শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০

আমার মো বা ই লে রা

এন্ড্রয়েড। আমার প্রথম এন্ড্রয়েড মোবাইলটির নাম ওয়াল্টন। কিনেছিলাম দুই হাজার চৌদ্দ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। দুই হাজার সতেরো সাল পর্যন্ত তার সাথে আমার সংসার। সংসার আমাদের ভালোই ছিল।  অল্প সময়ের জন্যও সে আমাকে কোন কষ্ট দেয়নি।
আমি?
সে হয়তো আমাকে সুখ দিয়েছে আমি তাকে দিয়েছি প্রশান্তি। আমি তার মর্যাদা ও সম্মানে কোনো প্রকার আঘাত করিনি। তাকে তার মতো থাকতে দিয়েছি। তার স্বাতন্ত্র্যবোধে ব্যক্তিজিজ্ঞাসা চাপানোর মতো অপদার্থ ব্যক্তিত্ব ধারণ করার মতো পারিবারিক শিক্ষা আমার নেই। তাকে দিয়েছি শতভাগ নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা।

তারপরও আমাদের সংসার তিন বছর টিকেছিল। খুব ভালো করেই টিকেছিল। কোনো প্রকার কথা কাটাকাটি মনোমালিন্য আমাদের সংসারে নেই। তাই তো তার দেহ আমার বেডরুমে রেখে দিয়েছি। মমি করে নয়, প্রেমি করে। মেকানিকের কাছে তাকে নিয়ে যাইনি। সার্ভিস দিয়ে সংসার ধরে রাখার মানসিকতা আমার নেই। যা থাকার তা এমনি থাকবে যা চলে যাবার তাকে ধরে রাখার চেষ্টা বৃথা। যা থাকার এমনি থাকবে, যা চলে যায় তা আসলে থাকতে আসেনি।

বাংলা বিভাগ থেকে আমরা ইন্ডিয়া ভ্রমণে যাবো। মোবাইল লাগবে। শাউমি নোট থ্রি। শাউমির সাথে আবার তিন বছরের সংসার। তার সাথেও দাম্পত্য সম্পর্ক চমৎকার। শাউমি আমার পাশে ছিল মায়ের মতো। মায়ের পর্যাপ্ত স্নেহ নিয়ে সে আমার পাশে ছিল। সে আমার পাশে ছিল বন্ধুর সহানুভূতি নিয়ে। শাউমি আমার পাশে ছিল প্রেমিকার ঔদার্য নিয়ে। ধন্য আমি তার স্নেহ, ভালোবাসা, মমতা আর ঔদার্যভরা আবেদন আর নিবেদনে।

আজকে (৯ বৈশাখ ১৪২৭) শাউমিকে বিদায় দিলাম। আমাদের কাজের সম্পর্ক থেমে গেলো, শুরু হলো স্মৃতির সম্পর্ক।

ডাক্তার বলেছে শাউমির পাকস্থলী অকেজো হয়ে গেছে। তার পাকস্থলী পরিবর্তন করতে হবে। লকডাউনের এই সময়ে পাকস্থলী পাবো কই? রীতিমতো খাবার সামগ্রীই পাওয়া যাচ্ছে না। পৃথিবী সুস্থ হলে তাকে সুস্থ করার চেষ্টা আমি করবো। কারণ সে চায় আমি তাকে সুস্থ করে তুলি। শাউমির চাওয়া যে আমারই চাওয়া!

সংসারে খুচরো ঝগড়া বলে অঘোষিত একখান ঝগড়া থাকেই। আমাদের তা ছিল না। শাউমি এখন কোমায় আছে। তার সাথে প্রতিদিন খুচরো ঝগড়া করি। একা একা ঝগড়া করা যায়?!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন