আমাদের ঘরে একটা টিভি ছিল। সনি টিভি। ছোটোখাটো গোলগাল। চৌদ্দ ইঞ্চি রঙিন টিভি।
আমাদের পরিবারে একটি টিভি ছিল। অনেক আগে। আকরাম খান যখন ছয় মেরে বাংলাদেশকে পাঠিয়ে দিল দর্শক গ্যালারিতে তখন। শাবানা যখন নারীর সতীত্ব ধরে রাখার জন্য সবার অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে তখন। সালমান শাহ যখন সত্যের মৃত্যু নাই ছবি করে সবার চোখে জল নিয়ে আসে তখন।
আমরা সবাই গোল হয়ে আসতাম সাপ্তাহিক ছবি দেখার জন্যে। আমাদের পরিবারের সবাই টিভিটাকে আলাদাভাবে যত্ন করত। যেহেতু কৃষক বাড়ি অযত্নের অনেক কারন ছিল। সব কারন অতিক্রম করে আমরা সবাই তাকে আলাদাভাবে টেক কেয়ার করতাম এটাই সত্য।
আম্মা একটা সাদা পর্দা কিনে আনলেন। পর্দাটার উপরে অনেক যত্ন নিয়ে সুঁইসুতার কাজ দিয়ে আঁকাবাঁকা ফুলঝাপ তৈরি করলেন। তারপর পর্দাটা দিয়ে টিভির সারা গতর ঢেকে দেয়া হলো। তখন তাকে গ্রামীন নব বধূর মতো মনে হতো। খেলাধূলার পর এই টিভিই ছিল আমার প্রেমের জায়গা।
কয়েক বছর সে ভালোই সার্ভিস দিল। তারপর শুরু করে এক উদ্ভুত আচরন। যখনই আমাদের পরীক্ষা আসার সময় হয় তখনই নষ্ট হয়ে যায়। ধরুন, পরীক্ষার আর এক মাস বা বিশ দিন বাকী, এমন সময় সে নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের ভালোই লাগত। পরীক্ষা শেষে আবার মেরামত করে আনতাম।
একবার সে নষ্ট হলো। ডাক্তারের কাছে নেয়া হলো। আর ত সুস্থ হয় না। ডাক্তার বলেছে তার ক্যানসার হয়ে গ্যাছে, ব্লাড ক্যান্সার, তাকে আর বাঁচানো সম্ভব না। আমাদের পরিবারে কষ্টের বন্যা নেমে আসে। একদিন টিভিটা মারা গেল! সবাই তাকে দাফন দিয়ে দিতে চায়ল। একমাত্র আমি বললাম 'না '। তাকে দাফন করা যাবে না।
আমার রুমে তাকে রেখে দিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল তাকে আবার জীবিত করা যাবে। ছোট মানুষের বিশ্বাস অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ধরনের বিশ্বাস।
আজকে আমি বড় হয়েছি, টিভিকে জীবিত করতে গিয়ে দেখি সেই দিনের বড় মানুষদের সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল-- যে মারা যায় একেবারেই মারা যায়, তাকে আর ফেরানো যায় না আমাদের এই ভালোবাসার পৃথিবীতে, আমাদের এই প্রেমের পরিবারে
আমাদের পরিবারে একটি টিভি ছিল। অনেক আগে। আকরাম খান যখন ছয় মেরে বাংলাদেশকে পাঠিয়ে দিল দর্শক গ্যালারিতে তখন। শাবানা যখন নারীর সতীত্ব ধরে রাখার জন্য সবার অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করে তখন। সালমান শাহ যখন সত্যের মৃত্যু নাই ছবি করে সবার চোখে জল নিয়ে আসে তখন।
আমরা সবাই গোল হয়ে আসতাম সাপ্তাহিক ছবি দেখার জন্যে। আমাদের পরিবারের সবাই টিভিটাকে আলাদাভাবে যত্ন করত। যেহেতু কৃষক বাড়ি অযত্নের অনেক কারন ছিল। সব কারন অতিক্রম করে আমরা সবাই তাকে আলাদাভাবে টেক কেয়ার করতাম এটাই সত্য।
আম্মা একটা সাদা পর্দা কিনে আনলেন। পর্দাটার উপরে অনেক যত্ন নিয়ে সুঁইসুতার কাজ দিয়ে আঁকাবাঁকা ফুলঝাপ তৈরি করলেন। তারপর পর্দাটা দিয়ে টিভির সারা গতর ঢেকে দেয়া হলো। তখন তাকে গ্রামীন নব বধূর মতো মনে হতো। খেলাধূলার পর এই টিভিই ছিল আমার প্রেমের জায়গা।
কয়েক বছর সে ভালোই সার্ভিস দিল। তারপর শুরু করে এক উদ্ভুত আচরন। যখনই আমাদের পরীক্ষা আসার সময় হয় তখনই নষ্ট হয়ে যায়। ধরুন, পরীক্ষার আর এক মাস বা বিশ দিন বাকী, এমন সময় সে নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের ভালোই লাগত। পরীক্ষা শেষে আবার মেরামত করে আনতাম।
একবার সে নষ্ট হলো। ডাক্তারের কাছে নেয়া হলো। আর ত সুস্থ হয় না। ডাক্তার বলেছে তার ক্যানসার হয়ে গ্যাছে, ব্লাড ক্যান্সার, তাকে আর বাঁচানো সম্ভব না। আমাদের পরিবারে কষ্টের বন্যা নেমে আসে। একদিন টিভিটা মারা গেল! সবাই তাকে দাফন দিয়ে দিতে চায়ল। একমাত্র আমি বললাম 'না '। তাকে দাফন করা যাবে না।
আমার রুমে তাকে রেখে দিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল তাকে আবার জীবিত করা যাবে। ছোট মানুষের বিশ্বাস অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ধরনের বিশ্বাস।
আজকে আমি বড় হয়েছি, টিভিকে জীবিত করতে গিয়ে দেখি সেই দিনের বড় মানুষদের সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল-- যে মারা যায় একেবারেই মারা যায়, তাকে আর ফেরানো যায় না আমাদের এই ভালোবাসার পৃথিবীতে, আমাদের এই প্রেমের পরিবারে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন