প্রিয় ঋতু। প্রিয় ঋতু নামে আমাদেরকে রচনা লিখতে হতো। ক্লাস ফাইভ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত এই রচনা লেখার রীতি চালু ছিল। আমার চারপাশের সবাই প্রিয় ঋতু রচনা মুখস্থ করতো। কিন্তু আমি কোনোদিন বাংলা রচনা মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখিনি।
ছোট কাল থেকে কেন যেন বানাইয়া লিখতে ভালো লাগে। বানাইয়া লেখা মানে নিজের মতো করে লেখা। ফলে প্রিয় ঋতু রচনা লিখতে হলে আমি একেক পরীক্ষায় একেক উত্তর লিখতাম।
মজা করে লিখতাম। প্রিয় ঋতুর দৃশ্যগুলো চোখের সামনে টপ টপ করে ভাসত আর আমি লিখতাম।
এক কথায় বললে আমার প্রিয় ঋতু শীতকাল। কারন শীতকালের সাথে কাজের একটি শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে, মানুষ প্রচুর কাজ করতে পারে এবং প্রচুর আরাম করতে পারে। তাছাড়া শীতকালের কুয়াশার মধ্যে জোছনার মতো মিহি মিহি একটা বিষয় রয়েছে।
রচনা লেখার আবার একটি বিশেষ পদ্ধতি ছিল। প্রথমে ভূমিকা লিখতে হবে, তারপর ব্যাখা এবং সবার শেষে উপসংহার।
ভূমিকার বদলে অনেকে লিখতো প্রারম্ভিকা, অনেকে লিখতো প্রথম কথা, অনেকে লিখতো সূচনা। নতুন কোনো শব্দ ব্যবহার করতে পারলে যেন আলাদাভাবে নজর কাড়া যাবে। লেখার কয়েকটি শিরোনাম জাতীয় শব্দ একটু আলাদা হলে নাম্বার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ষাট পার্সেন্ট। আমাদের ইসলাম শিক্ষা যিনি পড়াতেন তাঁকে আমরা মোল্লা স্যার বলতাম। মৌলভি থেকে মোল্লা। মোল্লা স্যার পরীক্ষার খাতা পড়তেন না, কখনো খাতার ওজন দেখে কখনো খাতার পাতা গুনে নাম্বার দিতেন ( Its not flying words its real)।
উপসংহারের বদলে কেউ লিখতো যবনিকা, কেউ লিখতো শেষ কথা, কেউ লিখতো সারকথা। লিখে নীল হলুদ কালি দিয়ে শিরোনামকে নজরমুখী করে দেয়া হতো। শিক্ষকের যাতে শিরোনাম দেখতে কোনো প্রকার চোখভুল না হয় সেজন্য এই ব্যবস্থা।
কলেজে এসে রচনা লিখতে হয় কিন্তু শিরোনাম দিতে হয় না। অর্থাৎ প্যারা প্যারা করে লিখলেই হলো। ব্যাপারটা আমার জন্য আরামদায়ক ছিল। কলেজ একবার ভাষা আন্দোলনের উপর এক রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আমি আনমনে কী যেন কী লিখে আসলাম। ওমা! আমার ডাক চলে আসে। নিগার আপা, খোকন ভাই আর আমাকে ডাকা হয়। উপজেলাতে এক বিশাল রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। কলেজের হয়ে আমরা তিনজন যাই। সেই রচনা প্রতিযোগিতায়ও কী যেন কী লিখলাম। শুন্য পাইনি। দ্বিতীয় হয়েছিলাম। খোকন ভাই হয়েছিল প্রথম। নিগার আপা কোনো পুরষ্কার পাইনি। তৃতীয় হয়েছিল জিয়া ফার্টিলাইজার কলেজের এক ছাত্রী। উপহার হিসাবে আমি পেয়েছিলাম ডেল কার্নেগীর একটা বই। বইটি আমার বেশ কাজে লাগে। কারন একটা বয়স পর্যন্ত motivation খুব দরকার। motivation আসলে মৃত্যুর আগেও দরকার হয় আজরাইলের সাথে যুদ্ধ করার জন্য।
মনে আছে, একবার প্রিয় ঋতু লিখেছিলাম বর্ষাকাল। বর্ষাকালের উপকারিতা লিখতে গিয়ে লিখেছিলাম বর্ষাকালে বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর বন্যা হলে স্কুল কলেজ জলে প্লাবিত হয়ে যায়। ফলে স্কুলে না গিয়ে সারাদিন খেলাধূলা করা যায়। আর খেলাধূলা অনেক আনন্দের বিষয়।
সারাদিন খেলাধূলা করা যায়, কেউ কোনো কিছু বলে না। বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে লিখে দিয়েছিলাম আমাদের খেলার মাঠ অনেক উঁচু জায়গায়, বন্যা হলেও জল প্লাবিত হয় না।
লিখে আমি আনন্দ পেলেও স্যার পড়ে আনন্দ পাননি। তাইতো কুড়িতে স্যার আমাকে দিয়েছিলেন শুন্য।
পরের সেমিস্টারে আবার তোমার প্রিয় ঋতু নামে রচনা আসে। আমি আবার লিখি বর্ষাকাল। বর্ষাকালের উপকারিতা একটু পরিবর্তন করে লিখি বর্ষাকালে পাটপঁচার গন্ধ আসে। আর পাটপঁচার গন্ধ আমাদের স্কুলের গোলাপ ফুলের চেয়ে সুমিষ্ট। এবারেও স্যার আমাকে কুড়িতে শুন্য দিলেন। আমার অপরাধ আমি নাকি বক্তব্যের সামাজিক যোগ্যতা রক্ষা করতে পারিনি। আমার অনেক বন্ধুরা বক্তব্যের সামাজিক যোগ্যতা রক্ষা করতে পেরেছিল এবং তারা কুড়িতে প্রায় বারো-পনেরো করে নাম্বার পায়। শুন্য পেয়ে আমি খুশি ছিলাম, কারন আমার শুন্য প্রাপ্তিতে আমার পার্সোনালিটি ছিল কিন্তু আমার বন্ধুদের হৃষ্টপুষ্ট নাম্বারে তাদের পার্সোনালিটি ছিল না। তাই তাদের আনন্দ ছিল তেজহীন, আমার কষ্ট ছিল, তবে তেজের কষ্ট যার স্থান আনন্দের অনেক অনেক উপরে।
নিজেকে মাঝে মাঝে করাত কলের ঠিক মাঝখানে ফেলতে হয়, নিজেকে মাঝেমধ্যে পরাধীন করতে হয় নইলে প্রকৃতি পরাধীন করে ফেলে। তবে নিজেকে নিজে পরাধীন করার মধ্যে একটু সুখ আছে এই জন্য যে নাটাই শেষ পর্যন্ত নিজের হাতে থাকে। যে কারনে আমি শুন্য পেয়েছিলাম কারনটা আমার জানা ছিল। তাইতো অনেক শুন্যকে অতিক্রম করে অসীমের দিকে যাত্রা করেছি। হয়তো অসীম এক শুন্যের নাম....
ছোট কাল থেকে কেন যেন বানাইয়া লিখতে ভালো লাগে। বানাইয়া লেখা মানে নিজের মতো করে লেখা। ফলে প্রিয় ঋতু রচনা লিখতে হলে আমি একেক পরীক্ষায় একেক উত্তর লিখতাম।
মজা করে লিখতাম। প্রিয় ঋতুর দৃশ্যগুলো চোখের সামনে টপ টপ করে ভাসত আর আমি লিখতাম।
এক কথায় বললে আমার প্রিয় ঋতু শীতকাল। কারন শীতকালের সাথে কাজের একটি শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে, মানুষ প্রচুর কাজ করতে পারে এবং প্রচুর আরাম করতে পারে। তাছাড়া শীতকালের কুয়াশার মধ্যে জোছনার মতো মিহি মিহি একটা বিষয় রয়েছে।
রচনা লেখার আবার একটি বিশেষ পদ্ধতি ছিল। প্রথমে ভূমিকা লিখতে হবে, তারপর ব্যাখা এবং সবার শেষে উপসংহার।
ভূমিকার বদলে অনেকে লিখতো প্রারম্ভিকা, অনেকে লিখতো প্রথম কথা, অনেকে লিখতো সূচনা। নতুন কোনো শব্দ ব্যবহার করতে পারলে যেন আলাদাভাবে নজর কাড়া যাবে। লেখার কয়েকটি শিরোনাম জাতীয় শব্দ একটু আলাদা হলে নাম্বার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ষাট পার্সেন্ট। আমাদের ইসলাম শিক্ষা যিনি পড়াতেন তাঁকে আমরা মোল্লা স্যার বলতাম। মৌলভি থেকে মোল্লা। মোল্লা স্যার পরীক্ষার খাতা পড়তেন না, কখনো খাতার ওজন দেখে কখনো খাতার পাতা গুনে নাম্বার দিতেন ( Its not flying words its real)।
উপসংহারের বদলে কেউ লিখতো যবনিকা, কেউ লিখতো শেষ কথা, কেউ লিখতো সারকথা। লিখে নীল হলুদ কালি দিয়ে শিরোনামকে নজরমুখী করে দেয়া হতো। শিক্ষকের যাতে শিরোনাম দেখতে কোনো প্রকার চোখভুল না হয় সেজন্য এই ব্যবস্থা।
কলেজে এসে রচনা লিখতে হয় কিন্তু শিরোনাম দিতে হয় না। অর্থাৎ প্যারা প্যারা করে লিখলেই হলো। ব্যাপারটা আমার জন্য আরামদায়ক ছিল। কলেজ একবার ভাষা আন্দোলনের উপর এক রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আমি আনমনে কী যেন কী লিখে আসলাম। ওমা! আমার ডাক চলে আসে। নিগার আপা, খোকন ভাই আর আমাকে ডাকা হয়। উপজেলাতে এক বিশাল রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। কলেজের হয়ে আমরা তিনজন যাই। সেই রচনা প্রতিযোগিতায়ও কী যেন কী লিখলাম। শুন্য পাইনি। দ্বিতীয় হয়েছিলাম। খোকন ভাই হয়েছিল প্রথম। নিগার আপা কোনো পুরষ্কার পাইনি। তৃতীয় হয়েছিল জিয়া ফার্টিলাইজার কলেজের এক ছাত্রী। উপহার হিসাবে আমি পেয়েছিলাম ডেল কার্নেগীর একটা বই। বইটি আমার বেশ কাজে লাগে। কারন একটা বয়স পর্যন্ত motivation খুব দরকার। motivation আসলে মৃত্যুর আগেও দরকার হয় আজরাইলের সাথে যুদ্ধ করার জন্য।
মনে আছে, একবার প্রিয় ঋতু লিখেছিলাম বর্ষাকাল। বর্ষাকালের উপকারিতা লিখতে গিয়ে লিখেছিলাম বর্ষাকালে বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর বন্যা হলে স্কুল কলেজ জলে প্লাবিত হয়ে যায়। ফলে স্কুলে না গিয়ে সারাদিন খেলাধূলা করা যায়। আর খেলাধূলা অনেক আনন্দের বিষয়।
সারাদিন খেলাধূলা করা যায়, কেউ কোনো কিছু বলে না। বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে লিখে দিয়েছিলাম আমাদের খেলার মাঠ অনেক উঁচু জায়গায়, বন্যা হলেও জল প্লাবিত হয় না।
লিখে আমি আনন্দ পেলেও স্যার পড়ে আনন্দ পাননি। তাইতো কুড়িতে স্যার আমাকে দিয়েছিলেন শুন্য।
পরের সেমিস্টারে আবার তোমার প্রিয় ঋতু নামে রচনা আসে। আমি আবার লিখি বর্ষাকাল। বর্ষাকালের উপকারিতা একটু পরিবর্তন করে লিখি বর্ষাকালে পাটপঁচার গন্ধ আসে। আর পাটপঁচার গন্ধ আমাদের স্কুলের গোলাপ ফুলের চেয়ে সুমিষ্ট। এবারেও স্যার আমাকে কুড়িতে শুন্য দিলেন। আমার অপরাধ আমি নাকি বক্তব্যের সামাজিক যোগ্যতা রক্ষা করতে পারিনি। আমার অনেক বন্ধুরা বক্তব্যের সামাজিক যোগ্যতা রক্ষা করতে পেরেছিল এবং তারা কুড়িতে প্রায় বারো-পনেরো করে নাম্বার পায়। শুন্য পেয়ে আমি খুশি ছিলাম, কারন আমার শুন্য প্রাপ্তিতে আমার পার্সোনালিটি ছিল কিন্তু আমার বন্ধুদের হৃষ্টপুষ্ট নাম্বারে তাদের পার্সোনালিটি ছিল না। তাই তাদের আনন্দ ছিল তেজহীন, আমার কষ্ট ছিল, তবে তেজের কষ্ট যার স্থান আনন্দের অনেক অনেক উপরে।
নিজেকে মাঝে মাঝে করাত কলের ঠিক মাঝখানে ফেলতে হয়, নিজেকে মাঝেমধ্যে পরাধীন করতে হয় নইলে প্রকৃতি পরাধীন করে ফেলে। তবে নিজেকে নিজে পরাধীন করার মধ্যে একটু সুখ আছে এই জন্য যে নাটাই শেষ পর্যন্ত নিজের হাতে থাকে। যে কারনে আমি শুন্য পেয়েছিলাম কারনটা আমার জানা ছিল। তাইতো অনেক শুন্যকে অতিক্রম করে অসীমের দিকে যাত্রা করেছি। হয়তো অসীম এক শুন্যের নাম....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন