমন তেমন, মরিচের সরিষার এমনকি সব কিছুর রূপান্তর জীবন।
রূপান্তরের তেপান্তরে কেটে যায় বেলা, প্রেম থেমে গেলে আসে অবহেলা।
পালকিতে চড়ে কন্যা স্বামীঘরে যায়, বাসর ঘরে স্বামী সুগন্ধি পানসুপারি খায়, গাড়িতে চড়ে কন্যা প্রেমিকের বাড়ি যায়, সঙ্গমের আগে প্রেমিক বায়াগ্রা খায়-- বদলায় না কিছু, বদলায় না শাষন শোষন, বদলায় না লেবু পাতা হলুদ আদর, রক্তের আপন মানসিক আপন।
বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০১৭
মিরপুর চিড়িয়াখানার প্রতিবেশী বোটানিকেল গার্ডেন
চিড়িয়াখানার পাশেই বোটানিকেল গার্ডেন। খুব সুন্দর। প্রানি দেখা হয়ে গেলে উদ্ভিদ দেখা। খুবই সুন্দর। তবে অনেকেই চিড়িয়াখানা দেখার পর আর বোটানিকেল গার্ডেনে যায় না। ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বোটানিকেল গার্ডেন কিন্তু সমস্ত ক্লান্তি দূর করার মতো ক্ষমতা রাখে!
চিড়িয়াখানায় আমার ছোট্ট কালে যাওয়ার কথা কিন্তু যাওয়া হয় নাই। যাওয়া যখন হলো তখন জীবনে আর ছোট কাল নেই, বিচার করার মানসিকতা চলে আসে।
শিশুরা সুখী কারন তারা বিচার করার মানসিকতা নিয়ে কারো সাথে মিশে না, তারা আনন্দ পাওয়ার বিনিময়ে আনন্দ বিনিয়োগ করে। তারা ভালোবাসতে গিয়ে কেঁদে ফেলে, তারা কাঁদতে গিয়ে ভালোবেসে ফেলে। ফলে জীবন মানে শিশুদের কাছে মাছ ধরা নয়, মাছ দেখা।
চিড়িয়াখানায় বাঘের মাংস খাওয়া দেখলাম, দেখলাম সাপের ঘুম, দেখলাম বিরহী বানরকে। সারস ক্রেনকেও দেখলাম। সারস সবুজ ডিম দেয়, বাংলাদেশে সারস পাখি সবচেয়ে বড় পাখি। আমরা যারা মানুষ সম্প্রদায়ের লোক তারা ময়ূরের মেখম মেলাকে পজেটিভভাবে দেখি কিন্তু একজন ময়ূর জানে পেখম মেলা কোনো পজেটিভ বিষয় নহে। পেখম মেলা আর ফনা তুলা একই কথা। সাপ যখন ফনা তুলে তখন সাপের গলায় চমৎকার এক ফুলচিহ্ন দেখা যায়, ময়ূরেরও তাই। প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর জন্য ময়ূর তার পেখম মেলে। পেখম মেলা ময়ূরের শরীরে তখন শুকনো সরিষা গাছের মতো ঝনঝন আওয়াজ ওঠে। আওয়াজ + রঙের খেলা। চমৎকার, চমৎকার সেই খেলা।
ধনেশ পাখি দেখলাম। আল মাহমুদের পানকৌড়ির রক্ত গল্পটির কথা মনে পড়ে। ধনেশ পাখি তার ঠোঁটের জন্য পপুলার। ঠোঁট বড় হওয়াতে চোখ তার খুবই ছোট। কাম পাখি ভারতবর্ষের পাখি না, তারপরও তা মিরপুর চিড়িয়াখানায় রয়েছে। হরিনকে দেখে নতুন এক উপলব্ধি মাথায় আসে। হরিনের মাথায় শিং মানে শক্ত জিনিস। আমাদের মেয়েদের মাথায় শিং নেই কিন্তু তামার কেউ কেউ সিলবারের কেউ কেউ পিতলের কাঁটা ব্যবহার করে।
দুর্বল প্রানিরা (দুর্বলতা ফিলিং এক মানসিক ব্যাপার) মাথায় প্রতিরক্ষা রাখে কেন?
বোটানিকেল গার্ডেনের পর্যবেক্ষন কেন্দ্রের পাশেই চায়ের দোকান। চায়ের দোকানের পাশে মসজিদ। দ্বীপ যেমন আনন্দ জাগানিয়া তেমনি এই চায়ের দোকানটি আনন্দ বিহার মনের একমাত্র অধিবাসী। চায়ের দোকানের আরেকটু সামনে গেলেই সুটিং স্পট। স্পটটি সুন্দর। খুবই সুন্দর।
বোটানিকেল গার্ডেনে একমাত্র রিকসা চালক সাঈদ ভাই। তার এক ছেলে তিন মেয়ে। ছেলের নাম রবি, বড় মেয়ের নাম বর্ষা, মেঝ মেয়ের নাম বৃষ্টি, ছোটজনের নাম বাগান। প্রত্যেকের নামের পেছনে শানেনযুল আছে। সাঈদ ভাইয়ের বড় মেয়ে যখন জন্মে তখন টইটম্বুর বর্ষা, বৃষ্টি হচ্ছে কয়েকদিন ধরে একটানা এমন সময় বৃষ্টি জন্মগ্রহন করে, বোটানিকেল গার্ডেনে জন্মে ছোট মেয়েটি, তাই তার নাম বাগান।
ছেলের নাম রবি কেন? কারন সে রবিবারের জন্মগ্রহন করেছে।
সাঈদ ভাইয়ের বউ এখানে পানি বিক্রি করে। সাঈদ ভাই আর সন্তান নিবে না, অপারেশন করিয়েছে। অপারেশন সে বউয়ের করায়নি নিজের করিয়েছে, বিনিময়ে সে পেয়েছে পনেরো শত টাকা।
সাঈদ ভাইকে আমি একটি আতরের বোতল উপহার দিয়েছি। সাঈদ ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার প্রিয় জিনিস কী? সে কোনো প্রকার দ্বিধাবোধ না করে বলে দিল সুগন্ধি।
ইন্ডিয়া যাওয়ার আগে বাংলা বিভাগের অফিস সহকারী সাঈদ ভাইয়ের সাথে বিভাগে দেখা। ভাইকে বললাম আপনার জন্য ইন্ডিয়া থেকে কী আনবো ... তিনিও কোনো প্রকার দ্বিধাবোধ না করে বলেছিলেন সুগন্ধি।
ইন্ডিয়া গেলাম, সুগন্ধি কিনলাম। কিন্তু বাংলাদেশে এসে আর সুগন্ধিটা পাই না। অনেক খুঁজেও পাইনি। ইতিমধ্যে সাঈদ ভাই চলে গেলেন পরকালে!
চিড়িয়াখানার টিকেট যখন আমি থ্রি কোয়ার্টারের নিচের পকেটে রাখতে গেলাম তখনই দেখি সেই সুগন্ধি। হাতে নিয়ে অনেকক্ষন চেয়ে রইলাম, সাঈদ ভাইয়ের মুখটা বার বার ভেসে ওঠলো।
কিন্তু রহস্যটা কেমন উদ্ভুত। সাঈদ ভাইকে সুগন্ধি দিতে পারেনি কিন্তু সাঈদ ভাইকেই দিয়েছি। বোটানিকেল গার্ডেনের সাঈদ ভাই অর্কিড গাছ বেশ ভালোবাসে, আমাদের সাঈদ ভাইও অর্কিড বেশ পছন্দ করতেন।
বোটানিকেল গার্ডেনের সাঈদ ভাইয়ের বুকেও মাঝেমধ্যে প্রচন্ড ব্যথা ওঠে, আমাদের সাঈদ ভাই বুকে ব্যথা নিয়ে পৃথিবী থেকে চলেই গেলেন। রহস্য আসলেই রহস্য। রহস্যের পৃথিবীতে আমরা আগন্তুক মাত্র!
চিড়িয়াখানায় আমার ছোট্ট কালে যাওয়ার কথা কিন্তু যাওয়া হয় নাই। যাওয়া যখন হলো তখন জীবনে আর ছোট কাল নেই, বিচার করার মানসিকতা চলে আসে।
শিশুরা সুখী কারন তারা বিচার করার মানসিকতা নিয়ে কারো সাথে মিশে না, তারা আনন্দ পাওয়ার বিনিময়ে আনন্দ বিনিয়োগ করে। তারা ভালোবাসতে গিয়ে কেঁদে ফেলে, তারা কাঁদতে গিয়ে ভালোবেসে ফেলে। ফলে জীবন মানে শিশুদের কাছে মাছ ধরা নয়, মাছ দেখা।
চিড়িয়াখানায় বাঘের মাংস খাওয়া দেখলাম, দেখলাম সাপের ঘুম, দেখলাম বিরহী বানরকে। সারস ক্রেনকেও দেখলাম। সারস সবুজ ডিম দেয়, বাংলাদেশে সারস পাখি সবচেয়ে বড় পাখি। আমরা যারা মানুষ সম্প্রদায়ের লোক তারা ময়ূরের মেখম মেলাকে পজেটিভভাবে দেখি কিন্তু একজন ময়ূর জানে পেখম মেলা কোনো পজেটিভ বিষয় নহে। পেখম মেলা আর ফনা তুলা একই কথা। সাপ যখন ফনা তুলে তখন সাপের গলায় চমৎকার এক ফুলচিহ্ন দেখা যায়, ময়ূরেরও তাই। প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর জন্য ময়ূর তার পেখম মেলে। পেখম মেলা ময়ূরের শরীরে তখন শুকনো সরিষা গাছের মতো ঝনঝন আওয়াজ ওঠে। আওয়াজ + রঙের খেলা। চমৎকার, চমৎকার সেই খেলা।
ধনেশ পাখি দেখলাম। আল মাহমুদের পানকৌড়ির রক্ত গল্পটির কথা মনে পড়ে। ধনেশ পাখি তার ঠোঁটের জন্য পপুলার। ঠোঁট বড় হওয়াতে চোখ তার খুবই ছোট। কাম পাখি ভারতবর্ষের পাখি না, তারপরও তা মিরপুর চিড়িয়াখানায় রয়েছে। হরিনকে দেখে নতুন এক উপলব্ধি মাথায় আসে। হরিনের মাথায় শিং মানে শক্ত জিনিস। আমাদের মেয়েদের মাথায় শিং নেই কিন্তু তামার কেউ কেউ সিলবারের কেউ কেউ পিতলের কাঁটা ব্যবহার করে।
দুর্বল প্রানিরা (দুর্বলতা ফিলিং এক মানসিক ব্যাপার) মাথায় প্রতিরক্ষা রাখে কেন?
বোটানিকেল গার্ডেনের পর্যবেক্ষন কেন্দ্রের পাশেই চায়ের দোকান। চায়ের দোকানের পাশে মসজিদ। দ্বীপ যেমন আনন্দ জাগানিয়া তেমনি এই চায়ের দোকানটি আনন্দ বিহার মনের একমাত্র অধিবাসী। চায়ের দোকানের আরেকটু সামনে গেলেই সুটিং স্পট। স্পটটি সুন্দর। খুবই সুন্দর।
বোটানিকেল গার্ডেনে একমাত্র রিকসা চালক সাঈদ ভাই। তার এক ছেলে তিন মেয়ে। ছেলের নাম রবি, বড় মেয়ের নাম বর্ষা, মেঝ মেয়ের নাম বৃষ্টি, ছোটজনের নাম বাগান। প্রত্যেকের নামের পেছনে শানেনযুল আছে। সাঈদ ভাইয়ের বড় মেয়ে যখন জন্মে তখন টইটম্বুর বর্ষা, বৃষ্টি হচ্ছে কয়েকদিন ধরে একটানা এমন সময় বৃষ্টি জন্মগ্রহন করে, বোটানিকেল গার্ডেনে জন্মে ছোট মেয়েটি, তাই তার নাম বাগান।
ছেলের নাম রবি কেন? কারন সে রবিবারের জন্মগ্রহন করেছে।
সাঈদ ভাইয়ের বউ এখানে পানি বিক্রি করে। সাঈদ ভাই আর সন্তান নিবে না, অপারেশন করিয়েছে। অপারেশন সে বউয়ের করায়নি নিজের করিয়েছে, বিনিময়ে সে পেয়েছে পনেরো শত টাকা।
সাঈদ ভাইকে আমি একটি আতরের বোতল উপহার দিয়েছি। সাঈদ ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার প্রিয় জিনিস কী? সে কোনো প্রকার দ্বিধাবোধ না করে বলে দিল সুগন্ধি।
ইন্ডিয়া যাওয়ার আগে বাংলা বিভাগের অফিস সহকারী সাঈদ ভাইয়ের সাথে বিভাগে দেখা। ভাইকে বললাম আপনার জন্য ইন্ডিয়া থেকে কী আনবো ... তিনিও কোনো প্রকার দ্বিধাবোধ না করে বলেছিলেন সুগন্ধি।
ইন্ডিয়া গেলাম, সুগন্ধি কিনলাম। কিন্তু বাংলাদেশে এসে আর সুগন্ধিটা পাই না। অনেক খুঁজেও পাইনি। ইতিমধ্যে সাঈদ ভাই চলে গেলেন পরকালে!
চিড়িয়াখানার টিকেট যখন আমি থ্রি কোয়ার্টারের নিচের পকেটে রাখতে গেলাম তখনই দেখি সেই সুগন্ধি। হাতে নিয়ে অনেকক্ষন চেয়ে রইলাম, সাঈদ ভাইয়ের মুখটা বার বার ভেসে ওঠলো।
কিন্তু রহস্যটা কেমন উদ্ভুত। সাঈদ ভাইকে সুগন্ধি দিতে পারেনি কিন্তু সাঈদ ভাইকেই দিয়েছি। বোটানিকেল গার্ডেনের সাঈদ ভাই অর্কিড গাছ বেশ ভালোবাসে, আমাদের সাঈদ ভাইও অর্কিড বেশ পছন্দ করতেন।
বোটানিকেল গার্ডেনের সাঈদ ভাইয়ের বুকেও মাঝেমধ্যে প্রচন্ড ব্যথা ওঠে, আমাদের সাঈদ ভাই বুকে ব্যথা নিয়ে পৃথিবী থেকে চলেই গেলেন। রহস্য আসলেই রহস্য। রহস্যের পৃথিবীতে আমরা আগন্তুক মাত্র!
শুক্রবার, ৫ মে, ২০১৭
ইন্ডিয়া ভ্রমনে কতটুকু সুখ
বলছিলাম তারিক আজিজ আমার উপরের সিটে নামাযও পড়ে আবার পাদও দেয়। বলিনি আরেকটি কথা। তারিক আজিজ বিসিএসের শিটও পড়ে। চাকরিটা তার পেতেই হবে। জানিনা বেলা নামে কেউ তার আছে কিনা যার কাছে চাকরি পেয়ে ফোন দিতে হবে-- "চাকরিটা আজ পেয়ে গেছি বেলা শুনছো।"
বেলা থাকুক আর না থাকুক তারিক আজিজের জন্য সময় বসে থাকে না। ভ্রমন হোক কিংবা বিয়ে বাড়ি হোক সাধারন জ্ঞান তার মুখস্থ করতেই হবে। সময় কারো জন্য বসে থাকে না। গ্রীন ভ্যালিতে আমরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ আর তারিক আজিজ শিট পড়ছে। বিসিএস ক্যাডার তার হতেই হবে। তারিক আজিজ যাতে ক্যাডার হতে পারে সেজন্যে আমাদের সবার প্রার্থনা অটুট থাকবে ইনশাল্লাহ।
ইসলামে আছে মুসাফিরের প্রার্থনা আল্লা কবুল করে। সফরে থাকলে মন একেবারে পবিত্র হয়ে আসে। আসল কথা গতির সাথে থাকলে মনে কখনো আবর্জনা জমতে পারে না। মুসাফির তো সেই যার মধ্যে যাবো যাবো একটা ভাব থাকে। যাব যাব ভাব যাওয়ার চেয়ে আনন্দের--
"মহতাজ যো মনজিল কা তো নাহি হ্যায় /একতরফা মেরা সফর /সফর খুব সরত হ্যা মনজিল সে ভি!"
ট্রেনজানালা জীবন্ত মনিটর। প্রকৃতি যে ডকুমেন্টারি তৈরি করে রেখেছে তা দেখায় সরাসরি। সরাসরি গতির কাছে গেলে ছোট হয়ে আসে অহংবোধ। ইন্ডিয়ান ট্রেন চলেও বেশ গতিতে। শুধু পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তার বুক চিড়ে যে টয় ট্রেন চলছিল তা টয় ট্রেনের মতো চলছিল বলা যায়। আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে নতুন জামাইয়ের হাঁটার মতো কিংবা চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের মতো।
ভ্রমন শুরুর দিন থেকে প্রায় পাঁচ দিন আমরা যানবাহনে ছিলাম। ইন্ডিয়ান রাস্তাঘাট ভালো। যোগাযোগের দিকে ইন্ডিয়ান সরকারের দৃষ্টি আরামদায়ক। কিন্তু...!
আগ্রা থেকে কলকাতা আসার সময় আমি এসি রুমে। এসি রুমে আমাদের সিট ছিল না। এসি রুমে যারা ছিলেন তাদের অনেকের সিট ক্যানসেল হওয়াতে আমাদের প্রমোশন হয়।ইন্ডিয়ান ট্রেনের এই সিস্টেমটা ভালো লেগেছে। টিকেট কেটে কেউ আসে নি। কোনো সমস্যা নেই। যার পেছনে আছে মানে নিচের ক্লাসে আছে তাদের প্রমোশন দিয়ে দাও। বেশ, হয়ে গেল।
এসি রুমের জানালায় ইন্ডিয়ান প্রকৃতি দেখছি। খুব ভালো লাগছে। ভোর হয়ে আসছে। লাল রঙের ডিমের মুখ দেখা যাচ্ছে পূর্ব দিকে। পৃথিবীর সব দেশেই পূর্ব দিক থেকে সূর্য দেখা যায়। এসিরুমগ্লাস আমার চশমাটার মতো-- সব কিছুকে সুন্দর দেখায়। সূর্য ততক্ষনে খুব ভালো করে জায়গা করে নিয়েছে। সব কিছু সুন্দর ও স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে। জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে আছি। দেখি। খুব স্পষ্ট করে দেখছি। পুটকি। মানুষের পুটকি। খোলা ময়দানে এক লোক আয়েস করে হাগু করছে। আরেকটু সামনে দেখি লাইন ধরে আড্ডা আড্ডা দিতে দিতে হাগু করছে। চিনারা আড্ডা দিতে দিতে খাবার খায়। আর তারা আড্ডা দিতে দিতে হাগু করে। ভালোই ত। আড্ডাটা হলো জীবনে আসল কথা।
আড্ডা জীবনের জন্য ভাতমাছের মতো জরুরী। তবে বাঙালি সমাজে একটি সমস্যা আছে-- ভাত মাছের চেয়ে আড্ডা গুরুত্বপূর্ন বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ফলে আড্ডা দেয়ার তেল ফুরিয়ে যায়, তেল ফুরিয়ে গেলে মানুষমিশিন অযথা গ্যাজর গ্যাজর করে।
আমাদের সাথে গ্যাজর গ্যাজর করার লোক কেউ নেই। সবাই ভেতরে ভেতরে অনেক কথা বলে কিন্তু বাইরে বাইরে খুব চুপচাপ। আমাদের মাঝে সবচেয়ে চুপচাপ আলমগীর, তারপর গিয়াস শামীম স্যার। বোলপুর থেকে হাওড়া যাওয়ার সময় স্যার জিন্সের পেন্ট পরেছেন। স্যারকে তখন চমৎকার লাগছিল। অবাকগনিতও করতে হয়েছে। কারন স্যার জিন্সের পেন্ট পরবেন আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারি না। স্যারকে তাঁর ব্যক্তিদর্শনের বাইরে কখনো কিছু করতে দেখিনি-- তিনি প্রতিনিয়ত নিজের ইচ্ছাদর্শকে প্রকাশ করে থাকেন কথায়, আচরনে, পোশাকে। এই ভ্রমনে স্যার আমাকে অনেকবার ধমক দিয়েছেন। স্যারের ধমক আমার কাছে খুব ভালো লাগে। স্যারের ধমক শুনে আমার মুখে অটোমেটিক হাসি চলে আসে। আমার আম্মা আমাকে ধমক দিয়ে আজ পর্যন্ত রাগাতে পারেন নি। আম্মার ধমক শুনে আমি হেসে দেই-- আম্মার তাতে বিশাল গর্ব " আমার হে কোনোদিন আমার লগে ছেত দেহাই নাই।"
আমি যে মাবাবার লগে রাগ দেখাই না তার একপ্রকার মানসিক কারন আছে। আমি মনে করি অভিভাবক যখন শাষন করতে পারেন তখন তারা মানসিকভাবে নিজেকে শক্তিশালী মনে করেন। একজন মানুষ মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকলে কোনো রোগব্যাধি সহজে আক্রমন করতে পারে না। অভিভাবক সুস্থ থাকুক এমন কামনা তো আমাদের সবার, তাই না?
ভ্রমনে কয়েকজন গ্যাজর গ্যাজর মানুষ না থাকলে ভ্রমন তেমন আনন্দের হয় না। ট্রেন কিন্তু গ্যাজর গ্যাজর করেই চলেছে। টয় ট্রেন তেমন গ্যাজর গ্যাজর করে না।
তবে টয় ট্রেন শাদা পোশাক পরিধান করে আনন্দ দিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে টয় ট্রেন বোরখাও পরে। বোরখা পরিধান করার জন্য ছেলেমেয়ে অর্থাৎ লিঙ্গজ্ঞান কোনো গুরুত্বপূর্ন বিষয় নহে। বোরখা ইসলামি পোষাক নহে, আরবি পোশাক। আরবে পুরুষদের বোরখা পরতে হয়।
মুজিব ভাই নামে আমগো এক বড় ভাই সৌদি আরব থাকেন। অনেক বছর পর পর সে দেশে আসে। তখন তার সব কাজ প্রায় আরবিময়। এমনকি বাংলা ভাষাও সে আরবির মতো নক্তা সমেত উচ্চারন করতে থাকে। একদিন দেখলাম সে তার ভাতিজার নাম ভুলে গ্যাছে, তাই তাকে ডাকছে ' ইয়া ভাতিজা ইয়া ভাতিজা'। ইয়া ভাতিজা তার পরবাসী ডাক শুনে বিশাল এক দৌঁড়। কারন আমাদের গ্রাম এলাকায় এক গোপন ধারনা আছে যে জ্বিন লম্বা হয় এবং আরবিতে কথা বলে।
আরেকটি কথা, দেশে এসে প্রথমে সে ঘরেও বোরখা পরে। কয়েকদিন যাওয়ার পর ঘরে বোরখা পরা বাদ দেয়। এখন বাইরে গেলে শুধু বোরখা পরে। কয়েকদিন এমন করে যায়। এখন শুধু সালাতের সময় বোরখা পরে যায়। কয়েকদিন এমন করে যায়। তারপর ঘটে আসল মানে রিয়েল ঘটনা-- লুঙ্গি ন্যাংটি দিয়ে কাম করতে নামে, আযান পড়ে, তার কাম শেষ হয় না, আর মাত্র অল্প সময় সালাতের জন্য বাকি, তাড়াতাড়ি করে মসজিদে যায়, শরীরে তখনো কাপড় পরিধান করেনি। তড়িঘড়ি করে সালাতে দাঁড়াচ্ছে আর কাপড় পরিধান করছে। এই হলো আমাদের মুজিব ভাই, মুজিব ভাইয়ের বোরখা রীতি।
তবে টয় ট্রেন যে নিয়ম নামক বোরখা পরিধান করে তা ভালোই লাগে। টয় ট্রেন আস্তে আস্তে চলে। মেট্রো রেল চলে টয় ট্রেনের তিনগুন গতিতে। কলকাতার মেট্রো রেল আর দিল্লীর মেট্রো রেলের মধ্যে বোরখাগত পার্থক্য আছে। শহুরে মেয়ে আর গ্রামীন মেয়ের বোরখাগত পার্থক্য। গ্রামীন মেয়ে বোরখা পরলে মনে হয় যেন ঝুপড়ি হেঁটে যাচ্ছে, শহুরে মেয়েকে বোরখায় একমাত্র অন্ধকারে একমাত্র মোমবাতি বলিয়া বোধ হয়।
তাজমহলে খুব সকাল সকাল আমাদের ঢুকার কথা। কিন্তু আমরা সকাল সকাল ঢুকতে পারবো না। আমরা আযান দিয়ে ঢুকতে পারবো না। ঢুকতে হবে চুপিচুপি। চোরের মতো। কারন আমরা বিদেশি হিসাবে ঢুকতে চাই না। আমরা ইন্ডিয়ান হিসাবে তাজমহলে ঢুকবো (এবার প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ এসেছে, কারন বাংলাদেশের অনেক লুন্ঠিত সম্পদ এই তাজমহল নির্মানে অবশ্যই ব্যবহার করা হয়েছে)।
ইন্ডিয়ান হিসাবে ঢুকলে টাকা কম। বিদেশি হিসাবে ঢুকলে পাঁচ শত রুপির উপরে। আমি একা সাধু হতে পারবো না এমন না, সাধু যারা আছেন তাদের আমলনামা আমার চেয়ে বেশ শক্তিশালী, তাই আমার আপাততঃ চুপ থাকা মানে স্রোতে তাল মেলানো মঙ্গলজনক নহে, উত্তম।
টিকেট চেকার আমার কাছে জানতে চাইনি আমি ইন্ডিয়ান কিনা, জানতে চাইলে সোজা বলে দিতাম আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। অনেকের কাছে জানতে চেয়েছে, তারা ফাঁকি দেয়ার চেষ্টাও করেছে কিন্তু ফাঁকি দিতে পারেনি।
আমরা যারা পাঁচ শত টাকার জন্য নিজের চরিত্র বিক্রি করতে পারি, আমাদের মানব ভাবনা যত সুন্দরই হোক পৃথিবীর কোনো কাজে আসবে না আমি নিশ্চিত। লালসালুর মজিদকে কিংবা পদ্মা নদীর মাঝির হোসেন মিয়াকে আমরা খুব নেগেটিভ চরিত্র হিসাবে উপস্থাপন করি কিন্তু সুযোগ পেলে আমরাও যে খুব বড় মানের মজিদ কিংবা হোসেন মিয়া হয়ে ওঠতে পারি তা প্রমানে সলাপে ধরা পড়ে। আরেফ আলীর তখন কিচ্ছু করার থাকে না-- জোছনা তখন তার মনে জীবন্ত লাশ, সুযোগ পেলে আমরা ভিখুর মতো সব কিছু আমার করে নিতে আমাদের বিন্দুমাত্র দ্বিধা হবে না। এই কারনেই একজন খাওয়ার কারনে মারা যায় অন্যজন না খেয়ে মারা যায়! প্রকৃতি কখনো বৈষম্য করে না, বৈষম্যের দেয়াল তৈরি করি আমরা, এই আমরা-- যারা ভালো ভালো ভালো কথা বলে পেটের দূষিত বাতাস কিছুটা হালকা করার চেষ্টা করি।
আবদুল হাফিজ চাচা এতো ভালো ভালো কথা বলেন না। কেবল নিজের কাজটি করে যান। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন, চাচা চাচি মিলে ফজরের সালাত কায়েম করেন। তারপর কোনোদিন ঘরে নাস্তা করেন কোনোদিন করেন না। তারপর বেরিয়ে পরেন তাজমহলের উদ্দেশ্যে।
হাফিজ চাচা তাজমহলে ছবি তুলেন। মানুষের ছবি। বিনিময়ে তিনি প্রতি জনের কাছ থেকে প্রতি ছবির জন্য বিশ টাকা নেন। তাঁর ছেলে মেয়ে দুজনই ইন্ডিয়ান সরকারের চাকর। খুব ভালো বেতনের চাকর। তারপরও চাচা কেন এখানে আসেন? অভ্যাস জাস্ট অভ্যাসের কারনে। অভ্যাসের বাইরেও আরেকটি কারন আছে। তা আমি খুব কষ্টে জানতে পেরেছি।
চাচা আমার চারটি ছবি তুলেন। আমার গরীব মোবাইল দিয়ে চাচার দুটি ছবি তুলি। চাচা খুব অবাক হয়েছেন। সাধারনত তিনি সবার ছবি তুলেন, আর আজকে কেউ তার ছবি তুলল, তাও আবার অত্যন্ত যত্ন করে।
বলছিলাম হাফিজ চাচা এখানে রোজ নিয়ম করে আসে একটি গোপন কারনকেও সামনে রেখে। যৌবনে এক নারীর ছবি তুলতে গিয়ে তার প্রেমে পড়েছিল যুবক হাফিজ। যমুনা নদীতে তখন নৌকা ছিল। নৌকাতে তারা অনেকটা সময় এক সাথে ভেসেছিল।
তখন মোবাইলের যুগ চালু হয়নি, চাচা ঠিকানা লিখে রাখে, ঠিকানা হারিয়ে যায়, সেই সাথে হারিয়ে যায় চাচার অবলা প্রেম। হাফিজ চাচার সেই প্রেমটাই ছিল একমাত্র, তাঁর জীবনে আর প্রেম আসেনি, সংসার এসেছে। সংসার আসতো না যদি না চাচা তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান না হতেন। চাচার বিশ্বাস তাঁর মধুমালা ঠিকই এখানে আরেকবার আসবে। তাই প্রতিদিন তিনি আশা নিয়ে আসেন, প্রতিদিনের শেষ সময় পর্যন্ত আশা রাখেন আজকে তার মধুমালার সাথে দেখা হবে। কিন্তু দেখা হয় না।
একটি দিন নিয়ম করে একটি রাতের সাথে মিলিত হচ্ছে, হাফিজ চাচার দীর্ঘশ্বাস কেবল দীর্ঘশ্বাসের সাথে মিলনের দিকে যায়-- দিন ফুরিয়ে যায় দিন ফুরিয়ে যায়, মন ফুরিয়ে যায় মন ফুরিয়ে যায় ....
দিন তখন ফুরিয়ে যাচ্ছে। দিন তখন আর কয়েক ঘন্টা বাকি যখন আমরা আগ্রার ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছি। খুব গরম এবং কম ঠান্ডা এমন সময় আমরা আগ্রায় পা রাখি। আগ্রার ভেতরে ঢুকে এক শাদা চামড়ার বিদেশি পরিবার দেখি। তাদের সাথে দুটি বাচ্চা। এক বাচ্চাকে সুন্দর খেলনা গাড়িতে বসিয়েছে, আরেক বাচ্চাকে নিজেদের দেহের সাথে রেখেছে। এক বাচ্চা গাড়িতে বসে আনন্দে আছে, আরেক বাচ্চা গাড়িতে বসা বাচ্চাকে মানে ভাই কিংবা বোনকে দেখে আনন্দে আছে। একটু পর পর বাচ্চাদের অবস্থান বদল হয়। ফলে বাচ্চাদের কান্নাকাটি করার সুযোগটা থাকেই না। আর আমাদের অভিভাবক যখন বাচ্চা নিয়ে কোথাও ঘুরতে যান, বাচ্চাও কান্দে অভিভাবকও কান্দে। বাচ্চা কান্দে স্বভাবে, অভিভাবক কান্দেন দুঃখে ( টাকা খরচ করে ঘুরতে যাওয়া বলে কথা)।
আগ্রার ভেতর একটি বিষয় দেখে খুব দুঃখ পেয়েছি। বাথটাব। বাথটাবটির উচ্চতা প্রায় বারো ফুট। এখানে মহারাজা স্নান করতেন। মহারাজ তার বাইজিদের সাথে সঙ্গমক্রিয়া শেষ করে এই বাথটাবে স্নান করতেন। বাথটাবটি তখন বিচিত্র ফুলজল দিয়ে সজ্জিত। ফুলের গন্ধ শরীরে মেখে মহারাজ তার সাংবিধানিক মানুষটির কাছে যেতেন।
এমন আরও অনেক কাজ তারা করতেন যা মানুষকে বঞ্চিত করার প্রাগৈতিহাসিক ফলাফল। মানুষ তখন মুখ খুলবার মতো সচেতন হয়ে ওঠেনি। মানুষ যাতে ঐক্যঘর না গড়তে পারে সে ব্যাপারে মহারাজাদের সতর্ক দৃষ্টি ছিল। মানসিক ঐক্য এটম বোমার চেয়ে শক্তিশালী।
আগ্রার ভেতরে একটি গ্রুপ দেখলাম চিনা অথবা জাপানিদের, তাদের হাঁটাচলা কর্মকান্ডে মানসিক ঐক্য স্পষ্ট। আর আমাদের সাতাশ জন সদস্যদের মধ্যে চল্লিশটা গ্রুপ। এই দ্বিধাবোধ গ্রুপিং মানসিকতার জন্য অবশ্যই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দায়ি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা লেং দেয়া নীতিবোধকে সামনে রেখে শতভাগ স্বাক্ষরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে অভিভাবক মহল জীবনের বানান না জানলেও প্রতিযোগিতার বানানরীতি খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করেছে। ফলে একটি মহল খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে আরেকটি মহল শক্তিশালীভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বলরা শক্তিশালীকে নিচের দিকে টানে, শক্তিশালীরা উপরের দিকে ওঠতে চায়। টানাটানিতে তাদের দিন যায়, টানাটানিতে আমাদের দিন যায়, ইহা এক অন্যরকম মহাজাগতিক খেলা, দিন ফুরিয়ে যায় ....
দিন ফুরিয়ে হয়তো রাত আসে। রাতে ঘুমিয়ে যাই কোনো এক ভোরকে সামনে রেখে। ভোরে নুরানি হাওয়া গতরে মাখতে মাখতে রাতের অনেক কথাই আমরা কষ্ঠভরা মনে গারগিল করি। কিন্তু তখন কিচ্ছু করার থাকে না, তখন শেখ মুজিবুর রহমান, কর্নেল তাহের, ইন্দিরা গান্ধী কেবল এক ইতিহাস, স্মৃতির ইতিহাস।
সব ইতিহাস স্মৃতি হয়ে ওঠতে পারে না। ইন্দিরা গান্ধী যিনি প্রচুর বই পড়তেন তার দিল্লির বাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে আমরা এই স্মৃতি মনে করি, বই পড়তেন বলেই হয়তো তাঁর কথায় স্পষ্ট স্পষ্ট এক দিগবলয় ছিল। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন এক আশ্রম, আর আশ্রম মানে এক সাংস্কৃতিক জীবনাচার। ইন্দিরা গান্ধী একটু হলেও তো আশ্রম সংস্কৃতি ধারন করতে পেরেছিলেন। আর রবীন্দ্র-আশ্রম-সংস্কৃতি রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের বটঝুড়ির ফাঁকের মতো সরল কিন্তু গতিশীল।
ইন্দিরা গান্ধীর একটি গতিশীল পা ছিল। কিন্তু এই যে বিশ্বাস। সত্যিকারের জীবনবোধ মানুষকে বিশ্বাসী এবং সরল করে তুলে। বিশ্বাসী ও সরল মানুষদের জায়গা এই পৃথিবীতে নেই। সত্যিই বলছি, শতভাগ ভালো মানুষ কারো মনের অলঙ্কার হয় না। যে মানুষ মিথ্যা চমৎকার সত্যের মতো করে বলতে পারে, যে মানুষ আশ্বাস দিয়ে প্রতারনা করতে পারে সেই মানুষই এখানে পূজনীয় আত্মা। আমাদের সাথের সবচেয়ে সরল মানুষ শাপলা। আমি তাকে শাপলা সুন্দরী ডাকি। তার নায়ক তার একমাত্র পৃথিবী। পৃথিবীর অতসী জটিলতায় তার কোনো আগ্রহ নেই। আমাদের তুনু যেমন মনভাসানিয়া কান্দনে জলের জোয়ার আনতে পারে তেমনি শাপলার ভেতরে একটি সরল গিরিদেশ আছে যার রাজধানী তার নায়ক। তার নায়ক তাকে অনেক ভালোবাসে। বাসে শাপলা সুন্দরী বমি করে। অনেক বমি। শাপলার নায়ক নিজের হাতে আজলা ভরে ভরে তা পরিষ্কার করে। এখানেই প্রেম। প্রেম চকচকে রেস্টুরেন্টের হালকা আলো ঘরে পাওয়া যায় না। আমি কথা দিয়েছি শাপলা সুন্দরীকে নিয়ে আমি একটা গান লিখবো। কখন লিখতে পারবো জানি না, কিন্তু লিখবো।
বলছিলাম আশ্রম সংস্কৃতির কথা। আশ্রম সংস্কৃতি মানুষকে যৌথ পদক্ষেপ শেখায়, আশ্রম সংস্কৃতি মানুষকে জলতান উপলব্ধি করতে সহায়তা করে। এখানে কেউ বড় কেউ ছোট নয়, সবাই গানের মানুষ, সবাই প্রানের মানুষ। এখানে দই বিক্রেতার কন্ঠেও মধুরতা আছে, প্রহরীর কাজেও আছে চমৎকার আনন্দ। অর্থাৎ আশ্রম সংস্কৃতি অমল মানসিকতা ধারন করে।
বুঝলেন তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর নাটকের অমলের কথা বলছি। অমলকে আমার এতো ভালো লাগে কেন আমি জানি না, হয়তো তার সঙ্গচেতনার জন্যে, হয়তো তার জীবনবাদী মৌলিক জিজ্ঞাসার জন্য। আমার তো পথের দাবির সব্যসাচীকেও ভালো লাগে, ভালো লাগে টিনের তলোয়ারের বেনীমাধবকেও।
ভালো লাগে না রবি বাবুর পোষ্ট মাস্টারকে, বিভূতিভূষনের উপেক্ষিতা গল্পের বিমলকে। রবি বাবুর গাড়িটিও আমার ভালো লাগে না। এতো দামি গাড়ি তিনি ব্যবহার করবেন কেন? তবে প্রয়োজন নামক শব্দে একটা উত্তর থেকে যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি আদর্শিক এলাকা আমাকে খুব মুগ্ধ করে।
তখন শান্তিনিকেতন কেবল হচ্ছে হচ্ছে। ঘরবাড়ি তেমন করে ডানা মেলেনি। বর্ষাকাল। বৃষ্টি হচ্ছে। এখনো বৃষ্টি হয়। কিন্তু এখনকার বৃষ্টির মধ্যে তেমন তেজ নেই। একটানা ঝুমকোজবা বৃষ্টি হচ্ছে। ছাত্রদের ঘরে বৃষ্টি পড়ছে। ছাত্ররা অভিযোগ জানাতে ক্ষিতিমোহন দত্তের কাছে গেলেন। তাঁর ঘরেও বৃষ্টি পড়ছে। তারপর তিনি ছাত্রদের বললেন চলো আমরা কবি গুরুর কাছে যাই। তারা চলল রবীন্দ্রনাথের ঘর অভিমুখে। গিয়ে দেখলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঘরের এক কোনায় বসে আছেন। তাঁর ঘরেও বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি তাঁকে কোনামুখী করে তুলে। কী আর অভিযোগ জানাবে, এই অবস্থা দেখেই সবাই হতবাক। তারপরও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বললেন তোমরা যেহেতু এসেছো একটি গান লিখেছি, শুনে যাও "ও আমার ঘুম ভাঙানিয়া "।
আর আমরা আগে নিজের আসন ঠিক করে অন্যের দিকে দৃষ্টি দেই। তাও আবার ঐখানে আমার আসন পাকাপোক্ত করার কোনো ব্যাপার আছে কিনা তা নিয়ে ভাবি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদার সন্তান হয়েও আশ্রম সংস্কৃতি পালনে সচেতন। অন্যভাবে দেখলে পরিবারও তো একটি আশ্রম। প্রাথমিক আশ্রম সন্তানের জন্য। এখানে বাঙালি সন্তান দ্বিধাবোধ শিক্ষা পায়। পরিবার শিক্ষা দেয় একা একা যখন কিছু খেতে চাও দরজা বন্ধ করে খাও, অন্যরা দেখলে চোখ লাগায় দিব, পেট খারাপ করবো।
ফলত জেনারেশন হচ্ছে বধির বোবা অন্ধ। তবে কায়নাতের একটি কথা খুব ভালো লেগেছে। কায়নাত বায়াতুল্লাহ কাদেরী স্যারের বড় ছেলে। আমরা তখন বাংলাদেশে ঢুকে গেছি। বাসে বসা। সে বলছে, ভাই নিজেকে এখন মাইকেল মধুসূদন মধুসূদন মনে হচ্ছে।
কেন?
দেশের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে গেছে, আমরা তো পারি সবাই মিলে দেশটাকে সুন্দর করতে।
অবশ্যই কায়নাত, আমরা পারি, আমরা জীবনের প্রত্যেকটি ভাঁজ সুন্দর করে অনুপম নিরুপমা করে তুলতে পারি।
তাহনু যারিওন।
মানে কী?
মানে হলো কৃষিকাজ।
প্রভু নিজেও কৃষক। তাইতো এই পৃথিবী চাষ করলেন। আমরা যদি নিজেদের চাষ করতে পারি তাহলে পৃথিবী ও আমাদের জীবনের এক অর্থময় বাঁক তৈরি হবে।
ততক্ষনে আমরা জলে ভাসছি। কায়নাতও ভাবনায় ভাসতে থাকে ....
বেলা থাকুক আর না থাকুক তারিক আজিজের জন্য সময় বসে থাকে না। ভ্রমন হোক কিংবা বিয়ে বাড়ি হোক সাধারন জ্ঞান তার মুখস্থ করতেই হবে। সময় কারো জন্য বসে থাকে না। গ্রীন ভ্যালিতে আমরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ আর তারিক আজিজ শিট পড়ছে। বিসিএস ক্যাডার তার হতেই হবে। তারিক আজিজ যাতে ক্যাডার হতে পারে সেজন্যে আমাদের সবার প্রার্থনা অটুট থাকবে ইনশাল্লাহ।
ইসলামে আছে মুসাফিরের প্রার্থনা আল্লা কবুল করে। সফরে থাকলে মন একেবারে পবিত্র হয়ে আসে। আসল কথা গতির সাথে থাকলে মনে কখনো আবর্জনা জমতে পারে না। মুসাফির তো সেই যার মধ্যে যাবো যাবো একটা ভাব থাকে। যাব যাব ভাব যাওয়ার চেয়ে আনন্দের--
"মহতাজ যো মনজিল কা তো নাহি হ্যায় /একতরফা মেরা সফর /সফর খুব সরত হ্যা মনজিল সে ভি!"
ট্রেনজানালা জীবন্ত মনিটর। প্রকৃতি যে ডকুমেন্টারি তৈরি করে রেখেছে তা দেখায় সরাসরি। সরাসরি গতির কাছে গেলে ছোট হয়ে আসে অহংবোধ। ইন্ডিয়ান ট্রেন চলেও বেশ গতিতে। শুধু পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তার বুক চিড়ে যে টয় ট্রেন চলছিল তা টয় ট্রেনের মতো চলছিল বলা যায়। আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে নতুন জামাইয়ের হাঁটার মতো কিংবা চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের মতো।
ভ্রমন শুরুর দিন থেকে প্রায় পাঁচ দিন আমরা যানবাহনে ছিলাম। ইন্ডিয়ান রাস্তাঘাট ভালো। যোগাযোগের দিকে ইন্ডিয়ান সরকারের দৃষ্টি আরামদায়ক। কিন্তু...!
আগ্রা থেকে কলকাতা আসার সময় আমি এসি রুমে। এসি রুমে আমাদের সিট ছিল না। এসি রুমে যারা ছিলেন তাদের অনেকের সিট ক্যানসেল হওয়াতে আমাদের প্রমোশন হয়।ইন্ডিয়ান ট্রেনের এই সিস্টেমটা ভালো লেগেছে। টিকেট কেটে কেউ আসে নি। কোনো সমস্যা নেই। যার পেছনে আছে মানে নিচের ক্লাসে আছে তাদের প্রমোশন দিয়ে দাও। বেশ, হয়ে গেল।
এসি রুমের জানালায় ইন্ডিয়ান প্রকৃতি দেখছি। খুব ভালো লাগছে। ভোর হয়ে আসছে। লাল রঙের ডিমের মুখ দেখা যাচ্ছে পূর্ব দিকে। পৃথিবীর সব দেশেই পূর্ব দিক থেকে সূর্য দেখা যায়। এসিরুমগ্লাস আমার চশমাটার মতো-- সব কিছুকে সুন্দর দেখায়। সূর্য ততক্ষনে খুব ভালো করে জায়গা করে নিয়েছে। সব কিছু সুন্দর ও স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে। জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে আছি। দেখি। খুব স্পষ্ট করে দেখছি। পুটকি। মানুষের পুটকি। খোলা ময়দানে এক লোক আয়েস করে হাগু করছে। আরেকটু সামনে দেখি লাইন ধরে আড্ডা আড্ডা দিতে দিতে হাগু করছে। চিনারা আড্ডা দিতে দিতে খাবার খায়। আর তারা আড্ডা দিতে দিতে হাগু করে। ভালোই ত। আড্ডাটা হলো জীবনে আসল কথা।
আড্ডা জীবনের জন্য ভাতমাছের মতো জরুরী। তবে বাঙালি সমাজে একটি সমস্যা আছে-- ভাত মাছের চেয়ে আড্ডা গুরুত্বপূর্ন বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ফলে আড্ডা দেয়ার তেল ফুরিয়ে যায়, তেল ফুরিয়ে গেলে মানুষমিশিন অযথা গ্যাজর গ্যাজর করে।
আমাদের সাথে গ্যাজর গ্যাজর করার লোক কেউ নেই। সবাই ভেতরে ভেতরে অনেক কথা বলে কিন্তু বাইরে বাইরে খুব চুপচাপ। আমাদের মাঝে সবচেয়ে চুপচাপ আলমগীর, তারপর গিয়াস শামীম স্যার। বোলপুর থেকে হাওড়া যাওয়ার সময় স্যার জিন্সের পেন্ট পরেছেন। স্যারকে তখন চমৎকার লাগছিল। অবাকগনিতও করতে হয়েছে। কারন স্যার জিন্সের পেন্ট পরবেন আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারি না। স্যারকে তাঁর ব্যক্তিদর্শনের বাইরে কখনো কিছু করতে দেখিনি-- তিনি প্রতিনিয়ত নিজের ইচ্ছাদর্শকে প্রকাশ করে থাকেন কথায়, আচরনে, পোশাকে। এই ভ্রমনে স্যার আমাকে অনেকবার ধমক দিয়েছেন। স্যারের ধমক আমার কাছে খুব ভালো লাগে। স্যারের ধমক শুনে আমার মুখে অটোমেটিক হাসি চলে আসে। আমার আম্মা আমাকে ধমক দিয়ে আজ পর্যন্ত রাগাতে পারেন নি। আম্মার ধমক শুনে আমি হেসে দেই-- আম্মার তাতে বিশাল গর্ব " আমার হে কোনোদিন আমার লগে ছেত দেহাই নাই।"
আমি যে মাবাবার লগে রাগ দেখাই না তার একপ্রকার মানসিক কারন আছে। আমি মনে করি অভিভাবক যখন শাষন করতে পারেন তখন তারা মানসিকভাবে নিজেকে শক্তিশালী মনে করেন। একজন মানুষ মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকলে কোনো রোগব্যাধি সহজে আক্রমন করতে পারে না। অভিভাবক সুস্থ থাকুক এমন কামনা তো আমাদের সবার, তাই না?
ভ্রমনে কয়েকজন গ্যাজর গ্যাজর মানুষ না থাকলে ভ্রমন তেমন আনন্দের হয় না। ট্রেন কিন্তু গ্যাজর গ্যাজর করেই চলেছে। টয় ট্রেন তেমন গ্যাজর গ্যাজর করে না।
তবে টয় ট্রেন শাদা পোশাক পরিধান করে আনন্দ দিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে টয় ট্রেন বোরখাও পরে। বোরখা পরিধান করার জন্য ছেলেমেয়ে অর্থাৎ লিঙ্গজ্ঞান কোনো গুরুত্বপূর্ন বিষয় নহে। বোরখা ইসলামি পোষাক নহে, আরবি পোশাক। আরবে পুরুষদের বোরখা পরতে হয়।
মুজিব ভাই নামে আমগো এক বড় ভাই সৌদি আরব থাকেন। অনেক বছর পর পর সে দেশে আসে। তখন তার সব কাজ প্রায় আরবিময়। এমনকি বাংলা ভাষাও সে আরবির মতো নক্তা সমেত উচ্চারন করতে থাকে। একদিন দেখলাম সে তার ভাতিজার নাম ভুলে গ্যাছে, তাই তাকে ডাকছে ' ইয়া ভাতিজা ইয়া ভাতিজা'। ইয়া ভাতিজা তার পরবাসী ডাক শুনে বিশাল এক দৌঁড়। কারন আমাদের গ্রাম এলাকায় এক গোপন ধারনা আছে যে জ্বিন লম্বা হয় এবং আরবিতে কথা বলে।
আরেকটি কথা, দেশে এসে প্রথমে সে ঘরেও বোরখা পরে। কয়েকদিন যাওয়ার পর ঘরে বোরখা পরা বাদ দেয়। এখন বাইরে গেলে শুধু বোরখা পরে। কয়েকদিন এমন করে যায়। এখন শুধু সালাতের সময় বোরখা পরে যায়। কয়েকদিন এমন করে যায়। তারপর ঘটে আসল মানে রিয়েল ঘটনা-- লুঙ্গি ন্যাংটি দিয়ে কাম করতে নামে, আযান পড়ে, তার কাম শেষ হয় না, আর মাত্র অল্প সময় সালাতের জন্য বাকি, তাড়াতাড়ি করে মসজিদে যায়, শরীরে তখনো কাপড় পরিধান করেনি। তড়িঘড়ি করে সালাতে দাঁড়াচ্ছে আর কাপড় পরিধান করছে। এই হলো আমাদের মুজিব ভাই, মুজিব ভাইয়ের বোরখা রীতি।
তবে টয় ট্রেন যে নিয়ম নামক বোরখা পরিধান করে তা ভালোই লাগে। টয় ট্রেন আস্তে আস্তে চলে। মেট্রো রেল চলে টয় ট্রেনের তিনগুন গতিতে। কলকাতার মেট্রো রেল আর দিল্লীর মেট্রো রেলের মধ্যে বোরখাগত পার্থক্য আছে। শহুরে মেয়ে আর গ্রামীন মেয়ের বোরখাগত পার্থক্য। গ্রামীন মেয়ে বোরখা পরলে মনে হয় যেন ঝুপড়ি হেঁটে যাচ্ছে, শহুরে মেয়েকে বোরখায় একমাত্র অন্ধকারে একমাত্র মোমবাতি বলিয়া বোধ হয়।
তাজমহলে খুব সকাল সকাল আমাদের ঢুকার কথা। কিন্তু আমরা সকাল সকাল ঢুকতে পারবো না। আমরা আযান দিয়ে ঢুকতে পারবো না। ঢুকতে হবে চুপিচুপি। চোরের মতো। কারন আমরা বিদেশি হিসাবে ঢুকতে চাই না। আমরা ইন্ডিয়ান হিসাবে তাজমহলে ঢুকবো (এবার প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ এসেছে, কারন বাংলাদেশের অনেক লুন্ঠিত সম্পদ এই তাজমহল নির্মানে অবশ্যই ব্যবহার করা হয়েছে)।
ইন্ডিয়ান হিসাবে ঢুকলে টাকা কম। বিদেশি হিসাবে ঢুকলে পাঁচ শত রুপির উপরে। আমি একা সাধু হতে পারবো না এমন না, সাধু যারা আছেন তাদের আমলনামা আমার চেয়ে বেশ শক্তিশালী, তাই আমার আপাততঃ চুপ থাকা মানে স্রোতে তাল মেলানো মঙ্গলজনক নহে, উত্তম।
টিকেট চেকার আমার কাছে জানতে চাইনি আমি ইন্ডিয়ান কিনা, জানতে চাইলে সোজা বলে দিতাম আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। অনেকের কাছে জানতে চেয়েছে, তারা ফাঁকি দেয়ার চেষ্টাও করেছে কিন্তু ফাঁকি দিতে পারেনি।
আমরা যারা পাঁচ শত টাকার জন্য নিজের চরিত্র বিক্রি করতে পারি, আমাদের মানব ভাবনা যত সুন্দরই হোক পৃথিবীর কোনো কাজে আসবে না আমি নিশ্চিত। লালসালুর মজিদকে কিংবা পদ্মা নদীর মাঝির হোসেন মিয়াকে আমরা খুব নেগেটিভ চরিত্র হিসাবে উপস্থাপন করি কিন্তু সুযোগ পেলে আমরাও যে খুব বড় মানের মজিদ কিংবা হোসেন মিয়া হয়ে ওঠতে পারি তা প্রমানে সলাপে ধরা পড়ে। আরেফ আলীর তখন কিচ্ছু করার থাকে না-- জোছনা তখন তার মনে জীবন্ত লাশ, সুযোগ পেলে আমরা ভিখুর মতো সব কিছু আমার করে নিতে আমাদের বিন্দুমাত্র দ্বিধা হবে না। এই কারনেই একজন খাওয়ার কারনে মারা যায় অন্যজন না খেয়ে মারা যায়! প্রকৃতি কখনো বৈষম্য করে না, বৈষম্যের দেয়াল তৈরি করি আমরা, এই আমরা-- যারা ভালো ভালো ভালো কথা বলে পেটের দূষিত বাতাস কিছুটা হালকা করার চেষ্টা করি।
আবদুল হাফিজ চাচা এতো ভালো ভালো কথা বলেন না। কেবল নিজের কাজটি করে যান। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন, চাচা চাচি মিলে ফজরের সালাত কায়েম করেন। তারপর কোনোদিন ঘরে নাস্তা করেন কোনোদিন করেন না। তারপর বেরিয়ে পরেন তাজমহলের উদ্দেশ্যে।
হাফিজ চাচা তাজমহলে ছবি তুলেন। মানুষের ছবি। বিনিময়ে তিনি প্রতি জনের কাছ থেকে প্রতি ছবির জন্য বিশ টাকা নেন। তাঁর ছেলে মেয়ে দুজনই ইন্ডিয়ান সরকারের চাকর। খুব ভালো বেতনের চাকর। তারপরও চাচা কেন এখানে আসেন? অভ্যাস জাস্ট অভ্যাসের কারনে। অভ্যাসের বাইরেও আরেকটি কারন আছে। তা আমি খুব কষ্টে জানতে পেরেছি।
চাচা আমার চারটি ছবি তুলেন। আমার গরীব মোবাইল দিয়ে চাচার দুটি ছবি তুলি। চাচা খুব অবাক হয়েছেন। সাধারনত তিনি সবার ছবি তুলেন, আর আজকে কেউ তার ছবি তুলল, তাও আবার অত্যন্ত যত্ন করে।
বলছিলাম হাফিজ চাচা এখানে রোজ নিয়ম করে আসে একটি গোপন কারনকেও সামনে রেখে। যৌবনে এক নারীর ছবি তুলতে গিয়ে তার প্রেমে পড়েছিল যুবক হাফিজ। যমুনা নদীতে তখন নৌকা ছিল। নৌকাতে তারা অনেকটা সময় এক সাথে ভেসেছিল।
তখন মোবাইলের যুগ চালু হয়নি, চাচা ঠিকানা লিখে রাখে, ঠিকানা হারিয়ে যায়, সেই সাথে হারিয়ে যায় চাচার অবলা প্রেম। হাফিজ চাচার সেই প্রেমটাই ছিল একমাত্র, তাঁর জীবনে আর প্রেম আসেনি, সংসার এসেছে। সংসার আসতো না যদি না চাচা তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান না হতেন। চাচার বিশ্বাস তাঁর মধুমালা ঠিকই এখানে আরেকবার আসবে। তাই প্রতিদিন তিনি আশা নিয়ে আসেন, প্রতিদিনের শেষ সময় পর্যন্ত আশা রাখেন আজকে তার মধুমালার সাথে দেখা হবে। কিন্তু দেখা হয় না।
একটি দিন নিয়ম করে একটি রাতের সাথে মিলিত হচ্ছে, হাফিজ চাচার দীর্ঘশ্বাস কেবল দীর্ঘশ্বাসের সাথে মিলনের দিকে যায়-- দিন ফুরিয়ে যায় দিন ফুরিয়ে যায়, মন ফুরিয়ে যায় মন ফুরিয়ে যায় ....
দিন তখন ফুরিয়ে যাচ্ছে। দিন তখন আর কয়েক ঘন্টা বাকি যখন আমরা আগ্রার ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছি। খুব গরম এবং কম ঠান্ডা এমন সময় আমরা আগ্রায় পা রাখি। আগ্রার ভেতরে ঢুকে এক শাদা চামড়ার বিদেশি পরিবার দেখি। তাদের সাথে দুটি বাচ্চা। এক বাচ্চাকে সুন্দর খেলনা গাড়িতে বসিয়েছে, আরেক বাচ্চাকে নিজেদের দেহের সাথে রেখেছে। এক বাচ্চা গাড়িতে বসে আনন্দে আছে, আরেক বাচ্চা গাড়িতে বসা বাচ্চাকে মানে ভাই কিংবা বোনকে দেখে আনন্দে আছে। একটু পর পর বাচ্চাদের অবস্থান বদল হয়। ফলে বাচ্চাদের কান্নাকাটি করার সুযোগটা থাকেই না। আর আমাদের অভিভাবক যখন বাচ্চা নিয়ে কোথাও ঘুরতে যান, বাচ্চাও কান্দে অভিভাবকও কান্দে। বাচ্চা কান্দে স্বভাবে, অভিভাবক কান্দেন দুঃখে ( টাকা খরচ করে ঘুরতে যাওয়া বলে কথা)।
আগ্রার ভেতর একটি বিষয় দেখে খুব দুঃখ পেয়েছি। বাথটাব। বাথটাবটির উচ্চতা প্রায় বারো ফুট। এখানে মহারাজা স্নান করতেন। মহারাজ তার বাইজিদের সাথে সঙ্গমক্রিয়া শেষ করে এই বাথটাবে স্নান করতেন। বাথটাবটি তখন বিচিত্র ফুলজল দিয়ে সজ্জিত। ফুলের গন্ধ শরীরে মেখে মহারাজ তার সাংবিধানিক মানুষটির কাছে যেতেন।
এমন আরও অনেক কাজ তারা করতেন যা মানুষকে বঞ্চিত করার প্রাগৈতিহাসিক ফলাফল। মানুষ তখন মুখ খুলবার মতো সচেতন হয়ে ওঠেনি। মানুষ যাতে ঐক্যঘর না গড়তে পারে সে ব্যাপারে মহারাজাদের সতর্ক দৃষ্টি ছিল। মানসিক ঐক্য এটম বোমার চেয়ে শক্তিশালী।
আগ্রার ভেতরে একটি গ্রুপ দেখলাম চিনা অথবা জাপানিদের, তাদের হাঁটাচলা কর্মকান্ডে মানসিক ঐক্য স্পষ্ট। আর আমাদের সাতাশ জন সদস্যদের মধ্যে চল্লিশটা গ্রুপ। এই দ্বিধাবোধ গ্রুপিং মানসিকতার জন্য অবশ্যই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা দায়ি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা লেং দেয়া নীতিবোধকে সামনে রেখে শতভাগ স্বাক্ষরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে অভিভাবক মহল জীবনের বানান না জানলেও প্রতিযোগিতার বানানরীতি খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করেছে। ফলে একটি মহল খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে আরেকটি মহল শক্তিশালীভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বলরা শক্তিশালীকে নিচের দিকে টানে, শক্তিশালীরা উপরের দিকে ওঠতে চায়। টানাটানিতে তাদের দিন যায়, টানাটানিতে আমাদের দিন যায়, ইহা এক অন্যরকম মহাজাগতিক খেলা, দিন ফুরিয়ে যায় ....
দিন ফুরিয়ে হয়তো রাত আসে। রাতে ঘুমিয়ে যাই কোনো এক ভোরকে সামনে রেখে। ভোরে নুরানি হাওয়া গতরে মাখতে মাখতে রাতের অনেক কথাই আমরা কষ্ঠভরা মনে গারগিল করি। কিন্তু তখন কিচ্ছু করার থাকে না, তখন শেখ মুজিবুর রহমান, কর্নেল তাহের, ইন্দিরা গান্ধী কেবল এক ইতিহাস, স্মৃতির ইতিহাস।
সব ইতিহাস স্মৃতি হয়ে ওঠতে পারে না। ইন্দিরা গান্ধী যিনি প্রচুর বই পড়তেন তার দিল্লির বাড়িতে ঘুরতে ঘুরতে আমরা এই স্মৃতি মনে করি, বই পড়তেন বলেই হয়তো তাঁর কথায় স্পষ্ট স্পষ্ট এক দিগবলয় ছিল। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন এক আশ্রম, আর আশ্রম মানে এক সাংস্কৃতিক জীবনাচার। ইন্দিরা গান্ধী একটু হলেও তো আশ্রম সংস্কৃতি ধারন করতে পেরেছিলেন। আর রবীন্দ্র-আশ্রম-সংস্কৃতি রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের বটঝুড়ির ফাঁকের মতো সরল কিন্তু গতিশীল।
ইন্দিরা গান্ধীর একটি গতিশীল পা ছিল। কিন্তু এই যে বিশ্বাস। সত্যিকারের জীবনবোধ মানুষকে বিশ্বাসী এবং সরল করে তুলে। বিশ্বাসী ও সরল মানুষদের জায়গা এই পৃথিবীতে নেই। সত্যিই বলছি, শতভাগ ভালো মানুষ কারো মনের অলঙ্কার হয় না। যে মানুষ মিথ্যা চমৎকার সত্যের মতো করে বলতে পারে, যে মানুষ আশ্বাস দিয়ে প্রতারনা করতে পারে সেই মানুষই এখানে পূজনীয় আত্মা। আমাদের সাথের সবচেয়ে সরল মানুষ শাপলা। আমি তাকে শাপলা সুন্দরী ডাকি। তার নায়ক তার একমাত্র পৃথিবী। পৃথিবীর অতসী জটিলতায় তার কোনো আগ্রহ নেই। আমাদের তুনু যেমন মনভাসানিয়া কান্দনে জলের জোয়ার আনতে পারে তেমনি শাপলার ভেতরে একটি সরল গিরিদেশ আছে যার রাজধানী তার নায়ক। তার নায়ক তাকে অনেক ভালোবাসে। বাসে শাপলা সুন্দরী বমি করে। অনেক বমি। শাপলার নায়ক নিজের হাতে আজলা ভরে ভরে তা পরিষ্কার করে। এখানেই প্রেম। প্রেম চকচকে রেস্টুরেন্টের হালকা আলো ঘরে পাওয়া যায় না। আমি কথা দিয়েছি শাপলা সুন্দরীকে নিয়ে আমি একটা গান লিখবো। কখন লিখতে পারবো জানি না, কিন্তু লিখবো।
বলছিলাম আশ্রম সংস্কৃতির কথা। আশ্রম সংস্কৃতি মানুষকে যৌথ পদক্ষেপ শেখায়, আশ্রম সংস্কৃতি মানুষকে জলতান উপলব্ধি করতে সহায়তা করে। এখানে কেউ বড় কেউ ছোট নয়, সবাই গানের মানুষ, সবাই প্রানের মানুষ। এখানে দই বিক্রেতার কন্ঠেও মধুরতা আছে, প্রহরীর কাজেও আছে চমৎকার আনন্দ। অর্থাৎ আশ্রম সংস্কৃতি অমল মানসিকতা ধারন করে।
বুঝলেন তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর নাটকের অমলের কথা বলছি। অমলকে আমার এতো ভালো লাগে কেন আমি জানি না, হয়তো তার সঙ্গচেতনার জন্যে, হয়তো তার জীবনবাদী মৌলিক জিজ্ঞাসার জন্য। আমার তো পথের দাবির সব্যসাচীকেও ভালো লাগে, ভালো লাগে টিনের তলোয়ারের বেনীমাধবকেও।
ভালো লাগে না রবি বাবুর পোষ্ট মাস্টারকে, বিভূতিভূষনের উপেক্ষিতা গল্পের বিমলকে। রবি বাবুর গাড়িটিও আমার ভালো লাগে না। এতো দামি গাড়ি তিনি ব্যবহার করবেন কেন? তবে প্রয়োজন নামক শব্দে একটা উত্তর থেকে যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি আদর্শিক এলাকা আমাকে খুব মুগ্ধ করে।
তখন শান্তিনিকেতন কেবল হচ্ছে হচ্ছে। ঘরবাড়ি তেমন করে ডানা মেলেনি। বর্ষাকাল। বৃষ্টি হচ্ছে। এখনো বৃষ্টি হয়। কিন্তু এখনকার বৃষ্টির মধ্যে তেমন তেজ নেই। একটানা ঝুমকোজবা বৃষ্টি হচ্ছে। ছাত্রদের ঘরে বৃষ্টি পড়ছে। ছাত্ররা অভিযোগ জানাতে ক্ষিতিমোহন দত্তের কাছে গেলেন। তাঁর ঘরেও বৃষ্টি পড়ছে। তারপর তিনি ছাত্রদের বললেন চলো আমরা কবি গুরুর কাছে যাই। তারা চলল রবীন্দ্রনাথের ঘর অভিমুখে। গিয়ে দেখলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঘরের এক কোনায় বসে আছেন। তাঁর ঘরেও বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি তাঁকে কোনামুখী করে তুলে। কী আর অভিযোগ জানাবে, এই অবস্থা দেখেই সবাই হতবাক। তারপরও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বললেন তোমরা যেহেতু এসেছো একটি গান লিখেছি, শুনে যাও "ও আমার ঘুম ভাঙানিয়া "।
আর আমরা আগে নিজের আসন ঠিক করে অন্যের দিকে দৃষ্টি দেই। তাও আবার ঐখানে আমার আসন পাকাপোক্ত করার কোনো ব্যাপার আছে কিনা তা নিয়ে ভাবি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদার সন্তান হয়েও আশ্রম সংস্কৃতি পালনে সচেতন। অন্যভাবে দেখলে পরিবারও তো একটি আশ্রম। প্রাথমিক আশ্রম সন্তানের জন্য। এখানে বাঙালি সন্তান দ্বিধাবোধ শিক্ষা পায়। পরিবার শিক্ষা দেয় একা একা যখন কিছু খেতে চাও দরজা বন্ধ করে খাও, অন্যরা দেখলে চোখ লাগায় দিব, পেট খারাপ করবো।
ফলত জেনারেশন হচ্ছে বধির বোবা অন্ধ। তবে কায়নাতের একটি কথা খুব ভালো লেগেছে। কায়নাত বায়াতুল্লাহ কাদেরী স্যারের বড় ছেলে। আমরা তখন বাংলাদেশে ঢুকে গেছি। বাসে বসা। সে বলছে, ভাই নিজেকে এখন মাইকেল মধুসূদন মধুসূদন মনে হচ্ছে।
কেন?
দেশের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে গেছে, আমরা তো পারি সবাই মিলে দেশটাকে সুন্দর করতে।
অবশ্যই কায়নাত, আমরা পারি, আমরা জীবনের প্রত্যেকটি ভাঁজ সুন্দর করে অনুপম নিরুপমা করে তুলতে পারি।
তাহনু যারিওন।
মানে কী?
মানে হলো কৃষিকাজ।
প্রভু নিজেও কৃষক। তাইতো এই পৃথিবী চাষ করলেন। আমরা যদি নিজেদের চাষ করতে পারি তাহলে পৃথিবী ও আমাদের জীবনের এক অর্থময় বাঁক তৈরি হবে।
ততক্ষনে আমরা জলে ভাসছি। কায়নাতও ভাবনায় ভাসতে থাকে ....
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)